Ajker Patrika

গরমে প্রাণ যায় যায়, পানিও নাই ইরানে

গরমে প্রাণ যায় যায়, পানিও নাই ইরানে

গত এক মাস ১০ দিন ধরে গ্রীষ্মের তীব্র উত্তাপে পুড়ে যাচ্ছে দক্ষিণ ইরান। এমন গরমের দিনে সেপিদাহ নামে এক চিকিৎসক আর তাঁর ডেন্টিস্ট স্বামী দিনে একবারই ঘর থেকে বের হন। তাও আবার সূর্য ওঠার আগে খুব ভোরে। এ ছাড়া ফ্রিজে রাখা খাবারের মজুত যখন শেষ হয়ে যায়—তখনই কেবল মুদি দোকানের জন্য বাড়ি থেকে বের হন তাঁরা। 

নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহেই ওই চিকিৎসক দম্পতির ব্যক্তিগত গাড়ির ডিজিটাল মিটারে দিনের তাপমাত্রা দেখাচ্ছি ৫৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস! পরে মিটারে দেখানো তাপমাত্রার একটি ছবি তোলে ইনস্টাগ্রামে পোস্ট দেন সেপিদাহ। ক্যাপশনে লিখেন, ‘মাত্র ৫৭ ডিগ্রি!’ 

সচ্ছল হওয়ায় সেপিদাহের বাড়িতে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য এয়ারকন্ডিশন ব্যবস্থা আছে। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ—যাঁদের বাড়িতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেই তাঁরা তীব্র গরমের এই দিনগুলো কীভাবে পার করছেন, তা সহজেই অনুমেয়। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিস্তৃত দারিদ্র্য এবং ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার সংমিশ্রণ দক্ষিণ ইরানের বেশির ভাগ অংশকে একেবারে পিষে ফেলছে। বিস্তীর্ণ মরুভূমির উত্তাপ ছাড়াও কাছাকাছি পারস্য উপসাগর থেকে উঠে আসা জলীয় বাষ্প বাতাসের আর্দ্রতা বাড়িয়ে পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপপ্রবাহ এবং খরা এখন এই অঞ্চলের নিত্যসঙ্গী। 

দক্ষিণ অংশের তুলনায় ইরানের অন্য এলাকাগুলোতে তাপমাত্রা কিছুটা কম হলেও দুর্ভোগে আছে পুরো দেশেই। এর জন্য দায়ী করা হচ্ছে দেশটির সরকারের পানি অব্যবস্থাপনাকে। দীর্ঘকাল ধরে পানি সম্পদের অব্যবস্থাপনায় সারা দেশের ট্যাপগুলো দিয়ে প্রায়ই নোনতা পানি বের হচ্ছে। কখনো আবার দীর্ঘ সময় ধরে এগুলো পানিশূন্য হয়ে থাকছে। দেশটির স্থবির অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতিও দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছেছে। এ অবস্থায় দেশটিতে চাকরিহীন আর দরিদ্র মানুষের সংখ্যা দিনকে দিন বাড়ছে। দরিদ্র মানুষেরা তাপমাত্রা মোকাবিলায় যথাযথ ব্যবস্থাও নিতে পারছেন না। 

জাতিসংঘের পানি বিশেষজ্ঞ কাভেহ মাদানি একসময় ইরানের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উপ-প্রধান ছিলেন। ইরানের বর্তমান পরিস্থিতিকে তিনি ‘পানি দেউলিয়াত্ব’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর মতে, কৃষি ও উন্নয়ন খাতে পানির ব্যবহারে বিভ্রান্তিকর নীতির ফলে সরবরাহের বাইরে চলে গেছে পানি। বর্তমানে এই পরিস্থিতিকে কাটানোরও কোনো উপায় নেই। 

ইসফাহান শহরে রোদ থেকে বাঁচতে একটি ব্রিজের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন কিছু মানুষ। ছবি: সংগৃহীতদেশটির ভূগর্ভস্থ পানি এবং জলাধারগুলোও শুকিয়ে গেছে। প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকায় বসবাস করা ইরানিদের পানি কেনার সামর্থ্য প্রায় নেই বললেই চলে। পানির এমন ঘাটতির জন্য ২০২১ সালে ঐতিহাসিক শহর ইসফাহান এবং খুজেস্তান প্রদেশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল। এ ছাড়া তাপমাত্রা মোকাবিলায় ব্যর্থতার জন্যও অসন্তোষ বেড়েছিল সেখানকার মানুষের মধ্যে। 

ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলীয় শহর বন্দর-ই-দায়েরে বসবাস করেন ৩২ বছর বয়সী শিল্পী জাহরা। সাম্প্রতিক সময়ে ট্যাপ দিয়ে নোনা পানি বেরিয়ে আসা কিংবা দীর্ঘ সময় পানি না আসা এই শহরের নিত্যদিনের ঘটনা। শহরের পরিস্থিতি নিয়ে জাহরা বলেন, ‘সরকার এসব বিষয়ে কিছুই করে না, কোনো পরামর্শও দেয় না।’ 

সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, দক্ষিণ-পূর্ব সিস্তান এবং বেলুচিস্তান প্রদেশে স্থানীয় পৌরসভাগুলোর মজুত পানি সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সম্পূর্ণভাবে শেষ হয়ে যাবে। সেখানে এত গরম পড়েছে যে, কিছুদিন আগে পিচ গলে রাস্তা থেকে নেমে গিয়েছিল। 

উপসাগর উপকূলীয় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর বন্দর কাঙ্গানে গ্রীষ্মের দিনগুলোতে বিকেল থেকে ভোর ৫টা বা ৬টা পর্যন্ত পানি সরবরাহ বন্ধ রাখা হচ্ছে। সেখানে বাস করা আজম নামে ৩৯ বছর বয়সী এক শিক্ষক বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে ট্যাপগুলো প্রতিদিন সকালে মাত্র কয়েক ঘণ্টা ধরে চলে। তাই আমরা আমাদের ট্যাংকগুলোতে পানি ধরে রাখি এবং কীভাবে পানি খুব কম ব্যবহার করতে হয় তা শিখছি। আসলে, নষ্ট করার মতো পানি আমাদের নেই।’ 

প্রচণ্ড উত্তাপের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার বিষয়টি দক্ষিণ ইরানের মানুষেরা অনেক আগে থেকেই মোকাবিলা করছিলেন। উত্তাপ এড়াতে তাঁরা শুধু ভোর কিংবা গভীর রাতে বাড়ি থেকে বের হন। আর বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করার জন্য তাঁরা নদী, খাল এবং গাছের ছায়াযুক্ত এলাকাগুলোকে বেছে নেন। তাঁরা ভালো করেই জানেন যে, কয়েক ঘণ্টার তীব্র গরম সহ্য করা মানে—মাথাব্যথা, দুর্বলতা, মাথা ঘোরার মতো পরিস্থিতিতে পড়া। আর সানস্ক্রিন ব্যবহার না করলে শরীরের চামড়া পুড়ে যেতে বাধ্য। বাতাসের আর্দ্রতা এমন যে, মনে হয়—নিশ্বাসের সঙ্গে বাষ্প প্রবেশ করছে ফুসফুসে। দিনের বেলা ট্যাপ থেকে বের হওয়া পানিকে মনে হয় চুলায় গরম করা হয়েছে। ঘরের বাইরে কেউ স্যান্ডেল রেখে দিলে প্রচণ্ড রোদে কিছুক্ষণের মধ্যে তা বিকৃত হয়ে যাচ্ছে। 

গত রোববার ইরানের দক্ষিণ উপকূলে পারস্য উপসাগরীয় বিমানবন্দরে তাপমাত্রার সূচক ১৫২ ডিগ্রি ফারেনহাইটে পৌঁছায়, যা কি-না ৬৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি। এ ধরনের তাপমাত্রা মানুষের সহ্য ক্ষমতারও বাইরে। উপকূলীয় প্রদেশ বুশেহর, যেখানে বন্দর কাঙ্গান অবস্থিত। চলতি মাসেই সেখানে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার পূর্বাভাস দিলে স্কুল এবং অফিস-আদালতগুলো একদিনের জন্য বন্ধ রাখা হয়। 

তবে শ্রমিকেরা পড়েছেন বিপদে। কাজের জন্য নিয়মিত বাইরে যেতে হয় বলে, রোদ সহ্য করা ছাড়া তাঁদের আর কোনো উপায় নেই। 

বুশেহর প্রদেশের আসালুয়েহ শহরের এক শ্রমিক পরিস্থিতির বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘আমরা দিনে শতবার মারা যাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাশিয়াকে পশ্চিম সম্মান করলে আর যুদ্ধ হবে না: পুতিন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি
ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের পর আর কোনো যুদ্ধ হবে না—যদি পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়াকে সম্মান করে এবং দেশটির নিরাপত্তাগত স্বার্থকে গুরুত্ব দেয়। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠান ‘ডিরেক্ট লাইন’-এ তিনি এই মন্তব্য করেন।

বিবিসির সাংবাদিক স্টিভ রোজেনবার্গের প্রশ্নের জবাবে পুতিন বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলোকে আক্রমণ করার যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ ‘অর্থহীন’।

পুতিন দাবি করেন, রাশিয়ার প্রতি সম্মান দেখানো হলে এবং পূর্বদিকে ন্যাটোর সম্প্রসারণ নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো ‘প্রতারণা’ বন্ধ করলে নতুন কোনো বিশেষ সামরিক অভিযান হবে না। তিনি তাঁর পুরোনো অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করে বলেন, ১৯৯০ সালে সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভকে ন্যাটো সম্প্রসারণ না করার যে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, পশ্চিম তা মানেনি।

মস্কোর একটি হলে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে পুতিনের পেছনে রাশিয়ার বিশাল মানচিত্র ঝুলছিল। এই মানচিত্রে ইউক্রেনের দখলকৃত অঞ্চল, এমনকি ক্রিমিয়াও অন্তর্ভুক্ত ছিল। রুশ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের দাবি, ওই অনুষ্ঠানটিতে পুতিনকে উদ্দেশ্য করে ৩০ লাখের বেশি প্রশ্ন জমা পড়েছিল।

ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে পুতিন বলেন, তিনি ‘শান্তিপূর্ণভাবে’ যুদ্ধ শেষ করতে প্রস্তুত। তবে কোনো ধরনের আপসের ইঙ্গিত দেননি। তিনি আবারও দাবি করেন, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার চেষ্টা বাদ দিতে হবে এবং রাশিয়ার দখল করা চারটি অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সেনা সরিয়ে নিতে হবে। আংশিকভাবে দখল করে নেওয়া ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চায় রাশিয়া।

দেশের অর্থনীতির প্রশ্নে মূল্যস্ফীতি, প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া এবং ভ্যাট বৃদ্ধির বিষয় স্বীকার করেন পুতিন। অনুষ্ঠানের মধ্যেই রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার কমিয়ে ১৬ শতাংশে নামানোর ঘোষণা দেয়। বিদেশনীতি, অর্থনীতি ও যুদ্ধের পাশাপাশি অনুষ্ঠানজুড়ে উঠে আসে মাতৃভূমি, প্রবীণ সেনাদের সম্মান এবং সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন সমস্যা।

পুতিন পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, তারা ইউক্রেনের মাধ্যমে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের সঙ্গে ‘সমান মর্যাদা ও পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে’ কাজ করতে তিনি আগ্রহ প্রকাশ করেন। রাশিয়া ভবিষ্যতে ন্যাটোর ওপর হামলা চালাতে পারে—পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর এমন আশঙ্কার কথা আবারও তা নাকচ করে দেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার শুনানি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ০৬
২০১৭ সালে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ছবি: এপির সৌজন্যে
২০১৭ সালে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ছবি: এপির সৌজন্যে

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যার অভিযোগে করা মামলার মূল শুনানি আগামী জানুয়ারিতে শুরু হচ্ছে। জাতিসংঘের সর্বোচ্চ বিচারিক সংস্থা আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) জানিয়েছে, এ মামলার শুনানি চলবে আগামী ১২ থেকে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত।

এই শুনানি আন্তর্জাতিক আইনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, এক দশকের বেশি সময় পর এটি হবে আইসিজেতে কোনো গণহত্যা মামলার মূল বিষয়ের ওপর শুনানি। একই সঙ্গে গাজা যুদ্ধ নিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা মামলাতেও এর প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুনানির প্রথম সপ্তাহে (১২ থেকে ১৫ জানুয়ারি) মামলার বাদী দেশ গাম্বিয়া আদালতে তাদের অভিযোগ উপস্থাপন করবে। পশ্চিম আফ্রিকার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ গাম্বিয়া ২০১৯ সালে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সমর্থনে এ মামলা দায়ের করে। মামলায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগ আনা হয়।

এরপর ১৬ থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত মিয়ানমার তাদের অবস্থান তুলে ধরার সুযোগ পাবে। মিয়ানমার সরকার বরাবরই গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

আইসিজে জানিয়েছে, এ মামলায় তিন দিন সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে এসব শুনানি জনসাধারণ ও গণমাধ্যমের জন্য বন্ধ থাকবে।

জাতিসংঘের একটি তদন্ত মিশন ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযানে ‘গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড’ সংঘটিত হয়েছিল বলে প্রতিবেদন দেয়। ওই অভিযানে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।

মিয়ানমার অবশ্য জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট ও ত্রুটিপূর্ণ’ বলে দাবি করেছে। দেশটির বক্তব্য, সে সময়কার অভিযান ছিল রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে, যারা নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছিল।

মামলাটি ১৯৪৮ সালের জাতিসংঘের গণহত্যা সনদ অনুযায়ী দায়ের করা হয়েছে। নাৎসি জার্মানির হাতে ইহুদিদের গণহত্যার পর এ সনদ প্রণয়ন করা হয়। এতে গণহত্যা বলতে কোনো জাতিগত, ধর্মীয় বা নৃগোষ্ঠীকে পুরোপুরি বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, গুরুতর শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি, কিংবা পুরোপুরি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে সৃষ্ট পরিস্থিতিকে বোঝানো হয়েছে।

গাম্বিয়া ও মিয়ানমার—দুই দেশই এ সনদের স্বাক্ষরকারী হওয়ায় আইসিজের এ মামলার বিচারিক এখতিয়ার রয়েছে।

১৯৪৮ সালের গণহত্যা সনদের পর আইসিজে এখন পর্যন্ত মাত্র একবার গণহত্যার ঘটনা নিশ্চিত করেছে। এটি ছিল ১৯৯৫ সালে বসনিয়ার স্রেব্রেনিৎসায় প্রায় ৮ হাজার মুসলিম পুরুষ ও কিশোর হত্যাকাণ্ড।

গাম্বিয়া ও মামলায় হস্তক্ষেপকারী অন্য দেশগুলো হলো কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য। এই পাঁচ দেশ আদালতে যুক্তি দিয়েছে, গণহত্যা শুধু ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তাদের মতে, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি, শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধ এবং যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতাও গণহত্যার উদ্দেশ্য হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া উচিত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বাজপেয়ির ‘সেই বক্তব্য’ সামনে আনলেন শশী থারুর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কংগ্রেস সাংসদ ও ভারতের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির (পররাষ্ট্রবিষয়ক) প্রধান শশী থারুর। ছবি: পিটিআই
কংগ্রেস সাংসদ ও ভারতের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির (পররাষ্ট্রবিষয়ক) প্রধান শশী থারুর। ছবি: পিটিআই

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম যোদ্ধা শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। গতকাল বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, সংবাদমাধ্যমের ভবনে অগ্নিসংযোগ এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কংগ্রেস সাংসদ ও ভারতের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির (পররাষ্ট্রবিষয়ক) প্রধান শশী থারুর।

শশী থারুর সতর্ক করে বলেছেন, বাংলাদেশে চলমান এই সহিংসতা সাধারণ বাংলাদেশিদের সহায়তা করার ক্ষেত্রে ভারতের সক্ষমতাকে সংকুচিত করে দিচ্ছে। তিনি ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ির সেই বিখ্যাত উক্তি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ভূগোল পরিবর্তন করা যায় না। আমরা যেখানে আছি সেখানেই থাকব, তারাও সেখানেই থাকবে। তাদের উচিত আমাদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে শেখা।’

বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের ওপর হামলা এবং ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে থারুর বলেছেন, ‘সহিংসতার কারণে আমাদের দুটি ভিসা সেন্টার বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এটি অত্যন্ত হতাশাজনক। কারণ, যেসব বাংলাদেশি ভারতে আসতে চান, তাঁরাই এখন অভিযোগ করছেন যে আগে যেভাবে সহজে ভিসা পাওয়া যেত, এখন তা পাওয়া যাচ্ছে না।’

থারুর উল্লেখ করেন, বর্তমান পরিস্থিতি ভারত সরকারের পক্ষে সাধারণ বাংলাদেশিদের সাহায্য করা কঠিন করে তুলছে।

বাংলাদেশ সরকারকে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে থারুর বলেন, ‘আমি আশা করি পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হবে। আমি বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারকে বলব যেন তারা প্রতিবেশীর সঙ্গে এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের গুরুত্ব বোঝে। বাজপেয়ি সাহেব পাকিস্তানের ক্ষেত্রে যেমনটি বলেছিলেন—আমরা আমাদের ভূগোল পরিবর্তন করতে পারি না। আমরা যেখানে আছি সেখানেই থাকব, তারাও সেখানেই থাকবে। তাদের উচিত আমাদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে শেখা।’

শশী থারুর জানান, নয়াদিল্লি পুরো পরিস্থিতি খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় কর্মকর্তারা সরাসরি বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করবে এবং পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য যা যা করা প্রয়োজন তা করতে অনুরোধ জানাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতে তেল দিয়ে ফেরার পথে বিধ্বস্ত রুশ জাহাজ—প্রতিশোধের হুমকি পুতিনের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৫৩
ছবি: সিএনএন
ছবি: সিএনএন

ভূমধ্যসাগরের নিরপেক্ষ জলসীমায় ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলায় একটি রুশ তেলবাহী ট্যাংকার ধ্বংসের ঘটনায় উত্তেজনা আরও বেড়েছে। হামলার পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। ইউক্রেন একে ‘অভূতপূর্ব বিশেষ অভিযান’ হিসেবে দাবি করলেও, রাশিয়া এটিকে আন্তর্জাতিক নৌ নিরাপত্তার জন্য নতুন হুমকি বলে আখ্যা দিয়েছে।

শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা গেছে—ইউক্রেনীয় ড্রোনের আঘাতে রাশিয়ার ‘শ্যাডো ফ্লিট’ বা গোপন নৌবহরের অন্তর্ভুক্ত তেলবাহী ট্যাংকার ‘কেনডিল’-এ ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছে।

ইউক্রেনের নিরাপত্তা সংস্থা এসবিইউ জানিয়েছে, হামলাটি ইউক্রেন থেকে প্রায় ১ হাজার ২০০ মাইল দূরে সংঘটিত হয়। কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এটি প্রথমবারের মতো কৃষ্ণসাগরের বাইরে এবং নিরপেক্ষ জলসীমায় ইউক্রেনের কোনো ড্রোন হামলা।

ইউক্রেন দাবি করেছে, হামলার সময় ট্যাংকারটি খালি ছিল এবং এতে কোনো তেল বা জ্বালানি বহন করা হচ্ছিল না। ফলে পরিবেশগত কোনো ঝুঁকি তৈরি হয়নি। তবে বিস্ফোরণে জাহাজটি ‘গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে বলে তারা দাবি করেছেন।

ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, ট্যাংকারটি চলতি মাসের শুরুর দিকে ভারতের গুজরাট রাজ্যের সিক্কা বন্দরে তেল খালাস করে ফিরে যাচ্ছিল।

এই ঘটনার পর মস্কো কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বছরের শেষ প্রান্তিকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ভূমধ্যসাগরে রুশ ট্যাংকারে হামলার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এই ধরনের হামলা কিছু বাস্তব লক্ষ্যকে সামনে রেখে করা হয়—যেমন বিমা প্রিমিয়াম বাড়ানো। কিন্তু এতে সরবরাহ ব্যাহত হবে না এবং প্রত্যাশিত ফলও পাওয়া যাবে না। বরং এটি অতিরিক্ত হুমকি তৈরি করবে। আমাদের দেশ এর জবাব দেবে।’

পুতিন আরও বলেন—বেসামরিক অবকাঠামোর ওপর আঘাতের বিষয়েও রাশিয়া চুপ করে থাকবে না। তাঁর ভাষায়, ‘আমাদের পক্ষ থেকে সব সময়ই একটি পাল্টা আঘাত ঘটবে।’

বিশ্লেষকদের মতে, নিরপেক্ষ জলসীমায় ইউক্রেনের এই হামলা যুদ্ধের পরিধিকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। একই সঙ্গে পুতিনের পাল্টা জবাবের ঘোষণা ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতকে আরও বিস্তৃত ও অনিশ্চিত করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত