Ajker Patrika

যে ১০ কারণ নির্ধারণ করবে ট্রাম্প বা কমলার জয়

আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৯: ৩৯
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের আর মাত্র একদিন বাকি। জনমত জরিপগুলোতে দুই প্রার্থীর মধ্যে ব্যবধান যৎসামান্য। তাই ধারণা করা যায়, ডোনাল্ড ট্রাম্প বা কমলা হ্যারিস— যেই জিতুক না কেন, খুব অল্প ভোটের হেরফের হবে। দুজনের মধ্যে যে কোনো একজন দুই বা তিন পয়েন্ট এগিয়ে থাকতে পারেন।

ঠিক কী কী কারণে হ্যারিস বা ট্রাম্প জিততে পারেন এমন ১০ টি কারণ বিশ্লেষণ করেছে বিবিসি।

নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনর্নির্বাচিত হলে তিনি হবেন ১৩০ বছরের মধ্যে প্রথম সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট যিনি আগে একবার পরাজিত হয়েছেন। এমন ইতিহাস সৃষ্টির সম্ভাবনা দিয়ে ট্রাম্পের জয়ের পাঁচটি কারণ তুলে ধরা হয়েছে।

১. তিনি ক্ষমতায় নেই

এবারের ভোটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু অর্থনীতি। যেখানে দেখানো হচ্ছে, বেকারত্ব কম এবং স্টক মার্কেট ফুলে ফেঁপে উঠছে, সেখানে বেশির ভাগ আমেরিকান বলেছেন, তাঁরা প্রতিদিন উচ্চমূল্যের সঙ্গে লড়াই করছেন।

করোনাভাইরাস মহামারি পরবর্তী সময়ে মুদ্রাস্ফীতি সত্তরের দশকের পর থেকে এমন উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এবারের নির্বাচনী প্রচারণায় এটাই ছিল ট্রাম্পের প্রধান ‘ট্রাম্প কার্ড’। মুদ্রাস্ফীতিই ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করার সুযোগ দিয়েছে, ‘আপনি কি চার বছর আগের চেয়ে এখন ভালো আছেন?’

২০২৪ সালে বিশ্বজুড়ে ভোটাররা বেশ কয়েকবার ক্ষমতায় থাকা দলকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। বিশেষ করে করোনা-পরবর্তী জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে। মার্কিন ভোটাররাও পরিবর্তনের জন্য মুখিয়ে আছে বলে মনে হচ্ছে। মাত্র এক-চতুর্থাংশ আমেরিকান বলেছেন, তাঁরা দেশটি যে দিকে যাচ্ছে তাতে সন্তুষ্ট।

কমলা হ্যারিস তথাকথিত পরিবর্তনের প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে অজনপ্রিয় জো বাইডেনের কাছ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে তিনি লড়াই করছেন।

২. দুঃসময়েও ট্রাম্পের অবিচল ভাবমূর্তি

২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ইউএস ক্যাপিটলে দাঙ্গা, একের পর এক অভিযোগ ও ফৌজদারি অপরাধে নজিরবিহীনভাবে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরও ট্রাম্পের সমর্থন সারা বছর ৪০ শতাংশ বা তারও বেশি স্থিতিশীল থেকেছে।

ডেমোক্র্যাট ও ‘নেভার-ট্রাম্প’ শিবিরের আন্দোলনকারীরা বলছেন, তিনি হোয়াইট হাউসের জন্য অযোগ্য। আর বেশির ভাগ রিপাবলিকানই ট্রাম্পের সঙ্গে একমত যে, তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। দুই পক্ষেরই এই ধারণা এত বদ্ধমূল যে, ট্রাম্পের এখন দরকার সিদ্ধান্তহীন ভোটারদের সেই অংশের যথেষ্ট সমর্থন পাওয়া যাদের তাঁর সম্পর্কে এমন কোনো বদ্ধমূল ধারণা বা দৃষ্টিভঙ্গি নেই।

৩. অবৈধ অভিবাসন ইস্যু

অর্থনৈতিক অবস্থার বাইরেও আবেগ বা দুর্বলতা থেকেও প্রায় ক্ষেত্রে নির্বাচনের ফল নির্ধারণ করে দেন ভোটাররা। ডেমোক্র্যাটদের প্রত্যাশা, অভিবাসন ইস্যু হয়তো আর কাজে দেবে না। আর ট্রাম্প বাজি ধরে বলছেন, অভিবাসন সমস্যার সমাধানের জন্যই তাঁকে আবার ক্ষমতায় আসকে হবে।

বাইডেনের শাসনামলে সীমান্তে বিনা-বিচারে হত্যার সংখ্যা রেকর্ড স্তরে পৌঁছেছে। সীমান্ত থেকে দূরের রাজ্যগুলোতে অভিবাসনের সংখ্যাও প্রভাব ফেলেছে। এর প্রেক্ষাপটে নির্বাচনী জরিপগুলোতে দেখা যাচ্ছে, ভোটাররা অভিবাসনের বিষয়ে ট্রাম্পের ওপর বেশি আস্থা রাখছেন। ল্যাটিনোদের মধ্যেও ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা আগেরবারের চেয়ে অনেক বেড়েছে।

৪. কৃষ্ণাঙ্গ ও হিসপানিক পুরুষদের সমর্থন

ডেমোক্র্যাটরা দীর্ঘদিন ধরেই হিসপানিক ও কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের বেশি সমর্থন পেয়ে এসেছে। তবে এবার হাওয়া বদলেছে। শেষ সময়ের পরিচালিত জরিপগুলোতে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প হিসপানিক পুরুষ এবং কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের সমর্থন বেশি পাচ্ছেন।

রয়টার্স/ইপসোস পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, আগের চেয়ে অনেক বেশি হিসপানিক পুরুষদের সমর্থন পাচ্ছেন ট্রাম্প। নিউ জার্সির হিসপ্যানিক এক ভোটার বলেছেন, তিনি ব্যবসায়ী হিসাবে ট্রাম্পের পেশাকে শ্রদ্ধা করেন এবং তাঁকেই ভোট দেবেন বলে স্থির করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে হিসপ্যানিক ভোটারের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। ১৯৭০-এর দশক থেকেই হিসপ্যানিক ভোটাররা বেশির ভাগ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের অনেক বেশি সমর্থন দিয়ে এসেছে। অথচ এ বছরের নির্বাচনে তাদেরই উল্লেখযোগ্য সমর্থন পেয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প।

৫. বিশ্বে শান্তির জন্য ট্রাম্পের ওপর আস্থা

ট্রাম্পের সমালোচকদের কথায়, তিনি কর্তৃত্ববাদী নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে আমেরিকার জোটকে দুর্বল করছেন। তবে সাবেক এই প্রেসিডেন্ট নীতি-নির্ধারণে চমক দেখানোর বৈশিষ্ট্যকে নিজের শক্তি মনে করেন। এবারের নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প এও উল্লেখ করেছেন, তিনি হোয়াইট হাউসে থাকাকালে কোনো বড় যুদ্ধ শুরু হয়নি।

ইউক্রেন ও ইসরায়েলের যুদ্ধের জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পাঠানোয় অনেক আমেরিকান ক্ষুব্ধ ও বাইডেনের অধীনে আমেরিকা দুর্বল বলে মনে করেন। বেশির ভাগ ভোটার, বিশেষ করে পুরুষেরা হ্যারিসের চেয়ে ট্রাম্পকেই শক্তিশালী নেতা হিসেবে দেখেন।

এই নির্বাচনে কমলা হ্যারিস জিতলে তিনি হবেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম নারী ও ভারতীয় আমেরিকান প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্পের চেয়ে নানা যোগ্যতায় এগিয়ে এই ডেমোক্রেট। তাঁর জয়ের জন্য যেসব কারণ উল্লেখ করেছে বিবিসি:

১. তিনি ট্রাম্প নন

ট্রাম্প বিভিন্ন দিক থেকে এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও তিনি আমেরিকার রাজনীতিতে মেরুকরণকারী ব্যক্তি হিসাবে রয়ে গেছেন। ২০২০ সালে তিনি রিপাবলিকান প্রার্থীর পক্ষে রেকর্ড সংখ্যক ভোট জিতেছিলেন। কিন্তু পরাজিত হয়েছিলেন কারণ আরও ৭০ লাখ আমেরিকান বাইডেনকে সমর্থন করেছিলেন।

এবার হ্যারিস ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। তিনি তাঁকে ‘ফ্যাসিবাদী’ ও গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ বলে অভিহিত করেছেন। ট্রাম্পের নাটকীয় কীর্তিকলাপ ও সংঘাতের পথ থেকে সরে তিনি ভিন্ন পথে চলার অঙ্গীকার করেছেন।

জুলাইয়ে রয়টার্স/ইপসোসের এক জরিপে দেখা গেছে, প্রতি পাঁচজন মার্কিনির মধ্যে চারজন মনে করেন দেশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। কমলা হ্যারিস আশা করছেন, স্থিতিশীলতা ফেরাতে ভোটাররা, বিশেষ করে মধ্যপন্থী রিপাবলিকান ও স্বতন্ত্ররা তাঁকে সম্ভাবনাময় একজন প্রার্থী হিসেবে দেখবে।

২. তিনি বাইডেনও নন

মার্কিন প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে পৌঢ় বাইডেন ট্রাম্পের কাছে ধরাশায়ী হলে ডেমোক্র্যাটরা এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতার মাঠ থেকে প্রায় ছিটকে পড়েছিল। এমন সময় ডেমোক্রেটদের কর্ণধার হন কমলা। তিনি আসার পর রিপাবলিকানরা মনে করেছিলেন, বাইডেনের অজনপ্রিয় নীতিই আওড়াবেন কমলা। তবে কমলা সেই ভুল ভেঙে দিয়েছেন নির্বাচনী প্রচারে।

ট্রাম্পকে পরাজিত করতে এককাট্টা হয়ে দলটি দ্রুত কমলাকে নিয়ে প্রচার চালিয়েছে ও বেশ সাঁড়া ফেলেছে। বাইডেনের বয়স নিয়ে বিতর্ক ছিল, যেটা কমলার নেই। এখন নির্বাচনী মাঠ উল্টে গেছে। এ দৌড়ে এখন ট্রাম্পই সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি।

৩. তিনি নারী অধিকারের চ্যাম্পিয়ন

যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট রো ভি ওয়েড ও গর্ভপাতের সাংবিধানিক অধিকার বাতিল করার পর এটিই প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। গর্ভপাতের অধিকার রক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন ভোটাররা জোরালোভাবে কমলাকে সমর্থন করছেন। অতীতের নির্বাচনগুলোতে দেখা গেছে, বিশেষত ২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচন— মার্কিন নির্বাচনে গর্ভপাত অন্যতম প্রধান ইস্যু ও ফলাফলে প্রভাব ফেলতে পারে।

এবার দোদুল্যমান রাজ্য অ্যারিজোনাসহ ১০টি রাজ্যে ভোটারদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে গর্ভপাতের অধিকার পুনর্বহালের বিষয়ে। এতে বেশির ভাগ ভোটারই নারীর গর্ভাপাতের পক্ষে মত দিয়েছেন। ফলে কমলা এসব ভোটার নিজের ব্যালটে পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

এ ছাড়া নির্বাচিত হলে তিনি হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। ফলেস তিনি নারী ভোটারদেরও টানবেন নিজের ব্যালটে।

৪. তার ভোটার উপস্থিতি বেশি হওয়ার সম্ভাবনা

কমলা হ্যারিসকে বেশি ভোট দেবেন তরুণ কলেজে পড়ুয়ারা ও বয়স্ক ব্যক্তিরা। নিউইয়র্ক টাইমস/সিয়েনার জরিপে দেখা গেছে, ২০২০ সালে যারা নিবন্ধিত ছিলেন কিন্তু ভোট দেননি তাদের মধ্যে ট্রাম্প বিশাল ব্যবধানে এগিয়ে আছেন। এবার তারা হাজির হবেন কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

৫. নির্বাচনের জন্য বিপুল অর্থ সংগ্রহ ও ব্যয়

এটা কোনো গোপন বিষয় নয় যে, আমেরিকার নির্বাচন ব্যয়বহুল ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ব্যয়বহুল হওয়ার পথে রয়েছে। এবার খরচ করার ক্ষেত্রে শীর্ষে কমলা।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের সাম্প্রতিক বিশ্লেষণ অনুসারে, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে পুরো সময়কালে ট্রাম্প যতটা তহবিল সংগ্রহ করতে পেরেছেন হ্যারিস জুলাইয়ে প্রার্থী হওয়ার পর থেকে তার চেয়ে অনেক বেশি তহবিল সংগ্রহ করতে পেরেছেন। একইভাবে নির্বাচনী প্রচার এবং বিজ্ঞাপনে ট্রাম্পের চেয়ে দ্বিগুণ খরচও করেছেন হ্যারিস।

তার এই খরচই কাজে আসতে পারে দোদুল্যমান রাজ্যগুলোর ভোটার দলে টানতে। বিজ্ঞাপনের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে সেখানে হ্যারিসের পক্ষে ভোট দিতে পারেন ভোটাররা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইয়েমেন সংঘাতে মুখোমুখি অবস্থানে সৌদি ও আরব আমিরাত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আমিরাত সমর্থিত ‘সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল’-এর সৈন্যরা। ছবি: দ্য টাইমস
আমিরাত সমর্থিত ‘সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল’-এর সৈন্যরা। ছবি: দ্য টাইমস

ইয়েমেনের দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতে এবার নতুন মাত্রার উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এক সময় একই জোটে থাকা সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এখন কার্যত বিপরীত অবস্থানে। সাম্প্রতিক বিমান হামলা ও কূটনৈতিক বক্তব্যে এই বিভাজন প্রকাশ্যে এসেছে, যা ওই অঞ্চলের যুদ্ধকে আরও জটিল করে তুলছে।

যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, মঙ্গলবার ভোরে সৌদি আরব ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলে বিমান হামলা চালায়। এই হামলার লক্ষ্য ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত–সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ‘সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল’ (এসটিসি)।

সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের দাবি—হাদরামাউতের বন্দরনগরী মুকাল্লায় এসটিসির জন্য অস্ত্র ও সাঁজোয়া যান নামানো হচ্ছিল, যা তাদের ‘সীমারেখা’ অতিক্রমের সমান। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, জাহাজগুলোর ট্র্যাকিং সিস্টেম বন্ধ ছিল এবং এসব অস্ত্র তাৎক্ষণিক নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করছিল।

অন্যদিকে, এসটিসি এই হামলা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের দাবি, হামলায় হাদরামাউতে মোতায়েন এসটিসির অভিজাত ইউনিটগুলোকে লক্ষ্য করা হয়েছে। যদিও সৌদি কর্তৃপক্ষ বলছে, রাতের আঁধারে হামলা চালানো হয়েছে যাতে বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি না হয়।

এই সংঘর্ষ সৌদি আরব ও ইউএইর মধ্যে বাড়তে থাকা মতবিরোধকে প্রকাশ্যে এনেছে। হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন একসঙ্গে লড়াই করলেও, ইয়েমেনের ভেতরে দুই দেশ ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠীকে সমর্থন দিয়ে আসছে। সৌদি আরবের অভিযোগ, এসটিসিকে আমিরাতের সমর্থন ইয়েমেন ও পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। রিয়াদ একে নিজেদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি হিসেবেও উল্লেখ করেছে।

এই উত্তেজনার মধ্যেই ইয়েমেনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের প্রেসিডেনশিয়াল লিডারশিপ কাউন্সিলের প্রধান রাশাদ আল-আলিমি আরব আমিরাতের সঙ্গে যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তি বাতিল করেন এবং দেশটি থেকে আমিরাতের সেনা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে তিনি সাময়িক সময়ের জন্য আকাশ ও নৌ অবরোধও ঘোষণা করেন।

বিশ্লেষকদের মতে, দক্ষিণ ইয়েমেনে এসটিসির দ্রুত সম্প্রসারণ দেশটিকে কার্যত বিভক্ত করার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। দক্ষিণে গুরুত্বপূর্ণ তেলসমৃদ্ধ অঞ্চল ও বন্দর, আর উত্তরে রাজধানী সানাসহ হুতিদের শক্ত ঘাঁটি—এই বাস্তবতায় ইয়েমেন আবারও এক গভীর ও বহুমাত্রিক সংকটের দিকে এগোচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘২০২৫’ নিয়ে ১৯৯৮ সালে করা আমেরিকানদের ভবিষ্যদ্বাণী কতটুকু মিলেছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০: ৫৭
ছবি: সিএনএন
ছবি: সিএনএন

১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি ও সমাজ বাস্তবতা ছিল একেবারেই ভিন্ন। সেই বছর প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন অভিশংসন প্রক্রিয়ার মুখে পড়েছিলেন, অস্কারে রাজত্ব করেছিল টাইটানিক, আর অধিকাংশ আমেরিকানের ঘরে ছিল ল্যান্ডলাইন ফোন। ঠিক সেই সময়েই গ্যালাপ ও ইউএসএ টুডে এক ব্যতিক্রমী জরিপ চালায়। ল্যান্ডলাইন ফোনে ১ হাজার ৫৫ জন আমেরিকানের সঙ্গে কথা বলে জানতে চাওয়া হয়—দূর ভবিষ্যৎ ‘২০২৫ সাল’ কেমন হবে বলে তাঁরা মনে করেন।

সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সিএনএন জানিয়েছে, ২০২৫ সাল নিয়ে সে সময় মার্কিনরা যে ভবিষ্যদ্বাণীগুলো করেছিল, সেগুলো সংরক্ষিত আছে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রোপার সেন্টারের জরিপ আর্কাইভে। ২০২৫ সালের শেষ প্রান্তে এসে এখন দেখা যাচ্ছে—সেই সব অনুমানের কোনোটা মিলেছে, আর কোনোটা মেলেনি।

এ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সেই সময়ের অনেক পূর্বাভাসই ছিল বিস্ময়করভাবে সঠিক। অধিকাংশ আমেরিকান তখনই ধারণা করেছিলেন, আগামী ২৭ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে একজন কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন, সমকামী বিবাহ বৈধ ও স্বাভাবিক হয়ে উঠবে এবং একটি ‘মারাত্মক নতুন রোগ’ বিশ্বকে নাড়িয়ে দেবে। বাস্তবে বারাক ওবামার প্রেসিডেন্ট হওয়া, সমকামী বিবাহের আইনি স্বীকৃতি এবং করোনা মহামারি সেই অনুমানগুলোকে সত্য প্রমাণ করেছে।

একইভাবে অনেকেই সেই সময় সঠিকভাবে ধারণা করেছিলেন, সাধারণ মানুষের জন্য মহাকাশ ভ্রমণ খুব সাধারণ বিষয় হয়ে উঠবে না এবং ভিনগ্রহের প্রাণীর সঙ্গে মানুষের সরাসরি যোগাযোগ ঘটবে না।

তবে কিছু ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবতার সঙ্গে মেলেনি। জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ মনে করেছিলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র একজন নারী প্রেসিডেন্ট পাবে—যা এখনো ঘটেনি। অর্ধেকের বেশি মানুষ আশা করেছিলেন ক্যানসারের নিরাময় আবিষ্কৃত হবে এবং ৬১ শতাংশ মনে করেছিলেন মানুষ নিয়মিতভাবে ১০০ বছর বয়স পর্যন্ত বাঁচবে। বাস্তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে অগ্রগতি হলেও এসব প্রত্যাশা পুরোপুরি পূরণ হয়নি।

জরিপে দেশের সামগ্রিক দিকনির্দেশনা নিয়েও প্রশ্ন ছিল। সেখানে ফুটে উঠেছিল প্রবল হতাশা। ৭০ শতাংশ মনে করেছিলেন ধনীদের জীবনমান উন্নত হবে, কিন্তু মধ্যবিত্তদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিভক্ত মতামত ছিল। দরিদ্রদের জীবন আরও কঠিন হবে—এমনটাই ভাবতেন বেশির ভাগ। প্রায় ৮০ শতাংশ ধারণা করেছিলেন ব্যক্তিগত গোপনীয়তা কমবে, আর ৫৭ শতাংশ মনে করেছিলেন ব্যক্তিগত স্বাধীনতাও হ্রাস পাবে। অপরাধ বৃদ্ধি, পরিবেশের অবনতি এবং নৈতিক মূল্যবোধের পতনের আশঙ্কাও ছিল প্রবল। ৭১ শতাংশ মত দিয়েছিলেন, সন্তানকে ভালো মানুষ হিসেবে বড় করা আরও কঠিন হবে।

তবে কিছু আশাবাদী দিকও ছিল। অধিকাংশ আমেরিকান বিশ্বাস করতেন, জাতিগত সম্পর্কের উন্নতি হবে এবং চিকিৎসাসেবা আরও সহজলভ্য হবে—যদিও তা হবে ব্যয়বহুল।

গ্যালাপ আজও জরিপ চালিয়ে যাচ্ছে, যদিও এখন ল্যান্ডলাইনের ওপর নির্ভরতা কম। এই দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে জনমতও নাটকীয়ভাবে বদলে গেছে। ১৯৯৮ সালে যেখানে প্রায় ৬০ শতাংশ আমেরিকান দেশের গতিপথ নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন, বর্তমানে সেই হার নেমে এসেছে মাত্র ২৪ শতাংশে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পুতিনের বাসভবনে ড্রোন হামলার অভিযোগ—‘মিথ্যা’ বলছে ইউক্রেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ২৭
ইউক্রেনের ভলোদিমির জেলেনস্কি ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি
ইউক্রেনের ভলোদিমির জেলেনস্কি ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন—এমন অভিযোগ করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে পুরোপুরি ‘মিথ্যা ও সাজানো’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই হামলার কারণে চলমান শান্তি আলোচনায় রাশিয়ার অবস্থানের ‘পরিবর্তন বা পুনর্বিবেচনা’ করা হতে পারে। তবে মস্কো এখনই আলোচনা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে না।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন সের্গেই লাভরভের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, গতকাল রোববার রাত থেকে আজ সোমবার ভোর পর্যন্ত পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ৯১টি দূরপাল্লার ড্রোন হামলা চালায় ইউক্রেন। রুশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সবকটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। তবে এতে কোনো হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি।

লাভরভ হুমকি দিয়ে বলেন, ইউক্রেনের এমন হঠকারী কর্মকাণ্ডের জবাব দেওয়া হবে। রুশ সামরিক বাহিনী ইতিমধ্যে পাল্টা হামলার জন্য লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করে ফেলেছে। তবে হামলার সময় প্রেসিডেন্ট পুতিন নোভগোরোদের ওই বাসভবনে ছিলেন কি না, তা স্পষ্ট করা হয়নি।

ফ্লোরিডায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক শেষ করে ইউরোপে ফেরার পথে জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, ‘রাশিয়া আবারও ভয়ংকর সব মিথ্যা বিবৃতি দিচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক অগ্রগতির সাফল্য নষ্ট করতেই এমন নাটক সাজানো হচ্ছে। তারা মূলত কিয়েভের সরকারি ভবনগুলোতে বড় ধরনের হামলার ক্ষেত্র তৈরি করার জন্য এই অজুহাত দিচ্ছে।’

জেলেনস্কি জানান, ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার প্রায় ৯০ শতাংশ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, যা রাশিয়াকে বিচলিত করে তুলেছে।

এদিকে ক্রেমলিন বলছে, আজ প্রেসিডেন্ট পুতিন টেলিফোনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এই ড্রোন হামলার বিষয়টি জানিয়েছেন। পুতিন ট্রাম্পকে বলেছেন, এই হামলার পর রাশিয়া তাদের শান্তি আলোচনার শর্তগুলো পুনরায় খতিয়ে দেখবে।

রুশ গণমাধ্যমগুলো ক্রেমলিনের সহকারী ইউরি উশাকভের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, এই খবর শুনে ট্রাম্প ‘বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ’ হয়েছেন। তবে হোয়াইট হাউস থেকে এই ফোনালাপকে কেবল ‘ইতিবাচক’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে, বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তাইওয়ানকে ঘিরে ধরেছে চীনের যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান ও ড্রোন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মহড়ায় সরাসরি গুলির অনুশীলনও করা হচ্ছে। ছবি: চীনের পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ড
মহড়ায় সরাসরি গুলির অনুশীলনও করা হচ্ছে। ছবি: চীনের পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ড

তাইওয়ানকে ঘিরে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া শুরু করেছে চীন। সোমবার শুরু হওয়া এই মহড়ায় যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান, ড্রোন ও সরাসরি গোলাবর্ষণও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ‘জাস্টিস মিশন ২০২৫’ নামের এই অভিযানে তাইওয়ানকে চারদিক থেকে ঘিরে সাতটি সামুদ্রিক অঞ্চলে সমন্বিত স্থল, নৌ ও আকাশ মহড়া চালানো হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি এখন পর্যন্ত তাইওয়ানকে লক্ষ্য করে চীনের সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে আক্রমণাত্মক সামরিক প্রদর্শন।

চীনের পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ড জানিয়েছে—মহড়ায় স্থল ও সমুদ্রের লক্ষ্যবস্তুর ওপর সিমুলেটেড হামলা, পাশাপাশি তাইওয়ানের প্রধান বন্দরগুলো অবরোধ করার অনুশীলন করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে তাইওয়ানকে বিচ্ছিন্ন করতে বা চাপের মুখে ফেলতে এই ধরনের অবরোধ ব্যবহৃত হতে পারে বলে মনে করছেন সামরিক বিশ্লেষকেরা। সরাসরি গোলাবর্ষণের মহড়া মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) পর্যন্ত চলবে এবং আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় এবার তাইওয়ানের আরও কাছাকাছি ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল ঘোষণা করা হয়েছে।

এই মহড়ার ফলে বেসামরিক বিমান ও নৌ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন তাদের ফ্লাইটের রুট পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে এবং তাইওয়ানের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বিকল্প আকাশপথ ব্যবহারের প্রস্তুতি নিয়েছে। চীনা সামরিক কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, এই মহড়া ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতাপন্থী শক্তি’ ও ‘বিদেশি হস্তক্ষেপের’ বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কবার্তা।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি তাইওয়ানের কাছে ১১.১ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যা ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্যাকেজ। এতে রয়েছে ৮২টি হিমার্স রকেট লঞ্চার, ৪২০টি দূরপাল্লার এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র, স্বচালিত হাউইটজার, উন্নত ড্রোন ব্যবস্থা ও অ্যান্টি-আর্মার অস্ত্র। বেইজিং এই অস্ত্রচুক্তিকে তীব্রভাবে নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এতে তাইওয়ান একটি ‘বারুদের স্তূপে’ পরিণত হচ্ছে।

তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মহড়া চলাকালে তাদের দ্বীপভূমির চারপাশে ৮৯টি চীনা সামরিক বিমান, ১৪টি নৌজাহাজ ও ১৪টি কোস্ট গার্ড জাহাজ শনাক্ত করা হয়েছে। কিছু চীনা জাহাজ তাইওয়ানের উপকূলের খুব কাছাকাছি অবস্থানে এসে চোখ রাঙাচ্ছে। এই প্রেক্ষিতে সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রেখেছে তাইওয়ান।

চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম জানিয়েছে, মহড়ার মূল লক্ষ্য তাইওয়ানের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর—উত্তরের কিলুং ও দক্ষিণের কাওশিয়ুং বন্ধ করে দেওয়ার সক্ষমতা পরীক্ষা। চীন তাইওয়ানকে নিজের ভূখণ্ড দাবি করলেও তাইওয়ান বলছে, দ্বীপটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণের অধিকার শুধু সেখানকার জনগণেরই আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত