Ajker Patrika

গর্ভবতী ছিলেন ট্রাম্পের স্ত্রী, বাজিতে হেরে ১০ হাজার ডলারের শিশুখাদ্য পাঠান এপস্টেইন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ২২: ২৪
জর্জিয়ায় জন্ম নেওয়া অভিনেত্রী ও গায়িকা মারলা ম্যাপলস ১৯৯৩ সালের অক্টোবরে ট্রাম্পের কন্যা টিফানির জন্ম দেন। ছবি: এএফপি
জর্জিয়ায় জন্ম নেওয়া অভিনেত্রী ও গায়িকা মারলা ম্যাপলস ১৯৯৩ সালের অক্টোবরে ট্রাম্পের কন্যা টিফানির জন্ম দেন। ছবি: এএফপি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কুখ্যাত যৌন অপরাধী জেফরি এপস্টেইনের সম্পৃক্ততার আরও কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের তত্ত্বাবধায়ক কমিটি (হাউস ওভারসাইট কমিটি) এসব তথ্য প্রকাশ করেছে। এপস্টেইন ফাইলসংশ্লিষ্ট এসব নথিতে দেখা গেছে, বহুবার বহুভাবে ট্রাম্পের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

সর্বশেষ পাওয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বাজিতে হেরে ১০ হাজার ডলার মূল্যের শিশুখাদ্যে ভরা একটি ট্রাক পাঠিয়েছিলেন জেফরি এপস্টেইন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দি ইনডিপেনডেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের জুলাই মাসে ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন লেখক দীপক চোপড়ার সঙ্গে ই-মেইল বিনিময়ে এপস্টেইন এই বাজির কথা জানান। তখন ট্রাম্পের প্রথম নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস বাকি। চোপড়া ২৯ জুলাই এপস্টেইনকে ই-মেইল করে ফেসটাইম বা স্কাইপে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি কি মারলা ম্যাপলসকে চেনেন?’

তিন মিনিট পর এপস্টেইন জবাব দেন, ‘হ্যাঁ, চিনি।’ এরপরই তিনি লেখেন, ‘যখন মারলা ডোনাল্ডকে জানালেন যে তিনি অন্তঃসত্ত্বা...তখন আমি ১০ হাজার ডলারের বাজিতে হেরে যাই এবং তাঁকে শিশুখাদ্যে ভরা একটা ট্রাক পাঠাই।’

এপস্টেইন আরও জানান, সেই ঘটনার পর থেকে আর ম্যাপলসের সঙ্গে তাঁর কথা হয়নি।

জর্জিয়ায় জন্ম নেওয়া অভিনেত্রী ও গায়িকা মারলা ম্যাপলস ১৯৯৩ সালের অক্টোবরে ট্রাম্পের কন্যা টিফানির জন্ম দেন। এর কিছুদিন আগেই ট্রাম্প তাঁর প্রথম স্ত্রী ইভানাকে তালাক দেন। কয়েক মাস পর নিউইয়র্কের প্লাজা হোটেলে ম্যাপলস-ট্রাম্প বিয়ে করেন। সিএনএনের আর্কাইভ ফুটেজ অনুযায়ী, বিয়ের অনুষ্ঠানের অতিথির তালিকায় জেফরি এপস্টেইনও ছিলেন। ১৯৯৯ সালে ম্যাপলস-ট্রাম্পের বিচ্ছেদ হয়।

ম্যাপলস ও চোপড়ার পূর্বপরিচয়ের তথ্যও জানা গেছে। ২০১০ সালে ‘সেজেস অ্যান্ড সায়েন্সেস সিম্পোজিয়াম’-এ তাঁরা একসঙ্গে বক্তব্য দেন এবং ২০১৬ সালে ম্যাপলস চোপড়ার সঙ্গে একটি ছবি পোস্ট করে তাঁকে ‘বন্ধু’ বলে উল্লেখ করেন।

ট্রাম্পকে নিয়ে এসব ই-মেইল প্রসঙ্গে দীপক চোপড়া দি ইনডিপেনডেন্টকে বলেন, ‘চিকিৎসক-রোগীর গোপনীয়তার মতোই এসব বিষয় নিয়ে আমি সব সময় সতর্ক। তবে চলমান তদন্ত সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়ে সত্য বেরিয়ে আসুক—এটাই আশা করি। আমি যা জানি, সেটা অনুমোদিত কর্মকর্তাদের জানাতে প্রস্তুত। নইলে প্রেক্ষাপট না জেনে কেবল অনুমানই চলতে থাকবে।’

এর আগে গত বুধবার হাউস ওভারসাইট কমিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে আরও কিছু ই-মেইল প্রকাশ করে। এতে এপস্টেইন, তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ঘিসলেন ম্যাক্সওয়েল ও লেখক মাইকেল উলফের মধ্যে আদান-প্রদান করা বার্তা ছিল। কয়েকটি ই-মেইলে এপস্টেইনকে বারবার ট্রাম্পের নাম উল্লেখ করতে দেখা গেছে।

২০১১ সালের এপ্রিল মাসে লেখা একটি ই-মেইলে এপস্টেইন লিখেছিলেন, ‘আমি চাই তুমি বোঝো, যে কুকুরটা এখনো ঘেউ ঘেউ করেনি, সে হচ্ছে ট্রাম্প।’ এরপর তিনি (নাম অপ্রকাশিত) লেখেন, ‘একটি মেয়ে তার (ট্রাম্পের) সঙ্গে আমার বাড়িতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটিয়েছে। কিন্তু সে (ট্রাম্প) তার নাম একবারও প্রকাশ করেনি।’ এর জবাবে ম্যাক্সওয়েল লিখেছিলেন, ‘আমি আসলে এটা নিয়েই ভাবছিলাম...।’

এদিকে নতুন এই ই-মেইলগুলো প্রকাশের পর ট্রাম্প–এপস্টেইন সম্পর্ক নিয়ে আবারও বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

তবে এখন পর্যন্ত ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এপস্টেইন বা ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আনেনি মার্কিন কর্তৃপক্ষ।

এদিকে কিছুদিন আগে মামলাটির কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছিল ট্রাম্প প্রশাসন। তাদের দাবি, এই মামলার বিষয়ে আর কোনো তথ্য প্রকাশ করার নেই। কিন্তু এর ঠিক চার মাস পর এই নতুন তথ্য সামনে এল।

ট্রাম্প একাধিকবার বলেছেন, এপস্টেইনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তাঁর কোনো ধারণা ছিল না। ১৯৯০-এর দশক থেকে ২০০০-এর শুরুর দিকে তাঁদের মধ্যে যোগাযোগ ছিল, তবে ২০০৪ সালের দিকে তাঁদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে।

নিউইয়র্ক টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯০-এর দশকে অন্তত সাতবার এপস্টেইনের বিমানে ভ্রমণ করেছেন ট্রাম্প। গত জুলাইয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৩ সালে এপস্টেইনের ৫০তম জন্মদিন উপলক্ষে একটি অশ্লীল চিঠি পাঠিয়েছিলেন ট্রাম্প—যেখানে ছিল হাতে আঁকা একজন নগ্ন নারীর ছবি ও কিছু কৌতুকপূর্ণ বার্তা।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চিঠিটি ছিল জন্মদিনের একটি ‘বিশেষ’ অ্যালবামের অংশ। এপস্টেইনের জন্মদিন উপলক্ষে তাঁর সাবেক সঙ্গী ঘিসলেন ম্যাক্সওয়েল এটি তৈরি করেছিলেন। চিঠিটিতে ট্রাম্পের নামসহ টাইপরাইটারে লেখা একটি কথোপকথন রয়েছে। একজন নগ্ন নারীর অবয়বে চিঠিটি বাঁধাই করা ছিল। ওই নারীর স্তন, যৌনাঙ্গসহ স্পর্শকাতর অংশে ‘ডোনাল্ড’ স্বাক্ষরও ছিল।

চিঠির শেষ লাইনে এপস্টেইনের উদ্দেশে লেখা ছিল, ‘শুভ জন্মদিন—প্রতিটি দিন হোক আরও একটি চমৎকার গোপন রহস্য।’ তবে ট্রাম্প চিঠিটি ‘নকল’ বলে দাবি করেন এবং ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

নতুন এসব ই-মেইলের বিষয়ে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিট বলেন,‘বিরক্তিকর আচরণের জন্য এক দশকেরও আগে এপস্টেইনকে মার-এ-লাগো থেকে বের করে দিয়েছিলেন ট্রাম্প। এর আগে ২০১৯ সালে ট্রাম্পও বলেছিলেন, এপস্টেইনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ‘অনেক আগেই’ শেষ হয়ে গেছে।

তবে নতুন প্রকাশিত এসব ই-মেইলে দেখা গেছে, এপস্টেইন দাবি করছেন, তিনি ‘কখনো’ মার-এ-লাগোর সদস্য ছিলেন না।

এদিকে, গত বুধবার হাউস ডিসচার্জ পিটিশনের চূড়ান্ত ভোট সম্পন্ন হয়েছে। এখন এপস্টেইনের সব নথি প্রকাশে কংগ্রেসের পূর্ণাঙ্গ ভোট বাধ্যতামূলক করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

ভোটের মাঠে: টাঙ্গাইলে নির্বাচনী উত্তাপ

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে শুক্রবার দুপুরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ