Ajker Patrika

হাদিসের গল্প: ব্যবসায় প্রতারণা ও বানরের ন্যায়বিচার

আমজাদ ইউনুস 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

প্রতারণা এক মারাত্মক ব্যাধি। এটি ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। প্রতারণা শুধু একজন মানুষের ব্যক্তিগত ক্ষতির কারণ নয়, বরং এটি সামগ্রিকভাবে একটি জাতির নৈতিক ও অর্থনৈতিক পতন ঘটায়। দুনিয়াতে প্রতারক ব্যক্তি একসময় নিজেরই বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে ফেলে। প্রতারণার ফলে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়, পারস্পরিক বিশ্বাস নষ্ট হয়। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রতারণা দীর্ঘমেয়াদে ব্যবসা–বাণিজ্যের ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রতারণার মাধ্যমে উপার্জিত সম্পদ টেকে না, বরং একদিন না একদিন তা ধ্বংস হয়ে যায়।

ইসলাম প্রতারণাকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে এবং একে সামাজিক অবক্ষয়ের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘দুঃখ সেই লোকদের জন্য, যারা মাপে কম দেয়। তারা যখন অন্যের কাছ থেকে মেপে নেয়, তখন পূর্ণমাত্রায় গ্রহণ করে, কিন্তু যখন অন্যকে মেপে বা ওজন দিয়ে দেয়, তখন কম দেয়।’ (সুরা আল-মুতাফফিফিন: ১-৩)

রাসুল (সা.) প্রতারকের কঠোর ভাষায় নিন্দা করেছেন। হাদিসে এসেছে, ‘যে প্রতারণা করে, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।’ (সহিহ মুসলিম: ১০২)

অবৈধ সম্পদ ভোগ করে জীবনযাপন করা যেমন দুনিয়াতে ক্ষতিকর, তেমনি আখিরাতেও তার জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতারকের জন্য ইহকাল ও পরকালের কঠিন শাস্তির কথা পবিত্র কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।

আবু হুরায়রা. (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) সাহাবিদের কাছে জানতে চাইলেন, ‘তোমাদের মধ্যে কে নিঃস্ব গরিব?’ সাহাবিরা বললেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ, যার কোনো টাকা–পয়সা নেই।’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘না। প্রকৃত গরিব ওই ব্যক্তি, যে কেয়ামতে পাহাড়সম নেকি নিয়ে উঠবে; কিন্তু সে জাহান্নামে যাবে। কারণ সে দুনিয়ায় কাউকে গালি দিয়েছিল, প্রতারণা করেছিল, অন্যের হক নষ্ট করেছিল ইত্যাদি। কেয়ামতের মাঠে ওইসব লোক তার কাছে পাওনা দাবি করবে। বিনিময়ে সে নিজের সব নেকি দিতে বাধ্য হবে। নেকি শেষ হলে তার কাছে দেওয়ার মতো আর কিছু থাকবে না। তখন সে পাওনাদারদের পাপের বোঝা নিজের মাথায় নিয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ (সহিহ মুসলিম: ৬৩৪৩)

রাসুল (সা.) মানুষকে সততা ও ন্যায়বিচারের শিক্ষা দিয়েছেন এবং প্রতারণার পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। ব্যবসার ক্ষেত্রে সততা ও বিশ্বাসযোগ্যতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা বোঝাতে তিনি একবার এক প্রতারক ব্যবসায়ীর ঘটনা উল্লেখ করেছেন। সেই ঘটনাটি সততা, ন্যায়বিচার এবং প্রতারণামুক্ত ব্যবসার শিক্ষা দেয়। নিচে হাদিসের আলোকে ঘটনাটি তুলে ধরা হলো।

আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ (ইসলামপূর্ব যুগে) এক ব্যক্তি জাহাজে বসে মদ বিক্রি করত এবং সে মদের সঙ্গে পানি মিশিয়ে প্রতারণা করত (তখন মদ বিক্রি অবৈধ ছিল না)। তার সঙ্গে একটি বানর ছিল। একদিন সেই বানর ব্যবসায়ীর টাকার থলেটি নিয়ে জাহাজের মাস্তুলে উঠে গেল। এরপর সে এক দিনার পানিতে ফেলতে লাগল এবং আরেক দিনার জাহাজে ফেলতে লাগল। এভাবে সমান দুই ভাগ করে দিল।’ (মুসনাদ আহমদ: ৯২৮২)

হাদিস থেকে শিক্ষা

পণ্যের সঙ্গে ভেজাল মেশানো: কোনো পণ্যের সঙ্গে ভেজাল মেশানো (যেমন দুধের সঙ্গে পানি মেশানো) একটি গুরুতর প্রতারণা।

বানরের ন্যায় বিচার: হাদিসে দেখা যায়, একটি অবুঝ প্রাণীও ন্যায়বিচার করতে পারে, অথচ মানুষ অনেক সময় সুবিচার থেকে দূরে থাকে।

ওই জাতির জন্য মদের বৈধতা: হাদিসে উল্লিখিত ব্যবসায়ী এমন এক জাতির ছিল, যাদের জন্য তখন মদ বৈধ ছিল। ইসলামের বিধান অনুযায়ী, মদ সম্পূর্ণ হারাম; তবে নবী (সা.)–এর আগের কিছু জাতির জন্য তা নিষিদ্ধ করা হয়নি।

সমুদ্রযাত্রা ও বাণিজ্যের বৈধতা: এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, সমুদ্রপথে সফর করা এবং জাহাজে বাণিজ্য করা ইসলামে অনুমোদিত। সাহাবিগণও ব্যবসা ও দ্বীনের প্রচারের জন্য সমুদ্রপথ ব্যবহার করতেন।

প্রাচীনকাল থেকে মুদ্রার প্রচলন: প্রাচীন যুগে মুদ্রার প্রচলন ও জাহাজের ব্যবহার ছিল। বহু প্রাচীনকাল থেকেই দিনার (স্বর্ণমুদ্রা) ও জাহাজ ব্যবহারের প্রচলন ছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত