Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

এ বছরই ফুডিকে বৈশ্বিক বাজারে নিয়ে যাব: সিইও

ফুডি-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহনেওয়াজ মান্নান। ছবি: সংগৃহীত

এক বছরেরও কম সময়ে অনলাইন ফুড ডেলিভারি সার্ভিসে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে ফুডিবিডি ডট কম। প্রতিদিন গড়ে ১৫ হাজারের বেশি অর্ডার ডেলিভারি করছে প্রতিষ্ঠানটি। তাদের সঙ্গে কাজ করছে সাত হাজারের বেশি রেস্তোরাঁ। ফুডির উদ্দেশ্য, লক্ষ্য, পরিকল্পনা, অনলাইন ফুড ডেলিভারি সার্ভিস খাতের বর্তমান অবস্থাসহ নানা বিষয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহনেওয়াজ মান্নান

‘ফুডি’ অ্যাপ চালুর পেছনের মূল উদ্দেশ্য কী ছিল?

শাহনেওয়াজ মান্নান: ফুডির যাত্রা শুরু হয়েছে ২০২৪ সালের ৩ জুন। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল, বাংলাদেশে ফুড ডেলিভারি খাতে মনোপলি বিজনেসটাকে ব্রেক করে ইউজার, রাইডার এবং রেস্টুরেন্ট পার্টনার সবার সমন্বয়ে বেস্ট সার্ভিস দেওয়া। সেই প্রচেষ্টা আশা থেকেই ফুডির যাত্রা শুরু।

অন্য ফুড ডেলিভারি অ্যাপ থাকা সত্ত্বেও “ফুডি” কিভাবে নিজেকে আলাদা করছে?

শাহনেওয়াজ মান্নান: গ্রাহকদের আস্থাই ফুডিকে আলাদা করেছে এবং খুব দ্রুত আমাদের সেবা বিস্তৃত করতে সাহায্য করছে। ফুডি ২৪ ঘন্টা কলসেন্টার সাপোর্ট দিচ্ছে। ফুড ডেলিভারি সার্ভিস প্লাটফর্মগুলোর মধ্যে প্রথম আমরাই শুরু করেছি ফ্লাওয়ার ডেলিভারি। আমাদের অর্ডার ট্র্যাকিং সার্ভিস আছে। রাইডার কোথায় আছে, সেটা নিজেই দেখতে পারবেন। ফুডির নিজস্ব রাইডারের একটা বেজ আছে। আমরা ৮টা শহর থেকে শুরু করেছিলাম। এখন ১৯টা শহরে ফুডিকে কাস্টমারের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে পেরেছি।

বর্তমানে বাংলাদেশের অনলাইন ফুড ডেলিভারি বাজারের অবস্থা কেমন?

শাহনেওয়াজ মান্নান: বাংলাদেশে ফুড ডেলিভারির মার্কেটটাকে আমরা এখনো হান্ড্রেড পার্সেন্ট গ্র্যাব (শতভাগ দখল) করতে পারিনি। আমরা সবাই সবার দিক থেকে চেষ্টা করেছি। কারণ আমাদের মোট জনসংখ্যার তুলনায় খুব কম মানুষ এখন ফুড ডেলিভারি নেয়। একটা বড় অংশকে আমরা এখন পর্যন্ত কানেক্ট (সংযুক্ত) করতে পারিনি। সুতরাং একটা বড় অপরচুনিটি (সুযোগ) আছে।

ফুডপান্ডা, পাঠাও ফুডের মতো প্রতিযোগীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা কতটা চ্যালেঞ্জিং?

শাহনেওয়াজ মান্নান: ২০২৪-এ শুরু করে মাত্র এক বছরের মধ্যে আমরা নিজেদের একটা শক্ত অবস্থানে নিয়ে যেতে পেরেছি। এটাকে আমরা ক্রমেই আরও শক্তিশালী করে যাচ্ছি। ফুডি ইউএস বাংলা গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। এই বিজনেসের জন্য সর্বপ্রথম যেটা দরকার হয়, সেটা হলো শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। সেটা ফুডির আছে। এই সাপোর্টের জন্যেই আমরা অনেক দূর এগিয়ে যেতে পেরেছি। শুধুমাত্র বাংলাদেশের মধ্যেই না, আমাদের উদ্দেশ্য ফুডিকে গ্লোবালি নিয়ে যাওয়া। ইনশাআল্লাহ এ বছরের মধ্যেই আমরা ফুডিকে গ্লোবাল মার্কেটে (বৈশ্বিক বাজারে) নিয়ে যাব।

গ্রাহক ধরে রাখতে এবং বাড়াতে ফুডি কী ধরনের কৌশল নিচ্ছে?

শাহনেওয়াজ মান্নান: ফুডির সর্বপ্রথম কৌশল হচ্ছে, বেস্ট সার্ভিস দেওয়া। সার্ভিসকেই আমরা প্রাধান্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। অন্যান্য জায়গার থেকে ফুডিতে লোকাল রেস্টুরেন্ট অনেক বেশি পাবেন, যেটা গ্রাহকদের জন্যে ডিফারেন্ট অপশন হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়া ফুডিতে বিভিন্ন রকমের অফার থাকে। বিভিন্ন ক্যাম্পেইন আমরা করে থাকি। যেটা গ্রাহককে ফুডি ব্যবহার করতে উৎসাহ দেয়।

বর্তমানে ফুডি কোন কোন শহরে সার্ভিস দিচ্ছে? দেশব্যাপী বিস্তারের পরিকল্পনা আছে কি?

শাহনেওয়াজ মান্নান: অবশ্যই সেরকম ভাবনা আছে। বর্তমানে আমরা সব বিভাগীয় শহরগুলোতে সার্ভিস দিচ্ছি। এর বাইরে কক্সবাজার, যশোর, ফরিদপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, কুমিল্লাসহ বেশকিছু জেলাতে আছি। আগামী সপ্তাহে আমরা ফেনিতে শুরু করব। এরপর নোয়াখালী এবং নরসিংদীতেও আমরা শুরু করতে যাচ্ছি।

ফুডি গ্রাহক এবং রেস্টুরেন্ট পার্টনারদের কী কী ফিচার দিচ্ছে?

শাহনেওয়াজ মান্নান: গ্রাহক এবং রেস্টুরেন্ট পার্টনারদের জন্য আমাদের বিভিন্ন ফিচার এবং অফার রয়েছে। গ্রাহকদের জন্য প্রথম অর্ডারে ৩৫০ টাকার অর্ডারে ১৫০ টাকার কুপন আছে। রিওয়ার্ড পয়েন্ট ফিচার আছে। গ্রাহক রিওয়ার্ড ভাঙিয়ে ভাউচারে কনভার্ট করে নিতে পারবেন। রেস্টুরেন্ট পার্টনারদের জন্য ফুডি সবচেয়ে বড় সুবিধাটা দিয়েছে, সেটা হল আকর্ষণীয় কমিশন। এটা রেস্টুরেন্ট পার্টনারদের জন্যে ব্লেসিং (আশীর্বাদ) হিসেবে এসেছে। যেটা গ্রাহক, রেস্টুরেন্ট এবং ফুডি সবার জন্যেই ভালো।

ডেলিভারি কর্মীদের দক্ষতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আপনারা কী ধরনের প্রশিক্ষণ বা সাপোর্ট দেন?

শাহনেওয়াজ মান্নান: ডেলিভারি কর্মীদের আমরা নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। আমরা তাদের জন্য ফ্রি কেডসের ব্যবস্থা করেছি। ঝড় বৃষ্টিতে নিজেদের সুরক্ষিত রাখার জন্য রেইন কোট এবং খাবার নিরাপদে বহনের জন্যে বিশেষ ব্যাগ দিয়ে থাকি। তারা যদি দুর্ঘটনাজনিত কারণে আহত হয়ে থাকে, তাহলে ফুডি তাকে আর্থিক সহায়তা করে থাকে।

বাংলাদেশের মার্কেটে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলো কী?

শাহনেওয়াজ মান্নান: আমরা এখন পর্যন্ত টেকনোলজির সার্ভিস ব্যবহারে শক্তিশালী হতে পারিনি। এ কারণে এই ইন্ডাস্ট্রিতে যে পরিমাণ ইউজার গ্র্যাব করার কথা তা সম্ভব হয়নি। আমাদের এখানে নীতিমালায় কিছু পরিবর্তন দরকার। যেমন ধরুন, গ্রাহক চাইলেই একটা অর্ডার নিয়ে কমপ্লেইন করতে পারছেন। চাইলেই ভোক্তা অধিকারের মাধ্যমে যেতে পারছেন। কেউ যেকোনো খাবার নিয়ে বলতে পারে, এটার মধ্যে এটা পেয়েছি। আসলে হয়তো কমপ্লেইনটা সঠিক নয়। গ্রাহকদের জন্য যেমন ভোক্তা অধিকার আছে, কোম্পানিগুলোর জন্যেও এমন কিছু থাকা দরকার।

পেমেন্ট সিস্টেম নিয়ে কোনো জটিলতায় পড়েন?

শাহনেওয়াজ মান্নান: না। পেমেন্ট নিয়ে আমাদের কোনো জটিলতা নেই। আমরা ক্যাশ-অন ডেলিভারি থেকে শুরু করে, মোবাইল ওয়ালেট বা কার্ড সার্ভিস সবই অ্যাকসেপ্ট করি।

প্রাইসিং বা ডেলিভারি চার্জ নিয়ে কোনো সমস্যায় পড়তে হয়?

শাহনেওয়াজ মান্নান: আমাদের ডেলিভারি চার্জটা অনেক কম। যেমন একটা খাবার রেস্টুরেন্ট থেকে বাসায় নিয়ে আসতে যে যাতায়াত ভাড়াটা দিতে হয়, আমাদের ডেলিভারি চার্জ তার চেয়ে অনেক কম। কিন্তু সেটা দিতেও অনেকে উৎসাসাহী না। একটা রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার ভোক্তার দোরগোড়ায় পৌঁছাতে যে খরচ হয়, আমরা ডেলিভারি কর্মীকে তার চেয়ে বেশি পরিশোধ করে থাকি। নাহলে তার জীবন ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।

‘ফুডি’ তরুণদের কর্মসংস্থান বা উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে কী ভূমিকা রাখছে?

শাহনেওয়াজ মান্নান: আমরা এতগুলো শহরে কাজ করছি, এর সঙ্গে অসংখ্য তরুণ জড়িত। ১৯টি শহরের সবগুলোতে আমাদের অপারেশনাল অফিস রয়েছে। সেখানে প্রত্যক্ষভাবে আমাদের কর্মী থেকে শুরু করে পরোক্ষভাবে রেস্টুরেন্ট কর্মীরাও দক্ষ হিসেবে গড়ে ওঠার সুযোগ পাচ্ছে। আমাদের ডেলিভারি কর্মীর সংখ্যা ৩ হাজারের বেশি। এদের মধ্যে চুক্তিভিত্তিক এবং ফ্রিল্যান্সার উভয়ই রয়েছে। শিক্ষার্থীরাও আমাদের সঙ্গে কাজ করতে পারে। নারী ডেলিভারি কর্মীও রয়েছেন। আর আমাদের স্থায়ী কর্মীসংখ্যা দুইশর বেশি, যাদের প্রায় সবাই তরুণ।

খাদ্যের মান এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কীভাবে কাজ করছে ফুডি?

শাহনেওয়াজ মান্নান: আমরা কোনো রেস্টুরেন্টের সঙ্গে কাজ শুরুর আগে আমাদের টিম রেস্টুরেন্ট পরিদর্শন করে। আমরা সাধারণত ফুড কোয়ালিটি, প্যাকেজিং এগুলোর ভিত্তিতে রেস্টুরেন্ট অন্তর্ভুক্ত করে থাকি।

অনলাইন ফুড ডেলিভারিতে বিদেশি বিনিয়োগ এবং দেশীয় উদ্যোগকে আপনি কীভাবে দেখেন?

শাহনেওয়াজ মান্নান: আমাদের জন্য ব্লেসিং হয়েছে ইউএস বাংলা গ্রুপ। যার ফলে স্থানীয়ভাবে আমাদের কোম্পানিটা এগিয়ে নেওয়া সহজ হয়েছে। তবে এই খাতে বিদেশি বিনিয়োগেরও প্রয়োজন আছে। বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে আমরা প্রোডাক্ট বা সার্ভিসটাকে আরও সমৃদ্ধ এবং উন্নত করতে পারি। বিদেশের মাটিতে গ্লোবাল ব্র্যান্ড হিসেবে নিজেদের প্রেজেন্ট করতে বিদেশি বিনিয়োগ সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

ফুডি বৈশ্বিক বাজারে গেলে প্রবাসীদের জন্য কোনো পরিকল্পনা আছে?

শাহনেওয়াজ মান্নান: ফুডি যখনই অন্য কোনো দেশে যাবে, ফার্স্ট প্রায়োরিটি বাঙালিরাই থাকবেন। সেটা ভোক্তার দিক থেকে হোক বা কর্মসংস্থানের দিক থেকে হোক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

বিএনপিতে রেদোয়ান আহমেদ-ববি হাজ্জাজ, ছেড়ে দিচ্ছে আরও ৮ আসন

আজকের রাশিফল: ফেসবুকে জ্ঞান ঝাড়বেন না— বন্ধুরা জানে আপনি কপি মাস্টার, স্ত্রীর কথা শুনুন

নতুন প্রধান বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ