মুফতি আবু আবদুল্লাহ আহমদ
হজরত খাজা মইনুদ্দিন চিশতী (রহ.) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম প্রধান সুফি সাধক ও ইসলামের এক নিবেদিতপ্রাণ দাঈ। তাঁর প্রচারিত চিশতিয়া তরিকা শুধু ভারতবর্ষেই নয়, সমগ্র বিশ্বের সুফি চিন্তাধারায় গভীর প্রভাব ফেলেছে। মানবপ্রেম, সহনশীলতা ও পরোপকারিতার মাধ্যমে তিনি অসংখ্য মানুষকে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় দিয়েছেন। তাঁর আধ্যাত্মিক শক্তি ও অসামান্য নৈতিকতার কারণে তিনি ‘গরিবে নেওয়াজ’ (গরিবদের বন্ধু) উপাধিতে ভূষিত হন।
প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা
খাজা মইনুদ্দিন চিশতি (রহ.) ১১৪১ খ্রিষ্টাব্দে (৫৩৬ হিজরি) ইরানের সিস্তান প্রদেশের সিজিস্তান অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সৈয়দ গিয়াস উদ্দিন এবং মাতার নাম সৈয়দা উম্মুল ওয়ারা মাহে নুর। তিনি ছিলেন মহান সাহাবি হজরত আলি (রা.)–এর বংশধর। শৈশবে খাজা মইনুদ্দিন পারিবারিক স্নেহ-মমতার মধ্যে বেড়ে উঠলেও মাত্র ১৫ বছর বয়সে পিতা–মাতাকে হারান। উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত ফলের বাগান ও একটি বাতচক্র ছিল তাঁর জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম। কিন্তু এই পার্থিব সম্পদ তাঁকে আধ্যাত্মিক তৃষ্ণা থেকে নিবৃত্ত করতে পারেনি।
আধ্যাত্মিকতার দুনিয়ায় আগমন
একদিন তিনি তাঁর বাগানে কাজ করছিলেন। তখন এক সুফি দরবেশ, হজরত ইব্রাহিম কুন্দুজি (রহ.) সেখানে আসেন। খাজা মইনুদ্দিন তাঁর সঙ্গ পেয়ে এক নতুন আধ্যাত্মিক দিগন্তের সন্ধান পান। দরবেশের পরামর্শে তিনি তাঁর সম্পদ দান করে দেন এবং জ্ঞানার্জনের উদ্দেশে বুখারায় যাত্রা করেন। বুখারা ও সমরখন্দের মতো জ্ঞানকেন্দ্রে তিনি কোরআন, হাদিস, তাফসির, ফিকহ, যুক্তিবিদ্যা ও অন্যান্য ইসলামি শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। পরবর্তীতে তিনি নিশাপুরে গিয়ে বিখ্যাত সুফি সাধক হজরত উসমান হারুনির শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। এই সময় দীর্ঘ ২০ বছর ধরে গুরুর সঙ্গে থেকে আত্মশুদ্ধি, ত্যাগ ও কঠোর ইবাদতের মাধ্যমে সুফি মারেফাতে গভীর দক্ষতা অর্জন করেন খাজা মইনুদ্দিন।
ভারতে আগমন ও ইসলাম প্রচার
মদিনায় অবস্থানকালে তিনি স্বপ্নে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–কে দেখতে পান, যিনি তাঁকে হিন্দুস্তানে ইসলামের দাওয়াত প্রচারের নির্দেশ দেন। মহানবী (সা.)-এর নির্দেশনা অনুযায়ী, খাজা মইনুদ্দিন চিশতি ভারতবর্ষে আগমন করেন। তিনি প্রথমে লাহোর, পরে দিল্লি হয়ে আজমিরে পৌঁছান। আজমির তখন ছিল অত্যাচারী রাজা পৃথ্বীরাজ চৌহানের অধীনে। তাঁর আগমনে শাসক শ্রেণি অসন্তুষ্ট হলেও, সাধারণ জনগণ তাঁর আধ্যাত্মিক শক্তি, মানবিকতা ও ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়ে ইসলামের দিকে ধাবিত হয়। তিনি ধনীদের থেকে দূরে থেকে গরিব-দুঃখীদের সেবা করতেন, তাঁদের মুখে খাবার তুলে দিতেন। তাঁর দরবারে অসংখ্য হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে মানুষের ভিড় জমত, কারণ তিনি সব ধর্মের মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান প্রদর্শন করতেন। তিনি ভোগবিলাস, বৈষয়িক সম্পদের প্রতি আসক্তি এবং ক্ষমতার মোহ থেকে মুক্ত থাকার শিক্ষা দিতেন।
তাঁর বিখ্যাত শিষ্যদের মধ্যে রয়েছেন, হজরত কুতুবুদ্দিন বখতিয়ার কাকি (রহ.), হজরত বাবা ফরিদ গঞ্জে শকর (রহ.), হজরত নিজামুদ্দিন আউলিয়া (রহ.) প্রমুখ।
তাঁর মানবপ্রেমের অসংখ্য ঘটনা রয়েছে। একটি শিক্ষণীয় ঘটনা হলো—একদিন এক দরিদ্র লোক তাঁর দরবারে এসে বলল, ‘হুজুর, আমি ক্ষুধার্ত।’ খাজা মইনুদ্দিন (রহ.) তখন নিজের ঘরে কিছুই পাননি, তাই তিনি নিজের একমাত্র জামাটি খুলে দিয়ে বললেন, ‘এটি বিক্রি করে যা পাও, তা দিয়ে খেয়ে নাও।’ এই ঘটনার মাধ্যমে তিনি দেখিয়ে দিয়েছিলেন, প্রকৃত সুফির কাছে ধন-সম্পদ নয়, বরং মানবসেবা ও আত্মত্যাগই সবচেয়ে মূল্যবান।
খাজা মইনুদ্দিন চিশতী (রহ.) ছিলেন এক মহৎপ্রাণ সুফি, যিনি প্রেম, সহানুভূতি ও মানবতার বার্তা প্রচার করেছেন। তাঁর দরবার আজমির শরিফে অবস্থিত এবং লাখ লাখ মানুষ সেখানে তাঁর বরকত লাভের আশায় সমবেত হয়। তাঁর জীবন থেকে শিক্ষা হলো—মানবপ্রেম, বিনয়, এবং আল্লাহর প্রতি সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ। তিনি আমাদের শেখান, প্রকৃত ইসলাম ভালোবাসা, করুণা এবং অন্যের কল্যাণে আত্মনিবেদন করা।
তথ্যসূত্র
১. তাজকিরাতুল আওলিয়া, শেখ ফরিদুদ্দিন আত্তার।
২. সিয়ারুল আওলিয়া, নিজামুদ্দিন আউলিয়া।
৩. গরীবে নেওয়াজ: খাজা মইনুদ্দিন চিশতির জীবন ও শিক্ষাসমূহ, ড. জাকারিয়া আনসারি
৪. অন্যান্য।
হজরত খাজা মইনুদ্দিন চিশতী (রহ.) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম প্রধান সুফি সাধক ও ইসলামের এক নিবেদিতপ্রাণ দাঈ। তাঁর প্রচারিত চিশতিয়া তরিকা শুধু ভারতবর্ষেই নয়, সমগ্র বিশ্বের সুফি চিন্তাধারায় গভীর প্রভাব ফেলেছে। মানবপ্রেম, সহনশীলতা ও পরোপকারিতার মাধ্যমে তিনি অসংখ্য মানুষকে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় দিয়েছেন। তাঁর আধ্যাত্মিক শক্তি ও অসামান্য নৈতিকতার কারণে তিনি ‘গরিবে নেওয়াজ’ (গরিবদের বন্ধু) উপাধিতে ভূষিত হন।
প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা
খাজা মইনুদ্দিন চিশতি (রহ.) ১১৪১ খ্রিষ্টাব্দে (৫৩৬ হিজরি) ইরানের সিস্তান প্রদেশের সিজিস্তান অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সৈয়দ গিয়াস উদ্দিন এবং মাতার নাম সৈয়দা উম্মুল ওয়ারা মাহে নুর। তিনি ছিলেন মহান সাহাবি হজরত আলি (রা.)–এর বংশধর। শৈশবে খাজা মইনুদ্দিন পারিবারিক স্নেহ-মমতার মধ্যে বেড়ে উঠলেও মাত্র ১৫ বছর বয়সে পিতা–মাতাকে হারান। উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত ফলের বাগান ও একটি বাতচক্র ছিল তাঁর জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম। কিন্তু এই পার্থিব সম্পদ তাঁকে আধ্যাত্মিক তৃষ্ণা থেকে নিবৃত্ত করতে পারেনি।
আধ্যাত্মিকতার দুনিয়ায় আগমন
একদিন তিনি তাঁর বাগানে কাজ করছিলেন। তখন এক সুফি দরবেশ, হজরত ইব্রাহিম কুন্দুজি (রহ.) সেখানে আসেন। খাজা মইনুদ্দিন তাঁর সঙ্গ পেয়ে এক নতুন আধ্যাত্মিক দিগন্তের সন্ধান পান। দরবেশের পরামর্শে তিনি তাঁর সম্পদ দান করে দেন এবং জ্ঞানার্জনের উদ্দেশে বুখারায় যাত্রা করেন। বুখারা ও সমরখন্দের মতো জ্ঞানকেন্দ্রে তিনি কোরআন, হাদিস, তাফসির, ফিকহ, যুক্তিবিদ্যা ও অন্যান্য ইসলামি শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। পরবর্তীতে তিনি নিশাপুরে গিয়ে বিখ্যাত সুফি সাধক হজরত উসমান হারুনির শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। এই সময় দীর্ঘ ২০ বছর ধরে গুরুর সঙ্গে থেকে আত্মশুদ্ধি, ত্যাগ ও কঠোর ইবাদতের মাধ্যমে সুফি মারেফাতে গভীর দক্ষতা অর্জন করেন খাজা মইনুদ্দিন।
ভারতে আগমন ও ইসলাম প্রচার
মদিনায় অবস্থানকালে তিনি স্বপ্নে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–কে দেখতে পান, যিনি তাঁকে হিন্দুস্তানে ইসলামের দাওয়াত প্রচারের নির্দেশ দেন। মহানবী (সা.)-এর নির্দেশনা অনুযায়ী, খাজা মইনুদ্দিন চিশতি ভারতবর্ষে আগমন করেন। তিনি প্রথমে লাহোর, পরে দিল্লি হয়ে আজমিরে পৌঁছান। আজমির তখন ছিল অত্যাচারী রাজা পৃথ্বীরাজ চৌহানের অধীনে। তাঁর আগমনে শাসক শ্রেণি অসন্তুষ্ট হলেও, সাধারণ জনগণ তাঁর আধ্যাত্মিক শক্তি, মানবিকতা ও ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়ে ইসলামের দিকে ধাবিত হয়। তিনি ধনীদের থেকে দূরে থেকে গরিব-দুঃখীদের সেবা করতেন, তাঁদের মুখে খাবার তুলে দিতেন। তাঁর দরবারে অসংখ্য হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে মানুষের ভিড় জমত, কারণ তিনি সব ধর্মের মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান প্রদর্শন করতেন। তিনি ভোগবিলাস, বৈষয়িক সম্পদের প্রতি আসক্তি এবং ক্ষমতার মোহ থেকে মুক্ত থাকার শিক্ষা দিতেন।
তাঁর বিখ্যাত শিষ্যদের মধ্যে রয়েছেন, হজরত কুতুবুদ্দিন বখতিয়ার কাকি (রহ.), হজরত বাবা ফরিদ গঞ্জে শকর (রহ.), হজরত নিজামুদ্দিন আউলিয়া (রহ.) প্রমুখ।
তাঁর মানবপ্রেমের অসংখ্য ঘটনা রয়েছে। একটি শিক্ষণীয় ঘটনা হলো—একদিন এক দরিদ্র লোক তাঁর দরবারে এসে বলল, ‘হুজুর, আমি ক্ষুধার্ত।’ খাজা মইনুদ্দিন (রহ.) তখন নিজের ঘরে কিছুই পাননি, তাই তিনি নিজের একমাত্র জামাটি খুলে দিয়ে বললেন, ‘এটি বিক্রি করে যা পাও, তা দিয়ে খেয়ে নাও।’ এই ঘটনার মাধ্যমে তিনি দেখিয়ে দিয়েছিলেন, প্রকৃত সুফির কাছে ধন-সম্পদ নয়, বরং মানবসেবা ও আত্মত্যাগই সবচেয়ে মূল্যবান।
খাজা মইনুদ্দিন চিশতী (রহ.) ছিলেন এক মহৎপ্রাণ সুফি, যিনি প্রেম, সহানুভূতি ও মানবতার বার্তা প্রচার করেছেন। তাঁর দরবার আজমির শরিফে অবস্থিত এবং লাখ লাখ মানুষ সেখানে তাঁর বরকত লাভের আশায় সমবেত হয়। তাঁর জীবন থেকে শিক্ষা হলো—মানবপ্রেম, বিনয়, এবং আল্লাহর প্রতি সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ। তিনি আমাদের শেখান, প্রকৃত ইসলাম ভালোবাসা, করুণা এবং অন্যের কল্যাণে আত্মনিবেদন করা।
তথ্যসূত্র
১. তাজকিরাতুল আওলিয়া, শেখ ফরিদুদ্দিন আত্তার।
২. সিয়ারুল আওলিয়া, নিজামুদ্দিন আউলিয়া।
৩. গরীবে নেওয়াজ: খাজা মইনুদ্দিন চিশতির জীবন ও শিক্ষাসমূহ, ড. জাকারিয়া আনসারি
৪. অন্যান্য।
হজ ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। এই ইবাদত মানুষকে আত্মশুদ্ধি, ত্যাগ ও ভ্রাতৃত্ববোধ শেখায়। নানা জাতি, ভাষা ও বর্ণের মুসলমান একত্র হয় এ সময়। ত্যাগ, সততা, একতা ও সমতার জানান দেয় হজ পালনের প্রতিটি বিধানে। প্রতিবছর জিলহজ মাসে মক্কার পবিত্র স্থানসমূহে নির্দিষ্ট নিয়মে পালিত হয় হজ। চলতি সপ্তাহেই শুরু...
৪ ঘণ্টা আগেহজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি, যা মুসলমানদের জীবনে এক অনন্য রুহানি অভিজ্ঞতা। এটি শুধু শরীরের পরিশ্রম নয়, বরং আত্মার প্রশান্তি ও গুনাহ মোচনের সুবর্ণ সুযোগ। হজ যেন শুধুই একটি ভ্রমণ না হয়, বরং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের এক বাস্তব মাধ্যম হয়ে ওঠে; সে জন্য প্রয়োজন পূর্ণ প্রস্তুতি। নিচে হজের সফরের আগে...
৪ ঘণ্টা আগেমিনারের সঙ্গে ইসলামি স্থাপত্যের এক নিবিড় সম্পর্ক জড়িয়ে আছে। এর অবয়ব যেন মনে করিয়ে দেয় ইসলামি শাসন ও মুসলিম শাসকদের নানা কীর্তিগাথা। ইসলামের ইতিহাসে মূলত আজানের শব্দ দূরে পৌঁছানোর জন্য মিনারের ব্যবহার শুরু হয়। একসময় মিনারগুলো থেকে ভেসে আসত ‘আস-সালাতু খাইরুম মিনান নাউম’-এর মায়াবি ধ্বনি।
৪ ঘণ্টা আগেনামাজ ইসলামের এক গুরুত্বপূর্ণ বিধান। নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করে নেওয়া আবশ্যক। আকাশপথে সফরের সময় ফরজ নামাজ সম্ভব হলে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে রুকু-সিজদাসহ আদায় করবেন। দাঁড়ানো সম্ভব না হলে বসে স্বাভাবিকভাবে কিবলামুখী হয়ে রুকু-সিজদা করে আদায় করবেন। এভাবে নামাজ আদায় করতে পারলে পরবর্তী সময়ে তা পুনরায় আদা
৪ ঘণ্টা আগে