অনলাইন ডেস্ক
বিহারের প্রকৌশলী রাজেশ কুমার দুই বছর আগে এক ব্যাংকের পরামর্শে তাঁর পুরো সঞ্চয় মিউচুয়াল ফান্ড, শেয়ার ও বন্ডে বিনিয়োগ করেন। ভারতের শেয়ারবাজার যখন চাঙা ছিল, তখন তিনিও লাখ লাখ ভারতীয়ের মতো বাজারে বিনিয়োগ করেন। ছয় বছর আগেও ভারতে প্রতি ১৪টি পরিবারের মধ্যে মাত্র একটি পরিবার শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করত। বাজার চাঙা হলে সেই সংখ্যা বেড়ে এখন পাঁচটিতে উন্নীত হয়েছে।
কিন্তু সেই পোয়াবারো পরিস্থিতি এখন আর নেই। ছয় মাস ধরে ভারতের শেয়ারবাজারে পতনের ধারা চলছে, বিনিয়োগকারীরা হাজার হাজার কোটি রুপি বাজারে খুইয়েছেন। এর পেছনে বিদেশি বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে চীনের সরিয়ে নেওয়া, অতিমূল্যায়িত শেয়ার ও দুর্বল মুনাফাকে কারণ হিসেবে দায়ী করেন বিশ্লেষকেরা। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ভারতের শেয়ারবাজার থেকে প্রায় ৯০০ বিলিয়ন ডলার মূলধন কমেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতির ঘোষণার আগেই শুরু হওয়া পতনের ধারা পরে আরও ত্বরান্বিত হয়েছে।
ভারতের শীর্ষ ৫০টি কোম্পানির সূচক ‘নিফটি-৫০’ টানা পাঁচ মাস ধরে কমেছে, যা গত ২৯ বছরে দীর্ঘস্থায়ী পতন। শেয়ার ব্রোকারদের মতে, লেনদেনের পরিমাণ এক-তৃতীয়াংশ কমে গেছে। এ বিষয়ে রাজেশ কুমার বলেন, ‘ছয় মাসের বেশি সময় ধরে আমার বিনিয়োগ ক্ষতির মুখে আছে। গত এক দশকে এত বাজে অভিজ্ঞতা হয়নি।’
রাজেশ তাঁর সঞ্চয়ের বেশির ভাগই শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছিলেন, ফলে ব্যাংকে এখন খুব সামান্য টাকা আছে। আগামী জুলাইয়ে তাঁর ছেলের মেডিকেল কলেজে ১৮ লাখ রুপি ফি দিতে হবে। বিষয়টি নিয়ে তিনি চিন্তিত, কারণ টাকা বের করে আনার জন্য লোকসানে শেয়ার বিক্রি করতে হবে। তাঁর আশা, ‘বাজারের উন্নতি হলে কিছু টাকা আবার ব্যাংকে রাখার কথা ভাবছি।’
রাজেশের উদ্বেগের মধ্যে ফুটে উঠেছে ভারতীয় মধ্যবিত্তদের বাস্তবতা। ভারতীয় মধ্যবিত্তের বড় অংশই অর্থনৈতিক বিপ্লবের অংশ হিসেবে শেয়ারবাজারে ঢুকেছিলেন। বিনিয়োগের অন্যতম জনপ্রিয় উপায় ‘সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান’ (এসআইপি) গত পাঁচ বছর তিন গুণ বেড়ে ১০ কোটিরও বেশি বিনিয়োগকারীতে পৌঁছেছে। প্রথমবারের বিনিয়োগকারীদের অনেকেই ইনস্টাগ্রাম ও ইউটিউবের ‘ফিনফ্লুয়েন্সারদের’ (আর্থিক প্রভাবক) দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন; কিন্তু ঝুঁকি সম্পর্কে সেভাবে সচেতন নন।
তারুণ সরকার নামের এক সাবেক বিপণন ব্যবস্থাপক তাঁর প্রভিডেন্ট ফান্ডের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর তিনি অবসরকালের জন্য নিরাপদ বিনিয়োগ খুঁজছিলেন। শেয়ারবাজারে অতীতের ক্ষতির অভিজ্ঞতা থাকায়, এবার একজন পরামর্শকের সহায়তায় তিনি মিউচুয়াল ফান্ড বেছে নেন।
তরুণ সরকার বলেন, ‘আমি আমার ৮০ শতাংশ সঞ্চয় মিউচুয়াল ফান্ডে রেখেছি, আর মাত্র ২০ শতাংশ ব্যাংকে। এখন আমার পরামর্শক আমাকে সতর্ক করে বলেছেন, হৃৎপিণ্ড ভালো রাখতে চাইলে আগামী ছয় মাস বিনিয়োগের দিকে তাকাবেন না।’
তারুণ সরকার সন্দিহান, তাঁর প্রভিডেন্ট ফান্ডের পুরো টাকা শেয়ারবাজারে দেওয়া ঠিক হয়েছে কি না। তিনি মজা করে বলেন, ‘আমি একসঙ্গে অজ্ঞ ও আত্মবিশ্বাসী। অজ্ঞ এ কারণে যে, আমি বুঝতেই পারছি না বাজার কীভাবে চলছে, আবার আত্মবিশ্বাসী এ কারণে, ইনস্টাগ্রামের বিশেষজ্ঞরা বিনিয়োগকে মিলিয়নেয়ার হওয়ার শর্টকাট হিসাবে দেখাচ্ছেন। কিন্তু একই সঙ্গে এটাও জানি, হয়তো প্রতারণা আর বিভ্রমের জালে আটকে গেছি।’
টিভির প্রচারণা ও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের কথাবার্তায় তরুণ সরকার শেয়ারবাজারের প্রতি আকৃষ্ট হন। তিনি বলেন, ‘টিভি উপস্থাপকেরা বাজার নিয়ে আশাবাদী কথা বলেন, আর আমার হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের লোকেরা তাদের লাভের গল্প শোনায়।’
তরুণ সরকার জানান, তাঁর অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে কিশোর-কিশোরীরা পর্যন্ত বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা করে। তিনি বলেন, ‘ব্যাডমিন্টন খেলার সময় এক কিশোর আমাকে এক টেলিকম কোম্পানির শেয়ারের হট টিপ দিয়েছিল। যখন চারপাশে এসব শুনি, তখন মনে হয় আমিও চেষ্টা করে দেখি না কেন? তাই করলাম, আর তারপরই বাজার ধসে পড়ল।’
তবে তিনি এখনো আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘আমি হাত গুটিয়ে রেখেছি আপাতত। আমি নিশ্চিত, বাজার ঘুরে দাঁড়াবে, আর আমার ফান্ড আবার লাভের মুখ দেখবে।’
অনেকেই আরও বড় ঝুঁকি নিয়ে বড় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। রমেশ (ছদ্মনাম) নামের ভারতের একটি ছোট শহরের একজন হিসাবরক্ষক মহামারির সময় ঋণ নিয়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছিলেন। ইউটিউবের প্রভাবকদের কথায় প্রভাবিত হয়ে তিনি ঝুঁকিপূর্ণ ‘পেনি স্টক ও ডেরিভেটিভসে’ বিনিয়োগ করেন। এ মাসে, ১ হাজার ৮০০ ডলার (যা তাঁর এক বছরের বেতনের বেশি) লোকসানের পর, তিনি ব্রোকারেজ অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি ধার করা টাকা বিনিয়োগ করেছিলাম, আর এখন পাওনাদারেরা আমার পেছনে লেগেছেন।’
রমেশ সেই ১ কোটি ১০ লাখ ভারতীয়ের একজন, যাঁরা ফিউচার ও অপশন ট্রেডে সম্মিলিতভাবে ২০ বিলিয়ন ডলার হারানোর পর নিয়ন্ত্রক সংস্থার হস্তক্ষেপের শিকার হয়েছেন। আর্থিক পরামর্শক সমীর দোশি বলেন, ‘এই পতন কোভিড মহামারির সময়কার বিপর্যয়ের মতো নয়। তখন আমাদের পুনরুদ্ধারের একটি স্পষ্ট পথ ছিল, কারণ ভ্যাকসিন আসছিল। কিন্তু এখন ট্রাম্প ফ্যাক্টরের কারণে প্রবল অনিশ্চয়তা—আমরা জানিই না, সামনে কী অপেক্ষা করছে।’
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, কম খরচের ব্রোকারেজ ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তির উদ্যোগ বিনিয়োগকে আরও সহজলভ্য করেছে। স্মার্টফোন ও অ্যাপের মাধ্যমে বাজারে ঢোকা এখন অনেক সহজ হয়েছে। তবে নতুন বিনিয়োগকারীদের বাস্তবতা বুঝতে হবে।
আর্থিক শিক্ষাবিদ মোনিকা হালান বলেন, ‘শেয়ারবাজার কোনো জুয়ার আসর নয়। আপনাকে প্রত্যাশা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। শুধু সেই অর্থই শেয়ারে বিনিয়োগ করুন, যা অন্তত আগামী সাত বছরে আপনার প্রয়োজন হবে না। ঝুঁকি নিলে বোঝার চেষ্টা করুন—কতটা হারাতে পারেন? সে ক্ষতি সহ্য করার সামর্থ্য আছে তো?’
শেয়ারবাজারের এই পতন ভারতের মধ্যবিত্তের জন্য এমন এক কঠিন সময়ে এল, যখন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মন্থর, মজুরি স্থবির, বেসরকারি বিনিয়োগ শ্লথ, আর চাকরির সুযোগ কমছে। অনেক বিনিয়োগকারী এখন অপ্রত্যাশিত ক্ষতির মুখে। বাজার বিশ্লেষক অনিন্দ্য চক্রবর্তী বলেন, ‘সাধারণ সময়ে, চাকরিজীবীরা নিয়মিত আয়ের কারণে সাময়িক লোকসান সহ্য করতে পারেন। কিন্তু এখন মধ্যবিত্তের জন্য এক বিশাল অর্থনৈতিক সংকট চলছে। একদিকে চাকরির সুযোগ কমছে, বেতন বৃদ্ধি নেই, অন্যদিকে বাজারের পতন তাদের আর্থিক স্থিতিশীলতা নাড়িয়ে দিয়েছে।’
বিনিয়োগ পরামর্শক জয়দীপ মারাঠে মনে করেন, আরও ৬-৮ মাস যদি বাজার অস্থির থাকে, তাহলে অনেক বিনিয়োগকারী নিরাপদ ব্যাংক আমানতে ফিরে যাবেন। তবে আশার আলোও আছে। বাজার বিশেষজ্ঞ অজয় বাগ্গা বলেন, ফেব্রুয়ারির পর থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রি কমেছে, অর্থাৎ তাঁরা শেয়ারবাজারে মূলধন রাখছেন, যা বাজার পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এই পতন হয়তো নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য এক কঠিন শিক্ষা হয়ে থাকবে। মোনিকা হালান বলেন, ‘যারা মাত্র তিন বছর ধরে বাজারে আছেন, তাঁরা ২৫ শতাংশ লাভকে স্বাভাবিক ধরে নিয়েছিলেন—এটা বাস্তব নয়। যদি বাজার না বোঝেন, তাহলে ব্যাংকের আমানত ও স্বর্ণেই থাকুন। অন্তত নিয়ন্ত্রণ থাকবে।’
বিহারের প্রকৌশলী রাজেশ কুমার দুই বছর আগে এক ব্যাংকের পরামর্শে তাঁর পুরো সঞ্চয় মিউচুয়াল ফান্ড, শেয়ার ও বন্ডে বিনিয়োগ করেন। ভারতের শেয়ারবাজার যখন চাঙা ছিল, তখন তিনিও লাখ লাখ ভারতীয়ের মতো বাজারে বিনিয়োগ করেন। ছয় বছর আগেও ভারতে প্রতি ১৪টি পরিবারের মধ্যে মাত্র একটি পরিবার শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করত। বাজার চাঙা হলে সেই সংখ্যা বেড়ে এখন পাঁচটিতে উন্নীত হয়েছে।
কিন্তু সেই পোয়াবারো পরিস্থিতি এখন আর নেই। ছয় মাস ধরে ভারতের শেয়ারবাজারে পতনের ধারা চলছে, বিনিয়োগকারীরা হাজার হাজার কোটি রুপি বাজারে খুইয়েছেন। এর পেছনে বিদেশি বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে চীনের সরিয়ে নেওয়া, অতিমূল্যায়িত শেয়ার ও দুর্বল মুনাফাকে কারণ হিসেবে দায়ী করেন বিশ্লেষকেরা। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ভারতের শেয়ারবাজার থেকে প্রায় ৯০০ বিলিয়ন ডলার মূলধন কমেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতির ঘোষণার আগেই শুরু হওয়া পতনের ধারা পরে আরও ত্বরান্বিত হয়েছে।
ভারতের শীর্ষ ৫০টি কোম্পানির সূচক ‘নিফটি-৫০’ টানা পাঁচ মাস ধরে কমেছে, যা গত ২৯ বছরে দীর্ঘস্থায়ী পতন। শেয়ার ব্রোকারদের মতে, লেনদেনের পরিমাণ এক-তৃতীয়াংশ কমে গেছে। এ বিষয়ে রাজেশ কুমার বলেন, ‘ছয় মাসের বেশি সময় ধরে আমার বিনিয়োগ ক্ষতির মুখে আছে। গত এক দশকে এত বাজে অভিজ্ঞতা হয়নি।’
রাজেশ তাঁর সঞ্চয়ের বেশির ভাগই শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছিলেন, ফলে ব্যাংকে এখন খুব সামান্য টাকা আছে। আগামী জুলাইয়ে তাঁর ছেলের মেডিকেল কলেজে ১৮ লাখ রুপি ফি দিতে হবে। বিষয়টি নিয়ে তিনি চিন্তিত, কারণ টাকা বের করে আনার জন্য লোকসানে শেয়ার বিক্রি করতে হবে। তাঁর আশা, ‘বাজারের উন্নতি হলে কিছু টাকা আবার ব্যাংকে রাখার কথা ভাবছি।’
রাজেশের উদ্বেগের মধ্যে ফুটে উঠেছে ভারতীয় মধ্যবিত্তদের বাস্তবতা। ভারতীয় মধ্যবিত্তের বড় অংশই অর্থনৈতিক বিপ্লবের অংশ হিসেবে শেয়ারবাজারে ঢুকেছিলেন। বিনিয়োগের অন্যতম জনপ্রিয় উপায় ‘সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান’ (এসআইপি) গত পাঁচ বছর তিন গুণ বেড়ে ১০ কোটিরও বেশি বিনিয়োগকারীতে পৌঁছেছে। প্রথমবারের বিনিয়োগকারীদের অনেকেই ইনস্টাগ্রাম ও ইউটিউবের ‘ফিনফ্লুয়েন্সারদের’ (আর্থিক প্রভাবক) দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন; কিন্তু ঝুঁকি সম্পর্কে সেভাবে সচেতন নন।
তারুণ সরকার নামের এক সাবেক বিপণন ব্যবস্থাপক তাঁর প্রভিডেন্ট ফান্ডের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর তিনি অবসরকালের জন্য নিরাপদ বিনিয়োগ খুঁজছিলেন। শেয়ারবাজারে অতীতের ক্ষতির অভিজ্ঞতা থাকায়, এবার একজন পরামর্শকের সহায়তায় তিনি মিউচুয়াল ফান্ড বেছে নেন।
তরুণ সরকার বলেন, ‘আমি আমার ৮০ শতাংশ সঞ্চয় মিউচুয়াল ফান্ডে রেখেছি, আর মাত্র ২০ শতাংশ ব্যাংকে। এখন আমার পরামর্শক আমাকে সতর্ক করে বলেছেন, হৃৎপিণ্ড ভালো রাখতে চাইলে আগামী ছয় মাস বিনিয়োগের দিকে তাকাবেন না।’
তারুণ সরকার সন্দিহান, তাঁর প্রভিডেন্ট ফান্ডের পুরো টাকা শেয়ারবাজারে দেওয়া ঠিক হয়েছে কি না। তিনি মজা করে বলেন, ‘আমি একসঙ্গে অজ্ঞ ও আত্মবিশ্বাসী। অজ্ঞ এ কারণে যে, আমি বুঝতেই পারছি না বাজার কীভাবে চলছে, আবার আত্মবিশ্বাসী এ কারণে, ইনস্টাগ্রামের বিশেষজ্ঞরা বিনিয়োগকে মিলিয়নেয়ার হওয়ার শর্টকাট হিসাবে দেখাচ্ছেন। কিন্তু একই সঙ্গে এটাও জানি, হয়তো প্রতারণা আর বিভ্রমের জালে আটকে গেছি।’
টিভির প্রচারণা ও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের কথাবার্তায় তরুণ সরকার শেয়ারবাজারের প্রতি আকৃষ্ট হন। তিনি বলেন, ‘টিভি উপস্থাপকেরা বাজার নিয়ে আশাবাদী কথা বলেন, আর আমার হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের লোকেরা তাদের লাভের গল্প শোনায়।’
তরুণ সরকার জানান, তাঁর অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে কিশোর-কিশোরীরা পর্যন্ত বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা করে। তিনি বলেন, ‘ব্যাডমিন্টন খেলার সময় এক কিশোর আমাকে এক টেলিকম কোম্পানির শেয়ারের হট টিপ দিয়েছিল। যখন চারপাশে এসব শুনি, তখন মনে হয় আমিও চেষ্টা করে দেখি না কেন? তাই করলাম, আর তারপরই বাজার ধসে পড়ল।’
তবে তিনি এখনো আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘আমি হাত গুটিয়ে রেখেছি আপাতত। আমি নিশ্চিত, বাজার ঘুরে দাঁড়াবে, আর আমার ফান্ড আবার লাভের মুখ দেখবে।’
অনেকেই আরও বড় ঝুঁকি নিয়ে বড় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। রমেশ (ছদ্মনাম) নামের ভারতের একটি ছোট শহরের একজন হিসাবরক্ষক মহামারির সময় ঋণ নিয়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছিলেন। ইউটিউবের প্রভাবকদের কথায় প্রভাবিত হয়ে তিনি ঝুঁকিপূর্ণ ‘পেনি স্টক ও ডেরিভেটিভসে’ বিনিয়োগ করেন। এ মাসে, ১ হাজার ৮০০ ডলার (যা তাঁর এক বছরের বেতনের বেশি) লোকসানের পর, তিনি ব্রোকারেজ অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি ধার করা টাকা বিনিয়োগ করেছিলাম, আর এখন পাওনাদারেরা আমার পেছনে লেগেছেন।’
রমেশ সেই ১ কোটি ১০ লাখ ভারতীয়ের একজন, যাঁরা ফিউচার ও অপশন ট্রেডে সম্মিলিতভাবে ২০ বিলিয়ন ডলার হারানোর পর নিয়ন্ত্রক সংস্থার হস্তক্ষেপের শিকার হয়েছেন। আর্থিক পরামর্শক সমীর দোশি বলেন, ‘এই পতন কোভিড মহামারির সময়কার বিপর্যয়ের মতো নয়। তখন আমাদের পুনরুদ্ধারের একটি স্পষ্ট পথ ছিল, কারণ ভ্যাকসিন আসছিল। কিন্তু এখন ট্রাম্প ফ্যাক্টরের কারণে প্রবল অনিশ্চয়তা—আমরা জানিই না, সামনে কী অপেক্ষা করছে।’
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, কম খরচের ব্রোকারেজ ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তির উদ্যোগ বিনিয়োগকে আরও সহজলভ্য করেছে। স্মার্টফোন ও অ্যাপের মাধ্যমে বাজারে ঢোকা এখন অনেক সহজ হয়েছে। তবে নতুন বিনিয়োগকারীদের বাস্তবতা বুঝতে হবে।
আর্থিক শিক্ষাবিদ মোনিকা হালান বলেন, ‘শেয়ারবাজার কোনো জুয়ার আসর নয়। আপনাকে প্রত্যাশা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। শুধু সেই অর্থই শেয়ারে বিনিয়োগ করুন, যা অন্তত আগামী সাত বছরে আপনার প্রয়োজন হবে না। ঝুঁকি নিলে বোঝার চেষ্টা করুন—কতটা হারাতে পারেন? সে ক্ষতি সহ্য করার সামর্থ্য আছে তো?’
শেয়ারবাজারের এই পতন ভারতের মধ্যবিত্তের জন্য এমন এক কঠিন সময়ে এল, যখন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মন্থর, মজুরি স্থবির, বেসরকারি বিনিয়োগ শ্লথ, আর চাকরির সুযোগ কমছে। অনেক বিনিয়োগকারী এখন অপ্রত্যাশিত ক্ষতির মুখে। বাজার বিশ্লেষক অনিন্দ্য চক্রবর্তী বলেন, ‘সাধারণ সময়ে, চাকরিজীবীরা নিয়মিত আয়ের কারণে সাময়িক লোকসান সহ্য করতে পারেন। কিন্তু এখন মধ্যবিত্তের জন্য এক বিশাল অর্থনৈতিক সংকট চলছে। একদিকে চাকরির সুযোগ কমছে, বেতন বৃদ্ধি নেই, অন্যদিকে বাজারের পতন তাদের আর্থিক স্থিতিশীলতা নাড়িয়ে দিয়েছে।’
বিনিয়োগ পরামর্শক জয়দীপ মারাঠে মনে করেন, আরও ৬-৮ মাস যদি বাজার অস্থির থাকে, তাহলে অনেক বিনিয়োগকারী নিরাপদ ব্যাংক আমানতে ফিরে যাবেন। তবে আশার আলোও আছে। বাজার বিশেষজ্ঞ অজয় বাগ্গা বলেন, ফেব্রুয়ারির পর থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রি কমেছে, অর্থাৎ তাঁরা শেয়ারবাজারে মূলধন রাখছেন, যা বাজার পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এই পতন হয়তো নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য এক কঠিন শিক্ষা হয়ে থাকবে। মোনিকা হালান বলেন, ‘যারা মাত্র তিন বছর ধরে বাজারে আছেন, তাঁরা ২৫ শতাংশ লাভকে স্বাভাবিক ধরে নিয়েছিলেন—এটা বাস্তব নয়। যদি বাজার না বোঝেন, তাহলে ব্যাংকের আমানত ও স্বর্ণেই থাকুন। অন্তত নিয়ন্ত্রণ থাকবে।’
শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল থাইল্যান্ডও। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাজধানী ব্যাংকক। পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে বেশ কয়েকটি ভবন। এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে, একটি বহুতল ভবন ধসে ধ্বংসস্তূপের নিচে অন্তত ৪৩ জন নির্মাণশ্রমিক আটকে আছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
১৭ মিনিট আগেমিয়ানমারের সাংবাদিকদের পরিচালিত থাইল্যান্ড–ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইরাবতীর খবরে বলা হয়েছে, রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পের সময় মান্ডালায়, নেপিডো এবং অন্যান্য এলাকার বেশ কয়েকটি ভবন ধসে পড়ে। এই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল সাগাইং শহরের কাছে।
১ ঘণ্টা আগেসরকার তাৎক্ষণিক, একতরফা ও আকস্মিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, বাজেট ভাষণে তারা ২ শতাংশ কর বাতিল করেছে। এরপর অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন ৬ শতাংশ ডিজিটাল সার্ভিস ট্যাক্স, যা সাধারণত ‘গুগল ট্যাক্স’ নামে পরিচিত, সেটিও তুলে দেওয়া হবে। এখন, ট্রাম্পকে তারা আর কী কী দেবেন?’
২ ঘণ্টা আগেগত বুধবার (২৬ মার্চ) যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা গাড়ি এবং যানবাহনের যন্ত্রাংশের ওপর ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ট্রাম্প এবং বলেন, ‘এটি স্থায়ী সিদ্ধান্ত’। যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ি রপ্তানিকারক শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে—মেক্সিকো, কানাডা, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও জার্মানির মতো ওয়াশিংটনের ঘনিষ্ঠ
২ ঘণ্টা আগে