Ajker Patrika

যেভাবে উপহার নেওয়া নাজায়েজ

ড. আবু সালেহ মুহাম্মদ তোহা
যেভাবে উপহার নেওয়া নাজায়েজ

কোনো ধরনের শর্ত ও স্বার্থ ছাড়া কারও প্রতি অনুরাগী হয়ে কোনো কিছু দেওয়ার নাম উপহার। এটি দাতা ও গ্রহীতা উভয়কে সম্মানিত করে। এটি অতি উচ্চমাত্রার সদকা বা অনুদান। উপহার বিনিময় সামাজিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ। এর মাধ্যমে পারস্পরিক সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। তবে বিভিন্ন কারণে এই উপহার কলুষিত ও অবৈধ হয়ে যায়। এতে সামাজিক সম্পর্ক সুদৃঢ় না হয়ে বরং পারস্পরিক বিভেদ তৈরি হয়। যথা—

চাপে ফেলে উপহার গ্রহণ
উপহার স্বতঃস্ফূর্তভাবে দেওয়ার বিষয়। কাউকে চাপে ফেলে বা বাধ্য হওয়ার মতো পরিবেশ সৃষ্টি করে উপহার নেওয়া অনুচিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) উপহার আদান-প্রদানে স্বতঃস্ফূর্ত সন্তুষ্টির শর্ত দিয়েছেন। সুতরাং সামাজিকতার চাপে দেওয়া উপহার প্রকৃত উপহার হিসেবে বিবেচিত হবে না। এমন সব অপকৌশল অবলম্বন করাও বৈধ হবে না, যার মাধ্যমে মানুষের অসন্তোষ সত্ত্বেও তার থেকে অর্থ বা সম্পদ আদায় করা হয় বা সে দিতে বাধ্য হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস কোরো না।’ (সুরা বাকারা: ১৮৮) 

উপহারের জন্য ধনীদের আমন্ত্রণ 
আমন্ত্রণ জানানো এবং তা গ্রহণ করা ইসলামি শিষ্টাচারের অংশ। রাসুলুল্লাহ (সা.) দাওয়াত কবুলকে মুসলমানের অধিকার আখ্যা দিয়ে বলেছেন, ‘এক মুসলমানের ওপর অন্য মুসলমানের পাঁচটি অধিকার, যার অন্যতম হলো, কেউ দাওয়াত দিলে তা গ্রহণ করা।’ (বুখারি: ১২৪০) তবে ভালো উপহার পেতে কেবল বিত্তবানদের দাওয়াত দেওয়া নিন্দনীয়। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘যে ওয়ালিমায় কেবল ধনীদের আমন্ত্রণ জানানো হয় আর গরিবদের বর্জন করা হয়, সেই ওয়ালিমার খাবার নিকৃষ্ট খাবার।…’ (বুখারি: ৫১৭৭) 

হারাম বস্তু উপহার দেওয়া
সরাসরি হারাম বস্তু উপহার হিসেবে দেওয়া ও নেওয়া—দুটোই হারাম। যেমন—মাদকদ্রব্য, কুকুর-শূকর ইত্যাদি হারাম প্রাণীর মাংস খাওয়া বা উপহার দেওয়া-নেওয়া হারাম। মহান আল্লাহ কেবল হালাল বস্তুই গ্রহণ করতে বলেছেন। তিনি বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমাদের আমি যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে হালালগুলো খাও।’ (সুরা বাকারা: ১৭২) 

হারাম উপার্জন থেকে উপহার
হারাম পথে পাওয়া বা হারাম উপার্জন দিয়ে কেনা বস্তু উপহার হিসেবে দেওয়া-নেওয়া নিষেধ। যেমন—চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই বা সুদ ও ঘুষের মাধ্যমে পাওয়া জিনিস বা হারাম পথে উপার্জন করা টাকাপয়সা দিয়ে কেনা জিনিস। এসব উপহার দেওয়া এবং জানা থাকলে তা নেওয়া জায়েজ নয়। আবু বাকরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ পবিত্রতা ছাড়া নামাজ কবুল করেন না এবং হারাম পথে উপার্জিত সম্পদ থেকে দান-সদকা কবুল করেন না।’ (ইবনে মাজাহ: ২৭৪) 

তদবির করে উপহার গ্রহণ
সুপারিশ, সালিস বা তদবির করে উপহার নেওয়া জায়েজ নয়। পদমর্যাদাকে কাজে লাগিয়ে সুপারিশ করে চাকরি দেওয়া বা বদলি করার তদবির করে আর্থিক সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করা হারাম। আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘যদি কোনো ব্যক্তি তার ভাইয়ের জন্য সুপারিশ করে, পরে সেই ব্যক্তি সুপারিশের জন্য তাকে কোনো উপহার দেয় এবং সুপারিশকারী তা গ্রহণও করে; তবে উপহার গ্রহণকারী যেন সুদের একটি বড় দরজার মধ্যে প্রবেশ করল।’ (আবু দাউদ: ৩৫৪১) 

ক্ষমতার অপব্যবহার করে উপহার গ্রহণ
ক্ষমতার অপব্যবহার করে কাউকে ন্যায্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করা বা পদ-পদবি ব্যবহার করে অন্যায়ভাবে অর্থ উপার্জন করা ইসলামের দৃষ্টিতে বড় অন্যায় ও জুলুম। আবু হুমাইদ আস-সাঈদি (রা.) বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) আস্দ গোত্রের ইবনে লাতবিয়া নামক এক ব্যক্তিকে জাকাত উসুলের জন্য কর্মচারী নিযুক্ত করে কোথাও পাঠালেন। তিনি সেখান থেকে ফিরে এসে বললেন, এগুলো আপনাদের অর্থাৎ রাষ্ট্রের আর এগুলো আমাকে উপহার দেওয়া হয়েছে। এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘সে তার বাবা-মায়ের ঘরে বসে থেকে দেখে না কেন, তাকে উপহার দেওয়া হয় কি না?’ (বুখারি: ২৪৯৭; মুসলিম: ৪৮৪৩)

উপহার যখন কষ্টের কারণ হয়
উপহার একটি সুন্নত ও আন্তরিকতার বিষয়। এর জন্য কোনো উপলক্ষ বা আচার-অনুষ্ঠানের প্রয়োজন নেই। উপহারের পরিমাণ বা মূল্যমানও বড় বিষয় নয়। যখন যাকে ইচ্ছা তাকে যেকোনো পরিমাণের উপহার দেওয়া যায়। কিন্তু সমাজে বিয়ে, আকিকা, ওয়ালিমার মতো অনুষ্ঠানে উপহার বাধ্যতামূলক মনে করা হয়। দাওয়াত প্রদান ও গ্রহণ উভয় ক্ষেত্রে উপহার দিতে পারা ও না পারার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। অতিথিদের উপহার ও অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা তালিকাভুক্ত করা হয়। ফলে অনেকেই মানসিকভাবে কষ্টকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। কষ্ট নিয়ে উপহার আদান-প্রদান সঠিক নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘উত্তম কথা বলে দেওয়া ও ক্ষমা করা সেই সদকার চেয়ে উত্তম, যার পর কষ্ট দেওয়া হয়।…’ (সুরা বাকারা: ২৬৩) 

বিনিয়োগ হিসেবে উপহার প্রদান
উপহার কোনো বিনিয়োগ বা ঋণ নয়। কাউকে কোনো উপলক্ষে উপহার দিয়ে এমন আশা করা উচিত নয় যে ওই ব্যক্তিও আমার বা আমাদের কোনো অনুষ্ঠান উপলক্ষে এমন উপহার দেবেন। তাই উপহারকে বিনিয়োগ মনে করা জায়েজ হবে না। এর বিনিময়ে কোনো উপকারভোগের শর্তারোপ করা যাবে না। কারণ হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা একে অন্যকে উপহার দাও। এটি মনের শত্রুতা ও বিদ্বেষ দূর করে দেয়। এক নারী প্রতিবেশী অন্য নারী প্রতিবেশীকে উপহার দিতে যেন অবহেলা না করে এবং কেউ যেন উপহারকে তুচ্ছ মনে না করে; যদিও তা ছাগলের এক টুকরা খুরও হয়।’ (তিরমিজি: ২১৩০) 

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আজকের নামাজের সময়সূচি: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫

ইসলাম ডেস্ক 
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত।

প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।

আজ মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ইংরেজি, ০১ পৌষ ১৪৩২ বাংলা, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—

আজকের নামাজের সময়সূচি
নামাজ ওয়াক্ত শুরুওয়াক্ত শেষ
তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময়০০: ০০০৫: ১২ মিনিট
ফজর০৫: ১৩ মিনিট০৬: ৩২ মিনিট
জোহর১১: ৫৫ মিনিট০৩: ৩৭ মিনিট
আসর০৩: ৩৮ মিনিট০৫: ১৩ মিনিট
মাগরিব০৫: ১৫ মিনিট০৬: ৩৪ মিনিট
এশা০৬: ৩৫ মিনিট০৫: ১২ মিনিট

উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:

বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট

যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট

নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।

আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পবিত্র কাবায় শিশুদের নিরাপত্তায় বিনা মূল্যে ‘সেফটি ব্রেসলেট’

ইসলাম ডেস্ক 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সৌদি কর্তৃপক্ষ মসজিদে হারামের অভ্যন্তরে হারিয়ে যাওয়া শিশু ও বয়স্কদের খুঁজে বের করার জন্য বিনা মূল্যে সেফটি ব্রেসলেট (রিস্টব্যান্ড) বিতরণ করছে। এই ব্রেসলেটগুলো সরবরাহ করা হচ্ছে আজইয়াদ গেট ৩ এবং কিং ফাহাদ গেট ৭৯-এ।

গ্র্যান্ড মসজিদে আগত অভিভাবকেরা নির্দিষ্ট গেটগুলোতে প্রবেশের সময় এই ব্রেসলেটগুলো সংগ্রহ করতে পারবেন। কর্মী বাহিনী এই সুনির্দিষ্ট স্থানগুলোতে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা সেবা প্রদান করছে।

এই সুরক্ষা ব্রেসলেটগুলো গ্র্যান্ড মসজিদের ভেতরে শিশু ও বয়স্কদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে—তাদের সহজে ট্র্যাক করতে সাহায্য করছে এবং হারিয়ে যাওয়া শিশুর ঘটনা প্রায় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে এনেছে।

নিরাপত্তাকর্মী ও মসজিদ স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যাতে তাঁরা হারিয়ে যাওয়া শিশু বা বয়স্কদের দেখলে ব্রেসলেটগুলো পরীক্ষা করতে পারেন এবং দ্রুত সেখানে তালিকাভুক্ত অভিভাবকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।

ব্রেসলেটগুলোতে যোগাযোগের তথ্য সংযুক্ত থাকে, যাতে কোনো হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তিকে দ্রুত তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়।

প্রতিটি ব্রেসলেটে একটি অনন্য আরএফআইডি (RFID) আইডি রয়েছে। ভিড়ের মধ্যে কেউ আলাদা হয়ে গেলে, নিরাপত্তাকর্মীরা আইডি স্ক্যান করে দ্রুত তাদের অবস্থান শনাক্ত করতে পারে। এর জন্য কোনো রেজিস্ট্রেশন বা অ্যাপের প্রয়োজন নেই।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে ব্রেসলেটগুলো একজন দর্শনার্থীর অবস্থানকালীন পুরো সময়জুড়ে সক্রিয় থাকে এবং প্রস্থান করার সময় নিষ্ক্রিয় করা হয়। এর জন্য কোনো খরচ লাগে না এবং কোনো ব্যক্তিগত তথ্যও সংরক্ষণ করা হয় না।

সূত্র: দ্য ইসলামিক ইনফরমেশন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চার দশক বুখারি শরিফ পড়ানো শায়খুল হাদিস মাহবুবুল হক কাসেমীর ইন্তেকাল

ইসলাম ডেস্ক 
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ৪৬
মাওলানা মাহবুবুল হক কাসেমী। ছবি: সংগৃহীত
মাওলানা মাহবুবুল হক কাসেমী। ছবি: সংগৃহীত

জামিয়া ইসলামিয়া লালমাটিয়ার স্বনামধন্য শায়খুল হাদিস মাওলানা মাহবুবুল হক কাসেমী ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর মিরপুর-২ কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল প্রায় ৬৩ বছর। পরিবার সূত্রে জানা যায়, তিনি দীর্ঘ পাঁচ বছর ডায়াবেটিস রোগে ভুগছিলেন।

আজ জোহরের নামাজের পর তাঁর কর্মস্থল জামিয়া ইসলামিয়া লালমাটিয়া প্রাঙ্গণে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর তাঁকে পিরোজপুরের গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হবে।

মরহুম মাওলানা মাহবুবুল হক কাসেমী ১৯৬৪ সালে পিরোজপুর জেলার জিয়ানগর থানার নলবুনিয়া গ্রামে এক দ্বীনি সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন মাওলানা শামসুল হক এবং দাদা ছিলেন মৌলভি নাজেম আলী হাওলাদার।

শৈশবেই নিজ এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করার পর তিনি দ্বীনি শিক্ষার পথে অগ্রসর হন। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত দারুল উলুম বাদুরা মাদ্রাসায় উর্দু, ফারসি ও মিজান জামাত সম্পন্ন করেন। এরপর গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার কাজুলিয়া মাদ্রাসায় নাহবেমির ও হেদায়াতুন্নাহু জামাত শেষ করেন। ১৯৭৮ সালে গওহরডাঙ্গা দারুল উলুম খাদেমুল ইসলাম মাদ্রাসা থেকে কাফিয়া জামাত সমাপ্ত করে বোর্ড পরীক্ষায় মেধাতালিকায় উত্তীর্ণ হন।

১৯৭৯ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত তিনি চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় শরহে জামি, শরহে বেকায়া ও হেদায়া জামাত সম্পন্ন করেন। পরবর্তীকালে ১৯৮২ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দে জালালাইন, মেশকাত, তাকমিলে দাওরা ও তাকমিলে আদব সম্পন্ন করেন। মেশকাত জামাতে তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে মেধাতালিকায় উত্তীর্ণ হন।

১৯৮৭ সালে তিনি আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে উর্দু সাহিত্যে মাস্টার্স সমমানের কামেল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে প্রশংসনীয় ফলাফল অর্জন করেন এবং বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হন। একই সময়ে দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে খোশখাত বা ক্যালিগ্রাফিতে বিশেষ সনদও অর্জন করেন।

শিক্ষকতা জীবনের সূচনা হয় ভারতের রাজস্থানের জামিয়া লতিফিয়ায়। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সেখানে তিনি বুখারি শরিফ, তিরমিজি, মুসলিম ও মিশকাত শরিফের দরস প্রদান করেন। পরবর্তীকালে দেশে ফিরে ১৯৯১ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত জামিয়া রহমাতুল্লাহ আমলাপাড়া মাদ্রাসায় এবং ১৯৯৯ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত জামিয়া আশরাফুল উলুম বড় কাটারা মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। ২০০০ সালে জামিয়া ইসলামিয়া লালমাটিয়ায় দাওরায়ে হাদিস চালু হলে তিনি সেখানে বুখারি ও তিরমিজি শরিফের দরস শুরু করেন। দীর্ঘদিন তিনি এখানে শিক্ষাসচিবের দায়িত্বও পালন করেন এবং আমৃত্যু জামিয়া ইসলামিয়া লালমাটিয়ার শিক্ষকতায় নিয়োজিত ছিলেন।

তিনি লালমাটিয়া মাদ্রাসার পাশাপাশি লালবাগ জামিয়া শায়েখিয়া, জামিয়া আবরারিয়া কামরাঙ্গীরচরসহ বিভিন্ন মাদ্রাসায় বুখারি শরিফের দরস প্রদান করেন। ১৯৯১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি নারায়ণগঞ্জের ঐতিহাসিক কেল্লা শাহী মসজিদে নিয়মিত খতিবের দায়িত্ব পালন করেন।

ইসলাহি ও তাসাউফের ক্ষেত্রে তিনি দারুল উলুম দেওবন্দে অধ্যয়নকালেই মাওলানা মছিহুল্লাহ খান জালালাবাদী (রহ.)-এর হাতে বাইআত গ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে শাহ আবরারুল হক (রহ.) এবং এরপর আল্লামা কমরুদ্দীনের হাতে রুজু ও বাইআত গ্রহণ করে খেলাফত লাভ করেন।

মরহুম মাওলানা মাহবুবুল হক কাসেমী সৌদি আরব, থাইল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে সফর করে দ্বীনি খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন। তিনি মৃত্যুকালে স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। তাঁর ইন্তেকালে দেশের আলেম সমাজ, ছাত্রবৃন্দ ও ভক্ত-অনুরাগীদের মাঝে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তাবলিগের প্রবীণ মুরব্বি হাজি সেলিমের ইন্তেকাল

ইসলাম ডেস্ক 
তাবলিগ জামাতের প্রবীণ মুরব্বি হাজি সেলিম। ছবি: সংগৃহীত
তাবলিগ জামাতের প্রবীণ মুরব্বি হাজি সেলিম। ছবি: সংগৃহীত

তাবলিগ জামাতের প্রবীণ ও বিশিষ্ট মুরব্বি হাজি সেলিম আজ সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) ভোরে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি কেরানীগঞ্জের নিজ বাসভবনে ফজরের নামাজের আগে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তাবলিগ জামাত বাংলাদেশ শুরায়ি নেজামের মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান।

হাবিবুল্লাহ রায়হান মরহুমের কর্মজীবনের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘হাজি সেলিম সাহেব দীর্ঘকাল ধরে দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনতের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত ছিলেন। বিশেষ করে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা মাঠে একটি বিশেষ জামাতের খেদমতে তাঁর অবদান ছিল অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য, যা সংশ্লিষ্টদের কাছে স্মরণীয় হয়ে আছে।’

হাবিবুল্লাহ রায়হান আরও জানান, মরহুম হাজি সেলিমের জানাজা আজ জোহরের নামাজের পর মান্দাইল-জিনজিরা ঈদগাহ মাঠে অনুষ্ঠিত হবে।

তাঁর ইন্তেকালে দাওয়াত ও তাবলিগের অঙ্গনে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাবলিগের সাথি ভাই ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করে মহান আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করেছেন—তিনি যেন তাঁকে ক্ষমা করেন, তাঁর কবরকে প্রশস্ত করেন, জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনকে ধৈর্য ধারণের তৌফিক দান করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘মেডিকেলে চান্স না পেয়ে’ ৩৩ হাজার ভোল্ট বিদ্যুতের তারে শুয়ে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, দাবি স্বজনদের

সিঙ্গাপুর যাত্রার আগে হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যা জানাল মেডিকেল বোর্ড

তাইওয়ানে যুদ্ধে জড়ালে চীনের কাছে হারতে পারে যুক্তরাষ্ট্র— পেন্টাগনের গোপন নথি ফাঁস

হাদিকে নিয়ে সিঙ্গাপুরের পথে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত