Ajker Patrika

আদর্শ নেতার আবশ্যক ১০ গুণ

ড. এ এন এম মাসউদুর রহমান
আদর্শ নেতার আবশ্যক ১০ গুণ

আল্লাহ তাআলা এই বিশ্বজাহানের মালিক। তিনি এর পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছেন মানুষকে। তাই মানুষকে ‘খলিফা’ বা প্রতিনিধি বলা হয়। আর জনপ্রতিনিধিকে বলা হয় ‘খলিফাতুন নাস’। পরিবার, সমাজ, গ্রাম-মহল্লা, রাষ্ট্র—প্রতিটি স্তরেই যিনি জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত হয়ে তাদেরই নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন, তিনিই জনপ্রতিনিধি। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তিনিই তোমাদের পৃথিবীতে প্রতিনিধি বানিয়েছেন।’ (সুরা ফাতির: ৩৯)। জনপ্রতিনিধি সম্মান ও মর্যাদার পদ। এই পদের দায়-দায়িত্ব গুরুগম্ভীর হওয়ায় যে কেউ এর যোগ্য হতে পারে না। বরং জনপ্রতিনিধি হওয়ার জন্য কিছু বৈশিষ্ট্য থাকা জরুরি। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যের কথা তুলে ধরা হলো:

প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া
জনপ্রতিনিধি প্রাপ্তবয়স্ক ও বিবেকবান হওয়া আবশ্যক। কেননা, অপ্রাপ্তবয়স্ক ও পাগল নেতৃত্বের যোগ্য হতে পারে না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা নির্বোধদের হাতে তোমাদের ধন-সম্পদ দিয়ো না, যাকে আল্লাহ তোমাদের জন্য করেছেন জীবিকার মাধ্যম।’ (সুরা নিসা: ৫)। মহানবী (সা.) বলেন, ‘তিন ব্যক্তির দোষ-ত্রুটি ক্ষমা করা হয়েছে। অপ্রাপ্তবয়স্ক, যতক্ষণ না সে প্রাপ্তবয়স্ক হয়। ঘুমন্ত ব্যক্তি, যতক্ষণ না সে জাগ্রত হয়। পাগল, যতক্ষণ না সে জ্ঞানপ্রাপ্ত হয়।’ (নাসায়ি) 

সুস্থ হওয়া
শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ হওয়া নেতা হওয়ার অন্যতম শর্ত। কোনো ব্যক্তি অসুস্থ হলে তিনি দায়িত্ব পালনে অপারগ। যেমন অন্ধ, বধির, বোবা ব্যক্তি জনপ্রতিনিধি হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে তোমাদের জন্য মনোনীত করেছেন এবং তাকে জ্ঞানে ও দেহে অনেক বাড়িয়ে দিয়েছেন।’ (সুরা বাকারা: ২৪৭) 

যোগ্য হওয়া
রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব উত্তমভাবে পালনের যোগ্য হওয়া জনপ্রতিনিধির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। রাষ্ট্রীয় দায়িত্বসমূহ সুচারুরূপে পালনের জন্য জনপ্রতিনিধির স্বভাবগত যোগ্যতা একান্ত অপরিহার্য। আলী (রা.) বলেন, ‘মানুষের নেতৃত্বদানের অধিকারী হবে সে, যে তাদের সবার তুলনায় অধিক দৃঢ় ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ও অধিক শক্তিশালী হবে।’ সায়িদ হাভি বলেন, ‘জনপ্রতিনিধির জন্য শর্ত হলো, তাকে অবশ্যই জনগণের নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্য হতে হবে।’ (আল-ইসলাম: ২ / ১৪৮) 

ন্যায়পরায়ণ হওয়া
জনপ্রতিনিধিকে সুবিচার, ন্যায়পরায়ণতা ও নিরপেক্ষতার গুণে গুণান্বিত হতে হবে। অন্যথায় সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা অসম্ভব। ন্যায়বিচার একটি মানসিক অবস্থাবিশেষ, তা জনপ্রতিনিধিকে সর্বপ্রকার পাপ থেকে যেমন দূরে রাখে, তেমনি জাতীয় পর্যায়ে বিশ্বাসঘাতকতা, মিথ্যা, প্রতারণা ও নির্যাতনমূলক কার্যক্রম থেকেও পবিত্র থাকতে উদ্বুদ্ধ করে। 

আইনে পারদর্শী হওয়া
জনপ্রতিনিধিকে রাষ্ট্রের আইন বিষয়ে অভিজ্ঞ ও পারদর্শী হওয়া আবশ্যক। ইসলামি রাষ্ট্র হলে আল্লাহর আইন সম্পর্কে পারদর্শী হতে হবে। সমাজের অন্যান্য সাধারণ নাগরিকের মতো জনপ্রতিনিধিও সমভাবে আইনের আওতায় থাকবেন। (অভিযুক্ত হলে তাঁকে বিচারের আওতায় আনার সুযোগ থাকতে হবে। ইসলামে জনপ্রতিনিধির ক্ষমতা ও কার্যাবলি লাগামবদ্ধ করা হয়েছে।) সায়িদ হাভি বলেন, ‘রাষ্ট্রের বিধিবিধান সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়া সর্বপ্রথম আবশ্যক। কেননা, তিনি তাঁর রাষ্ট্রে তা বাস্তবায়ন করে থাকেন।’ (আল-ইসলাম: ২/ ১৪৮)। 

জন্মসূত্রের পবিত্রতা
জনপ্রতিনিধিকে অবশ্যই জন্মসূত্রে পবিত্র হতে হবে। ব্যভিচারের পথ বন্ধ করার জন্য এমন শর্তারোপ করা হয়েছে। ব্যভিচারপ্রসূত ব্যক্তিকে যদি রাষ্ট্রের উচ্চতর আসনে বসানো হয়, তাহলে তা গোটা জাতির জন্য কলঙ্কের বিষয়। ফলে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো সেই জনগোষ্ঠীর পক্ষে সম্ভব নয়। 

মানবিক হওয়া
জনপ্রতিনিধিকে অবশ্যই উন্নতমানের মানবিক ও ইসলামি চারিত্রিক গুণে ভূষিত হতে হবে। কোরআন মজিদে এই গুণসমূহের সমন্বিত গুণ তাকওয়ার কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি অধিক মর্যাদাসম্পন্ন, যে তোমাদের মধ্যে অধিক মুত্তাকি।’ (সুরা হুজুরাত: ১৩) 

অর্থ-পদের মোহ না থাকা
জনপ্রতিনিধি জনগণের রায়ের ভিত্তিতে নির্বাচিত হন। তিনি ওই পদ পাওয়ার জন্য কারও দ্বারস্থ হবেন না অথবা পদের মোহে অর্থ খরচ করবেন না। এমন করলে তা তার অযোগ্যতা বলে বিবেচিত হবে। এমনকি তিনি যখন জনগণের রায়ে নির্বাচিত হবেন, তখনো আর্থিক দিক থেকে স্বচ্ছ থাকবেন এবং অনিয়ম করবেন না, যার দ্বারা অর্থ আত্মসাৎ বা এ-জাতীয় কোনো দোষ প্রকাশ হয়ে পড়ে।

আদর্শিক হওয়া
জনপ্রতিনিধি জনগণের উদ্দেশ্যে যা কিছু বলবেন, তা অবশ্যই ব্যক্তিগত জীবনে পালন করবেন। যদি তাঁর কথা ও কাজে সামঞ্জস্য না থাকে, তবে তিনি সমাজে মূল্যহীন হয়ে পড়বেন। ফলে তাঁর কথা কারও ওপর প্রভাব ফেলতে সক্ষম হবে না। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা কি মানুষকে ভালো কাজের আদেশ দিচ্ছ আর নিজদের বেলায় ভুলে যাচ্ছ? অথচ তোমরা কিতাব তিলাওয়াত করো। তোমরা কি বোঝো না?’ (সুরা বাকারা: ৪৪)। তিনি আরও বলেন, ‘হে ইমানদারগণ, তোমরা তা কেন বলো, যা তোমরা নিজেরা করো না? তোমরা যা করো না, তা বলা আল্লাহর কাছে বড়ই ক্রোধের বিষয়।’ (সুরা সফ: ২-৩) 

আল্লাহর ওপর ভরসা করা
জনপ্রতিনিধিকে অবশ্যই আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল হতে হবে। কেননা, আল্লাহ ছাড়া কারও ওপর ভরসা করা তাঁর জন্য সমীচীন নয়। কাজে-কর্মে আল্লাহর ওপর ভরসা ও তাঁর কাছে সাহায্য কামনা করবেন। আল্লাহ বলেন, ‘এরপর (সিদ্ধান্ত দেওয়ার পর) যখন সংকল্প করবে, তখন আল্লাহর ওপর ভরসা করবে।’ (সুরা আল ইমরান: ১৫৯) 

লেখক: অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিজয় আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে

ফয়জুল্লাহ রিয়াদ
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩৩
বিজয় আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে

বিজয় মানবজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য। ব্যক্তিগত, সামাজিক কিংবা রাষ্ট্রীয়—যে রূপেই হোক না কেন, প্রতিটি বিজয় আল্লাহ তাআলার বিশেষ অনুগ্রহের ফল। মানুষ যত চেষ্টা ও সাধনাই করুক, প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর দয়া, এহসান ও সাহায্য ছাড়া বিজয় কখনো সম্ভব নয়। তাই একজন মুমিন কোনো বিজয়কেই নিজের কৃতিত্ব হিসেবে দেখে না; বরং সর্বাবস্থায় নিজের সব সাফল্যকে আল্লাহ তাআলার রহমতের ওপর ন্যস্ত করে। এ কারণেই বিজয়ের দিনে মুমিনের করণীয় বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।

প্রতিটি বিজয় প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তাআলার সাহায্য ও অনুগ্রহেরই ফল। পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘বিজয় তো কেবল আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে, যিনি পরিপূর্ণ ক্ষমতার অধিকারী এবং পরিপূর্ণ প্রজ্ঞার মালিক।’ (সুরা আলে ইমরান: ১২৬) সুতরাং বিজয়ের মুহূর্তে মুমিনের প্রথম করণীয় হলো আল্লাহ তাআলার দরবারে শোকর আদায় করা।

অনেক সময় বিজয় মানুষকে ভুল পথ তথা অহংকার, গাফিলতি ও আত্মতুষ্টির দিকে নিয়ে যায়। অথচ আল্লাহ তাআলা অহংকারী ও দাম্ভিক ব্যক্তিকে অপছন্দ করেন। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো দাম্ভিক অহংকারী ব্যক্তিকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা লুকমান: ১৮) প্রকৃত মুমিন বিজয়ের পর আরও বিনয়ী হয় এবং কৃতজ্ঞতায় আল্লাহ তাআলার দরবারে নত হয়ে পড়ে।

কোনো বিজয়ই কখনো একক প্রচেষ্টার ফল নয়। এর পেছনে থাকে বহু মানুষের অক্লান্ত শ্রম, অপরিসীম ত্যাগ, রক্ত ও জীবনের কোরবানি। তাই যাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিজয় অর্জিত হয়েছে, বিজয় দিবসে তাদের জন্য দোয়া করা কৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ। জীবিতদের দোয়াই মৃতদের জন্য উপকারী। এর বাইরে বিজয় দিবসকে ঘিরে পরিচালিত অন্যান্য আনুষ্ঠানিক কর্মকাণ্ড তাদের কোনো উপকারে আসে না।

বিজয় আসে ধৈর্য, ত্যাগ, নৈতিকতা ও আল্লাহর ওপর ভরসার মাধ্যমে। এই বিজয়কে তাই স্থায়ী করতে হলে সমাজে ন্যায়, সততা, দায়িত্বশীলতা ও মানবিকতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অন্যথায় সমাজ ও রাষ্ট্রে বিজয়ের প্রকৃত সুফল পাওয়া যাবে না।

লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুস সুন্নাহ রাজাবাড়ী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আজকের নামাজের সময়সূচি: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫

ইসলাম ডেস্ক 
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত।

প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।

আজ মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ইংরেজি, ০১ পৌষ ১৪৩২ বাংলা, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—

আজকের নামাজের সময়সূচি
নামাজ ওয়াক্ত শুরুওয়াক্ত শেষ
তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময়০০: ০০০৫: ১২ মিনিট
ফজর০৫: ১৩ মিনিট০৬: ৩২ মিনিট
জোহর১১: ৫৫ মিনিট০৩: ৩৭ মিনিট
আসর০৩: ৩৮ মিনিট০৫: ১৩ মিনিট
মাগরিব০৫: ১৫ মিনিট০৬: ৩৪ মিনিট
এশা০৬: ৩৫ মিনিট০৫: ১২ মিনিট

উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:

বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট

যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট

নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।

আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পবিত্র কাবায় শিশুদের নিরাপত্তায় বিনা মূল্যে ‘সেফটি ব্রেসলেট’

ইসলাম ডেস্ক 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সৌদি কর্তৃপক্ষ মসজিদে হারামের অভ্যন্তরে হারিয়ে যাওয়া শিশু ও বয়স্কদের খুঁজে বের করার জন্য বিনা মূল্যে সেফটি ব্রেসলেট (রিস্টব্যান্ড) বিতরণ করছে। এই ব্রেসলেটগুলো সরবরাহ করা হচ্ছে আজইয়াদ গেট ৩ এবং কিং ফাহাদ গেট ৭৯-এ।

গ্র্যান্ড মসজিদে আগত অভিভাবকেরা নির্দিষ্ট গেটগুলোতে প্রবেশের সময় এই ব্রেসলেটগুলো সংগ্রহ করতে পারবেন। কর্মী বাহিনী এই সুনির্দিষ্ট স্থানগুলোতে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা সেবা প্রদান করছে।

এই সুরক্ষা ব্রেসলেটগুলো গ্র্যান্ড মসজিদের ভেতরে শিশু ও বয়স্কদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে—তাদের সহজে ট্র্যাক করতে সাহায্য করছে এবং হারিয়ে যাওয়া শিশুর ঘটনা প্রায় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে এনেছে।

নিরাপত্তাকর্মী ও মসজিদ স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যাতে তাঁরা হারিয়ে যাওয়া শিশু বা বয়স্কদের দেখলে ব্রেসলেটগুলো পরীক্ষা করতে পারেন এবং দ্রুত সেখানে তালিকাভুক্ত অভিভাবকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।

ব্রেসলেটগুলোতে যোগাযোগের তথ্য সংযুক্ত থাকে, যাতে কোনো হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তিকে দ্রুত তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়।

প্রতিটি ব্রেসলেটে একটি অনন্য আরএফআইডি (RFID) আইডি রয়েছে। ভিড়ের মধ্যে কেউ আলাদা হয়ে গেলে, নিরাপত্তাকর্মীরা আইডি স্ক্যান করে দ্রুত তাদের অবস্থান শনাক্ত করতে পারে। এর জন্য কোনো রেজিস্ট্রেশন বা অ্যাপের প্রয়োজন নেই।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে ব্রেসলেটগুলো একজন দর্শনার্থীর অবস্থানকালীন পুরো সময়জুড়ে সক্রিয় থাকে এবং প্রস্থান করার সময় নিষ্ক্রিয় করা হয়। এর জন্য কোনো খরচ লাগে না এবং কোনো ব্যক্তিগত তথ্যও সংরক্ষণ করা হয় না।

সূত্র: দ্য ইসলামিক ইনফরমেশন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চার দশক বুখারি শরিফ পড়ানো শায়খুল হাদিস মাহবুবুল হক কাসেমীর ইন্তেকাল

ইসলাম ডেস্ক 
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ৪৬
মাওলানা মাহবুবুল হক কাসেমী। ছবি: সংগৃহীত
মাওলানা মাহবুবুল হক কাসেমী। ছবি: সংগৃহীত

জামিয়া ইসলামিয়া লালমাটিয়ার স্বনামধন্য শায়খুল হাদিস মাওলানা মাহবুবুল হক কাসেমী ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর মিরপুর-২ কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল প্রায় ৬৩ বছর। পরিবার সূত্রে জানা যায়, তিনি দীর্ঘ পাঁচ বছর ডায়াবেটিস রোগে ভুগছিলেন।

আজ জোহরের নামাজের পর তাঁর কর্মস্থল জামিয়া ইসলামিয়া লালমাটিয়া প্রাঙ্গণে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর তাঁকে পিরোজপুরের গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হবে।

মরহুম মাওলানা মাহবুবুল হক কাসেমী ১৯৬৪ সালে পিরোজপুর জেলার জিয়ানগর থানার নলবুনিয়া গ্রামে এক দ্বীনি সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন মাওলানা শামসুল হক এবং দাদা ছিলেন মৌলভি নাজেম আলী হাওলাদার।

শৈশবেই নিজ এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করার পর তিনি দ্বীনি শিক্ষার পথে অগ্রসর হন। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত দারুল উলুম বাদুরা মাদ্রাসায় উর্দু, ফারসি ও মিজান জামাত সম্পন্ন করেন। এরপর গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার কাজুলিয়া মাদ্রাসায় নাহবেমির ও হেদায়াতুন্নাহু জামাত শেষ করেন। ১৯৭৮ সালে গওহরডাঙ্গা দারুল উলুম খাদেমুল ইসলাম মাদ্রাসা থেকে কাফিয়া জামাত সমাপ্ত করে বোর্ড পরীক্ষায় মেধাতালিকায় উত্তীর্ণ হন।

১৯৭৯ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত তিনি চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় শরহে জামি, শরহে বেকায়া ও হেদায়া জামাত সম্পন্ন করেন। পরবর্তীকালে ১৯৮২ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দে জালালাইন, মেশকাত, তাকমিলে দাওরা ও তাকমিলে আদব সম্পন্ন করেন। মেশকাত জামাতে তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে মেধাতালিকায় উত্তীর্ণ হন।

১৯৮৭ সালে তিনি আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে উর্দু সাহিত্যে মাস্টার্স সমমানের কামেল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে প্রশংসনীয় ফলাফল অর্জন করেন এবং বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হন। একই সময়ে দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে খোশখাত বা ক্যালিগ্রাফিতে বিশেষ সনদও অর্জন করেন।

শিক্ষকতা জীবনের সূচনা হয় ভারতের রাজস্থানের জামিয়া লতিফিয়ায়। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সেখানে তিনি বুখারি শরিফ, তিরমিজি, মুসলিম ও মিশকাত শরিফের দরস প্রদান করেন। পরবর্তীকালে দেশে ফিরে ১৯৯১ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত জামিয়া রহমাতুল্লাহ আমলাপাড়া মাদ্রাসায় এবং ১৯৯৯ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত জামিয়া আশরাফুল উলুম বড় কাটারা মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। ২০০০ সালে জামিয়া ইসলামিয়া লালমাটিয়ায় দাওরায়ে হাদিস চালু হলে তিনি সেখানে বুখারি ও তিরমিজি শরিফের দরস শুরু করেন। দীর্ঘদিন তিনি এখানে শিক্ষাসচিবের দায়িত্বও পালন করেন এবং আমৃত্যু জামিয়া ইসলামিয়া লালমাটিয়ার শিক্ষকতায় নিয়োজিত ছিলেন।

তিনি লালমাটিয়া মাদ্রাসার পাশাপাশি লালবাগ জামিয়া শায়েখিয়া, জামিয়া আবরারিয়া কামরাঙ্গীরচরসহ বিভিন্ন মাদ্রাসায় বুখারি শরিফের দরস প্রদান করেন। ১৯৯১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি নারায়ণগঞ্জের ঐতিহাসিক কেল্লা শাহী মসজিদে নিয়মিত খতিবের দায়িত্ব পালন করেন।

ইসলাহি ও তাসাউফের ক্ষেত্রে তিনি দারুল উলুম দেওবন্দে অধ্যয়নকালেই মাওলানা মছিহুল্লাহ খান জালালাবাদী (রহ.)-এর হাতে বাইআত গ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে শাহ আবরারুল হক (রহ.) এবং এরপর আল্লামা কমরুদ্দীনের হাতে রুজু ও বাইআত গ্রহণ করে খেলাফত লাভ করেন।

মরহুম মাওলানা মাহবুবুল হক কাসেমী সৌদি আরব, থাইল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে সফর করে দ্বীনি খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন। তিনি মৃত্যুকালে স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। তাঁর ইন্তেকালে দেশের আলেম সমাজ, ছাত্রবৃন্দ ও ভক্ত-অনুরাগীদের মাঝে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত