ত্রিপুরায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় আটক ৭, তিন পুলিশ বরখাস্ত

অনলাইন ডেস্ক    
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪: ১৯
Thumbnail image
আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে নিরাপত্তা বাড়িয়েছে ত্রিপুরা সরকার। ছবি: পিটিআই

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে বাংলাদেশ মিশনে হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৭ জনকে আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া, এই ঘটনার কারণে ত্রিপুরা সরকার আজ মঙ্গলবার তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে এবং এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশে সাবেক ইসকন নেতা ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় গ্রেপ্তার চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আয়োজিত এক বিক্ষোভ মিছিল থেকে প্রায় ৫০ জন ব্যক্তি বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের ভেতরে প্রবেশ করে হামলা চালায় ও ভাঙচুর করে। ঢাকা এই ঘটনার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

ঢাকার অভিযোগ, স্থানীয় পুলিশ ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় ছিল না।’ তারা বলেছে, এই ঘটনা মিশনের কর্মীদের মধ্যে ‘গভীর নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি’ তৈরি করেছে এবং নয়াদিল্লির কাছে ‘তৎক্ষণাৎ পদক্ষেপ’ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবশ্য প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছে, এই ঘটনা ‘গভীরভাবে দুঃখজনক। কূটনৈতিক এবং কনস্যুলার সম্পত্তি কোনোভাবেই লক্ষ্যবস্তু হওয়া উচিত নয়। সরকার বাংলাদেশ হাইকমিশনের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করার পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।’

এদিকে, ভারতের নাগাল্যান্ড রাজ্যের ইংরেজি সংবাদমাধ্যম মুরং এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ত্রিপুরা সরকার তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করারা পাশাপাশি একজন সহকারী কমান্ড্যান্ট পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করেছে। ত্রিপুরা পুলিশের শীর্ষ এক কর্মকর্তা জানান, সোমবারের ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার এবং এই তদন্তভার পড়েছে সাউদার্ন রেঞ্জের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (ডিআইজি)।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা জানান, তিনজন সাব-ইন্সপেক্টর—দিলু জমাতিয়া, দেবব্রত সিনহা এবং জয়নাল হোসেনকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং সহকারী কমান্ড্যান্ট (ডিএসপি পদমর্যাদার কর্মকর্তা) কান্তি নাথ ঘোষকে প্রত্যাহার করেছেন। ওই কর্মকর্তা আরও জানান, চার পুলিশ কর্মকর্তার দায়িত্বে অবহেলার জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘রাতভর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশন কার্যালয়ে নিরাপত্তা লঙ্ঘনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সাতজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের জড়িত থাকার প্রাথমিক তদন্ত শেষে গ্রেপ্তারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর কথিত নির্যাতনের প্রতিবাদকালে ‘হিন্দু সংগ্রাম সমিতির’ একটি প্রতিনিধিদল ত্রিপুরার বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করে একটি স্মারকলিপি জমা দেয়। এতে বাংলাদেশ সরকারের অন্তর্বর্তী প্রশাসনের প্রতি হিন্দু সম্প্রদায়ের জানমালের সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়।

এই সময় সমিতির কিছু কর্মী জোর করে এএইচসি চত্বরে প্রবেশ করে এবং বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা করে। পুলিশ দ্রুত প্রতিবাদকারীদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। ঘটনার পরপরই পুলিশ গোয়েন্দা বিভাগের মহাপরিচালক অনুরাগ এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় রেঞ্জের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল কৃষ্ণেন্দু চক্রবর্তী সোমবার বিকেলে বাংলাদেশ হাইকমিশন পরিদর্শন করেন এবং মিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন।

ওই কর্মকর্তা জানান, গোয়েন্দা বিভাগের ডিরেক্টর জেনারেল এবং ডিআইজি বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়েছেন। এরই মধ্যে কার্যালয়ের চারপাশে ত্রিপুরা পুলিশের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।

ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা আগরতলায় বাংলাদেশের হাইকমিশনে নিরাপত্তা লঙ্ঘনের ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হামলার প্রতিবাদে অনেক মানুষ আগরতলার গান্ধী মূর্তির পাদদেশে জড়ো হয়েছিলেন এবং শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছিলেন। কিন্তু কিছু যুবক হঠাৎ করেই আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের কার্যালয়ে প্রবেশের চেষ্টা করে। আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ চলতে পারে, তবে এ ধরনের আচরণ মোটেও কাম্য নয়।’

এদিকে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সোমবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে ভারতের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভের সংখ্যা বাড়ার পর বাংলাদেশ হাইকমিশন ও এর উপ-সহকারী হাইকমিশনগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘সোমবার আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ে নিরাপত্তা লঙ্ঘনের ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। কূটনৈতিক এবং কনস্যুলার সম্পত্তি কোনো অবস্থাতেই লক্ষ্যবস্তু হওয়া উচিত নয়। সরকার দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং দেশের অন্যান্য উপ-সহকারী হাইকমিশনগুলোর নিরাপত্তা বাড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছে।’

সোমবার হিন্দু সংগ্রাম সমিতির নেতা শংকর রায় বলেন, ‘বাংলাদেশে হিন্দুদের জীবন ও সম্পত্তির ওপর হামলা প্রতিদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং নিরাপত্তা বাহিনী নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় হাজার হাজার হিন্দু যোদ্ধা দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিলেন এবং স্বাধীনতা লাভের পর দেশ গঠনে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ট্রাম্প প্রশাসনে প্রথম বৃহৎ এলএনজি চুক্তি, বছরে ৫০ লাখ টন কিনবে বাংলাদেশ

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে গুলি করে হত্যা

মুগ্ধ মঞ্চে হামলার প্রতিবাদে মশাল মিছিল, ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম

বিয়ের ৩ দিনের মাথায় স্বামী কারাগারে, ফিরে পেলেন ১৬ বছর পর

শিক্ষার্থীদের দল ঘোষণা ফেব্রুয়ারিতে, জমা পড়েছে ১০০–এর বেশি নাম

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত