রজত কান্তি রায়

মডেলিং শুরুর প্রথম দিকের গল্প শুনতে চাই?
সৈয়দ রুমা: ২০০২ থেকে মডেলিং শুরু করি। আমার এক কাজিন বাইরে থাকে। সে মডেলিং করত। আমার মডেলিংয়ের ব্যাপারে কোনো আগ্রহ ছিল না। ভেবেছিলাম হয়তো-বা পুলিশ হব, ডক্টর হব। আমি ছেলেদের মতোই খেলাধুলা করতাম, হাঁটাচলা করতাম। আমার বড় বোনের মডেলিংয়ে খুব আগ্রহ ছিল। আমার কাজিন একদিন এসে বলল, ‘তোমরা মডেলিং করবা?’ তখন আমার বড়বোন বলল, ‘হ্যাঁ, করব।’
সে সময় পাবলিক লাইব্রেরিতে, জাদুঘরে, চীনমৈত্রীতে শো হতো। ফার্স্ট শো করলাম। আর কিছু রাশিয়ান কালচারাল সেন্টারে শো ছিল। প্রথম দিকে শো-এর সময় খুব প্যারা লাগত। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত একটা শো-এর জন্য বসে থাকা! আমার জন্য কমফোর্টেবল ছিল না। তারপর, ধীরে ধীরে আগ্রহ বেড়ে গেল। আমাকে আমার বোন পুশ করেছে। আমার বোন তার পরীক্ষার জন্য মডেলিং অফ করে দিছে। আমি সব সময় বলতাম—এটা আমার শখ। তবে আমি কখন যে একে পেশা হিসেবে নিয়েছি, তা হয়তো নিজেও জানি না। ২০০৫-এ যখন নেসক্যাফে, সানসিল্কের বিলবোর্ড করি, তখন আগ্রহটা বাড়ে। আমি বাংলাদেশি মডেল হয়ে ইন্টারন্যাশনাল কাজ করেছি। কাজ করতে করতে ধীরে ধীরে আগ্রহ বাড়ে। মিডিয়ার শুরু কাজিনের মাধ্যমে। গ্রুমিংও তাই। এখন তো অনেক গ্রুমিং স্কুল আছে। আমার নিজেরও আছে। আমি দুই জায়গায় ক্লাসও নিই। ওই সময়ে এটা ছিল না। আমরা এক মাস রিহার্সাল করতাম। এক মাস ধরে হাঁটা শেখানো হতো। এমনও হয়েছে, শো-এর আগের দিন শো বাতিল হয়ে গেছে।
কেন?
সৈয়দ রুমা: অনেক কারণ ছিল। আর তখন কী কী কারণে শো বন্ধ হয়, তা আমরা বুঝিনি। ছোট ছিলাম অনেক। এখন কারণ জিজ্ঞেস করতে পারি। হয়তো হলের কোনো সমস্যা, স্পনসরের সমস্যা—এসব।
তার মানে ২০০২ থেকে শুরু...
সৈয়দ রুমা: হ্যাঁ, ২০০২ থেকে বেসিক শুরু। পেশা হিসেবে নিয়েছি ২০০৫ সাল থেকে। আমার বেসিক র্যাম্প।
কোন কোন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করেছেন?
সৈয়দ রুমা: মোটামুটি সব ব্র্যান্ডের সঙ্গে কাজ করেছি। আড়ং, এক্সটেসি, ট্রেন্ডস, অনেকগুলোতে। টিভিসি অনেকগুলো করেছি। শো তো অসংখ্য। মুভিতে দুইটা আইটেম সং করেছি। ‘গেম’ মুভিতে আইটেম সং করেছি, আর ‘ইউ টার্ন’ মুভিতে আইটেম সং করেছি। আর এখন আমি আমার শপ ‘আর বাই রুমা’ নিয়ে ব্যস্ত। কোরিওগ্রাফি নিয়ে ব্যস্ত।
এখন তো র্যাম্পিং করছেন না?
সৈয়দ রুমা: মাঝে মাঝে করা হয়। তবে সব সময় শো করাই।

কোরিওগ্রাফার হিসেবে আপনি কত দিন কাজ করছেন?
সৈয়দ রুমা: ৬-৭ বছরের ওপরে।
আমি কয়েকজন মডেলের সঙ্গে কথা বলেছি। একটা পর্যায়ের পর সবাই কোরিওগ্রাফির দিকে চলে যান। সবাই একটা পর্যায়ে ইনস্টিটিউট খুলছেন। ২০০২ এবং ২০২১ অনেকটা সময়। কী মনে হয়, ইন্ডাস্ট্রি কি পজিটিভ দিকে যাচ্ছে, নাকি আগের মতোই থেকে যাচ্ছে?
সৈয়দ রুমা: প্রশ্নটা খুব ক্রিটিক্যাল। আমরা যখন কাজ শুরু করেছি, আমাদের মধ্যে প্যাশন ছিল। কাজের প্রতি সম্মান ছিল। নতুন জেনারেশনের মধ্যে এই জিনিসগুলোর অভাব। যতই গ্রুমিং হোক, আমার মনে হয় কমিটমেন্টের, সেন্সের অভাব। কিছু একটা অভাব আছেই। আমি নিজেও ক্লাসে বলি—তুমি মানুষকে সম্মান দিলে মানুষ তোমাকে সম্মান দেবে।
আমি আমার জীবনে অনেক ফ্যামিলি প্রোগ্রামে যাইনি। আমি আমার মামার বিয়েতে যাইনি। জাপানে শো করতে গিয়েছিলাম। ফ্যামিলির কাজিনদের অনেক প্রোগ্রামেই আমি অ্যাটেন্ড করতে পারিনি। অনেক মজা করতে পারিনি, যা আমার ফ্যামিলি করে। আমাদের ফ্যামিলির মানুষেরা বাসার অনুষ্ঠানেও খুব মজা করে। কিন্তু সেখানে আমি থাকতে পারি না। আমার নিজের বোনের এনগেজমেন্টের সময় আমি থাকতে পারিনি। সারা রাত আমি কাজ করেছি। কিন্তু ভোরে উঠে শো করতে যেতে হয়েছে। তারপরও কাজটাকে আমি অগুরুত্বপূর্ণ ভাবিনি। আমার বাবা নেই। অনেক দায়িত্ব থাকে আসলে। অনুষ্ঠানের মিষ্টিটা সবার বাসায় পাঠানোর জন্যও লোক লাগে। আমার মা, বোন—ওরা কতটাই-বা করবে। আমি থাকলে হেল্প হবে। সেই জিনিসগুলো আমি করতে পারিনি।
এখনকার ছেলেমেয়েরা শো-এর আগের দিন বলে দেয় যে, আমার একটা কাজ আছে বা অন্য কাজ আছে। আমার সময়ে একটা ছোট শো ছিল। এই শো-এর বুকিং আগে থেকেই দেওয়া ছিল। ওই সময়ে আড়ং ফ্যাশন উইকও চলছিল। কিন্তু আমরা ৮-১০ জন শুধুমাত্র কমিটমেন্টের কারণে আড়ংয়ের শো বাদ দিয়ে ছোট শোটাই করেছি। এই জিনিসটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
এখন সেটা নেই বলছেন?
সৈয়দ রুমা: এখন মানুষ খুব সহজেই সবকিছু পেয়ে যাচ্ছে। আমাদের সময় আমরা একটা শোয়ের জন্য এক মাস গ্রুমিং করতাম। এখন অল্প সময় গ্রুমিং-রিহার্সাল করেই ওরা শো করে ফেলছে। আগে বিলবোর্ড করব, ম্যাগাজিনের কভার করব—এটা স্বপ্ন ছিল। আগে যেকোনো পত্রিকায় সেলিব্রিটিরা কাজ করত। আর এখন সবাই করতে পারে। সহজভাবে সব পেয়ে যাচ্ছে। আর তাই এমন প্রবলেম হচ্ছে।
আপনি যাদের গ্রুমিং করাচ্ছেন, আপনার কাছে যারা আসছে, তাঁদের ক্ষেত্রেও কি আপনি এটা দেখছেন?
সৈয়দ রুমা: আমার গ্রুমিং হলো দু-তিন মাস। তারপর আমি তাদের ছেড়ে দিই। আমার সামনে হয়তো তারা নরমাল থাকবে। বাইরে গিয়ে তারা এমন করতে পারে। কারণ, আমি ফটোগ্রাফি করতে গিয়ে, অন্য কাজ করতে গিয়ে এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হই। একটা কাজ যখন হয়, তখন তার সঙ্গে পুরো একটা টিম থাকে। একজন যদি কমিটমেন্ট ব্রেক করে, তখন সবাইকে ঝামেলায় পড়তে হয়। পুরো শোটা ধ্বংস হয়ে যায়। আল্লাহর রহমতে বাংলাদেশের বড় বড় শোগুলা আমি করি। বড় শোগুলোতে ৬০ থেকে ৭০ জন মডেল নিয়ে কাজ করি। একেকটা সিকোয়েন্সে মডেল থাকে ২০/২২ জন। র্যাম্প থাকে অনেক বড়। ১০০, ১৫০ ফুট—এ রকম। আমার এমনও হয়েছে, শোয়ের দিন ১০৩ ডিগ্রি জ্বর। বমি হচ্ছে। তাও আমি মেকআপ করেছি, শো করেছি। ধরুন, কারও পারলার ওপেনিং। আমি তো হুটহাট শো বাতিল করতে পারি না। তাঁকে বিপদে ফেলতে পারি না। এমন প্যাশন যদি থাকে, তাহলে মিডিয়া আগাবে। আমাদের দেশ থেকে অনেক মডেল দেশের বাইরে গিয়ে কাজ করছে। আমি নিজেও বাইরে অনেক শো করে এসেছি। অনেক ভালো ভালো ডিজাইনার বাড়ছে দেশে। লিংক বাড়ছে। যদি আমরা অ্যাকটিভ থাকি, আর যদি মডেলিং এজেন্সি থাকে, তাহলে আগাবেই। আমার অবজেকশন একটা আছে। একটা মেয়ে জিনস আর টপস পরে থাকলে তাকে মডেল বলা হয়। কোনো আইডি নাই তার। সবাই কিন্তু মডেল না। এখন তো ফেসবুকে সবাই ছবি দেয়। সবাই তো মডেল না। তাদের ট্যাগ লাগানো হয় যে, তারা মডেল। আমাদের মডেলদের একটা গ্রুপ আছে। আমরা চাই একটা এজেন্সি হোক। মডেলদের একটা আইডি থাকা দরকার, পরিচিতিমূলক কিছু থাকা দরকার। আমি খুব হতাশ হই যখন কোনো কিছু ঘটলে বলা হয়, এটা মডেল করেছে। এত বছর ধরে মডেলিং করি, আমি চিনিই না তাকে। ওদের জন্য আমাদের বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়।
মডেল এজেন্সি নিয়ে কি আপনারা কাজ করছেন? এটা কি খুব দ্রুতই হবে বলে মনে হয়?
সৈয়দ রুমা: হ্যাঁ, কাজ করছি। ইনশা আল্লাহ দ্রুত হবে। আমরা নিজেই সাফার করছি। প্রত্যেকেই তাদের ফ্যামিলি নিয়ে থাকি। কোনো কিছু বাইরে ঘটলে আমরা বিব্রত হই। মানুষ ফোন দেয়। তখন খুব খারাপ লাগে। যাদের নাম আসছে, ওরা তো মডেল না। আমি নিজেই ওদের চিনি না।
আমাদের মডেল ইন্ডাস্ট্রি খুব কম দিনের নয়। ৩০ বছর তো হবেই। টেলিভিশনেরও কিছু প্রাতিষ্ঠানিক বিষয় আছে। আপনাদের হলো না কেন?
সৈয়দ রুমা: আমরা অনেকেই অনেকবার উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু হয়ে ওঠে নাই। আগে কোনো র্যাম্প টিভিতে দেখানো হতো না। এখন আগের চেয়ে বেশি শো হচ্ছে। টিভিতে দেখানো হচ্ছে। আগে মানুষজন র্যাম্প মডেলদের চিনত না। এখন চেনে। আগে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার বিষয়গুলো হয়তো অতটা গুরুত্ব দিয়ে ভাবা হয়নি। কিন্তু এখন ভাবা হচ্ছে। এ জন্য আমরা কয়েকজন কাজ করে যাচ্ছি।
আপনি বিদেশে গেছেন, অনেক শো করেছেন। মডেলিং জগতের অনেক স্তরের মানুষের সঙ্গে আপনার পরিচয় হয়েছে। অন্য দেশের সঙ্গে আমাদের পার্থক্যটা আসলে কী?
সৈয়দ রুমা: পার্থক্যটা অনেক বেশি। ওরা অনেক বেশি ডেডিকেটেড। ওরা খুব টাইম মেইনটেইন করে। ভোর ৫/৬টায় মেকআপ শেষ করে, ৮টার মধ্যে সেটে থাকতে বললে ওরা তাই করে। আমাদের এদিকের প্রবলেম হলো, টাইম ডিলে করা। আমাদের দেশে ট্রাফিক অনেক বেশি থাকে। ওদের কাজ করার ধরনটা অন্যরকম। আমাদের দেশে এখন বড় বড় শো হচ্ছে, যা আগে হতো না। পাকিস্তানে একটা শো করেছি, সেখানে দেখলাম একেকজন মডেলের পেছনে একেকজন মেকআপ আর্টিস্ট। সবার কাপড় পরা থেকে শুরু করে সবকিছুর জন্য একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট থাকবেই। আগে আমাদের দেশে ছিল ১০ জন মেকআপ আর্টিস্ট, ২০ জন মডেল। এখন কিন্তু পরিবর্তন এসেছে। বাইরের দেশের ওরা আগে থেকে অনেক বেশি উন্নত। আর আমরা উন্নত হচ্ছি। আমাদের মডেলিং ইন্ডাস্ট্রি অনেক বেশি আগাতো যদি লকডাউন না হতো। আমরা ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে এত ভালো করে কাজ শুরু করেছি, মার্চের ২৬ তারিখের পর লকডাউন পড়ল। আমরা ২৩ তারিখ পর্যন্ত বলছিলাম, এবার বাংলাদেশ আসলেই কাজ করে ফাটায়া দিবে। লকডাউন হওয়াতে পিছিয়ে গেছি। কারও হাতে টাকা নেই, কাজ নেই। অনেক ডাউন হয়ে গেছে। এটা কাটিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগবে।
পাকিস্তান গেছেন আপনি। কেমন দেখলেন?
সৈয়দ রুমা: অনেক আগে গেছি তো। খুব একটা মনে নেই। বাংলাদেশ থেকে আমি, ইমি আপু, শাওন আপু গিয়েছিলাম। ঘোরাঘুরি করেছি। বিচেও গিয়েছি। তবে আমাদের দেশের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতটা অনেক বেশি সুন্দর। অনেক বড়। ওখানে যেমন উট চলে, অনেক বড় বড় পাহাড়। মানুষজনকেও ফ্রেন্ডলি মনে হয়েছে। পাকিস্তানের মানুষ খুব শপিং করতে ভালোবাসে। জিনিসপত্র কম দামে পাওয়া যায়। আমাদের দেশে যেমন অনেক দাম।
ঢাকা কি খুব এক্সপেনসিভ শহর?
সৈয়দ রুমা: হ্যাঁ। এক্সপেনসিভ শহর। রেস্টুরেন্টে খেতে বসলেও ১২০০-১৫০০ এর নিচে খেতে পারি না। ইন্ডিয়া, পাকিস্তান ও মালয়েশিয়ায় ৩০০ টাকার মধ্যে খাওয়া যায়। কলকাতায় ১৫০ টাকায় মানুষ বিরিয়ানি খেতে পারে। ফুল ফ্যামিলি ভালো রেস্টুরেন্টে খেতে পারে ২০০০ টাকার মধ্যে। আর এখানে ফুল ফ্যামিলি নিয়ে খেতে গেলে ৫০০০ টাকা লাগবেই। আমরা ফ্যামিলির সবাই মিলে একটা চায়নিজ রেস্টুরেন্টে বসছিলাম। ১২,০০০ টাকা বিল আসছে।
পুরান ঢাকা আর এর বাইরের ঢাকার মধ্যে পার্থক্য কী?
সৈয়দ রুমা: কোনো পার্থক্য নাই। একই। সবারই সংস্কৃতি আছে। তবে পুরান ঢাকার মানুষের মধ্যে একতা আছে। আমার বাবা যখন মারা যায়, তখন আমার বাসায় চাচা ছিল না। পুরুষ কেউ ছিল না। আমরা সবাই মহিলা। কাফন কোথায় পাওয়া যায়, গোসল কোথায় দেওয়া হয়, কবর কোথায় হবে—এসব আমরা জানি না। সব করেছে এলাকার মানুষ। কোনো মানুষ অসুস্থ হলে আশপাশের কাউকে ডাকা লাগে না। অন্য মানুষ নিয়ে চলে যায় হাসপাতালে। একতাটা অন্যরকম। পুরান ঢাকায় কোনো বাসায় রান্না হয়নি, কেউ না খেয়ে আছে—এমন হয় না কখনো। পুরান ঢাকার বাইরের ঢাকায় কেউ অসুস্থ হলেও, মারা গেলেও পাশের ফ্ল্যাটের কেউ জানে না। এ ক্ষেত্রে পুরান ঢাকার মানুষের মধ্যে একতা অনেক বেশি। ওরা বুক দিলে কখনো পিঠ দিবে না। আর একবার পিঠ দিলে বুক দিবে না।
র্যাম্পের বাইরে আর কী করছেন?
সৈয়দ রুমা: আমার একটা শপ আছে ‘আর বাই রুমা’ নামে। এখন অনলাইনে চলছে কাজ। এ ছাড়া ডেইলি সান পত্রিকায় আছি। ওখানে আছি ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে। দীর্ঘ ১০ বছর ধরেই আছি ওখানে। আমি আমার লাইফে ফ্যামিলির পর মিডিয়াকে সময় দিয়েছি। মরার আগ পর্যন্ত মিডিয়াকে ছাড়তে চাই না।
কেন আপনি সংবাদপত্রে গেলেন?
সৈয়দ রুমা: আমার একটা ফ্রেন্ড ছিল রুবেল নামে। ওদিকের একটা ফটোশুট করার কথা ছিল। তখন বসুন্ধরায় নতুন ছিল। উইকলি ওদের পেপারের সঙ্গে যে সাপ্লিমেন্ট বের হয়, ওইটার ফটোশুট আমি করাতাম। ফটোশুট করতে গিয়ে আমি সবকিছু করছিলাম। তখন ওরা আমাকে বলল, তুমি যেহেতু সব কর, মডেলরা তোমার কথা শোনে, তাহলে তুমি জয়েন কর। তখন আমি জয়েন করতে চাইনি। ওরা আমাকে বলল, ‘তোমাকে অফিস করতে হবে না। মাসে চারটা শুট। তুমি একদিনে কর আর চার দিনে কর সেটা তোমার ওপর নির্ভর করছে। তারপর আমি শুরু করি। খুব ভালোভাবে কাজ হচ্ছিল। ম্যাগাজিনটা বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সব বিক্রি হয়ে যায়।’
দেখা যায়, যারা মডেলিং করেন তাঁরা এক সময় সিনেমায় যান, টেলিভিশন মিডিয়ায় যান। আপনি গেছেন সংবাদপত্রে। টেলিভিশনে কি কাজ করেছেন?
সৈয়দ রুমা: কয়েকটা নাটকে কাজ করেছি। ১০/১২টার মতো হবে। র্যাম্পে ‘কাট’ শব্দটা থাকে না। হাঁটছি তো হাঁটছি। বাধা দেওয়ার কেউ নাই। কিন্তু নাটকে অভিনয়ের ক্ষেত্রে ‘কাট’ শব্দটা থাকে। কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে যদি ‘কাট’ শব্দটা থাকে, তাহলে কিন্তু কথা বলা যায় না। ‘কাট’ শব্দটা আমার পছন্দ না।
কিন্তু ফিল্মে তো আইটেম সং করলেন।
সৈয়দ রুমা: কারণ, ওখানে কাট শব্দটা থাকে না। কথা বলারও সুযোগ ছিল না। যেহেতু আমার উচ্চারণের সমস্যা আছে বলে আমি মনে করি, আমার কাছে মনে হয়, আমি উচ্চারণটা খুব বাজেভাবে করি। এই বিষয়ে আমার কমতি আছে। আর আইটেম সং-এ নাচলে কথা বলতে হয় না। জাস্ট নাচতে হয়।
এক্সপেরিয়েন্স কেমন?
সৈয়দ রুমা: খুব ভালো। আমি নাচ-গান পছন্দ করি। খুব ভালো লেগেছে।
আমরা আসলে বাংলা সিনেমাটাও কম দেখি।
সৈয়দ রুমা: আমার কাছে মনে হয় বাংলা সিনেমার প্রবলেম হচ্ছে টেকনিক্যাল। আমার আইটেম সং-এর সময় আমি অনেক বাইন্ডিংস দিয়েছি। এভাবে না ওভাবে। এডিটিংয়ের সময় আমি দেখব। অনেক সুন্দর সুন্দর বাংলা সিনেমা কিন্তু আছে। আমাদের মাথায় চিন্তা-ভাবনা একটা হয়ে গেছে যে, রিকশাওয়ালাদের জন্য সিনেমা বানাচ্ছি। এভাবে বিষয়টা হেয় হয়ে গেছে। তাই আমরা বাংলা সিনেমা দেখিই না। আমার মনে হয়, সবার পয়েন্ট অব ভিউ যদি এক রাখা হয়, তাহলে বিষয়টা ঠিক হয়ে যাবে।
এখন তো সিনেমা অনেক ভালো হচ্ছে। অনেক সিনেমা আন্তর্জাতিক পুরস্কার পাচ্ছে। সিনেমার অফার পেলে করবেন কি?
সৈয়দ রুমা: যদি মুভি আমার টাইপ হয়, তাহলে সত্যিই আমি করব। যদি আর্ট মুভি হয়, তাহলে করব। এখন তো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে মুভি হচ্ছে। যদি ওরকম কিছু হয়, তাহলে আমি করব। ভালো স্ক্রিপ্ট পেলে অবশ্যই করব।
আপনার কি মনে হচ্ছে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি আগাচ্ছে?
সৈয়দ রুমা: আগাচ্ছে। অনেক সিনেপ্লেক্স হচ্ছে। মানুষ না গেলে এত সিনেপ্লেক্স হতো না। আগে হলের অবস্থাও খুব খারাপ ছিল। এখন হলগুলো অনেক সুন্দর হচ্ছে। ফ্যামিলি নিয়ে যাওয়ার মতো পরিবেশ হচ্ছে। মুভি ভালো হচ্ছে। আমাদের চিন্তাধারা পরিবর্তন আনতে হবে। নতুন নতুন অনেক ডিরেক্টর আসছে। ওরা চায় ইন্ডাস্ট্রিকে ওঠাতে। টাকা কামানো ওদের মূল উদ্দেশ্য নয়। আমাদের উদ্দেশ্য ইন্ডাস্ট্রিকে ওঠানো। ইন্ডাস্ট্রি উঠলে টাকা এমনিতেই আসবে। এখন এফডিসি নতুন হচ্ছে। আগে কেমন ছিল। আর এখন কত নতুন হচ্ছে। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির মানুষদের মধ্যে ইউনিটি হচ্ছে।
তার মানে আপনি খুব আশাবাদী?
সৈয়দ রুমা: হ্যাঁ, আমি খুব আশাবাদী। যদি আমার সুযোগ থাকত, আমি অর্ডার দিলে যদি সবাই মানত, তাহলে আমি মিডিয়াকে অনেক দূর নিয়ে যেতাম। নাটক, সিনেমা, র্যাম্প যাই হোক, আমি সব কটাকে চেঞ্জ করতাম। একটা শর্ত দিয়ে দিতাম এই টাইপ একটা মুভি প্রতি সপ্তাহে লাগবে। শুক্রবারে যেন হাউসফুল থাকে। যেন ফ্যামিলি নিয়ে সবাই দেখে। স্টার জলসা, জি নিউজ—ওসব কেন দেখবে মানুষ! তাহলে বাংলাদেশিরা কী করল? এখানে কি কম ডিরেক্টর, প্রডিউসার আছে? না তো। উদ্যোগ নেওয়ার মানুষ কম।
ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে আপনার আশা অনেক। র্যাম্প ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে কি আপনি একইভাবে আশাবাদী?
সৈয়দ রুমা: আমি জানি এই জিনিসটা হয়ে যাবে। আমি নিজেই যদি চার-পাঁচজনের সঙ্গে কথা বলি, তাহলে হয়তো হয়ে যাবে। এটা আমরা করব। যেহেতু আমরা উদ্যোগ নিয়েছি—করব।
আপনার র্যাম্প জীবনের স্মরণীয় ঘটনা কী?
সৈয়দ রুমা: ওরকম আকর্ষণীয় কিছু ঘটেনি। তবে আমার কাছে প্রতিটা শো, হোক সেটা বড় কিংবা ছোট ব্র্যান্ডের—সবগুলোই স্মৃতিময়। আমি মাইন্ড ওরকম সেট করেই রেখেছিলাম। প্রতিটা শো আমি যখন সফল করতে পারি—আমার কাছে ওইটাই স্মৃতি।
আপনাকে ধন্যবাদ।
সৈয়দ রুমা: ওয়েলকাম।

মডেলিং শুরুর প্রথম দিকের গল্প শুনতে চাই?
সৈয়দ রুমা: ২০০২ থেকে মডেলিং শুরু করি। আমার এক কাজিন বাইরে থাকে। সে মডেলিং করত। আমার মডেলিংয়ের ব্যাপারে কোনো আগ্রহ ছিল না। ভেবেছিলাম হয়তো-বা পুলিশ হব, ডক্টর হব। আমি ছেলেদের মতোই খেলাধুলা করতাম, হাঁটাচলা করতাম। আমার বড় বোনের মডেলিংয়ে খুব আগ্রহ ছিল। আমার কাজিন একদিন এসে বলল, ‘তোমরা মডেলিং করবা?’ তখন আমার বড়বোন বলল, ‘হ্যাঁ, করব।’
সে সময় পাবলিক লাইব্রেরিতে, জাদুঘরে, চীনমৈত্রীতে শো হতো। ফার্স্ট শো করলাম। আর কিছু রাশিয়ান কালচারাল সেন্টারে শো ছিল। প্রথম দিকে শো-এর সময় খুব প্যারা লাগত। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত একটা শো-এর জন্য বসে থাকা! আমার জন্য কমফোর্টেবল ছিল না। তারপর, ধীরে ধীরে আগ্রহ বেড়ে গেল। আমাকে আমার বোন পুশ করেছে। আমার বোন তার পরীক্ষার জন্য মডেলিং অফ করে দিছে। আমি সব সময় বলতাম—এটা আমার শখ। তবে আমি কখন যে একে পেশা হিসেবে নিয়েছি, তা হয়তো নিজেও জানি না। ২০০৫-এ যখন নেসক্যাফে, সানসিল্কের বিলবোর্ড করি, তখন আগ্রহটা বাড়ে। আমি বাংলাদেশি মডেল হয়ে ইন্টারন্যাশনাল কাজ করেছি। কাজ করতে করতে ধীরে ধীরে আগ্রহ বাড়ে। মিডিয়ার শুরু কাজিনের মাধ্যমে। গ্রুমিংও তাই। এখন তো অনেক গ্রুমিং স্কুল আছে। আমার নিজেরও আছে। আমি দুই জায়গায় ক্লাসও নিই। ওই সময়ে এটা ছিল না। আমরা এক মাস রিহার্সাল করতাম। এক মাস ধরে হাঁটা শেখানো হতো। এমনও হয়েছে, শো-এর আগের দিন শো বাতিল হয়ে গেছে।
কেন?
সৈয়দ রুমা: অনেক কারণ ছিল। আর তখন কী কী কারণে শো বন্ধ হয়, তা আমরা বুঝিনি। ছোট ছিলাম অনেক। এখন কারণ জিজ্ঞেস করতে পারি। হয়তো হলের কোনো সমস্যা, স্পনসরের সমস্যা—এসব।
তার মানে ২০০২ থেকে শুরু...
সৈয়দ রুমা: হ্যাঁ, ২০০২ থেকে বেসিক শুরু। পেশা হিসেবে নিয়েছি ২০০৫ সাল থেকে। আমার বেসিক র্যাম্প।
কোন কোন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করেছেন?
সৈয়দ রুমা: মোটামুটি সব ব্র্যান্ডের সঙ্গে কাজ করেছি। আড়ং, এক্সটেসি, ট্রেন্ডস, অনেকগুলোতে। টিভিসি অনেকগুলো করেছি। শো তো অসংখ্য। মুভিতে দুইটা আইটেম সং করেছি। ‘গেম’ মুভিতে আইটেম সং করেছি, আর ‘ইউ টার্ন’ মুভিতে আইটেম সং করেছি। আর এখন আমি আমার শপ ‘আর বাই রুমা’ নিয়ে ব্যস্ত। কোরিওগ্রাফি নিয়ে ব্যস্ত।
এখন তো র্যাম্পিং করছেন না?
সৈয়দ রুমা: মাঝে মাঝে করা হয়। তবে সব সময় শো করাই।

কোরিওগ্রাফার হিসেবে আপনি কত দিন কাজ করছেন?
সৈয়দ রুমা: ৬-৭ বছরের ওপরে।
আমি কয়েকজন মডেলের সঙ্গে কথা বলেছি। একটা পর্যায়ের পর সবাই কোরিওগ্রাফির দিকে চলে যান। সবাই একটা পর্যায়ে ইনস্টিটিউট খুলছেন। ২০০২ এবং ২০২১ অনেকটা সময়। কী মনে হয়, ইন্ডাস্ট্রি কি পজিটিভ দিকে যাচ্ছে, নাকি আগের মতোই থেকে যাচ্ছে?
সৈয়দ রুমা: প্রশ্নটা খুব ক্রিটিক্যাল। আমরা যখন কাজ শুরু করেছি, আমাদের মধ্যে প্যাশন ছিল। কাজের প্রতি সম্মান ছিল। নতুন জেনারেশনের মধ্যে এই জিনিসগুলোর অভাব। যতই গ্রুমিং হোক, আমার মনে হয় কমিটমেন্টের, সেন্সের অভাব। কিছু একটা অভাব আছেই। আমি নিজেও ক্লাসে বলি—তুমি মানুষকে সম্মান দিলে মানুষ তোমাকে সম্মান দেবে।
আমি আমার জীবনে অনেক ফ্যামিলি প্রোগ্রামে যাইনি। আমি আমার মামার বিয়েতে যাইনি। জাপানে শো করতে গিয়েছিলাম। ফ্যামিলির কাজিনদের অনেক প্রোগ্রামেই আমি অ্যাটেন্ড করতে পারিনি। অনেক মজা করতে পারিনি, যা আমার ফ্যামিলি করে। আমাদের ফ্যামিলির মানুষেরা বাসার অনুষ্ঠানেও খুব মজা করে। কিন্তু সেখানে আমি থাকতে পারি না। আমার নিজের বোনের এনগেজমেন্টের সময় আমি থাকতে পারিনি। সারা রাত আমি কাজ করেছি। কিন্তু ভোরে উঠে শো করতে যেতে হয়েছে। তারপরও কাজটাকে আমি অগুরুত্বপূর্ণ ভাবিনি। আমার বাবা নেই। অনেক দায়িত্ব থাকে আসলে। অনুষ্ঠানের মিষ্টিটা সবার বাসায় পাঠানোর জন্যও লোক লাগে। আমার মা, বোন—ওরা কতটাই-বা করবে। আমি থাকলে হেল্প হবে। সেই জিনিসগুলো আমি করতে পারিনি।
এখনকার ছেলেমেয়েরা শো-এর আগের দিন বলে দেয় যে, আমার একটা কাজ আছে বা অন্য কাজ আছে। আমার সময়ে একটা ছোট শো ছিল। এই শো-এর বুকিং আগে থেকেই দেওয়া ছিল। ওই সময়ে আড়ং ফ্যাশন উইকও চলছিল। কিন্তু আমরা ৮-১০ জন শুধুমাত্র কমিটমেন্টের কারণে আড়ংয়ের শো বাদ দিয়ে ছোট শোটাই করেছি। এই জিনিসটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
এখন সেটা নেই বলছেন?
সৈয়দ রুমা: এখন মানুষ খুব সহজেই সবকিছু পেয়ে যাচ্ছে। আমাদের সময় আমরা একটা শোয়ের জন্য এক মাস গ্রুমিং করতাম। এখন অল্প সময় গ্রুমিং-রিহার্সাল করেই ওরা শো করে ফেলছে। আগে বিলবোর্ড করব, ম্যাগাজিনের কভার করব—এটা স্বপ্ন ছিল। আগে যেকোনো পত্রিকায় সেলিব্রিটিরা কাজ করত। আর এখন সবাই করতে পারে। সহজভাবে সব পেয়ে যাচ্ছে। আর তাই এমন প্রবলেম হচ্ছে।
আপনি যাদের গ্রুমিং করাচ্ছেন, আপনার কাছে যারা আসছে, তাঁদের ক্ষেত্রেও কি আপনি এটা দেখছেন?
সৈয়দ রুমা: আমার গ্রুমিং হলো দু-তিন মাস। তারপর আমি তাদের ছেড়ে দিই। আমার সামনে হয়তো তারা নরমাল থাকবে। বাইরে গিয়ে তারা এমন করতে পারে। কারণ, আমি ফটোগ্রাফি করতে গিয়ে, অন্য কাজ করতে গিয়ে এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হই। একটা কাজ যখন হয়, তখন তার সঙ্গে পুরো একটা টিম থাকে। একজন যদি কমিটমেন্ট ব্রেক করে, তখন সবাইকে ঝামেলায় পড়তে হয়। পুরো শোটা ধ্বংস হয়ে যায়। আল্লাহর রহমতে বাংলাদেশের বড় বড় শোগুলা আমি করি। বড় শোগুলোতে ৬০ থেকে ৭০ জন মডেল নিয়ে কাজ করি। একেকটা সিকোয়েন্সে মডেল থাকে ২০/২২ জন। র্যাম্প থাকে অনেক বড়। ১০০, ১৫০ ফুট—এ রকম। আমার এমনও হয়েছে, শোয়ের দিন ১০৩ ডিগ্রি জ্বর। বমি হচ্ছে। তাও আমি মেকআপ করেছি, শো করেছি। ধরুন, কারও পারলার ওপেনিং। আমি তো হুটহাট শো বাতিল করতে পারি না। তাঁকে বিপদে ফেলতে পারি না। এমন প্যাশন যদি থাকে, তাহলে মিডিয়া আগাবে। আমাদের দেশ থেকে অনেক মডেল দেশের বাইরে গিয়ে কাজ করছে। আমি নিজেও বাইরে অনেক শো করে এসেছি। অনেক ভালো ভালো ডিজাইনার বাড়ছে দেশে। লিংক বাড়ছে। যদি আমরা অ্যাকটিভ থাকি, আর যদি মডেলিং এজেন্সি থাকে, তাহলে আগাবেই। আমার অবজেকশন একটা আছে। একটা মেয়ে জিনস আর টপস পরে থাকলে তাকে মডেল বলা হয়। কোনো আইডি নাই তার। সবাই কিন্তু মডেল না। এখন তো ফেসবুকে সবাই ছবি দেয়। সবাই তো মডেল না। তাদের ট্যাগ লাগানো হয় যে, তারা মডেল। আমাদের মডেলদের একটা গ্রুপ আছে। আমরা চাই একটা এজেন্সি হোক। মডেলদের একটা আইডি থাকা দরকার, পরিচিতিমূলক কিছু থাকা দরকার। আমি খুব হতাশ হই যখন কোনো কিছু ঘটলে বলা হয়, এটা মডেল করেছে। এত বছর ধরে মডেলিং করি, আমি চিনিই না তাকে। ওদের জন্য আমাদের বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়।
মডেল এজেন্সি নিয়ে কি আপনারা কাজ করছেন? এটা কি খুব দ্রুতই হবে বলে মনে হয়?
সৈয়দ রুমা: হ্যাঁ, কাজ করছি। ইনশা আল্লাহ দ্রুত হবে। আমরা নিজেই সাফার করছি। প্রত্যেকেই তাদের ফ্যামিলি নিয়ে থাকি। কোনো কিছু বাইরে ঘটলে আমরা বিব্রত হই। মানুষ ফোন দেয়। তখন খুব খারাপ লাগে। যাদের নাম আসছে, ওরা তো মডেল না। আমি নিজেই ওদের চিনি না।
আমাদের মডেল ইন্ডাস্ট্রি খুব কম দিনের নয়। ৩০ বছর তো হবেই। টেলিভিশনেরও কিছু প্রাতিষ্ঠানিক বিষয় আছে। আপনাদের হলো না কেন?
সৈয়দ রুমা: আমরা অনেকেই অনেকবার উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু হয়ে ওঠে নাই। আগে কোনো র্যাম্প টিভিতে দেখানো হতো না। এখন আগের চেয়ে বেশি শো হচ্ছে। টিভিতে দেখানো হচ্ছে। আগে মানুষজন র্যাম্প মডেলদের চিনত না। এখন চেনে। আগে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার বিষয়গুলো হয়তো অতটা গুরুত্ব দিয়ে ভাবা হয়নি। কিন্তু এখন ভাবা হচ্ছে। এ জন্য আমরা কয়েকজন কাজ করে যাচ্ছি।
আপনি বিদেশে গেছেন, অনেক শো করেছেন। মডেলিং জগতের অনেক স্তরের মানুষের সঙ্গে আপনার পরিচয় হয়েছে। অন্য দেশের সঙ্গে আমাদের পার্থক্যটা আসলে কী?
সৈয়দ রুমা: পার্থক্যটা অনেক বেশি। ওরা অনেক বেশি ডেডিকেটেড। ওরা খুব টাইম মেইনটেইন করে। ভোর ৫/৬টায় মেকআপ শেষ করে, ৮টার মধ্যে সেটে থাকতে বললে ওরা তাই করে। আমাদের এদিকের প্রবলেম হলো, টাইম ডিলে করা। আমাদের দেশে ট্রাফিক অনেক বেশি থাকে। ওদের কাজ করার ধরনটা অন্যরকম। আমাদের দেশে এখন বড় বড় শো হচ্ছে, যা আগে হতো না। পাকিস্তানে একটা শো করেছি, সেখানে দেখলাম একেকজন মডেলের পেছনে একেকজন মেকআপ আর্টিস্ট। সবার কাপড় পরা থেকে শুরু করে সবকিছুর জন্য একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট থাকবেই। আগে আমাদের দেশে ছিল ১০ জন মেকআপ আর্টিস্ট, ২০ জন মডেল। এখন কিন্তু পরিবর্তন এসেছে। বাইরের দেশের ওরা আগে থেকে অনেক বেশি উন্নত। আর আমরা উন্নত হচ্ছি। আমাদের মডেলিং ইন্ডাস্ট্রি অনেক বেশি আগাতো যদি লকডাউন না হতো। আমরা ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে এত ভালো করে কাজ শুরু করেছি, মার্চের ২৬ তারিখের পর লকডাউন পড়ল। আমরা ২৩ তারিখ পর্যন্ত বলছিলাম, এবার বাংলাদেশ আসলেই কাজ করে ফাটায়া দিবে। লকডাউন হওয়াতে পিছিয়ে গেছি। কারও হাতে টাকা নেই, কাজ নেই। অনেক ডাউন হয়ে গেছে। এটা কাটিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগবে।
পাকিস্তান গেছেন আপনি। কেমন দেখলেন?
সৈয়দ রুমা: অনেক আগে গেছি তো। খুব একটা মনে নেই। বাংলাদেশ থেকে আমি, ইমি আপু, শাওন আপু গিয়েছিলাম। ঘোরাঘুরি করেছি। বিচেও গিয়েছি। তবে আমাদের দেশের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতটা অনেক বেশি সুন্দর। অনেক বড়। ওখানে যেমন উট চলে, অনেক বড় বড় পাহাড়। মানুষজনকেও ফ্রেন্ডলি মনে হয়েছে। পাকিস্তানের মানুষ খুব শপিং করতে ভালোবাসে। জিনিসপত্র কম দামে পাওয়া যায়। আমাদের দেশে যেমন অনেক দাম।
ঢাকা কি খুব এক্সপেনসিভ শহর?
সৈয়দ রুমা: হ্যাঁ। এক্সপেনসিভ শহর। রেস্টুরেন্টে খেতে বসলেও ১২০০-১৫০০ এর নিচে খেতে পারি না। ইন্ডিয়া, পাকিস্তান ও মালয়েশিয়ায় ৩০০ টাকার মধ্যে খাওয়া যায়। কলকাতায় ১৫০ টাকায় মানুষ বিরিয়ানি খেতে পারে। ফুল ফ্যামিলি ভালো রেস্টুরেন্টে খেতে পারে ২০০০ টাকার মধ্যে। আর এখানে ফুল ফ্যামিলি নিয়ে খেতে গেলে ৫০০০ টাকা লাগবেই। আমরা ফ্যামিলির সবাই মিলে একটা চায়নিজ রেস্টুরেন্টে বসছিলাম। ১২,০০০ টাকা বিল আসছে।
পুরান ঢাকা আর এর বাইরের ঢাকার মধ্যে পার্থক্য কী?
সৈয়দ রুমা: কোনো পার্থক্য নাই। একই। সবারই সংস্কৃতি আছে। তবে পুরান ঢাকার মানুষের মধ্যে একতা আছে। আমার বাবা যখন মারা যায়, তখন আমার বাসায় চাচা ছিল না। পুরুষ কেউ ছিল না। আমরা সবাই মহিলা। কাফন কোথায় পাওয়া যায়, গোসল কোথায় দেওয়া হয়, কবর কোথায় হবে—এসব আমরা জানি না। সব করেছে এলাকার মানুষ। কোনো মানুষ অসুস্থ হলে আশপাশের কাউকে ডাকা লাগে না। অন্য মানুষ নিয়ে চলে যায় হাসপাতালে। একতাটা অন্যরকম। পুরান ঢাকায় কোনো বাসায় রান্না হয়নি, কেউ না খেয়ে আছে—এমন হয় না কখনো। পুরান ঢাকার বাইরের ঢাকায় কেউ অসুস্থ হলেও, মারা গেলেও পাশের ফ্ল্যাটের কেউ জানে না। এ ক্ষেত্রে পুরান ঢাকার মানুষের মধ্যে একতা অনেক বেশি। ওরা বুক দিলে কখনো পিঠ দিবে না। আর একবার পিঠ দিলে বুক দিবে না।
র্যাম্পের বাইরে আর কী করছেন?
সৈয়দ রুমা: আমার একটা শপ আছে ‘আর বাই রুমা’ নামে। এখন অনলাইনে চলছে কাজ। এ ছাড়া ডেইলি সান পত্রিকায় আছি। ওখানে আছি ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে। দীর্ঘ ১০ বছর ধরেই আছি ওখানে। আমি আমার লাইফে ফ্যামিলির পর মিডিয়াকে সময় দিয়েছি। মরার আগ পর্যন্ত মিডিয়াকে ছাড়তে চাই না।
কেন আপনি সংবাদপত্রে গেলেন?
সৈয়দ রুমা: আমার একটা ফ্রেন্ড ছিল রুবেল নামে। ওদিকের একটা ফটোশুট করার কথা ছিল। তখন বসুন্ধরায় নতুন ছিল। উইকলি ওদের পেপারের সঙ্গে যে সাপ্লিমেন্ট বের হয়, ওইটার ফটোশুট আমি করাতাম। ফটোশুট করতে গিয়ে আমি সবকিছু করছিলাম। তখন ওরা আমাকে বলল, তুমি যেহেতু সব কর, মডেলরা তোমার কথা শোনে, তাহলে তুমি জয়েন কর। তখন আমি জয়েন করতে চাইনি। ওরা আমাকে বলল, ‘তোমাকে অফিস করতে হবে না। মাসে চারটা শুট। তুমি একদিনে কর আর চার দিনে কর সেটা তোমার ওপর নির্ভর করছে। তারপর আমি শুরু করি। খুব ভালোভাবে কাজ হচ্ছিল। ম্যাগাজিনটা বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সব বিক্রি হয়ে যায়।’
দেখা যায়, যারা মডেলিং করেন তাঁরা এক সময় সিনেমায় যান, টেলিভিশন মিডিয়ায় যান। আপনি গেছেন সংবাদপত্রে। টেলিভিশনে কি কাজ করেছেন?
সৈয়দ রুমা: কয়েকটা নাটকে কাজ করেছি। ১০/১২টার মতো হবে। র্যাম্পে ‘কাট’ শব্দটা থাকে না। হাঁটছি তো হাঁটছি। বাধা দেওয়ার কেউ নাই। কিন্তু নাটকে অভিনয়ের ক্ষেত্রে ‘কাট’ শব্দটা থাকে। কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে যদি ‘কাট’ শব্দটা থাকে, তাহলে কিন্তু কথা বলা যায় না। ‘কাট’ শব্দটা আমার পছন্দ না।
কিন্তু ফিল্মে তো আইটেম সং করলেন।
সৈয়দ রুমা: কারণ, ওখানে কাট শব্দটা থাকে না। কথা বলারও সুযোগ ছিল না। যেহেতু আমার উচ্চারণের সমস্যা আছে বলে আমি মনে করি, আমার কাছে মনে হয়, আমি উচ্চারণটা খুব বাজেভাবে করি। এই বিষয়ে আমার কমতি আছে। আর আইটেম সং-এ নাচলে কথা বলতে হয় না। জাস্ট নাচতে হয়।
এক্সপেরিয়েন্স কেমন?
সৈয়দ রুমা: খুব ভালো। আমি নাচ-গান পছন্দ করি। খুব ভালো লেগেছে।
আমরা আসলে বাংলা সিনেমাটাও কম দেখি।
সৈয়দ রুমা: আমার কাছে মনে হয় বাংলা সিনেমার প্রবলেম হচ্ছে টেকনিক্যাল। আমার আইটেম সং-এর সময় আমি অনেক বাইন্ডিংস দিয়েছি। এভাবে না ওভাবে। এডিটিংয়ের সময় আমি দেখব। অনেক সুন্দর সুন্দর বাংলা সিনেমা কিন্তু আছে। আমাদের মাথায় চিন্তা-ভাবনা একটা হয়ে গেছে যে, রিকশাওয়ালাদের জন্য সিনেমা বানাচ্ছি। এভাবে বিষয়টা হেয় হয়ে গেছে। তাই আমরা বাংলা সিনেমা দেখিই না। আমার মনে হয়, সবার পয়েন্ট অব ভিউ যদি এক রাখা হয়, তাহলে বিষয়টা ঠিক হয়ে যাবে।
এখন তো সিনেমা অনেক ভালো হচ্ছে। অনেক সিনেমা আন্তর্জাতিক পুরস্কার পাচ্ছে। সিনেমার অফার পেলে করবেন কি?
সৈয়দ রুমা: যদি মুভি আমার টাইপ হয়, তাহলে সত্যিই আমি করব। যদি আর্ট মুভি হয়, তাহলে করব। এখন তো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে মুভি হচ্ছে। যদি ওরকম কিছু হয়, তাহলে আমি করব। ভালো স্ক্রিপ্ট পেলে অবশ্যই করব।
আপনার কি মনে হচ্ছে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি আগাচ্ছে?
সৈয়দ রুমা: আগাচ্ছে। অনেক সিনেপ্লেক্স হচ্ছে। মানুষ না গেলে এত সিনেপ্লেক্স হতো না। আগে হলের অবস্থাও খুব খারাপ ছিল। এখন হলগুলো অনেক সুন্দর হচ্ছে। ফ্যামিলি নিয়ে যাওয়ার মতো পরিবেশ হচ্ছে। মুভি ভালো হচ্ছে। আমাদের চিন্তাধারা পরিবর্তন আনতে হবে। নতুন নতুন অনেক ডিরেক্টর আসছে। ওরা চায় ইন্ডাস্ট্রিকে ওঠাতে। টাকা কামানো ওদের মূল উদ্দেশ্য নয়। আমাদের উদ্দেশ্য ইন্ডাস্ট্রিকে ওঠানো। ইন্ডাস্ট্রি উঠলে টাকা এমনিতেই আসবে। এখন এফডিসি নতুন হচ্ছে। আগে কেমন ছিল। আর এখন কত নতুন হচ্ছে। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির মানুষদের মধ্যে ইউনিটি হচ্ছে।
তার মানে আপনি খুব আশাবাদী?
সৈয়দ রুমা: হ্যাঁ, আমি খুব আশাবাদী। যদি আমার সুযোগ থাকত, আমি অর্ডার দিলে যদি সবাই মানত, তাহলে আমি মিডিয়াকে অনেক দূর নিয়ে যেতাম। নাটক, সিনেমা, র্যাম্প যাই হোক, আমি সব কটাকে চেঞ্জ করতাম। একটা শর্ত দিয়ে দিতাম এই টাইপ একটা মুভি প্রতি সপ্তাহে লাগবে। শুক্রবারে যেন হাউসফুল থাকে। যেন ফ্যামিলি নিয়ে সবাই দেখে। স্টার জলসা, জি নিউজ—ওসব কেন দেখবে মানুষ! তাহলে বাংলাদেশিরা কী করল? এখানে কি কম ডিরেক্টর, প্রডিউসার আছে? না তো। উদ্যোগ নেওয়ার মানুষ কম।
ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে আপনার আশা অনেক। র্যাম্প ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে কি আপনি একইভাবে আশাবাদী?
সৈয়দ রুমা: আমি জানি এই জিনিসটা হয়ে যাবে। আমি নিজেই যদি চার-পাঁচজনের সঙ্গে কথা বলি, তাহলে হয়তো হয়ে যাবে। এটা আমরা করব। যেহেতু আমরা উদ্যোগ নিয়েছি—করব।
আপনার র্যাম্প জীবনের স্মরণীয় ঘটনা কী?
সৈয়দ রুমা: ওরকম আকর্ষণীয় কিছু ঘটেনি। তবে আমার কাছে প্রতিটা শো, হোক সেটা বড় কিংবা ছোট ব্র্যান্ডের—সবগুলোই স্মৃতিময়। আমি মাইন্ড ওরকম সেট করেই রেখেছিলাম। প্রতিটা শো আমি যখন সফল করতে পারি—আমার কাছে ওইটাই স্মৃতি।
আপনাকে ধন্যবাদ।
সৈয়দ রুমা: ওয়েলকাম।
রজত কান্তি রায়

মডেলিং শুরুর প্রথম দিকের গল্প শুনতে চাই?
সৈয়দ রুমা: ২০০২ থেকে মডেলিং শুরু করি। আমার এক কাজিন বাইরে থাকে। সে মডেলিং করত। আমার মডেলিংয়ের ব্যাপারে কোনো আগ্রহ ছিল না। ভেবেছিলাম হয়তো-বা পুলিশ হব, ডক্টর হব। আমি ছেলেদের মতোই খেলাধুলা করতাম, হাঁটাচলা করতাম। আমার বড় বোনের মডেলিংয়ে খুব আগ্রহ ছিল। আমার কাজিন একদিন এসে বলল, ‘তোমরা মডেলিং করবা?’ তখন আমার বড়বোন বলল, ‘হ্যাঁ, করব।’
সে সময় পাবলিক লাইব্রেরিতে, জাদুঘরে, চীনমৈত্রীতে শো হতো। ফার্স্ট শো করলাম। আর কিছু রাশিয়ান কালচারাল সেন্টারে শো ছিল। প্রথম দিকে শো-এর সময় খুব প্যারা লাগত। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত একটা শো-এর জন্য বসে থাকা! আমার জন্য কমফোর্টেবল ছিল না। তারপর, ধীরে ধীরে আগ্রহ বেড়ে গেল। আমাকে আমার বোন পুশ করেছে। আমার বোন তার পরীক্ষার জন্য মডেলিং অফ করে দিছে। আমি সব সময় বলতাম—এটা আমার শখ। তবে আমি কখন যে একে পেশা হিসেবে নিয়েছি, তা হয়তো নিজেও জানি না। ২০০৫-এ যখন নেসক্যাফে, সানসিল্কের বিলবোর্ড করি, তখন আগ্রহটা বাড়ে। আমি বাংলাদেশি মডেল হয়ে ইন্টারন্যাশনাল কাজ করেছি। কাজ করতে করতে ধীরে ধীরে আগ্রহ বাড়ে। মিডিয়ার শুরু কাজিনের মাধ্যমে। গ্রুমিংও তাই। এখন তো অনেক গ্রুমিং স্কুল আছে। আমার নিজেরও আছে। আমি দুই জায়গায় ক্লাসও নিই। ওই সময়ে এটা ছিল না। আমরা এক মাস রিহার্সাল করতাম। এক মাস ধরে হাঁটা শেখানো হতো। এমনও হয়েছে, শো-এর আগের দিন শো বাতিল হয়ে গেছে।
কেন?
সৈয়দ রুমা: অনেক কারণ ছিল। আর তখন কী কী কারণে শো বন্ধ হয়, তা আমরা বুঝিনি। ছোট ছিলাম অনেক। এখন কারণ জিজ্ঞেস করতে পারি। হয়তো হলের কোনো সমস্যা, স্পনসরের সমস্যা—এসব।
তার মানে ২০০২ থেকে শুরু...
সৈয়দ রুমা: হ্যাঁ, ২০০২ থেকে বেসিক শুরু। পেশা হিসেবে নিয়েছি ২০০৫ সাল থেকে। আমার বেসিক র্যাম্প।
কোন কোন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করেছেন?
সৈয়দ রুমা: মোটামুটি সব ব্র্যান্ডের সঙ্গে কাজ করেছি। আড়ং, এক্সটেসি, ট্রেন্ডস, অনেকগুলোতে। টিভিসি অনেকগুলো করেছি। শো তো অসংখ্য। মুভিতে দুইটা আইটেম সং করেছি। ‘গেম’ মুভিতে আইটেম সং করেছি, আর ‘ইউ টার্ন’ মুভিতে আইটেম সং করেছি। আর এখন আমি আমার শপ ‘আর বাই রুমা’ নিয়ে ব্যস্ত। কোরিওগ্রাফি নিয়ে ব্যস্ত।
এখন তো র্যাম্পিং করছেন না?
সৈয়দ রুমা: মাঝে মাঝে করা হয়। তবে সব সময় শো করাই।

কোরিওগ্রাফার হিসেবে আপনি কত দিন কাজ করছেন?
সৈয়দ রুমা: ৬-৭ বছরের ওপরে।
আমি কয়েকজন মডেলের সঙ্গে কথা বলেছি। একটা পর্যায়ের পর সবাই কোরিওগ্রাফির দিকে চলে যান। সবাই একটা পর্যায়ে ইনস্টিটিউট খুলছেন। ২০০২ এবং ২০২১ অনেকটা সময়। কী মনে হয়, ইন্ডাস্ট্রি কি পজিটিভ দিকে যাচ্ছে, নাকি আগের মতোই থেকে যাচ্ছে?
সৈয়দ রুমা: প্রশ্নটা খুব ক্রিটিক্যাল। আমরা যখন কাজ শুরু করেছি, আমাদের মধ্যে প্যাশন ছিল। কাজের প্রতি সম্মান ছিল। নতুন জেনারেশনের মধ্যে এই জিনিসগুলোর অভাব। যতই গ্রুমিং হোক, আমার মনে হয় কমিটমেন্টের, সেন্সের অভাব। কিছু একটা অভাব আছেই। আমি নিজেও ক্লাসে বলি—তুমি মানুষকে সম্মান দিলে মানুষ তোমাকে সম্মান দেবে।
আমি আমার জীবনে অনেক ফ্যামিলি প্রোগ্রামে যাইনি। আমি আমার মামার বিয়েতে যাইনি। জাপানে শো করতে গিয়েছিলাম। ফ্যামিলির কাজিনদের অনেক প্রোগ্রামেই আমি অ্যাটেন্ড করতে পারিনি। অনেক মজা করতে পারিনি, যা আমার ফ্যামিলি করে। আমাদের ফ্যামিলির মানুষেরা বাসার অনুষ্ঠানেও খুব মজা করে। কিন্তু সেখানে আমি থাকতে পারি না। আমার নিজের বোনের এনগেজমেন্টের সময় আমি থাকতে পারিনি। সারা রাত আমি কাজ করেছি। কিন্তু ভোরে উঠে শো করতে যেতে হয়েছে। তারপরও কাজটাকে আমি অগুরুত্বপূর্ণ ভাবিনি। আমার বাবা নেই। অনেক দায়িত্ব থাকে আসলে। অনুষ্ঠানের মিষ্টিটা সবার বাসায় পাঠানোর জন্যও লোক লাগে। আমার মা, বোন—ওরা কতটাই-বা করবে। আমি থাকলে হেল্প হবে। সেই জিনিসগুলো আমি করতে পারিনি।
এখনকার ছেলেমেয়েরা শো-এর আগের দিন বলে দেয় যে, আমার একটা কাজ আছে বা অন্য কাজ আছে। আমার সময়ে একটা ছোট শো ছিল। এই শো-এর বুকিং আগে থেকেই দেওয়া ছিল। ওই সময়ে আড়ং ফ্যাশন উইকও চলছিল। কিন্তু আমরা ৮-১০ জন শুধুমাত্র কমিটমেন্টের কারণে আড়ংয়ের শো বাদ দিয়ে ছোট শোটাই করেছি। এই জিনিসটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
এখন সেটা নেই বলছেন?
সৈয়দ রুমা: এখন মানুষ খুব সহজেই সবকিছু পেয়ে যাচ্ছে। আমাদের সময় আমরা একটা শোয়ের জন্য এক মাস গ্রুমিং করতাম। এখন অল্প সময় গ্রুমিং-রিহার্সাল করেই ওরা শো করে ফেলছে। আগে বিলবোর্ড করব, ম্যাগাজিনের কভার করব—এটা স্বপ্ন ছিল। আগে যেকোনো পত্রিকায় সেলিব্রিটিরা কাজ করত। আর এখন সবাই করতে পারে। সহজভাবে সব পেয়ে যাচ্ছে। আর তাই এমন প্রবলেম হচ্ছে।
আপনি যাদের গ্রুমিং করাচ্ছেন, আপনার কাছে যারা আসছে, তাঁদের ক্ষেত্রেও কি আপনি এটা দেখছেন?
সৈয়দ রুমা: আমার গ্রুমিং হলো দু-তিন মাস। তারপর আমি তাদের ছেড়ে দিই। আমার সামনে হয়তো তারা নরমাল থাকবে। বাইরে গিয়ে তারা এমন করতে পারে। কারণ, আমি ফটোগ্রাফি করতে গিয়ে, অন্য কাজ করতে গিয়ে এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হই। একটা কাজ যখন হয়, তখন তার সঙ্গে পুরো একটা টিম থাকে। একজন যদি কমিটমেন্ট ব্রেক করে, তখন সবাইকে ঝামেলায় পড়তে হয়। পুরো শোটা ধ্বংস হয়ে যায়। আল্লাহর রহমতে বাংলাদেশের বড় বড় শোগুলা আমি করি। বড় শোগুলোতে ৬০ থেকে ৭০ জন মডেল নিয়ে কাজ করি। একেকটা সিকোয়েন্সে মডেল থাকে ২০/২২ জন। র্যাম্প থাকে অনেক বড়। ১০০, ১৫০ ফুট—এ রকম। আমার এমনও হয়েছে, শোয়ের দিন ১০৩ ডিগ্রি জ্বর। বমি হচ্ছে। তাও আমি মেকআপ করেছি, শো করেছি। ধরুন, কারও পারলার ওপেনিং। আমি তো হুটহাট শো বাতিল করতে পারি না। তাঁকে বিপদে ফেলতে পারি না। এমন প্যাশন যদি থাকে, তাহলে মিডিয়া আগাবে। আমাদের দেশ থেকে অনেক মডেল দেশের বাইরে গিয়ে কাজ করছে। আমি নিজেও বাইরে অনেক শো করে এসেছি। অনেক ভালো ভালো ডিজাইনার বাড়ছে দেশে। লিংক বাড়ছে। যদি আমরা অ্যাকটিভ থাকি, আর যদি মডেলিং এজেন্সি থাকে, তাহলে আগাবেই। আমার অবজেকশন একটা আছে। একটা মেয়ে জিনস আর টপস পরে থাকলে তাকে মডেল বলা হয়। কোনো আইডি নাই তার। সবাই কিন্তু মডেল না। এখন তো ফেসবুকে সবাই ছবি দেয়। সবাই তো মডেল না। তাদের ট্যাগ লাগানো হয় যে, তারা মডেল। আমাদের মডেলদের একটা গ্রুপ আছে। আমরা চাই একটা এজেন্সি হোক। মডেলদের একটা আইডি থাকা দরকার, পরিচিতিমূলক কিছু থাকা দরকার। আমি খুব হতাশ হই যখন কোনো কিছু ঘটলে বলা হয়, এটা মডেল করেছে। এত বছর ধরে মডেলিং করি, আমি চিনিই না তাকে। ওদের জন্য আমাদের বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়।
মডেল এজেন্সি নিয়ে কি আপনারা কাজ করছেন? এটা কি খুব দ্রুতই হবে বলে মনে হয়?
সৈয়দ রুমা: হ্যাঁ, কাজ করছি। ইনশা আল্লাহ দ্রুত হবে। আমরা নিজেই সাফার করছি। প্রত্যেকেই তাদের ফ্যামিলি নিয়ে থাকি। কোনো কিছু বাইরে ঘটলে আমরা বিব্রত হই। মানুষ ফোন দেয়। তখন খুব খারাপ লাগে। যাদের নাম আসছে, ওরা তো মডেল না। আমি নিজেই ওদের চিনি না।
আমাদের মডেল ইন্ডাস্ট্রি খুব কম দিনের নয়। ৩০ বছর তো হবেই। টেলিভিশনেরও কিছু প্রাতিষ্ঠানিক বিষয় আছে। আপনাদের হলো না কেন?
সৈয়দ রুমা: আমরা অনেকেই অনেকবার উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু হয়ে ওঠে নাই। আগে কোনো র্যাম্প টিভিতে দেখানো হতো না। এখন আগের চেয়ে বেশি শো হচ্ছে। টিভিতে দেখানো হচ্ছে। আগে মানুষজন র্যাম্প মডেলদের চিনত না। এখন চেনে। আগে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার বিষয়গুলো হয়তো অতটা গুরুত্ব দিয়ে ভাবা হয়নি। কিন্তু এখন ভাবা হচ্ছে। এ জন্য আমরা কয়েকজন কাজ করে যাচ্ছি।
আপনি বিদেশে গেছেন, অনেক শো করেছেন। মডেলিং জগতের অনেক স্তরের মানুষের সঙ্গে আপনার পরিচয় হয়েছে। অন্য দেশের সঙ্গে আমাদের পার্থক্যটা আসলে কী?
সৈয়দ রুমা: পার্থক্যটা অনেক বেশি। ওরা অনেক বেশি ডেডিকেটেড। ওরা খুব টাইম মেইনটেইন করে। ভোর ৫/৬টায় মেকআপ শেষ করে, ৮টার মধ্যে সেটে থাকতে বললে ওরা তাই করে। আমাদের এদিকের প্রবলেম হলো, টাইম ডিলে করা। আমাদের দেশে ট্রাফিক অনেক বেশি থাকে। ওদের কাজ করার ধরনটা অন্যরকম। আমাদের দেশে এখন বড় বড় শো হচ্ছে, যা আগে হতো না। পাকিস্তানে একটা শো করেছি, সেখানে দেখলাম একেকজন মডেলের পেছনে একেকজন মেকআপ আর্টিস্ট। সবার কাপড় পরা থেকে শুরু করে সবকিছুর জন্য একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট থাকবেই। আগে আমাদের দেশে ছিল ১০ জন মেকআপ আর্টিস্ট, ২০ জন মডেল। এখন কিন্তু পরিবর্তন এসেছে। বাইরের দেশের ওরা আগে থেকে অনেক বেশি উন্নত। আর আমরা উন্নত হচ্ছি। আমাদের মডেলিং ইন্ডাস্ট্রি অনেক বেশি আগাতো যদি লকডাউন না হতো। আমরা ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে এত ভালো করে কাজ শুরু করেছি, মার্চের ২৬ তারিখের পর লকডাউন পড়ল। আমরা ২৩ তারিখ পর্যন্ত বলছিলাম, এবার বাংলাদেশ আসলেই কাজ করে ফাটায়া দিবে। লকডাউন হওয়াতে পিছিয়ে গেছি। কারও হাতে টাকা নেই, কাজ নেই। অনেক ডাউন হয়ে গেছে। এটা কাটিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগবে।
পাকিস্তান গেছেন আপনি। কেমন দেখলেন?
সৈয়দ রুমা: অনেক আগে গেছি তো। খুব একটা মনে নেই। বাংলাদেশ থেকে আমি, ইমি আপু, শাওন আপু গিয়েছিলাম। ঘোরাঘুরি করেছি। বিচেও গিয়েছি। তবে আমাদের দেশের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতটা অনেক বেশি সুন্দর। অনেক বড়। ওখানে যেমন উট চলে, অনেক বড় বড় পাহাড়। মানুষজনকেও ফ্রেন্ডলি মনে হয়েছে। পাকিস্তানের মানুষ খুব শপিং করতে ভালোবাসে। জিনিসপত্র কম দামে পাওয়া যায়। আমাদের দেশে যেমন অনেক দাম।
ঢাকা কি খুব এক্সপেনসিভ শহর?
সৈয়দ রুমা: হ্যাঁ। এক্সপেনসিভ শহর। রেস্টুরেন্টে খেতে বসলেও ১২০০-১৫০০ এর নিচে খেতে পারি না। ইন্ডিয়া, পাকিস্তান ও মালয়েশিয়ায় ৩০০ টাকার মধ্যে খাওয়া যায়। কলকাতায় ১৫০ টাকায় মানুষ বিরিয়ানি খেতে পারে। ফুল ফ্যামিলি ভালো রেস্টুরেন্টে খেতে পারে ২০০০ টাকার মধ্যে। আর এখানে ফুল ফ্যামিলি নিয়ে খেতে গেলে ৫০০০ টাকা লাগবেই। আমরা ফ্যামিলির সবাই মিলে একটা চায়নিজ রেস্টুরেন্টে বসছিলাম। ১২,০০০ টাকা বিল আসছে।
পুরান ঢাকা আর এর বাইরের ঢাকার মধ্যে পার্থক্য কী?
সৈয়দ রুমা: কোনো পার্থক্য নাই। একই। সবারই সংস্কৃতি আছে। তবে পুরান ঢাকার মানুষের মধ্যে একতা আছে। আমার বাবা যখন মারা যায়, তখন আমার বাসায় চাচা ছিল না। পুরুষ কেউ ছিল না। আমরা সবাই মহিলা। কাফন কোথায় পাওয়া যায়, গোসল কোথায় দেওয়া হয়, কবর কোথায় হবে—এসব আমরা জানি না। সব করেছে এলাকার মানুষ। কোনো মানুষ অসুস্থ হলে আশপাশের কাউকে ডাকা লাগে না। অন্য মানুষ নিয়ে চলে যায় হাসপাতালে। একতাটা অন্যরকম। পুরান ঢাকায় কোনো বাসায় রান্না হয়নি, কেউ না খেয়ে আছে—এমন হয় না কখনো। পুরান ঢাকার বাইরের ঢাকায় কেউ অসুস্থ হলেও, মারা গেলেও পাশের ফ্ল্যাটের কেউ জানে না। এ ক্ষেত্রে পুরান ঢাকার মানুষের মধ্যে একতা অনেক বেশি। ওরা বুক দিলে কখনো পিঠ দিবে না। আর একবার পিঠ দিলে বুক দিবে না।
র্যাম্পের বাইরে আর কী করছেন?
সৈয়দ রুমা: আমার একটা শপ আছে ‘আর বাই রুমা’ নামে। এখন অনলাইনে চলছে কাজ। এ ছাড়া ডেইলি সান পত্রিকায় আছি। ওখানে আছি ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে। দীর্ঘ ১০ বছর ধরেই আছি ওখানে। আমি আমার লাইফে ফ্যামিলির পর মিডিয়াকে সময় দিয়েছি। মরার আগ পর্যন্ত মিডিয়াকে ছাড়তে চাই না।
কেন আপনি সংবাদপত্রে গেলেন?
সৈয়দ রুমা: আমার একটা ফ্রেন্ড ছিল রুবেল নামে। ওদিকের একটা ফটোশুট করার কথা ছিল। তখন বসুন্ধরায় নতুন ছিল। উইকলি ওদের পেপারের সঙ্গে যে সাপ্লিমেন্ট বের হয়, ওইটার ফটোশুট আমি করাতাম। ফটোশুট করতে গিয়ে আমি সবকিছু করছিলাম। তখন ওরা আমাকে বলল, তুমি যেহেতু সব কর, মডেলরা তোমার কথা শোনে, তাহলে তুমি জয়েন কর। তখন আমি জয়েন করতে চাইনি। ওরা আমাকে বলল, ‘তোমাকে অফিস করতে হবে না। মাসে চারটা শুট। তুমি একদিনে কর আর চার দিনে কর সেটা তোমার ওপর নির্ভর করছে। তারপর আমি শুরু করি। খুব ভালোভাবে কাজ হচ্ছিল। ম্যাগাজিনটা বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সব বিক্রি হয়ে যায়।’
দেখা যায়, যারা মডেলিং করেন তাঁরা এক সময় সিনেমায় যান, টেলিভিশন মিডিয়ায় যান। আপনি গেছেন সংবাদপত্রে। টেলিভিশনে কি কাজ করেছেন?
সৈয়দ রুমা: কয়েকটা নাটকে কাজ করেছি। ১০/১২টার মতো হবে। র্যাম্পে ‘কাট’ শব্দটা থাকে না। হাঁটছি তো হাঁটছি। বাধা দেওয়ার কেউ নাই। কিন্তু নাটকে অভিনয়ের ক্ষেত্রে ‘কাট’ শব্দটা থাকে। কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে যদি ‘কাট’ শব্দটা থাকে, তাহলে কিন্তু কথা বলা যায় না। ‘কাট’ শব্দটা আমার পছন্দ না।
কিন্তু ফিল্মে তো আইটেম সং করলেন।
সৈয়দ রুমা: কারণ, ওখানে কাট শব্দটা থাকে না। কথা বলারও সুযোগ ছিল না। যেহেতু আমার উচ্চারণের সমস্যা আছে বলে আমি মনে করি, আমার কাছে মনে হয়, আমি উচ্চারণটা খুব বাজেভাবে করি। এই বিষয়ে আমার কমতি আছে। আর আইটেম সং-এ নাচলে কথা বলতে হয় না। জাস্ট নাচতে হয়।
এক্সপেরিয়েন্স কেমন?
সৈয়দ রুমা: খুব ভালো। আমি নাচ-গান পছন্দ করি। খুব ভালো লেগেছে।
আমরা আসলে বাংলা সিনেমাটাও কম দেখি।
সৈয়দ রুমা: আমার কাছে মনে হয় বাংলা সিনেমার প্রবলেম হচ্ছে টেকনিক্যাল। আমার আইটেম সং-এর সময় আমি অনেক বাইন্ডিংস দিয়েছি। এভাবে না ওভাবে। এডিটিংয়ের সময় আমি দেখব। অনেক সুন্দর সুন্দর বাংলা সিনেমা কিন্তু আছে। আমাদের মাথায় চিন্তা-ভাবনা একটা হয়ে গেছে যে, রিকশাওয়ালাদের জন্য সিনেমা বানাচ্ছি। এভাবে বিষয়টা হেয় হয়ে গেছে। তাই আমরা বাংলা সিনেমা দেখিই না। আমার মনে হয়, সবার পয়েন্ট অব ভিউ যদি এক রাখা হয়, তাহলে বিষয়টা ঠিক হয়ে যাবে।
এখন তো সিনেমা অনেক ভালো হচ্ছে। অনেক সিনেমা আন্তর্জাতিক পুরস্কার পাচ্ছে। সিনেমার অফার পেলে করবেন কি?
সৈয়দ রুমা: যদি মুভি আমার টাইপ হয়, তাহলে সত্যিই আমি করব। যদি আর্ট মুভি হয়, তাহলে করব। এখন তো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে মুভি হচ্ছে। যদি ওরকম কিছু হয়, তাহলে আমি করব। ভালো স্ক্রিপ্ট পেলে অবশ্যই করব।
আপনার কি মনে হচ্ছে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি আগাচ্ছে?
সৈয়দ রুমা: আগাচ্ছে। অনেক সিনেপ্লেক্স হচ্ছে। মানুষ না গেলে এত সিনেপ্লেক্স হতো না। আগে হলের অবস্থাও খুব খারাপ ছিল। এখন হলগুলো অনেক সুন্দর হচ্ছে। ফ্যামিলি নিয়ে যাওয়ার মতো পরিবেশ হচ্ছে। মুভি ভালো হচ্ছে। আমাদের চিন্তাধারা পরিবর্তন আনতে হবে। নতুন নতুন অনেক ডিরেক্টর আসছে। ওরা চায় ইন্ডাস্ট্রিকে ওঠাতে। টাকা কামানো ওদের মূল উদ্দেশ্য নয়। আমাদের উদ্দেশ্য ইন্ডাস্ট্রিকে ওঠানো। ইন্ডাস্ট্রি উঠলে টাকা এমনিতেই আসবে। এখন এফডিসি নতুন হচ্ছে। আগে কেমন ছিল। আর এখন কত নতুন হচ্ছে। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির মানুষদের মধ্যে ইউনিটি হচ্ছে।
তার মানে আপনি খুব আশাবাদী?
সৈয়দ রুমা: হ্যাঁ, আমি খুব আশাবাদী। যদি আমার সুযোগ থাকত, আমি অর্ডার দিলে যদি সবাই মানত, তাহলে আমি মিডিয়াকে অনেক দূর নিয়ে যেতাম। নাটক, সিনেমা, র্যাম্প যাই হোক, আমি সব কটাকে চেঞ্জ করতাম। একটা শর্ত দিয়ে দিতাম এই টাইপ একটা মুভি প্রতি সপ্তাহে লাগবে। শুক্রবারে যেন হাউসফুল থাকে। যেন ফ্যামিলি নিয়ে সবাই দেখে। স্টার জলসা, জি নিউজ—ওসব কেন দেখবে মানুষ! তাহলে বাংলাদেশিরা কী করল? এখানে কি কম ডিরেক্টর, প্রডিউসার আছে? না তো। উদ্যোগ নেওয়ার মানুষ কম।
ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে আপনার আশা অনেক। র্যাম্প ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে কি আপনি একইভাবে আশাবাদী?
সৈয়দ রুমা: আমি জানি এই জিনিসটা হয়ে যাবে। আমি নিজেই যদি চার-পাঁচজনের সঙ্গে কথা বলি, তাহলে হয়তো হয়ে যাবে। এটা আমরা করব। যেহেতু আমরা উদ্যোগ নিয়েছি—করব।
আপনার র্যাম্প জীবনের স্মরণীয় ঘটনা কী?
সৈয়দ রুমা: ওরকম আকর্ষণীয় কিছু ঘটেনি। তবে আমার কাছে প্রতিটা শো, হোক সেটা বড় কিংবা ছোট ব্র্যান্ডের—সবগুলোই স্মৃতিময়। আমি মাইন্ড ওরকম সেট করেই রেখেছিলাম। প্রতিটা শো আমি যখন সফল করতে পারি—আমার কাছে ওইটাই স্মৃতি।
আপনাকে ধন্যবাদ।
সৈয়দ রুমা: ওয়েলকাম।

মডেলিং শুরুর প্রথম দিকের গল্প শুনতে চাই?
সৈয়দ রুমা: ২০০২ থেকে মডেলিং শুরু করি। আমার এক কাজিন বাইরে থাকে। সে মডেলিং করত। আমার মডেলিংয়ের ব্যাপারে কোনো আগ্রহ ছিল না। ভেবেছিলাম হয়তো-বা পুলিশ হব, ডক্টর হব। আমি ছেলেদের মতোই খেলাধুলা করতাম, হাঁটাচলা করতাম। আমার বড় বোনের মডেলিংয়ে খুব আগ্রহ ছিল। আমার কাজিন একদিন এসে বলল, ‘তোমরা মডেলিং করবা?’ তখন আমার বড়বোন বলল, ‘হ্যাঁ, করব।’
সে সময় পাবলিক লাইব্রেরিতে, জাদুঘরে, চীনমৈত্রীতে শো হতো। ফার্স্ট শো করলাম। আর কিছু রাশিয়ান কালচারাল সেন্টারে শো ছিল। প্রথম দিকে শো-এর সময় খুব প্যারা লাগত। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত একটা শো-এর জন্য বসে থাকা! আমার জন্য কমফোর্টেবল ছিল না। তারপর, ধীরে ধীরে আগ্রহ বেড়ে গেল। আমাকে আমার বোন পুশ করেছে। আমার বোন তার পরীক্ষার জন্য মডেলিং অফ করে দিছে। আমি সব সময় বলতাম—এটা আমার শখ। তবে আমি কখন যে একে পেশা হিসেবে নিয়েছি, তা হয়তো নিজেও জানি না। ২০০৫-এ যখন নেসক্যাফে, সানসিল্কের বিলবোর্ড করি, তখন আগ্রহটা বাড়ে। আমি বাংলাদেশি মডেল হয়ে ইন্টারন্যাশনাল কাজ করেছি। কাজ করতে করতে ধীরে ধীরে আগ্রহ বাড়ে। মিডিয়ার শুরু কাজিনের মাধ্যমে। গ্রুমিংও তাই। এখন তো অনেক গ্রুমিং স্কুল আছে। আমার নিজেরও আছে। আমি দুই জায়গায় ক্লাসও নিই। ওই সময়ে এটা ছিল না। আমরা এক মাস রিহার্সাল করতাম। এক মাস ধরে হাঁটা শেখানো হতো। এমনও হয়েছে, শো-এর আগের দিন শো বাতিল হয়ে গেছে।
কেন?
সৈয়দ রুমা: অনেক কারণ ছিল। আর তখন কী কী কারণে শো বন্ধ হয়, তা আমরা বুঝিনি। ছোট ছিলাম অনেক। এখন কারণ জিজ্ঞেস করতে পারি। হয়তো হলের কোনো সমস্যা, স্পনসরের সমস্যা—এসব।
তার মানে ২০০২ থেকে শুরু...
সৈয়দ রুমা: হ্যাঁ, ২০০২ থেকে বেসিক শুরু। পেশা হিসেবে নিয়েছি ২০০৫ সাল থেকে। আমার বেসিক র্যাম্প।
কোন কোন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করেছেন?
সৈয়দ রুমা: মোটামুটি সব ব্র্যান্ডের সঙ্গে কাজ করেছি। আড়ং, এক্সটেসি, ট্রেন্ডস, অনেকগুলোতে। টিভিসি অনেকগুলো করেছি। শো তো অসংখ্য। মুভিতে দুইটা আইটেম সং করেছি। ‘গেম’ মুভিতে আইটেম সং করেছি, আর ‘ইউ টার্ন’ মুভিতে আইটেম সং করেছি। আর এখন আমি আমার শপ ‘আর বাই রুমা’ নিয়ে ব্যস্ত। কোরিওগ্রাফি নিয়ে ব্যস্ত।
এখন তো র্যাম্পিং করছেন না?
সৈয়দ রুমা: মাঝে মাঝে করা হয়। তবে সব সময় শো করাই।

কোরিওগ্রাফার হিসেবে আপনি কত দিন কাজ করছেন?
সৈয়দ রুমা: ৬-৭ বছরের ওপরে।
আমি কয়েকজন মডেলের সঙ্গে কথা বলেছি। একটা পর্যায়ের পর সবাই কোরিওগ্রাফির দিকে চলে যান। সবাই একটা পর্যায়ে ইনস্টিটিউট খুলছেন। ২০০২ এবং ২০২১ অনেকটা সময়। কী মনে হয়, ইন্ডাস্ট্রি কি পজিটিভ দিকে যাচ্ছে, নাকি আগের মতোই থেকে যাচ্ছে?
সৈয়দ রুমা: প্রশ্নটা খুব ক্রিটিক্যাল। আমরা যখন কাজ শুরু করেছি, আমাদের মধ্যে প্যাশন ছিল। কাজের প্রতি সম্মান ছিল। নতুন জেনারেশনের মধ্যে এই জিনিসগুলোর অভাব। যতই গ্রুমিং হোক, আমার মনে হয় কমিটমেন্টের, সেন্সের অভাব। কিছু একটা অভাব আছেই। আমি নিজেও ক্লাসে বলি—তুমি মানুষকে সম্মান দিলে মানুষ তোমাকে সম্মান দেবে।
আমি আমার জীবনে অনেক ফ্যামিলি প্রোগ্রামে যাইনি। আমি আমার মামার বিয়েতে যাইনি। জাপানে শো করতে গিয়েছিলাম। ফ্যামিলির কাজিনদের অনেক প্রোগ্রামেই আমি অ্যাটেন্ড করতে পারিনি। অনেক মজা করতে পারিনি, যা আমার ফ্যামিলি করে। আমাদের ফ্যামিলির মানুষেরা বাসার অনুষ্ঠানেও খুব মজা করে। কিন্তু সেখানে আমি থাকতে পারি না। আমার নিজের বোনের এনগেজমেন্টের সময় আমি থাকতে পারিনি। সারা রাত আমি কাজ করেছি। কিন্তু ভোরে উঠে শো করতে যেতে হয়েছে। তারপরও কাজটাকে আমি অগুরুত্বপূর্ণ ভাবিনি। আমার বাবা নেই। অনেক দায়িত্ব থাকে আসলে। অনুষ্ঠানের মিষ্টিটা সবার বাসায় পাঠানোর জন্যও লোক লাগে। আমার মা, বোন—ওরা কতটাই-বা করবে। আমি থাকলে হেল্প হবে। সেই জিনিসগুলো আমি করতে পারিনি।
এখনকার ছেলেমেয়েরা শো-এর আগের দিন বলে দেয় যে, আমার একটা কাজ আছে বা অন্য কাজ আছে। আমার সময়ে একটা ছোট শো ছিল। এই শো-এর বুকিং আগে থেকেই দেওয়া ছিল। ওই সময়ে আড়ং ফ্যাশন উইকও চলছিল। কিন্তু আমরা ৮-১০ জন শুধুমাত্র কমিটমেন্টের কারণে আড়ংয়ের শো বাদ দিয়ে ছোট শোটাই করেছি। এই জিনিসটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
এখন সেটা নেই বলছেন?
সৈয়দ রুমা: এখন মানুষ খুব সহজেই সবকিছু পেয়ে যাচ্ছে। আমাদের সময় আমরা একটা শোয়ের জন্য এক মাস গ্রুমিং করতাম। এখন অল্প সময় গ্রুমিং-রিহার্সাল করেই ওরা শো করে ফেলছে। আগে বিলবোর্ড করব, ম্যাগাজিনের কভার করব—এটা স্বপ্ন ছিল। আগে যেকোনো পত্রিকায় সেলিব্রিটিরা কাজ করত। আর এখন সবাই করতে পারে। সহজভাবে সব পেয়ে যাচ্ছে। আর তাই এমন প্রবলেম হচ্ছে।
আপনি যাদের গ্রুমিং করাচ্ছেন, আপনার কাছে যারা আসছে, তাঁদের ক্ষেত্রেও কি আপনি এটা দেখছেন?
সৈয়দ রুমা: আমার গ্রুমিং হলো দু-তিন মাস। তারপর আমি তাদের ছেড়ে দিই। আমার সামনে হয়তো তারা নরমাল থাকবে। বাইরে গিয়ে তারা এমন করতে পারে। কারণ, আমি ফটোগ্রাফি করতে গিয়ে, অন্য কাজ করতে গিয়ে এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হই। একটা কাজ যখন হয়, তখন তার সঙ্গে পুরো একটা টিম থাকে। একজন যদি কমিটমেন্ট ব্রেক করে, তখন সবাইকে ঝামেলায় পড়তে হয়। পুরো শোটা ধ্বংস হয়ে যায়। আল্লাহর রহমতে বাংলাদেশের বড় বড় শোগুলা আমি করি। বড় শোগুলোতে ৬০ থেকে ৭০ জন মডেল নিয়ে কাজ করি। একেকটা সিকোয়েন্সে মডেল থাকে ২০/২২ জন। র্যাম্প থাকে অনেক বড়। ১০০, ১৫০ ফুট—এ রকম। আমার এমনও হয়েছে, শোয়ের দিন ১০৩ ডিগ্রি জ্বর। বমি হচ্ছে। তাও আমি মেকআপ করেছি, শো করেছি। ধরুন, কারও পারলার ওপেনিং। আমি তো হুটহাট শো বাতিল করতে পারি না। তাঁকে বিপদে ফেলতে পারি না। এমন প্যাশন যদি থাকে, তাহলে মিডিয়া আগাবে। আমাদের দেশ থেকে অনেক মডেল দেশের বাইরে গিয়ে কাজ করছে। আমি নিজেও বাইরে অনেক শো করে এসেছি। অনেক ভালো ভালো ডিজাইনার বাড়ছে দেশে। লিংক বাড়ছে। যদি আমরা অ্যাকটিভ থাকি, আর যদি মডেলিং এজেন্সি থাকে, তাহলে আগাবেই। আমার অবজেকশন একটা আছে। একটা মেয়ে জিনস আর টপস পরে থাকলে তাকে মডেল বলা হয়। কোনো আইডি নাই তার। সবাই কিন্তু মডেল না। এখন তো ফেসবুকে সবাই ছবি দেয়। সবাই তো মডেল না। তাদের ট্যাগ লাগানো হয় যে, তারা মডেল। আমাদের মডেলদের একটা গ্রুপ আছে। আমরা চাই একটা এজেন্সি হোক। মডেলদের একটা আইডি থাকা দরকার, পরিচিতিমূলক কিছু থাকা দরকার। আমি খুব হতাশ হই যখন কোনো কিছু ঘটলে বলা হয়, এটা মডেল করেছে। এত বছর ধরে মডেলিং করি, আমি চিনিই না তাকে। ওদের জন্য আমাদের বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়।
মডেল এজেন্সি নিয়ে কি আপনারা কাজ করছেন? এটা কি খুব দ্রুতই হবে বলে মনে হয়?
সৈয়দ রুমা: হ্যাঁ, কাজ করছি। ইনশা আল্লাহ দ্রুত হবে। আমরা নিজেই সাফার করছি। প্রত্যেকেই তাদের ফ্যামিলি নিয়ে থাকি। কোনো কিছু বাইরে ঘটলে আমরা বিব্রত হই। মানুষ ফোন দেয়। তখন খুব খারাপ লাগে। যাদের নাম আসছে, ওরা তো মডেল না। আমি নিজেই ওদের চিনি না।
আমাদের মডেল ইন্ডাস্ট্রি খুব কম দিনের নয়। ৩০ বছর তো হবেই। টেলিভিশনেরও কিছু প্রাতিষ্ঠানিক বিষয় আছে। আপনাদের হলো না কেন?
সৈয়দ রুমা: আমরা অনেকেই অনেকবার উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু হয়ে ওঠে নাই। আগে কোনো র্যাম্প টিভিতে দেখানো হতো না। এখন আগের চেয়ে বেশি শো হচ্ছে। টিভিতে দেখানো হচ্ছে। আগে মানুষজন র্যাম্প মডেলদের চিনত না। এখন চেনে। আগে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার বিষয়গুলো হয়তো অতটা গুরুত্ব দিয়ে ভাবা হয়নি। কিন্তু এখন ভাবা হচ্ছে। এ জন্য আমরা কয়েকজন কাজ করে যাচ্ছি।
আপনি বিদেশে গেছেন, অনেক শো করেছেন। মডেলিং জগতের অনেক স্তরের মানুষের সঙ্গে আপনার পরিচয় হয়েছে। অন্য দেশের সঙ্গে আমাদের পার্থক্যটা আসলে কী?
সৈয়দ রুমা: পার্থক্যটা অনেক বেশি। ওরা অনেক বেশি ডেডিকেটেড। ওরা খুব টাইম মেইনটেইন করে। ভোর ৫/৬টায় মেকআপ শেষ করে, ৮টার মধ্যে সেটে থাকতে বললে ওরা তাই করে। আমাদের এদিকের প্রবলেম হলো, টাইম ডিলে করা। আমাদের দেশে ট্রাফিক অনেক বেশি থাকে। ওদের কাজ করার ধরনটা অন্যরকম। আমাদের দেশে এখন বড় বড় শো হচ্ছে, যা আগে হতো না। পাকিস্তানে একটা শো করেছি, সেখানে দেখলাম একেকজন মডেলের পেছনে একেকজন মেকআপ আর্টিস্ট। সবার কাপড় পরা থেকে শুরু করে সবকিছুর জন্য একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট থাকবেই। আগে আমাদের দেশে ছিল ১০ জন মেকআপ আর্টিস্ট, ২০ জন মডেল। এখন কিন্তু পরিবর্তন এসেছে। বাইরের দেশের ওরা আগে থেকে অনেক বেশি উন্নত। আর আমরা উন্নত হচ্ছি। আমাদের মডেলিং ইন্ডাস্ট্রি অনেক বেশি আগাতো যদি লকডাউন না হতো। আমরা ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে এত ভালো করে কাজ শুরু করেছি, মার্চের ২৬ তারিখের পর লকডাউন পড়ল। আমরা ২৩ তারিখ পর্যন্ত বলছিলাম, এবার বাংলাদেশ আসলেই কাজ করে ফাটায়া দিবে। লকডাউন হওয়াতে পিছিয়ে গেছি। কারও হাতে টাকা নেই, কাজ নেই। অনেক ডাউন হয়ে গেছে। এটা কাটিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগবে।
পাকিস্তান গেছেন আপনি। কেমন দেখলেন?
সৈয়দ রুমা: অনেক আগে গেছি তো। খুব একটা মনে নেই। বাংলাদেশ থেকে আমি, ইমি আপু, শাওন আপু গিয়েছিলাম। ঘোরাঘুরি করেছি। বিচেও গিয়েছি। তবে আমাদের দেশের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতটা অনেক বেশি সুন্দর। অনেক বড়। ওখানে যেমন উট চলে, অনেক বড় বড় পাহাড়। মানুষজনকেও ফ্রেন্ডলি মনে হয়েছে। পাকিস্তানের মানুষ খুব শপিং করতে ভালোবাসে। জিনিসপত্র কম দামে পাওয়া যায়। আমাদের দেশে যেমন অনেক দাম।
ঢাকা কি খুব এক্সপেনসিভ শহর?
সৈয়দ রুমা: হ্যাঁ। এক্সপেনসিভ শহর। রেস্টুরেন্টে খেতে বসলেও ১২০০-১৫০০ এর নিচে খেতে পারি না। ইন্ডিয়া, পাকিস্তান ও মালয়েশিয়ায় ৩০০ টাকার মধ্যে খাওয়া যায়। কলকাতায় ১৫০ টাকায় মানুষ বিরিয়ানি খেতে পারে। ফুল ফ্যামিলি ভালো রেস্টুরেন্টে খেতে পারে ২০০০ টাকার মধ্যে। আর এখানে ফুল ফ্যামিলি নিয়ে খেতে গেলে ৫০০০ টাকা লাগবেই। আমরা ফ্যামিলির সবাই মিলে একটা চায়নিজ রেস্টুরেন্টে বসছিলাম। ১২,০০০ টাকা বিল আসছে।
পুরান ঢাকা আর এর বাইরের ঢাকার মধ্যে পার্থক্য কী?
সৈয়দ রুমা: কোনো পার্থক্য নাই। একই। সবারই সংস্কৃতি আছে। তবে পুরান ঢাকার মানুষের মধ্যে একতা আছে। আমার বাবা যখন মারা যায়, তখন আমার বাসায় চাচা ছিল না। পুরুষ কেউ ছিল না। আমরা সবাই মহিলা। কাফন কোথায় পাওয়া যায়, গোসল কোথায় দেওয়া হয়, কবর কোথায় হবে—এসব আমরা জানি না। সব করেছে এলাকার মানুষ। কোনো মানুষ অসুস্থ হলে আশপাশের কাউকে ডাকা লাগে না। অন্য মানুষ নিয়ে চলে যায় হাসপাতালে। একতাটা অন্যরকম। পুরান ঢাকায় কোনো বাসায় রান্না হয়নি, কেউ না খেয়ে আছে—এমন হয় না কখনো। পুরান ঢাকার বাইরের ঢাকায় কেউ অসুস্থ হলেও, মারা গেলেও পাশের ফ্ল্যাটের কেউ জানে না। এ ক্ষেত্রে পুরান ঢাকার মানুষের মধ্যে একতা অনেক বেশি। ওরা বুক দিলে কখনো পিঠ দিবে না। আর একবার পিঠ দিলে বুক দিবে না।
র্যাম্পের বাইরে আর কী করছেন?
সৈয়দ রুমা: আমার একটা শপ আছে ‘আর বাই রুমা’ নামে। এখন অনলাইনে চলছে কাজ। এ ছাড়া ডেইলি সান পত্রিকায় আছি। ওখানে আছি ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে। দীর্ঘ ১০ বছর ধরেই আছি ওখানে। আমি আমার লাইফে ফ্যামিলির পর মিডিয়াকে সময় দিয়েছি। মরার আগ পর্যন্ত মিডিয়াকে ছাড়তে চাই না।
কেন আপনি সংবাদপত্রে গেলেন?
সৈয়দ রুমা: আমার একটা ফ্রেন্ড ছিল রুবেল নামে। ওদিকের একটা ফটোশুট করার কথা ছিল। তখন বসুন্ধরায় নতুন ছিল। উইকলি ওদের পেপারের সঙ্গে যে সাপ্লিমেন্ট বের হয়, ওইটার ফটোশুট আমি করাতাম। ফটোশুট করতে গিয়ে আমি সবকিছু করছিলাম। তখন ওরা আমাকে বলল, তুমি যেহেতু সব কর, মডেলরা তোমার কথা শোনে, তাহলে তুমি জয়েন কর। তখন আমি জয়েন করতে চাইনি। ওরা আমাকে বলল, ‘তোমাকে অফিস করতে হবে না। মাসে চারটা শুট। তুমি একদিনে কর আর চার দিনে কর সেটা তোমার ওপর নির্ভর করছে। তারপর আমি শুরু করি। খুব ভালোভাবে কাজ হচ্ছিল। ম্যাগাজিনটা বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সব বিক্রি হয়ে যায়।’
দেখা যায়, যারা মডেলিং করেন তাঁরা এক সময় সিনেমায় যান, টেলিভিশন মিডিয়ায় যান। আপনি গেছেন সংবাদপত্রে। টেলিভিশনে কি কাজ করেছেন?
সৈয়দ রুমা: কয়েকটা নাটকে কাজ করেছি। ১০/১২টার মতো হবে। র্যাম্পে ‘কাট’ শব্দটা থাকে না। হাঁটছি তো হাঁটছি। বাধা দেওয়ার কেউ নাই। কিন্তু নাটকে অভিনয়ের ক্ষেত্রে ‘কাট’ শব্দটা থাকে। কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে যদি ‘কাট’ শব্দটা থাকে, তাহলে কিন্তু কথা বলা যায় না। ‘কাট’ শব্দটা আমার পছন্দ না।
কিন্তু ফিল্মে তো আইটেম সং করলেন।
সৈয়দ রুমা: কারণ, ওখানে কাট শব্দটা থাকে না। কথা বলারও সুযোগ ছিল না। যেহেতু আমার উচ্চারণের সমস্যা আছে বলে আমি মনে করি, আমার কাছে মনে হয়, আমি উচ্চারণটা খুব বাজেভাবে করি। এই বিষয়ে আমার কমতি আছে। আর আইটেম সং-এ নাচলে কথা বলতে হয় না। জাস্ট নাচতে হয়।
এক্সপেরিয়েন্স কেমন?
সৈয়দ রুমা: খুব ভালো। আমি নাচ-গান পছন্দ করি। খুব ভালো লেগেছে।
আমরা আসলে বাংলা সিনেমাটাও কম দেখি।
সৈয়দ রুমা: আমার কাছে মনে হয় বাংলা সিনেমার প্রবলেম হচ্ছে টেকনিক্যাল। আমার আইটেম সং-এর সময় আমি অনেক বাইন্ডিংস দিয়েছি। এভাবে না ওভাবে। এডিটিংয়ের সময় আমি দেখব। অনেক সুন্দর সুন্দর বাংলা সিনেমা কিন্তু আছে। আমাদের মাথায় চিন্তা-ভাবনা একটা হয়ে গেছে যে, রিকশাওয়ালাদের জন্য সিনেমা বানাচ্ছি। এভাবে বিষয়টা হেয় হয়ে গেছে। তাই আমরা বাংলা সিনেমা দেখিই না। আমার মনে হয়, সবার পয়েন্ট অব ভিউ যদি এক রাখা হয়, তাহলে বিষয়টা ঠিক হয়ে যাবে।
এখন তো সিনেমা অনেক ভালো হচ্ছে। অনেক সিনেমা আন্তর্জাতিক পুরস্কার পাচ্ছে। সিনেমার অফার পেলে করবেন কি?
সৈয়দ রুমা: যদি মুভি আমার টাইপ হয়, তাহলে সত্যিই আমি করব। যদি আর্ট মুভি হয়, তাহলে করব। এখন তো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে মুভি হচ্ছে। যদি ওরকম কিছু হয়, তাহলে আমি করব। ভালো স্ক্রিপ্ট পেলে অবশ্যই করব।
আপনার কি মনে হচ্ছে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি আগাচ্ছে?
সৈয়দ রুমা: আগাচ্ছে। অনেক সিনেপ্লেক্স হচ্ছে। মানুষ না গেলে এত সিনেপ্লেক্স হতো না। আগে হলের অবস্থাও খুব খারাপ ছিল। এখন হলগুলো অনেক সুন্দর হচ্ছে। ফ্যামিলি নিয়ে যাওয়ার মতো পরিবেশ হচ্ছে। মুভি ভালো হচ্ছে। আমাদের চিন্তাধারা পরিবর্তন আনতে হবে। নতুন নতুন অনেক ডিরেক্টর আসছে। ওরা চায় ইন্ডাস্ট্রিকে ওঠাতে। টাকা কামানো ওদের মূল উদ্দেশ্য নয়। আমাদের উদ্দেশ্য ইন্ডাস্ট্রিকে ওঠানো। ইন্ডাস্ট্রি উঠলে টাকা এমনিতেই আসবে। এখন এফডিসি নতুন হচ্ছে। আগে কেমন ছিল। আর এখন কত নতুন হচ্ছে। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির মানুষদের মধ্যে ইউনিটি হচ্ছে।
তার মানে আপনি খুব আশাবাদী?
সৈয়দ রুমা: হ্যাঁ, আমি খুব আশাবাদী। যদি আমার সুযোগ থাকত, আমি অর্ডার দিলে যদি সবাই মানত, তাহলে আমি মিডিয়াকে অনেক দূর নিয়ে যেতাম। নাটক, সিনেমা, র্যাম্প যাই হোক, আমি সব কটাকে চেঞ্জ করতাম। একটা শর্ত দিয়ে দিতাম এই টাইপ একটা মুভি প্রতি সপ্তাহে লাগবে। শুক্রবারে যেন হাউসফুল থাকে। যেন ফ্যামিলি নিয়ে সবাই দেখে। স্টার জলসা, জি নিউজ—ওসব কেন দেখবে মানুষ! তাহলে বাংলাদেশিরা কী করল? এখানে কি কম ডিরেক্টর, প্রডিউসার আছে? না তো। উদ্যোগ নেওয়ার মানুষ কম।
ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে আপনার আশা অনেক। র্যাম্প ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে কি আপনি একইভাবে আশাবাদী?
সৈয়দ রুমা: আমি জানি এই জিনিসটা হয়ে যাবে। আমি নিজেই যদি চার-পাঁচজনের সঙ্গে কথা বলি, তাহলে হয়তো হয়ে যাবে। এটা আমরা করব। যেহেতু আমরা উদ্যোগ নিয়েছি—করব।
আপনার র্যাম্প জীবনের স্মরণীয় ঘটনা কী?
সৈয়দ রুমা: ওরকম আকর্ষণীয় কিছু ঘটেনি। তবে আমার কাছে প্রতিটা শো, হোক সেটা বড় কিংবা ছোট ব্র্যান্ডের—সবগুলোই স্মৃতিময়। আমি মাইন্ড ওরকম সেট করেই রেখেছিলাম। প্রতিটা শো আমি যখন সফল করতে পারি—আমার কাছে ওইটাই স্মৃতি।
আপনাকে ধন্যবাদ।
সৈয়দ রুমা: ওয়েলকাম।

নাট্যদল বিবেকানন্দ থিয়েটারের ২৫তম প্রযোজনা ‘ভাসানে উজান’। গত নভেম্বরে মঞ্চে এসেছে নাটকটি। ২৯ ডিসেম্বর রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে সন্ধ্যা ৭টায় মঞ্চস্থ হবে নাটকটির চতুর্থ প্রদর্শনী। অপূর্ব কুমার কুণ্ডুর নাট্যরূপ এবং শুভাশীষ দত্ত তন্ময়ের নির্দেশনায় একক অভিনয় করেছেন মো. এরশাদ হাসান।
৪ ঘণ্টা আগে
টেলিভিশন চ্যানেল বাংলা ভিশনের জনপ্রিয় সংবাদ উপস্থাপক মামুন আব্দুল্লাহর সাবলীল উপস্থাপনার পেছনে রয়েছে দীর্ঘ অনুশীলন, দক্ষতা ও অবিচল আত্মবিশ্বাস। তাঁর সঙ্গে কথোপকথনে উঠে এসেছে সংবাদ উপস্থাপনার কৌশল, লাইভ সম্প্রচারের চাপ সামলানোর বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং এ পেশায় আগ্রহীদের জন্য মূল্যবান পরামর্শ।
১৩ দিন আগে
দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর রায়হান রাফী পরিচালিত ‘অমীমাংসিত’ ওয়েব ফিল্মের মুক্তির ঘোষণা এসেছে। ৪ ডিসেম্বর ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আইস্ক্রিনে মুক্তি পাবে সিনেমাটি। এতে অভিনয় করেছেন ইমতিয়াজ বর্ষণ। এ ছাড়া আসছে ডিসেম্বরে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে তাঁর অভিনীত ‘এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি’।
০১ ডিসেম্বর ২০২৫
ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগ থেকে সিজিপিএ–৪ এর মধ্যে ৪ পেয়েছেন ইউসুফ ইবনে কামাল নিলয়। গত ২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টির ৩৭তম সমাবর্তনে এমন সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে ওআইসি স্বর্ণপদক দেওয়া হয়।
১৫ নভেম্বর ২০২৫
নাট্যদল বিবেকানন্দ থিয়েটারের ২৫তম প্রযোজনা ‘ভাসানে উজান’। গত নভেম্বরে মঞ্চে এসেছে নাটকটি। ২৯ ডিসেম্বর রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে সন্ধ্যা ৭টায় মঞ্চস্থ হবে নাটকটির চতুর্থ প্রদর্শনী। অপূর্ব কুমার কুণ্ডুর নাট্যরূপ এবং শুভাশীষ দত্ত তন্ময়ের নির্দেশনায় একক অভিনয় করেছেন মো. এরশাদ হাসান। নাটকটি নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন এই অভিনেতা।
বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা

‘ভাসানে উজান’ নাটকের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার অভিজ্ঞতাটা কেমন?
দস্তয়ভস্কির বিখ্যাত ছোটগল্প দ্য জেন্টেল স্পিরিট অবলম্বনে এই নাটক। দস্তয়ভস্কি মানেই মানুষের অন্তর্লোকের গভীরতম স্তরে প্রবেশ। ভাসানে উজান আমার জন্য শুধুই একটি নাটক নয়, এটি একধরনের আত্মসংলাপ। এই গল্পে ঢুকতে গিয়ে আমাকে বারবার নিজের ভেতরের অচেনা কোণগুলোর মুখোমুখি হতে হয়েছে। এ ছাড়া অপূর্বদার নাট্যরূপে সাহিত্যের সৌন্দর্য যেমন অটুট আছে, তেমনি আছে মঞ্চের ভাষা। আর শুভাশীষদার নির্দেশনা ছিল ধ্যানের মতো—নীরব, গভীর এবং সংযত। এই দুজনের সমন্বয় আমাকে অভিনয়ে আরও সংযমী করেছে।
ভাসানে উজানের চরিত্রটি উপস্থাপনে মানসিকভাবে কতটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন?
এই চরিত্রটি বাহিরের নয়, ভেতরের অভিনয় দাবি করে। এখানে কান্না নেই, চিৎকার নেই—আছে চাপা অপরাধবোধ আর নীরব অনুশোচনা। এই নীরবতাই ছিল সবচেয়ে কঠিন। আমি মনে করি, আজকের মানুষ ভেতরে ভেতরে খুব একা। ভাসানে উজান সেই একাকিত্বের আয়না। দর্শক যদি নিজের ছায়াটা একটু দেখতে পান, সেটাই আমাদের সাফল্য।
চতুর্থ প্রদর্শনীতে এসে ভাসানে উজান নাটকে কি কোনো পরিবর্তন বা পরিণতি এসেছে?
প্রতিটি প্রদর্শনীতেই নাটকটা একটু একটু করে বদলায়। আমি নিজেও বদলাই। দর্শকের নিশ্বাস, নীরবতা—সবকিছু মিলিয়ে নাটকটি আরও পরিণত হয়ে ওঠে।
একক অভিনয়ে দীর্ঘ সময় মঞ্চে থাকতে হয়, সঙ্গ দেওয়ার কেউ থাকে না। এই একাকিত্বকে কীভাবে অনুভব করেন?
একাকিত্ব এখানে শূন্যতা নয়, বরং একধরনের গভীর উপস্থিতি। দর্শক, আলো, নীরবতা—সবকিছু মিলিয়ে এক অদৃশ্য সংলাপ তৈরি হয়। সেই সংলাপই আমাকে টেনে নেয় পুরো সময়জুড়ে।
দীর্ঘ দুই দশকের নাট্যচর্চার পরেও কি নাট্যমঞ্চে অভিনয়ের ক্ষেত্রে নতুন করে ভয় বা উত্তেজনা কাজ করে?
ভয় না থাকলে অভিনয় মৃত হয়ে যায়। প্রতিটি প্রদর্শনীর আগে আমি নতুন করে ভয় পাই, এই ভয় আমাকে সৎ রাখে, জীবিত রাখে একজন অভিনেতা হিসেবে।
ভবিষ্যতে একক নাটক ও থিয়েটার নিয়ে আপনার স্বপ্ন কী?
আমি চাই, থিয়েটার আরও স্থির হোক, আরও গভীর হোক। একক নাটক নিয়ে আরও গবেষণাধর্মী কাজ করতে চাই, যেখানে অভিনয় হবে আত্মানুসন্ধানের একটি মাধ্যম।
মঞ্চ ও টেলিভিশনের আসন্ন কাজ নিয়ে দর্শকদের জন্য কী বলতে চান?
আমার অভিনীত নাটকগুলোর নিয়মিত প্রদর্শনী চলছে। পাশাপাশি নতুন একটি রেপার্টরি নাটকে যুক্ত হচ্ছি। এ ছাড়া কয়েকটি টেলিভিশন নাটকের কাজও শেষের পথে। নাটকগুলো শিগগির দর্শকদের সামনে আসবে।
‘ভাসানে উজান’ নাটকের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার অভিজ্ঞতাটা কেমন?
দস্তয়ভস্কির বিখ্যাত ছোটগল্প দ্য জেন্টেল স্পিরিট অবলম্বনে এই নাটক। দস্তয়ভস্কি মানেই মানুষের অন্তর্লোকের গভীরতম স্তরে প্রবেশ। ভাসানে উজান আমার জন্য শুধুই একটি নাটক নয়, এটি একধরনের আত্মসংলাপ। এই গল্পে ঢুকতে গিয়ে আমাকে বারবার নিজের ভেতরের অচেনা কোণগুলোর মুখোমুখি হতে হয়েছে। এ ছাড়া অপূর্বদার নাট্যরূপে সাহিত্যের সৌন্দর্য যেমন অটুট আছে, তেমনি আছে মঞ্চের ভাষা। আর শুভাশীষদার নির্দেশনা ছিল ধ্যানের মতো—নীরব, গভীর এবং সংযত। এই দুজনের সমন্বয় আমাকে অভিনয়ে আরও সংযমী করেছে।
ভাসানে উজানের চরিত্রটি উপস্থাপনে মানসিকভাবে কতটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন?
এই চরিত্রটি বাহিরের নয়, ভেতরের অভিনয় দাবি করে। এখানে কান্না নেই, চিৎকার নেই—আছে চাপা অপরাধবোধ আর নীরব অনুশোচনা। এই নীরবতাই ছিল সবচেয়ে কঠিন। আমি মনে করি, আজকের মানুষ ভেতরে ভেতরে খুব একা। ভাসানে উজান সেই একাকিত্বের আয়না। দর্শক যদি নিজের ছায়াটা একটু দেখতে পান, সেটাই আমাদের সাফল্য।
চতুর্থ প্রদর্শনীতে এসে ভাসানে উজান নাটকে কি কোনো পরিবর্তন বা পরিণতি এসেছে?
প্রতিটি প্রদর্শনীতেই নাটকটা একটু একটু করে বদলায়। আমি নিজেও বদলাই। দর্শকের নিশ্বাস, নীরবতা—সবকিছু মিলিয়ে নাটকটি আরও পরিণত হয়ে ওঠে।
একক অভিনয়ে দীর্ঘ সময় মঞ্চে থাকতে হয়, সঙ্গ দেওয়ার কেউ থাকে না। এই একাকিত্বকে কীভাবে অনুভব করেন?
একাকিত্ব এখানে শূন্যতা নয়, বরং একধরনের গভীর উপস্থিতি। দর্শক, আলো, নীরবতা—সবকিছু মিলিয়ে এক অদৃশ্য সংলাপ তৈরি হয়। সেই সংলাপই আমাকে টেনে নেয় পুরো সময়জুড়ে।
দীর্ঘ দুই দশকের নাট্যচর্চার পরেও কি নাট্যমঞ্চে অভিনয়ের ক্ষেত্রে নতুন করে ভয় বা উত্তেজনা কাজ করে?
ভয় না থাকলে অভিনয় মৃত হয়ে যায়। প্রতিটি প্রদর্শনীর আগে আমি নতুন করে ভয় পাই, এই ভয় আমাকে সৎ রাখে, জীবিত রাখে একজন অভিনেতা হিসেবে।
ভবিষ্যতে একক নাটক ও থিয়েটার নিয়ে আপনার স্বপ্ন কী?
আমি চাই, থিয়েটার আরও স্থির হোক, আরও গভীর হোক। একক নাটক নিয়ে আরও গবেষণাধর্মী কাজ করতে চাই, যেখানে অভিনয় হবে আত্মানুসন্ধানের একটি মাধ্যম।
মঞ্চ ও টেলিভিশনের আসন্ন কাজ নিয়ে দর্শকদের জন্য কী বলতে চান?
আমার অভিনীত নাটকগুলোর নিয়মিত প্রদর্শনী চলছে। পাশাপাশি নতুন একটি রেপার্টরি নাটকে যুক্ত হচ্ছি। এ ছাড়া কয়েকটি টেলিভিশন নাটকের কাজও শেষের পথে। নাটকগুলো শিগগির দর্শকদের সামনে আসবে।

পুরান ঢাকার মানুষ সৈয়দ রুমা। মডেলিং জগতের বেশ ডাকসাইটে নাম। প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি মডেলিং জগতের সঙ্গে যুক্ত। এক সময় র্যাম্পে হেঁটেছেন দাপটের সঙ্গে। এখন খুব কম হাঁটলেও করিওগ্রাফ নিয়ে কাজ করেন। দুটি সিনেমার আইটেম গানে নেচেছেন। অভিনয় করেছেন টেলিভিশন নাটকে। এখন করিওগ্রাফ ও নিজের প্রতিষ্ঠান ‘আর বাই রুমা’
১৬ নভেম্বর ২০২১
টেলিভিশন চ্যানেল বাংলা ভিশনের জনপ্রিয় সংবাদ উপস্থাপক মামুন আব্দুল্লাহর সাবলীল উপস্থাপনার পেছনে রয়েছে দীর্ঘ অনুশীলন, দক্ষতা ও অবিচল আত্মবিশ্বাস। তাঁর সঙ্গে কথোপকথনে উঠে এসেছে সংবাদ উপস্থাপনার কৌশল, লাইভ সম্প্রচারের চাপ সামলানোর বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং এ পেশায় আগ্রহীদের জন্য মূল্যবান পরামর্শ।
১৩ দিন আগে
দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর রায়হান রাফী পরিচালিত ‘অমীমাংসিত’ ওয়েব ফিল্মের মুক্তির ঘোষণা এসেছে। ৪ ডিসেম্বর ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আইস্ক্রিনে মুক্তি পাবে সিনেমাটি। এতে অভিনয় করেছেন ইমতিয়াজ বর্ষণ। এ ছাড়া আসছে ডিসেম্বরে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে তাঁর অভিনীত ‘এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি’।
০১ ডিসেম্বর ২০২৫
ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগ থেকে সিজিপিএ–৪ এর মধ্যে ৪ পেয়েছেন ইউসুফ ইবনে কামাল নিলয়। গত ২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টির ৩৭তম সমাবর্তনে এমন সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে ওআইসি স্বর্ণপদক দেওয়া হয়।
১৫ নভেম্বর ২০২৫
টেলিভিশন চ্যানেল বাংলা ভিশনের জনপ্রিয় সংবাদ উপস্থাপক মামুন আব্দুল্লাহর সাবলীল উপস্থাপনার পেছনে রয়েছে দীর্ঘ অনুশীলন, দক্ষতা ও অবিচল আত্মবিশ্বাস। তাঁর সঙ্গে কথোপকথনে উঠে এসেছে সংবাদ উপস্থাপনার কৌশল, লাইভ সম্প্রচারের চাপ সামলানোর বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং এ পেশায় আগ্রহীদের জন্য মূল্যবান পরামর্শ। তাঁর সঙ্গে কথা বলে পর্দার আড়ালের সেই অভিজ্ঞতাগুলোই তুলে ধরেছেন মনিরুল ইসলাম।
মনিরুল ইসলাম

কীভাবে আপনি সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন?
প্রতিটি স্বপ্নের পেছনে একটি করে গল্প থাকে। আমার সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার অনুপ্রেরণারও তেমনি একটি গল্প আছে। সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার আগেও ছোটবেলা থেকে আমার বড় মামাকে দেখেছি, তাঁর কথা বলার স্টাইল ছিল ভীষণ হৃদয়গ্রাহী, যা মানুষকে খুব কাছে টানত। ঠিক তখন থেকেই বড় মামা হয়ে যান আমার সুপার হিরো। আমিও চেষ্টা করতাম তেমন করে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। তারপর দেখলাম এর সেরা উপায় হলো সংবাদ উপস্থাপক হওয়া। তাঁদের সুন্দর করে কথা বলাটা আমার পছন্দ হতো। সেখান থেকেই মূলত অনুপ্রাণিত হওয়া। তা ছাড়া আমার মরহুম আব্বুর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তাঁর উৎসাহ আর অনুপ্রেরণা এবং আমার আম্মুর নীরব সমর্থন আমাকে এ পেশায় আসতে সহযোগিতা করেছে।
শুরুতে সংবাদ উপস্থাপনার প্রশিক্ষণ বা প্রস্তুতি কেমন ছিল?
ছোটবেলা থেকেই কবিতা আবৃত্তি করতাম। সেটাও বড় মামার হাত ধরেই। বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই যখন নিউজ প্রেজেন্টার হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম, তখন থেকেই চিন্তা করতাম এখানে শুদ্ধ উচ্চারণের বিকল্প নেই। তাই উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে টিএসসিভিত্তিক একটি আবৃত্তি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হই। সেখানেও নিউজ প্রেজেন্টেশনের ক্লাস হতো। তারপর শুধু নিউজ প্রেজেন্টেশনের জন্য একটা একাডেমিতে ভর্তি হই। সেখানে ভর্তি ফি ছিল ৭ হাজার টাকা। পুরোটা দেওয়ার সামর্থ্য তখন ছিল না। তাই তাদের বলেছিলাম, ইনশা আল্লাহ একদিন নিউজ প্রেজেন্টার হয়ে আপনাদের এখানে ফ্রি ক্লাস নেব। সেই থেকে মনের মধ্যে ইচ্ছাটাও প্রবল হয়েছিল।
প্রথমবার লাইভ নিউজ উপস্থাপন করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
প্রথমবার একটা অনলাইন টিভিতে নিউজ পড়েছিলাম। তাদেরও অভিষেক হয়েছিল আমাকে দিয়ে। তাই উচ্ছ্বাসটা দু’পক্ষেরই একটু বেশি ছিল। আমি তাদের গ্রুমিং করা প্রেজেন্টারদের মধ্যে প্রথম ছিলাম। নিজেকে প্রথম কোনো পর্দায় দেখে কি যে ভালো লেগেছিল, তা বলার ভাষা নেই।
উপস্থাপনায় ভাষা, উচ্চারণ ও টোন কতটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন?
এ পেশাটা অন্য যেকোনো পেশার চেয়ে একটু আলাদা। এমনকি বাচিক যেকোনো পেশার চেয়েও। যেমন কাস্টমার কেয়ার, কিংবা কল সেন্টার থেকেও। এখানে ভুল উচ্চারণের কোনো মার্সি বা ক্ষমা নেই। তবে এখানে সংবাদের ভিন্নতার কারণে টোনের পরিবর্তন করতে হয়। নিউজের ভিন্ন ভিন্ন আবেদন টোনের ওঠানামায় ফুটিয়ে তুলতে হয়। টোনের ভেরিয়েশনের কারণে দর্শকের কানও প্রশান্তি পায়।
সংবাদ উপস্থাপনায় সময় ব্যবস্থাপনা বা কলাকৌশল কীভাবে পালন করেন?
এখানে সময় ব্যবস্থাপনাটা সবার আগে। প্রতিটি ন্যানো সেকেন্ডের মূল্য এখানে দিতে হয়। নিউজ শুরুর অনেক আগেই একজন প্রেজেন্টারকে স্টেশনে হাজির থাকতে হয়। সবকিছু বুঝে নিতে হয়। নিউজ শুরু হলে তো তাঁকে আরও বেশি প্রস্তুত থাকতে হয় সময় সম্পর্কে। কারণ প্রতিটি টাইমফ্রেম এখানে গুরুত্বপূর্ণ।
লাইভ সম্প্রচারে হঠাৎ সময় পরিবর্তন হলে কীভাবে সামলান?
লাইভ নিউজে যেকোনো কিছুর জন্যই প্রস্তুত থাকতে হয়। প্রেজেন্টারদের কানে একটা গোপন টকব্যাক লাগানো থাকে। যার সঙ্গে পিসিআর অর্থাৎ প্রডিউসার কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে হয়। প্রডিউসার যেকোনো আপডেট নিউজ টকব্যাকে জানিয়ে দেন। সেটার জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকতে হয়। খুব ঠান্ডা মাথায় যেকোনো ব্রেকিং বুঝে তারপর ডেলিভারি দিতে হয়।
উপস্থাপনার সময় ঘড়ি বা প্রম্পটার দেখে কীভাবে সময় নিয়ন্ত্রণ করেন?
পুরো নিউজটা একটা টাইমফ্রেমে বাঁধা থাকে। বিশেষ কারণ ছাড়া এর বাইরে যাওয়া সম্ভব নয়। প্রতিটি নিউজের জন্য আলাদা সময় নির্ধারণ থাকে। সেটা বিবেচনা করেই নিউজ পড়ার গতি নির্ধারণ করতে হয়। সময় কন্ট্রোল করার জন্য পিসিআর এবং এমসিআর-মাস্টার কন্ট্রোল রুম সদা তৎপর থাকে। সেভাবেই একজন নিউজ প্রেজেন্টারকে চলতে হয়।
ক্যামেরার সামনে আত্মবিশ্বাস ধরে রাখার কৌশল কী?
আত্মবিশ্বাসটা অনেক কিছুর সমন্বিত একটা রূপ। যেকোনো ভালো প্রিপারেশন আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। এখানে একজন নিউজ প্রেজেন্টারের ভালো প্রিপারেশন অনেক কিছুর সমন্বয়ে হয়ে থাকে। যেমন তাঁর উচ্চারণ, নিউজ সম্পর্কে সঠিক ধারণা। নিউজ রুম, পিসিআর, এমসিআর, রানডাউন (যেখানে নিউজের ধারাবাহিকতা সাজানো থাকে) সম্পর্কে ধারণা থাকলে তাঁর আত্মবিশ্বাস অটুট থাকে।
ভুল হয়ে গেলে কীভাবে পরিস্থিতি সামলান?
লাইভ নিউজে ভুল হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। তবে বারবার একই ভুল যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হয়। ভুল হলে দর্শকের কাছে বিনয়ের সঙ্গে সেটি উপস্থাপন করাটাও ভালো প্রেজেন্টারের কাজ। দর্শকের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রাখতে হয়।
লাইভ নিউজে হঠাৎ অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি এলে আপনার মানসিক কৌশল কেমন থাকে?
লাইভ নিউজে প্রতিটি সেকেন্ডই চ্যালেঞ্জের। যেকোনো অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হলে মাথা সম্পূর্ণ ঠান্ডা রেখে সামলাতে হয়। মানসিকভাবে সব সময় প্রস্তুত থাকতে হয়। আমি সব সময় একটা কথা বলি, একজন নিউজ প্রেজেন্টারকে একটা লোকাল বাসের ড্রাইভারের ভূমিকা পালন করতে হয়। লোকাল বাসের ড্রাইভারকে যেমনিভাবে হরেক রকমের যাত্রীর কথা শুনেও হেলপারের সহযোগিতায় সঠিকভাবে গাড়ি চালাতে হয়, তেমনি প্রেজেন্টারকেও পিসিআরের শত কথা কানে নিয়েও প্রডিউসারের সঠিক দিকনির্দেশনায় টিভি স্টেশন চালাতে হয়। মনে রাখতে হয়, একজন নিউজ প্রেজেন্টার একটি নিউজ বুলেটিনের লাস্ট গেটওয়ে। তাই তাঁকে অনেক সতর্ক থাকতে হয়।
দর্শকদের আগ্রহ ধরে রাখতে আপনি কীভাবে সংবাদ উপস্থাপন করেন?
আমি তো ভাবি, আমি একজন দর্শকের ঘরের লোক। ভাবি নিউজের মাধ্যমে আমি গ্রামের একজন চাষি থেকে শুরু করে দেশের প্রধানের সঙ্গেও নিউজের মাধ্যমে যোগাযোগ করে থাকি। প্রতিটি সংবাদের আলাদা আবেদন আছে। চেষ্টা করি সেটাকে সেভাবেই উপস্থাপনের। দর্শক যেমন আমাদের সবচেয়ে কাছের মানুষ মনে করে, তেমনি সেভাবেই তার মনোজগতের কথা চিন্তা করে সংবাদ পরিবেশনের চেষ্টা করি।
সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে আপনি কতটা নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করেন?
শিশু আর পাগল ছাড়া সবারই নিজস্ব মতাদর্শ আছে। এটা যেমন সঠিক, তেমনি সংবাদিকদেরও নিজস্ব মতাদর্শ থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু পেশাগত দায়িত্ব পালনে তাঁকে শতভাগ সেটি নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। কারণ দর্শক পক্ষপাতদুষ্ট নিউজ প্রেজেন্টার কিংবা সাংবাদিক কাউকেই পছন্দ করেন না। সচেতন দর্শকও চান না তাঁর দলের হয়ে সাংবাদিক কথা বলুক। তিনিও চান সাংবাদিক তাঁর নিউজে বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখুক। তাই এসব ব্যাপার মাথায় রেখেই আমাদের চলতে হয়।
যারা ভবিষ্যতে সংবাদ উপস্থাপক হতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
অধ্যবসায়ের কোনো বিকল্প নেই। আমার মনে আছে, যখন থেকে সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার জন্য মনস্থির করেছি, তখন রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতেও নিউজের লিংক পড়তাম। চেষ্টা করতাম কতটা হৃদয়গ্রাহী করে একটা সংবাদ উপস্থাপন করা যায়। তাই আমার কাছে মনে হয়, সঠিক রাস্তা চিনে লেগে থাকতে পারলে সফলতা আসবেই। সেটা ভিন্নভাবে হলেও। তবে পরিশ্রম কখনো বৃথা যায় না। সেটা কোনো না কোনোভাবে কাজে লাগে।
সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার জন্য কোন গুণ বা দক্ষতা সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বলে মনে করেন?
সবার আগে এটাকে পেশা হিসেবে নিতে মনস্থির করা। শখের বসে নয়। আপনাকে কোনো একটি পেশায় টিকে থাকতে হলে সে পেশার উপযোগী যত গুণ আছে, সেগুলো রপ্ত করার চেষ্টা করতে হবে। যেমন নিজের উচ্চারণ ঠিক রাখ, আঞ্চলিকতা পরিহার করা। সর্বোপরি নিজেকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা।
কীভাবে আপনি সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন?
প্রতিটি স্বপ্নের পেছনে একটি করে গল্প থাকে। আমার সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার অনুপ্রেরণারও তেমনি একটি গল্প আছে। সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার আগেও ছোটবেলা থেকে আমার বড় মামাকে দেখেছি, তাঁর কথা বলার স্টাইল ছিল ভীষণ হৃদয়গ্রাহী, যা মানুষকে খুব কাছে টানত। ঠিক তখন থেকেই বড় মামা হয়ে যান আমার সুপার হিরো। আমিও চেষ্টা করতাম তেমন করে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। তারপর দেখলাম এর সেরা উপায় হলো সংবাদ উপস্থাপক হওয়া। তাঁদের সুন্দর করে কথা বলাটা আমার পছন্দ হতো। সেখান থেকেই মূলত অনুপ্রাণিত হওয়া। তা ছাড়া আমার মরহুম আব্বুর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তাঁর উৎসাহ আর অনুপ্রেরণা এবং আমার আম্মুর নীরব সমর্থন আমাকে এ পেশায় আসতে সহযোগিতা করেছে।
শুরুতে সংবাদ উপস্থাপনার প্রশিক্ষণ বা প্রস্তুতি কেমন ছিল?
ছোটবেলা থেকেই কবিতা আবৃত্তি করতাম। সেটাও বড় মামার হাত ধরেই। বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই যখন নিউজ প্রেজেন্টার হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম, তখন থেকেই চিন্তা করতাম এখানে শুদ্ধ উচ্চারণের বিকল্প নেই। তাই উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে টিএসসিভিত্তিক একটি আবৃত্তি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হই। সেখানেও নিউজ প্রেজেন্টেশনের ক্লাস হতো। তারপর শুধু নিউজ প্রেজেন্টেশনের জন্য একটা একাডেমিতে ভর্তি হই। সেখানে ভর্তি ফি ছিল ৭ হাজার টাকা। পুরোটা দেওয়ার সামর্থ্য তখন ছিল না। তাই তাদের বলেছিলাম, ইনশা আল্লাহ একদিন নিউজ প্রেজেন্টার হয়ে আপনাদের এখানে ফ্রি ক্লাস নেব। সেই থেকে মনের মধ্যে ইচ্ছাটাও প্রবল হয়েছিল।
প্রথমবার লাইভ নিউজ উপস্থাপন করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
প্রথমবার একটা অনলাইন টিভিতে নিউজ পড়েছিলাম। তাদেরও অভিষেক হয়েছিল আমাকে দিয়ে। তাই উচ্ছ্বাসটা দু’পক্ষেরই একটু বেশি ছিল। আমি তাদের গ্রুমিং করা প্রেজেন্টারদের মধ্যে প্রথম ছিলাম। নিজেকে প্রথম কোনো পর্দায় দেখে কি যে ভালো লেগেছিল, তা বলার ভাষা নেই।
উপস্থাপনায় ভাষা, উচ্চারণ ও টোন কতটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন?
এ পেশাটা অন্য যেকোনো পেশার চেয়ে একটু আলাদা। এমনকি বাচিক যেকোনো পেশার চেয়েও। যেমন কাস্টমার কেয়ার, কিংবা কল সেন্টার থেকেও। এখানে ভুল উচ্চারণের কোনো মার্সি বা ক্ষমা নেই। তবে এখানে সংবাদের ভিন্নতার কারণে টোনের পরিবর্তন করতে হয়। নিউজের ভিন্ন ভিন্ন আবেদন টোনের ওঠানামায় ফুটিয়ে তুলতে হয়। টোনের ভেরিয়েশনের কারণে দর্শকের কানও প্রশান্তি পায়।
সংবাদ উপস্থাপনায় সময় ব্যবস্থাপনা বা কলাকৌশল কীভাবে পালন করেন?
এখানে সময় ব্যবস্থাপনাটা সবার আগে। প্রতিটি ন্যানো সেকেন্ডের মূল্য এখানে দিতে হয়। নিউজ শুরুর অনেক আগেই একজন প্রেজেন্টারকে স্টেশনে হাজির থাকতে হয়। সবকিছু বুঝে নিতে হয়। নিউজ শুরু হলে তো তাঁকে আরও বেশি প্রস্তুত থাকতে হয় সময় সম্পর্কে। কারণ প্রতিটি টাইমফ্রেম এখানে গুরুত্বপূর্ণ।
লাইভ সম্প্রচারে হঠাৎ সময় পরিবর্তন হলে কীভাবে সামলান?
লাইভ নিউজে যেকোনো কিছুর জন্যই প্রস্তুত থাকতে হয়। প্রেজেন্টারদের কানে একটা গোপন টকব্যাক লাগানো থাকে। যার সঙ্গে পিসিআর অর্থাৎ প্রডিউসার কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে হয়। প্রডিউসার যেকোনো আপডেট নিউজ টকব্যাকে জানিয়ে দেন। সেটার জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকতে হয়। খুব ঠান্ডা মাথায় যেকোনো ব্রেকিং বুঝে তারপর ডেলিভারি দিতে হয়।
উপস্থাপনার সময় ঘড়ি বা প্রম্পটার দেখে কীভাবে সময় নিয়ন্ত্রণ করেন?
পুরো নিউজটা একটা টাইমফ্রেমে বাঁধা থাকে। বিশেষ কারণ ছাড়া এর বাইরে যাওয়া সম্ভব নয়। প্রতিটি নিউজের জন্য আলাদা সময় নির্ধারণ থাকে। সেটা বিবেচনা করেই নিউজ পড়ার গতি নির্ধারণ করতে হয়। সময় কন্ট্রোল করার জন্য পিসিআর এবং এমসিআর-মাস্টার কন্ট্রোল রুম সদা তৎপর থাকে। সেভাবেই একজন নিউজ প্রেজেন্টারকে চলতে হয়।
ক্যামেরার সামনে আত্মবিশ্বাস ধরে রাখার কৌশল কী?
আত্মবিশ্বাসটা অনেক কিছুর সমন্বিত একটা রূপ। যেকোনো ভালো প্রিপারেশন আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। এখানে একজন নিউজ প্রেজেন্টারের ভালো প্রিপারেশন অনেক কিছুর সমন্বয়ে হয়ে থাকে। যেমন তাঁর উচ্চারণ, নিউজ সম্পর্কে সঠিক ধারণা। নিউজ রুম, পিসিআর, এমসিআর, রানডাউন (যেখানে নিউজের ধারাবাহিকতা সাজানো থাকে) সম্পর্কে ধারণা থাকলে তাঁর আত্মবিশ্বাস অটুট থাকে।
ভুল হয়ে গেলে কীভাবে পরিস্থিতি সামলান?
লাইভ নিউজে ভুল হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। তবে বারবার একই ভুল যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হয়। ভুল হলে দর্শকের কাছে বিনয়ের সঙ্গে সেটি উপস্থাপন করাটাও ভালো প্রেজেন্টারের কাজ। দর্শকের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রাখতে হয়।
লাইভ নিউজে হঠাৎ অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি এলে আপনার মানসিক কৌশল কেমন থাকে?
লাইভ নিউজে প্রতিটি সেকেন্ডই চ্যালেঞ্জের। যেকোনো অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হলে মাথা সম্পূর্ণ ঠান্ডা রেখে সামলাতে হয়। মানসিকভাবে সব সময় প্রস্তুত থাকতে হয়। আমি সব সময় একটা কথা বলি, একজন নিউজ প্রেজেন্টারকে একটা লোকাল বাসের ড্রাইভারের ভূমিকা পালন করতে হয়। লোকাল বাসের ড্রাইভারকে যেমনিভাবে হরেক রকমের যাত্রীর কথা শুনেও হেলপারের সহযোগিতায় সঠিকভাবে গাড়ি চালাতে হয়, তেমনি প্রেজেন্টারকেও পিসিআরের শত কথা কানে নিয়েও প্রডিউসারের সঠিক দিকনির্দেশনায় টিভি স্টেশন চালাতে হয়। মনে রাখতে হয়, একজন নিউজ প্রেজেন্টার একটি নিউজ বুলেটিনের লাস্ট গেটওয়ে। তাই তাঁকে অনেক সতর্ক থাকতে হয়।
দর্শকদের আগ্রহ ধরে রাখতে আপনি কীভাবে সংবাদ উপস্থাপন করেন?
আমি তো ভাবি, আমি একজন দর্শকের ঘরের লোক। ভাবি নিউজের মাধ্যমে আমি গ্রামের একজন চাষি থেকে শুরু করে দেশের প্রধানের সঙ্গেও নিউজের মাধ্যমে যোগাযোগ করে থাকি। প্রতিটি সংবাদের আলাদা আবেদন আছে। চেষ্টা করি সেটাকে সেভাবেই উপস্থাপনের। দর্শক যেমন আমাদের সবচেয়ে কাছের মানুষ মনে করে, তেমনি সেভাবেই তার মনোজগতের কথা চিন্তা করে সংবাদ পরিবেশনের চেষ্টা করি।
সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে আপনি কতটা নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করেন?
শিশু আর পাগল ছাড়া সবারই নিজস্ব মতাদর্শ আছে। এটা যেমন সঠিক, তেমনি সংবাদিকদেরও নিজস্ব মতাদর্শ থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু পেশাগত দায়িত্ব পালনে তাঁকে শতভাগ সেটি নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। কারণ দর্শক পক্ষপাতদুষ্ট নিউজ প্রেজেন্টার কিংবা সাংবাদিক কাউকেই পছন্দ করেন না। সচেতন দর্শকও চান না তাঁর দলের হয়ে সাংবাদিক কথা বলুক। তিনিও চান সাংবাদিক তাঁর নিউজে বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখুক। তাই এসব ব্যাপার মাথায় রেখেই আমাদের চলতে হয়।
যারা ভবিষ্যতে সংবাদ উপস্থাপক হতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
অধ্যবসায়ের কোনো বিকল্প নেই। আমার মনে আছে, যখন থেকে সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার জন্য মনস্থির করেছি, তখন রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতেও নিউজের লিংক পড়তাম। চেষ্টা করতাম কতটা হৃদয়গ্রাহী করে একটা সংবাদ উপস্থাপন করা যায়। তাই আমার কাছে মনে হয়, সঠিক রাস্তা চিনে লেগে থাকতে পারলে সফলতা আসবেই। সেটা ভিন্নভাবে হলেও। তবে পরিশ্রম কখনো বৃথা যায় না। সেটা কোনো না কোনোভাবে কাজে লাগে।
সংবাদ উপস্থাপক হওয়ার জন্য কোন গুণ বা দক্ষতা সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বলে মনে করেন?
সবার আগে এটাকে পেশা হিসেবে নিতে মনস্থির করা। শখের বসে নয়। আপনাকে কোনো একটি পেশায় টিকে থাকতে হলে সে পেশার উপযোগী যত গুণ আছে, সেগুলো রপ্ত করার চেষ্টা করতে হবে। যেমন নিজের উচ্চারণ ঠিক রাখ, আঞ্চলিকতা পরিহার করা। সর্বোপরি নিজেকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা।

পুরান ঢাকার মানুষ সৈয়দ রুমা। মডেলিং জগতের বেশ ডাকসাইটে নাম। প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি মডেলিং জগতের সঙ্গে যুক্ত। এক সময় র্যাম্পে হেঁটেছেন দাপটের সঙ্গে। এখন খুব কম হাঁটলেও করিওগ্রাফ নিয়ে কাজ করেন। দুটি সিনেমার আইটেম গানে নেচেছেন। অভিনয় করেছেন টেলিভিশন নাটকে। এখন করিওগ্রাফ ও নিজের প্রতিষ্ঠান ‘আর বাই রুমা’
১৬ নভেম্বর ২০২১
নাট্যদল বিবেকানন্দ থিয়েটারের ২৫তম প্রযোজনা ‘ভাসানে উজান’। গত নভেম্বরে মঞ্চে এসেছে নাটকটি। ২৯ ডিসেম্বর রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে সন্ধ্যা ৭টায় মঞ্চস্থ হবে নাটকটির চতুর্থ প্রদর্শনী। অপূর্ব কুমার কুণ্ডুর নাট্যরূপ এবং শুভাশীষ দত্ত তন্ময়ের নির্দেশনায় একক অভিনয় করেছেন মো. এরশাদ হাসান।
৪ ঘণ্টা আগে
দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর রায়হান রাফী পরিচালিত ‘অমীমাংসিত’ ওয়েব ফিল্মের মুক্তির ঘোষণা এসেছে। ৪ ডিসেম্বর ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আইস্ক্রিনে মুক্তি পাবে সিনেমাটি। এতে অভিনয় করেছেন ইমতিয়াজ বর্ষণ। এ ছাড়া আসছে ডিসেম্বরে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে তাঁর অভিনীত ‘এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি’।
০১ ডিসেম্বর ২০২৫
ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগ থেকে সিজিপিএ–৪ এর মধ্যে ৪ পেয়েছেন ইউসুফ ইবনে কামাল নিলয়। গত ২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টির ৩৭তম সমাবর্তনে এমন সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে ওআইসি স্বর্ণপদক দেওয়া হয়।
১৫ নভেম্বর ২০২৫
দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর রায়হান রাফী পরিচালিত ‘অমীমাংসিত’ ওয়েব ফিল্মের মুক্তির ঘোষণা এসেছে। ৪ ডিসেম্বর ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আইস্ক্রিনে মুক্তি পাবে সিনেমাটি। এতে অভিনয় করেছেন ইমতিয়াজ বর্ষণ। এ ছাড়া আসছে ডিসেম্বরে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে তাঁর অভিনীত ‘এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি’। আগামী জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশে প্যানোরামা বিভাগে জায়গা করে নিয়েছে বর্ষণ অভিনীত দুটি সিনেমা। ইমতিয়াজ বর্ষণের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শিহাব আহমেদ।
শিহাব আহমেদ

দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর অবশেষে মুক্তি পাচ্ছে ওয়েব ফিল্ম অমীমাংসিত। কেমন লাগছে?
আমরা অভিনয়শিল্পীরা কাজ করি দর্শকের জন্য। সেই কাজটা অনেক দিন আটকে থাকা অবশ্যই কষ্টের। অবশেষে ওয়েব ফিল্মটি দর্শক দেখতে পারবেন, এটাই সবচেয়ে ভালো লাগার। সিনেমাটিতে রহস্যের গন্ধ রয়েছে। রহস্যজনকভাবে কে বা কারা খুন করেছে, এর প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। এটি বানিয়েছেন রায়হান রাফী। ভিজ্যুয়াল লুকেও দর্শক নতুনত্ব পাবেন।
ওটিটি কনটেন্ট হওয়ার পরেও গত বছর তৎকালীন সেন্সর বোর্ড আটকে দিয়েছিল সিনেমাটি। অনেকেই বলছেন এটি নির্মিত হয়েছে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড নিয়ে। আপনিও কি মনে করেন এই কারণেই এটি আটকে দেওয়া হয়েছিল?
একদম তাই। সবাই যেটা ধারণা করেছে, সেই কারণেই সিনেমাটি এত দিন আটকে ছিল। তৎকালীন সেন্সর বোর্ড গল্পটি সেনসেটিভ ভেবে সিনেমাটি আটকে দিয়েছিল। মুক্তির আগে এর বেশি এখন বলতে চাই না।
এটা নিয়ে প্রথম থেকেই অনেক আলোচনা। দর্শকেরও আলাদা আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে কোনো চাপ অনুভব করছেন?
প্রতিটি কাজই শিল্পী ও নির্মাতাদের একধরনের প্রেশার ক্রিয়েট করে। আমি নিজেও যেকোনো কাজ মুক্তির আগে চাপ অনুভব করি। দর্শক কীভাবে নেবেন, তাঁদের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে। আমরা তো আসলে দর্শকদের ভালো লাগার জন্য, তাঁদের বিনোদন দেওয়ার জন্য কাজ করি। দর্শকের সন্তুষ্টি আমাদের জন্য আশীর্বাদ। অভিনেতা হিসেবে সব সময় আশা রাখি আমার কাজটি যেন দর্শকের ভালো লাগে, গুণে মানে যেন সবার মনঃপূত হয়।
ডিসেম্বরে প্রেক্ষাগৃহেও আপনার সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে। সেই সিনেমা নিয়ে কিছু বলুন।
‘এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি’ নামের সিনেমাটি বানিয়েছেন আহমেদ হাসান সানি। ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলন, এর পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ের গল্প নিয়ে সিনেমা। আমাদের দেশের রাজনীতির হালচাল দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ফুটে উঠেছে রাজনীতি নিয়ে মানুষের ভাবনা। আমাদের দেশে অনেক রেস্টুরেন্ট বা আড্ডার স্থানে লেখা থাকে এখানে রাজনৈতিক আলাপ নিষিদ্ধ বা করা যাবে না। আমি মনে করি, এটা মিস কনসেপ্ট। রাজনৈতিক আলাপ প্রতিটি জায়গায় হওয়া উচিত। কারণ, আমরা কেউ রাজনীতির বাইরে নই। প্রতিটি মানুষ রাজনীতির অংশ। সেটা সচেতনভাবে হোক কিংবা অসচেতনভাবে। যারা সচেতন, তারা একটু দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সক্রিয় থাকে। কিন্তু যারা রাজনৈতিকভাবে অসচেতন বা কেয়ারলেস, তাদেরও একটা ভূমিকা থাকে।
এটা আহমেদ হাসান সানির প্রথম সিনেমা। নির্মাতা হিসেবে কেমন লাগল তাঁকে?
এর আগে আহমেদ হাসান সানির নির্দেশনায় বিজ্ঞাপনে কাজ করেছি। তবে নির্মাতা হিসেবে আগে থেকেই তাঁকে চিনি। উনি একজন আধুনিক নির্মাতা, তাঁর ভাবনাও আধুনিক। ছোটখাটো বিষয়েও সমান খেয়াল রাখেন তিনি। চিত্রনাট্য, অ্যাক্টিং, সেট—সব ব্যাপারেই তিনি খুঁতখুঁতে। এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি সিনেমাটি দেখার সময় দর্শক তাঁর যত্নের ছাপ দেখতে পাবেন। আমি বিশ্বাস করি, ওনার কাছ থেকে ভালো মানের আরও কাজ পাওয়া যাবে।
সম্প্রতি ছাড়পত্র পেয়েছে আপনার আরেক সিনেমা ‘যাপিত জীবন’। সেই সিনেমার গল্প কী নিয়ে?
এটি একটি পিরিয়ডিকাল সিনেমা। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গল্প। এই সিনেমায় আরও অভিনয় করেছেন আফজাল হোসেন, রোকেয়া প্রাচী, আশনা হাবিব ভাবনা প্রমুখ। পরিচালনা করেছেন হাবিবুল ইসলাম হাবিব।
এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি এবং যাপিত জীবন সিনেমা দুটি ঢাকা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের বাংলাদেশ প্যানোরামা বিভাগে প্রদর্শিত হবে। কেমন অনুভূতি?
২০২০ সাল থেকে প্রায় প্রতিবছর ঢাকা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে আমার কোনো না কোনো সিনেমা প্রদর্শিত হয়। এটা আমার জন্য আনন্দের ও গর্বের। এ বছর দুটি পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা জায়গা পেয়েছে বাংলাদেশ প্যানোরামা বিভাগে। শুনছি দুটি সিনেমাই ডিসেম্বরে মুক্তি পাবে। এটা নিয়ে আমার আপত্তি আছে। ভিন্ন সময়ে সিনেমা দুটি মুক্তি পেলে ভালো হতো।
সিনেমা মুক্তি নিয়ে এই আপত্তির কথা জানিয়েছেন নির্মাতাদের?
এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি নিয়ে নির্মাতার সঙ্গে আলাপ হয়েছে। ওনারা সিনেমার মুক্তি ও প্রমোশন নিয়ে তাঁদের পরিকল্পনার কথা আমাকে জানিয়েছেন। যাপিত জীবন নিয়ে আমি অফিশিয়ালি এখনো কিছু জানি না। তাই কথা হয়নি।
‘রবি ইন ঢাকা’ নামের সিনেমার শুটিং করছেন। এ সিনেমাটি নিয়ে বলুন।
ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এই সিনেমার শুটিং শিডিউল আছে। এরপর একটা বিরতি নিয়ে শুরু হবে পরের লটের শুটিং। এই সিনেমার গল্পটিও সমকালীন। নতুন প্রজন্মের কথা আছে। আসলে আমরা যেই সময়েই বসবাস করি না কেন, দুঃখ-কষ্ট, আনন্দ-বেদনা আমাদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে। এই শহরে অনেক মানুষ দেখি যাদের দূর থেকে দেখলে মনে হয় সুখে আছে। কিন্তু আসলে তাদের ভেতরে অনেক কষ্ট। নানা ধরনের কষ্টের মাঝেও আমরা এই শহরে আনন্দ খুঁজে বেড়াই। এমন একটা গল্প নিয়েই রবি ইন ঢাকা। গল্পে মিস্ট্রি আছে, সাসপেন্সও আছে। পরিচালনা করছেন রাজীব সালেহীন।
দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর অবশেষে মুক্তি পাচ্ছে ওয়েব ফিল্ম অমীমাংসিত। কেমন লাগছে?
আমরা অভিনয়শিল্পীরা কাজ করি দর্শকের জন্য। সেই কাজটা অনেক দিন আটকে থাকা অবশ্যই কষ্টের। অবশেষে ওয়েব ফিল্মটি দর্শক দেখতে পারবেন, এটাই সবচেয়ে ভালো লাগার। সিনেমাটিতে রহস্যের গন্ধ রয়েছে। রহস্যজনকভাবে কে বা কারা খুন করেছে, এর প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। এটি বানিয়েছেন রায়হান রাফী। ভিজ্যুয়াল লুকেও দর্শক নতুনত্ব পাবেন।
ওটিটি কনটেন্ট হওয়ার পরেও গত বছর তৎকালীন সেন্সর বোর্ড আটকে দিয়েছিল সিনেমাটি। অনেকেই বলছেন এটি নির্মিত হয়েছে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড নিয়ে। আপনিও কি মনে করেন এই কারণেই এটি আটকে দেওয়া হয়েছিল?
একদম তাই। সবাই যেটা ধারণা করেছে, সেই কারণেই সিনেমাটি এত দিন আটকে ছিল। তৎকালীন সেন্সর বোর্ড গল্পটি সেনসেটিভ ভেবে সিনেমাটি আটকে দিয়েছিল। মুক্তির আগে এর বেশি এখন বলতে চাই না।
এটা নিয়ে প্রথম থেকেই অনেক আলোচনা। দর্শকেরও আলাদা আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে কোনো চাপ অনুভব করছেন?
প্রতিটি কাজই শিল্পী ও নির্মাতাদের একধরনের প্রেশার ক্রিয়েট করে। আমি নিজেও যেকোনো কাজ মুক্তির আগে চাপ অনুভব করি। দর্শক কীভাবে নেবেন, তাঁদের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে। আমরা তো আসলে দর্শকদের ভালো লাগার জন্য, তাঁদের বিনোদন দেওয়ার জন্য কাজ করি। দর্শকের সন্তুষ্টি আমাদের জন্য আশীর্বাদ। অভিনেতা হিসেবে সব সময় আশা রাখি আমার কাজটি যেন দর্শকের ভালো লাগে, গুণে মানে যেন সবার মনঃপূত হয়।
ডিসেম্বরে প্রেক্ষাগৃহেও আপনার সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে। সেই সিনেমা নিয়ে কিছু বলুন।
‘এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি’ নামের সিনেমাটি বানিয়েছেন আহমেদ হাসান সানি। ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলন, এর পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ের গল্প নিয়ে সিনেমা। আমাদের দেশের রাজনীতির হালচাল দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ফুটে উঠেছে রাজনীতি নিয়ে মানুষের ভাবনা। আমাদের দেশে অনেক রেস্টুরেন্ট বা আড্ডার স্থানে লেখা থাকে এখানে রাজনৈতিক আলাপ নিষিদ্ধ বা করা যাবে না। আমি মনে করি, এটা মিস কনসেপ্ট। রাজনৈতিক আলাপ প্রতিটি জায়গায় হওয়া উচিত। কারণ, আমরা কেউ রাজনীতির বাইরে নই। প্রতিটি মানুষ রাজনীতির অংশ। সেটা সচেতনভাবে হোক কিংবা অসচেতনভাবে। যারা সচেতন, তারা একটু দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সক্রিয় থাকে। কিন্তু যারা রাজনৈতিকভাবে অসচেতন বা কেয়ারলেস, তাদেরও একটা ভূমিকা থাকে।
এটা আহমেদ হাসান সানির প্রথম সিনেমা। নির্মাতা হিসেবে কেমন লাগল তাঁকে?
এর আগে আহমেদ হাসান সানির নির্দেশনায় বিজ্ঞাপনে কাজ করেছি। তবে নির্মাতা হিসেবে আগে থেকেই তাঁকে চিনি। উনি একজন আধুনিক নির্মাতা, তাঁর ভাবনাও আধুনিক। ছোটখাটো বিষয়েও সমান খেয়াল রাখেন তিনি। চিত্রনাট্য, অ্যাক্টিং, সেট—সব ব্যাপারেই তিনি খুঁতখুঁতে। এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি সিনেমাটি দেখার সময় দর্শক তাঁর যত্নের ছাপ দেখতে পাবেন। আমি বিশ্বাস করি, ওনার কাছ থেকে ভালো মানের আরও কাজ পাওয়া যাবে।
সম্প্রতি ছাড়পত্র পেয়েছে আপনার আরেক সিনেমা ‘যাপিত জীবন’। সেই সিনেমার গল্প কী নিয়ে?
এটি একটি পিরিয়ডিকাল সিনেমা। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গল্প। এই সিনেমায় আরও অভিনয় করেছেন আফজাল হোসেন, রোকেয়া প্রাচী, আশনা হাবিব ভাবনা প্রমুখ। পরিচালনা করেছেন হাবিবুল ইসলাম হাবিব।
এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি এবং যাপিত জীবন সিনেমা দুটি ঢাকা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের বাংলাদেশ প্যানোরামা বিভাগে প্রদর্শিত হবে। কেমন অনুভূতি?
২০২০ সাল থেকে প্রায় প্রতিবছর ঢাকা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে আমার কোনো না কোনো সিনেমা প্রদর্শিত হয়। এটা আমার জন্য আনন্দের ও গর্বের। এ বছর দুটি পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা জায়গা পেয়েছে বাংলাদেশ প্যানোরামা বিভাগে। শুনছি দুটি সিনেমাই ডিসেম্বরে মুক্তি পাবে। এটা নিয়ে আমার আপত্তি আছে। ভিন্ন সময়ে সিনেমা দুটি মুক্তি পেলে ভালো হতো।
সিনেমা মুক্তি নিয়ে এই আপত্তির কথা জানিয়েছেন নির্মাতাদের?
এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি নিয়ে নির্মাতার সঙ্গে আলাপ হয়েছে। ওনারা সিনেমার মুক্তি ও প্রমোশন নিয়ে তাঁদের পরিকল্পনার কথা আমাকে জানিয়েছেন। যাপিত জীবন নিয়ে আমি অফিশিয়ালি এখনো কিছু জানি না। তাই কথা হয়নি।
‘রবি ইন ঢাকা’ নামের সিনেমার শুটিং করছেন। এ সিনেমাটি নিয়ে বলুন।
ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এই সিনেমার শুটিং শিডিউল আছে। এরপর একটা বিরতি নিয়ে শুরু হবে পরের লটের শুটিং। এই সিনেমার গল্পটিও সমকালীন। নতুন প্রজন্মের কথা আছে। আসলে আমরা যেই সময়েই বসবাস করি না কেন, দুঃখ-কষ্ট, আনন্দ-বেদনা আমাদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে। এই শহরে অনেক মানুষ দেখি যাদের দূর থেকে দেখলে মনে হয় সুখে আছে। কিন্তু আসলে তাদের ভেতরে অনেক কষ্ট। নানা ধরনের কষ্টের মাঝেও আমরা এই শহরে আনন্দ খুঁজে বেড়াই। এমন একটা গল্প নিয়েই রবি ইন ঢাকা। গল্পে মিস্ট্রি আছে, সাসপেন্সও আছে। পরিচালনা করছেন রাজীব সালেহীন।

পুরান ঢাকার মানুষ সৈয়দ রুমা। মডেলিং জগতের বেশ ডাকসাইটে নাম। প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি মডেলিং জগতের সঙ্গে যুক্ত। এক সময় র্যাম্পে হেঁটেছেন দাপটের সঙ্গে। এখন খুব কম হাঁটলেও করিওগ্রাফ নিয়ে কাজ করেন। দুটি সিনেমার আইটেম গানে নেচেছেন। অভিনয় করেছেন টেলিভিশন নাটকে। এখন করিওগ্রাফ ও নিজের প্রতিষ্ঠান ‘আর বাই রুমা’
১৬ নভেম্বর ২০২১
নাট্যদল বিবেকানন্দ থিয়েটারের ২৫তম প্রযোজনা ‘ভাসানে উজান’। গত নভেম্বরে মঞ্চে এসেছে নাটকটি। ২৯ ডিসেম্বর রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে সন্ধ্যা ৭টায় মঞ্চস্থ হবে নাটকটির চতুর্থ প্রদর্শনী। অপূর্ব কুমার কুণ্ডুর নাট্যরূপ এবং শুভাশীষ দত্ত তন্ময়ের নির্দেশনায় একক অভিনয় করেছেন মো. এরশাদ হাসান।
৪ ঘণ্টা আগে
টেলিভিশন চ্যানেল বাংলা ভিশনের জনপ্রিয় সংবাদ উপস্থাপক মামুন আব্দুল্লাহর সাবলীল উপস্থাপনার পেছনে রয়েছে দীর্ঘ অনুশীলন, দক্ষতা ও অবিচল আত্মবিশ্বাস। তাঁর সঙ্গে কথোপকথনে উঠে এসেছে সংবাদ উপস্থাপনার কৌশল, লাইভ সম্প্রচারের চাপ সামলানোর বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং এ পেশায় আগ্রহীদের জন্য মূল্যবান পরামর্শ।
১৩ দিন আগে
ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগ থেকে সিজিপিএ–৪ এর মধ্যে ৪ পেয়েছেন ইউসুফ ইবনে কামাল নিলয়। গত ২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টির ৩৭তম সমাবর্তনে এমন সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে ওআইসি স্বর্ণপদক দেওয়া হয়।
১৫ নভেম্বর ২০২৫
ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগ থেকে সিজিপিএ–৪ এর মধ্যে ৪ পেয়েছেন ইউসুফ ইবনে কামাল নিলয়। গত ২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টির ৩৭তম সমাবর্তনে এমন সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে ওআইসি স্বর্ণপদক দেওয়া হয়। নিলয় বিশ্ববিদ্যালয়টির ২০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি নিজের অসামান্য কৃতিত্বের নেপথ্যের গল্প জানিয়েছেন আজকের পত্রিকাকে। তার কথাগুলো শুনেছেন ইলিয়াস শান্ত।
ইলিয়াস শান্ত

গত ২৭ অক্টোবর আইইউটির ৩৭ তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আপনি এতে অংশ নিয়েছেন। আপনার বিভাগ ও ফলাফল সম্পর্কে বলুন।
কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগ থেকে আমি গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছি। প্রথম সেমিস্টারে একটি কোর্সে এ+ পাইনি। তাই সেই সেমিস্টারে আমার জিপিএ ছিল ৩.৯৭। তবে এরপরের সাতটি সেমিস্টারেই আমি ধারাবাহিকভাবে ৪.০০ পেয়েছি।
দ্বিতীয় সেমিস্টারে ৪ পাওয়ার পর আমার সিজিপিএ দাঁড়ায় ৩.৯৮। তৃতীয় সেমিস্টারের পর হয় ৩.৯৯। চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ সেমিস্টারে ৪ ধরে রাখতে পারলেও সিজিপিএ তখনও ৩.৯৯ ছিল। শেষ পর্যন্ত সপ্তম সেমিস্টারে ৪ পাওয়ার পর সিজিপিএ অবশেষে ৪–এ পৌঁছায়। তখন সত্যিই আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। এরপর শেষ বা অষ্টম সেমিস্টারেও একই পারফরম্যান্স ধরে রাখার চেষ্টা করি। আলহামদুলিল্লাহ সেটাও সম্ভব হয়। ফলে আমি সিজিপিএ ৪ নিয়ে স্নাতক সম্পন্ন করতে পেরেছি।
এমন সাফল্যের কৃতিত্ব কাকে দিতে চান?
সবার আগে আমি আমার পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞ জানাচ্ছি। তারা সবসময় আমার পাশে থেকেছে। প্রতিটি মুহূর্তে আমাকে সাহস আর অনুপ্রেরণা দিয়েছে। এরপর আমার শিক্ষকদের কথা, যাদের দিকনির্দেশনা ও আন্তরিক সহযোগিতা আমাকে প্রতিটি ধাপে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। আর আমার বন্ধুদের কথাও বলতে হবে। এই চার বছরের যাত্রায় আমার বন্ধুরা সবসময় পাশে থেকেছে–কখনো সহায়তায়, কখনো বা মোটিভেশনে। সবার সম্মিলিত সহযোগিতা আর আমার প্রচেষ্টায় এ জায়গায় পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে।
আপনার বড় বোনের কথা শুনেছি। তাঁর অবদান কতটুকু?
হ্যাঁ, আমার দুজন বড় বোন আছেন। একজন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা শেষ করেছেন। অন্যজন আইইউটির ছাত্রী ছিলেন। তিনি আইইউটির ১৭ তম ব্যাচের বিজনেস টেকনোলজি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। তিনি শুরু থেকেই আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণার একজন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই তিনি আমাকে পড়াশোনার প্রতি সিরিয়াস থাকতে উৎসাহ দিয়েছেন। বিশেষ করে তিনি আমাকে বোঝাতেন নিয়মিত উপস্থিতি বজায় রাখা, কুইজ ও মিডটার্মের মতো মূল্যায়নগুলো গুরুত্ব সহকারে দেওয়া কতটা জরুরি। এগুলোই আসলে একটি ভালো ফলের ভিত্তি তৈরি করেছে। তার দেওয়া পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা আমার পুরো চার বছরের যাত্রায় দারুণভাবে কাজে দিয়েছে।
স্বর্ণপদক পাওয়ার খবরে আপনার বাবা–মা কী বলেছিলেন?
তারা উভয়েই খুব খুশি হয়েছিলেন। তাঁদের মুখে আনন্দের হাসিটা দেখে মনে হয়েছিল, এই মুহূর্তের জন্যই হয়তো তারা এত বছর ধরে পরিশ্রম আর ত্যাগ স্বীকার করে এসেছেন। আমার বাবা একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার। জীবনে তিনি সবসময় নিয়ম, অধ্যবসায় আর সততার মূল্য শিখিয়েছেন। আর মা একজন গৃহিণী। মা আমাদের পরিবারের মূল শক্তি। ছোটবেলা থেকেই তিনি আমাদেরকে শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারূপ করেছেন। সবসময় পাশে থেকেছেন, কখনো ক্লান্ত হননি।
এমন অসামান্য ফলাফল অর্জনে নিজেকে কীভাবে প্রস্তুত করেছিলেন, পড়ালেখার ধরন কেমন ছিল?
প্রথম থেকেই আমি জানতাম সিএসই এমন একটি বিষয়, যেখানে ধারাবাহিক পরিশ্রম ও মনোযোগ ছাড়া ভালো ফল করা সম্ভব নয়। যেহেতু ভর্তি হওয়ার আগে আমার কোডিং নিয়ে তেমন কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না, তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই আমি নিজের ঘাটতি পূরণ করার চেষ্টা শুরু করেছি। ইউটিউবে বিভিন্ন টিউটোরিয়াল দেখে প্রোগ্রামিংয়ের বেসিকগুলো ভালোভাবে আয়ত্ত্ব করে নিয়েছি। আর সেগুলোর ওপর ভিত্তি করে ধীরে ধীরে নিজের দক্ষতা বাড়িয়েছি।
আমার পড়ালেখার ধরনটা ছিল বেশ দলভিত্তিক। আমি সবসময় বন্ধুদের সঙ্গে গ্রুপ স্টাডি করতাম। এতে করে অনেক কঠিন বিষয় সহজে বোঝা যেত। আর কাউকে কোনো বিষয় বুঝিয়ে বলতে গিয়ে নিজের বোঝাটাও আরও মজবুত হতো। এই সহযোগিতামূলক পরিবেশটাই আসলে আমাকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে। এ ছাড়া আমি ক্লাসের উপস্থিতি, কুইজ ও মিডটার্ম পরীক্ষাগুলোতে বেশ গুরুত্ব দিয়েছি। কারণ এগুলোই মূলত চূড়ান্ত ফলে বড় ভূমিকা রাখে। সিনিয়র ভাইদের তৈরি করা নোটগুলোও অনেক সময় কাজে দিয়েছে, বিশেষ করে প্রস্তুতির শেষ মুহূর্তে। সবশেষে, প্রতিটি প্রজেক্টও আমি সমান গুরুত্ব দিয়ে করতাম। যেন শুধু নম্বরের জন্য নয়, শেখার জন্যও কাজটা সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়।
সিজিপিএ–৪ এর মধ্যে ৪ পেয়ে আপনি এখন গ্র্যাজুয়েট। আপনি ওআইসি স্বর্ণপদক পেয়েছেন। অন্য শিক্ষার্থীরা কীভাবে প্রস্তুতি নিলে এমন ফল করতে পারতেন, তাদের প্রস্তুতির কোন কোন জায়গায় ঘাটতি ছিল বলে মনে হয়?
আসলে প্রত্যেকের পড়ার ধরনটা আলাদা হয়। এখানে যে ধরন একজনের জন্য সবচেয়ে কার্যকর, সেটা অন্য কারও জন্য নাও হতে পারে। তাই একেবারে নির্দিষ্টভাবে বলা কঠিন যে, কে কীভাবে পড়লে এমন ফল করতে পারতেন। তবুও আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, কয়েকটা জিনিস নিয়মিতভাবে মেনে চললে ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব। সবচেয়ে আগে, ক্লাসের উপস্থিতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারপর কুইজ আর মিডটার্ম। অনেকে এগুলোকে হালকাভাবে নেন। আমি মনে করি ফলাফলে এগুলোই আসলে মূল ভিত্তি তৈরি করে দেয়। যদি আগে থেকেই কুইজ ও মিডটার্মে ভালো করা যায়, তাহলে ফাইনাল পরীক্ষার সময় চাপ অনেকটাই কমে যায়। আমার গ্রুপ স্টাডির কথা তো আগেই বলেছি। গ্রুপ স্টাডি শেখার পরিবেশটাকে আরও আনন্দদায়ক করে তোলে। কেউ নির্দিষ্ট কোনো বিষয় না বুঝলে অন্য সেটা কেউ বুঝিয়ে দিতে পারছে। এতে পারস্পরিকভাবে সবারই উপকার হয়।
আপনার শৈশব, মাধ্যমিক–উচ্চ মাধ্যমিক ও পরিবার সম্পর্কে জানতে চাই।
আমাদের পারিবারিক শেকড় বরিশালে। তবে আমার শৈশবের একটা অংশ কেটেছে ফরিদপুরে। সেখানে আমি সানরাইজ স্কুলে পড়ালেখা করেছি। পরে পরিবারসহ ঢাকায় চলে আসি। উত্তরায় আসার পর আমি ক্লাস ৩–৫ শ্রেণি পর্যন্ত মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে পড়েছি। এরপর ৬–৯ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছি রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে। পরবর্তীতে আমি আবার মাইলস্টোন কলেজে ভর্তি হই এবং সেখান থেকে মাধ্যমিক সম্পন্ন করি। নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেছি। এখানে আমার কলেজ জীবনের সুন্দর দুইটি বছর কেটেছে।
ছোটবেলায় আপনার কি হওয়ার স্বপ্ন ছিল?
ছোটবেলায় আকাশে প্লেন উড়তে দেখলেই মনে হতো, ‘ইশ! একদিন যদি আমিও এমন করে উড়তে পারতাম!’ তখন পাইলট হওয়ার স্বপ্নটাই ছিল সবচেয়ে বড়। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, আর বাস্তবতা একটু একটু করে বুঝতে শুরু করার পর সেই স্বপ্নটা বদলে গেছে। এটা অনেকের ক্ষেত্রেই হয়। এখন আমার স্বপ্ন একটু অন্যরকম।
পরবর্তী লক্ষ্য কী, কেমন জব অফার পাচ্ছেন?
এখন আমার মূল লক্ষ্য হলো আইইউটির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করা। এজন্যই আমি নিজেকে ধীরে ধীরে প্রস্তুত করছি। যাতে ক্লাসে পড়ানো এবং গবেষণার কাজ–দুটোই ভালোভাবে করতে পারি। একইসঙ্গে গবেষণার মাধ্যমে নতুন কিছু আবিষ্কার করতে চাই। শেখা আর শেখানোর এই প্রক্রিয়াটার ভেতরেই আমি এখন সবচেয়ে বেশি আনন্দ খুঁজে পাই। দূরদৃষ্টি হিসেবে আমার আরও বড় লক্ষ্য হলো–ভবিষ্যতে বিদেশে গিয়ে উচ্চশিক্ষা, বিশেষ করে পিএইচডি করা। আমি গবেষণার মাধ্যমে নতুন নতুন বিষয় জানা ও শেখার সুযোগকে আরও প্রসারিত করতে চাই। আমার বিশ্বাস, এই প্রচেষ্টা আমাদের শিক্ষার্থীদের কাজে দেবে।
আইইউটিতে ফ্যাকাল্টি হিসেবে যোগদানে আগ্রহীদের কোন কোন বিষয়গুলো বেশি বিবেচনায় নেওয়া হয়?
আমার জানা মতে, নির্দিষ্ট কিছু বিষয়কে বিশেষভাবে বিবেচনা করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো: একাডেমিক রেজাল্ট, অর্থাৎ শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং পূর্ববর্তী ফলাফল। এছাড়া গবেষণার অভিজ্ঞতা, প্রকাশনা ও সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতেও গুরুত্ব দেওয়া হয়।
দেশের বাস্তবতায় সিএসই গ্র্যাজুয়েটদের চাকরির সুযোগ কেমন?
বর্তমান বাজারে সিএসই গ্র্যাজুয়েটদের জন্য চাকরি সুযোগ খুবই প্রশস্ত। তবে এতে প্রতিযোগিতা রয়েছে। আমি বলবো, প্রয়োজনীয় দক্ষতা থাকলে চাকরি পাওয়া কঠিন কিছু নয়। আমার বন্ধুবান্ধবের মধ্যে অনেকেই আছেন, যারা তাদের গ্র্যাজুয়েশন শেষ হওয়ার আগেই চাকরি পেয়ে গেছেন। এটা আইইউটির ঐতিহ্য। আইইউটি শিক্ষার্থীদের গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার আগেই চাকরির অফার পাওয়ার বেশ নজির আছে। এটা ভালো একাডেমিক পরিবেশ, যুগোপযোগী সিলেবাস এবং শিক্ষার্থীদের প্রচেষ্টার কারণে সম্ভব হয়েছে। বিভিন্ন কোম্পানি এন্ট্রি লেভেলের চাকরির জন্যেও আইইউটি গ্র্যাজুয়েটদের ভালো বেতন অফার করে থাকে।
উচ্চশিক্ষার জন্য আপনি আইইউটিকে কেন বেছে নিয়েছিলেন?
কলেজ লাইফ শুরুর আগে আমার স্বপ্ন ছিল বুয়েটে পড়ার। তবে তখনো নির্দিষ্ট করে ভাবিনি কোন বিষয়ে পড়বো। এইচএসসির পর আইইউটিতে পরীক্ষা দিয়ে সিএসই বিভাগে চান্স পাই। এরপর বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায়ও সাফল্য আসে। সেখানে পেয়েছিলাম ইইই বিভাগ। কিন্তু ততদিন বুয়েটের ক্লাস শুরু করতে করতে আইইউটিতে আমার প্রথম সেমিস্টারের বেশিরভাগ সময় পার যায়। ওই সময়টায় আমি উপলব্ধি করি, কম্পিউটার সায়েন্সের প্রতি আমার গভীর ভালোবাসা তৈরি হয়েছে। আমি এতে ভালোও করছি। আইইউটির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এখানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো দীর্ঘ সেশনজট নেই। তাই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ডিগ্রি সম্পন্ন করা যায়। একাডেমিক জীবনটা অনেক বেশি সুসংগঠিত থাকে। সবমিলিয়ে আমি বুঝতে পারি, একটি বিষয়ের প্রতি ভালোবাসা এবং একটি অনুকূল একাডেমিক পরিবেশই সর্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তাই বুয়েটের ইইই–এর পরিবর্তে আইইউটির সিএসইতে স্থির হয়ে যাই।
স্নাতকের পুরো জার্নিতে পড়ালেখার পাশাপাশি আপনি আর কি কি করেছিলেন?
পড়ালেখার পাশাপাশি আমি বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে বেড়িয়েছি। নতুন নতুন জায়গা ঘুরে দেখেছি। মাঝে মাঝে ফুটবল, ক্যারমের মতো খেলা খেলেছি। এছাড়া কম্পিউটারে গেমও খেলেছি। পড়ালেখার পাশাপাশি কিছু সময় টিউশনি করেছি। যা নিজের ধারণাকে পরিষ্কার করতে এবং আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে সহায়ক হয়েছে।
সিএসই নিয়ে পড়তে আসা নবীন শিক্ষার্থীদের প্রতি আপনার কি বার্তা থাকবে?
নিজেকে শুধুমাত্র একাডেমিক সিলেবাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। প্রথম থেকেই নিজের মধ্যে বাড়তি শেখার আগ্রহ জাগিয়ে তুলতে হবে। কোড ফোর্স, হ্যাকার র্যাঙ্ক–এর মতো প্ল্যাটফর্মের কনটেস্টে নিয়মিত অংশ নিতে হবে। এ ছাড়া কম্পেটিটিভ প্রোগ্রামিংয়ে মনোযোগ দিলে সমস্যা সমাধানের দক্ষতা যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি যুক্তির গভীরতাও শাণিত হবে। ইউটিউবেও পছন্দের বিষয়গুলোর অসংখ্য টিউটোরিয়াল রয়েছে। সেগুলো কাজে লাগিয়ে শেখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে, চাকরির ক্ষেত্রে যে স্কিলগুলো সবচেয়ে বেশি কাজে লাগে, তা অনেক সময় একাডেমিক পড়ালেখার চেয়ে কিছুটা আলাদা। একাডেমিক প্রোজেক্টগুলোও কখনই হালকাভাবে নেওয়া যাবে না। এগুলো যতটা সম্ভব ভালোভাবে করতে হবে। কারণ ভবিষ্যতে সেগুলোই সিভিতে স্থান করবে এবং দক্ষতার প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে।
আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময়ের জন্য ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকার জন্যেও শুভকামনা রইলো।
গত ২৭ অক্টোবর আইইউটির ৩৭ তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আপনি এতে অংশ নিয়েছেন। আপনার বিভাগ ও ফলাফল সম্পর্কে বলুন।
কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগ থেকে আমি গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছি। প্রথম সেমিস্টারে একটি কোর্সে এ+ পাইনি। তাই সেই সেমিস্টারে আমার জিপিএ ছিল ৩.৯৭। তবে এরপরের সাতটি সেমিস্টারেই আমি ধারাবাহিকভাবে ৪.০০ পেয়েছি।
দ্বিতীয় সেমিস্টারে ৪ পাওয়ার পর আমার সিজিপিএ দাঁড়ায় ৩.৯৮। তৃতীয় সেমিস্টারের পর হয় ৩.৯৯। চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ সেমিস্টারে ৪ ধরে রাখতে পারলেও সিজিপিএ তখনও ৩.৯৯ ছিল। শেষ পর্যন্ত সপ্তম সেমিস্টারে ৪ পাওয়ার পর সিজিপিএ অবশেষে ৪–এ পৌঁছায়। তখন সত্যিই আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। এরপর শেষ বা অষ্টম সেমিস্টারেও একই পারফরম্যান্স ধরে রাখার চেষ্টা করি। আলহামদুলিল্লাহ সেটাও সম্ভব হয়। ফলে আমি সিজিপিএ ৪ নিয়ে স্নাতক সম্পন্ন করতে পেরেছি।
এমন সাফল্যের কৃতিত্ব কাকে দিতে চান?
সবার আগে আমি আমার পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞ জানাচ্ছি। তারা সবসময় আমার পাশে থেকেছে। প্রতিটি মুহূর্তে আমাকে সাহস আর অনুপ্রেরণা দিয়েছে। এরপর আমার শিক্ষকদের কথা, যাদের দিকনির্দেশনা ও আন্তরিক সহযোগিতা আমাকে প্রতিটি ধাপে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। আর আমার বন্ধুদের কথাও বলতে হবে। এই চার বছরের যাত্রায় আমার বন্ধুরা সবসময় পাশে থেকেছে–কখনো সহায়তায়, কখনো বা মোটিভেশনে। সবার সম্মিলিত সহযোগিতা আর আমার প্রচেষ্টায় এ জায়গায় পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে।
আপনার বড় বোনের কথা শুনেছি। তাঁর অবদান কতটুকু?
হ্যাঁ, আমার দুজন বড় বোন আছেন। একজন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা শেষ করেছেন। অন্যজন আইইউটির ছাত্রী ছিলেন। তিনি আইইউটির ১৭ তম ব্যাচের বিজনেস টেকনোলজি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। তিনি শুরু থেকেই আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণার একজন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই তিনি আমাকে পড়াশোনার প্রতি সিরিয়াস থাকতে উৎসাহ দিয়েছেন। বিশেষ করে তিনি আমাকে বোঝাতেন নিয়মিত উপস্থিতি বজায় রাখা, কুইজ ও মিডটার্মের মতো মূল্যায়নগুলো গুরুত্ব সহকারে দেওয়া কতটা জরুরি। এগুলোই আসলে একটি ভালো ফলের ভিত্তি তৈরি করেছে। তার দেওয়া পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা আমার পুরো চার বছরের যাত্রায় দারুণভাবে কাজে দিয়েছে।
স্বর্ণপদক পাওয়ার খবরে আপনার বাবা–মা কী বলেছিলেন?
তারা উভয়েই খুব খুশি হয়েছিলেন। তাঁদের মুখে আনন্দের হাসিটা দেখে মনে হয়েছিল, এই মুহূর্তের জন্যই হয়তো তারা এত বছর ধরে পরিশ্রম আর ত্যাগ স্বীকার করে এসেছেন। আমার বাবা একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার। জীবনে তিনি সবসময় নিয়ম, অধ্যবসায় আর সততার মূল্য শিখিয়েছেন। আর মা একজন গৃহিণী। মা আমাদের পরিবারের মূল শক্তি। ছোটবেলা থেকেই তিনি আমাদেরকে শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারূপ করেছেন। সবসময় পাশে থেকেছেন, কখনো ক্লান্ত হননি।
এমন অসামান্য ফলাফল অর্জনে নিজেকে কীভাবে প্রস্তুত করেছিলেন, পড়ালেখার ধরন কেমন ছিল?
প্রথম থেকেই আমি জানতাম সিএসই এমন একটি বিষয়, যেখানে ধারাবাহিক পরিশ্রম ও মনোযোগ ছাড়া ভালো ফল করা সম্ভব নয়। যেহেতু ভর্তি হওয়ার আগে আমার কোডিং নিয়ে তেমন কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না, তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই আমি নিজের ঘাটতি পূরণ করার চেষ্টা শুরু করেছি। ইউটিউবে বিভিন্ন টিউটোরিয়াল দেখে প্রোগ্রামিংয়ের বেসিকগুলো ভালোভাবে আয়ত্ত্ব করে নিয়েছি। আর সেগুলোর ওপর ভিত্তি করে ধীরে ধীরে নিজের দক্ষতা বাড়িয়েছি।
আমার পড়ালেখার ধরনটা ছিল বেশ দলভিত্তিক। আমি সবসময় বন্ধুদের সঙ্গে গ্রুপ স্টাডি করতাম। এতে করে অনেক কঠিন বিষয় সহজে বোঝা যেত। আর কাউকে কোনো বিষয় বুঝিয়ে বলতে গিয়ে নিজের বোঝাটাও আরও মজবুত হতো। এই সহযোগিতামূলক পরিবেশটাই আসলে আমাকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে। এ ছাড়া আমি ক্লাসের উপস্থিতি, কুইজ ও মিডটার্ম পরীক্ষাগুলোতে বেশ গুরুত্ব দিয়েছি। কারণ এগুলোই মূলত চূড়ান্ত ফলে বড় ভূমিকা রাখে। সিনিয়র ভাইদের তৈরি করা নোটগুলোও অনেক সময় কাজে দিয়েছে, বিশেষ করে প্রস্তুতির শেষ মুহূর্তে। সবশেষে, প্রতিটি প্রজেক্টও আমি সমান গুরুত্ব দিয়ে করতাম। যেন শুধু নম্বরের জন্য নয়, শেখার জন্যও কাজটা সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়।
সিজিপিএ–৪ এর মধ্যে ৪ পেয়ে আপনি এখন গ্র্যাজুয়েট। আপনি ওআইসি স্বর্ণপদক পেয়েছেন। অন্য শিক্ষার্থীরা কীভাবে প্রস্তুতি নিলে এমন ফল করতে পারতেন, তাদের প্রস্তুতির কোন কোন জায়গায় ঘাটতি ছিল বলে মনে হয়?
আসলে প্রত্যেকের পড়ার ধরনটা আলাদা হয়। এখানে যে ধরন একজনের জন্য সবচেয়ে কার্যকর, সেটা অন্য কারও জন্য নাও হতে পারে। তাই একেবারে নির্দিষ্টভাবে বলা কঠিন যে, কে কীভাবে পড়লে এমন ফল করতে পারতেন। তবুও আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, কয়েকটা জিনিস নিয়মিতভাবে মেনে চললে ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব। সবচেয়ে আগে, ক্লাসের উপস্থিতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারপর কুইজ আর মিডটার্ম। অনেকে এগুলোকে হালকাভাবে নেন। আমি মনে করি ফলাফলে এগুলোই আসলে মূল ভিত্তি তৈরি করে দেয়। যদি আগে থেকেই কুইজ ও মিডটার্মে ভালো করা যায়, তাহলে ফাইনাল পরীক্ষার সময় চাপ অনেকটাই কমে যায়। আমার গ্রুপ স্টাডির কথা তো আগেই বলেছি। গ্রুপ স্টাডি শেখার পরিবেশটাকে আরও আনন্দদায়ক করে তোলে। কেউ নির্দিষ্ট কোনো বিষয় না বুঝলে অন্য সেটা কেউ বুঝিয়ে দিতে পারছে। এতে পারস্পরিকভাবে সবারই উপকার হয়।
আপনার শৈশব, মাধ্যমিক–উচ্চ মাধ্যমিক ও পরিবার সম্পর্কে জানতে চাই।
আমাদের পারিবারিক শেকড় বরিশালে। তবে আমার শৈশবের একটা অংশ কেটেছে ফরিদপুরে। সেখানে আমি সানরাইজ স্কুলে পড়ালেখা করেছি। পরে পরিবারসহ ঢাকায় চলে আসি। উত্তরায় আসার পর আমি ক্লাস ৩–৫ শ্রেণি পর্যন্ত মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে পড়েছি। এরপর ৬–৯ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছি রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে। পরবর্তীতে আমি আবার মাইলস্টোন কলেজে ভর্তি হই এবং সেখান থেকে মাধ্যমিক সম্পন্ন করি। নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেছি। এখানে আমার কলেজ জীবনের সুন্দর দুইটি বছর কেটেছে।
ছোটবেলায় আপনার কি হওয়ার স্বপ্ন ছিল?
ছোটবেলায় আকাশে প্লেন উড়তে দেখলেই মনে হতো, ‘ইশ! একদিন যদি আমিও এমন করে উড়তে পারতাম!’ তখন পাইলট হওয়ার স্বপ্নটাই ছিল সবচেয়ে বড়। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, আর বাস্তবতা একটু একটু করে বুঝতে শুরু করার পর সেই স্বপ্নটা বদলে গেছে। এটা অনেকের ক্ষেত্রেই হয়। এখন আমার স্বপ্ন একটু অন্যরকম।
পরবর্তী লক্ষ্য কী, কেমন জব অফার পাচ্ছেন?
এখন আমার মূল লক্ষ্য হলো আইইউটির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করা। এজন্যই আমি নিজেকে ধীরে ধীরে প্রস্তুত করছি। যাতে ক্লাসে পড়ানো এবং গবেষণার কাজ–দুটোই ভালোভাবে করতে পারি। একইসঙ্গে গবেষণার মাধ্যমে নতুন কিছু আবিষ্কার করতে চাই। শেখা আর শেখানোর এই প্রক্রিয়াটার ভেতরেই আমি এখন সবচেয়ে বেশি আনন্দ খুঁজে পাই। দূরদৃষ্টি হিসেবে আমার আরও বড় লক্ষ্য হলো–ভবিষ্যতে বিদেশে গিয়ে উচ্চশিক্ষা, বিশেষ করে পিএইচডি করা। আমি গবেষণার মাধ্যমে নতুন নতুন বিষয় জানা ও শেখার সুযোগকে আরও প্রসারিত করতে চাই। আমার বিশ্বাস, এই প্রচেষ্টা আমাদের শিক্ষার্থীদের কাজে দেবে।
আইইউটিতে ফ্যাকাল্টি হিসেবে যোগদানে আগ্রহীদের কোন কোন বিষয়গুলো বেশি বিবেচনায় নেওয়া হয়?
আমার জানা মতে, নির্দিষ্ট কিছু বিষয়কে বিশেষভাবে বিবেচনা করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো: একাডেমিক রেজাল্ট, অর্থাৎ শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং পূর্ববর্তী ফলাফল। এছাড়া গবেষণার অভিজ্ঞতা, প্রকাশনা ও সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতেও গুরুত্ব দেওয়া হয়।
দেশের বাস্তবতায় সিএসই গ্র্যাজুয়েটদের চাকরির সুযোগ কেমন?
বর্তমান বাজারে সিএসই গ্র্যাজুয়েটদের জন্য চাকরি সুযোগ খুবই প্রশস্ত। তবে এতে প্রতিযোগিতা রয়েছে। আমি বলবো, প্রয়োজনীয় দক্ষতা থাকলে চাকরি পাওয়া কঠিন কিছু নয়। আমার বন্ধুবান্ধবের মধ্যে অনেকেই আছেন, যারা তাদের গ্র্যাজুয়েশন শেষ হওয়ার আগেই চাকরি পেয়ে গেছেন। এটা আইইউটির ঐতিহ্য। আইইউটি শিক্ষার্থীদের গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার আগেই চাকরির অফার পাওয়ার বেশ নজির আছে। এটা ভালো একাডেমিক পরিবেশ, যুগোপযোগী সিলেবাস এবং শিক্ষার্থীদের প্রচেষ্টার কারণে সম্ভব হয়েছে। বিভিন্ন কোম্পানি এন্ট্রি লেভেলের চাকরির জন্যেও আইইউটি গ্র্যাজুয়েটদের ভালো বেতন অফার করে থাকে।
উচ্চশিক্ষার জন্য আপনি আইইউটিকে কেন বেছে নিয়েছিলেন?
কলেজ লাইফ শুরুর আগে আমার স্বপ্ন ছিল বুয়েটে পড়ার। তবে তখনো নির্দিষ্ট করে ভাবিনি কোন বিষয়ে পড়বো। এইচএসসির পর আইইউটিতে পরীক্ষা দিয়ে সিএসই বিভাগে চান্স পাই। এরপর বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায়ও সাফল্য আসে। সেখানে পেয়েছিলাম ইইই বিভাগ। কিন্তু ততদিন বুয়েটের ক্লাস শুরু করতে করতে আইইউটিতে আমার প্রথম সেমিস্টারের বেশিরভাগ সময় পার যায়। ওই সময়টায় আমি উপলব্ধি করি, কম্পিউটার সায়েন্সের প্রতি আমার গভীর ভালোবাসা তৈরি হয়েছে। আমি এতে ভালোও করছি। আইইউটির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এখানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো দীর্ঘ সেশনজট নেই। তাই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ডিগ্রি সম্পন্ন করা যায়। একাডেমিক জীবনটা অনেক বেশি সুসংগঠিত থাকে। সবমিলিয়ে আমি বুঝতে পারি, একটি বিষয়ের প্রতি ভালোবাসা এবং একটি অনুকূল একাডেমিক পরিবেশই সর্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তাই বুয়েটের ইইই–এর পরিবর্তে আইইউটির সিএসইতে স্থির হয়ে যাই।
স্নাতকের পুরো জার্নিতে পড়ালেখার পাশাপাশি আপনি আর কি কি করেছিলেন?
পড়ালেখার পাশাপাশি আমি বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে বেড়িয়েছি। নতুন নতুন জায়গা ঘুরে দেখেছি। মাঝে মাঝে ফুটবল, ক্যারমের মতো খেলা খেলেছি। এছাড়া কম্পিউটারে গেমও খেলেছি। পড়ালেখার পাশাপাশি কিছু সময় টিউশনি করেছি। যা নিজের ধারণাকে পরিষ্কার করতে এবং আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে সহায়ক হয়েছে।
সিএসই নিয়ে পড়তে আসা নবীন শিক্ষার্থীদের প্রতি আপনার কি বার্তা থাকবে?
নিজেকে শুধুমাত্র একাডেমিক সিলেবাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। প্রথম থেকেই নিজের মধ্যে বাড়তি শেখার আগ্রহ জাগিয়ে তুলতে হবে। কোড ফোর্স, হ্যাকার র্যাঙ্ক–এর মতো প্ল্যাটফর্মের কনটেস্টে নিয়মিত অংশ নিতে হবে। এ ছাড়া কম্পেটিটিভ প্রোগ্রামিংয়ে মনোযোগ দিলে সমস্যা সমাধানের দক্ষতা যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি যুক্তির গভীরতাও শাণিত হবে। ইউটিউবেও পছন্দের বিষয়গুলোর অসংখ্য টিউটোরিয়াল রয়েছে। সেগুলো কাজে লাগিয়ে শেখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে, চাকরির ক্ষেত্রে যে স্কিলগুলো সবচেয়ে বেশি কাজে লাগে, তা অনেক সময় একাডেমিক পড়ালেখার চেয়ে কিছুটা আলাদা। একাডেমিক প্রোজেক্টগুলোও কখনই হালকাভাবে নেওয়া যাবে না। এগুলো যতটা সম্ভব ভালোভাবে করতে হবে। কারণ ভবিষ্যতে সেগুলোই সিভিতে স্থান করবে এবং দক্ষতার প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে।
আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময়ের জন্য ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকার জন্যেও শুভকামনা রইলো।

পুরান ঢাকার মানুষ সৈয়দ রুমা। মডেলিং জগতের বেশ ডাকসাইটে নাম। প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি মডেলিং জগতের সঙ্গে যুক্ত। এক সময় র্যাম্পে হেঁটেছেন দাপটের সঙ্গে। এখন খুব কম হাঁটলেও করিওগ্রাফ নিয়ে কাজ করেন। দুটি সিনেমার আইটেম গানে নেচেছেন। অভিনয় করেছেন টেলিভিশন নাটকে। এখন করিওগ্রাফ ও নিজের প্রতিষ্ঠান ‘আর বাই রুমা’
১৬ নভেম্বর ২০২১
নাট্যদল বিবেকানন্দ থিয়েটারের ২৫তম প্রযোজনা ‘ভাসানে উজান’। গত নভেম্বরে মঞ্চে এসেছে নাটকটি। ২৯ ডিসেম্বর রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে সন্ধ্যা ৭টায় মঞ্চস্থ হবে নাটকটির চতুর্থ প্রদর্শনী। অপূর্ব কুমার কুণ্ডুর নাট্যরূপ এবং শুভাশীষ দত্ত তন্ময়ের নির্দেশনায় একক অভিনয় করেছেন মো. এরশাদ হাসান।
৪ ঘণ্টা আগে
টেলিভিশন চ্যানেল বাংলা ভিশনের জনপ্রিয় সংবাদ উপস্থাপক মামুন আব্দুল্লাহর সাবলীল উপস্থাপনার পেছনে রয়েছে দীর্ঘ অনুশীলন, দক্ষতা ও অবিচল আত্মবিশ্বাস। তাঁর সঙ্গে কথোপকথনে উঠে এসেছে সংবাদ উপস্থাপনার কৌশল, লাইভ সম্প্রচারের চাপ সামলানোর বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং এ পেশায় আগ্রহীদের জন্য মূল্যবান পরামর্শ।
১৩ দিন আগে
দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর রায়হান রাফী পরিচালিত ‘অমীমাংসিত’ ওয়েব ফিল্মের মুক্তির ঘোষণা এসেছে। ৪ ডিসেম্বর ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আইস্ক্রিনে মুক্তি পাবে সিনেমাটি। এতে অভিনয় করেছেন ইমতিয়াজ বর্ষণ। এ ছাড়া আসছে ডিসেম্বরে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে তাঁর অভিনীত ‘এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি’।
০১ ডিসেম্বর ২০২৫