Ajker Patrika

পশ্চিমবঙ্গে মাওবাদীদের হুমকির মুখে তৃণমূল কংগ্রেস

কলকাতা প্রতিনিধি
পশ্চিমবঙ্গে মাওবাদীদের হুমকির মুখে তৃণমূল কংগ্রেস

মাওবাদীদের হুমকির মুখে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূলের নেতাদের ক্রমাগত হুমকি দিয়েই চলেছেন মাওবাদীরা। বেআইনি ঘোষিত সশস্ত্র কট্টর বামপন্থী দলটি রীতিমতো পোস্টার লাগিয়ে তৃণমূল নেতাদের হুমকি দেওয়ায় আতঙ্ক আরও বেড়েছে। 

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জঙ্গলমহল বলে পরিচিত বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম ও পুরুলিয়ায় মাওবাদী পোস্টার ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। 

মাওবাদীরা তাদের পোস্টারে পুলিশের গুলিতে নিহত তাদের অন্যতম নেতা মাল্লোজুলা কোটেশ্বর রাও ওরফে কিষাণজিকে শ্রদ্ধা জানিয়েছে। পোস্টারে লেখা হয়েছে, ‘কিষাণজি অমর রাহে।’ শাসকদল তৃণমূলকে হুমকি দিয়ে লিখেছে, ‘এত দিন তৃণমূল খেলেছে জনগণের সঙ্গে। এবার মাওবাদী খেলবে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে।’ ঝাড়গ্রাম জেলার মাণিকপাড়া স্টেশন ও অন্যান্য জায়গায় পোস্টারের কথা জানাজানি হতেই পুলিশ পোস্টার গুলি খুলে ফেলে। কিন্তু মানুষের মন থেকে আতঙ্ক কমেনি। 

ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ায় নতুন করে মাওবাদী জঙ্গিদের তৎপরতাকে ঘিরে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় শাসকদলীয় নেতা–কর্মীরা বাড়তি নিরাপত্তার জন্য রাজ্য পুলিশের কাছে আবেদন করছেন। মাওবাদীদের তৎপরতা রুখতে জঙ্গলমহল নামে পরিচিত ওই এলাকায় পুলিশ ও নিরাপত্তারক্ষীদের নজরদারি ও টহল বৃদ্ধি পেয়েছে। এক সময়ে গোটা জঙ্গলমহলই ছিল মাওবাদী অধ্যুষিত। 

সম্প্রতি নতুন করে তাদের প্রভাব বাড়ছে বলে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা রাজ্য সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছেন বলেও জানা গিয়েছে। এরই মধ্যে জঙ্গলমহলে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি বা সিপিআইয়ের (মাওবাদী) পোস্টার লাগানো শুরু করেছে। দলটিতে নতুন করে সদস্য নিয়োগ প্রক্রিয়াও আবারও চালু হয়েছে বলে গুজব শোনা যায়। 

বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সদস্য ও স্থানীয় তৃণমূল নেতা চিত্ত মাহাতো তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষী বাড়াতে জন্য জেলা পুলিশের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। এদিকে, পুলিশ জানিয়েছে, কেবল চিত্ত একা নন, তিন জেলারই ছোট-মাঝারি-বড় সব স্তরের নেতারাই চাইছেন তাঁদের নিরাপত্তা বাড়ানো হোক। এবং এর কারণ হিসেবে সবাই উল্লেখ করেছেন তাদের এলাকায় মাওবাদীদের তৎপরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

গত ৭ এপ্রিল মাওবাদীদের ডাকা জঙ্গলমহল বন্ধে অভূতপূর্ব সাড়া মেলায় স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও অবাক। তাই সেখানে নতুন করে শুরু হয়েছে পুলিশি তৎপরতা। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও ইউরোপের সঙ্গে ‘পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে’ আছে ইরান: পেজেশকিয়ান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। ছবি: এপির সৌজন্যে
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। ছবি: এপির সৌজন্যে

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তাঁর দেশ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে একটি ‘পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে’ লিপ্ত রয়েছে। শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির দাপ্তরিক ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।

পেজেশকিয়ান সতর্ক করে বলেন, এই যুদ্ধ আশির দশকের ইরান-ইরাক যুদ্ধের চেয়েও অনেক বেশি জটিল এবং কঠিন। তিনি অভিযোগ করেন, পশ্চিমারা ইরানকে আর্থিকভাবে পঙ্গু করতে এবং অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে বহুমুখী কৌশল অবলম্বন করছে।

ইরানি প্রেসিডেন্ট বর্তমান সংঘাতকে কেবল সামরিক নয়; বরং একটি সর্বাত্মক অবরোধ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। পেজেশকিয়ান বলেছেন, ‘ইরাক যুদ্ধের সময় পরিস্থিতি পরিষ্কার ছিল—তারা যদি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ত, আমরাও পাল্টা জবাব দিতাম। কিন্তু বর্তমান যুদ্ধ অনেক বেশি সূক্ষ্ম। তারা আমাদের প্রতিটি দিক থেকে অবরুদ্ধ করে ফেলছে; আমাদের অর্থনীতি, সংস্কৃতি, রাজনীতি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সমস্যা সৃষ্টি করছে।’

তিনি জানান, একদিকে ইরানকে বিশ্ববাণিজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা চলছে, অন্যদিকে জনগণের প্রত্যাশা বাড়িয়ে দেশে অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে।

প্রেসিডেন্ট তাঁর সাক্ষাৎকারে ২০২৫ সালের জুন মাসের ১২ দিনের যুদ্ধের প্রসঙ্গও টানেন।

উল্লেখ্য, গত জুন মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনী ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় (ফোরদো, নাতানজ ও ইসফাহান) হামলা চালিয়েছিল। সে সময় ইসরায়েলি হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা এবং বিজ্ঞানীরা নিহত হন।

পেজেশকিয়ান দাবি করেন, জুনের সংঘাতের পর ইরান এখন সামরিক সরঞ্জাম ও জনবল—উভয় দিক থেকেই আগের চেয়ে বেশি শক্তিশালী। তিনি হুঁশিয়ারি দেন, ‘যদি তারা আবার হামলা চালানোর দুঃসাহস দেখায়, তবে এবার জবাব হবে আরও কঠোর।’

পেজেশকিয়ানের এই কড়া বার্তা এমন একসময়ে এল যখন মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনার পারদ চড়ছে। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপের নীতি ফিরিয়ে এনেছেন।

এদিকে, চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ওয়াশিংটন সফরে যাচ্ছেন। লেবাননের সংবাদমাধ্যম আল-মায়েদিনের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সেখানে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর আলোচনায় গুরুত্ব পাবে ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোতে পরবর্তী সম্ভাব্য হামলার পরিকল্পনা।

সাক্ষাৎকার শেষে পেজেশকিয়ান দেশের মানুষের প্রতি জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান জানান। তিনি বিশ্বাস করেন, জনগণের অংশগ্রহণ এবং অভ্যন্তরীণ সংহতি থাকলে বিশ্বের কোনো শক্তিই ইরানকে পরাজিত করতে পারবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যে কৌশলে রুশ ধনকুবেরদের কণ্ঠরোধ করেছেন পুতিন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত

ইউক্রেন যুদ্ধের ডামাডোলের মধ্যে রাশিয়ায় বিলিয়নিয়ার বা ধনকুবেরদের সংখ্যা সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। তবে ভ্লাদিমির পুতিনের গত ২৫ বছরের শাসনামলে রাশিয়ার এই প্রভাবশালী বিত্তবান গোষ্ঠী, যারা অলিগার্ক নামে পরিচিত, তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতা বা প্রভাব প্রায় পুরোটাই হারিয়েছে তারা।

বিষয়টি রুশ প্রেসিডেন্টের জন্য বেশ স্বস্তির। কারণ, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এই অতি ধনী গোষ্ঠীটিকে পুতিনের প্রতিপক্ষ বানাতে ব্যর্থ হয়েছে। বরং পুতিনের ‘পুরস্কার ও শাস্তির’ নীতি তাদের একপ্রকার নীরব সমর্থকে পরিণত করেছে।

শাস্তির এই কড়াকড়ি ঠিক কীভাবে কাজ করে, তা সাবেক ব্যাংকিং বিলিয়নিয়ার ওলেগ তিনকভ খুব ভালো করেই জানেন।

ইনস্টাগ্রামে এক পোস্টে ইউক্রেন যুদ্ধকে ‘পাগলামি’ বলে সমালোচনা করার ঠিক পরদিনই ক্রেমলিন থেকে তাঁর ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

তিনকভকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, যদি ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তাঁর সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করা না হয়, তাহলে তৎকালীন রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহৎ ব্যাংক তিনকভ ব্যাংককে জাতীয়করণ করা হবে।

নিউইয়র্ক টাইমসকে তিনকভ বলেন, ‘আমি দাম নিয়ে আলোচনার সুযোগ পাইনি। অনেকটা জিম্মি হয়ে থাকার মতো অবস্থা, যা অফার করা হবে, তা-ই নিতে হবে। দর-কষাকষির কোনো উপায় ছিল না।’

এর এক সপ্তাহের মধ্যে ভ্লাদিমির পোতানিনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি প্রতিষ্ঠান ব্যাংকটি কিনে নেয়।

উল্লেখ্য, পোতানিন বর্তমানে রাশিয়ার পঞ্চম শীর্ষ ধনী ব্যক্তি। রুশ যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিনের জন্য নিকেল সরবরাহ করেন তিনি।

তিনকভের দাবি অনুযায়ী, ব্যাংকটিকে তার প্রকৃত মূল্যের মাত্র ৩ শতাংশ দামে বিক্রি করতে বাধ্য করা হয়েছিল। শেষপর্যন্ত তিনকভ তাঁর প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ হারান এবং রাশিয়া ছাড়তে বাধ্য হন।

পুতিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে পরিস্থিতি এমনটা ছিল না। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রাশিয়ার উদীয়মান পুঁজিবাদের সুযোগ নিয়ে এবং বড় বড় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের মালিকানা কুক্ষিগত করে একদল মানুষ অবিশ্বাস্য সম্পদের মালিক হয়ে ওঠেন।

রাজনৈতিক অস্থিরতার সেই সময়ে এই সম্পদ তাঁদের হাতে বিপুল ক্ষমতা ও প্রভাব এনে দেয়, যার ফলে তাঁরা অলিগার্ক হিসেবে পরিচিতি পান।

রাশিয়ার সেই সময়ের সবচেয়ে প্রভাবশালী অলিগার্ক বোরিস বেরেজোভস্কি দাবি করেছিলেন, ২০০০ সালে পুতিনকে ক্ষমতায় বসানোর নেপথ্যে মূল কারিগর ছিলেন তিনি।

তবে এর কয়েক বছর পরেই তিনি এর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। ২০১২ সালে তিনি লিখেছিলেন, ‘আমি তাঁর (পুতিন) মধ্যে সেই লোভী স্বৈরশাসক ও জবরদখলকারীকে দেখতে পাইনি, যিনি কিনা স্বাধীনতাকে পদদলিত করবেন এবং রাশিয়ার উন্নয়ন থামিয়ে দেবেন।’

বেরেজোভস্কি হয়তো নিজের ভূমিকার কথা একটু বাড়িয়েই বলেছিলেন। তবে রাশিয়ার অলিগার্করা যে একসময় ক্ষমতার শীর্ষপর্যায়ে প্রভাব খাটানোর ক্ষমতা রাখতেন, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

এই ক্ষমাপ্রার্থনার ঠিক এক বছর পরেই যুক্তরাজ্যে নির্বাসনে থাকা অবস্থায় রহস্যজনকভাবে বেরেজোভস্কির মরদেহ পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে রাশিয়ার অলিগার্ক বা ধনকুবেরদের রাজনৈতিক দাপটেরও চূড়ান্ত অবসান ঘটে।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন

হাদির খুনিদের দুই সাহায্যকারীকে আটকের দাবি নাকচ করল মেঘালয় পুলিশ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯: ০০
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। ছবি: এএনআই
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। ছবি: এএনআই

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে, শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যাকাণ্ডে মূল দুই আসামি ফয়সাল করিম ওরফে মাসুদ ওরফে রাহুল ও মোটরসাইকেলচালক আলমগীর শেখ দুজনেই ভারতে পালিয়ে গেছেন। ব্যক্তিগত সম্পর্কের সূত্র ধরে মেঘালয় পুলিশ পুর্তি ও সামী নামের ভারতের দুই নাগরিককে আটক করেছে।

তবে মেঘালয় পুলিশের বরাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পুলিশের এই দাবি সঠিক নয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের কিছু সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ‘ভিত্তিহীন ও বানোয়াট’ খবরের প্রতিবাদ জানিয়েছে ভারতের মেঘালয় পুলিশ ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। ওসমান হাদি হত্যা মামলার দুই প্রধান আসামি অবৈধভাবে সীমান্ত পার হয়ে ভারতে প্রবেশ করেছেন—এমন দাবি ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’। ভারতের জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তার বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যাচাই-বাছাই ছাড়া এ ধরনের সংবেদনশীল তথ্য প্রচার সীমান্তের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে বিঘ্নিত করার পাশাপাশি প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যকার নিরাপত্তামূলক আস্থায় ফাটল ধরাতে পারে।

বাংলাদেশ পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ওসমান হাদি হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদ ও আলমগীর শেখ ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে মেঘালয়ে প্রবেশ করেছেন এবং বর্তমানে তাঁরা ভারতের ভেতরে অবস্থান করছেন। ‘পুর্তি’ নামের এক স্থানীয় সহায়তাকারী ও ‘সামী’ নামের এক ট্যাক্সিচালক তাঁদের মেঘালয়ের তুরা শহরে পৌঁছে দিয়েছেন।

হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ রোববার এই দাবির বিষয়ে মেঘালয় পুলিশ সদর দপ্তরের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক কোনো তথ্যই আমাদের জানানো হয়নি। আমাদের গোয়েন্দা তৎপরতা ও মাঠপর্যায়ের ভেরিফিকেশনে ওই অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গারো হিলস বা মেঘালয়ের কোথাও কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।’ তিনি আরও বলেন, প্রতিবেদনে উল্লিখিত ‘পুর্তি’ বা ‘সামী’ নামের কোনো ব্যক্তিরও হদিস পাওয়া যায়নি এবং কাউকে গ্রেপ্তার করার খবরটিও বানোয়াট।

মেঘালয় পুলিশের পাশাপাশি বিএসএফও এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছে হিন্দুস্তান টাইমস। বিএসএফের মেঘালয় ফ্রন্টিয়ারের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজি) ও পি উপাধ্যায়ের বিবৃতির বরাতে জানানো হয়েছে, হালুয়াঘাট সেক্টর দিয়ে কোনো অপরাধী বা সন্দেহভাজন ব্যক্তির ভারতে প্রবেশের কোনো প্রমাণ বা ইন্টেলিজেন্স ইনপুট তাঁদের কাছে নেই। বিএসএফ অত্যন্ত কঠোর প্রটোকল মেনে সীমান্ত পাহারা দেয় এবং এমন কোনো অনুপ্রবেশ তাদের নজরে আসেনি। তিনি এ ধরনের দাবিকে ‘বিভ্রান্তিকর’ বলে অভিহিত করেছেন।

ভারতীয় কর্মকর্তাদের বরাতে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তারা মনে করেন, মেঘালয় একটি সংবেদনশীল সীমান্ত রাজ্য হওয়ার কারণে এখানে নিয়মিত আন্তসীমান্ত অপরাধ ও ছোটখাটো সংঘর্ষের মোকাবিলা করতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে সংবাদমাধ্যমে যাচাই না করা তথ্য ছড়ালে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে বিভ্রান্তি ও উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে।

অনুপ্রবেশের খবরটি নাকচ করা হলেও বাড়তি সতর্কতা হিসেবে মেঘালয় পুলিশ ও বিএসএফ সীমান্তে নজরদারি আরও জোরদার করেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তার বরাতে বলা হয়েছে, সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়ানো একটি স্বাভাবিক প্রশাসনিক পদক্ষেপ এবং এটি কোনোভাবেই বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ওই ভুল খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সহিংসতা ও প্রত্যাখ্যানের মধ্যে মিয়ানমারে চলছে ‘প্রহসনের’ নির্বাচন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত মিয়ানমারে শুরু হয়েছে এক বিতর্কিত নির্বাচন, যা দেশ-বিদেশে ‘প্রহসন’ হিসেবে প্রত্যাখ্যাত। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অনুপস্থিতি, শীর্ষ নেতাদের কারাবাস এবং চলমান সংঘাতের কারণে প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠীর ভোটাধিকারবঞ্চিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে এই নির্বাচন হচ্ছে।

সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের প্রায় পাঁচ বছর পর তিন ধাপে নির্বাচনের আয়োজন করেছে সামরিক জান্তা সরকার। ওই অভ্যুত্থান দেশজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদের জন্ম দিয়েছিল, যা পরে গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়।

পর্যবেক্ষকদের মতে, চীনের সমর্থনে জান্তা সরকার তাদের ক্ষমতাকে বৈধতা দিতে চাইছে, তা সুসংহত করতে চাইছে, যাতে তারা চলমান অস্থিতিশীলতা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে পায়।

বিবিসি জানিয়েছে, মিয়ানমারে আজ রোববার শুরু হওয়া ভোট গ্রহণের মধ্যে দেশটির একাধিক অঞ্চলে বিস্ফোরণ ও বিমান হামলার খবর পাওয়া গেছে।

মান্দালয় অঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রী বিবিসিকে নিশ্চিত করেন, আজ ভোরে ওই অঞ্চলের একটি জনশূন্য বাড়িতে রকেট হামলার পর তিনজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

এর আগে গতকাল রাতে থাইল্যান্ড সীমান্তের কাছে মায়াওয়াদ্দি শহরে ধারাবাহিক বিস্ফোরণে ১০টির বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্থানীয় এক বাসিন্দা বিবিসিকে জানান, ওই হামলায় এক শিশু নিহত হয়েছে এবং তিনজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও হতাহতের খবর পাওয়া গেছে।

তবে কিছু ভোটার বিবিসির কাছে দাবি করেছেন, এবারের নির্বাচন আগের চেয়ে অনেক বেশি ‘সুশৃঙ্খল’।

মান্দালয় অঞ্চলের বাসিন্দা মা সু জারচি বলেন, ‘ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা এবার অনেক বদলে গেছে। ভোট দেওয়ার আগে আমি ভয়ে ছিলাম। এখন ভোট দিয়ে স্বস্তি পাচ্ছি। দেশের জন্য নিজের সেরাটা দিতে চেষ্টা করেছি—এমন একজন নাগরিক হিসেবে আমি আমার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছি।’

২২ বছর বয়সে প্রথমবার ভোট দিয়ে পেয়ি ফিয়ো মাউং বিবিসিকে জানান, তিনি ভোট দিয়েছেন। কারণ, তিনি বিশ্বাস করেন ভোট দেওয়া ‘প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব’।

মাউং বলেন, ‘আমার প্রত্যাশা নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য। নিত্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বী। আমি এমন কাউকে সমর্থন করতে চাই, যিনি লড়াই করা এসব মানুষের জন্য নিত্যপণ্যের দাম কমিয়ে আনতে পারবেন। আমি এমন একজন প্রেসিডেন্ট চাই, যিনি সব মানুষের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করবেন।’

এদিকে মিয়ানমারের জান্তা সরকার এই নির্বাচন ঘিরে সব সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করে দাবি করেছে, তাদের লক্ষ্য দেশকে ‘বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরিয়ে আনা’।

রাজধানী নেপিডোর এক কঠোর নিরাপত্তাবেষ্টিত ভোটকেন্দ্রে আজ ভোট দিয়ে জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং বিবিসিকে বলেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে।

জান্তাপ্রধান জোর দিয়ে বলেন, ‘আমি সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান। একজন সরকারি চাকরিজীবী। আমি চাইলেই বলতে পারি না, আমি প্রেসিডেন্ট হতে চাই।’

এর আগে চলতি সপ্তাহের শুরুতে তিনি বলেছিলেন, যারা ভোট প্রত্যাখ্যান করছে, তারা আসলে ‘গণতন্ত্রের পথে অগ্রগতিকে’ প্রত্যাখ্যান করছে।

মিয়ানমারে নতুন এক আইনের অধীনে নির্বাচনে বাধা দেওয়া বা বিরোধিতা করার অভিযোগে দুই শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এই আইনে মৃত্যুদণ্ডসহ কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত