Ajker Patrika

হজ খোদাপ্রেমের বিশ্ব সম্মেলন

রায়হান রাশেদ
আপডেট : ২৩ জুন ২০২৩, ১২: ৫০
হজ খোদাপ্রেমের বিশ্ব সম্মেলন

হজ ইসলামের ফরজ বিধান। অর্থে স্বাবলম্বী ব্যক্তির জন্য হজ পালন করা আবশ্যক। যে ঘরকে কেন্দ্র করে হজব্রত পালন করা হয়, তা পৃথিবীর প্রথম ঘর—কাবা। সৃষ্টির সূচনার আত্মপ্রকাশ হয়েছে কাবার পথ ধরে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই মানবজাতির জন্য প্রথম যে ঘর নির্মিত হয়েছে, তা বরকতময় ও বিশ্বজগতের দিশারি। এতে অনেক সুস্পষ্ট নিদর্শন আছে। যেমন মাকামে ইবরাহিম। যে সেখানে প্রবেশ করবে, সে নিরাপদ। মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে সেই ঘরের হজ করা তার অবশ্য কর্তব্য। আর কেউ প্রত্যাখ্যান করলে সে জেনে রাখুক, নিশ্চয়ই আল্লাহ বিশ্বজগতের মুখাপেক্ষী নন।’ (সুরা আল ইমরান: ৯৬-৯৭)

হজের উদ্দেশ্য আল্লাহকে খুশি করা। একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর আদেশ পালন করা। নিজেকে আল্লাহর কাছে পূর্ণ সমর্পণ করা। হজে বান্দা আল্লাহর জন্যই একনিষ্ঠ হয়ে আসে এবং তাঁরই সন্তুষ্টি কামনা করে। মানুষ যখন হজের ইচ্ছায় ঘর ছাড়ে, হৃদয় তখন উদ্বেলিত হয়ে ওঠে প্রভুর প্রেমে। শুভ্র পোশাক যখন গায়ে জড়িয়ে যায়, তখন মন কেঁপে ওঠে প্রিয় প্রভুর ঘর দর্শনের সুখানুভূতিতে। মানুষ তখন হারিয়ে যায় নতুন জগতে। সে ছুটে চলে অনন্ত অসীমের দিকে। তার কণ্ঠে থাকে হাজারো বছর ধরে অগণিত কণ্ঠে গেয়ে ওঠা ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক…।’ যে স্লোগান ইবরাহিম (আ.) থেকে শুরু হয়ে মুহাম্মদ (সা.)-এর কণ্ঠে পূর্ণতা পেয়ে উচ্চারিত হচ্ছে কাবা ঘরের দিকে ছুটে চলা প্রত্যেক হাজির কণ্ঠে। ইহরাম বাঁধা, কাবার তওয়াফ, আরাফাতের অবস্থান, সাফা-মারওয়ায় দৌড়ানো, মুজদালিফায় অবস্থান, কোরবানি, মাথা মুণ্ডানো, শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ—সবকিছুতে বিরাজ করে প্রভুপ্রেমের একনিষ্ঠতা, সমর্পণ ও একাগ্রতা। 

এখানে ধনী-গরিবের ভেদাভেদ নেই। শিক্ষিত-মূর্খের তফাত নেই। জ্ঞান-গরিমা প্রকাশের সুযোগ নেই। বুদ্ধি-কৌশল প্রয়োগের অবকাশ নেই। সবার মধ্যে আল্লাহকে পাওয়ার ব্যাকুলতা। প্রভুপ্রেমে বিলীন হওয়ার আকুলতা। নিজেকে মালিকের একনিষ্ঠ সেবক প্রমাণ করার প্রতিযোগিতা।

এখানে সবাই এক। সবার পদতলে একই মাটি, মাথার ওপরে খোলা আকাশ, পরনে সাদা কাপড়, মুণ্ডানো মাথা। কারও মুখে অযাচিত কথা নেই, আড়ম্বরতা নেই, সবার মুখে শুধু একই ধ্বনি ‘হাজির হে মালিক, আমি আপনার দরবারে হাজির…।’

বিশ্ব মুসলিমের ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের এক অনন্য নিদর্শন হজ। প্রতিবছর কয়েক লাখ মুসলমান বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসে আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করার জন্য। একই কাতারে শামিল হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তাওয়াফ করে আল্লাহর ঘর। ভ্রাতৃত্বের এমন নিদর্শন পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই। এটা এমন এক মিলনমেলা, যেখানে সবার মনে একটাই আশা ও উদ্দেশ্য থাকে, তা হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। এখানে পার্থিব কোনো চাওয়া-পাওয়ার হিসাব থাকে না। থাকে শুধুই ভ্রাতৃত্ব, পরস্পরের জন্য শুভকামনা। হজকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছে বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্ব।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বহুধাবিভক্ত মুসলিম জাতিকে বছরে অন্তত একটিবারের জন্য হলেও ঐক্যবদ্ধ করে হজ। বিশ্ব মুসলিমের মিলনমেলা হিসেবেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ এখানে আসা বিশ্বের প্রত্যেক মুসলমানের পোশাক, আমল, ছুটে চলা, উচ্চারণ এক হয়ে যায়। হজের দিনগুলোয় পৃথিবীতে বসবাসরত সব মুসলমানও অনুকরণ-অনুসরণ করে হাজিদের।

হজ পুণ্য ও সফলতার আশিস। অর্জনের ঝুলি সওয়াবে টইটম্বুর করার মহাতিথি। পাপকাজ ও অযথা কথনের বাহুল্য থেকে বিরত থাকতে পারলে হাজির জীবন হবে পাপ-পঙ্কিলতাহীন সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুর মতো। প্রভাতে ফোটা প্রথম লাল গোলাপের মতো। নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি হজ করল এবং হজ অবস্থায় কথা ও কাজে পাপ থেকে বিরত রইল, সে হজ শেষে সেদিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে ঘরে ফিরবে, যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিল।’ (বুখারি: ১৫২১) 

লেখক: ইসলামবিষয়ক গবেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাজায় ৫০০ কোরআনের হাফেজকে রাজকীয় সংবর্ধনা

ইসলাম ডেস্ক 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

গাজা শহরের পশ্চিমে অবস্থিত আশ-শাতি শরণার্থীশিবিরে এক বিশাল কোরআনিক শোভাযাত্রা ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই আয়োজনে প্রায় ৫০০ জন পবিত্র কোরআনের হাফেজ ও হাফেজা অংশগ্রহণ করেন। দুই বছর ধরে ইসরায়েলি ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের কবলে পিষ্ট এই জনপদে শোভাযাত্রাটি আনন্দ ও উদ্‌যাপনের এক নতুন আমেজ নিয়ে আসে।

আইয়াদুল খাইর ফাউন্ডেশন এবং কুয়েতভিত্তিক চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশন আলিয়ার যৌথ উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ‘গাজা কোরআনের হাফেজদের মাধ্যমে প্রস্ফুটিত হচ্ছে’—এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আয়োজিত হয় অনুষ্ঠানটি।

তাকবির ও তাহলিলের ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে আশ-শাতি শিবিরের ভেতর থেকে শোভাযাত্রাটি শুরু হয়। সুশৃঙ্খলভাবে হাফেজ ও হাফেজারা সারিবদ্ধ হয়ে এতে অংশ নেন। তাঁদের হাতে ছিল পবিত্র কোরআন, ফিলিস্তিনের জাতীয় পতাকা এবং ধৈর্য ও আশার প্রতীকসংবলিত নানা ফেস্টুন।

রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সাধারণ মানুষ করতালি ও দোয়ার মাধ্যমে এই গর্বের মুহূর্তের সঙ্গী হন। দীর্ঘদিনের বোমাবর্ষণ আর ধ্বংসস্তূপে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া রাস্তাগুলো এদিন এক স্বর্গীয় প্রশান্তি আর জন-উৎসবে রূপ নেয়।

অনুষ্ঠানের শেষে হাফেজ ও হাফেজাদের মধ্যে সম্মাননা সনদ ও বিশেষ উপহার বিতরণ করা হয়।

আয়োজকেরা জানান, গাজা উপত্যকার এই কঠিন বাস্তবতায় ধর্মীয় পরিচয় রক্ষা এবং নৈতিক মূল্যবোধকে জাগ্রত রাখাই ছিল এ সামাজিক উদ্যোগের প্রধান লক্ষ্য।

সূত্র: আল-আহেদ নিউজ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তাবলিগ জামাতের খুরুজের জোড় শুরু ২ জানুয়ারি

ইসলাম ডেস্ক 
তাবলিগ জামাতের শুরায়ি নেজামের জোড় ইজতেমা। ছবি: সংগৃহীত
তাবলিগ জামাতের শুরায়ি নেজামের জোড় ইজতেমা। ছবি: সংগৃহীত

আগামী ২, ৩ ও ৪ জানুয়ারি তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের (শুরায়ি নেজাম) ব্যবস্থাপনায় খুরুজের জোড় অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে প্রয়োজনীয় মাঠ প্রস্তুতির কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের (শুরায়ি নেজাম) মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান জানান, এই জোড়ে তাঁরাই অংশগ্রহণ করবেন, যাঁরা আল্লাহর রাস্তায় এক চিল্লা, তিন চিল্লা ও বিদেশ সফরের উদ্দেশ্যে বের হবেন এবং যাঁরা মেহনতের মাধ্যমে সাথিদের এই কাজে উদ্বুদ্ধ করে সঙ্গে নিয়ে আসবেন।

একটি মহল শুরায়ি নেজামের এই খুরুজের জোড়কে বিশ্ব ইজতেমা বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে জানিয়ে সবাইকে সতর্ক করে হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেন, এটি কোনো ইজতেমা নয়; বরং সীমিত পরিসরে খুরুজের প্রস্তুতিমূলক জোড়।

এদিকে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী টঙ্গীতে ৫৯তম বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের পর তা আয়োজন করা হবে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে তাবলিগ জামাত বাংলাদেশ (শুরায়ি নেজাম) গত ৩ নভেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিষয়টি দেশবাসীকে অবহিত করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আকাশপথে মুসলিম যাত্রীদের জন্য এমিরেটসের বিশেষ ব্যবস্থা

ইসলাম ডেস্ক 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আকাশপথে ভ্রমণরত মুসলিম যাত্রীদের ধর্মীয় প্রয়োজনীয়তা ও স্বাচ্ছন্দ্যকে গুরুত্ব দিয়ে নতুন উন্নত সংস্করণের পকেট জায়নামাজ চালু করেছে মধ্যপ্রাচ্যের বিমান সংস্থা এমিরেটস এয়ারলাইনস। আগের সংস্করণের তুলনায় জায়নামাজটি অধিক টেকসই ও আরামদায়ক হলেও এটি ওজনে হালকা এবং বহনে অত্যন্ত সুবিধাজনক।

এমিরেটস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের বহরের প্রতিটি ফ্লাইটে এখন থেকে এই বিশেষ পকেট জায়নামাজ পাওয়া যাবে। ফার্স্ট ক্লাস, বিজনেস ক্লাস কিংবা ইকোনমি—সব শ্রেণির যাত্রীদের জন্য এই সুবিধা উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। ফ্লাইট চলাকালে নামাজের প্রয়োজন হলে যাত্রীরা কর্তব্যরত কেবিন ক্রুদের কাছে অনুরোধ করলেই দ্রুত এই জায়নামাজ সরবরাহ করা হবে।

এমিরেটস কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে, যাত্রীদের সর্বোচ্চ স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করতে জায়নামাজটির মান ও স্থায়িত্ব বৃদ্ধিতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

সূত্র: ইসলামিক ইনফরমেশন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শীতের টুপি পরে নামাজ আদায় করা যাবে কি?

ইসলাম ডেস্ক 
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ১৯
ছবি: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি
ছবি: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি

শীতকালে প্রচণ্ড ঠান্ডার প্রকোপে অনেকেই কানটুপি, উলের টুপি কিংবা হুডি পরে থাকেন। এসব পরিধান করা অবস্থায় অনেক সময় নামাজের সময় হয়ে যায়। তাই নানা সময়ে মনে প্রশ্ন জাগে, শীতের টুপি বা হুডি পরে নামাজ আদায় করলে কি তা শুদ্ধ হবে?

ইসলামের বিধান হলো, নামাজে মাথা ঢাকা পুরুষের জন্য ফরজ নয়, বরং এটি নামাজের আদব ও সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত। রাসুলুল্লাহ (সা.) সাধারণত মাথা ঢেকেই নামাজ আদায় করতেন। আবু দাউদ শরিফে এসেছে, নবীজি (সা.) পাগড়ি পরিহিত অবস্থায় নামাজ আদায় করতেন। ফিকহের দৃষ্টিতে কানটুপি, উলের টুপি বা সাধারণ টুপি—সবই মাথা ঢাকার পোশাকের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং, শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে কানটুপি পরে নামাজ আদায় করা সম্পূর্ণ জায়েজ।

কানটুপি বা হুডি পরে নামাজ আদায় করার সময় একটি বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি—সেটি হলো সিজদা। সিজদার সময় কপাল সরাসরি মাটিতে বা জায়নামাজে লাগানো আবশ্যক। যদি টুপিটি এমনভাবে পরা হয়, যা কপালকে ঢেকে রাখে এবং মাটিতে কপাল ঠেকতে বাধা দেয়, তবে সিজদা অপূর্ণ থেকে যেতে পারে। তাই সিজদার সময় কপাল উন্মুক্ত রাখা উত্তম। তবে কপাল সামান্য আবৃত থাকলেও নামাজ হয়ে যাবে।

শীত থেকে বাঁচতে নাক-মুখ ঢেকে নামাজ আদায় করা অনুচিত। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মুখ ঢেকে নামাজ আদায় করা মাকরুহ। তাই কান ও গলা আবৃত থাকলেও নাক-মুখ খোলা রাখা উচিত।

তাই শৈত্যপ্রবাহের সময় নিশ্চিন্তে কানটুপি পরা যাবে যদি টুপিটি পবিত্র (পাক-সাফ) হয়, এটি অহংকার বা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে না হয়ে কেবল শীত নিবারণের জন্য হয় এবং সিজদার সময় কপাল মাটিতে স্থাপনে কোনো বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি না করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত