Ajker Patrika

কী ঘটেছিল পবিত্র মিরাজের রাতে

মাওলানা শেখ তারেক হাসান মাহদী
কী ঘটেছিল পবিত্র মিরাজের রাতে

আরবি ‘মিরাজ’ শব্দের অর্থ ঊর্ধ্বগমন। লাইলাতুল মিরাজ বা মিরাজের রজনী উপমহাদেশে শবে মিরাজ হিসেবে পরিচিত। এই রাতে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) কুদরতিভাবে ঊর্ধ্বাকাশে আরোহণ করেন এবং মহান আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। মিরাজের পটভূমি সম্পর্কে জ্ঞানীরা বলেছেন, জন্মের আগেই বাবাকে হারান প্রিয় নবী (সা.)। ৬ বছর বয়সে হারান মাকে। ৮ বছর বয়সে দাদার ইন্তেকালের পর তাঁর দায়িত্ব নেন পিতৃতুল্য চাচা আবু তালেব। তখন থেকে ৫৫ বছর পর্যন্ত দীর্ঘ ৪৮ বছর ছায়ার মত নবীজির সঙ্গ দিয়েছেন আবু তালেব। নবুওয়াতের দশম বর্ষের রজব মাসে আবু তালেব মারা যান। এ দুঃখ নবীর হৃদয় চৌচির করে দেয়। এর ঠিক ৩ দিন পর প্রিয়তমা স্ত্রী খাদিজাও (রা.) ইন্তেকাল করেন। কষ্টের পর কষ্টের ঢেউ নবিজির হৃদয়ে আছড়ে পড়ে। এ জন্য ঐতিহাসিকগণ এ বছরকে ‘আমুল হুজন’ বা দুঃখ-কষ্টের বছর বলে অভিহিত করেছেন। একে তো স্বজন হারানোর বেদনা, অন্যদিকে স্বগোত্রীয়দের বিরোধিতা নবীজির দাওয়াতি মিশনকে কঠিন করে তোলে। নবীজির পেরেশানি ও মনঃকষ্ট দূর করার জন্য মহান আল্লাহ সিদ্ধান্ত নিলেন, নিজের কাছে নিয়েই প্রিয় বন্ধুকে সান্ত্বনা দেবেন পরম যত্নে।

প্রসিদ্ধ বর্ণনা মতে, রজব মাসের ২৭ তারিখ রাতে বিশেষ নিরাপত্তায় প্রথমে বোরাক তারপর রফরফে চড়ে নবী (সা.) মিরাজে যান। এ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘মহিমান্বিত সেই সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতের এক অংশে মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করিয়েছেন তাঁর নিদর্শনাবলী দেখানোর জন্য, যা চারপাশে আমি বরকতে পূর্ণ করে দিয়েছি। নিশ্চয়ই তিনি সব শোনেন ও সব দেখেন।’ (সুরা ইসরা, আয়াত: ১)

মিরাজ সম্পর্কে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের আকিদা হলো, নবী (সা.) কর্তৃক সশরীরে সজ্ঞানে জাগ্রত অবস্থায় মেরাজ হয়েছে। হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনা থেকে পাওয়া যায়, এক রাতে আল্লাহর রাসুল (সা.) শুয়েছিলেন। হঠাৎ জিবরাইল (আ.) এসে তাঁকে জাগিয়ে বক্ষ মোবারক বিশেষ উপায়ে বিদারণ করে জমজমের পানি দিয়ে হৃদয় ধুয়ে হিকমতে পূর্ণ করে আবার প্রতিস্থাপন করেন। এরপর আনা হয় নবীজিকে বহন করার বিশেষ সওয়ারি। প্রাণীটি গাধার চেয়ে বড়, ঘোড়ার চেয়ে ছোট। নাম বোরাক। রং সাদা। এটা এতটাই ক্ষিপ্রগতির যে একেকটি কদম পড়ে দৃষ্টির শেষ সীমায় গিয়ে। এভাবে নবী (সা.) মুহূর্তেই পৌঁছে যান বায়তুল মুকাদ্দাসে। বোরাক বেঁধে রাখা হলো পাথর ছিদ্র করে। যে পাথরে অপরাপর নবীগণ নিজেদের বাহন বেঁধে রাখতেন। নবীজি সেখানে দুই রাকাত নামাজ আদায় করলেন। নামাজ পড়ে বের হওয়ার সময় জিবরাইল (আ.) নবীজির সামনে দুটি পেয়ালা পেশ করলেন। একটি দুধের, অন্যটি মদের। নবীজি দুধের পেয়ালা গ্রহণ করলেন। জিবরাইল (আ.) বললেন, আপনি স্বভাবসিদ্ধ বিষয়টি নির্বাচন করেছেন। আপনি যদি মদের পেয়ালা নিতেন, তাহলে আপনার উম্মত বিভ্রান্ত হয়ে পড়ত।’ (বুখারি, হাদিস: ৩৩৯৪)

এরপর শুরু হলো ঊর্ধ্বজগতের সফর। জিবরাইল নবীজিকে নিয়ে চললেন। প্রথম আসমানে গিয়ে কড়া নাড়লেন। জিজ্ঞাসা করা হলো, কে? উত্তর দেওয়া হলো, আমি জিবরাইল। জিজ্ঞাসা করা হলো, আপনার সঙ্গে কে? বললেন, মুহাম্মদ (সা.)। জিজ্ঞাসা করা হলো, তার কাছে কি আপনাকে পাঠানো হয়েছে? বললেন, হ্যাঁ। এরপর নবীজিকে সম্ভাষণ জানানো হলো—মারহাবা, উত্তম আগন্তুকের আগমন ঘটেছে। খুলে দেওয়া হলো নবীজির জন্য আসমানের দরজা।

নবীজি প্রথম আসমানে গেলেন। সেখানে ছিলেন হজরত আদম (আ.)। জিবরাইল পরিচয় করিয়ে দিলেন। নবীজি আদমকে সালাম বললেন। বাবা আদম জবাব দিলেন। নবীজিকে সাদর অভিবাদন জানালেন—মারহাবা, নেককার পুত্র ও নেককার নবী। হজরত আদম (আ.) নবীজির জন্য দোয়া করলেন। এরপর নবীজি উঠতে থাকলেন দ্বিতীয় আসমানের দিকে। সেখানে দেখতে পেলেন দুই ভাই হজরত ইসা (আ.) ও ইয়াহইয়া (আ.)-কে। তাদের সঙ্গে নবীজির সালাম বিনিময় হলো। তারা নবীজিকে স্বাগত জানালেন—মারহাবা, আমাদের পুণ্যবান ভাই এবং সজ্জন নবী। তাঁরা দোয়া করলেন। এরপর নবীজিকে তৃতীয় আসমানের দিকে নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানে দেখা হলো হজরত ইউসুফ (আ.)-এর সঙ্গে। নবীজির সালাম ও কুশল বিনিময় করে বললেন, হজরত ইউসুফকে দুনিয়ার অর্ধেক সৌন্দর্য দেওয়া হয়েছে। এরপর চতুর্থ আসমানে হজরত ইদরিস (আ.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হলো। সালাম ও কুশল বিনিময় হলো। হজরত ইদরিস (আ.) নবীজির জন্য দোয়া করলেন। এরপর পঞ্চম আসমানে হজরত হারুন (আ.)-এর সাক্ষাৎ হলো। এরপর ষষ্ঠ আসমানে হজরত মুসা (আ.) এর সঙ্গে এবং সপ্তম আসমানে হজরত ইবরাহিম (রা.)-এর সঙ্গে দেখা হলো। জিবরাইল ফেরেশতা পরিচয় করিয়ে দিলেন, ইনি আপনার পিতা, সালাম করুন। নবীজি হজরত ইবরাহিমকে সালাম দিলেন। ইবরাহিম (আ.) তখন বায়তুল মামুরে হেলান দিয়ে বসে ছিলেন।

এরপর নবীজিকে নিয়ে যাওয়া হলো সিদরাতুল মুনতাহায়। জিবরাইল বললেন, এটা সিদরাতুল মুনতাহা। এখানে চারটি নহর রয়েছে। দুটি অদৃশ্য আর দুটি দৃশ্যমান। নবীজি জিজ্ঞাসা করলেন, দৃশ্যমান নদী দুটি কোনগুলো? জিবরাইল বললেন, অদৃশ্যমান দুটি জান্নাতে। আর দৃশ্যমান দুটি হলো দুনিয়ার নীলনদ ও ফোরাত নদী।

এরপর আল্লাহ তাআলার সঙ্গে নবীজির দেখা হলো। দিনরাতে উম্মতের জন্য ৫০ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করে দিলেন। হজরত মুসা (আ.)-এর পরামর্শে নবীজি বারবার আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে সালাতের ওয়াক্ত ৫-এ নামিয়ে আনলেন। সর্বশেষ আল্লাহ বললেন, ‘হে হাবিব আমার, দিন-রাতে ৫ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে প্রতিটি নামাজের বিনিময় ১০ ওয়াক্ত নামাজের সওয়াব দেওয়া হবে। এভাবে বান্দা ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে ৫০ ওয়াক্ত নামাজের সওয়াব পাবে। (বুখারি, হাদিস: ৩৮৮৭; মুসলিম, হাদিস: ১৬২,১৬৪)

মিরাজের পরদিন সকালে মক্কার কোনো পথ ধরে হেঁটে যাচ্ছিলেন হজরত আবু বকর (রা.)। কাফেররা তাঁকে উপহাস করে বলল, তোমার নবী দাবি করছে, এক রাতে এত কিছু ঘুরে এসেছে, এরপরও তুমি কি এসব বিশ্বাস করবে এবং তাকে সত্যবাদী বলবে? হজরত আবু বকরের হৃদয়ে ইমানের বহ্নিশিখা জ্বলে উঠল। তিনি এক বুক আস্থা নিয়ে সুদৃঢ় কণ্ঠে বলে বললেন, আমি তো এর চেয়েও আরও দূরের অনেক জটিল বিষয়েও তাঁকে বিশ্বাস করি। তাঁর কাছে আসা আসমানি বার্তাগুলোর ওপর রয়েছে আমার অটল বিশ্বাস ও সুদৃঢ় ইমান। এ ঘটনার পরই তাঁকে আস-সিদ্দিক উপাধি দেওয়া হয়। (তিরমিজি, হাদিস: ৩৪৬২)

লেখক: ইসলামবিষয়ক গবেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়াকে শ্রদ্ধা জানাতে আসছেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা

‘ক্ষমতার মোহে আল্লাহর আরশ কাঁপানোর মতো বেপরোয়া হলেন’

খালেদা জিয়ার জানাজা: যেসব পথে নিয়ন্ত্রিত থাকবে যান চলাচল

শহীদ জিয়ার কবরের পূর্ব পাশে খোঁড়া হচ্ছে নতুন কবর

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের নামাজের সময়সূচি: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫

ইসলাম ডেস্ক 
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত।

প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।

আজ বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ ইংরেজি, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বাংলা, ১০ রজব ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—

আজকের নামাজের সময়সূচি
নামাজ ওয়াক্ত শুরুওয়াক্ত শেষ
তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময়০০: ০০০৫: ১৯ মিনিট
ফজর০৫: ২০ মিনিট০৬: ৩৯ মিনিট
জোহর১২: ০২ মিনিট০৩: ৪৫ মিনিট
আসর০৩: ৪৬ মিনিট০৫: ২১ মিনিট
মাগরিব০৫: ২৩ মিনিট০৬: ৪২ মিনিট
এশা০৬: ৪৩ মিনিট০৫: ১৯ মিনিট

উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:

বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট

যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট

নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।

আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়াকে শ্রদ্ধা জানাতে আসছেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা

‘ক্ষমতার মোহে আল্লাহর আরশ কাঁপানোর মতো বেপরোয়া হলেন’

খালেদা জিয়ার জানাজা: যেসব পথে নিয়ন্ত্রিত থাকবে যান চলাচল

শহীদ জিয়ার কবরের পূর্ব পাশে খোঁড়া হচ্ছে নতুন কবর

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার জানাজা পড়াবেন বায়তুল মোকাররমের খতিব

ইসলাম ডেস্ক 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা ও দাফন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন করার চূড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বাদ জোহর বেলা ২টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এই জানাজায় ইমামতি করবেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আবদুল মালেক।

মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

মির্জা ফখরুল জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বুধবার বেলা ২টায় পার্লামেন্ট ভবনের দক্ষিণ প্লাজা ও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ এলাকায় জানাজা সম্পন্ন হবে। জানাজা শেষে শেরেবাংলা নগরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশেই তাঁকে সমাহিত করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়াকে শ্রদ্ধা জানাতে আসছেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা

‘ক্ষমতার মোহে আল্লাহর আরশ কাঁপানোর মতো বেপরোয়া হলেন’

খালেদা জিয়ার জানাজা: যেসব পথে নিয়ন্ত্রিত থাকবে যান চলাচল

শহীদ জিয়ার কবরের পূর্ব পাশে খোঁড়া হচ্ছে নতুন কবর

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রিয়জনের মৃত্যুতে শোক পালনে ইসলামের নির্দেশনা

ইসলাম ডেস্ক 
ব্লু মসজিদ, ইস্তাম্বুল। ছবি: সংগৃহীত
ব্লু মসজিদ, ইস্তাম্বুল। ছবি: সংগৃহীত

জীবনে প্রিয়জন হারানো এক অপূরণীয় বেদনা। এই কঠিন মুহূর্তে মানুষ কীভাবে আচরণ করবে, কেমনভাবে শোক প্রকাশ করবে—সেই বিষয়ে ইসলাম দিয়েছে পরিপূর্ণ দিকনির্দেশনা। ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি হলো—শোক প্রকাশে ভারসাম্য রাখা, কষ্টকে অস্বীকার না করা, আবার সীমালঙ্ঘনও না করা।

ইসলাম এ বিপদে ধৈর্য ও আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকার শিক্ষা দেয়। তবে কান্না করাকে নিষেধ করেনি, বরং তা স্বাভাবিক ও মানবিক অনুভূতির প্রকাশ হিসেবে বিবেচিত। রাসুলুল্লাহও (সা.) কেঁদেছেন তাঁর সন্তান ইবরাহিম (রা.)-এর মৃত্যুর সময়।

সাহাবি আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) বিস্ময় প্রকাশ করলে নবীজি (সা.) বলেন, ‘এ কান্না স্নেহ-ভালোবাসার প্রকাশ। আমার হৃদয় বেদনাহত, চোখ দুটো সিক্ত, তবে আমি বলছি সেই কথাই, যা আমার রবকে সন্তুষ্ট করে। ইবরাহিম, তোমার বিচ্ছেদে আমরা শোকাহত।’ (সহিহ বুখারি)

ইসলাম কান্নাকে মানবিক বললেও অতিরিক্ত বিলাপ, উচ্চ স্বরে চিৎকার, গায়ে চপেটাঘাত, জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলা বা আকুতি-মিনতি করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মৃতের জন্য বিলাপ করা জাহিলি যুগের প্রথা। বিলাপকারী যদি মৃত্যুর আগে তওবা না করে, তবে কিয়ামতের দিন তাকে আগুনের পোশাক ও আলকাতরার চাদর পরানো হবে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়াকে শ্রদ্ধা জানাতে আসছেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা

‘ক্ষমতার মোহে আল্লাহর আরশ কাঁপানোর মতো বেপরোয়া হলেন’

খালেদা জিয়ার জানাজা: যেসব পথে নিয়ন্ত্রিত থাকবে যান চলাচল

শহীদ জিয়ার কবরের পূর্ব পাশে খোঁড়া হচ্ছে নতুন কবর

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থরক্ষায় খালেদা জিয়ার অনন্য কিছু উদ্যোগ

ইসলাম ডেস্ক 
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ২৫
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আজ মঙ্গলবার ভোরে যখন কুয়াশাভেজা প্রকৃতিতে ফজরের আজান ধ্বনিত হচ্ছিল, এর ঠিক কিছু পরেই চিরদিনের জন্য চোখ বুজলেন বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব খালেদা জিয়া। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি শুধু একজন সফল প্রধানমন্ত্রীই ছিলেন না, বরং মুসলিম উম্মাহর স্বার্থরক্ষা এবং ইসলামি মূল্যবোধকে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার অন্যতম এক বাতিঘর ছিলেন।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর যে কজন রাজনৈতিক নেতৃত্ব ধর্মীয় চেতনা ও মুসলমানদের অধিকার রক্ষায় আপসহীন ভূমিকা রেখেছেন, খালেদা জিয়ার নাম সেখানে অনেকটা অগ্রভাগেই থাকবে।

খালেদা জিয়া শুধু রাজনীতির ময়দানেই বিচরণ করেননি, তিনি অন্তরে লালন করতেন বাংলাদেশি মুসলিম জাতীয়তাবাদের আদর্শ। গৃহবধূ থেকে দেশের শীর্ষ নেতৃত্বে উঠে আসার দীর্ঘ লড়াইয়ে তিনি সব সময় আলেমসমাজকে পরম মমতায় কাছে টেনে নিয়েছেন।

সংবিধানে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস ও রাষ্ট্রধর্মের সুরক্ষা

১৯৯১ সালে এরশাদ সরকারের পতনের পর যখন নানামুখী রাজনৈতিক চাপ ছিল, তখন খালেদা জিয়া দৃঢ়তার সঙ্গে সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ এবং ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ বজায় রাখার পক্ষে অবস্থান নেন। ২০০৫ সালের সংসদীয় কার্যবিবরণী সাক্ষ্য দেয়, তিনি বারবার সংসদে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের মর্যাদা রক্ষার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিলেন।

কওমি ও আলিয়া মাদ্রাসার যুগান্তকারী সংস্কার

আলেমসমাজ ও মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের হৃদয়ে খালেদা জিয়া অমর হয়ে থাকবেন তাঁর শিক্ষা সংস্কারের জন্য।

  • ফাজিল ও কামিলের স্বীকৃতি: ২০০১-০৬ মেয়াদে ফাজিলকে ডিগ্রি এবং কামিলকে মাস্টার্সের সমমান দিয়ে তিনি মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের মূলধারার সঙ্গে প্রতিযোগিতার সুযোগ করে দেন।
  • কওমি সনদের প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি: ২০০৫ সালে আলেমদের সঙ্গে বৈঠকের পর ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর তিনি দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান দেওয়ার ঐতিহাসিক গেজেট প্রকাশ করেন। সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ায় বাস্তবায়ন অসম্পূর্ণ থাকলেও এটিই ছিল কওমি সনদের প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির মাইলফলক।
  • ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়: কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ইসলামিক স্টাডিজ অ্যান্ড দাওয়াহ’ অনুষদসহ নতুন নতুন বিভাগ অনুমোদনের মাধ্যমে উচ্চতর ইসলামি শিক্ষার প্রসারে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

ধর্মীয় স্থাপনা ও হজ ব্যবস্থাপনায় সংস্কার

বায়তুল মোকাররম মসজিদের সংস্কার, জাতীয় ঈদগাহের আধুনিকায়ন এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম-মুয়াজ্জিন প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের পরিধি বাড়ানো ছিল তাঁর নিয়মিত কাজের অংশ। আল্লাহর ওলিদের মাজার রক্ষণাবেক্ষণেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত আন্তরিক। পাশাপাশি হজযাত্রীদের যাতায়াত সহজ করতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে শক্তিশালী করা এবং সৌদি সরকারের সঙ্গে সফল কূটনীতির মাধ্যমে ভিসা সমস্যার সমাধান করেছিলেন তিনি।

ইসলামি অর্থনীতি ও বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্ব

খালেদা জিয়ার শাসনামলেই বাংলাদেশে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং ও ইসলামি আর্থিক ব্যবস্থা দ্রুত বিস্তৃত হয়। মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে ইসলামি ব্যাংকিংকে আস্থার জায়গায় নিয়ে যেতে তাঁর সরকার নীতিগত সহায়তা প্রদান করে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ওআইসিসহ সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও ব্রুনাইয়ের মতো মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছিল।

২০০৫ সালে ইউরোপে নবীজি (সা.)-কে নিয়ে অবমাননাকর কার্টুন প্রকাশিত হলে তাঁর সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে কঠোর নিন্দা জানিয়েছিল।

আজ ফজরের পর তিনি যখন মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেলেন, তখন পেছনে রেখে গেছেন এমন এক কর্মময় জীবন, যা এ দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামের মর্যাদা রক্ষা এবং ইসলামি প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার যে বীজ তিনি বপন করেছিলেন, তা আজ এক বিশাল মহিরুহে পরিণত হয়েছে।

আল্লাহ তাঁকে তাঁর সকল নেক আমল কবুল করে এবং ভুলত্রুটি ক্ষমা করে জান্নাতুল ফিরদাউসের উচ্চ মাকাম দান করুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়াকে শ্রদ্ধা জানাতে আসছেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা

‘ক্ষমতার মোহে আল্লাহর আরশ কাঁপানোর মতো বেপরোয়া হলেন’

খালেদা জিয়ার জানাজা: যেসব পথে নিয়ন্ত্রিত থাকবে যান চলাচল

শহীদ জিয়ার কবরের পূর্ব পাশে খোঁড়া হচ্ছে নতুন কবর

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত