Ajker Patrika

বোমায় ছিন্নভিন্ন মায়ের পাশে কাঁদছিল শিশুটি, এক বছর পর মিলিয়ে দিল দুই পরিবারকে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মরিয়মের কোলে মোহাম্মদ। ছবি: আল–জাজিরা
মরিয়মের কোলে মোহাম্মদ। ছবি: আল–জাজিরা

বাবার কোলে হাসছে ছোট্ট মোহাম্মদ। প্রায় ১৬ মাস আগে, ইসরায়েলি বোমা হামলায় নিহত মায়ের নিথর দেহের পাশে বসে কাঁদছিল ১৩ মাস বয়সী এই শিশু। আশ্রয় নেওয়া স্কুলের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে সেদিন আরও কত মানুষ যে প্রাণ হারিয়েছিল, আহত হয়েছিল তার ইয়ত্তা নেই। সেই ভয়াবহ দিনের বিশৃঙ্খলার মধ্যে, মানুষ দিগ্‌বিদিক পালাচ্ছিল, সেই থেকে হারিয়ে যায় ছোট্ট মোহাম্মদ।

তার বাবা, তারেক আবু জাবাল, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তন্ন তন্ন করে খুঁজেছেন ছেলেকে। অথচ তিনি জানতেনই না, অন্য একজন মানুষ, যিনি একই স্কুলে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তিনিও তারেকের খোঁজ করছিলেন!

ছোট্ট অতিথি

রাসেম নাবহান এবং তাঁর পরিবারও বাস্তুচ্যুত হয়ে উত্তর গাজার জাবালিয়া এলাকার আল-রাফেই স্কুলে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে ইসরায়েলি বোমার আঘাতে কেঁপে ওঠে স্কুলটি। ৪১ বছর বয়সী রাসেম বলেন, ‘আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম, শিশুরা চিৎকার করছিল। কিছুক্ষণ পরই কোয়াডকপ্টার উড়তে শুরু করে এবং সবাইকে অবিলম্বে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। চারপাশে তখন মুহুর্মুহু গুলির শব্দ।’

রাসেম তখন তাঁর স্ত্রী ও সাত সন্তানকে নিয়ে অন্য নারী ও শিশুদের সঙ্গে স্কুল থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতি নেন। এরপর তিনি বোমা হামলায় বিধ্বস্ত শ্রেণিকক্ষে জ্বলতে থাকা আগুন নেভাতে ছুটে যান। কেউ জীবিত আছে কিনা খোঁজার চেষ্টা করেন।

রাসেম বলেন, ‘দেয়ালগুলোতে রক্তের দাগ। আহত ও নিহতদের মাঝে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল শরীরের বিভিন্ন অংশ। ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়!’

তিনি বলেন, ‘সেই ভয়াবহ দৃশ্যের মধ্যে আমি একটি শিশুকে চিৎকার করে কাঁদতে দেখলাম। তার পাশে পড়ে ছিল এক নারীর দেহ–মাথা ও পেট ছিন্নভিন্ন, সারা শরীর রক্তে ভেজা। আমার মনে হয় তিনিই ছিলেন শিশুটির মা।’

কোনো কিছু না ভেবে রাসেম শিশুটিকে কোলে তুলে নিয়ে দৌড়াতে শুরু করলেন। ‘শিশুর মুখ লাল হয়ে গিয়েছিল, কান্নায় তার দম প্রায় বন্ধ হয়ে আসছিল।’ বলেন রাসেম।

রাসেম বলেন, ‘আমি আশপাশে থাকা লোকজনকে জিজ্ঞাসা করতে লাগলাম: আপনারা কি এই শিশুকে চেনেন? তার মা মারা গেছে। কিন্তু কেউ চিনতে পারলেন না। এটা অবিশ্বাস্য ছিল... মনে হচ্ছিল যেন কেয়ামতের দিন, সবাই সন্তানদের আঁকড়ে ধরে পালাচ্ছে।’

মোহাম্মদের এখন দুটি পরিবার। ছবি: আল–জাজিরা
মোহাম্মদের এখন দুটি পরিবার। ছবি: আল–জাজিরা

ততক্ষণে ইসরায়েলি ট্যাংক স্কুলটি ঘিরে ফেলেছে, সবাইকে হেঁটে দক্ষিণে যেতে বাধ্য করে তারা। রাসেম শিশুটিকে কোলে নিয়ে হাঁটতে থাকেন। তাঁর স্ত্রী রাস্তার পাশে সন্তানদের নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন।

তিনি বলেন, ‘আমি আমার স্ত্রীকে শিশুটি দিলাম এবং বললাম, আমি তাকে স্কুলে তার মৃত মায়ের পাশে পেয়েছি।’

৩৪ বছর বয়সী রাসেমের স্ত্রী ফাওয়াহ নাবহান শিশুটিকে কোলে নিলেন। তাঁদের বড় মেয়েরা তাকে কোলে নেওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে।

ফাওয়াহ বলেন, ‘যখন আমরা এই ছোট্ট অতিথিকে স্বাগত জানালাম, এক মুহূর্তের জন্য ভয় উধাও হয়ে গেল! তার মুখটা ছিল খুবই সুন্দর। আমি দেখার সঙ্গে সঙ্গে ওর প্রতি গভীর টান অনুভব করলাম।’

তাঁরা শিশুটির নাম রাখেন হামুদ, যা মোহাম্মদ ও আহমেদ নামের ছোট রূপ। ফিলিস্তিনে দুটি নামই বেশ জনপ্রিয়। তাঁরা শিশুটিকে নিয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নেৎসারিম চেকপয়েন্ট পার হয়ে রশিদ স্ট্রিটের দিকে হেঁটে যান।

রাসেম, ফাওয়াহ এবং তাঁদের দুই বড় মেয়ে, ১৯ বছর বয়সী ইসলাম ও ১৮ বছর বয়সী আমিনা পালা করে শিশুটিকে কোলে নেন।

ফাওয়াহ বলেন, ‘সে আমাদের কোলে ঘুমিয়ে পড়ত আবার জেগে উঠত। অন্য শিশুদের মতোই চারপাশে কী ঘটছে সে সম্পর্কে সে সম্পূর্ণ বেখেয়াল।’

পরিবারটি জানত না শিশুটির বয়স কত, তবে তার আকার ও ওজন দেখে তারা অনুমান করেছিলেন, তার বয়স সাত থেকে নয় মাস হবে।

ফাওয়াহ আরও বলেন, ‘আমরা তাকে আগে স্কুলে দেখিনি। তার আসল বয়স বা কখন তার জন্ম হয়েছিল সে সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণা ছিল না।’

পরিবারটি হেঁটে মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহে পৌঁছায়, সেখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয় এবং পরে খান ইউনিসের দক্ষিণে যায়। সেখানে আশ্রয় শিবির বানানো আরেকটি স্কুল খালি আছে বলে তাঁরা শুনেছিলেন।

ফাওয়াহ বলেন, ‘ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও, আমার মনে হয়েছিল তাঁবুর চেয়ে স্কুল ভালো। অন্তত আমাদের মাথার ওপর একটি কংক্রিটের ছাদ তো থাকবে!’

এই পরিবারের বাস্তুচ্যুতির গল্প দীর্ঘ এবং জটিল। তাঁরা স্কুল থেকে উদ্বাস্তু শিবির, খোলা আকাশের নিচে ঘুমানো থেকে শুরু করে মাসের পর মাস তাঁবুতে কাটিয়েছেন। এসব কিছুর মধ্যে, রাসেম ও ফাওয়াহ শিশুটিকে উষ্ণতা ও আনন্দের উৎস হিসেবে দেখেছিলেন।

রাসেম স্মরণ করেন, ‘প্রথমদিকে সে চুপচাপ থাকত, কখনোই হাসত না, আমরা যতই চেষ্টা করি না কেন। প্রায় ৫০ দিন সে এমনই ছিল–যেন সে মাকে খুঁজছে এবং ভাবছে আমরা কারা। কিন্তু ধীরে ধীরে সে স্বাভাবিক হতে শুরু করে। সে আমাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। আমরাও তাকে ভালোবেসে ফেলি।’

রাসেম পরিবারের বাস্তুচ্যুতির পুরো সময় জুড়ে, ফাওয়াহ, ইসলাম ও আমিনা শিশুটির যত্ন নেন। কিন্তু যখন তাকে খাওয়ানোর সময় আসত, তখন ফাওয়াহ নিজেই তা করতেন।

তবে ইসরায়েলের গাজায় চালানো নির্বিচার হামলার মধ্যে একটি শিশুর যত্ন নেওয়া অনেক বড় আর্থিক চাপ। কারণ ফর্মুলা দুধ, ডায়াপার এবং পুষ্টিকর খাবার পাওয়াই কঠিন। পাওয়া গেলেও দাম আকাশছোঁয়া।

ফাওয়াহ বলেন, ‘আমরা যখন দক্ষিণে পৌঁছালাম, তখন ফর্মুলা ও একটি প্যাসিফায়ার কিনেছিলাম, কিন্তু সে মুখে নেয়নি। আমার মনে হয় তার মা তাকে বুকের দুধ খাওয়াতেন। একদিক থেকে, এটা স্বস্তির ছিল কারণ ফর্মুলা খুব দামি ছিল। পরিবর্তে, আমি তাকে ডাল, মটরশুঁটি, ভাত দিতাম। আমরা যা খেতাম, সেও তাই খেত।;

‘সে কলা খুব ভালোবাসত। আমরা মাত্র দুটি কিনতে পারতাম–একটি তার জন্য এবং একটি আমার চার বছর বয়সী ছেলে আবদুল্লাহর জন্য।’ যোগ করেন ফাওয়াহ।

ডায়াপার রেশনিং করতে হতো কারণ দাম আকাশছোঁয়া। প্রতিটি ডায়াপার ১০ শেকেল (প্রায় ২.৭০ ডলার) পর্যন্ত পৌঁছেছিল। ফাওয়াহ ব্যাখ্যা করেন, ‘আমি রাতে তাকে একটি ডায়াপার পরিয়ে দিতাম। দিনের বেলা সুতির কাপড় ব্যবহার করতাম। সেটি ঘন ঘন পরিবর্তন করতাম।’

আপন ছোট ভাইয়ের মতো কোলেপিঠে করে রেখেছেন ইসলাম। ছবি: আল–জাজিরা
আপন ছোট ভাইয়ের মতো কোলেপিঠে করে রেখেছেন ইসলাম। ছবি: আল–জাজিরা

আশীর্বাদ

পরিবারটি যখন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাচ্ছিল, তখন শিশুটি সবার কাছে সুপরিচিত ও আদরের পাত্র হয়ে ওঠে। রাসেম বলেন, শিশুটি তাঁর পরিবারের জন্য আশীর্বাদ বয়ে আনে।

হামুদ নাবহানদের মতো দেখতে ছিল না। লোকেরা রাসেম ও ফাওয়াহকে শিশুটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করত। যখন তাঁরা তার গল্প শুনতেন, তাঁদের খুব বিগলিত ও আপ্লুত হতেন। শিশুটিকে সবাই সাধ্যমতো ছোটখাটো উপহার দিতেন।

ফাওয়াহ হাসতে হাসতে বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পের প্রতিবেশীরা শুধু তার জন্য খাবারের থালা পাঠাত। তারা বলত, দেখবেন, সে যেন অবশ্যই এটা খায়।’

ফাওয়াহ শিশুটির দিকে তাকিয়ে নিচু স্বরে বলেন, ‘সে আমার স্বামীকে বাবা এবং আমাকে মা ডাকে। সে আমার কোলে ঘুমায়, যখনই আরামের প্রয়োজন হয় তখনই সরাসরি আমার কাছে ছুটে আসে।’

তিনি বলেন, ‘আমার চার বছর বয়সী আবদুল্লাহ যখনই দেখত আমি বাচ্চাটির দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছি, তখনই সে খুব ঈর্ষান্বিত হয়ে কাঁদত!’

সব মিলিয়ে, দম্পতির অন্য সন্তানেরা–মোহাম্মদ (২০), ইসলাম (১৯), আমিনা (১৮), মারিয়াম (১২), নূর আল-হুদা (১০), মুস্তাফা (৯) এবং আবদুল্লাহ (৪) –শিশুটিকে তাদের নিজেদের একজন হিসেবে গ্রহণ করেছিল।

বিভিন্ন সংস্থা, এতিম স্পনসরশিপ প্রোগ্রাম এবং এমনকি দত্তক নিতে ইচ্ছুক অন্যান্য পরিবারের কাছ থেকে অসংখ্য প্রস্তাব আসা সত্ত্বেও, রাসেম সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।

রাসেম বলেন, ‘সে আমার আট নম্বর সন্তান। আমি তাকে গভীরভাবে ভালোবাসি। আমি তাকে আমার কাছ থেকে কেউ কেড়ে নেবে এটা ভাবতেই পারি না। আমি সব সময় সরাসরি বলেছি, একমাত্র তখনই আমি তাকে যেতে দেব যদি আমি তার আসল পরিবারকে খুঁজে পাই।’

এরপর, চাপা স্বরে রাসেম বলেন, ‘কিন্তু আমার অন্তরে, আমি সব দোয়া করতাম যেন আমি তাদের খুঁজে না পাই! আমি তার পরিবারের খোঁজ করা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। আমরা তার প্রতি খুব বেশি অনুরক্ত হয়ে পড়েছিলাম।’

এক পিতার জন্য অনুসন্ধান

যখন রাসেম কথা বলছিলেন, তখন ৩৫ বছর বয়সী মোহাম্মদের বাবা তারেক পাশে বসে তাঁর ছোট ছেলের দিকে তাকিয়ে হাসছিলেন। তাঁর তিন সন্তান–ওমর (১৪), তোলায় (৯) এবং মোহাম্মদ (বর্তমানে ২৬ মাস)। নিখোঁজ সন্তানের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরেছেন তারেক।

তারেক স্মরণ করেন, ‘যেদিন আল-রাফেই স্কুলে বোমা হামলা হয়, সেদিন আমার স্ত্রী ও তিন সন্তান একটি শ্রেণিকক্ষে ছিল। বিমান হামলার সময় আমি স্কুলের মাঠে ছিলাম। আমি চিৎকার করতে করতে তাদের দিকে ছুটে যাই।’

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আল-রাফেই ও পাশের স্কুলটিতে বোমা বর্ষণ করেছিল। ‘সেই হামলায় আমার স্ত্রী, আমার ভাগনে এবং আরও ছয়জন নিহত হয়–চোখের পলকে আটটি প্রাণ ঝরে যায়, বলেন তারেক।

তিনি বলেন, ‘যখন আমি আমাদের শ্রেণিকক্ষটিতে পৌঁছালাম, তখন আমি ওমর ও তোলায়কে আহত অবস্থায় দেখলাম। ওমরের পিঠে স্প্লিন্টার লেগেছিল এবং আমার মেয়ের পেটে আঘাত লেগেছিল। তারপর আমি আমার স্ত্রীকে দেখলাম... তার শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল।’

বলতে বলতে তারেকের কণ্ঠ ধরে আসে। কোনো রকম বলেন, ‘আমি ভেঙে পড়ি। কিন্তু কোনোমতে নিজেকে সামলে নিয়ে অন্যদের সঙ্গে তার দেহ সরিয়ে নিতে সাহায্য করি।’

তারেকের স্ত্রী, ইমান আবু জাবালের বয়স ছিল ৩৩ বছর। আর তোলায় তিন মাস ধরে পেটে স্প্লিন্টার বহন করেছিল।

তারেক বলেন, ‘শোক, আহত সন্তানদের জন্য ভয়, চিৎকার, তাড়াহুড়ো করে সরিয়ে নেওয়া, মাথার ওপর চক্কর দেওয়া সেনাবাহিনীর ড্রোন... আতঙ্কিত হয়ে, আমি যখন আমার ভাইবোনদের বের করছিলাম তখন মোহাম্মদকে সঙ্গে নিতে ভুলে গিয়েছিলাম।’

যখন তিনি মোহাম্মদের জন্য ফিরে যান, তখন আর তাকে খুঁজে পাননি। তিনি বলেন, ‘আমি সবাইকে জিজ্ঞাসা করতে শুরু করলাম। কেউ কেউ আমাকে বলেছিল সে মারা গেছে। অন্যরা বলেছিল কেউ তাকে নিয়ে গেছে। গল্পগুলো পাল্টাতে থাকে। আমি বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলাম। আমি ভিড়ের মধ্যে খুঁজেছিলাম, কিন্তু সবাই দৌড়াচ্ছিল, চিৎকার করছিল, তাদের সন্তানদের ধরে পালাচ্ছিল।’

তারেক কয়েকজন লোকের সঙ্গে স্কুলে ফিরে যান বোমা হামলায় নিহতদের কবর দেওয়ার জন্য। তারেক স্মরণ করেন, ‘আমরা আমার স্ত্রীর দেহ একটি চাদরে মুড়ে তিন ঘণ্টা ধরে একটি শ্রেণিকক্ষে অপেক্ষা করেছিলাম। উঠানে তাকে কবর দেওয়ার জন্য বাইরে যেতে পারিনি। বোমাবর্ষণ ও গুলিবর্ষণ অবিরাম ছিল, কিন্তু আমি যেভাবেই হোক আমার স্ত্রীকে কবর দিতে চেয়েছিলাম।’

যারা স্কুলে ছিলেন তাদের মধ্যে একজন সার্জন ছিলেন। তিনি তারেকের সন্তানদেরসহ আহতদের সাধ্যমতো চিকিৎসা করেছিলেন। তারেক বলেন, ‘আমার ভাগনের প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। একজন যুবক তাকে স্কুল থেকে বের করে জাবালিয়ার আল-আওদা হাসপাতালে হেঁটে যেতে সাহায্য করেছিল, কিন্তু সে গুরুতর অবস্থায় সেখানে পৌঁছে মারা যায়।’

তারেক এবং শিশুরা রাতে স্কুলে অন্যদের সঙ্গে ছিলেন। মূলত প্রিয়জনদের কবর দেওয়ার জন্য লোকজন ঝুঁকি নিয়ে সেখানে ছিলেন। সকালে তাঁরা স্কুলের দেয়ালের একটি ফাঁক দিয়ে লুকিয়ে বেরিয়ে যান।

বাচ্চাদের নামিয়ে দেওয়ার পর, তারেক সারা দিন জাবালিয়ার হাসপাতালগুলোতে মোহাম্মদের খোঁজ করেন। এরপর বিভিন্ন জায়গায় যেখানে বাস্তুচ্যুত লোকেরা জড়ো হয়েছিল সেখানে খোঁজ করেন। কেউই খোঁজ দিতে পারেনি। কিন্তু তারেককে তাঁর অন্যান্য সন্তানদের দিকেও মনোযোগ দিতে হয়েছিল। একে তো সন্তানেরা চোখের সামনে মায়ের মৃত্যু দেখে ভয়ানক মানসিক আঘাত পেয়েছে, তার ওপর খাবার, ওষুধ ও যত্নের প্রয়োজন ছিল তাদের।

২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে, উত্তর গাজা দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে, তাই তারেক শিশুদের তীব্র ক্ষুধা থেকে বাঁচাতে দক্ষিণে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। রাফাহে পৌঁছানোর পর তারেক আবার মোহাম্মদের খোঁজ শুরু করেন। আত্মীয়, স্বজন, পরিচিতজন, প্রতিবেশী, স্কুল, আশ্রয়শিবির তন্ন তন্ন করে খোঁজেন তিনি।

২৭ জানুয়ারি, যখন বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোকে উত্তর গাজায় ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়, তখন আবু জাবাল এবং নাবহান পরিবার হেঁটে জাবালিয়ায় ফিরে আসে।

তারেক সকাল ৮টার মধ্যে জাবালিয়ায় তাঁদের বাড়ির ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে ছিলাম। তাঁরা ভোর ৪টায় রওনা হয়েছিলেন। আর রাসেম ও ফাওয়াহর পরিবার একটু পরে রওনা হয়। পথে তাঁদের একটি সাক্ষাৎকারের জন্য থামানো হয়। সাংবাদিক তাঁকে শিশুটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। রাসেম বিস্তারিত বলেন। ওই সাংবাদিকই বিষয়টি সম্প্রচার করেন। পরিবারটি অবশেষে জাবালিয়ায় রাসেমের বাবা-মায়ের বাড়িতে পৌঁছায়।

পরের দিন সকালে, তারেক টিভি সাক্ষাৎকারের ভিডিওটি দেখেন। তিনি বলেন, ‘ওর আচার আচরণ একটুও বদলায়নি, যদিও একটু বড় হয়েছে। আমি ধ্বংসস্তূপের ওপর চিৎকার করতে শুরু করলাম: আমার ছেলে বেঁচে আছে! আমার ছেলে মোহাম্মদ বেঁচে আছে!’

পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীরা ছুটে এসে জিজ্ঞেস করে কী হয়েছে। তখন সবাই মিলে টিভি সাক্ষাৎকারটি দেখেন। পরে খোঁজখবর নিয়ে, তারেক জানতে পারেন রাসেমের পরিবার কোথায় আছে। দ্রুত সেখানে ছুটে যান।

তারেক বলেন, ‘আমি রাসেমকে পরিচয় দিলাম। তিনি সঙ্গে সঙ্গেই আমাকে চিনতে পারলেন। মোহাম্মদ আমাকে চিনতে পারেনি। সে কেঁদে দিয়েছিল।’

তখন নাবহান পরিবার বেশ দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিল। হামুদ, যার নাম তারা এখন জানতে পারছে মোহাম্মদ, তার পরিবারকে খুঁজে পাওয়ায় তারা খুশি। কিন্তু পরিবারের সদস্য হয়ে ওঠা শিশুটি চলে যাবে এই ভেবে তারা কষ্ট পাচ্ছিল।

রাসেম বলেন, সৌভাগ্যবশত, মোহাম্মদের পরিবার ফিরে পেল। ফাওয়াহর চোখে তখনো ছলছল করছিল। ফাওয়াহ বলেন, ‘হামুদের চলে যাওয়ার দুঃখে আমি সারা রাত কেঁদেছি।’

হামুদ ফাওয়াহকে ‘মা’ বলে ডাকে। হামুদকে কাছে টেনে নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার মেয়েরা পুরো সপ্তাহ ধরে কেঁদেছে। বাড়িটা যেন শোকের বাড়িতে পরিণত হয়েছিল। হামুদ আমাদের পরিবারের অংশ হয়ে গিয়েছিল।’

ফাওয়াহ বলেন, ‘আমি আমার স্বামী ও তারেককে বলেছি, হামুদকে যেন মাঝে মাঝে আমাদের কাছে আনা হয়। সে আমাদের ছেলের মতো।’ ফাওয়াহ হেসে বলেন, ‘সৌভাগ্যবশত, তারা কাছেই থাকে, এবং আমার বাচ্চারা সব সময় তাকে আনতে যায়।’

তারেক বলেন, ‘আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। তারা তাকে তাদের নিজের সন্তানের মতো লালন-পালন করেছে... সে এমন একটি পরিবারের সঙ্গে ছিল যারা তাকে সেই মায়ের ভালোবাসা ও যত্ন দিয়েছে যাকে সে হারিয়েছে।’ তারেক আফসোস করেন বলেন, ‘দেখেন, মোহাম্মদ যখন রাসেম, তাঁর স্ত্রী ও তাঁদের পরিবারের লোকজনকে দেখে, সে আমাকে একদম ভুলে যায়!’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রথমবারের মতো বিচ্ছিন্ন কান পায়ে প্রতিস্থাপন, ফের যথাস্থানে স্থাপন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চীনা শল্যচিকিৎসকেরা এক অভাবনীয় কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। এক নারীর বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া কান প্রথমে তাঁর পায়ে প্রতিস্থাপন করে, পরবর্তীকালে তা পুনরায় যথাস্থানে ফিরিয়ে এনেছেন। তাঁরা বিশ্বের প্রথম এই ধরনের অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেছেন। হংকং থেকে প্রকাশিত ইংরেজি দৈনিক সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

মেডিকেল নিউজ প্ল্যাটফর্ম মেড-জে সোমবার জানিয়েছে, গত এপ্রিলে কর্মক্ষেত্রে এক দুর্ঘটনায় ওই নারীর কান শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় তাঁর মাথার খুলির চামড়ার বড় একটি অংশও উপড়ে গিয়েছিল। জিনানের শানদং প্রাদেশিক হাসপাতালের মাইক্রোসার্জারি ইউনিটের উপপরিচালক কিউ শেনকিয়াং জানান, ভারী যন্ত্রপাতির মাধ্যমে ওই নারী আঘাত পেয়েছিলেন, যা ছিল প্রাণঘাতী। তাঁর মাথার চামড়া, ঘাড় এবং মুখের ত্বক ছিঁড়ে একাধিক খণ্ডে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল এবং কানটি মাথার চামড়াসহ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল।

হাসপাতালে পৌঁছানোর পর মাইক্রোসার্জারিতে বিশেষজ্ঞ একদল চিকিৎসক তাৎক্ষণিকভাবে প্রচলিত পদ্ধতিতে মাথার চামড়া মেরামতের চেষ্টা করেন। কিন্তু দুর্ঘটনার ফলে মাথার টিস্যু এবং রক্তনালির জালিকা এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল যে সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।

এর ফলে মাথার টিস্যু সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত কানটি পুনরায় স্থাপন করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় কানটিকে বাঁচিয়ে রাখার বিকল্প পথ খুঁজতে বাধ্য হন চিকিৎসকেরা। অবশেষে কিউয়ে দল সিদ্ধান্ত নেয়, কানটিকে ওই নারীর পায়ের উপরিভাগে প্রতিস্থাপন করার। এরপর শুরু হয় মাসব্যাপী পুনরুদ্ধার ও পুনর্গঠন প্রক্রিয়া।

চিকিৎসকদের এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ—পায়ের ধমনি ও শিরাগুলোর গঠন কান প্রতিস্থাপনের জন্য উপযুক্ত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ ছাড়া পায়ের ত্বক ও নরম টিস্যু মাথার ত্বকের মতোই পাতলা, যা স্থানান্তরের পর সামান্য কাটাছেঁড়াতেই মানিয়ে যায়।

অত্যন্ত জটিল এই প্রক্রিয়ার কোনো পূর্ববর্তী নজির বা নথিবদ্ধ সফল ঘটনা ছিল না। প্রতিবেদন অনুযায়ী, কানটি পায়ে প্রতিস্থাপনের প্রাথমিক ধাপটি সম্পন্ন করতে সময় লেগেছিল দশ ঘণ্টা। কিউ জানান, কানের রক্তনালীগুলো অত্যন্ত সূক্ষ্ম—ব্যাস মাত্র ০.২ থেকে ০.৩ মিলিমিটার। এগুলোকে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত করা ছিল এক বিশাল চ্যালেঞ্জ, যার জন্য প্রয়োজন ছিল উচ্চতর দক্ষতা ও মাইক্রোসার্জারির দীর্ঘ অভিজ্ঞতা।

অস্ত্রোপচারের পাঁচ দিন পর দলটি আরও একটি সংকটময় পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। শিরার রক্ত সঞ্চালনে সমস্যার কারণে কানের রক্ত সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয় এবং কানটি কালচে-বেগুনি রং ধারণ করে। কানটিকে বাঁচাতে চিকিৎসকেরা রক্তক্ষরণ করানোর এক শ্রমসাধ্য কৌশল অবলম্বন করেন, যা পাঁচ দিনে প্রায় ৫০০ বার প্রয়োগ করতে হয়েছিল।

এরই মধ্যে চিকিৎসকেরা রোগীর পেট থেকে চামড়া নিয়ে মাথায় প্রতিস্থাপন করে মাথার খুলির ক্ষত সারিয়ে তোলেন। পাঁচ মাসেরও বেশি সময় পর যখন প্রতিস্থাপিত মাথার চামড়া ও ঘাড়ের ত্বক সুস্থ হয়ে ওঠে, ফোলা কমে যায় এবং পা ও কানের ক্ষত সম্পূর্ণ শুকিয়ে যায়, তখন চিকিৎসকেরা কানটিকে পুনরায় যথাস্থানে স্থাপনের উদ্যোগ নেন। গত অক্টোবরে কিউয়ে নেতৃত্বে সফলভাবে ৬ ঘণ্টার এই অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়, যা বিশ্বজুড়ে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

সান ছদ্মনামের ওই রোগী এখন হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন। তাঁর মুখমণ্ডল ও টিস্যুর কার্যক্ষমতা এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। তবে তাঁর এখনো কিছু ছোটখাটো অস্ত্রোপচার বাকি রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ভ্রু পুনর্গঠন এবং পায়ের ক্ষতচিহ্ন কমানো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ওডিশায় পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম তরুণকে ‘বাংলাদেশি’ বলে পিটিয়ে হত্যা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
জুয়েল রানা। ছবি: সংগৃহীত
জুয়েল রানা। ছবি: সংগৃহীত

পশ্চিমবঙ্গের সুতি থানার বিশ বছরের তরুণ জুয়েল রানা। মা-বাবার একমাত্র সন্তান। মাত্র ৫ দিন আগে রাজমিস্ত্রির কাজ নিয়ে ওডিশার সম্বলপুরে পা রেখেছিলেন। নিজ রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে বাইরে কাজ করতে যাওয়া সেই প্রথম। কিন্তু এই যাওয়াই তাঁর শেষ যাওয়া। গত মঙ্গলবার রাতে একদল উন্মত্ত জনতার হাতে প্রাণ হারাতে হয়েছে তাঁকে। অভিযোগ—জুয়েল রানা ‘বাংলাদেশি।’

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, জুয়েল রানার সঙ্গে থাকা পশ্চিমবঙ্গের আরও দুই পরিযায়ী শ্রমিক গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। এই ঘটনায় ওডিশা পুলিশ এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

সুতি থানায় দেওয়া এক লিখিত অভিযোগে জুয়েল রানার মা নাজমা বিবি জানিয়েছেন, ২০ ডিসেম্বর তাঁর ছেলে সম্বলপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। তিনি বলেন, ‘২৪ ডিসেম্বর রাত সাড়ে আটটা নাগাদ একটা ফোন পাই। জানতে পারি ওডিশায় যেখানে ওরা থাকত, তার কাছেই সাত-আটজন স্থানীয় লোক আমার ছেলে আর ওর সহকর্মীদের ওপর চড়াও হয়েছে। ওরা আমার ছেলেকে ‘বাংলা বলা বাংলাদেশি’ বলে গালি দিচ্ছিল আর মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছিল।’

নাজমা বিবি আরও বলেন, ‘এ কথা বলতে বলতেই ওরা লাঠি, লোহার রড আর ধারালো অস্ত্র নিয়ে আমার ছেলে আর ওর বন্ধুদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। আমার ছেলে ওখানেই মারা যায়, বাকিরা এখন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।’ জুয়েলের বাবা জিয়াউল হক নিজেও একজন রাজমিস্ত্রি, তিনি বর্তমানে কেরালায় কর্মরত।

ওডিশা পুলিশের দাবি, দানিপালি এলাকায় একটি নির্মীয়মাণ ভবনে এই ঝামেলার সূত্রপাত। স্থানীয় কিছু যুবক ওই শ্রমিকদের কাছে বিড়ি চেয়েছিল। এরপর তর্কের মাঝেই যুবকেরা শ্রমিকদের আধার কার্ড দেখতে চায় এবং মুহূর্তেই সেই বিবাদ সহিংস রূপ নেয়। সম্বলপুরের এসপি মুকেশ ভামু বলেন, ‘একজন মারা গেছেন এবং দুজন আহত। পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এর সঙ্গে আর কেউ জড়িত থাকলে তাদেরও ছাড়া হবে না।’

নওশাদ আলি নামে মুর্শিদাবাদের এক যুবক এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি জানান, শ্রমিকেরা আগুনের পাশে বসে শরীর গরম করছিল। তখন কিছু স্থানীয় যুবক এসে বিড়ি চায়। বিড়ি নেওয়ার পরপরই তারা লোকগুলোকে বাংলাদেশি বলে গালি দিতে শুরু করে এবং মারধর শুরু করে।

বৃহস্পতিবার সুতি ব্লকের প্রশাসনিক কর্মকর্তা, পুলিশ এবং তৃণমূল বিধায়ক ইমানি বিশ্বাস নিহত জুয়েলের বাড়িতে গিয়ে তাঁর মায়ের সঙ্গে দেখা করেন। বিধায়ক অভিযোগ করেছেন, হামলাকারীরা শ্রমিকদের ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিতে বাধ্য করেছিল। তিনি বলেন, ‘আমরা দ্রুত মরদেহ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি।’

এই ঘটনায় সম্বলপুরে থাকা বাঙালি শ্রমিকদের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। মাজহার খান নামে অন্য এক রাজমিস্ত্রি আক্ষেপ করে বললেন, ‘আমাদের প্রায়ই বাংলাদেশি মনে করে হেনস্তা করা হয়। মানুষ সন্দেহ করে, গালি দেয়, আক্রমণ করে। আমরা সরকারের কাছে নিরাপত্তা চাইছি।’

পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম বলেন, ‘আবারও বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাঙালি শ্রমিকদের ওপর হামলা হলো। বিজেপি গুন্ডারা তাদের ওপর আক্রমণ করে অনুপ্রবেশকারী তকমা দিচ্ছে। আর কত প্রাণ চায় ওরা? বাঙালিদের প্রতি বিজেপির মনোভাব ঠিক কেমন, এটা তারই প্রমাণ।’

রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে বাঙালি শ্রমিকেরা ক্রমাগত নিগৃহীত হচ্ছে, খুন হচ্ছে। বিজেপির নেতারা কেন চুপ? কেন বারবার এমন জঘন্য অপরাধ ঘটছে?’ তবে ওডিশার আইজিপি হিমাংশু লাল দাবি করেছেন, ঝামেলার মূলে ছিল টাকার লেনদেন নিয়ে কোনো বিবাদ, যা হুট করেই চরমে পৌঁছায়। তিনি আরও জানান, এই ঘটনার পেছনে সাম্প্রদায়িক বা ভাষাগত কোনো কারণ নেই এবং সায়েন্টিফিক তদন্ত চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘বাংলাদেশি’ তকমায় এক বছরে ২২০০ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে ভারত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

চলতি বছরে ভারতের বিজেপি সরকার তথাকথিত ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ ইস্যুতে বেশ সরব ছিল। নানা রাজনৈতিক বক্তব্যে এবং আলোচনায় তথাকথিত ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ ইস্যুটিকে তুলে আনা হয়েছে। এমনকি নির্বাচনী প্রচারণার মোদ্দা হিসেবেও ব্যবহার করা হয়েছে এই তকমা। তবে ভারত সরকার সেখানেই থেকে থাকেনি। কোনো ধরনের প্রমাণাদি ছাড়াই তারা ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে অন্তত ২ হাজার ২০০ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, তথাকথিত ‘অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযানে ২০২৫ সালে রেকর্ড সংখ্যক ২ হাজার ২০০ জন বাংলাদেশি নাগরিককে নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়েছে দিল্লি পুলিশ।’ সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ সংখ্যা। বৈধ অনুমতি ছাড়া দেশে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকদের শনাক্ত ও প্রত্যাবাসনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কঠোর নির্দেশের পরই এই তৎপরতা বৃদ্ধি পায়।

বিগত বছরগুলোর পরিসংখ্যানের তুলনায় এবারের অভিযানের ব্যাপকতা নজিরবিহীন। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ২০২৪ সালে ১৪ জনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছিল, ২০২৩ সালে ৫ জন এবং ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ৫০ জন। ২০২৫ সালে এই নাটকীয় বৃদ্ধি এটাই প্রমাণ করে যে, জাতীয় রাজধানীর সীমান্ত ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিতের নামে দিল্লি পুলিশ লক্ষ্যবস্তু করে তথাকথিত অভিযান চালানো হচ্ছে।

দিল্লি পুলিশের মতে, যাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে তারা জাল নথিপত্র ব্যবহার করে দিল্লির বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করছিল। তদন্তে প্রকাশ পেয়েছে, এই ব্যক্তিরা স্থানীয় জনসমষ্টির সঙ্গে মিশে যেতে এবং সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেতে ভুয়া আধার কার্ড, জাল ভোটার আইডি কার্ড এবং অন্যান্য জাল সরকারি পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেছিল।

তবে কোনো তথ্যপ্রমাণ হাজির করেনি দিল্লি পুলিশ। এমনকি দিল্লি পুলিশ বা ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো কখনোই যাদের ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে তাদের পরিচয়ের ব্যাপারে কোনো তথ্য–প্রমাণ দেয়নি। বরং, এমনও একাধিক ঘটনা আছে, যেখানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম বাঙালিদের বাংলাদেশের ভেতরে ঠেলে পাঠানো হয়েছিল। এমনকি আসামেও একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে প্রমাণ আছে। পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের সোনালী খাতুন এবং আসামের সকিনা বিবি ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে জোর করে ভারতীয় বাংলাভাষী মুসলিমদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর জাজ্বল্যমান প্রমাণ।

খোদ ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্যই বলছে, অন্তঃসত্ত্বা ভারতীয় নাগরিক সোনালী খাতুন এবং তাঁর পরিবারের পাঁচ সদস্যকে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ তকমা দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয় চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে। প্রায় চার মাস ধরে চরম দুর্ভোগ পোহানোর পর অবশেষে বিচারিক আদেশে তাঁদের ভারতে প্রত্যাবর্তনের পথ প্রশস্ত হয়। চলতি মাসের শুরুর দিকে তিনি ভারতেও ফিরে যান। আদালতের আদেশ থেকে স্পষ্ট যে, দিল্লিতে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করা পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের এই দরিদ্র বাসিন্দাদের ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে আধার কার্ড থাকা সত্ত্বেও দিল্লি পুলিশ তাঁদের সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছিল।

একইভাবে সকিনা বিবিকেও বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়। বাংলাভাষী ভারতীয় মুসলিম এই নারী ২০১৬ সাল থেকে সকিনা কোকরাঝাঁড় ডিটেনশন সেন্টারে আটক ছিলেন। ২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের আদেশে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর তাঁকে নিয়মিতভাবে নলবাড়ি থানায় হাজিরা দিতে হতো। তিনি সর্বশেষ এই বছরের ২৫ মে থানায় হাজিরা দেন—এরপর থেকে তাঁর পরিবার তাঁকে খুঁজে পায়নি।

আসামের নলবাড়ি জেলার বারকুরা গ্রামের বাসিন্দা সকিনা বেগমকে গত মে মাসে তাঁর বাড়ি থেকে হেফাজতে নেয় আসাম পুলিশ। এরপর তিনি দীর্ঘদিন নিখোঁজ ছিলেন এবং তাঁর পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি। জুনের প্রথম সপ্তাহে সকিনাকে ঢাকার মিরপুর ভাষানটেক এলাকায় রাস্তার পাশে একজন পথচারী খুঁজে পান। এরপর তিনি কাশিমপুর কারাগারে কিছুদিন বন্দী ছিলেন। পরে আদালতের হস্তক্ষেপে তাঁর মুক্তির পথ প্রশস্ত হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অরুণাচলকে চীনের ‘মূল স্বার্থ’ বলছে পেন্টাগন, ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান বেইজিংয়ের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৫৭
অরুণাচলকে চীনের মূল স্বার্থ বলে উল্লেখ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: এএফপি
অরুণাচলকে চীনের মূল স্বার্থ বলে উল্লেখ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: এএফপি

মার্কিন কংগ্রেসে পেশ করা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ পেন্টাগনের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে অরুণাচল প্রদেশের ওপর চীনের দাবিকে তাদের ‘কোর ইন্টারেস্ট’ বা মূল স্বার্থ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই স্বার্থগুলোর বিষয়ে চীন কোনো ধরনের আলোচনা বা আপস করতে রাজি নয়। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, চীনের নেতৃত্ব তাদের ‘মূল স্বার্থে’র পরিধি আরও বাড়িয়ে এখন তাইওয়ান, দক্ষিণ চীন সাগরের সার্বভৌমত্ব ও সামুদ্রিক বিরোধ, সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জ এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য অরুণাচল প্রদেশকেও অন্তর্ভুক্ত করেছে।

মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, ২০৪৯ সালের মধ্যে ‘চীনা জাতির মহান পুনর্জাগরণের’ জন্য চীন ও এই বিতর্কিত অঞ্চলগুলোর একীকরণ একটি ‘স্বাভাবিক আবশ্যকতা।’ এই ‘পুনর্জাগরণ’ সম্পন্ন হলে চীন বিশ্বমঞ্চে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে এবং এমন এক ‘বিশ্বমানের’ সামরিক বাহিনী গড়ে তুলবে, যা যেকোনো যুদ্ধে ‘লড়তে ও জিততে’ সক্ষম হবে। একই সঙ্গে এই বাহিনী বেইজিংয়ের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের স্বার্থ অত্যন্ত ‘দৃঢ়ভাবে রক্ষা’ করবে।

নথিতে চীনের পুনর্জাগরণের জন্য তিনটি মূল স্বার্থের কথা বলা হয়েছে, যেখানে কোনো সমঝোতার সুযোগ নেই। এর মধ্যে রয়েছে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা, অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রসার এবং চীনের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক দাবির প্রতিরক্ষা ও সম্প্রসারণ।

মূল্যায়নে আরও দেখা গেছে, সিপিসি তাদের শাসনের প্রতি যেকোনো অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক হুমকি বা সমালোচনার বিষয়ে অত্যন্ত সংবেদনশীল। বিশেষ করে চীনা স্বার্থ রক্ষায় তারা ব্যর্থ হচ্ছে, এমন কোনো সমালোচনা তারা সহ্য করে না।

ভারত-চীন সম্পর্কের বিষয়ে প্রতিবেদনে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার (এলএসি) পরিস্থিতির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের অক্টোবরে ব্রিকস সম্মেলনের ফাঁকে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের দুই দিন আগে ভারত সরকার চীনের সঙ্গে এলএসির অমীমাংসিত স্থানগুলো থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার চুক্তির কথা ঘোষণা করে।

এই বৈঠকের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের মাসিক আলোচনার পথ উন্মুক্ত হয়। যেখানে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা এবং পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে সরাসরি বিমান চলাচল, ভিসা সুবিধা সহজীকরণ এবং শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিকদের বিনিময়ের মতো বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়।

যদিও চীন এলএসিতে উত্তেজনা কমিয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্থিতিশীল করতে চায়, যার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ভারত-মার্কিন সম্পর্ক যেন আরও গভীর হতে না পারে। তবে প্রতিবেদনটিতে এ-ও বলা হয়েছে, ভারত সম্ভবত চীনের কাজ ও উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দিহান থাকবে। পারস্পরিক অবিশ্বাস ও অন্যান্য অস্বস্তিকর বিষয়গুলো দুই দেশের সম্পর্কের উন্নতিকে সীমিত করে রাখবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে পেন্টাগনের এই প্রতিবেদনকে প্রত্যাখ্যান করেছে চীন। তাদের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্র বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা বয়ান ছড়িয়ে বিভেদ সৃষ্টি করতে চাইছে। তারা দাবি করেছে, ভারতের সঙ্গে সীমান্ত উত্তেজনা হ্রাসের বিষয়টি ব্যবহার করে বেইজিং ভারত-মার্কিন সম্পর্ক নষ্ট করতে চাইছে—পেন্টাগনের এমন দাবি ভিত্তিহীন।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘পেন্টাগনের এই প্রতিবেদন চীনের প্রতিরক্ষা নীতিকে বিকৃত করেছে এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে চীনের বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করছে। মূলত নিজেদের সামরিক আধিপত্য বজায় রাখতেই যুক্তরাষ্ট্র এমন অজুহাত খুঁজছে।’ চীন এই প্রতিবেদনের তীব্র বিরোধিতা করছে বলে তিনি জানান।

পৃথকভাবে চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাং শিয়াওগাংও এই প্রতিবেদনের নিন্দা জানিয়েছেন। প্রতিবেদনে পাকিস্তান ও চীনের প্রতিরক্ষা ও মহাকাশ গবেষণার সহযোগিতা এবং সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের পরিকল্পনার যে উল্লেখ রয়েছে, ঝাং সেটিকে চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বছরের পর বছর ধরে এসব মনগড়া প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। তারা চীনের প্রতিরক্ষা নীতিকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করছে এবং আমাদের সামরিক বাহিনীর স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডকে কলঙ্কিত করছে।’

ঝাং আরও বলেন, প্রতিবেদনটি ভূরাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিভ্রান্ত করতে ‘চীনা সামরিক হুমকি’র বিষয়টি বাড়িয়ে বলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রকে এই ধরনের মিথ্যা বয়ান এবং উসকানি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে লিন জিয়ান জানান, বেইজিং দিল্লির সঙ্গে সম্পর্ককে কৌশলগত ও দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে। তিনি বলেন, ‘আমরা ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ শক্তিশালী করতে, পারস্পরিক আস্থা বাড়াতে এবং মতপার্থক্য সঠিকভাবে পরিচালনা করে একটি স্থিতিশীল সম্পর্ক এগিয়ে নিতে প্রস্তুত।’

এলএসি প্রসঙ্গে লিন স্পষ্ট করে বলেন, ‘সীমান্ত সমস্যা চীন ও ভারতের নিজস্ব বিষয়। বর্তমানে সীমান্ত পরিস্থিতি মোটের ওপর স্থিতিশীল এবং দুই দেশের যোগাযোগের পথও খোলা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো দেশের ভিত্তিহীন মন্তব্য চীন মেনে নেবে না।’

২০২৫ সালের জন্য প্রকাশিত এই বার্ষিক প্রতিবেদনে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ আরও বলেছে, চীন সম্ভবত পাকিস্তানের মতো দেশগুলোতে অতিরিক্ত সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের পরিকল্পনা করছে। পাকিস্তানের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, সেখানে বেইজিং সামরিক সুবিধা বাড়ানোর বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত