কাউসার লাবীব

আমাদের নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) নবুওয়াতপ্রাপ্তির পর মক্কায় ১৩ বছর অবস্থান করেন। এই সময় তিনি মানুষকে ইসলামের দিকে আহ্বান করেন। এক যুগের বেশি সময় তিনি দিনরাত এক করে মক্কার মরুপ্রান্তরে এই মেহনত চালিয়ে যান। এতে তিনি কখনো ক্লান্ত হননি, হতাশ হননি, বিরক্ত হননি এবং নিরাশও হননি। আল্লাহ তাআলা তাঁর হৃদয়ে প্রশান্তি ঢেলে দিতেন। আল্লাহর বিশেষ দয়া তাঁকে ঘিরে রাখত।
যেভাবে হিজরতের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়
নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছেন নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। কিন্তু কোনো কিছুই তাঁকে ইসলামের দাওয়াত থেকে ফিরিয়ে রাখতে পারেনি। কোনো হুমকি-ধমকি তাঁকে থামাতে পারেনি। সত্যের পথে তিনি ছিলেন অবিচল। ইসলামের দাওয়াত মানুষের কাছে পৌঁছাতে যত পন্থা সম্ভব ছিল, সব পথেই তিনি হেঁটেছেন, প্রতিটি দরজায় কড়া নেড়েছেন, প্রতিটি সমাবেশ-জমায়েতে উপস্থিত হয়েছেন, গোত্রে গোত্রে গিয়ে দাওয়াত দিয়েছেন, বিশেষ ব্যক্তিদের আলাদা করে দাওয়াত দিয়েছেন—এই আশায়, হয়তো কেউ সত্যের পথে তাঁর সঙ্গী হবে, এক আল্লাহর ওপর ইমান আনবে, ইসলাম প্রচারে তাঁর সহযোগী হবে।
মক্কার কিছু মানুষ নবী (সা.)-এর দাওয়াতে বিশ্বাস করেছিল—যাদের আত্মা ছিল উন্নত, হৃদয় ছিল পবিত্র। ধীরে ধীরে ইসলামের অনুসারীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। মূর্তিপূজার অসারতা থেকে মানুষ সচেতন হতে থাকে। ধীরে কিন্তু সুনিপুণভাবে চলতে থাকে মহানবী (সা.)-এর দাওয়াতি কার্যক্রম। তাঁর দাওয়াতের সফলতা মক্কার নেতৃস্থানীয় কাফেরদের কপালে ভাঁজ ফেলে। তারা যখন বুঝতে পারে, এভাবে চললে তাদের ধর্মীয় মর্যাদা ও নেতৃত্ব বিপদের মুখে পড়বে, তখন তারা নবীজি (সা.)-এর ওপর অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাঁর দাওয়াতি কার্যক্রম বন্ধ করতে উঠেপড়ে লাগে। ইসলাম গ্রহণকারীদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। শারীরিক নিপীড়ন, কারাবাস এমনকি হত্যার শিকার হয় অনেকে। এসবের মাঝেই নবী (সা.) বিভিন্ন আরব গোত্রের কাছে দাওয়াত পৌঁছাতে থাকেন। বিশেষ করে তিনি হজ মৌসুমকে কাজে লাগাতে চেষ্টা করেন।
হিজরতের প্রস্তুতি
নবী (সা.)-এর নিরলস প্রচেষ্টা অবশেষে ফল দিতে শুরু করে। এক হজ মৌসুমে খাজরাজ গোত্রের ছয়জন ব্যক্তি তাঁর দাওয়াতে সাড়া দিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁরা প্রতিশ্রুতি দেন, ইয়াসরিবে (বর্তমান মদিনা) ফিরে গিয়ে ইসলাম প্রচার করবেন এবং তাঁকে সহযোগিতা করবেন। এক বছর পর হজ মৌসুমে ইয়াসরিবের ১২ জন ব্যক্তি এসে নবীর সঙ্গে প্রথম আকাবা সন্ধি করেন। এই সন্ধিতে তাঁরা আল্লাহর সঙ্গে শরিক না করা, চুরি না করা, ব্যভিচার না করা, সন্তান হত্যা না করা ইত্যাদি শপথ করেন। সেই ১২ জন যখন ইয়াসরিবে ফিরে যান, নবী (সা.) তাঁদের সঙ্গে পাঠান জ্ঞানী, মেধাবী ও পরিশ্রমী ইসলাম প্রচারক মুসআব ইবনে উমাইরকে। তিনি এমনভাবে ইসলাম প্রচার করেন, ইয়াসরিবের প্রতিটি ঘরে ইসলাম পৌঁছে যায়। তিনিই ইয়াসরিবকে হিজরতের উপযুক্ত স্থান হিসেবে প্রস্তুত করেন। পরবর্তী বছর হজ মৌসুমে ৭৩ জন পুরুষ এবং ২ জন নারী মদিনা থেকে এসে নবী (সা.)-এর সঙ্গে দ্বিতীয় আকাবা সন্ধি করেন। এই সন্ধিতে তাঁরা প্রতিশ্রুতি দেন, ‘নবী (সা.) যদি তাঁদের এলাকায় হিজরত করেন, তবে তাঁকে তাঁরা রক্ষা করবেন, তাঁর পাশে থাকবেন এবং জীবন দিয়ে তাঁর সুরক্ষা করবেন।’
মাতৃভূমির মায়া ছেড়ে
দ্বিতীয় আকাবা সন্ধির পর নবী (সা.) সাহাবিদের মদিনায় হিজরত করার নির্দেশ দেন। তখন কেউ একা, কেউ দল বেঁধে, কেউ প্রকাশ্যে, কেউ গোপনে মদিনায় হিজরত করতে থাকেন। ধীরে ধীরে অধিকাংশ মুসলমানই হিজরত করে ফেলেন। মক্কায় অবশিষ্ট থাকেন নবী (সা.) এবং অল্প কিছু সাহাবি। এ সময় মক্কার কাফেররা ভাবে—‘ইয়াসরিবে গিয়ে মুহাম্মদ যদি তাঁর অনুসারীদের সুসংগঠিত করতে পারেন, একটি রাষ্ট্র গঠন করতে পারেন—তাতে কুরাইশের মর্যাদা, নেতৃত্ব এবং বাণিজ্য—সবকিছুর ওপরই আঘাত আসবে।’ তাই তারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়—এই সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার আগেই নবী (সা.)-কে হত্যা করবে। যে রাতে তাঁকে হত্যা করা হবে, সে রাতেই তিনি আল্লাহর নির্দেশে প্রিয় মাতৃভূমি মক্কা ছেড়ে ইয়াসরিবের পথ ধরেন।
ইয়াসরিব যেভাবে মদিনা হলো
নবী (সা.)-এর হিজরতের সময় ইয়াসরিব প্রচলিত অর্থে কোনো নগরী ছিল না। বরং এটি ছিল বিস্তৃত এক সমভূমিতে ছড়িয়ে থাকা কয়েকটি জলাধারকেন্দ্রিক বসতি। এখানে বাস করত আউস ও খাজরাজ নামক দুটি আরব গোত্র এবং একাধিক ইহুদি সম্প্রদায়। তিনি এই এলাকাকে নগর হিসেবে গঠনে উদ্যোগী হন। ইয়াসরিবকে তিনি নগর হিসেবে গুছিয়ে তোলেন। রাস্তাঘাট নির্মাণ করেন। পারস্পরিক দ্বন্দ্ব মুছে দেন। রক্তের সম্পর্ক ছাড়াই মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ব গড়ে ওঠে।
এই নগর বিনির্মাণের মূল ভিত্তি ছিল মসজিদ। মসজিদে নববি। এই মসজিদ শুধু নামাজের স্থানই ছিল না; এটিই ছিল রাষ্ট্রের কেন্দ্র—এখানেই নামাজ হতো, রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত হতো, যুদ্ধ ও শান্তি বিষয়ে পরামর্শ হতো, প্রতিনিধিদল আসত এবং এখানে নবী (সা.)-এর বাসভবনও ছিল, যা থেকে তিনি সরাসরি মসজিদে প্রবেশ করতে পারতেন। এই মসজিদ কেন্দ্র করেই ইয়াসরিবের নতুন জনবসতি গড়ে ওঠে। শহরের রাস্তাঘাট সুচারুভাবে বিন্যস্ত হয়। নাম পাল্টে হয় মদিনা। মদিনাতুর রাসুল।
হিজরি সনের সূচনা হয় যেভাবে
আনুষ্ঠানিকভাবে হিজরি সন গণনা শুরু হয় হজরত ওমর (রা.)-এর শাসনামলে, যা ইতিহাসে যুক্ত করে নতুন পালক। ঘুরিয়ে দেয় ইতিহাসের মোড়। রাষ্ট্রীয় কাজ সুচারুভাবে পালনের জন্য ওমর (রা.) নতুন সন প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন। এর জন্য ডাকেন পরামর্শ সভা। সভায় নবী (সা.)-এর জন্ম, মৃত্যু, নবুওয়াত ও হিজরত—এই চার বিষয়কে কেন্দ্র করে বর্ষ গণনার প্রস্তাব আসে। ওমর (রা.) হজরত আলী (রা.)-এর প্রস্তাবকে প্রাধান্য দিয়ে নতুন বর্ষ গণনার জন্য হিজরতকে বেছে নেন। ইংরেজি ক্যালেন্ডারের ২৪ সেপ্টেম্বর ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে মহানবী (সা.) হিজরত করেন। সে বছরকে সূচনা বছর ধরে শুরু হয় হিজরি সন।
তথ্যসূত্র: ইসলাম অনলাইন ডটনেট

আমাদের নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) নবুওয়াতপ্রাপ্তির পর মক্কায় ১৩ বছর অবস্থান করেন। এই সময় তিনি মানুষকে ইসলামের দিকে আহ্বান করেন। এক যুগের বেশি সময় তিনি দিনরাত এক করে মক্কার মরুপ্রান্তরে এই মেহনত চালিয়ে যান। এতে তিনি কখনো ক্লান্ত হননি, হতাশ হননি, বিরক্ত হননি এবং নিরাশও হননি। আল্লাহ তাআলা তাঁর হৃদয়ে প্রশান্তি ঢেলে দিতেন। আল্লাহর বিশেষ দয়া তাঁকে ঘিরে রাখত।
যেভাবে হিজরতের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়
নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছেন নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। কিন্তু কোনো কিছুই তাঁকে ইসলামের দাওয়াত থেকে ফিরিয়ে রাখতে পারেনি। কোনো হুমকি-ধমকি তাঁকে থামাতে পারেনি। সত্যের পথে তিনি ছিলেন অবিচল। ইসলামের দাওয়াত মানুষের কাছে পৌঁছাতে যত পন্থা সম্ভব ছিল, সব পথেই তিনি হেঁটেছেন, প্রতিটি দরজায় কড়া নেড়েছেন, প্রতিটি সমাবেশ-জমায়েতে উপস্থিত হয়েছেন, গোত্রে গোত্রে গিয়ে দাওয়াত দিয়েছেন, বিশেষ ব্যক্তিদের আলাদা করে দাওয়াত দিয়েছেন—এই আশায়, হয়তো কেউ সত্যের পথে তাঁর সঙ্গী হবে, এক আল্লাহর ওপর ইমান আনবে, ইসলাম প্রচারে তাঁর সহযোগী হবে।
মক্কার কিছু মানুষ নবী (সা.)-এর দাওয়াতে বিশ্বাস করেছিল—যাদের আত্মা ছিল উন্নত, হৃদয় ছিল পবিত্র। ধীরে ধীরে ইসলামের অনুসারীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। মূর্তিপূজার অসারতা থেকে মানুষ সচেতন হতে থাকে। ধীরে কিন্তু সুনিপুণভাবে চলতে থাকে মহানবী (সা.)-এর দাওয়াতি কার্যক্রম। তাঁর দাওয়াতের সফলতা মক্কার নেতৃস্থানীয় কাফেরদের কপালে ভাঁজ ফেলে। তারা যখন বুঝতে পারে, এভাবে চললে তাদের ধর্মীয় মর্যাদা ও নেতৃত্ব বিপদের মুখে পড়বে, তখন তারা নবীজি (সা.)-এর ওপর অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাঁর দাওয়াতি কার্যক্রম বন্ধ করতে উঠেপড়ে লাগে। ইসলাম গ্রহণকারীদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। শারীরিক নিপীড়ন, কারাবাস এমনকি হত্যার শিকার হয় অনেকে। এসবের মাঝেই নবী (সা.) বিভিন্ন আরব গোত্রের কাছে দাওয়াত পৌঁছাতে থাকেন। বিশেষ করে তিনি হজ মৌসুমকে কাজে লাগাতে চেষ্টা করেন।
হিজরতের প্রস্তুতি
নবী (সা.)-এর নিরলস প্রচেষ্টা অবশেষে ফল দিতে শুরু করে। এক হজ মৌসুমে খাজরাজ গোত্রের ছয়জন ব্যক্তি তাঁর দাওয়াতে সাড়া দিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁরা প্রতিশ্রুতি দেন, ইয়াসরিবে (বর্তমান মদিনা) ফিরে গিয়ে ইসলাম প্রচার করবেন এবং তাঁকে সহযোগিতা করবেন। এক বছর পর হজ মৌসুমে ইয়াসরিবের ১২ জন ব্যক্তি এসে নবীর সঙ্গে প্রথম আকাবা সন্ধি করেন। এই সন্ধিতে তাঁরা আল্লাহর সঙ্গে শরিক না করা, চুরি না করা, ব্যভিচার না করা, সন্তান হত্যা না করা ইত্যাদি শপথ করেন। সেই ১২ জন যখন ইয়াসরিবে ফিরে যান, নবী (সা.) তাঁদের সঙ্গে পাঠান জ্ঞানী, মেধাবী ও পরিশ্রমী ইসলাম প্রচারক মুসআব ইবনে উমাইরকে। তিনি এমনভাবে ইসলাম প্রচার করেন, ইয়াসরিবের প্রতিটি ঘরে ইসলাম পৌঁছে যায়। তিনিই ইয়াসরিবকে হিজরতের উপযুক্ত স্থান হিসেবে প্রস্তুত করেন। পরবর্তী বছর হজ মৌসুমে ৭৩ জন পুরুষ এবং ২ জন নারী মদিনা থেকে এসে নবী (সা.)-এর সঙ্গে দ্বিতীয় আকাবা সন্ধি করেন। এই সন্ধিতে তাঁরা প্রতিশ্রুতি দেন, ‘নবী (সা.) যদি তাঁদের এলাকায় হিজরত করেন, তবে তাঁকে তাঁরা রক্ষা করবেন, তাঁর পাশে থাকবেন এবং জীবন দিয়ে তাঁর সুরক্ষা করবেন।’
মাতৃভূমির মায়া ছেড়ে
দ্বিতীয় আকাবা সন্ধির পর নবী (সা.) সাহাবিদের মদিনায় হিজরত করার নির্দেশ দেন। তখন কেউ একা, কেউ দল বেঁধে, কেউ প্রকাশ্যে, কেউ গোপনে মদিনায় হিজরত করতে থাকেন। ধীরে ধীরে অধিকাংশ মুসলমানই হিজরত করে ফেলেন। মক্কায় অবশিষ্ট থাকেন নবী (সা.) এবং অল্প কিছু সাহাবি। এ সময় মক্কার কাফেররা ভাবে—‘ইয়াসরিবে গিয়ে মুহাম্মদ যদি তাঁর অনুসারীদের সুসংগঠিত করতে পারেন, একটি রাষ্ট্র গঠন করতে পারেন—তাতে কুরাইশের মর্যাদা, নেতৃত্ব এবং বাণিজ্য—সবকিছুর ওপরই আঘাত আসবে।’ তাই তারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়—এই সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার আগেই নবী (সা.)-কে হত্যা করবে। যে রাতে তাঁকে হত্যা করা হবে, সে রাতেই তিনি আল্লাহর নির্দেশে প্রিয় মাতৃভূমি মক্কা ছেড়ে ইয়াসরিবের পথ ধরেন।
ইয়াসরিব যেভাবে মদিনা হলো
নবী (সা.)-এর হিজরতের সময় ইয়াসরিব প্রচলিত অর্থে কোনো নগরী ছিল না। বরং এটি ছিল বিস্তৃত এক সমভূমিতে ছড়িয়ে থাকা কয়েকটি জলাধারকেন্দ্রিক বসতি। এখানে বাস করত আউস ও খাজরাজ নামক দুটি আরব গোত্র এবং একাধিক ইহুদি সম্প্রদায়। তিনি এই এলাকাকে নগর হিসেবে গঠনে উদ্যোগী হন। ইয়াসরিবকে তিনি নগর হিসেবে গুছিয়ে তোলেন। রাস্তাঘাট নির্মাণ করেন। পারস্পরিক দ্বন্দ্ব মুছে দেন। রক্তের সম্পর্ক ছাড়াই মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ব গড়ে ওঠে।
এই নগর বিনির্মাণের মূল ভিত্তি ছিল মসজিদ। মসজিদে নববি। এই মসজিদ শুধু নামাজের স্থানই ছিল না; এটিই ছিল রাষ্ট্রের কেন্দ্র—এখানেই নামাজ হতো, রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত হতো, যুদ্ধ ও শান্তি বিষয়ে পরামর্শ হতো, প্রতিনিধিদল আসত এবং এখানে নবী (সা.)-এর বাসভবনও ছিল, যা থেকে তিনি সরাসরি মসজিদে প্রবেশ করতে পারতেন। এই মসজিদ কেন্দ্র করেই ইয়াসরিবের নতুন জনবসতি গড়ে ওঠে। শহরের রাস্তাঘাট সুচারুভাবে বিন্যস্ত হয়। নাম পাল্টে হয় মদিনা। মদিনাতুর রাসুল।
হিজরি সনের সূচনা হয় যেভাবে
আনুষ্ঠানিকভাবে হিজরি সন গণনা শুরু হয় হজরত ওমর (রা.)-এর শাসনামলে, যা ইতিহাসে যুক্ত করে নতুন পালক। ঘুরিয়ে দেয় ইতিহাসের মোড়। রাষ্ট্রীয় কাজ সুচারুভাবে পালনের জন্য ওমর (রা.) নতুন সন প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন। এর জন্য ডাকেন পরামর্শ সভা। সভায় নবী (সা.)-এর জন্ম, মৃত্যু, নবুওয়াত ও হিজরত—এই চার বিষয়কে কেন্দ্র করে বর্ষ গণনার প্রস্তাব আসে। ওমর (রা.) হজরত আলী (রা.)-এর প্রস্তাবকে প্রাধান্য দিয়ে নতুন বর্ষ গণনার জন্য হিজরতকে বেছে নেন। ইংরেজি ক্যালেন্ডারের ২৪ সেপ্টেম্বর ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে মহানবী (সা.) হিজরত করেন। সে বছরকে সূচনা বছর ধরে শুরু হয় হিজরি সন।
তথ্যসূত্র: ইসলাম অনলাইন ডটনেট
কাউসার লাবীব

আমাদের নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) নবুওয়াতপ্রাপ্তির পর মক্কায় ১৩ বছর অবস্থান করেন। এই সময় তিনি মানুষকে ইসলামের দিকে আহ্বান করেন। এক যুগের বেশি সময় তিনি দিনরাত এক করে মক্কার মরুপ্রান্তরে এই মেহনত চালিয়ে যান। এতে তিনি কখনো ক্লান্ত হননি, হতাশ হননি, বিরক্ত হননি এবং নিরাশও হননি। আল্লাহ তাআলা তাঁর হৃদয়ে প্রশান্তি ঢেলে দিতেন। আল্লাহর বিশেষ দয়া তাঁকে ঘিরে রাখত।
যেভাবে হিজরতের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়
নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছেন নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। কিন্তু কোনো কিছুই তাঁকে ইসলামের দাওয়াত থেকে ফিরিয়ে রাখতে পারেনি। কোনো হুমকি-ধমকি তাঁকে থামাতে পারেনি। সত্যের পথে তিনি ছিলেন অবিচল। ইসলামের দাওয়াত মানুষের কাছে পৌঁছাতে যত পন্থা সম্ভব ছিল, সব পথেই তিনি হেঁটেছেন, প্রতিটি দরজায় কড়া নেড়েছেন, প্রতিটি সমাবেশ-জমায়েতে উপস্থিত হয়েছেন, গোত্রে গোত্রে গিয়ে দাওয়াত দিয়েছেন, বিশেষ ব্যক্তিদের আলাদা করে দাওয়াত দিয়েছেন—এই আশায়, হয়তো কেউ সত্যের পথে তাঁর সঙ্গী হবে, এক আল্লাহর ওপর ইমান আনবে, ইসলাম প্রচারে তাঁর সহযোগী হবে।
মক্কার কিছু মানুষ নবী (সা.)-এর দাওয়াতে বিশ্বাস করেছিল—যাদের আত্মা ছিল উন্নত, হৃদয় ছিল পবিত্র। ধীরে ধীরে ইসলামের অনুসারীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। মূর্তিপূজার অসারতা থেকে মানুষ সচেতন হতে থাকে। ধীরে কিন্তু সুনিপুণভাবে চলতে থাকে মহানবী (সা.)-এর দাওয়াতি কার্যক্রম। তাঁর দাওয়াতের সফলতা মক্কার নেতৃস্থানীয় কাফেরদের কপালে ভাঁজ ফেলে। তারা যখন বুঝতে পারে, এভাবে চললে তাদের ধর্মীয় মর্যাদা ও নেতৃত্ব বিপদের মুখে পড়বে, তখন তারা নবীজি (সা.)-এর ওপর অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাঁর দাওয়াতি কার্যক্রম বন্ধ করতে উঠেপড়ে লাগে। ইসলাম গ্রহণকারীদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। শারীরিক নিপীড়ন, কারাবাস এমনকি হত্যার শিকার হয় অনেকে। এসবের মাঝেই নবী (সা.) বিভিন্ন আরব গোত্রের কাছে দাওয়াত পৌঁছাতে থাকেন। বিশেষ করে তিনি হজ মৌসুমকে কাজে লাগাতে চেষ্টা করেন।
হিজরতের প্রস্তুতি
নবী (সা.)-এর নিরলস প্রচেষ্টা অবশেষে ফল দিতে শুরু করে। এক হজ মৌসুমে খাজরাজ গোত্রের ছয়জন ব্যক্তি তাঁর দাওয়াতে সাড়া দিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁরা প্রতিশ্রুতি দেন, ইয়াসরিবে (বর্তমান মদিনা) ফিরে গিয়ে ইসলাম প্রচার করবেন এবং তাঁকে সহযোগিতা করবেন। এক বছর পর হজ মৌসুমে ইয়াসরিবের ১২ জন ব্যক্তি এসে নবীর সঙ্গে প্রথম আকাবা সন্ধি করেন। এই সন্ধিতে তাঁরা আল্লাহর সঙ্গে শরিক না করা, চুরি না করা, ব্যভিচার না করা, সন্তান হত্যা না করা ইত্যাদি শপথ করেন। সেই ১২ জন যখন ইয়াসরিবে ফিরে যান, নবী (সা.) তাঁদের সঙ্গে পাঠান জ্ঞানী, মেধাবী ও পরিশ্রমী ইসলাম প্রচারক মুসআব ইবনে উমাইরকে। তিনি এমনভাবে ইসলাম প্রচার করেন, ইয়াসরিবের প্রতিটি ঘরে ইসলাম পৌঁছে যায়। তিনিই ইয়াসরিবকে হিজরতের উপযুক্ত স্থান হিসেবে প্রস্তুত করেন। পরবর্তী বছর হজ মৌসুমে ৭৩ জন পুরুষ এবং ২ জন নারী মদিনা থেকে এসে নবী (সা.)-এর সঙ্গে দ্বিতীয় আকাবা সন্ধি করেন। এই সন্ধিতে তাঁরা প্রতিশ্রুতি দেন, ‘নবী (সা.) যদি তাঁদের এলাকায় হিজরত করেন, তবে তাঁকে তাঁরা রক্ষা করবেন, তাঁর পাশে থাকবেন এবং জীবন দিয়ে তাঁর সুরক্ষা করবেন।’
মাতৃভূমির মায়া ছেড়ে
দ্বিতীয় আকাবা সন্ধির পর নবী (সা.) সাহাবিদের মদিনায় হিজরত করার নির্দেশ দেন। তখন কেউ একা, কেউ দল বেঁধে, কেউ প্রকাশ্যে, কেউ গোপনে মদিনায় হিজরত করতে থাকেন। ধীরে ধীরে অধিকাংশ মুসলমানই হিজরত করে ফেলেন। মক্কায় অবশিষ্ট থাকেন নবী (সা.) এবং অল্প কিছু সাহাবি। এ সময় মক্কার কাফেররা ভাবে—‘ইয়াসরিবে গিয়ে মুহাম্মদ যদি তাঁর অনুসারীদের সুসংগঠিত করতে পারেন, একটি রাষ্ট্র গঠন করতে পারেন—তাতে কুরাইশের মর্যাদা, নেতৃত্ব এবং বাণিজ্য—সবকিছুর ওপরই আঘাত আসবে।’ তাই তারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়—এই সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার আগেই নবী (সা.)-কে হত্যা করবে। যে রাতে তাঁকে হত্যা করা হবে, সে রাতেই তিনি আল্লাহর নির্দেশে প্রিয় মাতৃভূমি মক্কা ছেড়ে ইয়াসরিবের পথ ধরেন।
ইয়াসরিব যেভাবে মদিনা হলো
নবী (সা.)-এর হিজরতের সময় ইয়াসরিব প্রচলিত অর্থে কোনো নগরী ছিল না। বরং এটি ছিল বিস্তৃত এক সমভূমিতে ছড়িয়ে থাকা কয়েকটি জলাধারকেন্দ্রিক বসতি। এখানে বাস করত আউস ও খাজরাজ নামক দুটি আরব গোত্র এবং একাধিক ইহুদি সম্প্রদায়। তিনি এই এলাকাকে নগর হিসেবে গঠনে উদ্যোগী হন। ইয়াসরিবকে তিনি নগর হিসেবে গুছিয়ে তোলেন। রাস্তাঘাট নির্মাণ করেন। পারস্পরিক দ্বন্দ্ব মুছে দেন। রক্তের সম্পর্ক ছাড়াই মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ব গড়ে ওঠে।
এই নগর বিনির্মাণের মূল ভিত্তি ছিল মসজিদ। মসজিদে নববি। এই মসজিদ শুধু নামাজের স্থানই ছিল না; এটিই ছিল রাষ্ট্রের কেন্দ্র—এখানেই নামাজ হতো, রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত হতো, যুদ্ধ ও শান্তি বিষয়ে পরামর্শ হতো, প্রতিনিধিদল আসত এবং এখানে নবী (সা.)-এর বাসভবনও ছিল, যা থেকে তিনি সরাসরি মসজিদে প্রবেশ করতে পারতেন। এই মসজিদ কেন্দ্র করেই ইয়াসরিবের নতুন জনবসতি গড়ে ওঠে। শহরের রাস্তাঘাট সুচারুভাবে বিন্যস্ত হয়। নাম পাল্টে হয় মদিনা। মদিনাতুর রাসুল।
হিজরি সনের সূচনা হয় যেভাবে
আনুষ্ঠানিকভাবে হিজরি সন গণনা শুরু হয় হজরত ওমর (রা.)-এর শাসনামলে, যা ইতিহাসে যুক্ত করে নতুন পালক। ঘুরিয়ে দেয় ইতিহাসের মোড়। রাষ্ট্রীয় কাজ সুচারুভাবে পালনের জন্য ওমর (রা.) নতুন সন প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন। এর জন্য ডাকেন পরামর্শ সভা। সভায় নবী (সা.)-এর জন্ম, মৃত্যু, নবুওয়াত ও হিজরত—এই চার বিষয়কে কেন্দ্র করে বর্ষ গণনার প্রস্তাব আসে। ওমর (রা.) হজরত আলী (রা.)-এর প্রস্তাবকে প্রাধান্য দিয়ে নতুন বর্ষ গণনার জন্য হিজরতকে বেছে নেন। ইংরেজি ক্যালেন্ডারের ২৪ সেপ্টেম্বর ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে মহানবী (সা.) হিজরত করেন। সে বছরকে সূচনা বছর ধরে শুরু হয় হিজরি সন।
তথ্যসূত্র: ইসলাম অনলাইন ডটনেট

আমাদের নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) নবুওয়াতপ্রাপ্তির পর মক্কায় ১৩ বছর অবস্থান করেন। এই সময় তিনি মানুষকে ইসলামের দিকে আহ্বান করেন। এক যুগের বেশি সময় তিনি দিনরাত এক করে মক্কার মরুপ্রান্তরে এই মেহনত চালিয়ে যান। এতে তিনি কখনো ক্লান্ত হননি, হতাশ হননি, বিরক্ত হননি এবং নিরাশও হননি। আল্লাহ তাআলা তাঁর হৃদয়ে প্রশান্তি ঢেলে দিতেন। আল্লাহর বিশেষ দয়া তাঁকে ঘিরে রাখত।
যেভাবে হিজরতের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়
নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছেন নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। কিন্তু কোনো কিছুই তাঁকে ইসলামের দাওয়াত থেকে ফিরিয়ে রাখতে পারেনি। কোনো হুমকি-ধমকি তাঁকে থামাতে পারেনি। সত্যের পথে তিনি ছিলেন অবিচল। ইসলামের দাওয়াত মানুষের কাছে পৌঁছাতে যত পন্থা সম্ভব ছিল, সব পথেই তিনি হেঁটেছেন, প্রতিটি দরজায় কড়া নেড়েছেন, প্রতিটি সমাবেশ-জমায়েতে উপস্থিত হয়েছেন, গোত্রে গোত্রে গিয়ে দাওয়াত দিয়েছেন, বিশেষ ব্যক্তিদের আলাদা করে দাওয়াত দিয়েছেন—এই আশায়, হয়তো কেউ সত্যের পথে তাঁর সঙ্গী হবে, এক আল্লাহর ওপর ইমান আনবে, ইসলাম প্রচারে তাঁর সহযোগী হবে।
মক্কার কিছু মানুষ নবী (সা.)-এর দাওয়াতে বিশ্বাস করেছিল—যাদের আত্মা ছিল উন্নত, হৃদয় ছিল পবিত্র। ধীরে ধীরে ইসলামের অনুসারীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। মূর্তিপূজার অসারতা থেকে মানুষ সচেতন হতে থাকে। ধীরে কিন্তু সুনিপুণভাবে চলতে থাকে মহানবী (সা.)-এর দাওয়াতি কার্যক্রম। তাঁর দাওয়াতের সফলতা মক্কার নেতৃস্থানীয় কাফেরদের কপালে ভাঁজ ফেলে। তারা যখন বুঝতে পারে, এভাবে চললে তাদের ধর্মীয় মর্যাদা ও নেতৃত্ব বিপদের মুখে পড়বে, তখন তারা নবীজি (সা.)-এর ওপর অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাঁর দাওয়াতি কার্যক্রম বন্ধ করতে উঠেপড়ে লাগে। ইসলাম গ্রহণকারীদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। শারীরিক নিপীড়ন, কারাবাস এমনকি হত্যার শিকার হয় অনেকে। এসবের মাঝেই নবী (সা.) বিভিন্ন আরব গোত্রের কাছে দাওয়াত পৌঁছাতে থাকেন। বিশেষ করে তিনি হজ মৌসুমকে কাজে লাগাতে চেষ্টা করেন।
হিজরতের প্রস্তুতি
নবী (সা.)-এর নিরলস প্রচেষ্টা অবশেষে ফল দিতে শুরু করে। এক হজ মৌসুমে খাজরাজ গোত্রের ছয়জন ব্যক্তি তাঁর দাওয়াতে সাড়া দিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁরা প্রতিশ্রুতি দেন, ইয়াসরিবে (বর্তমান মদিনা) ফিরে গিয়ে ইসলাম প্রচার করবেন এবং তাঁকে সহযোগিতা করবেন। এক বছর পর হজ মৌসুমে ইয়াসরিবের ১২ জন ব্যক্তি এসে নবীর সঙ্গে প্রথম আকাবা সন্ধি করেন। এই সন্ধিতে তাঁরা আল্লাহর সঙ্গে শরিক না করা, চুরি না করা, ব্যভিচার না করা, সন্তান হত্যা না করা ইত্যাদি শপথ করেন। সেই ১২ জন যখন ইয়াসরিবে ফিরে যান, নবী (সা.) তাঁদের সঙ্গে পাঠান জ্ঞানী, মেধাবী ও পরিশ্রমী ইসলাম প্রচারক মুসআব ইবনে উমাইরকে। তিনি এমনভাবে ইসলাম প্রচার করেন, ইয়াসরিবের প্রতিটি ঘরে ইসলাম পৌঁছে যায়। তিনিই ইয়াসরিবকে হিজরতের উপযুক্ত স্থান হিসেবে প্রস্তুত করেন। পরবর্তী বছর হজ মৌসুমে ৭৩ জন পুরুষ এবং ২ জন নারী মদিনা থেকে এসে নবী (সা.)-এর সঙ্গে দ্বিতীয় আকাবা সন্ধি করেন। এই সন্ধিতে তাঁরা প্রতিশ্রুতি দেন, ‘নবী (সা.) যদি তাঁদের এলাকায় হিজরত করেন, তবে তাঁকে তাঁরা রক্ষা করবেন, তাঁর পাশে থাকবেন এবং জীবন দিয়ে তাঁর সুরক্ষা করবেন।’
মাতৃভূমির মায়া ছেড়ে
দ্বিতীয় আকাবা সন্ধির পর নবী (সা.) সাহাবিদের মদিনায় হিজরত করার নির্দেশ দেন। তখন কেউ একা, কেউ দল বেঁধে, কেউ প্রকাশ্যে, কেউ গোপনে মদিনায় হিজরত করতে থাকেন। ধীরে ধীরে অধিকাংশ মুসলমানই হিজরত করে ফেলেন। মক্কায় অবশিষ্ট থাকেন নবী (সা.) এবং অল্প কিছু সাহাবি। এ সময় মক্কার কাফেররা ভাবে—‘ইয়াসরিবে গিয়ে মুহাম্মদ যদি তাঁর অনুসারীদের সুসংগঠিত করতে পারেন, একটি রাষ্ট্র গঠন করতে পারেন—তাতে কুরাইশের মর্যাদা, নেতৃত্ব এবং বাণিজ্য—সবকিছুর ওপরই আঘাত আসবে।’ তাই তারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়—এই সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার আগেই নবী (সা.)-কে হত্যা করবে। যে রাতে তাঁকে হত্যা করা হবে, সে রাতেই তিনি আল্লাহর নির্দেশে প্রিয় মাতৃভূমি মক্কা ছেড়ে ইয়াসরিবের পথ ধরেন।
ইয়াসরিব যেভাবে মদিনা হলো
নবী (সা.)-এর হিজরতের সময় ইয়াসরিব প্রচলিত অর্থে কোনো নগরী ছিল না। বরং এটি ছিল বিস্তৃত এক সমভূমিতে ছড়িয়ে থাকা কয়েকটি জলাধারকেন্দ্রিক বসতি। এখানে বাস করত আউস ও খাজরাজ নামক দুটি আরব গোত্র এবং একাধিক ইহুদি সম্প্রদায়। তিনি এই এলাকাকে নগর হিসেবে গঠনে উদ্যোগী হন। ইয়াসরিবকে তিনি নগর হিসেবে গুছিয়ে তোলেন। রাস্তাঘাট নির্মাণ করেন। পারস্পরিক দ্বন্দ্ব মুছে দেন। রক্তের সম্পর্ক ছাড়াই মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ব গড়ে ওঠে।
এই নগর বিনির্মাণের মূল ভিত্তি ছিল মসজিদ। মসজিদে নববি। এই মসজিদ শুধু নামাজের স্থানই ছিল না; এটিই ছিল রাষ্ট্রের কেন্দ্র—এখানেই নামাজ হতো, রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত হতো, যুদ্ধ ও শান্তি বিষয়ে পরামর্শ হতো, প্রতিনিধিদল আসত এবং এখানে নবী (সা.)-এর বাসভবনও ছিল, যা থেকে তিনি সরাসরি মসজিদে প্রবেশ করতে পারতেন। এই মসজিদ কেন্দ্র করেই ইয়াসরিবের নতুন জনবসতি গড়ে ওঠে। শহরের রাস্তাঘাট সুচারুভাবে বিন্যস্ত হয়। নাম পাল্টে হয় মদিনা। মদিনাতুর রাসুল।
হিজরি সনের সূচনা হয় যেভাবে
আনুষ্ঠানিকভাবে হিজরি সন গণনা শুরু হয় হজরত ওমর (রা.)-এর শাসনামলে, যা ইতিহাসে যুক্ত করে নতুন পালক। ঘুরিয়ে দেয় ইতিহাসের মোড়। রাষ্ট্রীয় কাজ সুচারুভাবে পালনের জন্য ওমর (রা.) নতুন সন প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন। এর জন্য ডাকেন পরামর্শ সভা। সভায় নবী (সা.)-এর জন্ম, মৃত্যু, নবুওয়াত ও হিজরত—এই চার বিষয়কে কেন্দ্র করে বর্ষ গণনার প্রস্তাব আসে। ওমর (রা.) হজরত আলী (রা.)-এর প্রস্তাবকে প্রাধান্য দিয়ে নতুন বর্ষ গণনার জন্য হিজরতকে বেছে নেন। ইংরেজি ক্যালেন্ডারের ২৪ সেপ্টেম্বর ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে মহানবী (সা.) হিজরত করেন। সে বছরকে সূচনা বছর ধরে শুরু হয় হিজরি সন।
তথ্যসূত্র: ইসলাম অনলাইন ডটনেট

সন্তান আমাদের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান উপহার, এক টুকরা অস্তিত্ব, হৃদয়ের স্পন্দন। সন্তানের সঙ্গে মা-বাবার সম্পর্ক ভালোবাসা ও দয়ার এক স্বর্গীয় বন্ধন। এই ভালোবাসা আল্লাহর পক্ষ থেকে মানব হৃদয়ে প্রবাহিত এক অলৌকিক অনুভব। এই সম্পর্কের গভীরতা ও গুরুত্ব বোঝাতে কোরআন ও হাদিসে এসেছে দৃষ্টান্ত...
২ ঘণ্টা আগে
নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
৯ ঘণ্টা আগে
জুমাবার ইসলামে একটি অত্যন্ত বরকতময় দিন। এটি সাপ্তাহিক ঈদের দিন হিসেবেও গণ্য। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে জুমার দিনের গুরুত্ব সম্পর্কে স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন—‘হে মুমিনগণ, যখন জুমার দিনের আজান দেওয়া হয়, তখন ব্যবসা থামিয়ে জুমার নামাজের জন্য হাজির হও এবং আল্লাহকে স্মরণ করো, যাতে তোমরা কল্যাণ লাভ করো।
১ দিন আগে
মসজিদ আল্লাহর ঘর—ইসলামি শিক্ষা, সভ্যতা ও রাষ্ট্র পরিচালনার প্রাণকেন্দ্রও। রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম মসজিদের মিম্বর থেকে সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনা করতেন। মিম্বরে বসেই যুদ্ধের পরিকল্পনা সাজানো হতো, বিচারিক কার্যক্রমও পরিচালিত হতো এখান থেকে। সে যুগে নারী-পুরুষ, ছোট-বড় সবাই নির্ভয়ে মসজিদে আসতেন।
১ দিন আগেকাউসার লাবীব

সন্তান আমাদের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান উপহার, এক টুকরা অস্তিত্ব, হৃদয়ের স্পন্দন। সন্তানের সঙ্গে মা-বাবার সম্পর্ক ভালোবাসা ও দয়ার এক স্বর্গীয় বন্ধন। এই ভালোবাসা আল্লাহর পক্ষ থেকে মানব হৃদয়ে প্রবাহিত এক অলৌকিক অনুভব। এই সম্পর্কের গভীরতা ও গুরুত্ব বোঝাতে কোরআন ও হাদিসে এসেছে দৃষ্টান্ত, যা শুধু ভালোবাসার নয়; বরং দয়া, অনুগ্রহ ও রহমতের নিদর্শন।
সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘আল্লাহ তাঁর রহমতকে ১০০ ভাগে বিভক্ত করেছেন। তার মধ্যে ৯৯ ভাগ তিনি নিজের কাছে সংরক্ষিত রেখেছেন। আর পৃথিবীতে ১ ভাগ পাঠিয়েছেন। ওই ১ ভাগ পেয়ে সৃষ্টিজগৎ পরস্পরের প্রতি দয়া করে। এমনকি ঘোড়া তার বাচ্চার ওপর থেকে পা উঠিয়ে নেয় এই আশঙ্কায় যে সে ব্যথা পাবে।’ (সহিহ্ বুখারি: ৬০০০)
আল্লাহর দেওয়া সেই ভালোবাসা থেকেই মানুষ সন্তানকে কোলে-পিঠে নিয়ে মানুষ করে, আদর করে চুমু খায়, স্নেহ মেখে দেয়। বলা যায়, এ সবই আল্লাহর রহমতের একটি প্রতিফলন। রাসুলুল্লাহ (সা.) এ ক্ষেত্রে নিজের জীবনে ভালোবাসা, স্নেহ ও দয়ার এমন নজির স্থাপন করেছেন, যা যুগে যুগে অভিভাবকদের জন্য আদর্শ হয়ে থাকবে।
একবার নবী করিম (সা.) প্রিয় নাতি হাসানকে চুমু খান। সে সময় তাঁর কাছে আকরা তামিমি (রা.) বসা ছিলেন। তিনি নবীজিকে বললেন, ‘আমার ১০ ছেলে। আমি তাদের কাউকেই কোনো দিন চুমু দিইনি।’ দয়ার নবী (সা.) তার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘যে দয়া করে না, সে দয়া পায় না।’ (সহিহ্ বুখারি: ৫৯৯৭)
আরেক হাদিসে এসেছে, ‘এক বেদুইন এসে নবী (সা.)-কে বললেন, আপনারা শিশুদের চুমু দেন, কিন্তু আমরা ওদের চুমু দিই না। প্রিয় নবীজি (সা.) তখন বললেন, আল্লাহ যদি তোমার হৃদয় থেকে দয়ামায়া উঠিয়ে নেন, তাহলে তোমার ওপর আমার কি কোনো অধিকার আছে!’ (সহিহ্ বুখারি: ৫৯৯৮)
সন্তানকে স্নেহ করা, চুমু খাওয়া, কোলে নেওয়া—এসব শুধু আবেগ নয়; বরং একেকটি ইবাদত ও সুন্নাহ।

সন্তান আমাদের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান উপহার, এক টুকরা অস্তিত্ব, হৃদয়ের স্পন্দন। সন্তানের সঙ্গে মা-বাবার সম্পর্ক ভালোবাসা ও দয়ার এক স্বর্গীয় বন্ধন। এই ভালোবাসা আল্লাহর পক্ষ থেকে মানব হৃদয়ে প্রবাহিত এক অলৌকিক অনুভব। এই সম্পর্কের গভীরতা ও গুরুত্ব বোঝাতে কোরআন ও হাদিসে এসেছে দৃষ্টান্ত, যা শুধু ভালোবাসার নয়; বরং দয়া, অনুগ্রহ ও রহমতের নিদর্শন।
সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘আল্লাহ তাঁর রহমতকে ১০০ ভাগে বিভক্ত করেছেন। তার মধ্যে ৯৯ ভাগ তিনি নিজের কাছে সংরক্ষিত রেখেছেন। আর পৃথিবীতে ১ ভাগ পাঠিয়েছেন। ওই ১ ভাগ পেয়ে সৃষ্টিজগৎ পরস্পরের প্রতি দয়া করে। এমনকি ঘোড়া তার বাচ্চার ওপর থেকে পা উঠিয়ে নেয় এই আশঙ্কায় যে সে ব্যথা পাবে।’ (সহিহ্ বুখারি: ৬০০০)
আল্লাহর দেওয়া সেই ভালোবাসা থেকেই মানুষ সন্তানকে কোলে-পিঠে নিয়ে মানুষ করে, আদর করে চুমু খায়, স্নেহ মেখে দেয়। বলা যায়, এ সবই আল্লাহর রহমতের একটি প্রতিফলন। রাসুলুল্লাহ (সা.) এ ক্ষেত্রে নিজের জীবনে ভালোবাসা, স্নেহ ও দয়ার এমন নজির স্থাপন করেছেন, যা যুগে যুগে অভিভাবকদের জন্য আদর্শ হয়ে থাকবে।
একবার নবী করিম (সা.) প্রিয় নাতি হাসানকে চুমু খান। সে সময় তাঁর কাছে আকরা তামিমি (রা.) বসা ছিলেন। তিনি নবীজিকে বললেন, ‘আমার ১০ ছেলে। আমি তাদের কাউকেই কোনো দিন চুমু দিইনি।’ দয়ার নবী (সা.) তার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘যে দয়া করে না, সে দয়া পায় না।’ (সহিহ্ বুখারি: ৫৯৯৭)
আরেক হাদিসে এসেছে, ‘এক বেদুইন এসে নবী (সা.)-কে বললেন, আপনারা শিশুদের চুমু দেন, কিন্তু আমরা ওদের চুমু দিই না। প্রিয় নবীজি (সা.) তখন বললেন, আল্লাহ যদি তোমার হৃদয় থেকে দয়ামায়া উঠিয়ে নেন, তাহলে তোমার ওপর আমার কি কোনো অধিকার আছে!’ (সহিহ্ বুখারি: ৫৯৯৮)
সন্তানকে স্নেহ করা, চুমু খাওয়া, কোলে নেওয়া—এসব শুধু আবেগ নয়; বরং একেকটি ইবাদত ও সুন্নাহ।

আমাদের নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) নবুওয়াতপ্রাপ্তির পর মক্কায় ১৩ বছর অবস্থান করেন। এই সময় তিনি মানুষকে ইসলামের দিকে আহ্বান করেন। এক যুগের বেশি সময় তিনি দিনরাত এক করে মক্কার মরুপ্রান্তরে এই মেহনত চালিয়ে যান। এতে তিনি কখনো ক্লান্ত হননি, হতাশ হননি, বিরক্ত হননি এবং নিরাশও হননি।
২৭ জুন ২০২৫
নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
৯ ঘণ্টা আগে
জুমাবার ইসলামে একটি অত্যন্ত বরকতময় দিন। এটি সাপ্তাহিক ঈদের দিন হিসেবেও গণ্য। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে জুমার দিনের গুরুত্ব সম্পর্কে স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন—‘হে মুমিনগণ, যখন জুমার দিনের আজান দেওয়া হয়, তখন ব্যবসা থামিয়ে জুমার নামাজের জন্য হাজির হও এবং আল্লাহকে স্মরণ করো, যাতে তোমরা কল্যাণ লাভ করো।
১ দিন আগে
মসজিদ আল্লাহর ঘর—ইসলামি শিক্ষা, সভ্যতা ও রাষ্ট্র পরিচালনার প্রাণকেন্দ্রও। রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম মসজিদের মিম্বর থেকে সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনা করতেন। মিম্বরে বসেই যুদ্ধের পরিকল্পনা সাজানো হতো, বিচারিক কার্যক্রমও পরিচালিত হতো এখান থেকে। সে যুগে নারী-পুরুষ, ছোট-বড় সবাই নির্ভয়ে মসজিদে আসতেন।
১ দিন আগেইসলাম ডেস্ক

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত।
প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।
আজ শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ইংরেজি, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বাংলা, ১৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—
| নামাজ | ওয়াক্ত শুরু | ওয়াক্ত শেষ |
|---|---|---|
| তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময় | ০০: ০০ | ০৫: ০৬ মিনিট |
| ফজর | ০৫: ০৭ মিনিট | ০৬: ২৬ মিনিট |
| জোহর | ১১: ৫০ মিনিট | ০৩: ৩৪ মিনিট |
| আসর | ০৩: ৩৫ মিনিট | ০৫: ১০ মিনিট |
| মাগরিব | ০৫: ১২ মিনিট | ০৬: ৩১ মিনিট |
| এশা | ০৬: ৩২ মিনিট | ০৫: ০৬ মিনিট |
উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:
বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট
যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট
নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত।
প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।
আজ শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ইংরেজি, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বাংলা, ১৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—
| নামাজ | ওয়াক্ত শুরু | ওয়াক্ত শেষ |
|---|---|---|
| তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময় | ০০: ০০ | ০৫: ০৬ মিনিট |
| ফজর | ০৫: ০৭ মিনিট | ০৬: ২৬ মিনিট |
| জোহর | ১১: ৫০ মিনিট | ০৩: ৩৪ মিনিট |
| আসর | ০৩: ৩৫ মিনিট | ০৫: ১০ মিনিট |
| মাগরিব | ০৫: ১২ মিনিট | ০৬: ৩১ মিনিট |
| এশা | ০৬: ৩২ মিনিট | ০৫: ০৬ মিনিট |
উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:
বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট
যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট
নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

আমাদের নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) নবুওয়াতপ্রাপ্তির পর মক্কায় ১৩ বছর অবস্থান করেন। এই সময় তিনি মানুষকে ইসলামের দিকে আহ্বান করেন। এক যুগের বেশি সময় তিনি দিনরাত এক করে মক্কার মরুপ্রান্তরে এই মেহনত চালিয়ে যান। এতে তিনি কখনো ক্লান্ত হননি, হতাশ হননি, বিরক্ত হননি এবং নিরাশও হননি।
২৭ জুন ২০২৫
সন্তান আমাদের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান উপহার, এক টুকরা অস্তিত্ব, হৃদয়ের স্পন্দন। সন্তানের সঙ্গে মা-বাবার সম্পর্ক ভালোবাসা ও দয়ার এক স্বর্গীয় বন্ধন। এই ভালোবাসা আল্লাহর পক্ষ থেকে মানব হৃদয়ে প্রবাহিত এক অলৌকিক অনুভব। এই সম্পর্কের গভীরতা ও গুরুত্ব বোঝাতে কোরআন ও হাদিসে এসেছে দৃষ্টান্ত...
২ ঘণ্টা আগে
জুমাবার ইসলামে একটি অত্যন্ত বরকতময় দিন। এটি সাপ্তাহিক ঈদের দিন হিসেবেও গণ্য। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে জুমার দিনের গুরুত্ব সম্পর্কে স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন—‘হে মুমিনগণ, যখন জুমার দিনের আজান দেওয়া হয়, তখন ব্যবসা থামিয়ে জুমার নামাজের জন্য হাজির হও এবং আল্লাহকে স্মরণ করো, যাতে তোমরা কল্যাণ লাভ করো।
১ দিন আগে
মসজিদ আল্লাহর ঘর—ইসলামি শিক্ষা, সভ্যতা ও রাষ্ট্র পরিচালনার প্রাণকেন্দ্রও। রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম মসজিদের মিম্বর থেকে সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনা করতেন। মিম্বরে বসেই যুদ্ধের পরিকল্পনা সাজানো হতো, বিচারিক কার্যক্রমও পরিচালিত হতো এখান থেকে। সে যুগে নারী-পুরুষ, ছোট-বড় সবাই নির্ভয়ে মসজিদে আসতেন।
১ দিন আগেডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ

জুমাবার ইসলামে একটি অত্যন্ত বরকতময় দিন। এটি সাপ্তাহিক ঈদের দিন হিসেবেও গণ্য। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে জুমার দিনের গুরুত্ব সম্পর্কে স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন—‘হে মুমিনগণ, যখন জুমার দিনের আজান দেওয়া হয়, তখন ব্যবসা থামিয়ে জুমার নামাজের জন্য হাজির হও এবং আল্লাহকে স্মরণ করো, যাতে তোমরা কল্যাণ লাভ করো।’ (সুরা জুমা: ৯)
এই আয়াতটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে জুমা শুধু ফরজ নামাজের জন্য নয়, বরং আত্মপর্যালোচনা এবং নেক আমল বৃদ্ধির এক মহান সময়। বিশেষ করে জমাদিউস সানি মাসের এই দ্বিতীয় জুমা মাসের মাঝামাঝি সময়ে মুসলিমদের জন্য আত্মশুদ্ধি ও ইবাদতের সুযোগ এনে দেয়।
অতএব, মাসের এই বরকতময় জুমাবারে নামাজ, দোয়া, কোরআন তিলাওয়াত ও সদকা আল্লাহর নৈকট্য লাভের বিশেষ সুযোগ তৈরি করে দেয়।
জুমার দিনে করণীয় আমলসমূহ
জুমার দিনটি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য মূল্যবান। এই দিনে বিশেষভাবে কিছু আমল করা উচিত। যেমন—
জমাদিউস সানির দ্বিতীয় জুমা আল্লাহর নৈকট্য লাভ, আত্মশুদ্ধি, নেক আমল বৃদ্ধি এবং সমাজে সদকা ও দান করার এক অনন্য সুযোগ। আল্লাহ আমাদের সকলের নেক আমল গ্রহণ করুন এবং জীবনকে শান্তিতে ভরিয়ে দিন।
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।

জুমাবার ইসলামে একটি অত্যন্ত বরকতময় দিন। এটি সাপ্তাহিক ঈদের দিন হিসেবেও গণ্য। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে জুমার দিনের গুরুত্ব সম্পর্কে স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন—‘হে মুমিনগণ, যখন জুমার দিনের আজান দেওয়া হয়, তখন ব্যবসা থামিয়ে জুমার নামাজের জন্য হাজির হও এবং আল্লাহকে স্মরণ করো, যাতে তোমরা কল্যাণ লাভ করো।’ (সুরা জুমা: ৯)
এই আয়াতটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে জুমা শুধু ফরজ নামাজের জন্য নয়, বরং আত্মপর্যালোচনা এবং নেক আমল বৃদ্ধির এক মহান সময়। বিশেষ করে জমাদিউস সানি মাসের এই দ্বিতীয় জুমা মাসের মাঝামাঝি সময়ে মুসলিমদের জন্য আত্মশুদ্ধি ও ইবাদতের সুযোগ এনে দেয়।
অতএব, মাসের এই বরকতময় জুমাবারে নামাজ, দোয়া, কোরআন তিলাওয়াত ও সদকা আল্লাহর নৈকট্য লাভের বিশেষ সুযোগ তৈরি করে দেয়।
জুমার দিনে করণীয় আমলসমূহ
জুমার দিনটি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য মূল্যবান। এই দিনে বিশেষভাবে কিছু আমল করা উচিত। যেমন—
জমাদিউস সানির দ্বিতীয় জুমা আল্লাহর নৈকট্য লাভ, আত্মশুদ্ধি, নেক আমল বৃদ্ধি এবং সমাজে সদকা ও দান করার এক অনন্য সুযোগ। আল্লাহ আমাদের সকলের নেক আমল গ্রহণ করুন এবং জীবনকে শান্তিতে ভরিয়ে দিন।
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।

আমাদের নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) নবুওয়াতপ্রাপ্তির পর মক্কায় ১৩ বছর অবস্থান করেন। এই সময় তিনি মানুষকে ইসলামের দিকে আহ্বান করেন। এক যুগের বেশি সময় তিনি দিনরাত এক করে মক্কার মরুপ্রান্তরে এই মেহনত চালিয়ে যান। এতে তিনি কখনো ক্লান্ত হননি, হতাশ হননি, বিরক্ত হননি এবং নিরাশও হননি।
২৭ জুন ২০২৫
সন্তান আমাদের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান উপহার, এক টুকরা অস্তিত্ব, হৃদয়ের স্পন্দন। সন্তানের সঙ্গে মা-বাবার সম্পর্ক ভালোবাসা ও দয়ার এক স্বর্গীয় বন্ধন। এই ভালোবাসা আল্লাহর পক্ষ থেকে মানব হৃদয়ে প্রবাহিত এক অলৌকিক অনুভব। এই সম্পর্কের গভীরতা ও গুরুত্ব বোঝাতে কোরআন ও হাদিসে এসেছে দৃষ্টান্ত...
২ ঘণ্টা আগে
নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
৯ ঘণ্টা আগে
মসজিদ আল্লাহর ঘর—ইসলামি শিক্ষা, সভ্যতা ও রাষ্ট্র পরিচালনার প্রাণকেন্দ্রও। রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম মসজিদের মিম্বর থেকে সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনা করতেন। মিম্বরে বসেই যুদ্ধের পরিকল্পনা সাজানো হতো, বিচারিক কার্যক্রমও পরিচালিত হতো এখান থেকে। সে যুগে নারী-পুরুষ, ছোট-বড় সবাই নির্ভয়ে মসজিদে আসতেন।
১ দিন আগেফয়জুল্লাহ রিয়াদ

মসজিদ আল্লাহর ঘর—ইসলামি শিক্ষা, সভ্যতা ও রাষ্ট্র পরিচালনার প্রাণকেন্দ্রও। রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম মসজিদের মিম্বর থেকে সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনা করতেন। মিম্বরে বসেই যুদ্ধের পরিকল্পনা সাজানো হতো, বিচারিক কার্যক্রমও পরিচালিত হতো এখান থেকে। সে যুগে নারী-পুরুষ, ছোট-বড় সবাই নির্ভয়ে মসজিদে আসতেন। নবীজির মুখনিঃসৃত মূল্যবান নসিহত থেকে নিজেদের জীবনের পাথেয় সংগ্রহ করতেন।
ইবাদত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমের পাশাপাশি মসজিদ ছিল আলোকিত প্রজন্ম গঠনের গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণস্থল। নবী করিম (সা.)-এর যুগে শিশুরা মসজিদে আসত, ঘুরে বেড়াত, ইবাদত শিখত এবং সাহাবিদের পাশে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করত। মসজিদ ছিল কচিকাঁচাদের ভালোবাসার জায়গা। কোনো ভয় বা নিষেধাজ্ঞার প্রতিবন্ধকতা ছিল না তাদের।
কিন্তু আজকের বাস্তবতা অনেক ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ভিন্ন। শিশুরা মসজিদে এলে অনেকেই তাদের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করেন, সামান্য দুষ্টুমিতেই ধমক দেন, এমনকি কখনো তাড়িয়েও দেন। এতে করে অনেক অভিভাবকই নিজের সন্তানদের সহজে মসজিদে আনতে চান না। ফলে ধীরে ধীরে মসজিদের সঙ্গে নতুন প্রজন্মের দূরত্ব তৈরি হয়। অথচ ভবিষ্যতে এই প্রজন্মই উম্মতের দায়িত্ব গ্রহণ করবে। তাই তাদের মসজিদমুখী করা এখন সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দাবি।
নবীজির যুগে শিশুদের মসজিদে গমন
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে মসজিদে শিশুদের স্বাভাবিক ও স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি ছিল। নবীজি (সা.)-এর চারপাশে সাহাবিদের সঙ্গে ছোট বাচ্চাদেরও দেখা যেত। নবীজি (সা.) কখনো তাদের ধমক দিতেন না, তাড়িয়ে দিতেন না। তিনি শিশুদের উপস্থিতিকে স্বাগত জানাতেন। তাদের প্রতি অসীম মমতা দেখাতেন। নামাজ চলাকালেও নবীজি (সা.) শিশুদের প্রতি বিশেষ কোমলতা প্রদর্শন করতেন। তাঁর নাতি হাসান বা হুসাইন (রা.) কখনো তাঁর পিঠে চড়ে বসত। তিনি তাড়াহুড়ো না করে বরং তাদের ভালোবাসার খাতিরে সিজদা দীর্ঘ করতেন।
একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজের সিজদায় গেলে হজরত হাসান কিংবা হোসাইন (রা.) তাঁর পিঠে চড়ে বসে। এ কারণে নবীজি (সা.) খুব দীর্ঘ সময় সিজদায় থাকেন। নামাজ শেষে সাহাবিরা এর কারণ জানতে চাইলে নবীজি (সা.) বলেন, ‘আমার এই নাতি আমাকে বাহন বানিয়ে নিয়েছিল, তাই তাকে নামিয়ে দিতে আমি তাড়াহুড়ো করতে চাইনি, যতক্ষণ না সে স্বাভাবিকভাবে নেমে আসে।’ (সুনানে নাসায়ি: ১১৪১)। মেয়েশিশুরাও নবীজির স্নেহ থেকে বঞ্চিত হতো না। তারাও মসজিদে আসত। হজরত কাতাদা (রা.) বলেন, ‘নবীজি (সা.) তাঁর কন্যা জাইনাবের মেয়ে উমামাকে কাঁধে নিয়ে নামাজ পড়তেন। সিজদায় গেলে তাকে নামিয়ে দিতেন এবং দাঁড়ালে আবার কাঁধে তুলে নিতেন।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৯১৭)
আমাদের দেশের বেদনাদায়ক বাস্তবতা
দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের সমাজে ‘নামাজের প্রতি শ্রদ্ধা’ দেখানোর লেভেল লাগিয়ে অনেকেই শিশুদের প্রতি রূঢ় আচরণকে বৈধ মনে করেন। তাদের ধমক দিয়ে মসজিদ থেকে বের করে দেন। কোনো কোনো মসজিদ কমিটি ‘বাচ্চাদের মসজিদে আনা নিষিদ্ধ’ লেখা সাইনবোর্ডও টাঙিয়ে রাখেন মসজিদের সামনে। এসব আচরণ শিশুদের কোমল হৃদয়ে গভীর প্রভাব ফেলে। পরিণতিতে সে মসজিদকে ভয় পেতে শুরু করে। যে রাসুল (সা.) শিশুদের মাথায় মমতার পরশ বুলিয়ে দিতেন, তাঁর উম্মতের কেউ কেউ আজ শিশুদের বকাঝকা করে মসজিদ থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছে, এটা বড় লজ্জার বিষয়।
শিশুদের শিক্ষাদানের পদ্ধতি হোক নম্রতা
শিশুরা দেহ-মন উভয় দিক থেকে কোমল। তারা কঠোরতা সহ্য করতে পারে না। নবীজি (সা.) বাচ্চাদের প্রতি খুবই কোমল ছিলেন। আল্লাহ তাআলাও কোমলতা পছন্দ করেন। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা কোমল আচরণকারী, তিনি সর্বক্ষেত্রে কোমলতা ভালোবাসেন।’ (সহিহ বুখারি: ৬০২৪)। অন্য হাদিসে নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নম্রতা থেকে বঞ্চিত, সে প্রকৃত কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত।’ (সহিহ মুসলিম: ২৫৯০)। আমাদেরও উচিত বাচ্চাদের প্রতি কোমলতা প্রদর্শন করা। তাদের কিছু শেখাতে হলেও আদুরে গলায় শিশুসুলভ ভঙ্গিতে শেখানো। বাচ্চাদের জন্য এটি কঠোরতা থেকেও বেশি ফলপ্রসূ।
শিশুরা হোক মসজিদমুখী
শিশুদের মসজিদমুখী করতে হলে নম্রতা, কোমলতা ও ভালোবাসা দিয়ে কাছে টানতে হবে। তাদের জন্য শিশুবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে হবে। মসজিদের আঙিনায় শিশুদের জন্য আলাদা কর্নার হতে পারে। সেখানে তাদের উপযোগী রঙিন বই, কোরআন শেখার বিভিন্ন মজাদার উপকরণ থাকতে পারে। এতে তারা ধীরে ধীরে মসজিদের প্রতি আকৃষ্ট হবে। পাশাপাশি মসজিদ কমিটি ও ইমাম সাহেবগণ নানা ধরনের উৎসাহমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারেন। হতে পারে শিশুদের জন্য সাপ্তাহিক বিশেষ ক্লাস। যেখানে শিশুসুলভ ভঙ্গিতে তাদের ইসলামের মৌলিক জ্ঞান শেখানো হবে। যারা এতে নিয়মিত উপস্থিত হবে, তাদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ কার্যক্রমও থাকতে পারে।
মসজিদে আসার পর শিশুদের একটু শব্দে কেউ যদি রেগে যায়, বিনয়ের সঙ্গে তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে পারেন ‘নবীজির মসজিদেও তো শিশুদের বিচরণ ছিল। আমরা তাদের প্রতি কোমল হই। কঠোর আচরণ পরিত্যাগ করি।’ এভাবে ধীরে ধীরে সমাজের পরিবেশ বদলে যাবে।
আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আমরা যদি চাই, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ভালো, সচ্চরিত্রবান, নামাজি ও ইসলামি মূল্যবোধসম্পন্ন হোক—তাহলে তাদের জন্য মসজিদ উন্মুক্ত করে দিতে হবে। উৎসাহ, অভয়, ভালোবাসা দিয়ে ও নানা পরিকল্পনা করে তাদের মসজিদমুখী করতে হবে। তাহলেই গড়ে উঠবে আলোকিত প্রজন্ম।
লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুস সুন্নাহ রাজাবাড়ী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।

মসজিদ আল্লাহর ঘর—ইসলামি শিক্ষা, সভ্যতা ও রাষ্ট্র পরিচালনার প্রাণকেন্দ্রও। রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম মসজিদের মিম্বর থেকে সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনা করতেন। মিম্বরে বসেই যুদ্ধের পরিকল্পনা সাজানো হতো, বিচারিক কার্যক্রমও পরিচালিত হতো এখান থেকে। সে যুগে নারী-পুরুষ, ছোট-বড় সবাই নির্ভয়ে মসজিদে আসতেন। নবীজির মুখনিঃসৃত মূল্যবান নসিহত থেকে নিজেদের জীবনের পাথেয় সংগ্রহ করতেন।
ইবাদত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমের পাশাপাশি মসজিদ ছিল আলোকিত প্রজন্ম গঠনের গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণস্থল। নবী করিম (সা.)-এর যুগে শিশুরা মসজিদে আসত, ঘুরে বেড়াত, ইবাদত শিখত এবং সাহাবিদের পাশে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করত। মসজিদ ছিল কচিকাঁচাদের ভালোবাসার জায়গা। কোনো ভয় বা নিষেধাজ্ঞার প্রতিবন্ধকতা ছিল না তাদের।
কিন্তু আজকের বাস্তবতা অনেক ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ভিন্ন। শিশুরা মসজিদে এলে অনেকেই তাদের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করেন, সামান্য দুষ্টুমিতেই ধমক দেন, এমনকি কখনো তাড়িয়েও দেন। এতে করে অনেক অভিভাবকই নিজের সন্তানদের সহজে মসজিদে আনতে চান না। ফলে ধীরে ধীরে মসজিদের সঙ্গে নতুন প্রজন্মের দূরত্ব তৈরি হয়। অথচ ভবিষ্যতে এই প্রজন্মই উম্মতের দায়িত্ব গ্রহণ করবে। তাই তাদের মসজিদমুখী করা এখন সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দাবি।
নবীজির যুগে শিশুদের মসজিদে গমন
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে মসজিদে শিশুদের স্বাভাবিক ও স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি ছিল। নবীজি (সা.)-এর চারপাশে সাহাবিদের সঙ্গে ছোট বাচ্চাদেরও দেখা যেত। নবীজি (সা.) কখনো তাদের ধমক দিতেন না, তাড়িয়ে দিতেন না। তিনি শিশুদের উপস্থিতিকে স্বাগত জানাতেন। তাদের প্রতি অসীম মমতা দেখাতেন। নামাজ চলাকালেও নবীজি (সা.) শিশুদের প্রতি বিশেষ কোমলতা প্রদর্শন করতেন। তাঁর নাতি হাসান বা হুসাইন (রা.) কখনো তাঁর পিঠে চড়ে বসত। তিনি তাড়াহুড়ো না করে বরং তাদের ভালোবাসার খাতিরে সিজদা দীর্ঘ করতেন।
একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজের সিজদায় গেলে হজরত হাসান কিংবা হোসাইন (রা.) তাঁর পিঠে চড়ে বসে। এ কারণে নবীজি (সা.) খুব দীর্ঘ সময় সিজদায় থাকেন। নামাজ শেষে সাহাবিরা এর কারণ জানতে চাইলে নবীজি (সা.) বলেন, ‘আমার এই নাতি আমাকে বাহন বানিয়ে নিয়েছিল, তাই তাকে নামিয়ে দিতে আমি তাড়াহুড়ো করতে চাইনি, যতক্ষণ না সে স্বাভাবিকভাবে নেমে আসে।’ (সুনানে নাসায়ি: ১১৪১)। মেয়েশিশুরাও নবীজির স্নেহ থেকে বঞ্চিত হতো না। তারাও মসজিদে আসত। হজরত কাতাদা (রা.) বলেন, ‘নবীজি (সা.) তাঁর কন্যা জাইনাবের মেয়ে উমামাকে কাঁধে নিয়ে নামাজ পড়তেন। সিজদায় গেলে তাকে নামিয়ে দিতেন এবং দাঁড়ালে আবার কাঁধে তুলে নিতেন।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৯১৭)
আমাদের দেশের বেদনাদায়ক বাস্তবতা
দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের সমাজে ‘নামাজের প্রতি শ্রদ্ধা’ দেখানোর লেভেল লাগিয়ে অনেকেই শিশুদের প্রতি রূঢ় আচরণকে বৈধ মনে করেন। তাদের ধমক দিয়ে মসজিদ থেকে বের করে দেন। কোনো কোনো মসজিদ কমিটি ‘বাচ্চাদের মসজিদে আনা নিষিদ্ধ’ লেখা সাইনবোর্ডও টাঙিয়ে রাখেন মসজিদের সামনে। এসব আচরণ শিশুদের কোমল হৃদয়ে গভীর প্রভাব ফেলে। পরিণতিতে সে মসজিদকে ভয় পেতে শুরু করে। যে রাসুল (সা.) শিশুদের মাথায় মমতার পরশ বুলিয়ে দিতেন, তাঁর উম্মতের কেউ কেউ আজ শিশুদের বকাঝকা করে মসজিদ থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছে, এটা বড় লজ্জার বিষয়।
শিশুদের শিক্ষাদানের পদ্ধতি হোক নম্রতা
শিশুরা দেহ-মন উভয় দিক থেকে কোমল। তারা কঠোরতা সহ্য করতে পারে না। নবীজি (সা.) বাচ্চাদের প্রতি খুবই কোমল ছিলেন। আল্লাহ তাআলাও কোমলতা পছন্দ করেন। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা কোমল আচরণকারী, তিনি সর্বক্ষেত্রে কোমলতা ভালোবাসেন।’ (সহিহ বুখারি: ৬০২৪)। অন্য হাদিসে নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নম্রতা থেকে বঞ্চিত, সে প্রকৃত কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত।’ (সহিহ মুসলিম: ২৫৯০)। আমাদেরও উচিত বাচ্চাদের প্রতি কোমলতা প্রদর্শন করা। তাদের কিছু শেখাতে হলেও আদুরে গলায় শিশুসুলভ ভঙ্গিতে শেখানো। বাচ্চাদের জন্য এটি কঠোরতা থেকেও বেশি ফলপ্রসূ।
শিশুরা হোক মসজিদমুখী
শিশুদের মসজিদমুখী করতে হলে নম্রতা, কোমলতা ও ভালোবাসা দিয়ে কাছে টানতে হবে। তাদের জন্য শিশুবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে হবে। মসজিদের আঙিনায় শিশুদের জন্য আলাদা কর্নার হতে পারে। সেখানে তাদের উপযোগী রঙিন বই, কোরআন শেখার বিভিন্ন মজাদার উপকরণ থাকতে পারে। এতে তারা ধীরে ধীরে মসজিদের প্রতি আকৃষ্ট হবে। পাশাপাশি মসজিদ কমিটি ও ইমাম সাহেবগণ নানা ধরনের উৎসাহমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারেন। হতে পারে শিশুদের জন্য সাপ্তাহিক বিশেষ ক্লাস। যেখানে শিশুসুলভ ভঙ্গিতে তাদের ইসলামের মৌলিক জ্ঞান শেখানো হবে। যারা এতে নিয়মিত উপস্থিত হবে, তাদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ কার্যক্রমও থাকতে পারে।
মসজিদে আসার পর শিশুদের একটু শব্দে কেউ যদি রেগে যায়, বিনয়ের সঙ্গে তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে পারেন ‘নবীজির মসজিদেও তো শিশুদের বিচরণ ছিল। আমরা তাদের প্রতি কোমল হই। কঠোর আচরণ পরিত্যাগ করি।’ এভাবে ধীরে ধীরে সমাজের পরিবেশ বদলে যাবে।
আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আমরা যদি চাই, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ভালো, সচ্চরিত্রবান, নামাজি ও ইসলামি মূল্যবোধসম্পন্ন হোক—তাহলে তাদের জন্য মসজিদ উন্মুক্ত করে দিতে হবে। উৎসাহ, অভয়, ভালোবাসা দিয়ে ও নানা পরিকল্পনা করে তাদের মসজিদমুখী করতে হবে। তাহলেই গড়ে উঠবে আলোকিত প্রজন্ম।
লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুস সুন্নাহ রাজাবাড়ী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।

আমাদের নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) নবুওয়াতপ্রাপ্তির পর মক্কায় ১৩ বছর অবস্থান করেন। এই সময় তিনি মানুষকে ইসলামের দিকে আহ্বান করেন। এক যুগের বেশি সময় তিনি দিনরাত এক করে মক্কার মরুপ্রান্তরে এই মেহনত চালিয়ে যান। এতে তিনি কখনো ক্লান্ত হননি, হতাশ হননি, বিরক্ত হননি এবং নিরাশও হননি।
২৭ জুন ২০২৫
সন্তান আমাদের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান উপহার, এক টুকরা অস্তিত্ব, হৃদয়ের স্পন্দন। সন্তানের সঙ্গে মা-বাবার সম্পর্ক ভালোবাসা ও দয়ার এক স্বর্গীয় বন্ধন। এই ভালোবাসা আল্লাহর পক্ষ থেকে মানব হৃদয়ে প্রবাহিত এক অলৌকিক অনুভব। এই সম্পর্কের গভীরতা ও গুরুত্ব বোঝাতে কোরআন ও হাদিসে এসেছে দৃষ্টান্ত...
২ ঘণ্টা আগে
নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
৯ ঘণ্টা আগে
জুমাবার ইসলামে একটি অত্যন্ত বরকতময় দিন। এটি সাপ্তাহিক ঈদের দিন হিসেবেও গণ্য। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে জুমার দিনের গুরুত্ব সম্পর্কে স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন—‘হে মুমিনগণ, যখন জুমার দিনের আজান দেওয়া হয়, তখন ব্যবসা থামিয়ে জুমার নামাজের জন্য হাজির হও এবং আল্লাহকে স্মরণ করো, যাতে তোমরা কল্যাণ লাভ করো।
১ দিন আগে