Ajker Patrika

জিলহজের প্রথম দশকের ফজিলত ও আমল

মুফতি আবু আবদুল্লাহ আহমদ
জিলহজের প্রথম দশকের ফজিলত ও আমল

জিলহজ হিজরি সনের দ্বাদশ মাস। কোরআন-হাদিসে বর্ণিত চার পবিত্র ও সম্মানিত মাসের অন্যতম। জিলহজের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ অংশ এর ১০ দিন। ইসলামের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ দুটি ইবাদত হজ ও কোরবানি এ সময়েই পালিত হয়। এ ছাড়া কোরআন-হাদিসে এ দশকের বিশেষ ফজিলত ও আমলের কথা 
বর্ণিত হয়েছে।

মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে এ দশকের নামে শপথ করে এর অসামান্য মর্যাদার স্বীকৃতি দিয়েছেন। এরশাদ হয়েছে, ‘শপথ ভোরের, শপথ দশ রাতের।’ (সুরা ফজর: ১-২) ইবনে আব্বাস (রা.) ইবনে জুবাইর (রা.), মুজাহিদ (রহ.)-সহ অধিকাংশ তাফসিরবিদের মতে, এখানে ‘দশ রাত’ থেকে জিলহজের প্রথম দশককেই বোঝানো হয়েছে।(তাফসিরে ইবনে কাসির) 

হাদিস শরিফে এই দশককে সেরা দশক বলে অভিহিত করা হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দুনিয়ার সর্বোত্তম দিন জিলহজের (প্রথম) দশ দিন।’ জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘আল্লাহর পথে ব্যয় করা দিনগুলোও কি এর সমতুল্য নয়?’ উত্তরে বললেন, ‘না, তাও এর সমতুল্য নয়। তবে যে ব্যক্তি  আল্লাহর পথে নিজের চেহারা ধুলোমলিন করেছেন এবং শহীদ হয়েছেন, তার ব্যাপারে বিষয়টি ভিন্ন।’ (মুসনাদে বাজ্জার)

কোরআন-হাদিসে জিলহজের প্রথম দশকের ফজিলত যেমন বর্ণিত হয়েছে, তেমনি এ দশকের আমলের বিশেষ ফজিলতের কথাও বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘নির্দিষ্ট দিনসমূহে তারা যেন আল্লাহর নাম জিকির করে।’ (সুরা হজ: ২৮) ইবনে আব্বাস (রা.), ইবনে উমর (রা.), হাসান বসরি (রহ.), আতা (রহ.), ইমাম আবু হানিফা (রহ.), ইমাম শাফেয়ি (রহ.), ইমাম আহমদ (রহ.)-সহ অধিকাংশ আলিমের মতে, এখানে ‘নির্দিষ্ট দিনসমূহ’ থেকে জিলহজের প্রথম দশকই উদ্দেশ্য। (তাফসিরে ইবনে কাসির)

এই ১০ দিনের বিশেষ কিছু আমলের কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। এখানে তা সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:

নখ ও চুল ইত্যাদি না কাটা: জিলহজের চাঁদ দেখার পর থেকে কোরবানি দেওয়া পর্যন্ত চুল, নখ, মোচ ইত্যাদি না কাটা মুসতাহাব। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা যদি জিলহজের চাঁদ দেখতে পাও আর তোমাদের কেউ কোরবানি করার ইচ্ছা করে, তবে সে যেন চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকে।’ (নাসায়ি) অন্য হাদিস থেকে বোঝা যায়, যাদের কোরবানি করার সামর্থ্য নেই, তারাও এ আমল পালন করবে। (মুসনাদে আহমদ)

রোজা: এই দশকের প্রথম নয় দিন রোজা রাখা মুসতাহাব। হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) জিলহজের প্রথম নয় দিন রোজা রাখতেন। (আবু দাউদ) জিলহজের ৯ তারিখের রোজাটি সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আরাফাতের দিন (জিলহজের নবম তারিখের) রোজার বিষয়ে আমি আশা করি যে, আল্লাহ এর বিনিময়ে গত এক বছর ও আগামী এক বছরের গুনাহ মিটিয়ে দেবেন।’ (মুসলিম) 

অধিক হারে জিকির: রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কাছে জিলহজের প্রথম দশকের আমলের চেয়ে বেশি মর্যাদাপূর্ণ ও প্রিয় অন্য কোনো দিনের আমল নেই। সুতরাং তোমরা এই দিনগুলোতে বেশি পরিমাণে সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ও আল্লাহু আকবর পাঠ করো।’ (মুসনাদে আহমদ)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যে মাদ্রাসায় বেড়ে উঠেছিলেন ওসমান হাদি

কাউসার লাবীব
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ২৯
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

একটি সম্ভ্রান্ত আলেম পরিবারের সন্তান থেকে শুরু করে রাজপথের আপসহীন বক্তা—শরিফ ওসমান হাদির শিকড় প্রোথিত ছিল ধর্মীয় শিক্ষার গভীরে। ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার খাসমহল এলাকায় এক সম্ভ্রান্ত আলেম পরিবারে তাঁর জন্ম। তাঁর বাবা প্রয়াত মাওলানা আব্দুল হাদি ছিলেন একজন নিবেদিতপ্রাণ মাদ্রাসাশিক্ষক। তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে ওসমান হাদি ছিলেন সবার ছোট। পরিবারের প্রত্যেক সদস্য আলেম বা দ্বীনি শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত, যা ওসমান হাদির চিন্তা ও চরিত্রে এনেছিল দৃঢ় নৈতিক ভিত্তি।

তাঁর বড় ভাই মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক বরিশালের ঐতিহ্যবাহী শরফুদ্দীন আহমেদ সেন্টু জামে মসজিদের খতিব; মেজো ভাই মাওলানা ওমর ফারুক একজন ব্যবসায়ী। তাঁর তিন ভগ্নিপতিও মাদ্রাসায় শিক্ষকতা ও ইমামতির সঙ্গে যুক্ত, যাঁরা স্থানীয় পর্যায়ে অত্যন্ত সম্মানিত।

ওসমান হাদির শিক্ষাজীবনের শুরু ঝালকাঠির বিখ্যাত এন এস কামিল মাদ্রাসায়। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি ছিলেন তুখোড় মেধাবী এবং অসাধারণ বক্তা। অন্যায়ের প্রতিবাদ করার স্পৃহা তাঁর মধ্যে কাজ করত শৈশব থেকেই। এক সাক্ষাৎকারে তিনি অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে তাঁর প্রিয় মাদ্রাসার স্মৃতিচারণা করেছিলেন।

ওসমান হাদি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমাকে এটা যদি কেউ জিজ্ঞেস করে—আল্লাহ যদি আমাকে আবারও দুনিয়ায় পাঠায়, আমি কয়টা জিনিস চাইব। আমি প্রথমেই বলব—ইন্টার পর্যন্ত যে মাদ্রাসাটায় পড়েছি, সেই মাদ্রাসায় আবার আমি পড়তে চাইব। বাংলাদেশে এটা কেউ চিন্তাও করতে পারবে না যে মাদ্রাসায় রবীন্দ্রনাথের নাটক মঞ্চস্থ হয়। আমি যখন চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ি; তখন ঝালকাঠি থেকে ঢাকায় জাতীয় পর্যায়ে অনেকবার বিতর্ক, আবৃত্তি, বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে এসেছি এবং স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা মিলিয়ে আমি অনেকবার ফার্স্ট হয়েছি।’

ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘এটা শুধু আমি না, ওই প্রতিষ্ঠানের আমার অনেক ছোট ভাই, বন্ধু জাতীয় পর্যায়ের এমন প্রচুর পুরস্কার পেত। আমাদের এমনভাবে কালচারাল নার্সিং হতো—রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত, জারি, ভাটিয়ালি আমরা গাইতাম। যেহেতু মাদ্রাসা, তাই একমাত্র নৃত্যটা হতো না।’

মাদ্রাসার গণ্ডি পেরিয়ে ওসমান হাদি ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে (২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষ)। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনেও তিনি মেধার স্বাক্ষর রাখেন। জীবনসংগ্রামে টিকে থাকতে তিনি প্রাইভেট পড়িয়েছেন, সাইফুর’সসহ বিভিন্ন নামী প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছেন। সর্বশেষ তিনি ইউনিভার্সিটি অব স্কলারসে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা তাঁকে সাধারণ মানুষের হৃদয়ে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে তাঁর সাহসী ভূমিকা এবং পরে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে টক শো ও সভা-সমাবেশে তাঁর যুক্তিপূর্ণ ও ঝাঁজালো বক্তব্য তাঁকে অনেক তরুণের আইকন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।

১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের পর রাজধানীর বিজয়নগর পানির ট্যাংক এলাকায় রিকশায় যাওয়ার সময় মোটরসাইকেলে আসা দুই দুর্বৃত্ত তাঁকে লক্ষ্য করে খুব কাছ থেকে গুলি করে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হলেও মৃত্যুর কাছে হার মানেন তিনি। ১৮ ডিসেম্বর রাত পৌনে ১০টায় সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।

গুলিবিদ্ধ হওয়ার মাত্র এক মাস আগে নভেম্বর মাসে ওসমান হাদি নিজের জীবনের ঝুঁকির কথা প্রকাশ্যে জানিয়েছিলেন। দেশি-বিদেশি অসংখ্য নম্বর থেকে আসা প্রাণনাশের হুমকির কথা উল্লেখ করে তিনি লিখেছিলেন—‘জীবননাশের আশঙ্কা সত্ত্বেও ইনসাফের লড়াই থেকে আমি পিছিয়ে যাব না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জানাজা ও দাফনে অংশ নিলে যে সওয়াব

আবরার নাঈম 
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ৫৮
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

দুনিয়ার সফরের শেষ গন্তব্য মৃত্যু। মৃত্যু এক অপ্রিয় সত্য, যা সুনিশ্চিত অনিবার্য ও অবশ্যম্ভাবী। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘প্রতিটি প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৮৫)

জানাজার নামাজ ফরজে কিফায়া। অর্থাৎ কোনো মুসলমান মারা গেলে মহল্লার অল্পসংখ্যক লোক জানাজার নামাজ আদায় করলে বাকিরা দায়িত্বমুক্ত হয়ে যাবে। এ ছাড়া একজন মুসলমানের ওপর অন্য মুসলমানের পাঁচটি হক আছে। এর মধ্যে মৃত ব্যক্তির জানাজায় অংশ নেওয়াও একটি হক।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘এক মুসলমানের অধিকার অন্য মুসলমানের ওপর পাঁচটি: সালামের জবাব দেওয়া, রোগীকে দেখতে যাওয়া, জানাজার সঙ্গে যাওয়া, দাওয়াত কবুল করা এবং হাঁচি দিলে তার জবাব দেওয়া।’ (রিয়াদুস সলেহিন: ৯০০)

কোনো মুসলমানের জানাজায় অংশগ্রহণ ও তাকে কবরস্থ করা সমাজের মুসলমানদের ইমানি দায়িত্ব। পাশাপাশি এতে রয়েছে অধিক পরিমাণে সওয়াব। যদিও সবার অংশগ্রহণ জরুরি নয়। তাই বলে এমন সওয়াবের কাজ থেকে পিছিয়ে থাকা কখনোই সমীচীন নয়।

জানাজা ও দাফনকার্যে অংশগ্রহণের লাভ সম্পর্কে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি (আল্লাহর প্রতি) বিশ্বাস রেখে এবং নেকির আশা রেখে কোনো মুসলমানের জানাজার সঙ্গে যাবে এবং তার জানাজার নামাজ আদায় করবে এবং দাফন করা পর্যন্ত তার সঙ্গে থাকবে, সে দুই কিরাত (পরিমাপের একক) সওয়াব নিয়ে (বাড়ি) ফিরবে। এক কিরাত উহুদ পাহাড়ের সমান। আর যে ব্যক্তি জানাজার নামাজ আদায় করে মৃতকে সমাধিস্থ করার আগেই ফিরে আসবে, সে এক কিরাত সওয়াব নিয়ে (বাড়ি) ফিরবে।’ (রিয়াদুস সলেহিন: ৯৩৫)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জান্নাতে যেমন হবে শহীদের জীবন

ইসলাম ডেস্ক 
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ১৯
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মৃত্যু এক অনিবার্য ও চিরন্তন সত্য। এই ধরণির ক্ষণস্থায়ী সফর শেষ করে প্রত্যেক মানুষকে মৃত্যুর অমীয় স্বাদ গ্রহণ করতে হয় এবং প্রবেশ করতে হয় অনন্তকালের আবাসে। এই চিরসত্য মৃত্যুকে ঘিরে মানুষের জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই, তবে ইসলামের দৃষ্টিতে মৃত্যুপরবর্তী জীবনই হলো প্রকৃত জীবনের সূচনা।

পবিত্র কোরআনে মহান রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেছেন, ‘প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে এবং কিয়ামতের দিন তাদের পূর্ণমাত্রায় বিনিময় দেওয়া হবে। অতঃপর যাকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করা হলো এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হলো, অবশ্যই সে ব্যক্তি সফলকাম হলো। কেননা, পার্থিব জীবন ছলনার বস্তু ছাড়া আর কিছুই নয়।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৮৫)

মৃত্যুর বিভিন্ন প্রকারভেদের মধ্যে সবচেয়ে সার্থক ও উত্তম মৃত্যু হলো শহীদি মৃত্যু। তাই প্রত্যেক মুমিনের একান্ত তামান্না থাকে শহীদ হওয়ার। শহীদদের মর্যাদা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যারা আল্লাহর পথে জীবন দিয়েছে, তাদের তুমি মৃত মনে করো না; বরং তারা তাদের রবের নিকট জীবিত এবং তাদের রিজিক দেওয়া হয়।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৬৯)

হজরত আবদুল্লাহ (রা.) এই আয়াতের ব্যাখ্যা সম্পর্কে নবীজি (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলে নবীজি বলেন, ‘শহীদদের রুহসমূহ সবুজ পাখির উদরে রক্ষিত থাকে, যা আরশের সঙ্গে ঝুলন্ত দীপাধারে বাস করে। জান্নাতের সর্বত্র তারা যেখানে চায় বিচরণ করে এবং পুনরায় সেই দীপাধারগুলোতে ফিরে আসে। একবার তাদের প্রতিপালক তাদের দিকে পরিপূর্ণভাবে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘তোমাদের কি কোনো আকাঙ্ক্ষা আছে?’’ তারা বিনয়ের সঙ্গে জানাল, ‘‘আমাদের আর কী আকাঙ্ক্ষা থাকতে পারে! আমরা তো জান্নাতের যেখানে ইচ্ছা ঘুরে বেড়াচ্ছি।’’ আল্লাহ তাআলা তিনবার এই প্রশ্ন করার পর তারা বুঝতে পারল, আকাঙ্ক্ষার কথা না বললে তারা রেহাই পাচ্ছে না; তখন তারা বলল, ‘‘হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদের আকাঙ্ক্ষা হয়, যদি আপনি আমাদের রুহগুলোকে আমাদের দেহে ফিরিয়ে দিতেন, তবে আমরা পুনরায় আপনার পথে গিয়ে নিহত (শহীদ) হতে পারতাম।’ আল্লাহ যখন দেখলেন, তাদের আর কোনো অপূর্ণতা নেই, তখন তাদের সেই অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া হলো।’ (সহিহ মুসলিম: ৪৭৭৯)

মৃত্যু আসবেই, তবে সেই মৃত্যু যদি হয় আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এবং ইমানের ওপর অবিচল থেকে, তবেই তা হবে জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মুনাফিকের আলামত ও মুমিনের গুণ

ইসলাম ডেস্ক 
পবিত্র কোরআন। ছবি: সংগৃহীত
পবিত্র কোরআন। ছবি: সংগৃহীত

কথা দিয়ে কথা রাখার নাম প্রতিশ্রুতি বা ওয়াদা রক্ষা। প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা মুমিনের বিশেষ গুণ। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে কোনো মুসলিম পরিপূর্ণ ইমানদার হতে পারে না। রাসুল (সা.) প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারীকে মুনাফিক হিসেবে অবহিত করেছেন। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করাকে ইসলামি শরিয়তে কবিরা গুনাহ বলা হয়েছে।

মহান আল্লাহ তাআলা প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারীদের ব্যাপারে অনেক সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। প্রতিশ্রুতি রক্ষাকে মুত্তাকি বান্দাদের গুণ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা ওয়াদা পূর্ণ করো, নিশ্চয়ই ওয়াদা সম্পর্কে (কিয়ামতের দিনে) তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ৩৪)

অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা ওয়াদা করে তা পূরণ করেছে, তারাই সত্যবাদী এবং তারাই মুত্তাকি।’ (সুরা বাকারা: ১৭৭)

রাসুল (সা.) ওয়াদা পূরণের ব্যাপারে খুব সতর্ক ছিলেন। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, জাতিগত, আন্তর্জাতিকসহ সব ক্ষেত্রেই কারও সঙ্গে কোনো বিষয়ে ওয়াদা করলে তা পালনের জন্য অধীর থাকতেন। সর্বদা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতেন। কখনো ওয়াদার বরখেলাপ করতেন না। সামান্য বিষয়ে ওয়াদা করলে তাও রক্ষা করতেন। উম্মতকেও প্রতিশ্রুতি রক্ষার জন্য আদেশ দিয়েছেন তিনি।

আবদুল্লাহ ইবনে আবু হাসমা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.)-এর নবুওয়তপ্রাপ্তির আগে আমি তাঁর কাছ থেকে কিছু জিনিস খরিদ করেছিলাম, যার কিছু মূল্য পরিশোধ আমার ওপর বাকি রয়ে গিয়েছিল। আমি তাঁকে কথা দিলাম, তা অমুক স্থানে নিয়ে আসছি। কিন্তু আমি সেই প্রতিশ্রুতির কথা ভুলে গেলাম। তিন দিন পর আমার স্মরণ হলো। এসে দেখলাম, তিনি ওই স্থানেই আছেন। এরপর রাসুল (সা.) শুধু এটুকুই বললেন, ‘তুমি আমাকে তো কষ্টে ফেলেছিলে, আমি তিন দিন ধরে এই স্থানে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।’ (আবু দাউদ: ৪৯৯৮)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত