Ajker Patrika

আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণার আগেই সরকার গঠনে তোড়জোড় ইমরানবিরোধীদের 

আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৭: ১৯
আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণার আগেই সরকার গঠনে তোড়জোড় ইমরানবিরোধীদের 

পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচনের ভোট গণনা শেষ হওয়ার আগেই সরকার গঠনের তোড়জোড় শুরু করেছে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর বেশ কয়েকজন নেতা। গতকাল শুক্রবার রাতে দেশটির চার প্রদেশে ও কেন্দ্র সরকার গঠনের জন্য জোট বেঁধে পর্যাপ্তসংখ্যক আসন নিশ্চিত করতে বৈঠক করেন ইমরানবিরোধী নেতারা। 

পাকিস্তানের বার্তা সংস্থা ডনের প্রতিবেদন অনুসারে, গতকাল সন্ধ্যায় পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) নেতা নওয়াজ শরিফ, তাঁর ভাই ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফকে পিপিপি, মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট পাকিস্তান (এমকিউএম-পি) ও অন্য দলকে জোট সরকার গঠনে তাঁর দলের সঙ্গে আহ্বান জানাতে বলেছেন। 

এরই মধ্যে, পাঞ্জাবের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মহসিন নাকভির বাসভবনে পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) নেতা আসিফ আলী জারদারি ও তাঁর ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন শাহবাজ। পিপিপির একটি সূত্র জানিয়েছে, এ বৈঠক বড় কোনো ঘটনার ইঙ্গিত দিচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, তাঁরা নির্বাচনের ফলাফল ও নির্বাচন-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন।

অপর একটি সূত্রের বরাত দিয়ে ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এ বৈঠক অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত ছিল। জারদারি গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় লাহোরে অবতরণ করেন আর বিলাওয়াল সেখানে আগে থেকেই ছিলেন। তাঁরা দুজনে গাড়ি চালিয়ে নাকভির বাড়িতে যান। সেখানে শাহবাজ আগে থেকেই তাঁদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এটি সংক্ষিপ্ত বৈঠক হলেও দৃশ্যত এটি ইতিবাচকভাবে শেষ হয়েছে।’ 

পরে শাহবাজ এমকিউএম-পির আহ্বায়ক ড. খালিদ মকবুল সিদ্দিকীর সঙ্গেও কথা বলেন বলে জানান দলটির সিনিয়র নেতা আমিনুল হক। তিনি বলেন, শরিফ সন্ধ্যায় তাঁদের ফোন করেন এবং উভয়পক্ষই ‘শিগগিরই’ একটি বৈঠকে বসবে। তিনি আরও বলেন, ‘শনিবার (আজ) আজিজাবাদের জিন্নাহ ময়দানে আমরা আমাদের জয় উদ্‌যাপন করতে যাচ্ছি। এরপরেই বৈঠক হবে।’ 

সাধারণ নির্বাচনের আগে এমকিউএম-পি ঘোষণা করেছিল প্রধানমন্ত্রীর প্রার্থিতার জন্য তারা নওয়াজ শরিফকে সমর্থন দেবে। 

উল্লেখ্য, এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে ২৫০টি আসনের ফল প্রকাশিত হয়েছে। এতে ৯৯ আসন নিয়ে এগিয়ে আছে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টি (পিটিআই) সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এখনো ১৫ আসনের ফল প্রকাশ বাকি। পিটিআইয়ের অপর দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) পেয়েছে যথাক্রমে ৭১ ও ৫১টি করে আসন। অন্য প্রার্থীরা পেয়েছেন ২৭টি।

পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন অন্তত ১৩৪টি আসন। কিন্তু কোনো দলেরই এককভাবে সেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় দেশটিতে হয়তো আবারও একটি ঝুলন্ত জাতীয় পরিষদ দেখা যাবে। অর্থাৎ জোট গঠন করেই সরকার গঠন করতে হবে। সে ক্ষেত্রে নওয়াজের দল পিএমএল-এন ও পিপিপি জোট করে সরকার গঠন করতে পারে। 

এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত হিসাব অনুসারে, পিপিপি ও পিএমএল-এনের মোট আসন হয় ১২২টি। অর্থাৎ, সরকার গঠনে এই সম্ভাব্য জোটের প্রয়োজন আরও অন্তত ১২টি আসন। এরই মধ্যে নওয়াজ শরিফ জানিয়েছেন, তাঁর দল বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির দল পিপিপির সঙ্গে জোট গঠনের বিষয়ে আলোচনার সুযোগ খুঁজছে। 

গতকাল রাতে লাহোরে নিজ বাসভবনের সামনে উল্লসিত সমর্থকদের সামনে দেওয়া এক ভাষণে নওয়াজ শরিফ বলেছেন, ‘আমাদের একসঙ্গে বসতে হবে।’ দেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও অন্য দুরবস্থার কথা উল্লেখ করে নওয়াজ বলেন, ‘এই দেশকে অচলাবস্থা থেকে বের করে নেওয়া আমাদের সবার দায়িত্ব।’

বিশ্লেষকেরা বলছেন, পিপিপি ও পিএমএল-এন যদি জোট সরকার গঠন করে, সে ক্ষেত্রে কারাবন্দী ইমরান খানের দলের জন্য তা হবে খুবই হতাশার বিষয়। কারণ, পিএমএল-এনের বা পিপিপির সঙ্গে ইমরান খানের দলের স্বতন্ত্র এমএনএদের জোট বাঁধার কোনো সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। পিপিপির সঙ্গে সামান্য সম্ভাবনা থাকলেও নওয়াজের দলের সঙ্গে একেবারেই নেই।

তবে নওয়াজ ও বিলাওয়ালের জোট বাঁধার সম্ভাবনাই বেশি। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, গতকাল রাতেই বিলাওয়ালের বাবা ও পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রপতি আসিফ আলী জারদারি নওয়াজ শরিফের সঙ্গে দেখা করতে লাহোরে গেছেন। ফলে এটা অনুমান করা যেতেই পারে যে নওয়াজের সঙ্গে জোট গঠন করে ছেলেকে পাকিস্তানের ক্ষমতায় আসীন করার চেষ্টা চালাবেন আসিফ। 
 
ইমরান খানের সরকারকে অনাস্থা প্রস্তাবের মাধ্যমে ২০২২ সালের এপ্রিলে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই পাকিস্তানে জোট সরকার ছিল। সেই জোট সরকারে পরস্পরের সঙ্গী ছিল পিপিপি ও পিএমএল-এন। এবারও যদি এ দুটি দল জোট গঠন করে, সে ক্ষেত্রে বিষয়টি দেশটির সেনাবাহিনীর জন্য স্বস্তির হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলার আশপাশে ১৫ হাজার সেনা, ‘কোয়ারেন্টিন’ আরোপের নির্দেশ যুক্তরাষ্ট্রের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছে ক্রমেই শক্তি বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: সংগৃহীত
ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছে ক্রমেই শক্তি বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: সংগৃহীত

হোয়াইট হাউস মার্কিন সামরিক বাহিনীকে আগামী অন্তত ২ মাস ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর ‘কোয়ারেন্টিন’ বা অবরোধ আরোপের দিকেই প্রায় পুরোপুরি মনোনিবেশ করার নির্দেশ দিয়েছে। রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এক মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ওয়াশিংটন বর্তমানে কারাকাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে সামরিক শক্তির চেয়ে অর্থনৈতিক পথকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।

গতকাল বুধবার নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘সামরিক পথ এখনো খোলা আছে সত্যি, তবে হোয়াইট হাউসের লক্ষ্য অর্জনে আপাতত নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগের দিকেই নজর দেওয়া হচ্ছে।’

ভেনেজুয়েলা নিয়ে নিজের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জনসমক্ষে কিছুটা অস্পষ্টতার রাখলেও, গোপনে তিনি নিকোলাস মাদুরোকে দেশ ছেড়ে পালানোর জন্য চাপ দিচ্ছেন বলে রয়টার্স খবর প্রকাশ করেছে। গত সোমবার ট্রাম্প বলেন, মাদুরোর জন্য ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত নেওয়া পদক্ষেপগুলো মাদুরোর ওপর প্রবল চাপ তৈরি করেছে। আমাদের বিশ্বাস, জানুয়ারির শেষ নাগাদ ভেনেজুয়েলা এক ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে, যদি না তারা আমেরিকার কাছে নতি স্বীকার করে বড় কোনো আপস করতে রাজি হয়।’

ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটি যুক্তরাষ্ট্রে মাদক পাচার করছে। গত কয়েক মাস ধরে তাঁর প্রশাসন দক্ষিণ আমেরিকা থেকে আসা এবং মাদক বহনকারী হিসেবে অভিযুক্ত নৌকাগুলোর ওপর বোমা হামলা চালাচ্ছে। অনেক দেশই এই আক্রমণকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হিসেবে নিন্দা জানিয়েছে।

এ ছাড়া, ট্রাম্প প্রায়ই স্থলের মাদক অবকাঠামোতে বোমা হামলার হুমকি দিয়েছেন এবং কারাকাস অভিমুখে সিআইএ-র গোপন তৎপরতার অনুমোদন দিয়েছেন। চলতি মাসে এখন পর্যন্ত মার্কিন কোস্টগার্ড ক্যারিবীয় সাগরে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল বোঝাই দুটি ট্যাংকার জব্দ করেছে।

হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তার এই মন্তব্য এমন সময়ে এল যখন রয়টার্স খবর দিয়েছে যে, কোস্টগার্ড ‘বেলা-১’ নামে একটি খালি ও নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত জাহাজ জব্দের জন্য অতিরিক্ত বাহিনীর অপেক্ষায় রয়েছে। গত রোববার তারা প্রথম এটি আটকের চেষ্টা করেছিল।

মঙ্গলবার জাতিসংঘে ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রদূত স্যামুয়েল মনকাডা বলেন, ‘ভেনেজুয়েলা কোনো হুমকি নয়। আসল হুমকি হলো মার্কিন সরকার।’

এদিকে, পেন্টাগন ক্যারিবীয় অঞ্চলে ১৫ হাজারেরও বেশি সৈন্যের এক বিশাল সামরিক উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে একটি বিমানবাহী রণতরী, ১১টি যুদ্ধজাহাজ এবং এক ডজনেরও বেশি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান। এই সম্পদের অনেকগুলো নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে সহায়ক হলেও, যুদ্ধবিমানের মতো কিছু সরঞ্জাম এই কাজের জন্য খুব একটা উপযুক্ত নয়।

মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘকে জানিয়েছে, তারা মাদুরোকে সম্পদহীন করার জন্য ‘সর্বোচ্চ সীমা’ পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং তা কার্যকর করবে। চলতি মাসের শুরুতে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলায় আসা-যাওয়া করা সমস্ত নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত তেল ট্যাংকারের ওপর ‘অবরোধ’ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

তবে হোয়াইট হাউসের ওই কর্মকর্তার মুখে এখন ‘কোয়ারেন্টিন’ শব্দের ব্যবহার ১৯৬২ সালের কিউবান মিসাইল সংকটের স্মৃতি মনে করিয়ে দিচ্ছে। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি সংঘাত এড়াতে এই শব্দ ব্যবহার করেছিলেন। কেনেডির তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রবার্ট ম্যাকনামারা ২০০২ সালে বলেছিলেন, ‘আমরা একে কোয়ারেন্টিন বলেছিলাম কারণ ‘ব্লকেড’ বা অবরোধ একটি যুদ্ধের শব্দ।’

বুধবার জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা এই অবরোধের নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, এ ধরনের শক্তি প্রয়োগকে ‘অবৈধ সশস্ত্র আগ্রাসন’ হিসেবে গণ্য করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতে বাসে আগুন, জীবন্ত দগ্ধ হয়ে ৯ জনের মৃত্যু

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আগুন ধরে যাওয়া বাস। ছবি: সংগৃহীত
আগুন ধরে যাওয়া বাস। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের কর্ণাটকের চিত্রদুর্গ জেলায় এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ৯ জন জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত আনুমানিক ২টার দিকে ৪৮ নম্বর জাতীয় সড়কে একটি ট্রাকের ধাক্কায় একটি বেসরকারি স্লিপার বাসে আগুন ধরে গেলে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। বাসটি বেঙ্গালুরু থেকে শিমোগা যাচ্ছিল।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাক ডিভাইডার টপকে বাসটিকে সজোরে ধাক্কা মারে। এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ‘বৃহস্পতিবার ভোরে একটি লরি ডিভাইডার পার হয়ে বাসটিকে ধাক্কা দেয়। প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে, লরিটি বাসের তেলের ট্যাংকে আঘাত করেছিল, যার ফলে জ্বালানি ছড়িয়ে পড়ে আগুন ধরে যায়। কয়েকজন যাত্রী কোনোমতে প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হলেও এখন পর্যন্ত আটজন যাত্রী এবং ট্রাকচালকের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে।’

সেই ভয়াবহ মুহূর্তের বর্ণনা দিতে গিয়ে আদিত্য নামের এক যাত্রী বলেন, ‘চারপাশে শুধু মানুষের আর্তনাদ। দুর্ঘটনার পর আমি পড়ে গিয়েছিলাম এবং দেখি চারদিকে আগুন। দরজা খোলা যাচ্ছিল না। আমরা জানালার কাচ ভেঙে পালানোর চেষ্টা করি...মানুষ একে অপরকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল, কিন্তু আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় তা কঠিন হয়ে পড়ে।’

এই দুর্ঘটনার জেরে তুমকুর রোডে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। গোকর্ণগামী এক নারী পর্যটক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘আমাদের সামনে একটি বাসে আগুন লেগেছে। প্রায় ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটে আমরা আটকে আছি, যা পরিষ্কার হতে আরও ঘণ্টা দু-এক সময় লাগতে পারে।’

এর আগে নভেম্বরেও তেলেঙ্গানাতেও একই ধরনের এক দুর্ঘটনা ঘটেছিল। হায়দরাবাদ-বিজাপুর মহাসড়কে পাথরবোঝাই একটি ট্রাকের সঙ্গে বাসের সংঘর্ষে ২০ জনের মৃত্যু হয়। তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সড়ক পরিবহন নিগমের সেই বাসটিতে প্রায় ৭০ জন যাত্রী ছিলেন। ট্রাকের ওপর থাকা পাথর বাসের ভেতরে পড়ে যাওয়ায় অনেক যাত্রী চাপা পড়ে মারা যান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

থাই-কম্বোডিয়া সীমান্তে গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো বিষ্ণু মূর্তি, নিন্দা জানাল ভারত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মূর্তিটি ২০১৪ সালে নির্মিত হয়েছিল। ছবি: সংগৃহীত
মূর্তিটি ২০১৪ সালে নির্মিত হয়েছিল। ছবি: সংগৃহীত

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া সীমান্তে দুই দেশের মধ্যকার বিরোধপূর্ণ এলাকায় ভগবান বিষ্ণুর একটি মূর্তি ধ্বংসের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করেছে ভারত। আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই ঘটনাকে একটি ‘অসম্মানজনক কাজ’ হিসেবে অভিহিত করেছে এবং সংশ্লিষ্ট দুই দেশকেই আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে আসার আহ্বান জানিয়েছে।

কম্বোডিয়ার প্রিয়া বিহার প্রদেশের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, গত সোমবার (২২ ডিসেম্বর) থাই সামরিক বাহিনী একটি এক্সকাভেটর ব্যবহার করে ভগবান বিষ্ণুর মূর্তিটি গুঁড়িয়ে দেয়।

বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূর্তিটি ২০১৪ সালে নির্মিত হয়েছিল। এটি সীমান্ত থেকে প্রায় ১০০ মিটার ভেতরে কম্বোডিয়ার আন সেস এলাকায় অবস্থিত ছিল।

প্রিয়া বিহারের মুখপাত্র লিম চানপানহা এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘বৌদ্ধ ও হিন্দু অনুসারীদের কাছে পূজনীয় প্রাচীন মন্দির ও মূর্তি ধ্বংসের এই ঘটনা আমরা কোনোভাবেই মেনে নেব না।’ তবে থাইল্যান্ডের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে বলেন, সীমান্ত বিরোধের জের ধরে এ ধরনের কাজ অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি বলেন, ‘ভূখণ্ড নিয়ে দাবি যাই থাকুক না কেন, এ ধরনের অসম্মানজনক কাজ বিশ্বজুড়ে হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে। এমন ঘটনা ঘটা উচিত নয়।’

ভারত আবারও উভয় পক্ষকে শান্তি বজায় রাখতে এবং জানমাল ও ঐতিহ্যের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সংলাপ ও কূটনীতির পথে ফেরার অনুরোধ জানিয়েছে।

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে ৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত নিয়ে বিরোধ দীর্ঘদিনের। ঔপনিবেশিক আমলের সীমানা নির্ধারণকে কেন্দ্র করে এই বিরোধের শুরু। গত জুলাইয়ে পাঁচ দিনের লড়াইয়ে কয়েক ডজন মানুষ নিহত হয়েছিল। গত ডিসেম্বরে নতুন করে শুরু হওয়া সংঘাতে এ পর্যন্ত ৪০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন এবং প্রায় ১০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

বুধবার থেকে উভয় দেশের সামরিক কর্মকর্তারা আবারও যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন।

বিষ্ণু মূর্তি ধ্বংসের এই ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ভারতসহ বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক মহল আশা করছে, সংঘাতের পরিবর্তে শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমেই এই সংকটের সমাধান হবে। হিন্দু ও বৌদ্ধ দেবতারা এই অঞ্চলের মানুষের কাছে অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্র এবং এটি আমাদের অভিন্ন সভ্যতা ও ঐতিহ্যের অংশ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাজায় ধ্বংসস্তূপের মাঝেই বড়দিনের আনন্দ খুঁজছে ক্ষুদ্র খ্রিষ্টান সম্প্রদায়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪৭
গত ২১ ডিসেম্বর গাজা সিটিতে ক্রিসমাস উদযাপনের আগে হলি ফ্যামিলি ক্যাথলিক চার্চের বাইরে গাজার শিশু ও সন্ন্যাসিনীরা। ছবি: এপির সৌজন্যে
গত ২১ ডিসেম্বর গাজা সিটিতে ক্রিসমাস উদযাপনের আগে হলি ফ্যামিলি ক্যাথলিক চার্চের বাইরে গাজার শিশু ও সন্ন্যাসিনীরা। ছবি: এপির সৌজন্যে

গাজা উপত্যকায় দুই বছর ধরে চলা ধ্বংসলীলা আর লাশের মিছিলের মাঝেও বড়দিনের আনন্দ ফিরে পাওয়ার এক বিষাদময় চেষ্টা চালাচ্ছে সেখানকার ক্ষুদ্র খ্রিষ্টান সম্প্রদায়। একটি নড়বড়ে যুদ্ধবিরতি কিছুটা স্বস্তি দিলেও ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি আর বাস্তুচ্যুত মানুষের হাহাকার অনেক ঐতিহ্যবাহী উৎসবকে ম্লান করে দিয়েছে।

৭৬ বছর বয়সী আত্তাল্লাহ তরাজি সম্প্রতি বড়দিনের উপহার হিসেবে এক জোড়া মোজা আর স্কার্ফ পেয়েছেন। গাজার কনকনে শীত থেকে বাঁচতে এগুলোই এখন তাঁর বড় সম্বল। গির্জার অন্য সদস্যদের সঙ্গে তরাজি যখন গাইলেন—‘খ্রিষ্টের জন্ম হয়েছে, হালেলুইয়া’ (একটি হিব্রু শব্দ, যার অর্থ প্রভুর প্রশংসা), তখন কিছুক্ষণের জন্য হলেও যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার বিভীষিকা ঢাকা পড়েছিল বিশ্বাসের সুরে।

গাজার সেন্ট্রাল সিটি এলাকার ‘হলি ফ্যামিলি চার্চ’ কম্পাউন্ডে আশ্রয় নেওয়া তরাজি বলেন, ‘আমরা এই পবিত্র মুহূর্তে যুদ্ধ, বিপদ আর বোমাবর্ষণের কথা ভুলে যেতে চাই। খ্রিষ্টের জন্মের আনন্দ আমাদের সব তিক্ততাকে ছাপিয়ে যাক।’

তবে সবার জন্য উৎসবের অনুভূতি এক নয়। শাদি আবু দাউদের জন্য এবারের বড়দিনটি অত্যন্ত কষ্টের। গত জুলাই মাসে এই ক্যাথলিক চার্চ কম্পাউন্ডেই ইসরায়েলি হামলায় তাঁর মা নিহত হন ও ছেলে আহত হয়। ইসরায়েল একে ‘দুর্ঘটনা’ বলে দুঃখ প্রকাশ করলেও স্বজন হারানোর ক্ষত এখনো দগদগে। আবু দাউদ বলেন, জখম এখনো কাঁচা। এখানে কোনো উৎসব নেই, আমরা এখনো ‘না যুদ্ধ না শান্তি’র এক অদ্ভুত অবস্থার মধ্যে বাস করছি।

গাজার প্রায় ২০ লাখ বাসিন্দার মধ্যে খ্রিষ্টানদের সংখ্যা এখন নগণ্য। যুদ্ধের কারণে অনেক পরিবার দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। ২৩ বছর বয়সী ওয়াফা ইমাদ এলসায়েঘ জানান, বন্ধুবান্ধব আর আত্মীয়রা না থাকায় আগের মতো আমেজ নেই। তিনি বলেন, ‘আমরা পরিবার নিয়ে সাজসজ্জা করছি ঠিকই, কিন্তু যাদের সঙ্গে সব আনন্দ ভাগ করে নিতাম, তারা আজ গাজায় নেই। এই পরিবেশ আগের মতো করে আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।’

৩৫ বছর বয়সী মা এলিনোর আমাশ তাঁর সন্তানদের মুখে হাসি ফোটাতে ঘরে বড়দিনের গাছ (ক্রিসমাস ট্রি) সাজিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার সন্তানেরা কিছু চকলেট আর মিষ্টি পেয়ে বোমার ভয় ছাড়া শ্বাস নিতে পারছে। কিন্তু তাঁবুগুলোতে বসবাসকারী মানুষের কষ্ট দেখে চোখে জল আসে।’

গাজার খ্রিষ্টানরা মনে করেন, তাঁরা সংখ্যায় যত কম হোক না কেন, এটি এই ভূমির প্রতি ভালোবাসা এবং বিশ্বাসের এক অটল সাক্ষ্য। আত্তাল্লাহ তরাজি প্রার্থনা করেন যেন তাঁর জাতি শান্তি ও স্বাধীনতা পায়। তিনি বিশ্বাস করেন, এই পরিস্থিতির চেয়েও বড়দিনের আনন্দ এবং তাঁদের বিশ্বাস অনেক বেশি শক্তিশালী।

গত অক্টোবর থেকে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির পর গাজায় হামলার তীব্রতা কমলেও মাঝেমধ্যে প্রাণঘাতী আঘাত আসছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি অভিযানে এ পর্যন্ত প্রায় ৭১ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের অর্ধেকই নারী ও শিশু।

অতিবৃষ্টিতে বাস্তুচ্যুত মানুষের তাঁবুগুলো তলিয়ে গেছে, যা ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত