Ajker Patrika

জেরুসালেম পোস্টের প্রতিবেদন

গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির চুক্তি হতে পারে আজ

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত একটি এলাকা থেকে সন্তানকে সরিয়ে নিচ্ছেন এক মা। ছবি: আনাদোলু
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত একটি এলাকা থেকে সন্তানকে সরিয়ে নিচ্ছেন এক মা। ছবি: আনাদোলু

যদি শেষ মুহূর্তে কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনা না ঘটে, তবে আজ মঙ্গলবারই গাজায় যুদ্ধবিরতি ও একটি জিম্মি-বন্দী বিনিময় চুক্তি ঘোষণা করা হতে পারে। ইসরায়েল সরকারের ঘনিষ্ঠ সূত্র দেশটির সংবাদমাধ্যম জেরুসালেম পোস্টকে এমনটাই জানিয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, আজ কাতারে চুক্তি চূড়ান্ত করার জন্য বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। গতকাল সোমবার সূত্রটি জেরুসালেম পোস্টকে জানায়, হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের মুক্তির জন্য তিন ধাপের একটি পরিকল্পনায় ঐকমত্যে পৌঁছানো হয়েছে, তবে এ নিয়ে হামাসের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষা করা হচ্ছে।

চুক্তির আলোচনার সঙ্গে জড়িত এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘এই চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য আগামী ২৪ ঘণ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জিম্মি বিনিময় চুক্তির রূপরেখা পরিষ্কার এবং ইসরায়েল অনেক দূর এগিয়েছে। আমরা ধীরে এবং সাবধানতার সঙ্গে এগোচ্ছি। আশা করি, হামাস তাদের অস্বীকৃতি জানানো বন্ধ করবে।’

কাতারের রাজধানী দোহায় কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হামাস ও ইসরায়েল পরোক্ষভাবে এই যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছে। আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য মনোনীত কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এই আলোচনায় ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফও উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে, গতকাল সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান জানান, এ সপ্তাহেই হতে পারে গাজার যুদ্ধবিরতি চুক্তি। গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি-বন্দী মুক্তির একটি চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মেয়াদের শেষ সপ্তাহেই সম্পন্ন হতে পারে।

জেক সুলিভান বলেন, ‘আমরা একটি চুক্তির খুব কাছাকাছি এবং এটি এই সপ্তাহেই সম্পন্ন হতে পারে। আমি কোনো প্রতিশ্রুতি বা ভবিষ্যদ্বাণী করছি না, তবে এটি সম্ভব এবং আমরা তা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি।’ সুলিভান জানান, ২০২৩ সালের ৬ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েলে আক্রমণের পর গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার সময়ের তুলনায় এখন একটি চুক্তি হওয়ার বিষয়ে তিনি অনেক বেশি আশাবাদী।

তিনি বলেন, ‘এর কারণ হলো, মতপার্থক্যগুলো অনেকটাই কমে এসেছে।’ হামাসের হাতে থাকা জিম্মি এবং ইসরায়েলের কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দীদের বিনিময়ের ফর্মুলা নিয়ে এবং গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অবস্থান কেমন হবে, এসব বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে বলে তিনি জানান। তবে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেননি।

সুলিভান বলেন, ‘ইসরায়েল গাজায় তাদের সামরিক লক্ষ্য অর্জন করেছে এবং হামাস ব্যাপক ধ্বংসাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘যখন এই দুই বিষয় একসঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়, আমরা মনে করি চুক্তি সম্পন্ন করার এটাই সঠিক সময়।’

এদিকে, মার্কিন সংবাদমাধ্যম এক্সিওস জানিয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন আজ মঙ্গলবার গাজার পুনর্গঠন ও শাসনব্যবস্থা নিয়ে পরিকল্পনা উপস্থাপন করবেন। খবরে বলা হয়েছে, ব্লিঙ্কেন আজ মঙ্গলবার সকালে মার্কিন থিংক ট্যাংক আটলান্টিক কাউন্সিলে দেওয়া বক্তৃতায় তাঁর পরিকল্পনা তুলে ধরবেন।

হামাস-পরবর্তী গাজায় শাসনব্যবস্থা গঠনের পরিকল্পনা এই চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ বাস্তবায়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যা একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও যুদ্ধের সমাপ্তি নিশ্চিত করবে। ব্লিঙ্কেন গাজায় নিরাপত্তা, প্রশাসন ও পুনর্গঠনের পরিকল্পনা মার্কিন মিত্রদের সঙ্গে শেয়ার করেছেন এরই মধ্যে। এই পরিকল্পনা যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর বাস্তবায়িত হবে।

প্যারিসে এক সংবাদ সম্মেলনে ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘আমরা এটি ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করতে প্রস্তুত, যাতে তারা এটি নিয়ে কাজ করতে পারে এবং সুযোগ পেলে এগিয়ে নিতে পারে।’ তবে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা দেখা গেছে, এই পরিকল্পনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে এবং তীব্র অভ্যন্তরীণ বিরোধ তৈরি করেছে। কিছু কর্মকর্তার আশঙ্কা, এই পরিকল্পনা ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর স্বার্থ রক্ষা করবে এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ও প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে উপেক্ষা করবে।

এক্সিওস গত অক্টোবরে জানিয়েছিল, ইসরায়েল ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রস্তাবিত ধারণার ওপর ভিত্তি করে ব্লিঙ্কেন গাজার জন্য যুদ্ধ-পরবর্তী পরিকল্পনা তৈরি করছেন এবং এটি নির্বাচনের পরে উপস্থাপন করতে চান।

ব্লিঙ্কেন তাঁর পরামর্শদাতা ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু জেমি রুবিনকে এই পরিকল্পনা প্রণয়নের দায়িত্বে নিযুক্ত করেন। কয়েক সপ্তাহ আগে রুবিন ইসরায়েল ও পশ্চিম তীরে গিয়েছিলেন এই পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করতে। মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ পরিকল্পনার বিরুদ্ধে দীর্ঘ আপত্তির তালিকা তুলে ধরে ইঙ্গিত দেয় যে, তারা এটি সমর্থন করে না।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে ইসরায়েল সরকার, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব এবং অন্যান্য আরব দেশগুলোর সঙ্গে এই পরিকল্পনার মূল পয়েন্টগুলো নিয়ে আলোচনা করেছে। ব্লিঙ্কেনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, একটি শাসন কাঠামো গঠন করা হবে, যেখানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও আরব দেশগুলো অংশ নেবে। তারা গাজায় নিরাপত্তা স্থিতিশীল করা এবং মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য সেনা পাঠাতে পারবে।

বক্তৃতায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সংস্কারের আহ্বান জানানো হবে, একই সঙ্গে পরিষ্কার করা হবে যে, গাজার ভবিষ্যৎ শাসনে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে অন্তর্ভুক্ত করতেই হবে। ইসরায়েল সরকার চায়, আরব দেশগুলো যুদ্ধ পরবর্তী গাজা পরিস্থিতিতে অংশ নিক, তবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে অন্তর্ভুক্ত করা কোনো পরিকল্পনায় এখন পর্যন্ত সম্মতি দেয়নি।

ব্লিঙ্কেনের বক্তৃতায় তিনি সেই নীতিমালা পুনর্ব্যক্ত করবেন, যা তিনি যুদ্ধের শুরুতে টোকিওতে বলেছিলেন। এর মধ্যে গাজায় ইসরায়েলি স্থায়ী দখলদারিত্ব, অঞ্চল সংকুচিত করা বা ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক স্থানান্তরের বিরোধিতার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত।

এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘ব্লিঙ্কেন এই যুদ্ধের ফলাফল নির্ধারণে ভূমিকা রাখতে চান এবং বক্তৃতায় তিনি পরিষ্কার করবেন, কীভাবে ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে কৌশলগত সাফল্য অর্জন করতে পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাশিয়াকে পশ্চিম সম্মান করলে আর যুদ্ধ হবে না: পুতিন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি
ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের পর আর কোনো যুদ্ধ হবে না—যদি পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়াকে সম্মান করে এবং দেশটির নিরাপত্তাগত স্বার্থকে গুরুত্ব দেয়। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠান ‘ডিরেক্ট লাইন’-এ তিনি এই মন্তব্য করেন।

বিবিসির সাংবাদিক স্টিভ রোজেনবার্গের প্রশ্নের জবাবে পুতিন বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলোকে আক্রমণ করার যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ ‘অর্থহীন’।

পুতিন দাবি করেন, রাশিয়ার প্রতি সম্মান দেখানো হলে এবং পূর্বদিকে ন্যাটোর সম্প্রসারণ নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো ‘প্রতারণা’ বন্ধ করলে নতুন কোনো বিশেষ সামরিক অভিযান হবে না। তিনি তাঁর পুরোনো অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করে বলেন, ১৯৯০ সালে সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভকে ন্যাটো সম্প্রসারণ না করার যে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, পশ্চিম তা মানেনি।

মস্কোর একটি হলে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে পুতিনের পেছনে রাশিয়ার বিশাল মানচিত্র ঝুলছিল। এই মানচিত্রে ইউক্রেনের দখলকৃত অঞ্চল, এমনকি ক্রিমিয়াও অন্তর্ভুক্ত ছিল। রুশ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের দাবি, ওই অনুষ্ঠানটিতে পুতিনকে উদ্দেশ্য করে ৩০ লাখের বেশি প্রশ্ন জমা পড়েছিল।

ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে পুতিন বলেন, তিনি ‘শান্তিপূর্ণভাবে’ যুদ্ধ শেষ করতে প্রস্তুত। তবে কোনো ধরনের আপসের ইঙ্গিত দেননি। তিনি আবারও দাবি করেন, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার চেষ্টা বাদ দিতে হবে এবং রাশিয়ার দখল করা চারটি অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সেনা সরিয়ে নিতে হবে। আংশিকভাবে দখল করে নেওয়া ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চায় রাশিয়া।

দেশের অর্থনীতির প্রশ্নে মূল্যস্ফীতি, প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া এবং ভ্যাট বৃদ্ধির বিষয় স্বীকার করেন পুতিন। অনুষ্ঠানের মধ্যেই রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার কমিয়ে ১৬ শতাংশে নামানোর ঘোষণা দেয়। বিদেশনীতি, অর্থনীতি ও যুদ্ধের পাশাপাশি অনুষ্ঠানজুড়ে উঠে আসে মাতৃভূমি, প্রবীণ সেনাদের সম্মান এবং সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন সমস্যা।

পুতিন পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, তারা ইউক্রেনের মাধ্যমে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের সঙ্গে ‘সমান মর্যাদা ও পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে’ কাজ করতে তিনি আগ্রহ প্রকাশ করেন। রাশিয়া ভবিষ্যতে ন্যাটোর ওপর হামলা চালাতে পারে—পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর এমন আশঙ্কার কথা আবারও তা নাকচ করে দেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার শুনানি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ৫৬
২০১৭ সালে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ছবি: এপির সৌজন্যে
২০১৭ সালে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ছবি: এপির সৌজন্যে

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যার অভিযোগে করা মামলার মূল শুনানি আগামী জানুয়ারিতে শুরু হচ্ছে। জাতিসংঘের সর্বোচ্চ বিচারিক সংস্থা আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) জানিয়েছে, এ মামলার শুনানি চলবে আগামী ১২ থেকে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত।

এই শুনানি আন্তর্জাতিক আইনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, এক দশকের বেশি সময় পর এটি হবে আইসিজেতে কোনো গণহত্যা মামলার মূল বিষয়ের ওপর শুনানি। একই সঙ্গে গাজা যুদ্ধ নিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা মামলাতেও এর প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুনানির প্রথম সপ্তাহে (১২ থেকে ১৫ জানুয়ারি) মামলার বাদী দেশ গাম্বিয়া আদালতে তাদের অভিযোগ উপস্থাপন করবে। পশ্চিম আফ্রিকার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ গাম্বিয়া ২০১৯ সালে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সমর্থনে এ মামলা দায়ের করে। মামলায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগ আনা হয়।

এরপর ১৬ থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত মিয়ানমার তাদের অবস্থান তুলে ধরার সুযোগ পাবে। মিয়ানমার সরকার বরাবরই গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

আইসিজে জানিয়েছে, এ মামলায় তিন দিন সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে এসব শুনানি জনসাধারণ ও গণমাধ্যমের জন্য বন্ধ থাকবে।

জাতিসংঘের একটি তদন্ত মিশন ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযানে ‘গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড’ সংঘটিত হয়েছিল বলে প্রতিবেদন দেয়। ওই অভিযানে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।

মিয়ানমার অবশ্য জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট ও ত্রুটিপূর্ণ’ বলে দাবি করেছে। দেশটির বক্তব্য, সে সময়কার অভিযান ছিল রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে, যারা নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছিল।

মামলাটি ১৯৪৮ সালের জাতিসংঘের গণহত্যা সনদ অনুযায়ী দায়ের করা হয়েছে। নাৎসি জার্মানির হাতে ইহুদিদের গণহত্যার পর এ সনদ প্রণয়ন করা হয়। এতে গণহত্যা বলতে কোনো জাতিগত, ধর্মীয় বা নৃগোষ্ঠীকে পুরোপুরি বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, গুরুতর শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি, কিংবা পুরোপুরি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে সৃষ্ট পরিস্থিতিকে বোঝানো হয়েছে।

গাম্বিয়া ও মিয়ানমার—দুই দেশই এ সনদের স্বাক্ষরকারী হওয়ায় আইসিজের এ মামলার বিচারিক এখতিয়ার রয়েছে।

১৯৪৮ সালের গণহত্যা সনদের পর আইসিজে এখন পর্যন্ত মাত্র একবার গণহত্যার ঘটনা নিশ্চিত করেছে। এটি ছিল ১৯৯৫ সালে বসনিয়ার স্রেব্রেনিৎসায় প্রায় ৮ হাজার মুসলিম পুরুষ ও কিশোর হত্যাকাণ্ড।

গাম্বিয়া ও মামলায় হস্তক্ষেপকারী অন্য দেশগুলো হলো কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য। এই পাঁচ দেশ আদালতে যুক্তি দিয়েছে, গণহত্যা শুধু ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তাদের মতে, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি, শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধ এবং যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতাও গণহত্যার উদ্দেশ্য হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া উচিত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বাজপেয়ির ‘সেই বক্তব্য’ সামনে আনলেন শশী থারুর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কংগ্রেস সাংসদ ও ভারতের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির (পররাষ্ট্রবিষয়ক) প্রধান শশী থারুর। ছবি: পিটিআই
কংগ্রেস সাংসদ ও ভারতের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির (পররাষ্ট্রবিষয়ক) প্রধান শশী থারুর। ছবি: পিটিআই

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম যোদ্ধা শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। গতকাল বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, সংবাদমাধ্যমের ভবনে অগ্নিসংযোগ এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কংগ্রেস সাংসদ ও ভারতের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির (পররাষ্ট্রবিষয়ক) প্রধান শশী থারুর।

শশী থারুর সতর্ক করে বলেছেন, বাংলাদেশে চলমান এই সহিংসতা সাধারণ বাংলাদেশিদের সহায়তা করার ক্ষেত্রে ভারতের সক্ষমতাকে সংকুচিত করে দিচ্ছে। তিনি ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ির সেই বিখ্যাত উক্তি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ভূগোল পরিবর্তন করা যায় না। আমরা যেখানে আছি সেখানেই থাকব, তারাও সেখানেই থাকবে। তাদের উচিত আমাদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে শেখা।’

বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের ওপর হামলা এবং ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে থারুর বলেছেন, ‘সহিংসতার কারণে আমাদের দুটি ভিসা সেন্টার বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এটি অত্যন্ত হতাশাজনক। কারণ, যেসব বাংলাদেশি ভারতে আসতে চান, তাঁরাই এখন অভিযোগ করছেন যে আগে যেভাবে সহজে ভিসা পাওয়া যেত, এখন তা পাওয়া যাচ্ছে না।’

থারুর উল্লেখ করেন, বর্তমান পরিস্থিতি ভারত সরকারের পক্ষে সাধারণ বাংলাদেশিদের সাহায্য করা কঠিন করে তুলছে।

বাংলাদেশ সরকারকে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে থারুর বলেন, ‘আমি আশা করি পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হবে। আমি বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারকে বলব যেন তারা প্রতিবেশীর সঙ্গে এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের গুরুত্ব বোঝে। বাজপেয়ি সাহেব পাকিস্তানের ক্ষেত্রে যেমনটি বলেছিলেন—আমরা আমাদের ভূগোল পরিবর্তন করতে পারি না। আমরা যেখানে আছি সেখানেই থাকব, তারাও সেখানেই থাকবে। তাদের উচিত আমাদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে শেখা।’

শশী থারুর জানান, নয়াদিল্লি পুরো পরিস্থিতি খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় কর্মকর্তারা সরাসরি বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করবে এবং পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য যা যা করা প্রয়োজন তা করতে অনুরোধ জানাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতে তেল দিয়ে ফেরার পথে বিধ্বস্ত রুশ জাহাজ—প্রতিশোধের হুমকি পুতিনের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৫৩
ছবি: সিএনএন
ছবি: সিএনএন

ভূমধ্যসাগরের নিরপেক্ষ জলসীমায় ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলায় একটি রুশ তেলবাহী ট্যাংকার ধ্বংসের ঘটনায় উত্তেজনা আরও বেড়েছে। হামলার পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। ইউক্রেন একে ‘অভূতপূর্ব বিশেষ অভিযান’ হিসেবে দাবি করলেও, রাশিয়া এটিকে আন্তর্জাতিক নৌ নিরাপত্তার জন্য নতুন হুমকি বলে আখ্যা দিয়েছে।

শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা গেছে—ইউক্রেনীয় ড্রোনের আঘাতে রাশিয়ার ‘শ্যাডো ফ্লিট’ বা গোপন নৌবহরের অন্তর্ভুক্ত তেলবাহী ট্যাংকার ‘কেনডিল’-এ ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছে।

ইউক্রেনের নিরাপত্তা সংস্থা এসবিইউ জানিয়েছে, হামলাটি ইউক্রেন থেকে প্রায় ১ হাজার ২০০ মাইল দূরে সংঘটিত হয়। কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এটি প্রথমবারের মতো কৃষ্ণসাগরের বাইরে এবং নিরপেক্ষ জলসীমায় ইউক্রেনের কোনো ড্রোন হামলা।

ইউক্রেন দাবি করেছে, হামলার সময় ট্যাংকারটি খালি ছিল এবং এতে কোনো তেল বা জ্বালানি বহন করা হচ্ছিল না। ফলে পরিবেশগত কোনো ঝুঁকি তৈরি হয়নি। তবে বিস্ফোরণে জাহাজটি ‘গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে বলে তারা দাবি করেছেন।

ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, ট্যাংকারটি চলতি মাসের শুরুর দিকে ভারতের গুজরাট রাজ্যের সিক্কা বন্দরে তেল খালাস করে ফিরে যাচ্ছিল।

এই ঘটনার পর মস্কো কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বছরের শেষ প্রান্তিকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ভূমধ্যসাগরে রুশ ট্যাংকারে হামলার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এই ধরনের হামলা কিছু বাস্তব লক্ষ্যকে সামনে রেখে করা হয়—যেমন বিমা প্রিমিয়াম বাড়ানো। কিন্তু এতে সরবরাহ ব্যাহত হবে না এবং প্রত্যাশিত ফলও পাওয়া যাবে না। বরং এটি অতিরিক্ত হুমকি তৈরি করবে। আমাদের দেশ এর জবাব দেবে।’

পুতিন আরও বলেন—বেসামরিক অবকাঠামোর ওপর আঘাতের বিষয়েও রাশিয়া চুপ করে থাকবে না। তাঁর ভাষায়, ‘আমাদের পক্ষ থেকে সব সময়ই একটি পাল্টা আঘাত ঘটবে।’

বিশ্লেষকদের মতে, নিরপেক্ষ জলসীমায় ইউক্রেনের এই হামলা যুদ্ধের পরিধিকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। একই সঙ্গে পুতিনের পাল্টা জবাবের ঘোষণা ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতকে আরও বিস্তৃত ও অনিশ্চিত করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত