Ajker Patrika

গাজায় ৪৭ হাজার ফিলিস্তিনি হত্যার পর যুদ্ধবিরতি টানল ইসরায়েল

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯: ৪০
গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঘোষণার পর স্থানীয়দের উল্লাস। ছবি: এএফপি
গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঘোষণার পর স্থানীয়দের উল্লাস। ছবি: এএফপি

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ ভূখণ্ড গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন শুরু হয় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর। এরপর পেরিয়ে গেছে ১৫ মাসের বেশি সময়। এই সময়ে ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছে ৪৭ হাজার ফিলিস্তিনি। অবশেষে অঞ্চলটিতে যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে। স্থানীয় সময় আজ রোববার বেলা সোয়া ১১টা থেকে এই যুদ্ধবিরতি শুরু হয়।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

গত শুক্রবার কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। পরে গতকাল শনিবার যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি চুক্তি অনুমোদন করে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা। নেতানিয়াহুর কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির একটি চুক্তি অনুমোদন করেছে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা।

এদিকে, গতকাল কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে শেয়ার এক পোস্টে বলেন, ‘চুক্তির পক্ষগুলো এবং মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যে সমন্বয়ের পর গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি রোববার (১৯ জানুয়ারি) স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে।’ গাজাবাসীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সতর্ক থাকুন, সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করুন এবং কেবল সরকারি সূত্র থেকে পাওয়া নির্দেশনার অপেক্ষা করুন।’

এদিকে, যুদ্ধবিরতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বন্দী বিনিময় চুক্তি নিয়ে আল-মায়াদিনকে এক বিশেষ সূত্র গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানিয়েছে। গত শুক্রবার সূত্রটি জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস যেকোনো নারী বা শিশু বন্দীকে মুক্তি দিলে, প্রতি বন্দীর বিপরীতে ইসরায়েলি কারাগার থেকে ৩০ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হবে। এর মধ্যে নারী ও শিশুরাও থাকবে। একইভাবে, ৫০ বছর বা তার বেশি বয়সী কিংবা অসুস্থ বন্দীদের ক্ষেত্রে প্রতি বন্দীর বদলে ৩০ জন বয়স্ক বা অসুস্থ ফিলিস্তিনি বন্দী মুক্তি পাবে।

এ ছাড়া, একজন নারী ইসরায়েলি সেনাকে মুক্তি দেওয়ার বিনিময়ে ৩০ জন ফিলিস্তিনি যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দী এবং ১৫ বছরের কম সাজা বাকি থাকা আরও ২০ জন বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হবে। চুক্তির প্রথম ধাপে ২০১১ সালের বিনিময় চুক্তিতে মুক্তি পাওয়া কিন্তু পরবর্তী সময় ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পুনরায় গ্রেপ্তার হওয়া ৪৭ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হবে।

তা ছাড়া, এই চুক্তির আওতায় মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনি বন্দীদের আগের অভিযোগে পুনরায় গ্রেপ্তার করা যাবে না। তাদের বাকি সাজা ভোগ করতে হবে না এবং মুক্তির শর্ত হিসেবে কোনো নথিতে স্বাক্ষর করতে হবে না।

এদিকে, যুদ্ধবিরতির চুক্তি কার্যকরের কয়েক ঘণ্টা আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, মুক্তি পেতে যাওয়া জিম্মিদের তালিকা এখনো প্রকাশ করেনি হামাস। এই কারণে চুক্তি কার্যকরে বিলম্ব হতে পারে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিবৃতির বরাতে বলা হয়েছে, নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত জিম্মিদের তালিকা হাতে না আসছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা এই চুক্তির ব্যাপারে অগ্রসর হব না। ইসরায়েল কোনোভাবেই চুক্তি লঙ্ঘন সহ্য করবে না। আর এমন কিছু হলে তার সম্পূর্ণ দায় হামাসের।’

যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী, মুক্তির অন্তত ২৪ ঘণ্টা আগে হামাসকে জিম্মিদের নামের তালিকা সরবরাহ করতে হবে। তবে এখনো হামাস এই তালিকা প্রকাশ করেনি। রোববার (১৯ জানুয়ারি) স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা পর্যন্ত জিম্মিদের মুক্তির সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।

অপর দিকে, যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর ও ইসরায়েল তা অনুমোদন দেওয়ার পরও গাজায় বন্ধ হয়নি ইসরায়েলি হামলা। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন ২৩ জন। আর এতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ৪৭ হাজারে পৌঁছেছে।

তুরস্কের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির প্রতিবেদনে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তি সত্ত্বেও ইসরায়েলি হামলায় গাজা উপত্যকায় আরও ২৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ফলে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৬ হাজার ৮৯৯ জনে দাঁড়িয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চলমান হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার ৭২৫ জন আহত হয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বাহিনী তিনটি পরিবারের ওপর হামলা চালিয়ে ২৩ জনকে হত্যা করেছে এবং ৮৩ জনকে আহত করেছে।’ এতে আরও বলা হয়, ‘অনেক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকা পড়ে আছেন। উদ্ধারকর্মীরা তাঁদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না।’

এ ছাড়া, হামাসের বরাত দিয়ে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গাজার রাফাহ থেকে ফিলাডেলফি করিডরের দিকে তাদের অবস্থান থেকে সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তবে এই বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য জানায়নি হামাস বা ইসরায়েল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত