Ajker Patrika

চাঁপাইনবাবগঞ্জে মুসলিম স্থাপত্যের খোঁজে

সাইফুদ্দীন বিন মোজাফফর
চাঁপাইনবাবগঞ্জে মুসলিম স্থাপত্যের খোঁজে

ইতিহাসের অন্যতম নির্ভরযোগ্য উপাদান হলো স্থাপত্য নিদর্শন। স্থাপত্য নিদর্শন তার নির্মাণকালের ইতিহাসকে চলমান যুগের বিশ্ববাসীর সমীপে অবিকল তুলে ধরে। এই ঐতিহাসিক সাক্ষ্য মানবমনে নানাভাবে অনুভূত হয়। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহাসিক মুসলিম স্থাপত্য নিদর্শন স্বভাবতই দর্শনার্থীদের এই অঞ্চলের তৎকালীন মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি, আগ্রহ ও জীবনাচরণ বুঝতে সহায়তা করে। পাঠককে আমের রাজধানীখ্যাত এই জেলাকে ভিন্ন আঙ্গিকে পরিচয় করিয়ে দিতে আলোচ্য নিবন্ধে ওই অঞ্চলে এখনো অবশিষ্ট ঐতিহাসিক মুসলিম স্থাপত্য নিদর্শনাবলির বিবরণ তুলে ধরা হলো।

ছোট সোনামসজিদ

বড় সোনামসজিদ ভারতের গৌড়ে আর ছোট সোনামসজিদ বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। প্রাপ্ত শিলালিপি থেকে জানা যায়, মসজিদটি সুলতান আলাউদ্দীন শাহের রাজত্বকালে (১৪৯৪-১৫১৯) অলি মুহাম্মদ বিন আলী কর্তৃক নির্মিত হয়েছিল। পুরো মসজিদটি অলংকরণে যে টেরাকোটা ও টাইলসগুলো ব্যবহার করা হয়েছে, তাতে সুলতানি আমলের নির্মাণশৈলীর পরিচয় ফুটে ওঠে। মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৮২ ফুট ও প্রস্থ ৫২.৫ ফুট। মসজিদটিতে ১৫টি গম্বুজ রয়েছে, যা সুলতানি আমলে নির্মিত স্থাপত্যের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। এটি ভারতে অবস্থিত সোনামসজিদের চেয়ে আকারে ছোট এবং মসজিদের বাইরে অথবা শুধু গম্বুজগুলোতে একসময় সোনালি আস্তরণ ছিল; আর সে কারণেই স্থানীয় লোকজন কর্তৃক মসজিদটি ছোট সোনামসজিদ নামে পরিচিতি লাভ করে। বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীরের সমাধি এই মসজিদ প্রাঙ্গণে অবস্থিত।

দারাসবাড়ি মসজিদ ও মাদ্রাসা
দারাসবাড়ি মসজিদ ও মাদ্রাসা

দারাসবাড়ি মসজিদ ও মাদ্রাসা

১৯৭০-এর দশকে কোনো এক কৃষকের লাঙলের নিচে প্রাচীন ইটের দেখা মেলে। তৈরি হয় রহস্য। রহস্যময় সেখান থেকে পরে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় আবিষ্কৃত হয় এক প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়—দারাসবাড়ি মাদ্রাসার ধ্বংসাবশেষ। ‘দারাস’ আরবি শব্দ, যার অর্থ ‘পাঠ’। বাংলায় সুলতানি আমলে বর্তমান শিবগঞ্জের শাহবাজপুর ইউনিয়নে এই বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছিল। দারাসবাড়ি মাদ্রাসাকে বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় মনে করা হয়। মাদ্রাসাটির সুনাম তৎকালীন পুরো ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শিক্ষার্থীরা এখানে পাঠ নিতে আসতেন।

মাদ্রাসার পশ্চিমে রয়েছে এক বিশাল দিঘি। আর দিঘির পশ্চিম পাড়ে রয়েছে আরেক প্রাচীন স্থাপত্য নিদর্শন, যা দারাসবাড়ি মসজিদ নামে পরিচিতি লাভ করে। মসজিদটির ছাদ এখন ভেঙে পড়ে আছে। সুলতানি আমলের এই মসজিদে মুসলিম মহিলাদের জন্যও নামাজ আদায়ের সুব্যবস্থা ছিল।

খঞ্জন দিঘির মসজিদ
খঞ্জন দিঘির মসজিদ

খঞ্জন দিঘির মসজিদ

প্রাচীন খনিয়া দিঘির পূর্ব পাশের তীর ঘেঁষে অবস্থিত পনেরো শতকের এই মসজিদটি দীর্ঘকাল জঙ্গলের ভেতর চাপা পড়ে ছিল। পরে জঙ্গল কমে গেলে মসজিদের ধ্বংসাবশেষ মানুষের চোখে পড়ে। একটি বড় গম্বুজবিশিষ্ট এই মসজিদটি ‘রাজ বিবির মসজিদ’ নামেও পরিচিত। বর্তমানে মসজিদটি সংস্কার করা হয়েছে। এখানে এখন স্থানীয় মুসল্লিগণ নিয়মিত নামাজ আদায় করেন।

ওয়ালী শাহ নেয়ামতুল্লাহ মাজার
ওয়ালী শাহ নেয়ামতুল্লাহ মাজার

তহখানা কমপ্লেক্স, তিন গম্বুজ মসজিদ ও শাহ নিয়ামতউল্লাহর মাজার

‘তহ’ ও ‘খানা’ ফারসি শব্দ। ‘তহ’ অর্থ ঠান্ডা। আর ‘খানা’ অর্থ ঘর। ‘তহখানা’ অর্থ ঠান্ডাঘর। মোগল সম্রাট শাহ সুজা (১৬১৬-৬১) তাঁর মুর্শিদ শাহ নিয়ামতউল্লাহকে ধর্ম প্রচারের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে স্থায়ী আস্তানা হিসেবে একটি ভবন নির্মাণ করে দিয়েছিলেন। ভবনটি এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল—গ্রীষ্মকালেও ভবনের ভেতরে মোটামুটি শীতল থাকত। সেখানে থেকে তিনি দীর্ঘকাল ধর্ম প্রচার করেছেন। মুরিদদের জন্য সেখানে খাবারদাবার রান্না করা হতো। এখনো সেখানে বড় বড় উনুনের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়। সম্রাট শাহ সুজা মাঝে মাঝে তাঁর মুর্শিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসে তহখানায় থেকে যেতেন। শাহ নিয়ামতউল্লাহর অনেক কেরামতির জনশ্রুতি আজও লোকমুখে শোনা যায়।

শাহ নিয়ামতউল্লাহ ১০৮০ হিজরি সনে মৃত্যুবরণ করলে ঐতিহ্যবাহী তহখানা কমপ্লেক্স আঙিনায় তিন গম্বুজ মসজিদের উত্তর পাশে তাঁকে সমাহিত করা হয়।

ধনিয়াচক মসজিদ
ধনিয়াচক মসজিদ

ধনিয়াচক মসজিদ

বাংলায় মুসলিম স্থাপত্যকীর্তির আরেক চমৎকার নিদর্শন ধনিয়াচক মসজিদ। মসজিদটি সোনামসজিদ স্থলবন্দর থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। তিন গম্বুজবিশিষ্ট এই মসজিদের সামনে তিনটি, উত্তর ও দক্ষিণে দুটি করে আরও চারটি প্রবেশ পথ রয়েছে। মসজিদের স্থাপত্যশৈলী ও অসাধারণ টেরাকোটা চোখে পড়ার মতো।

এ ছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জের চাঁপাই জামে মসজিদ, হজরত বুলন শাহ মাজার, মহারাজপুর জামে মসজিদ, মাঝপাড়া জামে মসজিদসহ আরও অনেক স্থাপত্য নিদর্শন মুসলিম ঐতিহ্য বহন করে। এসব স্থাপত্য নিদর্শন থেকে আমরা বুঝতে পারি, ঐতিহাসিক কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সুলতানি আমল থেকে ইসলামি শিক্ষা-সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ ছিল।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মসজিদগুলো হয়ে উঠুক শিশুবান্ধব

ফয়জুল্লাহ রিয়াদ
মসজিদগুলো হয়ে উঠুক শিশুবান্ধব

মসজিদ আল্লাহর ঘর—ইসলামি শিক্ষা, সভ্যতা ও রাষ্ট্র পরিচালনার প্রাণকেন্দ্রও। রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম মসজিদের মিম্বর থেকে সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনা করতেন। মিম্বরে বসেই যুদ্ধের পরিকল্পনা সাজানো হতো, বিচারিক কার্যক্রমও পরিচালিত হতো এখান থেকে। সে যুগে নারী-পুরুষ, ছোট-বড় সবাই নির্ভয়ে মসজিদে আসতেন। নবীজির মুখনিঃসৃত মূল্যবান নসিহত থেকে নিজেদের জীবনের পাথেয় সংগ্রহ করতেন।

ইবাদত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমের পাশাপাশি মসজিদ ছিল আলোকিত প্রজন্ম গঠনের গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণস্থল। নবী করিম (সা.)-এর যুগে শিশুরা মসজিদে আসত, ঘুরে বেড়াত, ইবাদত শিখত এবং সাহাবিদের পাশে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করত। মসজিদ ছিল কচিকাঁচাদের ভালোবাসার জায়গা। কোনো ভয় বা নিষেধাজ্ঞার প্রতিবন্ধকতা ছিল না তাদের।

কিন্তু আজকের বাস্তবতা অনেক ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ভিন্ন। শিশুরা মসজিদে এলে অনেকেই তাদের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করেন, সামান্য দুষ্টুমিতেই ধমক দেন, এমনকি কখনো তাড়িয়েও দেন। এতে করে অনেক অভিভাবকই নিজের সন্তানদের সহজে মসজিদে আনতে চান না। ফলে ধীরে ধীরে মসজিদের সঙ্গে নতুন প্রজন্মের দূরত্ব তৈরি হয়। অথচ ভবিষ্যতে এই প্রজন্মই উম্মতের দায়িত্ব গ্রহণ করবে। তাই তাদের মসজিদমুখী করা এখন সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দাবি।

নবীজির যুগে শিশুদের মসজিদে গমন

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে মসজিদে শিশুদের স্বাভাবিক ও স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি ছিল। নবীজি (সা.)-এর চারপাশে সাহাবিদের সঙ্গে ছোট বাচ্চাদেরও দেখা যেত। নবীজি (সা.) কখনো তাদের ধমক দিতেন না, তাড়িয়ে দিতেন না। তিনি শিশুদের উপস্থিতিকে স্বাগত জানাতেন। তাদের প্রতি অসীম মমতা দেখাতেন। নামাজ চলাকালেও নবীজি (সা.) শিশুদের প্রতি বিশেষ কোমলতা প্রদর্শন করতেন। তাঁর নাতি হাসান বা হুসাইন (রা.) কখনো তাঁর পিঠে চড়ে বসত। তিনি তাড়াহুড়ো না করে বরং তাদের ভালোবাসার খাতিরে সিজদা দীর্ঘ করতেন।

একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজের সিজদায় গেলে হজরত হাসান কিংবা হোসাইন (রা.) তাঁর পিঠে চড়ে বসে। এ কারণে নবীজি (সা.) খুব দীর্ঘ সময় সিজদায় থাকেন। নামাজ শেষে সাহাবিরা এর কারণ জানতে চাইলে নবীজি (সা.) বলেন, ‘আমার এই নাতি আমাকে বাহন বানিয়ে নিয়েছিল, তাই তাকে নামিয়ে দিতে আমি তাড়াহুড়ো করতে চাইনি, যতক্ষণ না সে স্বাভাবিকভাবে নেমে আসে।’ (সুনানে নাসায়ি: ১১৪১)। মেয়েশিশুরাও নবীজির স্নেহ থেকে বঞ্চিত হতো না। তারাও মসজিদে আসত। হজরত কাতাদা (রা.) বলেন, ‘নবীজি (সা.) তাঁর কন্যা জাইনাবের মেয়ে উমামাকে কাঁধে নিয়ে নামাজ পড়তেন। সিজদায় গেলে তাকে নামিয়ে দিতেন এবং দাঁড়ালে আবার কাঁধে তুলে নিতেন।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৯১৭)

আমাদের দেশের বেদনাদায়ক বাস্তবতা

দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের সমাজে ‘নামাজের প্রতি শ্রদ্ধা’ দেখানোর লেভেল লাগিয়ে অনেকেই শিশুদের প্রতি রূঢ় আচরণকে বৈধ মনে করেন। তাদের ধমক দিয়ে মসজিদ থেকে বের করে দেন। কোনো কোনো মসজিদ কমিটি ‘বাচ্চাদের মসজিদে আনা নিষিদ্ধ’ লেখা সাইনবোর্ডও টাঙিয়ে রাখেন মসজিদের সামনে। এসব আচরণ শিশুদের কোমল হৃদয়ে গভীর প্রভাব ফেলে। পরিণতিতে সে মসজিদকে ভয় পেতে শুরু করে। যে রাসুল (সা.) শিশুদের মাথায় মমতার পরশ বুলিয়ে দিতেন, তাঁর উম্মতের কেউ কেউ আজ শিশুদের বকাঝকা করে মসজিদ থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছে, এটা বড় লজ্জার বিষয়।

শিশুদের শিক্ষাদানের পদ্ধতি হোক নম্রতা

শিশুরা দেহ-মন উভয় দিক থেকে কোমল। তারা কঠোরতা সহ্য করতে পারে না। নবীজি (সা.) বাচ্চাদের প্রতি খুবই কোমল ছিলেন। আল্লাহ তাআলাও কোমলতা পছন্দ করেন। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা কোমল আচরণকারী, তিনি সর্বক্ষেত্রে কোমলতা ভালোবাসেন।’ (সহিহ বুখারি: ৬০২৪)। অন্য হাদিসে নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নম্রতা থেকে বঞ্চিত, সে প্রকৃত কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত।’ (সহিহ মুসলিম: ২৫৯০)। আমাদেরও উচিত বাচ্চাদের প্রতি কোমলতা প্রদর্শন করা। তাদের কিছু শেখাতে হলেও আদুরে গলায় শিশুসুলভ ভঙ্গিতে শেখানো। বাচ্চাদের জন্য এটি কঠোরতা থেকেও বেশি ফলপ্রসূ।

শিশুরা হোক মসজিদমুখী

শিশুদের মসজিদমুখী করতে হলে নম্রতা, কোমলতা ও ভালোবাসা দিয়ে কাছে টানতে হবে। তাদের জন্য শিশুবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে হবে। মসজিদের আঙিনায় শিশুদের জন্য আলাদা কর্নার হতে পারে। সেখানে তাদের উপযোগী রঙিন বই, কোরআন শেখার বিভিন্ন মজাদার উপকরণ থাকতে পারে। এতে তারা ধীরে ধীরে মসজিদের প্রতি আকৃষ্ট হবে। পাশাপাশি মসজিদ কমিটি ও ইমাম সাহেবগণ নানা ধরনের উৎসাহমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারেন। হতে পারে শিশুদের জন্য সাপ্তাহিক বিশেষ ক্লাস। যেখানে শিশুসুলভ ভঙ্গিতে তাদের ইসলামের মৌলিক জ্ঞান শেখানো হবে। যারা এতে নিয়মিত উপস্থিত হবে, তাদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ কার্যক্রমও থাকতে পারে।

মসজিদে আসার পর শিশুদের একটু শব্দে কেউ যদি রেগে যায়, বিনয়ের সঙ্গে তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে পারেন ‘নবীজির মসজিদেও তো শিশুদের বিচরণ ছিল। আমরা তাদের প্রতি কোমল হই। কঠোর আচরণ পরিত্যাগ করি।’ এভাবে ধীরে ধীরে সমাজের পরিবেশ বদলে যাবে।

আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আমরা যদি চাই, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ভালো, সচ্চরিত্রবান, নামাজি ও ইসলামি মূল্যবোধসম্পন্ন হোক—তাহলে তাদের জন্য মসজিদ উন্মুক্ত করে দিতে হবে। উৎসাহ, অভয়, ভালোবাসা দিয়ে ও নানা পরিকল্পনা করে তাদের মসজিদমুখী করতে হবে। তাহলেই গড়ে উঠবে আলোকিত প্রজন্ম।

লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুস সুন্নাহ রাজাবাড়ী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ফুটপাতে পথশিশুদের হিমশীতল রাত

হাবীবুল্লাহ বাহার চৌধুরী 
ফুটপাতে পথশিশুদের হিমশীতল রাত

বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশ, যা ভারত ও মিয়ানমার দ্বারা বেষ্টিত। এই দেশে পাহাড়-পর্বত ও ঘন জঙ্গল সীমিত, মরুভূমিহীন ভূখণ্ডে বিরাজ করে ষড়্ঋতুর মনোমুগ্ধকর আনাগোনা। ঋতুর এই পরিবর্তন প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের আবেগ-অনুভূতি ও সভ্যতাকে নতুন রঙে রাঙিয়ে তোলে। ছয় ঋতুর মধ্যে অন্যতম হলো শীতকাল, যা বছরে একবার হিমশীতল পরশ নিয়ে আসে। আমরা সর্বদা এর আগমনের অপেক্ষায় থাকি। ঢাকা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে শীতের তীব্রতা কম হলেও উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে নেমে আসে অপ্রত্যাশিত শৈত্যপ্রবাহ।

১৮ কোটি মানুষের এই দেশে শীতকালকে ঘিরে জমে ওঠে নানা আয়োজন, প্রয়োজন ও আমোদ-প্রমোদ। প্রভাতে গ্রামের ঘরে ঘরে পিঠা-পায়েসের বিচিত্র স্বাদে ভরে ওঠে সবার মন। শীতকে কেন্দ্র করে শহরেও চলে নানা আয়োজন। আবার লেপ-কম্বল, সোয়েটার, শাল, মাফলারসহ বিভিন্ন শীতবস্ত্রের দোকানে লেগে থাকে প্রচণ্ড ভিড়। এগুলোর চাহিদাও ব্যাপক, কারণ তীব্র শীতে উষ্ণতার প্রয়োজন সবার।

এই শীতের আমেজে যখন সাধারণ মানুষ লেপের নিচে সোয়েটার জড়িয়ে উষ্ণতা খোঁজে, ঠিক তখনই একদল মানুষ শুয়ে থাকে রাস্তার ধারে—ফুটপাতে। অনেকে বিভিন্ন অলিগলিতে জায়গা খোঁজে, আবার পাথর হৃদয়ের মানুষের তাড়নায় তাদের জায়গা হয় না সেখানেও। তারা আশ্রয় নেয় ডাস্টবিনের পাশে—দুর্গন্ধময় স্থানে। এদের জন্য শীতকাল যেন অভিশাপের এক ঋতু। গৃহহীন ও ভবঘুরেদের কাছে এই সময়টা অগ্নিকুণ্ডের চেয়ে ভয়ংকর। ছেঁড়া পাটি বা বস্তাই তাদের কোমল বিছানা! পাতলা গেঞ্জিই হয় তাদের সোয়েটার। ভাপা পিঠা বা খেজুরের রসের কথা তারা তো ভাবতেও পারে না। এভাবেই মানবেতর জীবন যাপন করে এই বঞ্চিত মানুষেরা।

দেশে পথমানবের সংখ্যা কয়েক লাখ। এদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু। অর্থনৈতিক দুর্বলতা ও বেকারত্বের জাঁতাকলে পড়ে তারা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়। শহরে দালানকোঠায় বড় হয়ে ওঠা আমরা কি কখনো এদের কথা ভেবেছি? অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানহীন এই শিশুরা কি আমাদের ভবিষ্যৎ নয়? আধুনিকতার এই যুগেও যদি তারা বৈষম্যের শিকার হয়, তবে তাদের বেঁচে থাকার সার্থকতা কোথায়?

এই যাযাবর শিশু-কিশোররা তীব্র শীতের মাঝে বস্ত্রহীন অবস্থায় ঘুরে বেড়ায়, কুড়ানো পলিথিন বিছিয়ে বালিশ ছাড়া ঘুমায়। এই পথশিশুরাও তো চায় সবার মতো স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে। শীতের দিনে একটু উষ্ণতা তো তাদেরও প্রাপ্য। তাই প্রতিটি সচেতন নাগরিকের উচিত তাদের প্রতি সহায়তার হাত বাড়ানো এবং বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়ানো। এটি কেবল মানবিক দায়িত্বই নয়, সামাজিক ও নৈতিক কর্তব্যও বটে। এ ক্ষেত্রে কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে:

  • রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ: দ্রুত শীতবস্ত্র বিতরণ ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা।
  • জনগণের অংশগ্রহণ: টিম গঠন করে সাপ্তাহিক বা মাসিক ত্রাণ বিতরণের ব্যবস্থা করা।

আর এই বঞ্চিতদের জন্য এসবের পাশাপাশি যদি শিক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায়, তবে একদিন এই সমাজেও ফিরে আসবে পূর্ণ মানবতা। পথশিশুদের আহ্লাদে আলোকিত হয়ে উঠবে এই দেশ। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এটি এক নতুন ইতিহাস হয়ে থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আপনার জিজ্ঞাসা

ফরজ গোসলের সময় নারীদের চুল ধোয়ার বিধান

মুফতি শাব্বির আহমদ
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ৫৭
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন: ফরজ গোসলের সময় নারীদের খোঁপা খুলে সম্পূর্ণ চুল ধৌত করতে হবে নাকি খোঁপার ওপরে পানি ঢেলে দিলেই হবে? এ বিষয়ে ইসলামের বিধান জানালে উপকৃত হব।

সাদিয়া মৌ, উত্তরা, ঢাকা।

উত্তর: আপনার প্রশ্নটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা অনেক নারীরই মনে আসে। পবিত্রতা অর্জনের জন্য ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম জানা একান্ত জরুরি।

ফরজ গোসলের মৌলিক বিধান

গোসল ফরজ হওয়ার পর পুরো শরীর পানি দিয়ে ধৌত করা আবশ্যক। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে নির্দেশ দিয়েছেন, ‘যদি তোমরা অপবিত্র হও, তাহলে ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন করো।’ (সুরা মায়েদা: ৬)। ফরজ গোসলের তিনটি ফরজের মধ্যে অন্যতম হলো: শরীরের প্রতিটি বাহ্যিক অংশে পানি পৌঁছানো। চুল, পশমের নিচে সামান্য যে অংশটুকু ঢাকা থাকে, তাতেও পানি পৌঁছানো জরুরি।

নারীদের চুল ধোয়ার ক্ষেত্রে মূল নির্দেশনা

নারীদের চুলের ক্ষেত্রে বিধানটি নির্ভর করে চুল খোলা আছে নাকি শক্ত বেণি বা খোঁপা বাঁধা আছে তার ওপর। যদি চুল খোলা থাকে বা এমনভাবে সামান্য খোঁপা করা থাকে, যা খুলতে কোনো কষ্ট হয় না, তাহলে চুলের গোড়াসহ সম্পূর্ণ চুল ধৌত করা ফরজ। চুলের কোনো অংশ শুকনো থেকে গেলে গোসল শুদ্ধ হবে না।

তবে যদি চুলে শক্ত বেণি বা খোঁপা বাঁধা থাকে এবং তা খুলে গোসল করা কষ্টসাধ্য বা সময়ের ব্যাপার হয় (যেমন, ঘন, লম্বা চুল), তাহলে খোঁপা বা বেণি খুলে সব চুল ধৌত করা জরুরি নয়। এ ক্ষেত্রে শুধু চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছানোই যথেষ্ট হবে।

এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা এসেছে সাহাবিয়া হজরত উম্মে সালামা (রা.)-এর একটি বর্ণনা থেকে। তিনি বলেন, ‘একদিন আমি আল্লাহর রাসুলকে (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমি খুব শক্তভাবে আমার চুলে বেণি বাঁধি। ফরজ গোসলের সময় কি বেণি খুলতে হবে?’ আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন, ‘না। তোমার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট—মাথায় তিন আজলা পানি ঢেলে দেবে এবং পুরো শরীরে পানি প্রবাহিত করবে। তাহলেই তুমি পবিত্র হয়ে যাবে।’ (সহিহ মুসলিম: ২৩০)

এই হাদিস প্রমাণ করে যে কষ্ট লাঘবের জন্য নারীদের ক্ষেত্রে বেণি বা খোঁপা না খুলে শুধু চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছানোই যথেষ্ট।

হানাফি ফিকহের সুপ্রসিদ্ধ ফতোয়াগ্রন্থ ‘আল-বাহরুর রায়িক’-এ এই বিষয়ে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে—‘নারীদের খোঁপা বা বেণি খুলে চুল ভেজানো কষ্টকর হলে খোঁপা থাকা অবস্থায় চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছানোই যথেষ্ট। তবে চুলে খোঁপা না থাকলে পুরো চুল ধোয়া সর্বসম্মতিক্রমে ফরজ।’ (আল-বাহরুর রায়িক: ১ / ৫৪)

সারসংক্ষেপ হলো, যদি খোঁপা বা বেণি খোলা কষ্টকর হয়, তবে শুধু চুলের গোড়ায় ভালোভাবে পানি পৌঁছানো ফরজ। যদি খোঁপা বা বেণি খুলতে খুব বেশি সমস্যা না হয় বা তা সামান্য আলগা করে বাঁধা থাকে, তবে চুল খুলে পুরো চুল ভিজিয়ে ভালোভাবে গোসল করাই উত্তম ও মুস্তাহাব। এতে পবিত্রতা অর্জনের ক্ষেত্রে কোনো সন্দেহের অবকাশ থাকে না এবং ইসলামের পরিচ্ছন্নতার নির্দেশনার পূর্ণ অনুসরণ হয়। আর চুল যদি খোলা থাকে, তাহলে সম্পূর্ণ চুল ধোয়া আবশ্যক।

উত্তর দিয়েছেন: মুফতি শাব্বির আহমদ, ইসলামবিষয়ক গবেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শায়খ শরফুদ্দিন আবু তাওয়ামার হারিয়ে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়

তাসনিফ আবীদ
শায়খ শরফুদ্দিন আবু তাওয়ামার হারিয়ে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলার প্রাচীন রাজধানী সোনারগাঁয়ের দরগাবাড়ি প্রাঙ্গণে কালের সাক্ষী হয়ে আজও টিকে আছে কিছু জীর্ণ স্থাপনা। অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকা এসব স্মৃতিচিহ্ন আজ থেকে প্রায় সাড়ে সাত শ বছর আগে জ্ঞান ও সভ্যতার এক আলোকবর্তিকা ছিল। এখানে ছিল উপমহাদেশে ইলমে হাদিস চর্চার প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মহান মনীষী ও হাদিসবিশারদ শায়খ শরফুদ্দিন আবু তাওয়ামা (রহ.)।

বুখারা থেকে দিল্লি হয়ে বাংলায়

শায়খ শরফুদ্দিন আবু তাওয়ামা ১২০০ খ্রিষ্টাব্দের গোড়ার দিকে বর্তমান উজবেকিস্তানের ঐতিহাসিক বুখারা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। উচ্চশিক্ষা লাভ করেন খোরাসানে। শুধু হাদিস ও ফিকাহশাস্ত্রেই নয়—রসায়ন, প্রকৃতিবিজ্ঞান, ভেষজশাস্ত্র, গণিত, ভূগোল ও আইন শাস্ত্রেও বিশেষ পারদর্শী ছিলেন তিনি। খুব কম বয়সেই তিনি তীব্র জ্ঞানাকাঙ্ক্ষী ও ধর্মপ্রাণ হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। আনুমানিক ১২৬১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি জ্ঞানগত অগ্রসূরি ইমাম ইসমাইল বুখারি (রহ.)-এর মতো বুখারার মানুষের অসহযোগিতার কারণে দিল্লিতে হিজরত করেন।

দিল্লিতে দুনিয়াবিমুখ শায়খ আবু তাওয়ামা একটি ছোট মসজিদের পাশে খুপরি ঘরে বাস করতেন। আর জ্ঞানপিপাসুদের মাঝে আধ্যাত্মিক জ্ঞান বিতরণ করতেন। তিনি ছিলেন নির্ভীক, কাউকে পরোয়া করতেন না। শাসকদের ভুল ধরিয়ে দিতেন এবং আমির-নবাবদের ইচ্ছাবিলাসের কঠোর সমালোচনা করে সুপথ দেখাতেন। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে তিনি উপমহাদেশের প্রভাবশালী আলেম হয়ে ওঠেন। তাঁর প্রভাব এতটাই শক্তিশালী ছিল, সুলতান গিয়াসুদ্দিন বলবন তাঁর এই সর্বব্যাপী আধ্যাত্মিক প্রতাপকে সাম্রাজ্যের জন্য ঝুঁকি মনে করে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।

সুলতান বলবন কৌশলগত নির্দেশে শায়খ শরফুদ্দিন আবু তাওয়ামাকে দিল্লি ত্যাগের কথা বলেন। দুনিয়াবিমুখ এই বুজুর্গ তখন দিল্লি ত্যাগ করেন। জ্ঞানপিপাসু শিষ্য ও ভক্তদের নিয়ে শুরু করেন নিরুদ্দেশ যাত্রা।

উপমহাদেশে হাদিস চর্চার প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়

১২৭০ থেকে ১২৭৭ খ্রিষ্টাব্দের কোনো একসময়ে শায়খ শরফুদ্দিন আবু তাওয়ামা তদানীন্তন বাংলার রাজধানী সোনারগাঁয়ে এসে স্থায়ীভাবে বসবাসের সিদ্ধান্ত নেন। সোনারগাঁ আসার পথে বিহারের মানের শহরে তাঁর সঙ্গে ১৫ বছর বয়সী শরফুদ্দিন ইয়াহইয়া মানেরির পরিচয় হয়। তিনি তাঁর ইলমের প্রতি আগ্রহ ও মেধার প্রখরতা দেখে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে সঙ্গে নিয়ে আসেন। এরপর প্রিয় শিষ্যকে দিয়েই তিনি ভারতভূমিতে ইলমে হাদিস চর্চার প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন বিশ্বকোষ ও ইতিহাসবিদদের মতে, শায়খ আবু তাওয়ামার প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানে উপমহাদেশের প্রথম ইলমে হাদিসের আনুষ্ঠানিক শিক্ষাদান শুরু হয়। তিনি এখানে বিশেষভাবে সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম ও মুসনাদে আবু ইয়ালার পাঠ দান করতেন। এ ছাড়া এই বিশ্ববিদ্যালয়ে তাসাওফ, সমাজতত্ত্ব, ধর্মতত্ত্ব, আইনশাস্ত্র, তর্কশাস্ত্র, ইতিহাস, জ্যোতির্বিজ্ঞান, নৌবিদ্যা, ভেষজশাস্ত্র, গণিতশাস্ত্র, ভূগোলশাস্ত্র, রসায়নশাস্ত্র, পদার্থবিজ্ঞান, দর্শনশাস্ত্রসহ ইলমে দ্বীনের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিটি বিষয়ের ওপর শিক্ষা দেওয়া হতো।

বিশ্ববিদ্যালয়টির ছিল সমৃদ্ধ কুতুবখানা বা পাঠাগার। জ্ঞান আহরণের জন্য সুদূর বুখারা, খোরাসান, সিরিয়া, ইরাক, ইরান, ইয়েমেন ও দাক্ষিণাত্য থেকে শিক্ষার্থীরা ছুটে আসত। ধারণা করা হয়, এই বিদ্যাপীঠের ছাত্রসংখ্যা একসময় ১০ হাজারে পৌঁছেছিল। সময়ের ব্যবধানে প্রতিষ্ঠানটি হয়ে ওঠে বাংলার ধর্মজীবনের শুদ্ধি, সাংস্কৃতিক সচেতনতা, সমাজ-রাজনীতির শোধনাগারের প্রধান কেন্দ্র।

জ্ঞানের উজ্জ্বল নক্ষত্রের শেষ জীবন

শায়খ শরফুদ্দিন আবু তাওয়ামা সোনারগাঁয়ে দীর্ঘ ২৩ বছর ইলমের খেদমতে নিয়োজিত ছিলেন। হাদিস চর্চার পাশাপাশি তিনি ছিলেন তাসাউফের নীরব সাধক। তিনি সোহরাওয়ার্দী তরিকার পীর ছিলেন। তাঁর ছিল আত্মশুদ্ধির জন্য একটি খানকা। তিনি যে আন্ধার কোঠায় (ভূগর্ভস্থ একটি ছোট কক্ষ) ধ্যান করতেন, তা এখনো বিদ্যমান। তিনি তাসাউফ নিয়ে ‘মানজিলে মাকামাত’ এবং আইনশাস্ত্র নিয়ে ফারসি ভাষায় ‘নামায়ে হক’ নামে একটি কাব্যগ্রন্থ রচনা করেন।

১৩০০ খ্রিষ্টাব্দে শায়খ শরফুদ্দিন আবু তাওয়ামা নির্জনে ইবাদতের জন্য লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা আন্ধার কোঠায় ধ্যানরত অবস্থায় ইহলোকের সফর শেষ করেন। রওনা হন অনন্ত পথের যাত্রায়। তাঁকে খানকার পাশেই সমাহিত করা হয়। শায়খ আবু তাওয়ামার ইন্তেকালের পর তাঁর সুযোগ্য শিষ্য ও জামাতা শায়খ শরফুদ্দিন ইয়াহইয়া মানেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।

শায়খ শরফুদ্দিন আবু তাওয়ামা প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যাপীঠ উপমহাদেশের ইসলামি শিক্ষার এক অমূল্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। কিন্তু অযত্ন-অবহেলা এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তা এখন প্রায় মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। এই গৌরবময় ইতিহাস প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে প্রবাহিত করতে স্থাপনাগুলোর প্রতি যত্নের হাত বাড়িয়ে দেওয়া সময়ের দাবি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত