Ajker Patrika

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের সপ্তম দিন: নতুন অস্ত্রে আক্রমণ ইরানের

  • ইরানে হামলার পরিকল্পনার অনুমোদন দিয়েছেন ট্রাম্প। ২ সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন।
  • মধ্যপ্রাচ্যের দিকে একের পর এক রণতরি নিয়ে যাচ্ছে মার্কিন বাহিনী।
  • বুধবার রাতের হামলায় ইসরায়েলে অন্তত ২৭০ জন আহত।
আপডেট : ২০ জুন ২০২৫, ০২: ৩৪
ইরান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা। ছবি: এএফপি
ইরান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা। ছবি: এএফপি

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে এবার সরাসরি জড়িয়ে পড়তে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানে হামলার পরিকল্পনার প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছেন। এই অনুমোদনের আগেই ইরান ঘিরে সামরিক উপস্থিতি বাড়ানো শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। অবশ্য গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে হোয়াইট হাউস বলেছে, ইরানে যুক্তরাষ্ট্র অভিযান চালাবে কি না, সে বিষয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন ট্রাম্প। এই পরিস্থিতিতে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে আবার হত্যার হুমকি দিয়েছে ইসরায়েল।

এদিকে এমন সময়ে ইরানে হামলার পরিকল্পনা অনুমোদন দেওয়া হলো, যখন ইসরায়েলে নতুন নতুন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে হামলা শুরু করেছে ইরান। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। গত বুধবার রাতে ইরানের হামলায় ইসরায়েলে অন্তত ২৭০ জন আহত হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়, ইরানে হামলার পরিকল্পনা অনুমোদন দিয়েছেন ট্রাম্প। তবে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো জানাননি তিনি। মার্কিন গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, ইরান পরমাণু কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে আসার ঘোষণা দিলে যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালাবে না। যদি কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে না আসে, তাহলে মার্কিন হামলা শুরু হতে পারে। সূত্র জানিয়েছে, ইরানে ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর বিষয়ে আগ্রহী ট্রাম্প।

এ নিয়ে প্রতিবেদন করেছে মার্কিন গণমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালও। তাঁদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প ইরানে হামলার পরিকল্পনায় ব্যক্তিগতভাবে সম্মতি দিয়েছেন, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত স্থগিত রেখেছেন। তিনি আশায় ছিলেন, ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে সরে আসবে। এ নিয়ে ট্রাম্প তাঁর নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ইরান বিষয়ে আমার চিন্তাভাবনা সম্পর্কে কিছুই জানে না।’

এদিকে ইরানের হামলার বিষয়ে গতকাল সাংবাদিকেরা জিজ্ঞেস করলে ট্রাম্প বলেন, ‘দেখা যাক কী হয়। সবাই আমাকে এটা নিয়ে প্রশ্ন করছে, কিন্তু আমি এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি।’

২ সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন ট্রাম্প

বাংলাদেশ সময় গতকাল রাতে হোয়াইট হাউস বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানে অভিযান চালাবে কি না, সে বিষয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট এক ব্রিফিংয়ে ট্রাম্পের একটি বিবৃতি পড়ে শোনান। তাতে বলা হয়, ট্রাম্প চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে আরও সুযোগ দিতে চান। বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, ‘ইরানের সঙ্গে আলোচনার একটি উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা রয়েছে, তা আদৌ হবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়; এই প্রেক্ষাপটে আমি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেব যে সেখানে (ইরানে) যাওয়া (অভিযান চালানো) উচিত হবে কি না।’

মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি

মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক উপস্থিতি বাড়াতে শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত বুধবার রাতে বিবিসি জানায়, মার্কিন নৌবাহিনীর বিমানবাহী রণতরি ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড আগামী সপ্তাহের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের কাছে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এটি পূর্ব ভূমধ্যসাগরে মোতায়েন করা হবে।

মার্কিন সামরিক উপস্থিতি বাড়ানোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক রাজনৈতিক সাময়িকী পলিটিকোয় একাধিক খবর প্রকাশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, দক্ষিণ চীন সাগর থেকে ইউএসএস নিমিতজ রণতরি সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে। সোমবার থেকে এর যাত্রা শুরু হয়েছে। এ ছাড়া ইউএসএস কার্ল ভিনসন রণতরি ইতিমধ্যে আরব সাগরে রয়েছে। সঙ্গে রয়েছে রণতরি ইউএসএস হ্যারি এস ট্রুম্যান। এদিকে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন গত সপ্তাহে দুই যুদ্ধজাহাজ ইসরায়েলের কাছে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এ ছাড়া যুদ্ধবিমান সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে ইউরোপের ঘাঁটিগুলোয়। প্রতিরক্ষা বাহিনীর দুটি সূত্র পলিটিকোকে জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে অভিযানের জন্য এসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ইরানের শক্তিশালী হামলা

বুধবার রাতে ইরানের তেহরানসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা চালায় ইসরায়েল। এর মধ্যে পারমাণবিক স্থাপনা নাতানজও ছিল। জবাবে গত বুধবার রাতে ঘোষণা দিয়ে ইসরায়েলে ব্যাপক হামলা চালায় ইরান। দেশটির বার্তা সংস্থা তাসনিম নিউজ জানায়, বুধবার রাতে প্রথমবারের মতো সিজ্জিল ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। এ ছাড়া এই রাতে ইসরায়েলের সরোকা হাসপাতালের পাশে একটি সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালায় ইরান। তবে সেই ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে ওই হাসপাতালে। এর পর থেকে সেখানে হতাহতের সংখ্যা বাড়ছেই। প্রথম ইসরায়েলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, সেখানে ৮০ জনের মতো আহত হয়েছে। পরে সর্বশেষ গতকাল রাতে সিএনএন জানায়, বুধবার রাতে ইরান যেসব হামলা চালিয়েছে, তাতে আহত কমপক্ষে ২৭১ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে ইরানের এই তীব্র হামলার কথা স্বীকার করেছে ইসরায়েলও। দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনী বলছে, ইরান এখন যেসব ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছে, তাতে একাধিক ওয়ারহেড থাকছে। ফলে একই ক্ষেপণাস্ত্র একাধিক স্থানে আঘাত হানছে। এই হামলাকে ইরানের সবচেয়ে বড় হামলা হিসেবে আখ্যা দিয়েছে তারা।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র এফি দেফরিন বলেন, ইরান এ পর্যন্ত ৪৫০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। ড্রোন ছুড়েছে ১ হাজারের বেশি। ইরানের বেশ কিছু ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ যন্ত্র ধ্বংস করা হয়েছে। তবে এরপরও ১০০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ যন্ত্র আছে ইরানের। তিনি বলেন, ‘এটা কোনো সাধারণ অভিযান নয়। এটা আমাদের জন্য অনেক জটিল একটি অভিযান।’

আরও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

বুধবার রাতের পর আবারও গতকাল হামলা চালিয়েছে ইরান। গতকাল হামলা শুরুর পর হাইফা শহরে সতর্কসংকেত বাজানো হয়েছে। ইসরায়েলের হোম ফ্রন্ট কমান্ড জানিয়েছে, তারা ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকিয়ে দিচ্ছে। ইসরায়েলিদের নিরাপদ স্থানে থাকার পরামর্শ দিয়েছে।

এদিকে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস গতকাল জানায়, তেল আবিব ও হাইফা শহর লক্ষ্য করে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ১০০ ধরনের অস্ত্র ছোড়া হয়েছে। এ ছাড়া এসব শহরের সামরিক স্থাপনার আশপাশে থাকা মানুষদের সরে যেতে বলেছে ইরান।

খামেনিকে হত্যার হুমকি

এদিকে ইসরায়েলে হাসপাতালে হামলার পর ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার হুমকি দিয়েছে ইসরায়েল। ‘খামেনিকে আর বাঁচতে দেওয়া যায় না’ বলে মন্তব্য করেছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। এ ছাড়া গতকাল প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক এক্স বার্তায় (সাবেক টুইটার) বলেন, ইরানের টাইরান্ট গতকাল সকালে হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে। ওই বার্তায় খামেনিকে হত্যার ইঙ্গিত দিয়ে তিনি আরও লেখেন, তেহরানের এই টাইরান্টকে এর মূল্য দিতে হবে।

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে যে সহযোগিতা করছে, সে জন্য ট্রাম্পকে ধন্যবাদ দিয়েছেন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, ইতিমধ্যেই ইসরায়েলকে অনেক সাহায্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েলের আকাশসীমা নিরাপদ রাখতে এবং দেশটির শহরগুলো রক্ষায় সাহায্য করছে মার্কিন বাহিনী।

এদিকে এমন হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে কোনো মন্তব্য করেননি খামেনি। তিনি দেশের মানুষকে একতাবদ্ধ থেকে লড়াই চালিয়ে যেতে বলেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইন্দোনেশিয়ায় নার্সিং হোমে আগুনে ১৬ জনের মৃত্যু

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইন্দোনেশিয়ায় একটি নার্সিং হোমে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। ছবি: সংগৃহীত
ইন্দোনেশিয়ায় একটি নার্সিং হোমে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। ছবি: সংগৃহীত

ইন্দোনেশিয়ায় একটি নার্সিং হোমে আগুন লেগে ১৬ জন নিহত এবং ৩ জন আহত হয়েছেন। আজ সোমবার এএফপির প্রতিবেদনে স্থানীয় এক কর্মকর্তার বরাতে জানানো হয়, উত্তর সুলাওয়েসি প্রদেশের রাজধানী মানাদোর একটি নার্সিং হোমে এ অগ্নিকাণ্ড ঘটে।

শহরটির ফায়ার অ্যান্ড রেস্কিউ এজেন্সির প্রধান জিমি রোটিনসুলু জানান, নার্সিং হোমটিতে স্থানীয় সময় রোববার রাত ৮টা ৩১ মিনিটে আগুন লাগার খবর পান ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এ ঘটনায় ১৬ জন নিহত এবং ৩ জন অগ্নিদগ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন।

জিমি জানান, ভুক্তভোগীদের অনেক দেহ তাঁদের ঘরের ভেতরেই পাওয়া গেছে। তিনি আরও যোগ করেন, সন্ধ্যায় যখন আগুন ছড়িয়ে পড়ে তখন বয়স্ক বাসিন্দাদের অনেকেই সম্ভবত তাদের নিজ নিজ ঘরে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন।

কর্তৃপক্ষ ১২ জনকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে এবং তাঁদের স্থানীয় হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

স্থানীয় সম্প্রচার মাধ্যম মেট্রো টিভি-তে প্রচারিত ফুটেজে দেখা গেছে, আগুন নার্সিং হোমটিকে পুরোপুরি গ্রাস করে নিয়েছে এবং স্থানীয়রা এক বৃদ্ধ ব্যক্তিকে সরিয়ে নিতে সাহায্য করছেন।

১৭ হাজারেরও বেশি দ্বীপের দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় এই দ্বীপরাষ্ট্রে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা খুব একটা বিরল নয়। চলতি মাসেই ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় একটি সাততলা অফিস ভবনে অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ২২ জন নিহত হন। ২০২৩ সালে দেশটির পূর্বাঞ্চলে একটি নিকেল প্রক্রিয়াকরণ কারখানায় বিস্ফোরণে অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাঁজা চাষে লাইসেন্স ফি কমাল পাকিস্তান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গাঁজা চাষের লাইসেন্স ফি ৬ লাখ রুপি থেকে কমিয়ে ৫ লাখ রুপি করা হয়েছে। ছবি: এএফপি
গাঁজা চাষের লাইসেন্স ফি ৬ লাখ রুপি থেকে কমিয়ে ৫ লাখ রুপি করা হয়েছে। ছবি: এএফপি

গাঁজা চাষ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের লাইসেন্স ফি কমানোর অনুমোদন দিয়েছে পাকিস্তানের সরকার। দ্য ডনের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, খাইবার পাখতুনখোয়া এলাকায় গাঁজা চাষের এই ফি কমাচ্ছে ক্যানাবিস রেগুলেটরি অথরিটি (সিআরএ)।

এছাড়া, শিল্পজাত হেম্প ও হেম্প বীজের তেলের ওপর থেকে আবগারি শুল্ক তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ফুল-স্পেকট্রাম ক্যানাবিডিওল (CBD) ও টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনল (THC)-এর ওপর আবগারি শুল্ক বাড়ানোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

সরকারি নথি বরাতে দ্য ডন জানিয়েছে, সিআরএ গাঁজা চাষের লাইসেন্স ফি ৬ লাখ রুপি থেকে কমিয়ে ৫ লাখ রুপি করেছে এবং গাঁজা প্রক্রিয়াকরণের লাইসেন্স ফি ১৫ লাখ রুপি থেকে কমিয়ে ১০ লাখ রুপি নির্ধারণ করেছে।

এছাড়া হেম্প প্রক্রিয়াকরণের লাইসেন্স ফি ৭ লাখ রুপি থেকে কমিয়ে ৫ লাখ রুপি করা হয়েছে।

অন্যদিকে, ফুল-স্পেকট্রাম ক্যানাবিডিওল ও টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনলের ওপর আবগারি শুল্ক প্রতি কেজিতে ৩ হাজার রুপি থেকে বাড়িয়ে ৫ হাজার রুপি করা হয়েছে।

নথিতে আরও বলা হয়েছে, ২২ ডিসেম্বর আবগারি, কর ও মাদকদ্রব্য বিষয়ক মন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে আরও বলা হয়, ওই বৈঠকটি ৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত উপ-কমিটির বৈঠকের ধারাবাহিকতা ছিল, যেখানে এসব পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছিল।

নথি অনুযায়ী, সিআরএ-এর বৈঠকে খাইবার পাখতুনখোয়ার জন্য প্রস্তাবিত হেম্প মডেল কমিটির সামনে উপস্থাপন করা হয়। এ সময় আবগারি, কর ও মাদক নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সচিব এবং স্বাস্থ্য সচিব জোর দিয়ে বলেন, ব্যবসা পরিচালনাকে সহজ করা এবং বিনিয়োগকারীদের সুবিধা দিতে প্রস্তাবিত মডেলটি আরও সরল করা প্রয়োজন।

বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, খাইবার পাখতুনখোয়ায় স্বনামধন্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে পরীক্ষামূলকভাবে হেম্প চাষের লাইসেন্স দেওয়া হবে এবং এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান কৃষকদের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করবে।

হেম্প চাষ ও প্রক্রিয়াকরণের লাইসেন্সের আবেদন ফরম, টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনল (টিএইচসি) নমুনা সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ ফরম, পর্যায়ক্রমিক পরিদর্শন ফরমসহ অন্যান্য বাধ্যতামূলক রেজিস্টার অনুমোদন করেছে সিআরএ।

শিল্প ও কৃষকদের যৌথ উদ্যোগে বোর্ড অব ইনভেস্টমেন্ট (বিওআই) এবং শিল্প বিভাগ সহায়তা প্রদানের বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। কৃষকদের নিবন্ধন ব্যক্তিগত বা সমবায় কোম্পানি হিসেবে উভয় ক্ষেত্রেই ঐচ্ছিক রাখা হয়েছে।

হেম্প বীজ আমদানি ও এর শংসাপত্রের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট লাইসেন্সপ্রাপ্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ওপর রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আপাতত গাঁজা চাষ ও প্রক্রিয়াকরণ আপাতত স্থগিত রাখা হবে এবং ওষুধ শিল্পের প্রয়োজনীয় গাঁজা নিয়ন্ত্রণ ও এর পণ্য ব্যবস্থাপনা পাকিস্তানের ড্রাগ রেগুলেটরি অথরিটির (ডিআরএপি) চাহিদা ও মানদণ্ডের আলোকে বিবেচনা করা হবে।

নথিতে আরও বলা হয়, ক্যানাবিস মডেল প্রণয়ন এবং ক্যানাবিস সংক্রান্ত বিধিবিধান পুনর্বিবেচনার জন্য ১৫ দিনের মধ্যে একটি উপকমিটি গঠন করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে উত্তেজনা: শিখ ও হিন্দু বিক্ষোভকারীদের মধ্যে হাতাহাতি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বিক্ষোভকারী শিখদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে ওসমান হাদির ছবিও দেখা যায়। ছবি: এক্স
বিক্ষোভকারী শিখদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে ওসমান হাদির ছবিও দেখা যায়। ছবি: এক্স

লন্ডনে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে গত শনিবার একটি বিক্ষোভ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বেশ উত্তেজনা তৈরি হয়। বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর কথিত নির্যাতনের প্রতিবাদে আয়োজিত এই সমাবেশে স্বাধীন খালিস্তানপন্থী শিখ অধিকার কর্মী এবং একদল হিন্দু বিক্ষোভকারী মুখোমুখি হলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্রিটিশ পুলিশকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও আয়োজকদের বরাত দিয়ে পাকিস্তানি দৈনিক ডন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আয়োজিত সমাবেশে খালিস্তান রেফারেন্ডাম অভিযানের সমন্বয়ক পরমজিৎ সিং পাম্মা উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের হাতে ধরা প্ল্যাকার্ডে হরদীপ সিং নিজ্জার এবং শরিফ ওসমান বিন হাদির ছবি দেখা গেছে। সমাবেশের একপর্যায়ে ভারতীয় এক হিন্দু বিক্ষোভকারীর সঙ্গে পাম্মার কথা-কাটাকাটি এবং পরে হাতাহাতি শুরু হয়। ঘটনার গুরুত্ব বুঝে সেখানে দায়িত্বরত মেট্রোপলিটন পুলিশের কর্মকর্তারা দ্রুত পদক্ষেপ নেন এবং দুই পক্ষকে আলাদা করে দেন।

বিক্ষোভকারীরা বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রবেশপথের কাছে একটি কর্ডন তৈরি করে তাদের কর্মসূচি চালিয়ে যান। এ সময় তাঁরা ভারত সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজনৈতিক স্লোগান দেন। বিশেষ করে হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যা এবং অন্যান্য শিখ নেতাদের খুনের পেছনে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার হাত রয়েছে বলে তাঁরা অভিযোগ করেন।

উল্লেখ্য, ভারত সরকার পরমজিৎ সিং পাম্মাকে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড টেররিস্ট’ বা অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে তালিকাভুক্ত করলেও পাম্মা ও তাঁর সমর্থকেরা এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। বর্তমানে তিনি যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন।

গত বছরের জুনে কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার খুন হওয়ার পর থেকে ভারত ও কানাডার মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন চরম আকার ধারণ করেছে। একইভাবে, যুক্তরাষ্ট্রে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুনকে হত্যার ষড়যন্ত্রের সঙ্গেও ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছে মার্কিন বিচার বিভাগ।

লন্ডনের এই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে সেই বৈশ্বিক উত্তেজনার ছায়া দেখা গেছে। তবে পুলিশ জানিয়েছে, কোনো বড় ধরনের হতাহতের ঘটনা ঘটেনি এবং পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া যায়নি।

খালিস্তান আন্দোলনের শিকড় ১৯৪৭ সালের ভারত ভাগ এবং পাঞ্জাব বিভাজনের সময় পর্যন্ত বিস্তৃত। স্বাধীন শিখ রাষ্ট্রের দাবিতে এই আন্দোলন দশকের পর দশক ধরে চলে আসছে। এই আন্দোলন বর্তমানে বৈশ্বিক রাজনীতিতে ভারত-কানাডা এবং ভারত-মার্কিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি সংবেদনশীল ইস্যু হিসেবে দাঁড়িয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসরায়েল কেন প্রথম দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসরায়েলের স্বীকৃতির ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে সোমালিল্যান্ড। ছবি: এএফপি
ইসরায়েলের স্বীকৃতির ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে সোমালিল্যান্ড। ছবি: এএফপি

ইসরায়েল কেন সোমালিয়া থেকে স্বাধীন হতে চাওয়া সোমালিল্যান্ডকে প্রথম দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিল—এই প্রশ্ন ঘিরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়েছে। আফ্রিকার হর্ন অঞ্চলের স্বঘোষিত স্বাধীন রাষ্ট্র সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে ইসরায়েল শুধু একটি কূটনৈতিক সিদ্ধান্তই নেয়নি, বরং মধ্যপ্রাচ্য ও লোহিত সাগর ঘিরে চলমান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই স্বীকৃতির পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক—এই তিনটি প্রধান কারণ। সোমালিল্যান্ডের অবস্থান অত্যন্ত কৌশলগত। এটি এডেন উপসাগরের তীরে অবস্থিত এবং ইয়েমেনের খুব কাছেই, যেখানে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা সক্রিয়। চলতি বছরে হুতি ও ইসরায়েলের মধ্যে একাধিকবার হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের প্রতিবাদে হুতিরা লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা চালায়। জবাবে ইয়েমেনের সানা ও হোদেইদায় হুতি নিয়ন্ত্রিত এলাকায় হামলা চালায় ইসরায়েল।

এই প্রেক্ষাপটে ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউটের গবেষক ডেভিড মাকোভস্কি প্রশ্ন তুলেছেন—সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে কি ইসরায়েল সেখানে সামরিক সুবিধা বা গোয়েন্দা উপস্থিতির পথ খুলেছে? বিশেষ করে হুতি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র মোকাবিলায় এটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

ইসরায়েলের গণমাধ্যম ‘চ্যানেল ১২’ জানিয়েছে, সোমালিল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আব্দিরাহমান মোহাম্মদ আবদুল্লাহি গোপনে একাধিকবার ইসরায়েল সফর করেছেন। গত অক্টোবরে তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ ও মোসাদের প্রধান ডেভিড বারনিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পরে নেতানিয়াহু এই স্বীকৃতির ক্ষেত্রে মোসাদের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন।

তবে এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছে সোমালিয়া ও আফ্রিকান ইউনিয়ন। মিসর ও ফিলিস্তিনসহ কয়েকটি আরব দেশও এর সমালোচনা করেছে। অতীতে গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের জোর করে সোমালিল্যান্ডে স্থানান্তরের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল, যদিও সোমালিল্যান্ডের কর্মকর্তারা এই ধরনের কোনো যোগাযোগের কথা অস্বীকার করেছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি ইসরায়েলের জন্য অর্থনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। সোমালিল্যান্ডের বন্দরনগরী বেরবেরা ইসরায়েলকে লোহিত সাগরে প্রবেশের সুযোগ দিতে পারে। এমন হলে বৈশ্বিক বাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাব আল-মানদেব প্রণালির ওপর নজরদারি চালাতে পারবে ইসরায়েল। তবে সব মিলিয়ে, সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিয়ে ইসরায়েল ইতিহাস তৈরি করলেও এর পূর্ণ প্রভাব ও ফলাফল এখনো স্পষ্ট নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত