Ajker Patrika

শজারুর তাণ্ডবে হুমকির মুখে কাশ্মীরের ৩৮৫ কোটি রুপির জাফরান শিল্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৩: ২৩
পামপুর এলাকার একটি বাড়িতে কৃষকেরা জাফরান ফুল থেকে লাল রঙের কেশর আলাদা করছেন। ছবি: এএফপি
পামপুর এলাকার একটি বাড়িতে কৃষকেরা জাফরান ফুল থেকে লাল রঙের কেশর আলাদা করছেন। ছবি: এএফপি

স্থানীয় সময় ভোর ৪টা। তখনো আজান দেওয়ার সময় হয়নি। তার পরও ঘুমানোর মতো অবকাশ নেই ৫২ বছরের জাফরানচাষি বশির আহমেদের। ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলার পামপুরের বাসিন্দা তিনি। ঘুটঘুটে অন্ধকারে টর্চলাইট হাতে পাহারা দিচ্ছেন ফসল।

বিরক্তি আর হতাশা নিয়ে তিনি কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে বলেন, ‘এ যেন এক যুদ্ধ। জলবায়ু পরিবর্তন, দামের নিম্নগতি সব মোকাবিলা করেছি। কিন্তু শজারুদের সঙ্গেও লড়তে হবে, তা কে ভেবেছিল?’

সম্প্রতি শজারুর উপদ্রবে ধ্বংসের মুখে পামপুরের জাফরানশিল্প। শজারু (ইন্ডিয়ান ক্রেস্টেড পর্কিউপাইন) রাতের অন্ধকারে এসে খেয়ে যায় জাফরানের কন্দ বা আলুর মতো একধরনের মূল, যা চাষিদের নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।

ভারতের জাফরানশিল্পের কেন্দ্র কাশ্মীরের এই অঞ্চল। ইরান আর আফগানিস্তানের পর বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম জাফরান উৎপাদনকারী এলাকা এটি। পামপুরে উৎপাদিত জাফরানে ক্রোসিনের (জাফরান ফুলের কেশরের রং ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মান নির্ধারণ করে এই উপাদান। ক্রোসিনের পরিমাণ যত বেশি, গুণমান তত ভালো) পরিমাণ ৮ দশমিক ৭২ শতাংশ। গাঢ় লালচে রং ও তীব্র সুবাসের কারণে বিখ্যাত কাশ্মীরি জাফরান।

আগে শজারুগুলো জঙ্গলে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন তারা জাফরানের খেতেও হানা দিচ্ছে। বন ধ্বংস, আবাসস্থল হারানো ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাণীগুলো বন ছেড়ে খাবারের খোঁজে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। এই নিশাচর প্রাণীরা মাটির গভীরে খুঁড়ে জাফরানের কন্দ খেয়ে ফেলে।

নানা কারণে আগে থেকেই ধুঁকছে কাশ্মীরের জাফরান উৎপাদন। অনিয়মিত বৃষ্টি, পানির ঘাটতি ও কৃষিজমির দখলের কারণে ক্রমশ কমছিল উৎপাদন। ২০২১-২২ অর্থবছরে অঞ্চলটির জাফরানের কেশর উৎপাদন রেকর্ড করা হয়েছে মাত্র ৩ দশমিক ৪৮ টন। ২০২৪ সালে তা আরও কমে দাঁড়ায় মাত্র ২ দশমিক ৬ টনে। অথচ ১৯৯৭-৯৮ সালে উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১৫ দশমিক ৯৭ টন।

আলজাজিরার হিসাব অনুসারে প্রতিবছর প্রায় ৩০ শতাংশ করে উৎপাদন কমছে অঞ্চলটিতে। কেশরচাষি বশির আহমেদের হিসাব অনুযায়ী, গত দুই বছরে শুধু শজারুর কারণে সাড়ে ৩ হাজার ডলার সমমূল্যের উৎপাদন কমেছে। তিনি বলেন, ‘৪৫ মিলিয়ন ডলারের (৩৮৫ কোটি রুপির বেশি) শিল্প এটি। কেশর উৎপাদনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে কাশ্মীরের ৩২ হাজার পরিবারের জীবিকা, যা শজারুর কারণে ধ্বংসের মুখে।’

বশির আহমেদ আরও বলেন, ‘প্রথমে ভেবেছিলাম ছাগল বা ভেড়া হয়তো খেয়ে ফেলেছে। কিন্তু যখন মাঠজুড়ে শজারুর কাঁটা দেখতে পেলাম, তখন বুঝলাম সমস্যা অনেক বড়।’

সমস্যা প্রকট হওয়ার পর স্থানীয় বন বিভাগ গত বছর একধরনের জৈব প্রতিরোধক স্প্রে দেয় কৃষকদের। কিন্তু প্রথম কদিন ওই স্প্রেতে কাজ হলেও পরে আবার ফিরে আসে নিশাচর প্রাণীগুলো। ঝোপজঙ্গল দিয়ে মাঠ ঘেরাও করা, রাত জেগে পাহারা দেওয়ার মতো পুরোনো পদ্ধতি অবলম্বন করেও দেখেছেন কৃষকেরা। কিন্তু কোনো কিছুতেই কাজ হচ্ছে না।

কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ নিয়ে আব্দুর রশিদ নামের এক কৃষক বলেন, ‘বন বিভাগের স্প্রেতে তেমন কোনো কাজই হয়নি। এখন আরও গভীরে খুঁড়ে খায় শজারুরা। এভাবে চললে কাশ্মীরি (জাফরানের) কেশর হারিয়ে যাবে।’

এই বুনো শজারুর সমস্যা শুধু স্থানীয় বিষয় নয়। কাশ্মীরি কেশর একটি আন্তর্জাতিক পণ্য এবং এর উৎপাদন ব্যাহত হলে বৈশ্বিক বাজারেও প্রভাব পড়বে। বিশ্বের ৮৫ শতাংশ কেশর উৎপাদন করে ইরান, কিন্তু তাদের কেশরের ক্রোসিন মাত্র ৬ দশমিক ৮২ শতাংশ, যা কাশ্মীরি কেশরের তুলনায় অনেক কম। কাশ্মীরের ফলন কমে যাওয়ায় জাফরানের বাজারে ইরানের দখল আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কাশ্মীরি ব্যবসায়ীরা। কেশর ব্যবসায়ী বিলাল আহমেদ বলেন, ‘শুধু ৫ শতাংশ ফসল হারালেই ২৯ লাখ রুপি (৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার) ক্ষতি। এমন হতে থাকলে দাম অনেক বাড়বে এবং কাশ্মীরি কেশর বিলাসদ্রব্যে পরিণত হবে, সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাবে এটি।’

কাশ্মীর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মীর মুসকান উন-নিসা বলেন, বন ধ্বংসের কারণে শজারুরা প্রাকৃতিক বাসস্থান ও খাবারের সুযোগ হারিয়েছে। কেশরের কন্দ এখন তাদের জন্য সহজলভ্য ও পুষ্টিকর খাবার হয়ে উঠেছে।

মুসকান আরও বলেন, ‘শজারুদের মাটি খোঁড়াখুঁড়ি ও খাওয়ার পদ্ধতি কেবল ফলনই কমায় না, মাটির গুণগত মানও নষ্ট করে, যা ভবিষ্যতের কৃষিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে।’ তাঁর মতে, এ সমস্যা এড়াতে গভীরভাবে তারের বেষ্টনী বসানো যেতে পারে, যা মাটির অন্তত ৫ ফুট নিচ থেকে শুরু হবে। তাহলে গর্ত খুঁড়ে ভেতরে ঢুকতে পারবে না শজারু।

তিনি বলেন, এ ছাড়া প্রাকৃতিক প্রতিরোধক যেমন—আলো বা শব্দের সেনসর ব্যবহার করে প্রাণী তাড়ানোর ব্যবস্থাও কার্যকর হতে পারে। শজারুদের নিরাপদ বাসস্থান তৈরি করা ‘ফসল এবং প্রাণী’ উভয়ের জন্যই জরুরি বলে মনে করেন মুসকান।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনও এই সমস্যার অন্যতম একটি কারণ। আবহাওয়ার চক্র বদলে যাওয়ায় শজারুর প্রাকৃতিক খাদ্য হ্রাস পেয়েছে। আগে শীতে তারা ঘুমিয়ে থাকত, কিন্তু এখন তেমন শীত না পড়ায় শীতনিদ্রায় যায় না, বরং সক্রিয় থাকে। ফলে তারা ক্ষতিও বেশি করছে। আর একসময় যেসব বন্য প্রাণী—চিতা, বন্য কুকুর—শজারুর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখত, বন ধ্বংস আর মানুষে হস্তক্ষেপের কারণে এখন তাদের সংখ্যাও কমে গেছে।

তাহলে শজারুর হুমকি ঠেকানোর কি আর কোনো উপায় নেই? আছে! স্থানীয় কৃষি ও বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞরা এই হুমকি ঠেকাতে নানা উপায় খোঁজার চেষ্টা করছেন। বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ জহির আহমেদ বলেন, ‘বন্য কুকুরের মতো প্রাকৃতিক শিকারি প্রাণী নিধন বন্ধ করে তাদের সংখ্যা বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। তবে এতে গৃহপালিত পশু ও মানুষের জন্যও ঝুঁকি তৈরি হতে পারে, যা এড়ানোর উপায় তেমন নেই। অনেকে বেড়া ও ফাঁদ পাতার কথা বলছেন। কিন্তু ইলেকট্রিক বেড়া ছাড়া অন্য কোনো বেড়া এখানে তেমন কার্যকর হবে না। আবার ইলেকট্রিক বেড়া অনেকের জন্য ব্যয়বহুল হতে পারে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বাস্তবসম্মত সমাধান হতে পারে, শজারুগুলোকে ধরে অন্যত্র তাদের বাসস্থান তৈরি কের দেওয়া।’

জহির আহমেদ আরও বলেন, ‘মাঠের চারপাশে আফিম গাছ বা করলা জাতীয় উদ্ভিদ লাগানো যেতে পারে, যার গন্ধ শজারুরা সহ্য করতে পারে না। এ ছাড়া, গোলমরিচের জলীয় দ্রবণ স্প্রে করাও সাহায্য করতে পারে, যদি তা ফসলে ক্ষতি না করে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জাপানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টাকে প্রতিহতের ঘোষণা উত্তর কোরিয়ার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন। ছবি: এএফপি
উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন। ছবি: এএফপি

জাপানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের যে কোনো প্রচেষ্টা কঠোরভাবে প্রতিহত করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম কেসিএনএ রোববার (২১ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, জাপানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা যে কোনো মূল্যে রোধ করা উচিত, কারণ এটি মানবজাতির জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘ইনস্টিটিউট ফর জাপান স্টাডিজ’-এর পরিচালক এক বিবৃতিতে বলেন, জাপানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টা শুধু এশিয়া নয়, পুরো বিশ্বের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করবে। তাঁর ভাষায়, ‘জাপানের পারমাণবিক হওয়ার প্রচেষ্টা মানবজাতির জন্য এক মহাবিপর্যয় বয়ে আনবে।’

যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ার এই প্রতিক্রিয়ার পেছনে রয়েছে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক কর্মকর্তার সাম্প্রতিক মন্তব্য। জাপানের বার্তা সংস্থা কিয়োদো নিউজের খবরে বলা হয়, ওই কর্মকর্তা প্রকাশ্যে বলেছেন, টোকিওর পারমাণবিক অস্ত্র রাখা উচিত।

এই প্রেক্ষাপটে উত্তর কোরিয়া দাবি করেছে, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন বা বেপরোয়া মন্তব্য নয়; বরং জাপানের বহুদিনের পারমাণবিক অস্ত্রায়নের আকাঙ্ক্ষারই প্রতিফলন।

উত্তর কোরিয়ার মতে, জাপান তাদের তথাকথিত ‘অ-পারমাণবিক নীতি’ পুনর্বিবেচনার কথা বলে কার্যত একটি ‘লাল রেখা’ অতিক্রম করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, জাপানের কর্মকর্তাদের মন্তব্যগুলোই বলে দিচ্ছে, টোকিও এখন প্রকাশ্যেই পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের বাসনা জানাচ্ছে।

উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আরও দাবি করেছে, যুক্তরাষ্ট্র যখন গত অক্টোবরে দক্ষিণ কোরিয়াকে একটি পারমাণবিক সাবমেরিন নির্মাণের অনুমোদন দেয়, তার পরপরই জাপানে এই ধরনের বক্তব্য জোরালো হতে শুরু করে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ংয়ের সঙ্গে বাণিজ্য ও নিরাপত্তা ইস্যুতে শীর্ষ বৈঠকের পর ওই অনুমোদন দিয়েছিলেন।

উত্তর কোরিয়ার ওই কর্মকর্তা সতর্ক করে বলেন—জাপান যদি পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করে, তবে এশিয়া ভয়াবহ পারমাণবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। তবে তিনি পিয়ংইয়ংয়ের নিজস্ব পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

ধারণা করা হয়, উত্তর কোরিয়া নিজেই একটি ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডারের অধিকারী। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান থাকার পরও দেশটি তার পারমাণবিক সক্ষমতা বজায় রাখা ও সম্প্রসারণের ঘোষণা দিয়ে আসছে। গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে উত্তর কোরিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী কিম সন গিয়ং বলেন—পারমাণবিক অস্ত্র তাদের রাষ্ট্রীয় আইন, জাতীয় নীতি এবং সার্বভৌম অধিকারের অংশ, যা তারা কোনো পরিস্থিতিতেই ত্যাগ করবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলার আরও একটি তেলের ট্যাংকার ধাওয়া করছে মার্কিন বাহিনী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ১৪
ক্যারিবিয়ান সাগরে পানামা পতাকাবাহী সেঞ্চুরি নামের একটি তেলবাহী জাহাজের ওপর মার্কিন সামরিক বাহিনীর টহল। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
ক্যারিবিয়ান সাগরে পানামা পতাকাবাহী সেঞ্চুরি নামের একটি তেলবাহী জাহাজের ওপর মার্কিন সামরিক বাহিনীর টহল। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

ভেনেজুয়েলা উপকূলে আন্তর্জাতিক জলসীমায় আরও একটি তেলের ট্যাংকার ধাওয়া করছে মার্কিন কোস্ট গার্ড। আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) তিনজন মার্কিন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এটি সফল হলে এক সপ্তাহের মধ্যে ভেনেজুয়েলাসংশ্লিষ্ট তিনটি তেলবাহী জাহাজ জব্দ করার ঘটনা ঘটবে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহে ভেনেজুয়েলার ওপর ‘সর্বাত্মক নৌ অবরোধ’ ঘোষণার পর থেকে এই চিরুনি অভিযান শুরু হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মার্কিন কোস্ট গার্ড বর্তমানে একটি তেল ট্যাংকারকে ধাওয়া করছে। তবে অভিযানের সুনির্দিষ্ট অবস্থান বা জাহাজটির পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

এই অভিযান নিয়ে হোয়াইট হাউস বা পেন্টাগন থেকে তাৎক্ষণিক কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

হোয়াইট হাউসের ন্যাশনাল ইকোনমিক কাউন্সিলের ডিরেক্টর কেভিন হ্যাসেট আজ জানিয়েছেন, এর আগে জব্দ করা দুটি ট্যাংকার ‘ব্ল্যাক মার্কেট’ বা কালোবাজারের মাধ্যমে বিভিন্ন নিষিদ্ধ দেশে তেল সরবরাহ করছিল।

কেভিন হ্যাসেট দাবি করেছেন, এই আটকের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে তেলের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। তাঁর মতে, এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা এবং কেবল কালোবাজারি জাহাজগুলোকেই লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে।

তবে বাজার বিশ্লেষক ও তেল ব্যবসায়ীরা ভিন্নমত পোষণ করছেন। একজন তেল ব্যবসায়ী রয়টার্সকে বলেন, এই ধরনের পদক্ষেপ ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আগামীকাল সোমবার এশিয়ার বাজারে তেলের দাম বাড়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা তেলের দামের এই ঊর্ধ্বগতিকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।

গত সেপ্টেম্বর থেকে প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর ওপর চাপ বাড়াতে ট্রাম্প প্রশাসন এই অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। গত কয়েক মাসে প্রশান্ত মহাসাগর ও ক্যারিবিয়ান সাগরে ভেনেজুয়েলাসংশ্লিষ্ট ভেসেলগুলোর ওপর অন্তত দুই ডজন সামরিক হামলা চালানো হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, এসব সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত অন্তত ১০০ জন নিহত হয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলায় মার্কিন হস্তক্ষেপ নিয়ে সতর্ক করলেন লুলা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৫২
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। ছবি: সংগৃহীত
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান চাপ ও সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপ ‘ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়’ ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। তিনি মত দিয়েছেন, ভেনেজুয়েলায় কোনো ধরনের সশস্ত্র হস্তক্ষেপ শুধু ওই দেশের জন্য নয়, বরং পুরো পৃথিবীর জন্যই এক বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।

ব্রাজিলের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর ফোজ দো ইগুয়াসুতে দক্ষিণ আমেরিকার আঞ্চলিক জোট ‘মারকোসুর’-এর শীর্ষ সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে লুলা এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘ভেনেজুয়েলায় সশস্ত্র হস্তক্ষেপ একটি মানবিক বিপর্যয়ে রূপ নেবে। এটি এমন একটি নজির সৃষ্টি করবে, যা বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক হুমকি।’

এ বিষয়ে এক প্রতিবেদনে রোববার (২১ ডিসেম্বর) রয়টার্স জানিয়েছে, ভেনেজুয়েলা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনা সম্প্রতি আরও বেড়েছে। গত মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলায় যাতায়াতকারী সব নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘অবরোধ’ আরোপের নির্দেশ দেন। ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপকে নিকোলাস মাদুরো সরকারের ওপর চাপ বাড়ানোর নতুন কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে। ভেনেজুয়েলার অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি তেল খাতকে লক্ষ্য করেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

লুলা স্মরণ করিয়ে দেন, ফকল্যান্ডস যুদ্ধের চার দশকেরও বেশি সময় পর দক্ষিণ আমেরিকা আবারও অন্য মহাদেশীয় কোনো শক্তির সামরিক উপস্থিতির আশঙ্কায় ভুগছে। তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ আমেরিকা আবার এমন এক ভূতের ছায়ায় পড়ছে, যেখানে এই অঞ্চলের বাইরে থেকে আসা সামরিক শক্তি আমাদের শান্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।’

চলতি সপ্তাহের শুরুতেই লাতিন আমেরিকার দুই বৃহত্তম অর্থনীতির শীর্ষ নেতা ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দ্য সিলভা এবং মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেইনবাউম ভেনেজুয়েলা পরিস্থিতিতে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে গত শনিবারের বক্তব্যে লুলা আরও কঠোর দেখিয়েছেন।

‘মারকোসুর’ সম্মেলন শেষে দেওয়া এক যৌথ ঘোষণায় লাতিন আমেরিকার নেতারা ভেনেজুয়েলায় গণতান্ত্রিক নীতি ও মানবাধিকার রক্ষায় শান্তিপূর্ণ পথেই অগ্রসর হওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। এই ঘোষণায় আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে ও পানামার প্রেসিডেন্টদের পাশাপাশি বলিভিয়া, ইকুয়েডর ও পেরুর শীর্ষ কর্মকর্তারাও সমর্থন জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ট্রেনের ভাড়া বাড়ছে ভারতেও

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২৬ ডিসেম্বর থেকে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ছবি: সংগৃহীত
২৬ ডিসেম্বর থেকে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ছবি: সংগৃহীত

ভারতেও ট্রেনের ভাড়া বাড়ছে। পকেটে টান পড়তে যাচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের। ২৬ ডিসেম্বর থেকে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তবে স্বস্তির খবর হলো, লোকাল ট্রেনের ভাড়া অপরিবর্তিত থাকছে। মূলত দূরপাল্লার যাত্রীদের জন্যই এই বাড়তি ভাড়া কার্যকর হবে।

ভারতের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ঘোষণা অনুযায়ী, ভ্রমণের দূরত্ব ও কোচের ধরনভেদে নতুন ভাড়ার হার নির্ধারিত হবে। ২১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত সাধারণ শ্রেণিতে ভাড়ায় কোনো পরিবর্তন নেই। তবে ২১৫ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বের ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটারে এক পয়সা করে ভাড়া বাড়বে।

মেল বা এক্সপ্রেস ট্রেনের (নন-এসি) যাত্রীদের জন্য প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া বাড়বে দুই পয়সা। এসি কোচ বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোচের ক্ষেত্রেও কিলোমিটার প্রতি দুই পয়সা ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।

তবে যদি কোনো যাত্রী নন-এসি কোচে ৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন, নতুন নিয়ম অনুযায়ী তাঁকে আগের চেয়ে ১০ রুপি বেশি ভাড়া দিতে হবে।

কেন এই ভাড়া বৃদ্ধি

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত এক দশকে রেলপথ সম্প্রসারণের ফলে জনবল এবং অন্যান্য ব্যয় বহুগুণ বেড়েছে। রেলওয়ের বর্তমান জনবল ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি রুপিতে এবং পেনশনের পেছনে খরচ হচ্ছে ৬০ হাজার কোটি রুপি। সব মিলিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট পরিচালনা ব্যয় বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি রুপি।

যাত্রীদের ভাড়া ও পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে খরচ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে রেলওয়ে। এর আগে গত জুলাই মাসেও ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল (নন-এসিতে এক পয়সা ও এসিতে দুই পয়সা)। তারও আগে ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি বড় ধরনের ভাড়া বৃদ্ধি কার্যকর করা হয়েছিল, যেখানে এসি কোচে ভাড়া বেড়েছিল কিলোমিটার প্রতি চার পয়সা পর্যন্ত।

রেলওয়ে কর্মকর্তাদের মতে, উন্নত সেবা এবং ক্রমবর্ধমান ব্যয় মেটাতে এই সামান্য ভাড়া বৃদ্ধি অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল। কর্তৃপক্ষ আশা করছে, এই ভাড়া বৃদ্ধির ফলে রেলওয়ের বার্ষিক আয় প্রায় ৬০০ কোটি রুপি বাড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত