ড. মুহাম্মাদ আকরাম নদভি

বিশ্বকোষ রচনার প্রেক্ষাপট
১৯৯৪ কিংবা ৯৫ সালের কথা। যুক্তরাজ্যের কয়েকটি সংবাদপত্রে মুসলিম নারী নিয়ে কিছু নেতিবাচক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। তাতে মুসলিম বিশ্বে নারীদের পশ্চাৎপদ ও শোচনীয় অবস্থার জন্য ইসলামকেই দোষারোপ করা হয়। সত্যি কথা হলো, বর্তমান মুসলিম সমাজে আসলেই নারীদের সম্মানের চোখে দেখা হয় না। তাদের কোনো অনুষ্ঠানে যেতে দেওয়া হয় না; গেলেও কোনো গয়না নিয়ে যেতে দেওয়া হয় না। জোর-জবরদস্তি ও সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার এমন মানসিকতা মানুষের প্রতি অশ্রদ্ধারই নামান্তর। নারীরা মানুষ; তাদের মন আছে। আল্লাহ তাআলা মানুষকে নির্দেশনা দেন; ভালো-মন্দ ব্যাখ্যা করেন। এর পর যার ইচ্ছা ভালোটা গ্রহণ করবে, আর যার ইচ্ছা মন্দটা গ্রহণ করবে। এই সুযোগ সব মানুষকেই দিয়েছেন।
আল্লাহ পৃথিবীর সব মানুষকে সম্মানিত করেছেন। তিনিই আমাদের স্রষ্টা। অথচ আমরা সব সময় নারীদের বাধ্য করার পথ খুঁজি। আলেমদের মুখেও নারীর প্রতি অবমাননাকর ও বিদ্রূপাত্মক কথা শুনি; যা শুনে যে কেউ-ই রাগান্বিত হবেন। পুরুষদের নিয়ে অবমাননাকর কিছু বলা হলে তো তারা নিঃসন্দেহে রেগে যাবেন। মূলত আমরা নারীদের মানুষই মনে করি না। এমন মনোভাব ইসলাম সমর্থন না করলেও মুসলিম সমাজে দুঃখজনকভাবে প্রচলিত আছে।
যা হোক, প্রবন্ধগুলো পড়ে আমি খুবই আহত হই। কেউ খামাখা ইসলামকে দোষারোপ করুক, তা আমরা চাই না। তখন আমার মাথায় একটা চিন্তা এল। দীর্ঘদিনের হাদিস গবেষণার সূত্রে জ্ঞানচর্চায় বিখ্যাত অনেক মুসলিম নারী স্কলারের কথা আমার জানা ছিল। ভাবলাম, তাঁদের জীবনী এক মলাটে তুলে ধরলে একটা মোক্ষম জবাব হবে। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বইটি মুসলিম নারীদের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বড় প্রেরণা হবে। তা ছাড়া আলেমদের আমাদের হারানো অতীত স্মরণ করিয়ে দেওয়ার চিন্তাও ছিল। এসব কারণেই আমি প্রকল্পটি হাতে নিই। কোনো বিশ্ববিদ্যালয় পৃষ্ঠপোষকতা করেনি। পুরো কাজটি একান্তই আমার আগ্রহের জায়গা থেকে করা। অক্সফোর্ডে আমি অন্য কাজ করতাম, পাশাপাশি এ কাজটিও স্বল্প পরিসরে শুরু করি। এর পর আরও তথ্য আমার কাছে আসতে থাকে। আমি সিরিয়া, মিসর ও অন্যান্য দেশ ভ্রমণ করে পুরোনো পাণ্ডুলিপি থেকে অনেক তথ্য সংগ্রহ করি। অবিশ্বাস্যভাবে অনেক বেশি তথ্য হাতে আসে। বইয়ের ভলিউম শুধুই বাড়ছিল।
মনে আছে, ৫ হাজার নারী স্কলারের তথ্য সংগ্রহ করার পর আমার এক খ্রিষ্টান প্রাচ্যবিদ সহকর্মী এসে বলেন, ‘আপনি তো ৫ হাজারের তথ্য সংগ্রহ করলেন। আপনাকে এক বিখ্যাত প্রাচ্যবিদের কিছু কলাম দিচ্ছি।’ তিনি তা আমাকে সরবরাহ করেন। তাতে লেখক দাবি করেন, মুসলমানরা যদি পাঁচজন শিক্ষিত নারীর নাম পেশ করতে পারে, তবে তিনি স্বীকার করবেন যে, ইসলাম নারীর অধিকার দেয়। লেখাটি হাতে আসার পর আমার সংগ্রহ বাড়তে বাড়তে ৫ হাজার থেকে ৯ হাজার, তারপর ১০ হাজারে উন্নীত হয়। এর পর কাতারে আমাকে শাইখ ইউসুফ আল-কারজাবি কাজটি শেষ না হওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করেন। তিনি পরামর্শ দেন, কাজে বিরতি দিয়ে যা হয়েছে, তা প্রকাশ করে দিতে। তাঁর অনুরোধে আমি কাজটি থামাই। বইটি বের হওয়ার পরও তাতে যুক্ত করার মতো আরও ২ হাজার নারীর তথ্য এখন আমার হাতে আছে।
এ বিষয়ে স্বতন্ত্র বিশ্বকোষ রচনার কাজ এটিই প্রথম। আশা করি, এর পর অনেকেই এ কাজে এগিয়ে আসবেন। আমি ফারসি জানলেও ফারসি ভাষাসহ মধ্য এশিয়ার অন্যান্য ভাষা, উজবেক কিংবা তুর্কি সোর্স থেকে আমি তথ্য নিইনি। ফলে এ ক্ষেত্রে কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। একজনের জানা ভাষা ও সোর্স থেকে যদি এত তথ্য পাওয়া যায়, তবে ভবিষ্যতে বিষয়টি আরও সমৃদ্ধ হবে। তাই আমি অনেক খুশি।
৪৩ খণ্ডের এই বিশ্বকোষের ভূমিকা হিসেবে আরবি ও ইংরেজিতে একটি ভলিউম প্রকাশিত হয়। একবার আমি যুক্তরাষ্ট্রের এক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হই। সেখানে এক নারী শিক্ষার্থী তা নিয়ে আমার কাছে হাজির হন। তাঁর কপিটির প্রত্যেক পৃষ্ঠাতেই তিনি টীকা সংযোজন করেন। তিনি জানান, ‘সুদান, মধ্যপ্রাচ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের ইসলাম ত্যাগ করা অনেক নারীই এ বই পড়ে ইসলামে ফিরে আসেন।’
সুতরাং আমি মনে করি, এ গবেষণা মানুষকে ইসলাম সম্পর্কে জানতে সাহায্য করছে। আমি সম্প্রতি ওমরাহ থেকে ফিরেছি। সৌদি আরবে দেখলাম, অনেক নারী-পুরুষই আমার এ কাজের জন্য আপ্লুত। হৃদয়ের গভীর থেকে বলি, নারীদের, বিশেষভাবে মুসলিম নারীদের, আরও বিশেষভাবে ভারত উপমহাদেশের মুসলিম নারীদের জন্য আমি কাজ করতে চাই। কারণ, আমার শেকড় ভারতেই। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতের মুসলিম নারীদের অবস্থা অধিক শোচনীয়—আমি জানি।
ইসলামে নারীর অবদান
বিশ্বকোষটি রচনা করতে গিয়ে আমি দেখি, এ যুগের নারীদের তুলনায় আগের যুগের নারীদের অবস্থা আরও খারাপ ছিল। তবুও তাঁরা জ্ঞানচর্চায় পিছিয়ে পড়েননি। তাঁদেরও পারিবারিক জীবন ছিল। তাঁদের মধ্যেও ধনী-দরিদ্র ছিলেন। কারও বাচ্চা ছিল, পারিবারিক কলহ ছিল; কেউ আবার ডিভোর্সি ছিলেন। তাঁরা কোনো অভিযোগ না করে সবকিছু সামলে নিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যান। ইসলামের গণ্ডির মধ্যে থেকে সময়ের সদ্ব্যবহার করেন। সততার সঙ্গে ইসলামকে জানতে চান এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই জ্ঞান অর্জন করেন। তাই তো পুরুষদের বিরুদ্ধে হাদিস জালিয়াতির অভিযোগ থাকলেও নারী হাদিস বর্ণনাকারীদের বিরুদ্ধে এমন কোনো অভিযোগ নেই।
ইসলামে নারীরা বিস্ময়কর অবদান রাখেন। ইসলামি জ্ঞানচর্চার এক চতুর্থাংশেই নারীর একচেটিয়া আধিপত্য। বাকি তিন ভাগে রয়েছে নারী-পুরুষের সমান অবদান। ইসলামি জ্ঞানের বিখ্যাত গ্রন্থগুলোতে নারীদের বর্ণিত হাদিসের ভিত্তিতেই অনেক বিধান প্রণীত হয়। নারী হওয়ার কারণে মুহাদ্দিসরা কখনো তাঁদের হাদিস বাদ দেননি; বরং সাদরে গ্রহণ করেন। কেবল নারীদের বর্ণিত হাদিসের ওপর ভিত্তি করেই অনেক বিধান প্রণীত হয়। তাই নারী আমাদের ধর্মেরই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্মের সূচনাকালে নারীদের এমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে দেখা যায় না। বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, নাসায়ি, ইবনে মাজাহসহ হাদিসের অসংখ্য গ্রন্থে তাঁদের অবদান অবিস্মরণীয়। এসব গ্রন্থের রচয়িতারা নারীদের কাছে শুধু জ্ঞান আহরণই করেননি; বরং তাঁদের সনদ বর্ণনা সর্বাধিক বিশুদ্ধ বলেও প্রমাণিত।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, পবিত্র কোরআনের পর বিশুদ্ধতম গ্রন্থ সহিহ বুখারির বিশুদ্ধতম কপিটি এক নারীর সম্পাদিত—কারিমা বিনতে আহমাদ ইবনে মুহাম্মদ আল-মারওয়াজি (মৃত ৪৬৩ বা ৪৬৪ হি.)। অথবা উম্মুল খাইর ফাতিমা বিনতে ইবরাহিম (মৃত.৭১১ হি.)-এর কথাই ধরুন। তিনি সহিহ বুখারির শিক্ষক ছিলেন। বুখারির সর্বোৎকৃষ্ট সনদ তাঁর ছিল। অনেক জ্ঞানীগুণী ব্যক্তি তাঁর কাছে শিখতেন। সিরিয়া থেকে হজে এসে তিনি মদিনায় জিয়ারতে আসেন এবং মসজিদে নববীতে হাদিস পাঠদান করেন। এমন আরও দু-তিনজন নারী স্কলার আছেন। সেকালের মুসলিম সমাজে যদি নারীর সম্মান না-ই থাকত, তাহলে কীভাবে তারা একজন নারীকে মহানবী (সা.)-এর পবিত্র রওজার পাদদেশে বসার অনুমতি দিয়েছিলেন? একইভাবে তিন নারী স্কলার পবিত্র কাবাঘরের পাদদেশে হাতিম-এ পাঠদান করেছিলেন।
তাই আমি বলি, নীতিমান হলে অবশ্যই আপনাকে নারীর সম্মান দিতে হবে। ইসলামে তাদের অবদান স্বীকার করতে হবে; কৃতজ্ঞতা জানাতে হবে। এসব নারী স্কলারের জ্ঞানচর্চা ও শিক্ষাদানের কারণেই অনেক হাদিসগ্রন্থ আজ আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। তাঁদের কারণেই অনেক হাদিসগ্রন্থ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। তাবরানি প্রণীত বিখ্যাত হাদিসগ্রন্থ মুজাম আল-কাবির তাঁর ছাত্রী ফাতিমা আল-জুজদানিয়া (মৃত ৫২৪ হি.)-এর সূত্রে বর্ণিত। এই ফাতিমার ছাত্ররাই স্পেন থেকে এসে মিসরে হাদিসশাস্ত্র পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন।
আরেক বিখ্যাত নারী স্কলারের নাম ফাতিমা আল-সামারকান্দি। তিনি তাঁর বাবা মুহাম্মাদ ইবনে আহমাদ আল-সামারকান্দি রচিত তুহফাত আল-ফুকাহা পুরো মুখস্থ করেন। আল-কাসানি নামে তাঁর এক ছাত্র ছিলেন। শিক্ষকের কন্যা ফাতিমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে তিনি তা নাকচ করে দেন। কারণ তিনি জানতেন, তাঁর মেয়ে তাঁর ছাত্রের তুলনায় বেশি জ্ঞানী। তবে পরে তাঁর গ্রন্থের একটি ব্যাখ্যা লিখে দেওয়ার শর্তে রাজি হন। আল-কাসানি সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন এবং বাদায়ে আল-সানায়ে নামের অনবদ্য এক ব্যাখ্যা-গ্রন্থ লিখে দেন, যা এখন পর্যন্ত হানাফি ফিকহের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ। চিন্তা করে দেখুন, হানাফি মাজহাবের একটি সেরা গ্রন্থ একজন নারীকে পেতে লেখা হয়েছিল!

ইসলামে নারীর অধিকার
মহানবী (সা.) কখনোই নারী-পুরুষের শিক্ষাগ্রহণ, শিক্ষাদান ও যুদ্ধে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বৈষম্য করেননি। নারীদের জন্য যুদ্ধ বাধ্যতামূলক না করলেও যেতে চাইলে তাঁদের পুরস্কৃত করা হয়েছে। তেমনি জুমার নামাজ তাদের জন্য আবশ্যক করা না হলেও অংশ নিলে অবশ্যই পুরস্কৃত করা হয়েছে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘নারীদের মসজিদে আসতে বাধা দিয়ো না।’
আপনি দেখবেন, নারী সাহাবিরা যুদ্ধে অংশ নিচ্ছেন, তলোয়ার হাতে লড়াই করছেন এবং মহানবী (সা.) নিজেই তাঁদের উৎসাহ দিচ্ছেন। ইয়ারমুকের যুদ্ধে ৩৫ জন নারী অংশ নেন। আপনিই বলুন, নারীরা যুদ্ধ করতে নামলে কি নারী হওয়ার কারণে শত্রুপক্ষ তাদের ছাড় দেবে? কখনোই না, আঘাত করার সুযোগ মোটেও হাতছাড়া করবে না। তো মুসলিম নারী যদি রণাঙ্গনে শত্রুর বিরুদ্ধ লড়াই করার অনুমতি পায়, তাহলে আর কোন জায়গাটি তাদের জন্য অনুপযুক্ত থাকে? আয়েশা (রা.)-কেই দেখুন! পুরো একটি সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছেন, ভাষণ দিয়েছেন এবং হাজারো মানুষের মাঝে শিক্ষার আলো বিতরণ করেছেন। হজ-ওমরাহর তাওয়াফেই নারী-পুরুষের কত ভিড় দেখুন! এমন ভিড় পৃথিবীর কোথাও দেখবেন না। যে ধর্মে তাওয়াফের মতো ভিড়ের স্থানে যাওয়ার অনুমতি আছে, সেখানে আর কোথায় যেতে বাধা থাকতে পারে?
নারীদের এগিয়ে যেতে হবে। জ্ঞানচর্চায় ব্রতী হতে হবে। ভারতীয়রা নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলে। আমি বলি, আসল ক্ষমতায়ন হলো জ্ঞান-বিজ্ঞান। মানুষকে শেখানো এবং শিক্ষিত জাতি তৈরি করাই আসল উন্নয়ন। আমি নারীদের বলি, আপনি বিদ্যার্জন অব্যাহত রাখলে পুরুষও আপনার কাছে শিখতে আসবে। সুতরাং যুক্তিতর্ক করার দরকার নেই।
আমার মাঝেমধ্যে মনে হয়, নারীরা ইসলামের বেশি খেদমত করতে পারে। কারণ তাদের প্রতারণার মনোভাব কম; আন্তরিকতা বেশি। ক্ষমতালিপ্সু নয় তারা। মুম্বাইয়ে আমার এক ছাত্রী তাফসির পড়ান। কিছু আলেম তাঁকে বলেন যে, ‘নারীরা পুরুষদের পড়াতে পারে না।’ আমি তাঁকে বলি, ‘কিছুই বলার দরকার নেই। নারীরা হাদিস শেখাতে না পারলে আমাদের কী হবে? এত মানুষ কীভাবে বিদ্যার্জন করবে। আমাদের বেশির ভাগ শিক্ষকই তো আমাদের মাহরাম নন। সুতরাং কাজ করে যান। সত্য একদিন ছড়িয়ে পড়বে ইনশাআল্লাহ। আমি নারীদের পড়াই বলে অনেকেই এক সময় আমার সমালোচনা করতেন। এখন দেখি তাঁরাও নারীদের পড়ান।’
মুসলিম নারীদের পিছিয়ে পড়ার কারণ
মুসলিম বিশ্ব সব ক্ষেত্রেই পিছিয়ে। শুধু নারীর ক্ষেত্রেই নয়, আজকাল পুরুষদেরও চরম অধঃপতন ঘটেছে। মুসলিমরা শিক্ষাকে মাদ্রাসার গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ করে ফেলে। অতীতে নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য পড়াশোনার সুযোগ থাকলেও বর্তমানে অধিকাংশ মাদ্রাসা পুরুষদের জন্য বরাদ্দ। বিশেষ করে উপমহাদেশের মাদ্রাসাগুলোতে এবং মুসলিম কারিকুলামে গ্রিক দর্শনে বেশ জোর দেওয়া হয়। কারণ, গ্রিক দার্শনিকদের মধ্যে অ্যারিস্টটল থেকে শুরু করে প্রায় সবাই নারী অবমাননা করতে অভ্যস্ত ছিলেন। এ কারণেই কোনো নারী গ্রিক দার্শনিক আপনি খুঁজে পাবেন না। তাঁরা মনে করতেন, নারী বুদ্ধিমত্তায় নীচ। অ্যারিস্টটলকে আমি সম্মান করি, তবে তিনিই বলেন যে, ‘বুদ্ধিমত্তায় নারীদের নীচ হওয়ার একটি প্রমাণ হলো পুরুষের তুলনায় তাদের দাঁত কম।’ এত বড় দার্শনিক এমন বক্তব্য দিচ্ছেন, ভাবতেই অবাক লাগে!
মুসলিম বিশ্বের গ্রিক দর্শন প্রভাবিত কোনো মানুষই নারীদের এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দেয় না। এ কারণেই আমার বিশ্বকোষে সব ঘরানার নারী স্কলার থাকলেও দার্শনিক পরিবার থেকে আসা কোনো নারী স্কলার নেই। এমনকি ইমাম গাজ্জালির মতো বিখ্যাত দার্শনিক আলিমও রাজা-বাদশাহদের উপদেশ দেন যে—নারীর সঙ্গে পরামর্শ করবেন না; করলেও তাদের মতের বিপরীত কাজ করুন। তিনি আরও বলেন যে—নারীর কারণেই পৃথিবীর সব মন্দ কাজ সংঘটিত হয়। মাদ্রাসাগুলোতে এখনো ইমাম গাজ্জালির বিরাট প্রভাব আছে। আমি নিজেও মাদ্রাসার ছাত্র। আমি সারা জীবন মাদ্রাসায় পড়েছি; তাঁদের শ্রদ্ধা করি এবং তাঁদের নিয়ে লিখি। তারপরও আমি বলব, এমন মানসিকতা তাঁদের মধ্যে আছেই; সেখান থেকে তাঁরা বেরোতে পারছে না। মাদ্রাসাগুলোর পরিবর্তনে সময় লাগবে। আমি তাঁদের সঙ্গে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে চাই না; আমি মানুষকে শেখাতে চাই। পরিবর্তন ধীরে ধীরেই হয়। ইনশা আল্লাহ একদিন পরিবর্তন আসবেই।
ঘরবন্দী করে রাখার যুক্তির অসারতা
অবশ্য নারীবাদকে তাদের জন্য সহায়ক মনে করি না আমি। এটি আরেক চরমপন্থা। নারীবাদের সমালোচনা করে আমি আরেকটি বই লিখেছি; শিগগিরই তা প্রকাশিত হবে ইনশাআল্লাহ। তবে নারীবাদের একটি ভালো দিক আছে—এটি নারীর জন্য সুবিচারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এই পয়েন্টে আমরা একমত। নারীদের প্রতি সুবিচার করা উচিত। তবে নারীবাদের সমাধান ভালো নয়; সেটি তাদের জন্য ক্ষতিকর।
আয়েশা (রা.)-এর যুগে একটি হাদিস প্রচলিত ছিল—নামাজরত কোনো পুরুষের সামনে দিয়ে কোনো নারী হেঁটে গেলে নামাজ নষ্ট হবে। কুফার বিখ্যাত আলিম ও ফকিহ আসওয়াত ইবনে ইয়াজিদ আয়েশাকে হাদিসটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি রেগে যান এবং বলেন, ‘হে কুফাবাসী, আমরা, নারীদের তোমরা গাধা ও বানরের সমান বানিয়ে ছেড়েছ! মহানবী (সা.) নামাজরত থাকতেন, আমি তাঁর সামনে থাকতাম, কই কিছুই তো হয়নি!’ এভাবে তিনি এই প্রচলিত ভুল শুধরে দেন। এ ঘটনা থেকে বুঝতে পারি, নারীরা মাঠে না থাকলে পুরুষেরা তাদের সম্পর্কে যা ইচ্ছা বলবে। প্রতিবাদ করার কেউ থাকবে না।
অনেকেই নারীদের নিকাব পরা বাধ্যতামূলক বলে দাবি করেন। আমার মনে হয়, তাঁদের এই সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ইসলামের মূল শিক্ষার চেয়ে ভারতীয় সংস্কৃতির প্রভাবই বেশি। তাঁরা যুক্তি দেন যে, আপনার হিরে-জহরত থাকলে তা বাড়ির অন্দরে লুকিয়ে রাখেন। নারীও হিরে-জহরতের মতোই। আমরাও এক সময় এই যুক্তি বিশ্বাস করতাম। তবে এখানে একটি মৌলিক ভুল আছে—হিরে-জহরতের মন নেই, জীবন নেই; তবে নারীর চিন্তাশীল মন-মনন আছে। তারা ভালো-মন্দ বোঝে। কোরআন আদম (আ.)-কে এ আদেশ দেয়নি যে, স্ত্রীকে ভালো-মন্দ শেখান। বরং উভয়কে সম্বোধন করেই সমানভাবে আদেশ করা হয়েছে। নারীরা ভালো-মন্দ বোঝে, তাদের সঙ্গে পাথরের মতো আচরণ করার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
নারীদের সঙ্গে কথা বলার সময় মাথায় রাখতে হবে যে, তারাও সচেতন মানবসন্তান। আল্লাহ তাআলা এভাবেই তাদের সম্বোধন করেন। আমার যুক্তি হলো, নারীরা মূল্যবান হিরে-জহরত হওয়ার কারণে যদি তাদের অন্তপুরে লুকিয়ে রাখতে হয়, তাহলে পুরুষেরা তো নারীর চেয়েও মূল্যবান, তাদের তো বাক্সবন্দী করে রাখা দরকার! এই যুক্তি কি পুরুষসমাজ মেনে নেবে? মূলত কোরআন-হাদিসে এমন যুক্তির কোনো ভিত্তি নেই। এটি মানুষের মনগড়া ব্যাখ্যা। কোরআন নারীদের সঙ্গে কেমন মনোভাব পোষণ করে দেখুন। সাহাবিদের কর্মপন্থা দেখুন। ওমর (রা.) মদিনার নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই গনিমতের মাল বরাদ্দ করতেন। তিনি বাড়ি বাড়ি খবর পাঠাতেন—পুরুষেরা তাদের ভাগ নিয়ে যাক, নারীরা তাদের ভাগ নিয়ে যাক; কেউ কারও প্রতিনিধি হিসেবে আসার দরকার নেই। তিনি নিজ হাতেই তা নারীদের মধ্যে বণ্টন করতেন। কারও ভাই কিংবা স্বামী প্রতিনিধি হিসেবে এলে সেই নারীকে তিনি উপদেশ দিতেন—অন্য কাউকে তোমার টাকা নিতে পাঠানো সঠিক নয়।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর স্ত্রী একবার তাঁর কাছে একটি বিষয় জানতে চান। বিষয়টি তাঁর জানা ছিল না। তিনি বলেন, ‘তুমি মহানবী (সা.)-এর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করো।’ তাঁর স্ত্রী বললেন, ‘না, তুমি গিয়ে জিজ্ঞেস করে এসো।’ তিনি অস্বীকৃতি জানান এবং তাঁকেই যেতে বলেন। তখন তিনি মহানবী (সা.)-এর কাছে গিয়ে বিষয়টি সরাসরি জিজ্ঞেস করেন। এ যুগের লোকজন বলবে, ‘না, না! মুফতির কাছে যেয়ো না; তোমার বদলে আমিই যাচ্ছি।’
নারীরা রাসুলের কাছে গিয়ে সরাসরি প্রশ্ন করতেন; কারণ ইসলাম সকল মানুষের ধর্ম। আমাদের সমাজে যা প্রচলিত আছে, তা অস্বাভাবিক। ইসলামের স্বাভাবিক নির্দেশনা হলো, আপনি তাদের চিন্তাশীল মানুষ ভাবুন, তাদের মন-মননকে সম্মান করুন এবং নিষ্ঠার সঙ্গে তাদের আল্লাহর ইবাদত করার সুযোগ করে দিন। এতে তারা পুরুষের চেয়ে বেশি ধার্মিক হবে। আল্লাহভীতি কখনোই জোর-জবরদস্তি করে আনা যায় না; মন থেকেই আসতে হয়। পাথর কিংবা দেয়াল তো ধার্মিক নয়। তারা তো মিথ্যা বলে না। ভালো-মন্দ পরখ করার সুযোগ দিলেই তো ধার্মিক হওয়ার সুযোগ আসে। নারীরা নিজেদের পথ বেছে নিক। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি কি তাকে (ভালো-মন্দ) দুটি পথ দেখাইনি?’ (সুরা বালাদ, আয়াত: ১০) তাই যুক্তি যাদের পক্ষ থেকেই আসুক, পরখ করে দেখুন। ইসলাম মজবুত যুক্তিই গ্রহণ করে; দুর্বল-খোঁড়া যুক্তি নয়।
ফিকহের পুনর্মূল্যায়ন জরুরি
ইসলাম কোরআন-সুন্নাহর ওপরই প্রতিষ্ঠিত। ফিকহ কোরআন-সুন্নাহর একটি অংশ মাত্র। ফিকহের অধিকাংশ মাসায়েলই ইজতিহাদের ভিত্তিতে। এটি প্রথা ও সময়ের আলোকেই প্রণীত হয়। ফিকহি মতামত যুগের বিবর্তনে পরিবর্তিত হয়। মতামতগুলো মানুষেরই; একটি আরেকটির চেয়ে ভিন্নতর। একাধিক অর্থের সুযোগও থাকে অনেক ক্ষেত্রে। আমরা কোরআন-সুন্নাহর পরিবর্তন করতে বলছি না। তবে যুগের আলোকে বিষয়টি ব্যাখ্যা করছি। আর ব্যাখ্যা দিতে হলে আমাদের মহানবী (সা.)-এর যুগে ফিরতে হবে। মদিনার সমাজবাস্তবতায় তিনি নারীদের সঙ্গে কেমন আচরণ করেছেন, তা দেখতে হবে। নারীদের মসজিদে যেতে উৎসাহ দিয়েছেন—আমাদেরও তা-ই করতে হবে। নারীদের কৃষি ও ব্যবসা-বাণিজ্য করতে উৎসাহ দিয়েছেন—আমাদেরও তা-ই করতে হবে। ওমর (রা.) শিফা বিনতে আবদুল্লাহ নামের এক নারীকে বাজার পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। এত পুরুষ সাহাবি থাকার পরও তিনি একজন নারীকেই দায়িত্ব দেন। অন্য এক নারী, সামারা বিনতে নাহিককে তিনি সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ বিষয়ক দায়িত্ব দেন। হাতে লাঠি নিয়ে তিনি মানুষের অপরাধের শাস্তি দিতেন। নারীরা তখন কত সক্রিয় ছিল ভাবুন!
এই বিশ্বকোষটি লেখার পর আমি ইংল্যান্ডের লিসেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে যাই। সেখানে কয়েকজন আলেম আমাকে বলেন, ‘আপনার বইটি ইসলামকে পরিবর্তন করতে যাচ্ছে।’ আমি বলি, ‘না, এটি পরিবর্তনকেই সরাতে যাচ্ছে। এটি মানুষকে মহানবী (সা.)-এর সমাজে নিয়ে যাচ্ছে।’ আমি আরও বলি, ‘আপনারা আলেম মানুষ। আমার তথ্য-উপাত্তে কোনো ধরনের ভুল থাকলে শুধরে দিন। আমি তা বই থেকে মুছে দেব।’
একবার আমি ইংল্যান্ডের এক মসজিদে বক্তৃতা দিই। তাতে নারীদের মসজিদে আসতে উৎসাহ দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করি। ইমাম সাহেব এসে বলেন, ‘যা ইচ্ছা বলেন, তবে এমন কথা বলবেন না।’ আমি বলি, ‘কেন? আমার যুক্তিতে কোনো ভুল আছে?’ তিনি বলেন, ‘নাই। যুক্তি যথাযথ। তবে তারা মসজিদে আসুক, তা আমরা চাই না।’
নারীদের মসজিদে আসতে নিষেধ করার পেছনে চলমান সংস্কৃতিই তাদের আসল কথা; বাস্তবে তাদের কাছে নিরেট কোনো যুক্তি নেই। কিছু মানুষের কাছে ইসলামের চেয়ে মুসলিম সংস্কৃতি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ইসলাম সংস্কৃতি সর্বস্ব ধর্ম নয়, বরং এটি আল্লাহ ও পবিত্র কোরআনের নির্দেশনা। নারী-পুরুষকে এক সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার ক্লাসে নারী-পুরুষ সমানভাবে অংশ নেওয়া সুযোগ রেখেছি।
নারীর অধিকার বনাম বঞ্চনা
বিয়ের পর নারীর স্বাধীন ও আলাদা ঘর নিশ্চিত করা পুরুষের দায়িত্ব, যা দুই পক্ষের আত্মীয়-স্বজনের ঘর থেকে পৃথক হবে—এ বিষয়ে কোনো আলিমের দ্বিমত নেই। ঘরের পরিবেশও হতে হবে নিরিবিলি, হিজাব করা কিংবা ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা নিয়ে চিন্তা থাকা যাবে না। স্বামী তার স্ত্রীকে বাবা-মা কিংবা ভাইয়ের ঘরে তুলতে পারে না। সকল মাজহাবেই এমনটি বলা হয়েছে। লোকে বলে, আমার বাবা-মা আছে, তাদের খেদমত করা লাগবে। আমি তাদের বলি, নারীদেরও বাবা-মা আছে। তারা স্বামীর বাবা-মায়ের সেবা করতে বাধ্য নয়। বাবা-মায়ের সেবার দায়িত্ব আপনারই। আপনি না পারলে লোক নিয়োগ দেন; স্ত্রীকে বাধ্য করতে পারেন না। তবে সে নিজ থেকে করলে তা একান্তই তার অনুগ্রহ; সে জন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞ হোন। আপনার স্ত্রীর খরচ আপনাকেই বহন করতে হবে। তার ভরণপোষণ, চিকিৎসা এমনকি শিক্ষার জন্যও ব্যয় করতে হবে। এটি অনুগ্রহ নয়; দান-সদকাও নয়। তার লাখ টাকা থাকলেও আপনাকে তা দিতে হবে। পরিবারের অন্য সদস্যরা অভাবগ্রস্ত হলেই তাদের দিতে হয়, তবে স্ত্রী ধনী হলেও দিতে হয়। এটি স্বামীর কর্তব্য।
কেউ কেউ বলে, ‘এত টাকা দিয়ে তারা কী করবে?’ আমি বলি, ‘তারা চ্যারিটি করবে; মসজিদ তৈরি করবে—অতীতের মতো। আগের যুগের নারীরা এমন কাজ অনেক করেছেন। তবে পরিহাসের বিষয় হলো, ফাতিমা আল-ফিহরিয়া নামের এক নারী মরক্কোর ফেজ শহরের কারাউয়্যিন কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, কিন্তু সেখানে দীর্ঘদিন নারীদের পড়াশোনার অনুমতি দেওয়া হয়নি। আমি সেই কলেজে একবার লেকচার দিতে যাই। শ্রোতাদের সবাই আলেম। আমি বলি, ‘এই কলেজ একজন নারীর তৈরি। হাজার বছর ধরে আপনারা তাদেরই পড়াশোনার সুযোগ দেননি।’ অবশ্য এখন তারা নারীদের পড়ার অনুমতি দিচ্ছেন। তেমনি ভারতেও এমন অনেক মসজিদ আছে, যা নারীদের অর্থায়নে নির্মিত হলেও তাদের নামাজের অনুমতি নেই। মানুষ ইসলাম পড়ে না। মহানবী (সা.)-এর যুগের প্রেক্ষাপট এবং কোরআন-সুন্নাহ থেকে স্পষ্ট উদ্ধৃতি না দিলে কারও যুক্তিতে কান দেওয়ার দরকার নেই।
মুসলিম নারীর করণীয়
আমি ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে ইংল্যান্ডে বসবাস করছি। আমার মত হলো, নারী-পুরুষ উভয়কেই মূলধারার শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। কারণ, আমাদের তা অর্জনের অন্য কোনো বিকল্প পথ নেই। তবে পাশাপাশি আরবি ভাষা ও ইসলাম শিক্ষা পড়াতে হবে। সেই লক্ষ্যপূরণেই আমি ক্যামব্রিজে কাজ করে যাচ্ছি। আমি মনে করি, ভারত উপমহাদেশেও নারী-পুরুষদের মূলধারার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা করা উচিত। তবে সপ্তাহের একদিন ইসলাম ও আরবি শেখার জন্য বরাদ্দ রাখলে তারা ইসলাম ভালোভাবে বুঝতে পারবে। ধর্মীয় জ্ঞান আপনাকে আত্মবিশ্বাসী করবে। বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া মেয়েদের জন্য আরবি শেখা মোটেও কঠিন কিছু নয়। তাদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করাই আসল কথা। আমার ক্লাসে নারী শিক্ষার্থীরা পুরুষদের চেয়ে এগিয়ে থাকেন। শত ব্যস্ততার মাঝেও তাঁরা এগিয়ে যান। তাই নারীদের পড়াশোনা ছাড়তে বাধ্য করবেন না। সেক্যুলার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েও তারা ইসলাম শিখতে পারে। এতে তাঁরা আরও বেশি ধার্মিক হবে।
অনেক পিএইচডিধারী নারী আমার ক্লাসে আসেন। মাথায় স্কার্ফ নেই। সহিহ বুখারি পড়েন। লোকজন বলে, ‘এই নারী এমন পবিত্র গ্রন্থ স্কার্ফ ছাড়া পড়ছেন!’ আমি তাঁদের বলি, ‘চিন্তার কিছু নেই। ওদের আসতে দিন। দেখবেন, তাঁরা বদলে যাবে। তাঁরা তাহাজ্জুদগুজার হয়ে যাবে। এখান থেকে গিয়ে পরিবারকে শেখাবে। তাঁদের জানার সুযোগ দিতে হবে। তা জানলে আমরা কীভাবে তাঁদের বাধ্য করব? পুরুষদের মতো নারীরাও জান্নাতে যেতে চায়। তাদের পড়াশোনার করার সুযোগ দিন।’
উপমহাদেশের মহিলা মাদ্রাসাগুলোর ব্যাপারে আমি সন্তুষ্ট নই। তা খুবই নিম্নমানের। তারা নারীদের স্রেফ পাঁচ-ছয় বছর পড়াশোনা করার সুযোগ দেয়। এই অল্প সময়ে তারা তেমন কিছু শিখতে পারে না। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুক; সপ্তাহান্তে সময় বের করে ইসলাম শিখুক। কারণ, মাদ্রাসাপড়ুয়া নারীরা সাধারণ কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করলে নিজের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলে। তাই তাদের আত্মবিশ্বাস বিকশিত করার সুযোগ দিন। অনেক পুরুষ ধার্মিক স্ত্রী পেলে খুশিতে গদগদ হয়। তবে তারাই আবার চায় না—নারীরা শিখুক। তবে একবার শিখে যখন তা মানার চেষ্টা করে, তখন সেই পুরুষদের খুশির সীমা থাকে না। তাহলে আমার কথা হলো—তাদের শিখতে দেন না কেন?

বিশ্বকোষ রচনার প্রেক্ষাপট
১৯৯৪ কিংবা ৯৫ সালের কথা। যুক্তরাজ্যের কয়েকটি সংবাদপত্রে মুসলিম নারী নিয়ে কিছু নেতিবাচক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। তাতে মুসলিম বিশ্বে নারীদের পশ্চাৎপদ ও শোচনীয় অবস্থার জন্য ইসলামকেই দোষারোপ করা হয়। সত্যি কথা হলো, বর্তমান মুসলিম সমাজে আসলেই নারীদের সম্মানের চোখে দেখা হয় না। তাদের কোনো অনুষ্ঠানে যেতে দেওয়া হয় না; গেলেও কোনো গয়না নিয়ে যেতে দেওয়া হয় না। জোর-জবরদস্তি ও সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার এমন মানসিকতা মানুষের প্রতি অশ্রদ্ধারই নামান্তর। নারীরা মানুষ; তাদের মন আছে। আল্লাহ তাআলা মানুষকে নির্দেশনা দেন; ভালো-মন্দ ব্যাখ্যা করেন। এর পর যার ইচ্ছা ভালোটা গ্রহণ করবে, আর যার ইচ্ছা মন্দটা গ্রহণ করবে। এই সুযোগ সব মানুষকেই দিয়েছেন।
আল্লাহ পৃথিবীর সব মানুষকে সম্মানিত করেছেন। তিনিই আমাদের স্রষ্টা। অথচ আমরা সব সময় নারীদের বাধ্য করার পথ খুঁজি। আলেমদের মুখেও নারীর প্রতি অবমাননাকর ও বিদ্রূপাত্মক কথা শুনি; যা শুনে যে কেউ-ই রাগান্বিত হবেন। পুরুষদের নিয়ে অবমাননাকর কিছু বলা হলে তো তারা নিঃসন্দেহে রেগে যাবেন। মূলত আমরা নারীদের মানুষই মনে করি না। এমন মনোভাব ইসলাম সমর্থন না করলেও মুসলিম সমাজে দুঃখজনকভাবে প্রচলিত আছে।
যা হোক, প্রবন্ধগুলো পড়ে আমি খুবই আহত হই। কেউ খামাখা ইসলামকে দোষারোপ করুক, তা আমরা চাই না। তখন আমার মাথায় একটা চিন্তা এল। দীর্ঘদিনের হাদিস গবেষণার সূত্রে জ্ঞানচর্চায় বিখ্যাত অনেক মুসলিম নারী স্কলারের কথা আমার জানা ছিল। ভাবলাম, তাঁদের জীবনী এক মলাটে তুলে ধরলে একটা মোক্ষম জবাব হবে। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বইটি মুসলিম নারীদের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বড় প্রেরণা হবে। তা ছাড়া আলেমদের আমাদের হারানো অতীত স্মরণ করিয়ে দেওয়ার চিন্তাও ছিল। এসব কারণেই আমি প্রকল্পটি হাতে নিই। কোনো বিশ্ববিদ্যালয় পৃষ্ঠপোষকতা করেনি। পুরো কাজটি একান্তই আমার আগ্রহের জায়গা থেকে করা। অক্সফোর্ডে আমি অন্য কাজ করতাম, পাশাপাশি এ কাজটিও স্বল্প পরিসরে শুরু করি। এর পর আরও তথ্য আমার কাছে আসতে থাকে। আমি সিরিয়া, মিসর ও অন্যান্য দেশ ভ্রমণ করে পুরোনো পাণ্ডুলিপি থেকে অনেক তথ্য সংগ্রহ করি। অবিশ্বাস্যভাবে অনেক বেশি তথ্য হাতে আসে। বইয়ের ভলিউম শুধুই বাড়ছিল।
মনে আছে, ৫ হাজার নারী স্কলারের তথ্য সংগ্রহ করার পর আমার এক খ্রিষ্টান প্রাচ্যবিদ সহকর্মী এসে বলেন, ‘আপনি তো ৫ হাজারের তথ্য সংগ্রহ করলেন। আপনাকে এক বিখ্যাত প্রাচ্যবিদের কিছু কলাম দিচ্ছি।’ তিনি তা আমাকে সরবরাহ করেন। তাতে লেখক দাবি করেন, মুসলমানরা যদি পাঁচজন শিক্ষিত নারীর নাম পেশ করতে পারে, তবে তিনি স্বীকার করবেন যে, ইসলাম নারীর অধিকার দেয়। লেখাটি হাতে আসার পর আমার সংগ্রহ বাড়তে বাড়তে ৫ হাজার থেকে ৯ হাজার, তারপর ১০ হাজারে উন্নীত হয়। এর পর কাতারে আমাকে শাইখ ইউসুফ আল-কারজাবি কাজটি শেষ না হওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করেন। তিনি পরামর্শ দেন, কাজে বিরতি দিয়ে যা হয়েছে, তা প্রকাশ করে দিতে। তাঁর অনুরোধে আমি কাজটি থামাই। বইটি বের হওয়ার পরও তাতে যুক্ত করার মতো আরও ২ হাজার নারীর তথ্য এখন আমার হাতে আছে।
এ বিষয়ে স্বতন্ত্র বিশ্বকোষ রচনার কাজ এটিই প্রথম। আশা করি, এর পর অনেকেই এ কাজে এগিয়ে আসবেন। আমি ফারসি জানলেও ফারসি ভাষাসহ মধ্য এশিয়ার অন্যান্য ভাষা, উজবেক কিংবা তুর্কি সোর্স থেকে আমি তথ্য নিইনি। ফলে এ ক্ষেত্রে কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। একজনের জানা ভাষা ও সোর্স থেকে যদি এত তথ্য পাওয়া যায়, তবে ভবিষ্যতে বিষয়টি আরও সমৃদ্ধ হবে। তাই আমি অনেক খুশি।
৪৩ খণ্ডের এই বিশ্বকোষের ভূমিকা হিসেবে আরবি ও ইংরেজিতে একটি ভলিউম প্রকাশিত হয়। একবার আমি যুক্তরাষ্ট্রের এক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হই। সেখানে এক নারী শিক্ষার্থী তা নিয়ে আমার কাছে হাজির হন। তাঁর কপিটির প্রত্যেক পৃষ্ঠাতেই তিনি টীকা সংযোজন করেন। তিনি জানান, ‘সুদান, মধ্যপ্রাচ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের ইসলাম ত্যাগ করা অনেক নারীই এ বই পড়ে ইসলামে ফিরে আসেন।’
সুতরাং আমি মনে করি, এ গবেষণা মানুষকে ইসলাম সম্পর্কে জানতে সাহায্য করছে। আমি সম্প্রতি ওমরাহ থেকে ফিরেছি। সৌদি আরবে দেখলাম, অনেক নারী-পুরুষই আমার এ কাজের জন্য আপ্লুত। হৃদয়ের গভীর থেকে বলি, নারীদের, বিশেষভাবে মুসলিম নারীদের, আরও বিশেষভাবে ভারত উপমহাদেশের মুসলিম নারীদের জন্য আমি কাজ করতে চাই। কারণ, আমার শেকড় ভারতেই। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতের মুসলিম নারীদের অবস্থা অধিক শোচনীয়—আমি জানি।
ইসলামে নারীর অবদান
বিশ্বকোষটি রচনা করতে গিয়ে আমি দেখি, এ যুগের নারীদের তুলনায় আগের যুগের নারীদের অবস্থা আরও খারাপ ছিল। তবুও তাঁরা জ্ঞানচর্চায় পিছিয়ে পড়েননি। তাঁদেরও পারিবারিক জীবন ছিল। তাঁদের মধ্যেও ধনী-দরিদ্র ছিলেন। কারও বাচ্চা ছিল, পারিবারিক কলহ ছিল; কেউ আবার ডিভোর্সি ছিলেন। তাঁরা কোনো অভিযোগ না করে সবকিছু সামলে নিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যান। ইসলামের গণ্ডির মধ্যে থেকে সময়ের সদ্ব্যবহার করেন। সততার সঙ্গে ইসলামকে জানতে চান এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই জ্ঞান অর্জন করেন। তাই তো পুরুষদের বিরুদ্ধে হাদিস জালিয়াতির অভিযোগ থাকলেও নারী হাদিস বর্ণনাকারীদের বিরুদ্ধে এমন কোনো অভিযোগ নেই।
ইসলামে নারীরা বিস্ময়কর অবদান রাখেন। ইসলামি জ্ঞানচর্চার এক চতুর্থাংশেই নারীর একচেটিয়া আধিপত্য। বাকি তিন ভাগে রয়েছে নারী-পুরুষের সমান অবদান। ইসলামি জ্ঞানের বিখ্যাত গ্রন্থগুলোতে নারীদের বর্ণিত হাদিসের ভিত্তিতেই অনেক বিধান প্রণীত হয়। নারী হওয়ার কারণে মুহাদ্দিসরা কখনো তাঁদের হাদিস বাদ দেননি; বরং সাদরে গ্রহণ করেন। কেবল নারীদের বর্ণিত হাদিসের ওপর ভিত্তি করেই অনেক বিধান প্রণীত হয়। তাই নারী আমাদের ধর্মেরই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্মের সূচনাকালে নারীদের এমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে দেখা যায় না। বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, নাসায়ি, ইবনে মাজাহসহ হাদিসের অসংখ্য গ্রন্থে তাঁদের অবদান অবিস্মরণীয়। এসব গ্রন্থের রচয়িতারা নারীদের কাছে শুধু জ্ঞান আহরণই করেননি; বরং তাঁদের সনদ বর্ণনা সর্বাধিক বিশুদ্ধ বলেও প্রমাণিত।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, পবিত্র কোরআনের পর বিশুদ্ধতম গ্রন্থ সহিহ বুখারির বিশুদ্ধতম কপিটি এক নারীর সম্পাদিত—কারিমা বিনতে আহমাদ ইবনে মুহাম্মদ আল-মারওয়াজি (মৃত ৪৬৩ বা ৪৬৪ হি.)। অথবা উম্মুল খাইর ফাতিমা বিনতে ইবরাহিম (মৃত.৭১১ হি.)-এর কথাই ধরুন। তিনি সহিহ বুখারির শিক্ষক ছিলেন। বুখারির সর্বোৎকৃষ্ট সনদ তাঁর ছিল। অনেক জ্ঞানীগুণী ব্যক্তি তাঁর কাছে শিখতেন। সিরিয়া থেকে হজে এসে তিনি মদিনায় জিয়ারতে আসেন এবং মসজিদে নববীতে হাদিস পাঠদান করেন। এমন আরও দু-তিনজন নারী স্কলার আছেন। সেকালের মুসলিম সমাজে যদি নারীর সম্মান না-ই থাকত, তাহলে কীভাবে তারা একজন নারীকে মহানবী (সা.)-এর পবিত্র রওজার পাদদেশে বসার অনুমতি দিয়েছিলেন? একইভাবে তিন নারী স্কলার পবিত্র কাবাঘরের পাদদেশে হাতিম-এ পাঠদান করেছিলেন।
তাই আমি বলি, নীতিমান হলে অবশ্যই আপনাকে নারীর সম্মান দিতে হবে। ইসলামে তাদের অবদান স্বীকার করতে হবে; কৃতজ্ঞতা জানাতে হবে। এসব নারী স্কলারের জ্ঞানচর্চা ও শিক্ষাদানের কারণেই অনেক হাদিসগ্রন্থ আজ আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। তাঁদের কারণেই অনেক হাদিসগ্রন্থ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। তাবরানি প্রণীত বিখ্যাত হাদিসগ্রন্থ মুজাম আল-কাবির তাঁর ছাত্রী ফাতিমা আল-জুজদানিয়া (মৃত ৫২৪ হি.)-এর সূত্রে বর্ণিত। এই ফাতিমার ছাত্ররাই স্পেন থেকে এসে মিসরে হাদিসশাস্ত্র পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন।
আরেক বিখ্যাত নারী স্কলারের নাম ফাতিমা আল-সামারকান্দি। তিনি তাঁর বাবা মুহাম্মাদ ইবনে আহমাদ আল-সামারকান্দি রচিত তুহফাত আল-ফুকাহা পুরো মুখস্থ করেন। আল-কাসানি নামে তাঁর এক ছাত্র ছিলেন। শিক্ষকের কন্যা ফাতিমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে তিনি তা নাকচ করে দেন। কারণ তিনি জানতেন, তাঁর মেয়ে তাঁর ছাত্রের তুলনায় বেশি জ্ঞানী। তবে পরে তাঁর গ্রন্থের একটি ব্যাখ্যা লিখে দেওয়ার শর্তে রাজি হন। আল-কাসানি সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন এবং বাদায়ে আল-সানায়ে নামের অনবদ্য এক ব্যাখ্যা-গ্রন্থ লিখে দেন, যা এখন পর্যন্ত হানাফি ফিকহের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ। চিন্তা করে দেখুন, হানাফি মাজহাবের একটি সেরা গ্রন্থ একজন নারীকে পেতে লেখা হয়েছিল!

ইসলামে নারীর অধিকার
মহানবী (সা.) কখনোই নারী-পুরুষের শিক্ষাগ্রহণ, শিক্ষাদান ও যুদ্ধে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বৈষম্য করেননি। নারীদের জন্য যুদ্ধ বাধ্যতামূলক না করলেও যেতে চাইলে তাঁদের পুরস্কৃত করা হয়েছে। তেমনি জুমার নামাজ তাদের জন্য আবশ্যক করা না হলেও অংশ নিলে অবশ্যই পুরস্কৃত করা হয়েছে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘নারীদের মসজিদে আসতে বাধা দিয়ো না।’
আপনি দেখবেন, নারী সাহাবিরা যুদ্ধে অংশ নিচ্ছেন, তলোয়ার হাতে লড়াই করছেন এবং মহানবী (সা.) নিজেই তাঁদের উৎসাহ দিচ্ছেন। ইয়ারমুকের যুদ্ধে ৩৫ জন নারী অংশ নেন। আপনিই বলুন, নারীরা যুদ্ধ করতে নামলে কি নারী হওয়ার কারণে শত্রুপক্ষ তাদের ছাড় দেবে? কখনোই না, আঘাত করার সুযোগ মোটেও হাতছাড়া করবে না। তো মুসলিম নারী যদি রণাঙ্গনে শত্রুর বিরুদ্ধ লড়াই করার অনুমতি পায়, তাহলে আর কোন জায়গাটি তাদের জন্য অনুপযুক্ত থাকে? আয়েশা (রা.)-কেই দেখুন! পুরো একটি সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছেন, ভাষণ দিয়েছেন এবং হাজারো মানুষের মাঝে শিক্ষার আলো বিতরণ করেছেন। হজ-ওমরাহর তাওয়াফেই নারী-পুরুষের কত ভিড় দেখুন! এমন ভিড় পৃথিবীর কোথাও দেখবেন না। যে ধর্মে তাওয়াফের মতো ভিড়ের স্থানে যাওয়ার অনুমতি আছে, সেখানে আর কোথায় যেতে বাধা থাকতে পারে?
নারীদের এগিয়ে যেতে হবে। জ্ঞানচর্চায় ব্রতী হতে হবে। ভারতীয়রা নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলে। আমি বলি, আসল ক্ষমতায়ন হলো জ্ঞান-বিজ্ঞান। মানুষকে শেখানো এবং শিক্ষিত জাতি তৈরি করাই আসল উন্নয়ন। আমি নারীদের বলি, আপনি বিদ্যার্জন অব্যাহত রাখলে পুরুষও আপনার কাছে শিখতে আসবে। সুতরাং যুক্তিতর্ক করার দরকার নেই।
আমার মাঝেমধ্যে মনে হয়, নারীরা ইসলামের বেশি খেদমত করতে পারে। কারণ তাদের প্রতারণার মনোভাব কম; আন্তরিকতা বেশি। ক্ষমতালিপ্সু নয় তারা। মুম্বাইয়ে আমার এক ছাত্রী তাফসির পড়ান। কিছু আলেম তাঁকে বলেন যে, ‘নারীরা পুরুষদের পড়াতে পারে না।’ আমি তাঁকে বলি, ‘কিছুই বলার দরকার নেই। নারীরা হাদিস শেখাতে না পারলে আমাদের কী হবে? এত মানুষ কীভাবে বিদ্যার্জন করবে। আমাদের বেশির ভাগ শিক্ষকই তো আমাদের মাহরাম নন। সুতরাং কাজ করে যান। সত্য একদিন ছড়িয়ে পড়বে ইনশাআল্লাহ। আমি নারীদের পড়াই বলে অনেকেই এক সময় আমার সমালোচনা করতেন। এখন দেখি তাঁরাও নারীদের পড়ান।’
মুসলিম নারীদের পিছিয়ে পড়ার কারণ
মুসলিম বিশ্ব সব ক্ষেত্রেই পিছিয়ে। শুধু নারীর ক্ষেত্রেই নয়, আজকাল পুরুষদেরও চরম অধঃপতন ঘটেছে। মুসলিমরা শিক্ষাকে মাদ্রাসার গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ করে ফেলে। অতীতে নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য পড়াশোনার সুযোগ থাকলেও বর্তমানে অধিকাংশ মাদ্রাসা পুরুষদের জন্য বরাদ্দ। বিশেষ করে উপমহাদেশের মাদ্রাসাগুলোতে এবং মুসলিম কারিকুলামে গ্রিক দর্শনে বেশ জোর দেওয়া হয়। কারণ, গ্রিক দার্শনিকদের মধ্যে অ্যারিস্টটল থেকে শুরু করে প্রায় সবাই নারী অবমাননা করতে অভ্যস্ত ছিলেন। এ কারণেই কোনো নারী গ্রিক দার্শনিক আপনি খুঁজে পাবেন না। তাঁরা মনে করতেন, নারী বুদ্ধিমত্তায় নীচ। অ্যারিস্টটলকে আমি সম্মান করি, তবে তিনিই বলেন যে, ‘বুদ্ধিমত্তায় নারীদের নীচ হওয়ার একটি প্রমাণ হলো পুরুষের তুলনায় তাদের দাঁত কম।’ এত বড় দার্শনিক এমন বক্তব্য দিচ্ছেন, ভাবতেই অবাক লাগে!
মুসলিম বিশ্বের গ্রিক দর্শন প্রভাবিত কোনো মানুষই নারীদের এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দেয় না। এ কারণেই আমার বিশ্বকোষে সব ঘরানার নারী স্কলার থাকলেও দার্শনিক পরিবার থেকে আসা কোনো নারী স্কলার নেই। এমনকি ইমাম গাজ্জালির মতো বিখ্যাত দার্শনিক আলিমও রাজা-বাদশাহদের উপদেশ দেন যে—নারীর সঙ্গে পরামর্শ করবেন না; করলেও তাদের মতের বিপরীত কাজ করুন। তিনি আরও বলেন যে—নারীর কারণেই পৃথিবীর সব মন্দ কাজ সংঘটিত হয়। মাদ্রাসাগুলোতে এখনো ইমাম গাজ্জালির বিরাট প্রভাব আছে। আমি নিজেও মাদ্রাসার ছাত্র। আমি সারা জীবন মাদ্রাসায় পড়েছি; তাঁদের শ্রদ্ধা করি এবং তাঁদের নিয়ে লিখি। তারপরও আমি বলব, এমন মানসিকতা তাঁদের মধ্যে আছেই; সেখান থেকে তাঁরা বেরোতে পারছে না। মাদ্রাসাগুলোর পরিবর্তনে সময় লাগবে। আমি তাঁদের সঙ্গে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে চাই না; আমি মানুষকে শেখাতে চাই। পরিবর্তন ধীরে ধীরেই হয়। ইনশা আল্লাহ একদিন পরিবর্তন আসবেই।
ঘরবন্দী করে রাখার যুক্তির অসারতা
অবশ্য নারীবাদকে তাদের জন্য সহায়ক মনে করি না আমি। এটি আরেক চরমপন্থা। নারীবাদের সমালোচনা করে আমি আরেকটি বই লিখেছি; শিগগিরই তা প্রকাশিত হবে ইনশাআল্লাহ। তবে নারীবাদের একটি ভালো দিক আছে—এটি নারীর জন্য সুবিচারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এই পয়েন্টে আমরা একমত। নারীদের প্রতি সুবিচার করা উচিত। তবে নারীবাদের সমাধান ভালো নয়; সেটি তাদের জন্য ক্ষতিকর।
আয়েশা (রা.)-এর যুগে একটি হাদিস প্রচলিত ছিল—নামাজরত কোনো পুরুষের সামনে দিয়ে কোনো নারী হেঁটে গেলে নামাজ নষ্ট হবে। কুফার বিখ্যাত আলিম ও ফকিহ আসওয়াত ইবনে ইয়াজিদ আয়েশাকে হাদিসটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি রেগে যান এবং বলেন, ‘হে কুফাবাসী, আমরা, নারীদের তোমরা গাধা ও বানরের সমান বানিয়ে ছেড়েছ! মহানবী (সা.) নামাজরত থাকতেন, আমি তাঁর সামনে থাকতাম, কই কিছুই তো হয়নি!’ এভাবে তিনি এই প্রচলিত ভুল শুধরে দেন। এ ঘটনা থেকে বুঝতে পারি, নারীরা মাঠে না থাকলে পুরুষেরা তাদের সম্পর্কে যা ইচ্ছা বলবে। প্রতিবাদ করার কেউ থাকবে না।
অনেকেই নারীদের নিকাব পরা বাধ্যতামূলক বলে দাবি করেন। আমার মনে হয়, তাঁদের এই সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ইসলামের মূল শিক্ষার চেয়ে ভারতীয় সংস্কৃতির প্রভাবই বেশি। তাঁরা যুক্তি দেন যে, আপনার হিরে-জহরত থাকলে তা বাড়ির অন্দরে লুকিয়ে রাখেন। নারীও হিরে-জহরতের মতোই। আমরাও এক সময় এই যুক্তি বিশ্বাস করতাম। তবে এখানে একটি মৌলিক ভুল আছে—হিরে-জহরতের মন নেই, জীবন নেই; তবে নারীর চিন্তাশীল মন-মনন আছে। তারা ভালো-মন্দ বোঝে। কোরআন আদম (আ.)-কে এ আদেশ দেয়নি যে, স্ত্রীকে ভালো-মন্দ শেখান। বরং উভয়কে সম্বোধন করেই সমানভাবে আদেশ করা হয়েছে। নারীরা ভালো-মন্দ বোঝে, তাদের সঙ্গে পাথরের মতো আচরণ করার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
নারীদের সঙ্গে কথা বলার সময় মাথায় রাখতে হবে যে, তারাও সচেতন মানবসন্তান। আল্লাহ তাআলা এভাবেই তাদের সম্বোধন করেন। আমার যুক্তি হলো, নারীরা মূল্যবান হিরে-জহরত হওয়ার কারণে যদি তাদের অন্তপুরে লুকিয়ে রাখতে হয়, তাহলে পুরুষেরা তো নারীর চেয়েও মূল্যবান, তাদের তো বাক্সবন্দী করে রাখা দরকার! এই যুক্তি কি পুরুষসমাজ মেনে নেবে? মূলত কোরআন-হাদিসে এমন যুক্তির কোনো ভিত্তি নেই। এটি মানুষের মনগড়া ব্যাখ্যা। কোরআন নারীদের সঙ্গে কেমন মনোভাব পোষণ করে দেখুন। সাহাবিদের কর্মপন্থা দেখুন। ওমর (রা.) মদিনার নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই গনিমতের মাল বরাদ্দ করতেন। তিনি বাড়ি বাড়ি খবর পাঠাতেন—পুরুষেরা তাদের ভাগ নিয়ে যাক, নারীরা তাদের ভাগ নিয়ে যাক; কেউ কারও প্রতিনিধি হিসেবে আসার দরকার নেই। তিনি নিজ হাতেই তা নারীদের মধ্যে বণ্টন করতেন। কারও ভাই কিংবা স্বামী প্রতিনিধি হিসেবে এলে সেই নারীকে তিনি উপদেশ দিতেন—অন্য কাউকে তোমার টাকা নিতে পাঠানো সঠিক নয়।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর স্ত্রী একবার তাঁর কাছে একটি বিষয় জানতে চান। বিষয়টি তাঁর জানা ছিল না। তিনি বলেন, ‘তুমি মহানবী (সা.)-এর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করো।’ তাঁর স্ত্রী বললেন, ‘না, তুমি গিয়ে জিজ্ঞেস করে এসো।’ তিনি অস্বীকৃতি জানান এবং তাঁকেই যেতে বলেন। তখন তিনি মহানবী (সা.)-এর কাছে গিয়ে বিষয়টি সরাসরি জিজ্ঞেস করেন। এ যুগের লোকজন বলবে, ‘না, না! মুফতির কাছে যেয়ো না; তোমার বদলে আমিই যাচ্ছি।’
নারীরা রাসুলের কাছে গিয়ে সরাসরি প্রশ্ন করতেন; কারণ ইসলাম সকল মানুষের ধর্ম। আমাদের সমাজে যা প্রচলিত আছে, তা অস্বাভাবিক। ইসলামের স্বাভাবিক নির্দেশনা হলো, আপনি তাদের চিন্তাশীল মানুষ ভাবুন, তাদের মন-মননকে সম্মান করুন এবং নিষ্ঠার সঙ্গে তাদের আল্লাহর ইবাদত করার সুযোগ করে দিন। এতে তারা পুরুষের চেয়ে বেশি ধার্মিক হবে। আল্লাহভীতি কখনোই জোর-জবরদস্তি করে আনা যায় না; মন থেকেই আসতে হয়। পাথর কিংবা দেয়াল তো ধার্মিক নয়। তারা তো মিথ্যা বলে না। ভালো-মন্দ পরখ করার সুযোগ দিলেই তো ধার্মিক হওয়ার সুযোগ আসে। নারীরা নিজেদের পথ বেছে নিক। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি কি তাকে (ভালো-মন্দ) দুটি পথ দেখাইনি?’ (সুরা বালাদ, আয়াত: ১০) তাই যুক্তি যাদের পক্ষ থেকেই আসুক, পরখ করে দেখুন। ইসলাম মজবুত যুক্তিই গ্রহণ করে; দুর্বল-খোঁড়া যুক্তি নয়।
ফিকহের পুনর্মূল্যায়ন জরুরি
ইসলাম কোরআন-সুন্নাহর ওপরই প্রতিষ্ঠিত। ফিকহ কোরআন-সুন্নাহর একটি অংশ মাত্র। ফিকহের অধিকাংশ মাসায়েলই ইজতিহাদের ভিত্তিতে। এটি প্রথা ও সময়ের আলোকেই প্রণীত হয়। ফিকহি মতামত যুগের বিবর্তনে পরিবর্তিত হয়। মতামতগুলো মানুষেরই; একটি আরেকটির চেয়ে ভিন্নতর। একাধিক অর্থের সুযোগও থাকে অনেক ক্ষেত্রে। আমরা কোরআন-সুন্নাহর পরিবর্তন করতে বলছি না। তবে যুগের আলোকে বিষয়টি ব্যাখ্যা করছি। আর ব্যাখ্যা দিতে হলে আমাদের মহানবী (সা.)-এর যুগে ফিরতে হবে। মদিনার সমাজবাস্তবতায় তিনি নারীদের সঙ্গে কেমন আচরণ করেছেন, তা দেখতে হবে। নারীদের মসজিদে যেতে উৎসাহ দিয়েছেন—আমাদেরও তা-ই করতে হবে। নারীদের কৃষি ও ব্যবসা-বাণিজ্য করতে উৎসাহ দিয়েছেন—আমাদেরও তা-ই করতে হবে। ওমর (রা.) শিফা বিনতে আবদুল্লাহ নামের এক নারীকে বাজার পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। এত পুরুষ সাহাবি থাকার পরও তিনি একজন নারীকেই দায়িত্ব দেন। অন্য এক নারী, সামারা বিনতে নাহিককে তিনি সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ বিষয়ক দায়িত্ব দেন। হাতে লাঠি নিয়ে তিনি মানুষের অপরাধের শাস্তি দিতেন। নারীরা তখন কত সক্রিয় ছিল ভাবুন!
এই বিশ্বকোষটি লেখার পর আমি ইংল্যান্ডের লিসেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে যাই। সেখানে কয়েকজন আলেম আমাকে বলেন, ‘আপনার বইটি ইসলামকে পরিবর্তন করতে যাচ্ছে।’ আমি বলি, ‘না, এটি পরিবর্তনকেই সরাতে যাচ্ছে। এটি মানুষকে মহানবী (সা.)-এর সমাজে নিয়ে যাচ্ছে।’ আমি আরও বলি, ‘আপনারা আলেম মানুষ। আমার তথ্য-উপাত্তে কোনো ধরনের ভুল থাকলে শুধরে দিন। আমি তা বই থেকে মুছে দেব।’
একবার আমি ইংল্যান্ডের এক মসজিদে বক্তৃতা দিই। তাতে নারীদের মসজিদে আসতে উৎসাহ দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করি। ইমাম সাহেব এসে বলেন, ‘যা ইচ্ছা বলেন, তবে এমন কথা বলবেন না।’ আমি বলি, ‘কেন? আমার যুক্তিতে কোনো ভুল আছে?’ তিনি বলেন, ‘নাই। যুক্তি যথাযথ। তবে তারা মসজিদে আসুক, তা আমরা চাই না।’
নারীদের মসজিদে আসতে নিষেধ করার পেছনে চলমান সংস্কৃতিই তাদের আসল কথা; বাস্তবে তাদের কাছে নিরেট কোনো যুক্তি নেই। কিছু মানুষের কাছে ইসলামের চেয়ে মুসলিম সংস্কৃতি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ইসলাম সংস্কৃতি সর্বস্ব ধর্ম নয়, বরং এটি আল্লাহ ও পবিত্র কোরআনের নির্দেশনা। নারী-পুরুষকে এক সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার ক্লাসে নারী-পুরুষ সমানভাবে অংশ নেওয়া সুযোগ রেখেছি।
নারীর অধিকার বনাম বঞ্চনা
বিয়ের পর নারীর স্বাধীন ও আলাদা ঘর নিশ্চিত করা পুরুষের দায়িত্ব, যা দুই পক্ষের আত্মীয়-স্বজনের ঘর থেকে পৃথক হবে—এ বিষয়ে কোনো আলিমের দ্বিমত নেই। ঘরের পরিবেশও হতে হবে নিরিবিলি, হিজাব করা কিংবা ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা নিয়ে চিন্তা থাকা যাবে না। স্বামী তার স্ত্রীকে বাবা-মা কিংবা ভাইয়ের ঘরে তুলতে পারে না। সকল মাজহাবেই এমনটি বলা হয়েছে। লোকে বলে, আমার বাবা-মা আছে, তাদের খেদমত করা লাগবে। আমি তাদের বলি, নারীদেরও বাবা-মা আছে। তারা স্বামীর বাবা-মায়ের সেবা করতে বাধ্য নয়। বাবা-মায়ের সেবার দায়িত্ব আপনারই। আপনি না পারলে লোক নিয়োগ দেন; স্ত্রীকে বাধ্য করতে পারেন না। তবে সে নিজ থেকে করলে তা একান্তই তার অনুগ্রহ; সে জন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞ হোন। আপনার স্ত্রীর খরচ আপনাকেই বহন করতে হবে। তার ভরণপোষণ, চিকিৎসা এমনকি শিক্ষার জন্যও ব্যয় করতে হবে। এটি অনুগ্রহ নয়; দান-সদকাও নয়। তার লাখ টাকা থাকলেও আপনাকে তা দিতে হবে। পরিবারের অন্য সদস্যরা অভাবগ্রস্ত হলেই তাদের দিতে হয়, তবে স্ত্রী ধনী হলেও দিতে হয়। এটি স্বামীর কর্তব্য।
কেউ কেউ বলে, ‘এত টাকা দিয়ে তারা কী করবে?’ আমি বলি, ‘তারা চ্যারিটি করবে; মসজিদ তৈরি করবে—অতীতের মতো। আগের যুগের নারীরা এমন কাজ অনেক করেছেন। তবে পরিহাসের বিষয় হলো, ফাতিমা আল-ফিহরিয়া নামের এক নারী মরক্কোর ফেজ শহরের কারাউয়্যিন কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, কিন্তু সেখানে দীর্ঘদিন নারীদের পড়াশোনার অনুমতি দেওয়া হয়নি। আমি সেই কলেজে একবার লেকচার দিতে যাই। শ্রোতাদের সবাই আলেম। আমি বলি, ‘এই কলেজ একজন নারীর তৈরি। হাজার বছর ধরে আপনারা তাদেরই পড়াশোনার সুযোগ দেননি।’ অবশ্য এখন তারা নারীদের পড়ার অনুমতি দিচ্ছেন। তেমনি ভারতেও এমন অনেক মসজিদ আছে, যা নারীদের অর্থায়নে নির্মিত হলেও তাদের নামাজের অনুমতি নেই। মানুষ ইসলাম পড়ে না। মহানবী (সা.)-এর যুগের প্রেক্ষাপট এবং কোরআন-সুন্নাহ থেকে স্পষ্ট উদ্ধৃতি না দিলে কারও যুক্তিতে কান দেওয়ার দরকার নেই।
মুসলিম নারীর করণীয়
আমি ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে ইংল্যান্ডে বসবাস করছি। আমার মত হলো, নারী-পুরুষ উভয়কেই মূলধারার শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। কারণ, আমাদের তা অর্জনের অন্য কোনো বিকল্প পথ নেই। তবে পাশাপাশি আরবি ভাষা ও ইসলাম শিক্ষা পড়াতে হবে। সেই লক্ষ্যপূরণেই আমি ক্যামব্রিজে কাজ করে যাচ্ছি। আমি মনে করি, ভারত উপমহাদেশেও নারী-পুরুষদের মূলধারার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা করা উচিত। তবে সপ্তাহের একদিন ইসলাম ও আরবি শেখার জন্য বরাদ্দ রাখলে তারা ইসলাম ভালোভাবে বুঝতে পারবে। ধর্মীয় জ্ঞান আপনাকে আত্মবিশ্বাসী করবে। বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া মেয়েদের জন্য আরবি শেখা মোটেও কঠিন কিছু নয়। তাদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করাই আসল কথা। আমার ক্লাসে নারী শিক্ষার্থীরা পুরুষদের চেয়ে এগিয়ে থাকেন। শত ব্যস্ততার মাঝেও তাঁরা এগিয়ে যান। তাই নারীদের পড়াশোনা ছাড়তে বাধ্য করবেন না। সেক্যুলার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েও তারা ইসলাম শিখতে পারে। এতে তাঁরা আরও বেশি ধার্মিক হবে।
অনেক পিএইচডিধারী নারী আমার ক্লাসে আসেন। মাথায় স্কার্ফ নেই। সহিহ বুখারি পড়েন। লোকজন বলে, ‘এই নারী এমন পবিত্র গ্রন্থ স্কার্ফ ছাড়া পড়ছেন!’ আমি তাঁদের বলি, ‘চিন্তার কিছু নেই। ওদের আসতে দিন। দেখবেন, তাঁরা বদলে যাবে। তাঁরা তাহাজ্জুদগুজার হয়ে যাবে। এখান থেকে গিয়ে পরিবারকে শেখাবে। তাঁদের জানার সুযোগ দিতে হবে। তা জানলে আমরা কীভাবে তাঁদের বাধ্য করব? পুরুষদের মতো নারীরাও জান্নাতে যেতে চায়। তাদের পড়াশোনার করার সুযোগ দিন।’
উপমহাদেশের মহিলা মাদ্রাসাগুলোর ব্যাপারে আমি সন্তুষ্ট নই। তা খুবই নিম্নমানের। তারা নারীদের স্রেফ পাঁচ-ছয় বছর পড়াশোনা করার সুযোগ দেয়। এই অল্প সময়ে তারা তেমন কিছু শিখতে পারে না। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুক; সপ্তাহান্তে সময় বের করে ইসলাম শিখুক। কারণ, মাদ্রাসাপড়ুয়া নারীরা সাধারণ কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করলে নিজের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলে। তাই তাদের আত্মবিশ্বাস বিকশিত করার সুযোগ দিন। অনেক পুরুষ ধার্মিক স্ত্রী পেলে খুশিতে গদগদ হয়। তবে তারাই আবার চায় না—নারীরা শিখুক। তবে একবার শিখে যখন তা মানার চেষ্টা করে, তখন সেই পুরুষদের খুশির সীমা থাকে না। তাহলে আমার কথা হলো—তাদের শিখতে দেন না কেন?

সৌদি আরবের মক্কায় অবস্থিত মসজিদুল হারামে শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) জুমার নামাজে ইমামতি করবেন প্রখ্যাত আলেম শায়খ ড. আবদুর রহমান বিন আবদুল আজিজ আস-সুদাইস। একই দিনে মদিনায় অবস্থিত মসজিদে নববিতে জুমার নামাজ পড়াবেন খ্যাতনামা কারি শায়খ ড. আবদুল্লাহ বিন আবদুর রহমান আল-বুআইজান।
৪ ঘণ্টা আগে
সময়ের আবর্তনে আমাদের দোরগোড়ায় আবারও হাজির হয়েছে মহিমান্বিত আরবি মাস—রজব। হিজরি পঞ্জিকাবর্ষের সপ্তম এই মাসটি মুমিনের জীবনে এক পরম পুণ্যের বার্তা নিয়ে আসে। পরকালীন পাথেয় ও সওয়াব হাসিলের তরে রজব মাস এক বিশাল সুযোগের মোহনা, যা বিশেষভাবে সিয়াম সাধনার মাস রমজানের অগ্রিম আগমনী বার্তা ঘোষণা করে।
৮ ঘণ্টা আগে
হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, প্রাপ্তি-বঞ্চনার দীর্ঘ পথ পেরিয়ে মানুষ যখন নতুন বছরে প্রবেশ করে, তখন অনুভূতির ভেতর এক অদ্ভুত দ্বন্দ্ব কাজ করে। একদিকে নতুন সূচনার আনন্দ, অন্যদিকে জীবন থেকে আরেকটি বছর অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার বেদনাবোধ। প্রতিটি অতিবাহিত বছর মানে নির্ধারিত হায়াতের একটি অংশ কমে যাওয়া।
৮ ঘণ্টা আগে
ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের আগমনী ইতিহাস সুদূর প্রাচীন ও বৈচিত্র্যময়। বিশেষত দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্য ইসলামের প্রাচীনতম স্থাপত্যের নিদর্শনের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। আরব সাগরের উপকূলবর্তী এই অঞ্চলে আরব বণিকদের নিয়মিত আগমনের সূত্রে ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটেছিল। সেই ঐতিহাসিক সময়ের স্মৃতিচিহ্ন...
৮ ঘণ্টা আগেইসলাম ডেস্ক

সৌদি আরবের মক্কায় অবস্থিত মসজিদুল হারামে শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) জুমার নামাজে ইমামতি করবেন প্রখ্যাত আলেম শায়খ ড. আবদুর রহমান বিন আবদুল আজিজ আস-সুদাইস। একই দিনে মদিনায় অবস্থিত মসজিদে নববিতে জুমার নামাজ পড়াবেন খ্যাতনামা কারি শায়খ ড. আবদুল্লাহ বিন আবদুর রহমান আল-বুআইজান। সংবাদমাধ্যম দ্য ইসলামিক ইনফরমেশন এ তথ্য জানিয়েছে।
কে এই শায়খ ড. আবদুর রহমান আস-সুদাইস
মসজিদুল হারামের এ সপ্তাহের জুমার ইমাম শায়খ আবদুর রহমান বিন আবদুল আজিজ আস-সুদাইস বিশ্ব মুসলিমের কাছে অন্যতম জনপ্রিয় ইসলামি ব্যক্তিত্ব ও কারি। তিনি শায়খ আস-সুদাইস নামে ব্যাপক পরিচিত। আবেগঘন ও হৃদয়স্পর্শী কোরআন তিলাওয়াতের জন্য বিশ্বজুড়ে তাঁর খ্যাতি রয়েছে। তাঁর তিলাওয়াত শ্রোতাদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
শায়খ আবদুর রহমান আস-সুদাইস ১৯৬০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি সৌদি আরবের আল-কাসিম প্রদেশের আনাজা গোত্রে জন্মগ্রহণ করেছেন। শৈশব থেকেই ইসলামি শিক্ষায় মনোযোগী ছিলেন। আল-মুছানা বিন হারিস প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাধ্যমে তাঁর পড়াশোনা শুরু হয়। সেখানেই মাত্র ১২ বছর বয়সে কোরআনের হিফজ সম্পন্ন করেন তিনি।
১৯৭৯ সালে রিয়াদের সায়েন্টিফিক ইনস্টিটিউশন থেকে স্নাতক শেষ করেন এবং রিয়াদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শরিয়াহ বিষয়ে ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর ইমাম মুহাম্মদ বিন সৌদ ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে ইসলামি মূলনীতিতে মাস্টার্স এবং উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামিক শরিয়ায় পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
শায়খ আবদুর রহমান আস-সুদাইস ১৯৮৪ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে মসজিদুল হারামের ইমাম হিসেবে নিয়োগ পান। ওই বছরের জুলাই মাসে মসজিদুল হারামে প্রথমবার খুতবা প্রদান করেন। এরপর থেকে অনেকবার তারাবির নামাজে ইমামতি করেছেন।
শায়খ আবদুর রহমান আস-সুদাইসকে ২০১২ সালে দুই পবিত্র মসজিদ (মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববি) বিষয়ক জেনারেল প্রেসিডেন্সির প্রেসিডেন্ট করা হয়। ২০১৬ সালে তাঁকে আবারও এই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাঁর নেতৃত্বে এই দুই পবিত্র স্থান ব্যবস্থাপনায় অসাধারণ উন্নতি হয়েছে।
শায়খ আবদুর রহমান আস-সুদাইস টানা চার দশকের বেশি সময় কাবার ইমামের দায়িত্ব পালন করছেন। ২০২৩ সালে তিনি কাবার ইমাম হিসেবে ৪০ বছর পূর্ণ করেছেন।
অন্যদিকে, মসজিদে নববির এ সপ্তাহের জুমার ইমাম শায়খ ড. আবদুল্লাহ বিন আবদুর রহমান আল-বুআইজান সুললিত কণ্ঠে কোরআন তিলাওয়াতের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিতি।
কে এই শায়খ ড. আবদুল্লাহ বিন আবদুর রহমান আল-বুআইজান
তাঁর পুরো নাম আবদুল্লাহ বিন আবদুর রহমান বিন সুলাইমান আল-বুআইজান আত-তামিমি। তিনি মসজিদে নববির সম্মানিত ইমাম ও খতিব এবং মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়াহ অনুষদের একজন শিক্ষক। ১৪৩৪ হিজরির ৪ জিলহজ রাজকীয় ফরমানের মাধ্যমে তিনি মসজিদে নববির অফিশিয়াল ইমাম হিসেবে নিযুক্ত হন।
তিনি ১৪২২ হিজরিতে ইমাম মুহাম্মদ বিন সাউদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়াহ অনুষদ থেকে স্নাতক (বিএ) ডিগ্রি লাভ করেন। স্নাতক শেষ করার পর ১৪২২ হিজরি থেকে ১৪২৯ হিজরি পর্যন্ত তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৪২৬ হিজরিতে তিনি ‘উচ্চতর বিচার বিভাগীয় ইনস্টিটিউট’ (মাজহাদুল আলি লিল কাজা)-এর ‘সিয়াসাহ শারইয়্যাহ’ বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর (এমএ) ডিগ্রি অর্জন করেন।
এরপর তিনি কিং সাউদ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আল-খারজ প্রদেশের ‘কলেজ অব সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ’-এ লেকচারার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৪৩৪ হিজরিতে মসজিদে নববির ইমাম হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পর তিনি মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় স্থানান্তরিত হন। অতঃপর ১৪৩৭ হিজরিতে ইমাম মুহাম্মদ বিন সাউদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর বিচার বিভাগীয় ইনস্টিটিউট থেকে ‘সিয়াসাহ শারইয়্যাহ’ বিভাগে ‘মুমতাজ’ (এক্সিলেন্ট) গ্রেডসহ ডক্টরেট (পিএইচডি) ডিগ্রি লাভ করেন।
শায়খ আল-বুআইজান ইমাম আসিমের কিরাত অনুযায়ী হাফস রেওয়ায়েতে (শাতোবিইয়াহ্ পদ্ধতিতে) কোরআন তিলাওয়াতের বিশেষ সনদ বা ‘ইজাজাহ্’ লাভ করেছেন। তিনি এই ইজাজাহ্ গ্রহণ করেছেন ইমাম মুহাম্মদ বিন সাউদ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিরাত শাস্ত্রের অধ্যাপক শায়খ প্রফেসর ড. ইবরাহিম বিন সাইদ আদ-দোসারির কাছ থেকে। এ ছাড়াও তিনি কিং ফাহাদ কোরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্সের বৈজ্ঞানিক কমিটির সদস্য মরহুম শায়খ আবদুল হাকিম বিন আবদুস সালাম খাতিরের কাছ থেকেও ইজাজাহ্প্রাপ্ত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববি মুসলিম বিশ্বের অন্যতম সম্মানিত ও পবিত্র স্থান। এই দুই মসজিদে নামাজ পড়ার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। হজরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মসজিদে হারামে এক (ওয়াক্ত) নামাজ এক লাখ নামাজের সমান, আমার মসজিদে (মসজিদে নববি) এক ওয়াক্ত নামাজ এক হাজার (ওয়াক্ত) নামাজের সমান এবং বাইতুল মুকাদ্দাসে এক (ওয়াক্ত) নামাজ ৫০০ নামাজের সমান।’ (মাজমাউজ জাওয়াইদ: ৪/১১)
অন্য হাদিসে ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমার এ মসজিদে এক ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা মসজিদে হারাম ছাড়া অন্যান্য মসজিদে এক হাজার (ওয়াক্ত) নামাজ আদায় করার চেয়েও উত্তম। (সহিহ্ বুখারি: ১১৯০, সহিহ্ মুসলিম: ১৩৯৪)

সৌদি আরবের মক্কায় অবস্থিত মসজিদুল হারামে শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) জুমার নামাজে ইমামতি করবেন প্রখ্যাত আলেম শায়খ ড. আবদুর রহমান বিন আবদুল আজিজ আস-সুদাইস। একই দিনে মদিনায় অবস্থিত মসজিদে নববিতে জুমার নামাজ পড়াবেন খ্যাতনামা কারি শায়খ ড. আবদুল্লাহ বিন আবদুর রহমান আল-বুআইজান। সংবাদমাধ্যম দ্য ইসলামিক ইনফরমেশন এ তথ্য জানিয়েছে।
কে এই শায়খ ড. আবদুর রহমান আস-সুদাইস
মসজিদুল হারামের এ সপ্তাহের জুমার ইমাম শায়খ আবদুর রহমান বিন আবদুল আজিজ আস-সুদাইস বিশ্ব মুসলিমের কাছে অন্যতম জনপ্রিয় ইসলামি ব্যক্তিত্ব ও কারি। তিনি শায়খ আস-সুদাইস নামে ব্যাপক পরিচিত। আবেগঘন ও হৃদয়স্পর্শী কোরআন তিলাওয়াতের জন্য বিশ্বজুড়ে তাঁর খ্যাতি রয়েছে। তাঁর তিলাওয়াত শ্রোতাদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
শায়খ আবদুর রহমান আস-সুদাইস ১৯৬০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি সৌদি আরবের আল-কাসিম প্রদেশের আনাজা গোত্রে জন্মগ্রহণ করেছেন। শৈশব থেকেই ইসলামি শিক্ষায় মনোযোগী ছিলেন। আল-মুছানা বিন হারিস প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাধ্যমে তাঁর পড়াশোনা শুরু হয়। সেখানেই মাত্র ১২ বছর বয়সে কোরআনের হিফজ সম্পন্ন করেন তিনি।
১৯৭৯ সালে রিয়াদের সায়েন্টিফিক ইনস্টিটিউশন থেকে স্নাতক শেষ করেন এবং রিয়াদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শরিয়াহ বিষয়ে ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর ইমাম মুহাম্মদ বিন সৌদ ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে ইসলামি মূলনীতিতে মাস্টার্স এবং উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামিক শরিয়ায় পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
শায়খ আবদুর রহমান আস-সুদাইস ১৯৮৪ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে মসজিদুল হারামের ইমাম হিসেবে নিয়োগ পান। ওই বছরের জুলাই মাসে মসজিদুল হারামে প্রথমবার খুতবা প্রদান করেন। এরপর থেকে অনেকবার তারাবির নামাজে ইমামতি করেছেন।
শায়খ আবদুর রহমান আস-সুদাইসকে ২০১২ সালে দুই পবিত্র মসজিদ (মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববি) বিষয়ক জেনারেল প্রেসিডেন্সির প্রেসিডেন্ট করা হয়। ২০১৬ সালে তাঁকে আবারও এই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাঁর নেতৃত্বে এই দুই পবিত্র স্থান ব্যবস্থাপনায় অসাধারণ উন্নতি হয়েছে।
শায়খ আবদুর রহমান আস-সুদাইস টানা চার দশকের বেশি সময় কাবার ইমামের দায়িত্ব পালন করছেন। ২০২৩ সালে তিনি কাবার ইমাম হিসেবে ৪০ বছর পূর্ণ করেছেন।
অন্যদিকে, মসজিদে নববির এ সপ্তাহের জুমার ইমাম শায়খ ড. আবদুল্লাহ বিন আবদুর রহমান আল-বুআইজান সুললিত কণ্ঠে কোরআন তিলাওয়াতের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিতি।
কে এই শায়খ ড. আবদুল্লাহ বিন আবদুর রহমান আল-বুআইজান
তাঁর পুরো নাম আবদুল্লাহ বিন আবদুর রহমান বিন সুলাইমান আল-বুআইজান আত-তামিমি। তিনি মসজিদে নববির সম্মানিত ইমাম ও খতিব এবং মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়াহ অনুষদের একজন শিক্ষক। ১৪৩৪ হিজরির ৪ জিলহজ রাজকীয় ফরমানের মাধ্যমে তিনি মসজিদে নববির অফিশিয়াল ইমাম হিসেবে নিযুক্ত হন।
তিনি ১৪২২ হিজরিতে ইমাম মুহাম্মদ বিন সাউদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়াহ অনুষদ থেকে স্নাতক (বিএ) ডিগ্রি লাভ করেন। স্নাতক শেষ করার পর ১৪২২ হিজরি থেকে ১৪২৯ হিজরি পর্যন্ত তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৪২৬ হিজরিতে তিনি ‘উচ্চতর বিচার বিভাগীয় ইনস্টিটিউট’ (মাজহাদুল আলি লিল কাজা)-এর ‘সিয়াসাহ শারইয়্যাহ’ বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর (এমএ) ডিগ্রি অর্জন করেন।
এরপর তিনি কিং সাউদ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আল-খারজ প্রদেশের ‘কলেজ অব সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ’-এ লেকচারার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৪৩৪ হিজরিতে মসজিদে নববির ইমাম হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পর তিনি মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় স্থানান্তরিত হন। অতঃপর ১৪৩৭ হিজরিতে ইমাম মুহাম্মদ বিন সাউদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর বিচার বিভাগীয় ইনস্টিটিউট থেকে ‘সিয়াসাহ শারইয়্যাহ’ বিভাগে ‘মুমতাজ’ (এক্সিলেন্ট) গ্রেডসহ ডক্টরেট (পিএইচডি) ডিগ্রি লাভ করেন।
শায়খ আল-বুআইজান ইমাম আসিমের কিরাত অনুযায়ী হাফস রেওয়ায়েতে (শাতোবিইয়াহ্ পদ্ধতিতে) কোরআন তিলাওয়াতের বিশেষ সনদ বা ‘ইজাজাহ্’ লাভ করেছেন। তিনি এই ইজাজাহ্ গ্রহণ করেছেন ইমাম মুহাম্মদ বিন সাউদ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিরাত শাস্ত্রের অধ্যাপক শায়খ প্রফেসর ড. ইবরাহিম বিন সাইদ আদ-দোসারির কাছ থেকে। এ ছাড়াও তিনি কিং ফাহাদ কোরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্সের বৈজ্ঞানিক কমিটির সদস্য মরহুম শায়খ আবদুল হাকিম বিন আবদুস সালাম খাতিরের কাছ থেকেও ইজাজাহ্প্রাপ্ত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববি মুসলিম বিশ্বের অন্যতম সম্মানিত ও পবিত্র স্থান। এই দুই মসজিদে নামাজ পড়ার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। হজরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মসজিদে হারামে এক (ওয়াক্ত) নামাজ এক লাখ নামাজের সমান, আমার মসজিদে (মসজিদে নববি) এক ওয়াক্ত নামাজ এক হাজার (ওয়াক্ত) নামাজের সমান এবং বাইতুল মুকাদ্দাসে এক (ওয়াক্ত) নামাজ ৫০০ নামাজের সমান।’ (মাজমাউজ জাওয়াইদ: ৪/১১)
অন্য হাদিসে ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমার এ মসজিদে এক ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা মসজিদে হারাম ছাড়া অন্যান্য মসজিদে এক হাজার (ওয়াক্ত) নামাজ আদায় করার চেয়েও উত্তম। (সহিহ্ বুখারি: ১১৯০, সহিহ্ মুসলিম: ১৩৯৪)

আল্লাহ পৃথিবীর সব মানুষকে সম্মানিত করেছেন। তিনিই আমাদের স্রষ্টা। অথচ আমরা সব সময় নারীদের বাধ্য করার পথ খুঁজি। আলেমদের মুখেও নারীর প্রতি অবমাননাকর ও বিদ্রূপাত্মক কথা শুনি; যা শুনে যে কেউ-ই রাগান্বিত হবেন। এমন মনোভাব ইসলাম সমর্থন না করলেও মুসলিম সমাজে দুঃখজনকভাবে প্রচলিত আছে।
০৮ মার্চ ২০২২
সময়ের আবর্তনে আমাদের দোরগোড়ায় আবারও হাজির হয়েছে মহিমান্বিত আরবি মাস—রজব। হিজরি পঞ্জিকাবর্ষের সপ্তম এই মাসটি মুমিনের জীবনে এক পরম পুণ্যের বার্তা নিয়ে আসে। পরকালীন পাথেয় ও সওয়াব হাসিলের তরে রজব মাস এক বিশাল সুযোগের মোহনা, যা বিশেষভাবে সিয়াম সাধনার মাস রমজানের অগ্রিম আগমনী বার্তা ঘোষণা করে।
৮ ঘণ্টা আগে
হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, প্রাপ্তি-বঞ্চনার দীর্ঘ পথ পেরিয়ে মানুষ যখন নতুন বছরে প্রবেশ করে, তখন অনুভূতির ভেতর এক অদ্ভুত দ্বন্দ্ব কাজ করে। একদিকে নতুন সূচনার আনন্দ, অন্যদিকে জীবন থেকে আরেকটি বছর অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার বেদনাবোধ। প্রতিটি অতিবাহিত বছর মানে নির্ধারিত হায়াতের একটি অংশ কমে যাওয়া।
৮ ঘণ্টা আগে
ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের আগমনী ইতিহাস সুদূর প্রাচীন ও বৈচিত্র্যময়। বিশেষত দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্য ইসলামের প্রাচীনতম স্থাপত্যের নিদর্শনের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। আরব সাগরের উপকূলবর্তী এই অঞ্চলে আরব বণিকদের নিয়মিত আগমনের সূত্রে ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটেছিল। সেই ঐতিহাসিক সময়ের স্মৃতিচিহ্ন...
৮ ঘণ্টা আগেমুফতি এনায়েতুল্লাহ ফাহাদ

সময়ের আবর্তনে আমাদের দোরগোড়ায় আবারও হাজির হয়েছে মহিমান্বিত আরবি মাস—রজব। হিজরি পঞ্জিকাবর্ষের সপ্তম এই মাসটি মুমিনের জীবনে এক পরম পুণ্যের বার্তা নিয়ে আসে। পরকালীন পাথেয় ও সওয়াব হাসিলের তরে রজব মাস এক বিশাল সুযোগের মোহনা, যা বিশেষভাবে সিয়াম সাধনার মাস রমজানের অগ্রিম আগমনী বার্তা ঘোষণা করে। আধ্যাত্মিক পরিভাষায় এই রজব যেন আমলের বসন্ত; যে বসন্তের স্নিগ্ধ হাওয়ায় মুমিন হৃদয় হয়ে ওঠে সবুজ ও সজীব। জান্নাতি খুশবুর ঘ্রাণে মাতোয়ারা মুমিনের মন দুলতে থাকে রবের একান্ত প্রেমে। রজব যেন দিগন্তের আকাশে ভেসে বেড়ানো রহমতের মেঘমালা, যা আল্লাহর তৃষ্ণার্ত বান্দার হৃদয়কে মহান প্রভুর করুণার সুশীতল ছায়ায় পরম মমতায় ঢেকে দেয়। এভাবে প্রতিটি মুমিন হৃদয়ে রজব মাস হয়ে ওঠে ইবাদত ও আনুগত্যের এক অনন্য ঋতু।
রজব মাসের মাহাত্ম্য
রজব মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনস্বীকার্য। এর প্রধান কারণ হলো, এই মাসকে মহান আল্লাহ এবং তাঁর প্রিয় রাসুল (সা.) বিশেষভাবে সম্মানিত বলে ঘোষণা করেছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ‘আশহুরুল হুরুম’ বা সম্মানিত যে চারটি মাসের কথা উল্লেখ করেছেন, রজব তার মধ্যে অন্যতম। ইরশাদ হয়েছে—‘নিশ্চয় আসমান ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই মহান আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাসের সংখ্যা বারোটি। এর মধ্যে চার মাস সম্মানিত। এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অন্যায় করে নিজেদের ক্ষতিগ্রস্ত কোরো না।’ (সুরা তাওবা: ৩৬)
হাদিস শরিফেও এই সম্মানিত মাসগুলোর বিবরণ চমৎকারভাবে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন—‘বছর হচ্ছে বারো মাস। এর মধ্যে চার মাস হারাম বা নিষিদ্ধ। তিনটি ধারাবাহিক: জিলকদ, জিলহজ ও মহররম; আর অন্যটি হলো (মুদার গোত্রের) রজব মাস, যা জুমাদাল উখরা ও শাবান মাসের মধ্যবর্তী সময়ে অবস্থিত।’ (সহিহ বুখারি: ৪৬৬২, সহিহ মুসলিম: ১৬৭৯)
রজব: রমজানের প্রস্তুতির সুবর্ণ সময়
রজব মাস থেকেই মূলত আমাদের কাঙ্ক্ষিত রমজানের প্রস্তুতি শুরু হওয়া উচিত। কেননা রজবের পরেই আসবে শাবান, আর এই দুই মাসের প্রহরগুলো গড়ালেই শুরু হবে সিয়াম সাধনার পবিত্র মাস—রমজান। রমজানের সেই সুকঠিন ও মহান সাধনার গুরুত্ব বিবেচনা করে দুই মাস আগে রজব থেকেই এর মানসিক ও আধ্যাত্মিক প্রস্তুতি গ্রহণের কথা হাদিসে গুরুত্বের সঙ্গে বলা হয়েছে। তাই তো রজব মাসের চাঁদ উদিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রাসুলুল্লাহ (সা.) এই দোয়াটি পাঠ করতেন—‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাজাবা ওয়া শাবানা ওয়া বাল্লিগনা রামাদান।’ অর্থাৎ: ‘হে আল্লাহ, রজব ও শাবান মাসে আমাদের জন্য বরকত দান করুন এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত জীবিত রাখুন (রমজানে পৌঁছিয়ে দিন)।’ (মুসনাদে আহমদ: ২৩৪৬)
রমজানের পূর্ণ বরকত পেতে হলে প্রয়োজন শারীরিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক সুপরিকল্পিত প্রস্তুতি। রমজানে যেহেতু ইবাদত, আহার ও নিদ্রার সময়সূচিতে আমূল পরিবর্তন আসে, তাই আমাদের উচিত এ রজব মাস থেকেই নফল রোজা রাখার মাধ্যমে নিজেকে অভ্যস্ত করে তোলা। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, নবীজি (সা.) রমজান ছাড়া সবচেয়ে বেশি নফল রোজা রাখতেন শাবান মাসে, আর এর প্রস্তুতি শুরু হতো রজব থেকে। উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, ‘রজব মাস এলে আমরা নবীজি (সা.)-এর বিশেষ আমল ও ইবাদত দেখে তা অনুভব করতে পারতাম।’ (সহিহ মুসলিম: ১৪৪৩)
তিলাওয়াত ও আধ্যাত্মিক অনুশীলন
কেবল রোজা নয়, বরং পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত ও এর চর্চায় মনোযোগী হওয়া রজব মাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। কোরআন তিলাওয়াত শেখা, অশুদ্ধি সংশোধন করা, নামাজের প্রয়োজনীয় সুরা-কিরাত এবং দোয়া-দরুদগুলো ভালোভাবে আয়ত্ত করা এ সময়ে অত্যন্ত জরুরি। এতে করে রমজানের পবিত্র দিনগুলোতে আমল করা অনেক সহজ ও সাবলীল হয়ে ওঠে। বিখ্যাত তাফসিরগ্রন্থগুলোতে এসেছে যে এই সম্মানিত মাসগুলোর বিশেষত্ব হলো—এতে অধিক ইবাদত ও নেক আমলের অনুশীলন করলে বছরের বাকি মাসগুলোতেও ইবাদতের প্রতি একনিষ্ঠতা বজায় রাখা সহজ হয়ে যায়। (আহকামুল কোরআন: খণ্ড ২, পৃ. ১১১)
সতর্কতা ও বিশেষ আমল
আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন যে আইয়ামে বিজ (চাঁদের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ) এবং প্রতি সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবারের নফল রোজা ব্যতীত রজব মাসে আলাদাভাবে বিশেষ কোনো তারিখ বা দিনে সুনির্দিষ্ট রোজার আমল নেই। তবে রমজানের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে আমরা যেকোনো নিষিদ্ধ সময় ব্যতীত নফল রোজা রাখতে পারি। যেহেতু রজব ‘আশহুরুল হুরুম’ বা সম্মানিত মাসের অন্তর্ভুক্ত, তাই এ সময়ে সম্পাদিত নেক আমলের বিপরীতে মহান আল্লাহর কাছে অধিক সওয়াবের আশা করা যায়। মুস্তাহাব আমল হিসেবে এই হারাম মাসগুলোতে রোজা রাখার সপক্ষে নবীজি (সা.)-এর একটি হাদিস পাওয়া যায়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘সম্মানিত মাসগুলোতে রোজা রাখো এবং রোজা ভঙ্গও কোরো (অর্থাৎ বিরতি দিয়ে দিয়ে নফল রোজা রাখো)।’ (সুনানে আবু দাউদ: ২৪২৪)
হাদিসের বর্ণনায় রজবের আরও একটি শ্রেষ্ঠ আমলের কথা এসেছে—তা হলো দোয়া। রাসুল (সা.)-এর ভাষ্য অনুযায়ী ‘দোয়া হলো ইবাদতের মগজ’। তাই আমলের এই বসন্তলগ্নে আমাদের উচিত অধিক পরিমাণে কায়মনোবাক্যে প্রভুর দরবারে রোনাজারি করা।
লেখক: খতিব, সোনার বাংলা জামে মসজিদ, কুষ্টিয়া

সময়ের আবর্তনে আমাদের দোরগোড়ায় আবারও হাজির হয়েছে মহিমান্বিত আরবি মাস—রজব। হিজরি পঞ্জিকাবর্ষের সপ্তম এই মাসটি মুমিনের জীবনে এক পরম পুণ্যের বার্তা নিয়ে আসে। পরকালীন পাথেয় ও সওয়াব হাসিলের তরে রজব মাস এক বিশাল সুযোগের মোহনা, যা বিশেষভাবে সিয়াম সাধনার মাস রমজানের অগ্রিম আগমনী বার্তা ঘোষণা করে। আধ্যাত্মিক পরিভাষায় এই রজব যেন আমলের বসন্ত; যে বসন্তের স্নিগ্ধ হাওয়ায় মুমিন হৃদয় হয়ে ওঠে সবুজ ও সজীব। জান্নাতি খুশবুর ঘ্রাণে মাতোয়ারা মুমিনের মন দুলতে থাকে রবের একান্ত প্রেমে। রজব যেন দিগন্তের আকাশে ভেসে বেড়ানো রহমতের মেঘমালা, যা আল্লাহর তৃষ্ণার্ত বান্দার হৃদয়কে মহান প্রভুর করুণার সুশীতল ছায়ায় পরম মমতায় ঢেকে দেয়। এভাবে প্রতিটি মুমিন হৃদয়ে রজব মাস হয়ে ওঠে ইবাদত ও আনুগত্যের এক অনন্য ঋতু।
রজব মাসের মাহাত্ম্য
রজব মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনস্বীকার্য। এর প্রধান কারণ হলো, এই মাসকে মহান আল্লাহ এবং তাঁর প্রিয় রাসুল (সা.) বিশেষভাবে সম্মানিত বলে ঘোষণা করেছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ‘আশহুরুল হুরুম’ বা সম্মানিত যে চারটি মাসের কথা উল্লেখ করেছেন, রজব তার মধ্যে অন্যতম। ইরশাদ হয়েছে—‘নিশ্চয় আসমান ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই মহান আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাসের সংখ্যা বারোটি। এর মধ্যে চার মাস সম্মানিত। এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অন্যায় করে নিজেদের ক্ষতিগ্রস্ত কোরো না।’ (সুরা তাওবা: ৩৬)
হাদিস শরিফেও এই সম্মানিত মাসগুলোর বিবরণ চমৎকারভাবে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন—‘বছর হচ্ছে বারো মাস। এর মধ্যে চার মাস হারাম বা নিষিদ্ধ। তিনটি ধারাবাহিক: জিলকদ, জিলহজ ও মহররম; আর অন্যটি হলো (মুদার গোত্রের) রজব মাস, যা জুমাদাল উখরা ও শাবান মাসের মধ্যবর্তী সময়ে অবস্থিত।’ (সহিহ বুখারি: ৪৬৬২, সহিহ মুসলিম: ১৬৭৯)
রজব: রমজানের প্রস্তুতির সুবর্ণ সময়
রজব মাস থেকেই মূলত আমাদের কাঙ্ক্ষিত রমজানের প্রস্তুতি শুরু হওয়া উচিত। কেননা রজবের পরেই আসবে শাবান, আর এই দুই মাসের প্রহরগুলো গড়ালেই শুরু হবে সিয়াম সাধনার পবিত্র মাস—রমজান। রমজানের সেই সুকঠিন ও মহান সাধনার গুরুত্ব বিবেচনা করে দুই মাস আগে রজব থেকেই এর মানসিক ও আধ্যাত্মিক প্রস্তুতি গ্রহণের কথা হাদিসে গুরুত্বের সঙ্গে বলা হয়েছে। তাই তো রজব মাসের চাঁদ উদিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রাসুলুল্লাহ (সা.) এই দোয়াটি পাঠ করতেন—‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাজাবা ওয়া শাবানা ওয়া বাল্লিগনা রামাদান।’ অর্থাৎ: ‘হে আল্লাহ, রজব ও শাবান মাসে আমাদের জন্য বরকত দান করুন এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত জীবিত রাখুন (রমজানে পৌঁছিয়ে দিন)।’ (মুসনাদে আহমদ: ২৩৪৬)
রমজানের পূর্ণ বরকত পেতে হলে প্রয়োজন শারীরিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক সুপরিকল্পিত প্রস্তুতি। রমজানে যেহেতু ইবাদত, আহার ও নিদ্রার সময়সূচিতে আমূল পরিবর্তন আসে, তাই আমাদের উচিত এ রজব মাস থেকেই নফল রোজা রাখার মাধ্যমে নিজেকে অভ্যস্ত করে তোলা। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, নবীজি (সা.) রমজান ছাড়া সবচেয়ে বেশি নফল রোজা রাখতেন শাবান মাসে, আর এর প্রস্তুতি শুরু হতো রজব থেকে। উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, ‘রজব মাস এলে আমরা নবীজি (সা.)-এর বিশেষ আমল ও ইবাদত দেখে তা অনুভব করতে পারতাম।’ (সহিহ মুসলিম: ১৪৪৩)
তিলাওয়াত ও আধ্যাত্মিক অনুশীলন
কেবল রোজা নয়, বরং পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত ও এর চর্চায় মনোযোগী হওয়া রজব মাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। কোরআন তিলাওয়াত শেখা, অশুদ্ধি সংশোধন করা, নামাজের প্রয়োজনীয় সুরা-কিরাত এবং দোয়া-দরুদগুলো ভালোভাবে আয়ত্ত করা এ সময়ে অত্যন্ত জরুরি। এতে করে রমজানের পবিত্র দিনগুলোতে আমল করা অনেক সহজ ও সাবলীল হয়ে ওঠে। বিখ্যাত তাফসিরগ্রন্থগুলোতে এসেছে যে এই সম্মানিত মাসগুলোর বিশেষত্ব হলো—এতে অধিক ইবাদত ও নেক আমলের অনুশীলন করলে বছরের বাকি মাসগুলোতেও ইবাদতের প্রতি একনিষ্ঠতা বজায় রাখা সহজ হয়ে যায়। (আহকামুল কোরআন: খণ্ড ২, পৃ. ১১১)
সতর্কতা ও বিশেষ আমল
আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন যে আইয়ামে বিজ (চাঁদের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ) এবং প্রতি সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবারের নফল রোজা ব্যতীত রজব মাসে আলাদাভাবে বিশেষ কোনো তারিখ বা দিনে সুনির্দিষ্ট রোজার আমল নেই। তবে রমজানের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে আমরা যেকোনো নিষিদ্ধ সময় ব্যতীত নফল রোজা রাখতে পারি। যেহেতু রজব ‘আশহুরুল হুরুম’ বা সম্মানিত মাসের অন্তর্ভুক্ত, তাই এ সময়ে সম্পাদিত নেক আমলের বিপরীতে মহান আল্লাহর কাছে অধিক সওয়াবের আশা করা যায়। মুস্তাহাব আমল হিসেবে এই হারাম মাসগুলোতে রোজা রাখার সপক্ষে নবীজি (সা.)-এর একটি হাদিস পাওয়া যায়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘সম্মানিত মাসগুলোতে রোজা রাখো এবং রোজা ভঙ্গও কোরো (অর্থাৎ বিরতি দিয়ে দিয়ে নফল রোজা রাখো)।’ (সুনানে আবু দাউদ: ২৪২৪)
হাদিসের বর্ণনায় রজবের আরও একটি শ্রেষ্ঠ আমলের কথা এসেছে—তা হলো দোয়া। রাসুল (সা.)-এর ভাষ্য অনুযায়ী ‘দোয়া হলো ইবাদতের মগজ’। তাই আমলের এই বসন্তলগ্নে আমাদের উচিত অধিক পরিমাণে কায়মনোবাক্যে প্রভুর দরবারে রোনাজারি করা।
লেখক: খতিব, সোনার বাংলা জামে মসজিদ, কুষ্টিয়া

আল্লাহ পৃথিবীর সব মানুষকে সম্মানিত করেছেন। তিনিই আমাদের স্রষ্টা। অথচ আমরা সব সময় নারীদের বাধ্য করার পথ খুঁজি। আলেমদের মুখেও নারীর প্রতি অবমাননাকর ও বিদ্রূপাত্মক কথা শুনি; যা শুনে যে কেউ-ই রাগান্বিত হবেন। এমন মনোভাব ইসলাম সমর্থন না করলেও মুসলিম সমাজে দুঃখজনকভাবে প্রচলিত আছে।
০৮ মার্চ ২০২২
সৌদি আরবের মক্কায় অবস্থিত মসজিদুল হারামে শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) জুমার নামাজে ইমামতি করবেন প্রখ্যাত আলেম শায়খ ড. আবদুর রহমান বিন আবদুল আজিজ আস-সুদাইস। একই দিনে মদিনায় অবস্থিত মসজিদে নববিতে জুমার নামাজ পড়াবেন খ্যাতনামা কারি শায়খ ড. আবদুল্লাহ বিন আবদুর রহমান আল-বুআইজান।
৪ ঘণ্টা আগে
হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, প্রাপ্তি-বঞ্চনার দীর্ঘ পথ পেরিয়ে মানুষ যখন নতুন বছরে প্রবেশ করে, তখন অনুভূতির ভেতর এক অদ্ভুত দ্বন্দ্ব কাজ করে। একদিকে নতুন সূচনার আনন্দ, অন্যদিকে জীবন থেকে আরেকটি বছর অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার বেদনাবোধ। প্রতিটি অতিবাহিত বছর মানে নির্ধারিত হায়াতের একটি অংশ কমে যাওয়া।
৮ ঘণ্টা আগে
ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের আগমনী ইতিহাস সুদূর প্রাচীন ও বৈচিত্র্যময়। বিশেষত দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্য ইসলামের প্রাচীনতম স্থাপত্যের নিদর্শনের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। আরব সাগরের উপকূলবর্তী এই অঞ্চলে আরব বণিকদের নিয়মিত আগমনের সূত্রে ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটেছিল। সেই ঐতিহাসিক সময়ের স্মৃতিচিহ্ন...
৮ ঘণ্টা আগেফয়জুল্লাহ রিয়াদ

হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, প্রাপ্তি-বঞ্চনার দীর্ঘ পথ পেরিয়ে মানুষ যখন নতুন বছরে প্রবেশ করে, তখন অনুভূতির ভেতর এক অদ্ভুত দ্বন্দ্ব কাজ করে। একদিকে নতুন সূচনার আনন্দ, অন্যদিকে জীবন থেকে আরেকটি বছর অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার বেদনাবোধ। প্রতিটি অতিবাহিত বছর মানে নির্ধারিত হায়াতের একটি অংশ কমে যাওয়া। নতুন বছর আগমনের এ সন্ধিক্ষণ মুমিনের জন্য ত্মসমালোচনা ও ভবিষ্যৎ-পরিকল্পনার সময়।
ইসলামের দৃষ্টিতে একজন ইমানদারের জন্য নতুন বছরের করণীয় মৌলিকভাবে দুটি—এক. অতীত জীবনের হিসাব নেওয়া। দুই. আগামীর পথচলা সুপরিকল্পিত করা।
মানুষের জীবন আল্লাহ তাআলার দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ আমানত। এই আমানতের প্রতিটি মুহূর্ত কীভাবে ব্যয় করা হলো, আখিরাতে তার পূর্ণাঙ্গ জবাবদিহি করতে হবে। আল্লাহ তাআলার কোনো আদেশ অমান্য করা কিংবা সময়কে অলসতায় নষ্ট করা এই আমানতের খেয়ানতের শামিল। খেয়ানতের পরিণতি যে ভয়াবহ, তা কোরআন-হাদিসে বারবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর না দেওয়া পর্যন্ত কোনো মানুষ আল্লাহর দরবার থেকে এক পা-ও নড়তে পারবে না। এক. তার জীবন সম্পর্কে, সে কীভাবে তা অতিবাহিত করেছে। দুই. তার যৌবনকাল সম্পর্কে, সে কোন কাজে তা ব্যয় করেছে। তিন. তার সম্পদ সম্পর্কে, কীভাবে সে তা উপার্জন করেছে। চার. এবং উপার্জিত সম্পদ কোথায় ব্যয় করেছে। পাঁচ. সে যে জ্ঞান অর্জন করেছিল, সে অনুযায়ী কতটুকু আমল করেছে।’ (জামে তিরমিজি: ২৪১৬)। যেহেতু হিসাব অবশ্যম্ভাবী, তাই পরকালের কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর আগে নিজের হিসাব নিজে করে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
নতুন বছরের শুরুতে মুমিনের প্রথম কাজ হওয়া উচিত গত বছরের জীবনচিত্র পর্যালোচনা করা। যদি দেখা যায়, সময়ের একটি বড় অংশ আল্লাহর আনুগত্যে ব্যয় হয়েছে, তাহলে তার জন্য কৃতজ্ঞতা আদায় করা জরুরি। কারণ কৃতজ্ঞতা নিয়ামত বৃদ্ধির অন্যতম চাবিকাঠি। আর যদি গুনাহ, অবহেলা ও ত্রুটির হিসাব চোখে পড়ে, তবে বিলম্ব না করে ক্ষমা প্রার্থনা ও খাঁটি তওবা করে নেকির পথে ফিরে আসাই ইমানদারের কাজ।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, তোমরা আন্তরিকভাবে আল্লাহর কাছে তওবা করো। আশা করা যায়, তোমাদের রব তোমাদের পাপ মোচন করে দেবেন এবং তোমাদের প্রবেশ করাবেন এমন জান্নাতে, যার তলদেশে নহর প্রবাহিত।’ (সুরা তাহরিম: ৮)
তওবার পাশাপাশি নেক আমলে আত্মনিয়োগ করাও জরুরি। কেননা সৎকর্ম পাপের কালিমা মুছে দেয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই পুণ্যরাজি পাপরাশিকে মিটিয়ে দেয়। যারা উপদেশ মানে, এটা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ।’ (সুরা হুদ: ১১৪)
নতুন বছরে মুমিনের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো আগামীর জন্য সুদৃঢ় সুচিন্তিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা। যাতে অবশিষ্ট জীবন আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে ব্যয় হয়। অহেতুক ব্যস্ততা, অর্থহীন বিনোদন কিংবা অলসতায় যেন একটি মুহূর্তও নষ্ট না হয়।
এই পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য হবে নিজের নফসকে সংযত রাখা এবং মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া। এ প্রসঙ্গে শাদ্দাদ ইবনে আউস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘বুদ্ধিমান হলো সে, যে নিজের কুপ্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের জন্য আমল করে। আর অক্ষম হলো সে, যে নিজের কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করে চলে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমার আশা পোষণ করে।’ (জামে তিরমিজি: ২৪৫৯)
লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুস সুন্নাহ রাজাবাড়ী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।

হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, প্রাপ্তি-বঞ্চনার দীর্ঘ পথ পেরিয়ে মানুষ যখন নতুন বছরে প্রবেশ করে, তখন অনুভূতির ভেতর এক অদ্ভুত দ্বন্দ্ব কাজ করে। একদিকে নতুন সূচনার আনন্দ, অন্যদিকে জীবন থেকে আরেকটি বছর অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার বেদনাবোধ। প্রতিটি অতিবাহিত বছর মানে নির্ধারিত হায়াতের একটি অংশ কমে যাওয়া। নতুন বছর আগমনের এ সন্ধিক্ষণ মুমিনের জন্য ত্মসমালোচনা ও ভবিষ্যৎ-পরিকল্পনার সময়।
ইসলামের দৃষ্টিতে একজন ইমানদারের জন্য নতুন বছরের করণীয় মৌলিকভাবে দুটি—এক. অতীত জীবনের হিসাব নেওয়া। দুই. আগামীর পথচলা সুপরিকল্পিত করা।
মানুষের জীবন আল্লাহ তাআলার দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ আমানত। এই আমানতের প্রতিটি মুহূর্ত কীভাবে ব্যয় করা হলো, আখিরাতে তার পূর্ণাঙ্গ জবাবদিহি করতে হবে। আল্লাহ তাআলার কোনো আদেশ অমান্য করা কিংবা সময়কে অলসতায় নষ্ট করা এই আমানতের খেয়ানতের শামিল। খেয়ানতের পরিণতি যে ভয়াবহ, তা কোরআন-হাদিসে বারবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর না দেওয়া পর্যন্ত কোনো মানুষ আল্লাহর দরবার থেকে এক পা-ও নড়তে পারবে না। এক. তার জীবন সম্পর্কে, সে কীভাবে তা অতিবাহিত করেছে। দুই. তার যৌবনকাল সম্পর্কে, সে কোন কাজে তা ব্যয় করেছে। তিন. তার সম্পদ সম্পর্কে, কীভাবে সে তা উপার্জন করেছে। চার. এবং উপার্জিত সম্পদ কোথায় ব্যয় করেছে। পাঁচ. সে যে জ্ঞান অর্জন করেছিল, সে অনুযায়ী কতটুকু আমল করেছে।’ (জামে তিরমিজি: ২৪১৬)। যেহেতু হিসাব অবশ্যম্ভাবী, তাই পরকালের কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর আগে নিজের হিসাব নিজে করে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
নতুন বছরের শুরুতে মুমিনের প্রথম কাজ হওয়া উচিত গত বছরের জীবনচিত্র পর্যালোচনা করা। যদি দেখা যায়, সময়ের একটি বড় অংশ আল্লাহর আনুগত্যে ব্যয় হয়েছে, তাহলে তার জন্য কৃতজ্ঞতা আদায় করা জরুরি। কারণ কৃতজ্ঞতা নিয়ামত বৃদ্ধির অন্যতম চাবিকাঠি। আর যদি গুনাহ, অবহেলা ও ত্রুটির হিসাব চোখে পড়ে, তবে বিলম্ব না করে ক্ষমা প্রার্থনা ও খাঁটি তওবা করে নেকির পথে ফিরে আসাই ইমানদারের কাজ।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, তোমরা আন্তরিকভাবে আল্লাহর কাছে তওবা করো। আশা করা যায়, তোমাদের রব তোমাদের পাপ মোচন করে দেবেন এবং তোমাদের প্রবেশ করাবেন এমন জান্নাতে, যার তলদেশে নহর প্রবাহিত।’ (সুরা তাহরিম: ৮)
তওবার পাশাপাশি নেক আমলে আত্মনিয়োগ করাও জরুরি। কেননা সৎকর্ম পাপের কালিমা মুছে দেয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই পুণ্যরাজি পাপরাশিকে মিটিয়ে দেয়। যারা উপদেশ মানে, এটা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ।’ (সুরা হুদ: ১১৪)
নতুন বছরে মুমিনের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো আগামীর জন্য সুদৃঢ় সুচিন্তিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা। যাতে অবশিষ্ট জীবন আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে ব্যয় হয়। অহেতুক ব্যস্ততা, অর্থহীন বিনোদন কিংবা অলসতায় যেন একটি মুহূর্তও নষ্ট না হয়।
এই পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য হবে নিজের নফসকে সংযত রাখা এবং মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া। এ প্রসঙ্গে শাদ্দাদ ইবনে আউস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘বুদ্ধিমান হলো সে, যে নিজের কুপ্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের জন্য আমল করে। আর অক্ষম হলো সে, যে নিজের কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করে চলে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমার আশা পোষণ করে।’ (জামে তিরমিজি: ২৪৫৯)
লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুস সুন্নাহ রাজাবাড়ী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।

আল্লাহ পৃথিবীর সব মানুষকে সম্মানিত করেছেন। তিনিই আমাদের স্রষ্টা। অথচ আমরা সব সময় নারীদের বাধ্য করার পথ খুঁজি। আলেমদের মুখেও নারীর প্রতি অবমাননাকর ও বিদ্রূপাত্মক কথা শুনি; যা শুনে যে কেউ-ই রাগান্বিত হবেন। এমন মনোভাব ইসলাম সমর্থন না করলেও মুসলিম সমাজে দুঃখজনকভাবে প্রচলিত আছে।
০৮ মার্চ ২০২২
সৌদি আরবের মক্কায় অবস্থিত মসজিদুল হারামে শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) জুমার নামাজে ইমামতি করবেন প্রখ্যাত আলেম শায়খ ড. আবদুর রহমান বিন আবদুল আজিজ আস-সুদাইস। একই দিনে মদিনায় অবস্থিত মসজিদে নববিতে জুমার নামাজ পড়াবেন খ্যাতনামা কারি শায়খ ড. আবদুল্লাহ বিন আবদুর রহমান আল-বুআইজান।
৪ ঘণ্টা আগে
সময়ের আবর্তনে আমাদের দোরগোড়ায় আবারও হাজির হয়েছে মহিমান্বিত আরবি মাস—রজব। হিজরি পঞ্জিকাবর্ষের সপ্তম এই মাসটি মুমিনের জীবনে এক পরম পুণ্যের বার্তা নিয়ে আসে। পরকালীন পাথেয় ও সওয়াব হাসিলের তরে রজব মাস এক বিশাল সুযোগের মোহনা, যা বিশেষভাবে সিয়াম সাধনার মাস রমজানের অগ্রিম আগমনী বার্তা ঘোষণা করে।
৮ ঘণ্টা আগে
ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের আগমনী ইতিহাস সুদূর প্রাচীন ও বৈচিত্র্যময়। বিশেষত দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্য ইসলামের প্রাচীনতম স্থাপত্যের নিদর্শনের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। আরব সাগরের উপকূলবর্তী এই অঞ্চলে আরব বণিকদের নিয়মিত আগমনের সূত্রে ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটেছিল। সেই ঐতিহাসিক সময়ের স্মৃতিচিহ্ন...
৮ ঘণ্টা আগেমোখতারুল ইসলাম মিলন

ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের আগমনী ইতিহাস সুদূর প্রাচীন ও বৈচিত্র্যময়। বিশেষত দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্য ইসলামের প্রাচীনতম স্থাপত্যের নিদর্শনের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। আরব সাগরের উপকূলবর্তী এই অঞ্চলে আরব বণিকদের নিয়মিত আগমনের সূত্রে ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটেছিল। সেই ঐতিহাসিক সময়ের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে আজও টিকে আছে কেরালার কয়েকটি প্রাচীন মসজিদ। এই প্রবন্ধে কেরালার তিনটি উল্লেখযোগ্য প্রাচীন মসজিদ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
চেরামান জুমা মসজিদ
কেরালার থ্রিসুর জেলার কোডুঙ্গাল্লুর এলাকায় অবস্থিত চেরামান জুমা মসজিদকে ভারতের প্রাচীনতম মসজিদ হিসেবে গণ্য করা হয়। ঐতিহাসিক বর্ণনা অনুযায়ী, এই মসজিদ ৬২৯ খ্রিষ্টাব্দে অর্থাৎ নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবদ্দশায়ই নির্মিত হয়েছিল। স্থানীয় জনশ্রুতি অনুসারে, চেরা রাজবংশের রাজা চেরামান পেরুমাল চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়ার স্বপ্ন দেখে আরবে যান এবং সেখানে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন। মক্কা থেকে ফেরার পথে তিনি কয়েকজন সাহাবিকে সঙ্গে নিয়ে এসে কেরালায় এই মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। যদিও এই বর্ণনার ঐতিহাসিক সত্যতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, তবু এই মসজিদের প্রাচীনত্ব অনস্বীকার্য।
চেরামান জুমা মসজিদের স্থাপত্যশৈলী অনন্য। এটি কেরালার ঐতিহ্যবাহী হিন্দু মন্দিরের স্থাপত্যরীতির সঙ্গে ইসলামিক উপাদানের এক সমন্বয়। মসজিদের ভেতরে একটি তেল প্রদীপ রয়েছে। কথিত আছে, নবী (সা.)-এর যুগ থেকে এটি অবিরাম জ্বলছে। কাঠের স্তম্ভ, ঢালু ছাদ এবং উঠান—এগুলো স্থানীয় স্থাপত্যরীতির প্রতিফলন। এই মসজিদটি কেবল একটি ধর্মীয় স্থাপনা নয়, বরং ভারতে ইসলামের প্রাচীন উপস্থিতির এক জীবন্ত প্রমাণ।

মসজিদে বিলাল
কেরালার মালাপ্পুরম জেলায় অবস্থিত মসজিদে বিলাল আরেকটি উল্লেখযোগ্য প্রাচীন মসজিদ।
এই মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছে ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন হজরত বিলাল (রা.)-এর নাম অনুসারে। স্থানীয়ভাবে জনশ্রুতি আছে, হজরত বিলাল (রা.)-এর কোনো অনুসারী এই অঞ্চলে এসে ইসলামের প্রচার করেছিলেন। যদিও এই বর্ণনার সত্যতা নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত নয়, তবু মসজিদটির প্রাচীনত্ব এবং ধর্মীয় গুরুত্ব অপরিসীম।
মসজিদে বিলালের স্থাপত্যশৈলী কেরালার অন্যান্য প্রাচীন মসজিদের মতোই। কাঠের তৈরি স্তম্ভ, ঐতিহ্যবাহী কেরালীয় ছাদ এবং সরল অলংকরণ এই মসজিদের বৈশিষ্ট্য। মসজিদের প্রাঙ্গণে একটি প্রাচীন কূপ রয়েছে, যার পানিকে স্থানীয়রা পবিত্র বলে বিশ্বাস করে। মসজিদটি স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ও সামাজিক কেন্দ্র হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

পালায়াম মসজিদ
কেরালার কোল্লাম জেলায় অবস্থিত পালায়াম মসজিদ আরেকটি প্রাচীন ইসলামি স্থাপনা।
ধারণা করা হয়, এই মসজিদটি নবম শতাব্দীতে আরব বণিকদের দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। সেই সময় মসলা বাণিজ্যের কারণে আরব বণিকেরা এই অঞ্চলে নিয়মিত আসা-যাওয়া করতেন এবং অনেকেই কেরালায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে তাঁদের বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে কেরালার মুসলিম সমাজ বা ‘মাপ্পিলা’ সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে।
পালায়াম মসজিদের স্থাপত্যেও কেরালার ঐতিহ্যবাহী নির্মাণশৈলীর ছাপ স্পষ্ট। মসজিদটি কাঠ ও ইট দিয়ে নির্মিত এবং এর ছাদ টালি দিয়ে আচ্ছাদিত। অভ্যন্তরে প্রাচীন আরবি ক্যালিগ্রাফি ও কারুকাজ দেখা যায়। মসজিদের পাশে একটি প্রাচীন কবরস্থান রয়েছে, যেখানে আরব বণিক ও প্রথম যুগের মুসলমানদের সমাধি রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। বর্তমানে মসজিদটি সংস্কার করা হলেও এর মূল কাঠামো এবং ঐতিহাসিক চরিত্র অক্ষুণ্ন রাখা হয়েছে।
লেখক: শিক্ষার্থী, শরীফবাগ ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা

ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের আগমনী ইতিহাস সুদূর প্রাচীন ও বৈচিত্র্যময়। বিশেষত দক্ষিণ ভারতের কেরালা রাজ্য ইসলামের প্রাচীনতম স্থাপত্যের নিদর্শনের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। আরব সাগরের উপকূলবর্তী এই অঞ্চলে আরব বণিকদের নিয়মিত আগমনের সূত্রে ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটেছিল। সেই ঐতিহাসিক সময়ের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে আজও টিকে আছে কেরালার কয়েকটি প্রাচীন মসজিদ। এই প্রবন্ধে কেরালার তিনটি উল্লেখযোগ্য প্রাচীন মসজিদ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
চেরামান জুমা মসজিদ
কেরালার থ্রিসুর জেলার কোডুঙ্গাল্লুর এলাকায় অবস্থিত চেরামান জুমা মসজিদকে ভারতের প্রাচীনতম মসজিদ হিসেবে গণ্য করা হয়। ঐতিহাসিক বর্ণনা অনুযায়ী, এই মসজিদ ৬২৯ খ্রিষ্টাব্দে অর্থাৎ নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবদ্দশায়ই নির্মিত হয়েছিল। স্থানীয় জনশ্রুতি অনুসারে, চেরা রাজবংশের রাজা চেরামান পেরুমাল চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়ার স্বপ্ন দেখে আরবে যান এবং সেখানে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন। মক্কা থেকে ফেরার পথে তিনি কয়েকজন সাহাবিকে সঙ্গে নিয়ে এসে কেরালায় এই মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। যদিও এই বর্ণনার ঐতিহাসিক সত্যতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, তবু এই মসজিদের প্রাচীনত্ব অনস্বীকার্য।
চেরামান জুমা মসজিদের স্থাপত্যশৈলী অনন্য। এটি কেরালার ঐতিহ্যবাহী হিন্দু মন্দিরের স্থাপত্যরীতির সঙ্গে ইসলামিক উপাদানের এক সমন্বয়। মসজিদের ভেতরে একটি তেল প্রদীপ রয়েছে। কথিত আছে, নবী (সা.)-এর যুগ থেকে এটি অবিরাম জ্বলছে। কাঠের স্তম্ভ, ঢালু ছাদ এবং উঠান—এগুলো স্থানীয় স্থাপত্যরীতির প্রতিফলন। এই মসজিদটি কেবল একটি ধর্মীয় স্থাপনা নয়, বরং ভারতে ইসলামের প্রাচীন উপস্থিতির এক জীবন্ত প্রমাণ।

মসজিদে বিলাল
কেরালার মালাপ্পুরম জেলায় অবস্থিত মসজিদে বিলাল আরেকটি উল্লেখযোগ্য প্রাচীন মসজিদ।
এই মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছে ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন হজরত বিলাল (রা.)-এর নাম অনুসারে। স্থানীয়ভাবে জনশ্রুতি আছে, হজরত বিলাল (রা.)-এর কোনো অনুসারী এই অঞ্চলে এসে ইসলামের প্রচার করেছিলেন। যদিও এই বর্ণনার সত্যতা নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত নয়, তবু মসজিদটির প্রাচীনত্ব এবং ধর্মীয় গুরুত্ব অপরিসীম।
মসজিদে বিলালের স্থাপত্যশৈলী কেরালার অন্যান্য প্রাচীন মসজিদের মতোই। কাঠের তৈরি স্তম্ভ, ঐতিহ্যবাহী কেরালীয় ছাদ এবং সরল অলংকরণ এই মসজিদের বৈশিষ্ট্য। মসজিদের প্রাঙ্গণে একটি প্রাচীন কূপ রয়েছে, যার পানিকে স্থানীয়রা পবিত্র বলে বিশ্বাস করে। মসজিদটি স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ও সামাজিক কেন্দ্র হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

পালায়াম মসজিদ
কেরালার কোল্লাম জেলায় অবস্থিত পালায়াম মসজিদ আরেকটি প্রাচীন ইসলামি স্থাপনা।
ধারণা করা হয়, এই মসজিদটি নবম শতাব্দীতে আরব বণিকদের দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। সেই সময় মসলা বাণিজ্যের কারণে আরব বণিকেরা এই অঞ্চলে নিয়মিত আসা-যাওয়া করতেন এবং অনেকেই কেরালায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে তাঁদের বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে কেরালার মুসলিম সমাজ বা ‘মাপ্পিলা’ সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে।
পালায়াম মসজিদের স্থাপত্যেও কেরালার ঐতিহ্যবাহী নির্মাণশৈলীর ছাপ স্পষ্ট। মসজিদটি কাঠ ও ইট দিয়ে নির্মিত এবং এর ছাদ টালি দিয়ে আচ্ছাদিত। অভ্যন্তরে প্রাচীন আরবি ক্যালিগ্রাফি ও কারুকাজ দেখা যায়। মসজিদের পাশে একটি প্রাচীন কবরস্থান রয়েছে, যেখানে আরব বণিক ও প্রথম যুগের মুসলমানদের সমাধি রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। বর্তমানে মসজিদটি সংস্কার করা হলেও এর মূল কাঠামো এবং ঐতিহাসিক চরিত্র অক্ষুণ্ন রাখা হয়েছে।
লেখক: শিক্ষার্থী, শরীফবাগ ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা

আল্লাহ পৃথিবীর সব মানুষকে সম্মানিত করেছেন। তিনিই আমাদের স্রষ্টা। অথচ আমরা সব সময় নারীদের বাধ্য করার পথ খুঁজি। আলেমদের মুখেও নারীর প্রতি অবমাননাকর ও বিদ্রূপাত্মক কথা শুনি; যা শুনে যে কেউ-ই রাগান্বিত হবেন। এমন মনোভাব ইসলাম সমর্থন না করলেও মুসলিম সমাজে দুঃখজনকভাবে প্রচলিত আছে।
০৮ মার্চ ২০২২
সৌদি আরবের মক্কায় অবস্থিত মসজিদুল হারামে শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) জুমার নামাজে ইমামতি করবেন প্রখ্যাত আলেম শায়খ ড. আবদুর রহমান বিন আবদুল আজিজ আস-সুদাইস। একই দিনে মদিনায় অবস্থিত মসজিদে নববিতে জুমার নামাজ পড়াবেন খ্যাতনামা কারি শায়খ ড. আবদুল্লাহ বিন আবদুর রহমান আল-বুআইজান।
৪ ঘণ্টা আগে
সময়ের আবর্তনে আমাদের দোরগোড়ায় আবারও হাজির হয়েছে মহিমান্বিত আরবি মাস—রজব। হিজরি পঞ্জিকাবর্ষের সপ্তম এই মাসটি মুমিনের জীবনে এক পরম পুণ্যের বার্তা নিয়ে আসে। পরকালীন পাথেয় ও সওয়াব হাসিলের তরে রজব মাস এক বিশাল সুযোগের মোহনা, যা বিশেষভাবে সিয়াম সাধনার মাস রমজানের অগ্রিম আগমনী বার্তা ঘোষণা করে।
৮ ঘণ্টা আগে
হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, প্রাপ্তি-বঞ্চনার দীর্ঘ পথ পেরিয়ে মানুষ যখন নতুন বছরে প্রবেশ করে, তখন অনুভূতির ভেতর এক অদ্ভুত দ্বন্দ্ব কাজ করে। একদিকে নতুন সূচনার আনন্দ, অন্যদিকে জীবন থেকে আরেকটি বছর অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার বেদনাবোধ। প্রতিটি অতিবাহিত বছর মানে নির্ধারিত হায়াতের একটি অংশ কমে যাওয়া।
৮ ঘণ্টা আগে