Ajker Patrika

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার ৪০ বছর পর যোগদানের চিঠি পেলেন ৬৬ জন 

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার ৪০ বছর পর যোগদানের চিঠি পেলেন ৬৬ জন 

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের চাকরির জন্য যখন আবেদন করেছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের হুগলি জেলার দীনবন্ধু ভট্টাচার্য, তখন তিনি যুবক। বহু কাঠ-খড় পোড়ানোর পর অবশেষে গত বৃহস্পতিবার এসেছে সেই বহুপ্রতীক্ষিত চাকরিতে যোগদানের চিঠি। দীনবন্ধু ভট্টাচার্যের বয়স এখন ৬৪। 

আশির দশকের কথা। প্রাথমিক শিক্ষকের পদে চাকরির জন্য পরীক্ষাও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও নিয়োগ হয়নি বলে অভিযোগ। দায়ের হয় মামলা। তবে সুরাহা হয়নি। অবশেষে কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের পর নিয়োগের চিঠি এসেছে বটে, কিন্তু তার মাঝেই পেরিয়ে গেছে প্রায় ৪০ বছর। 

ভট্টাচার্য একা নন, তার মতো আরও ৬৬ জন রয়েছেন; যারা দীর্ঘ লড়াইয়ের পর চাকরির চিঠি পেয়েছেন বটে। কিন্তু তাঁরা অবসর নেওয়ার বয়সসীমা পেরিয়েছেন। 

ভারতের সংবাদমাধ্যম দ্যা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। 

চাকরির চিঠি হাতে পেয়ে কী করতে হবে প্রথমে বুঝতেই পারেননি দীনবন্ধু ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষকের জন্য যখন পরীক্ষা দিয়েছিলাম তখন আমি যুবক। সদ্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক। চাকরির জন্য অপেক্ষা করতে করতে এখন আমার বয়স ৬৪। গতকাল হাতে অ্যাপয়েন্টমেন্টের চিঠি পেয়েছি। আমি একা নই, আমার মতো ৬৬ জন এই চিঠি পেয়েছে। এর মধ্যে ৪ জন তো বেঁচেই নেই।’ 

চিঠি হাতে তিনি ছুটে গিয়েছিলেন, পান্ডুয়ার চক্র বিদ্যালয় পরিদর্শকের অফিসে। তার মতো আরও একাধিক ব্যক্তিই ছুটে যান সেখানে, চিঠির ‘মর্মার্থ বুঝতে’। 

ঘটনা প্রবাহ
বাম আমলে ১৯৮৩ সালে শিক্ষক নিয়োগের চাকরির পরীক্ষা দিয়েছিলেন দীনবন্ধু ভট্টাচার্য, অচিন্ত্য আদক, কালীধন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো আরও অনেকেই। চাকরির জন্য সাক্ষাৎকার হয়েছিল সে বছর। 

কালীদাস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘তখন আমার বয়স ২৭-২৮ হবে। প্রাথমিক শিক্ষকের জন্য পরীক্ষা দিয়েছিলাম। ইন্টার্ভিউয়ের পর আমাদের নির্বাচনও হয়। কিন্তু সেই প্যানেল বাতিল হয়ে যায়। আমরা সেই বছরই আদালতের দ্বারস্থ হই। সমস্ত কিছু বিক্রি করে এতদিন সেই মামলা চালিয়েছি।’ 

প্রাথমিকের শিক্ষক হিসেবে যোগদানের চিঠি হাতে তিন বন্ধু। ছবি: সংগৃহীত  তিনিও প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের চিঠি পেয়েছেন হুগলি জেলা পরিষদের কাছ থেকে। নিয়োগ সংক্রান্ত ওই মামলা চলছিল কলকাতা হাইকোর্টে। দীর্ঘ সময় ধরে মামলা চলে। তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালের আগস্ট মাস থেকে তাদের চাকরিতে নিয়োগ করার কথা বলে আদালত। 

রাজ্যের নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহন দাস পণ্ডিত বলেছেন, ‘১৯৮৩ সালে জুনিয়র বেসিক ট্রেনিং দেওয়া হতো। ওই বছর রাজ্যজুড়ে যে নিয়োগ হয়, সে সময় কেউ কেউ নিযুক্ত হয়েছেন আবার কেউ হননি। সে সময় নিয়ম ছিল ৬০ শতাংশ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক নেওয়া হবে এবং বাকি যাদের প্রশিক্ষণ নেই কিন্তু যোগ্য তাঁদের নেওয়া যেতে পারে।’ 

মোহন দাসে কথায়, ‘অন্যদিকে, মামলাকারীদের দাবি ছিল যারা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তাদের সবাইকে প্রাথমিক শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ করতে হবে। এই দাবি জানিয়ে তারা আদালতের দ্বারস্থ হন। মামলা চলতে থাকে। ৩০ বছর পর ওই মামলার যে রায় বেরোয় ২০১৪ সালে সেটা রাজ্য সরকার মানতে চায়নি, তাই সেই মামলা আবারও চলতে থাকে। অবশেষে ২০ ডিসেম্বর হাইকোর্ট নির্দেশ দেয় চাকরি প্রার্থীদের নিয়োগের। কিন্তু রাজ্য সরকারের তরফে আদালতকে জানানোই হয়নি আবেদনকারীদের বয়সসীমা ৬০ অতিক্রম করেছে এবং ৪ জন বেঁচে নেই।’ 

তিনি আরও প্রশ্ন তুলেছেন, শিক্ষা দপ্তরের অনুমোদন ছাড়া কীভাবে জেলা পরিষদের নিয়োগের চিঠি পাঠায়। তিনি বলেন, রাজ্য সরকারের উচিত ছিল খোঁজখবর নিয়ে আদালতকে সঠিক তথ্য দেওয়া। সেটা তারা করেনি। বরং রাতারাতি নিয়োগের চিঠি পাঠিয়েছে। এ বিষয়ে অবশ্য মন্তব্য করতে চাননি হুগলি জেলা পরিষদের কেউ। 

নিয়োগপত্রে সই রয়েছে হুগলি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারপার্সন শিল্পা নন্দীর। জেলা পরিষদের তৃণমূলের সদস্যের দাবি, আদালতের রায় সংক্রান্ত নথিতে নাম ঠিকানার উল্লেখ থাকলেও বয়সের কথা বলা নেই। 

অন্যদিকে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি তৃণমূলের ওই জেলা পরিষদের সদস্য সুবীর মুখোপাধ্যায়ও। জেলা পরিষদের সদস্য মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘কোর্টের নিয়োগ সংক্রান্ত রায় অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আমার আর কিছু বলার নেই।’ 

বন্ধু তো মরেই গেল
দীর্ঘ অপেক্ষার পর নিয়োগের চিঠি মিলল ঠিকই, কিন্তু স্বস্তি মিলল কি? আক্ষেপ করে দীনবন্ধু ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমি সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি। চাকরির অপেক্ষা করতে করতে আমার সব শেষ হয়ে গেছে। মামলা লড়তে আর অন্যান্য খরচ চালাতে গিয়ে আমাদের ১ বিঘা জমি বিক্রি করতে হয়েছে। এখন থাকি বৃদ্ধা মায়ের সঙ্গে। ভেবেছিলাম ছাত্র পড়াব এখন লোকের জমিতে চাষ করে খাই। তবু আমরা অন্তত বেঁচে আছি, বন্ধু তো মরেই গেল।’ 

হুগলি জেলা পরিষদের নিয়োগপত্র অনুযায়ী, এখন তার যোগ দেওয়ার কথা কাছের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তিনি বলেছেন, ‘উমেশ তালুকদার, সইদুল হালদার, স্বপন ঘোষসহ তিনজনকে হারিয়েছি আমরা। অনেকেরই সংসার ভেসে গেছে।’ 

একই কথা জানালেন খন্যানের অচিন্ত্য আদক। তিনি বলেন, ‘আমার যোগ দেওয়ার কথা বাণী মন্দির প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। চিঠি পাওয়ার পর আমিও যোগাযোগ করেছিলাম।’ 

নিজের আর্থিক অবস্থার কথা জানিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন অচিন্ত্য হালদার। তিনি বলেন, ‘খুব অভাবের সংসার। আমি আর আমার বৌদি থাকি। দাদা চাকরি করত। তিনি বেঁচে থাকতে কিছু একটা করে চলত। তিনি মারা যাওয়ার পর খুব কষ্টে চলছে আমাদের। মামলা চালাতে অর্থ গেছে, আর জীবনের অর্ধেকটা তো চলেই গেল। আমার বয়স ৬৮ পেরিয়েছে।’ 

রাজনৈতিক বিতর্ক
এই নিয়োগকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক বিতর্ক এখন তুঙ্গে। বিজেপির হুগলি জেলার প্রেসিডেন্ট স্বপন পাল বলেছেন, ‘একের পর এক দুর্নীতিকে কেন্দ্র করে খবরের শিরোনামে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। রাজ্যের ভাবমূর্তিকে কালিমালিপ্ত করেছে তৃণমূল সরকার?’ 

যারা নিয়োগের চিঠি পেয়েছেন, তাদের পক্ষ নিয়ে বর্তমান সরকারের দিকে আঙুল তুলেছেন তিনি। তার কথায়, ‘৬০ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর চাকরির চিঠি পাওয়াটা প্রহসন ছাড়া কী! কেউ মারা যাওয়ার পর তার পরিবারের হাতে যদি নিয়োগের চিঠি এসে পৌছায় তাহলে তার মানসিক পরিস্থিতি কী হয়? এটা কী তার পরিবারের দুর্বল জায়গায় আবার আঘাত করা নয়?’ 

তৃণমূলের চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য তোপ দেগেছেন বাম সরকারের ওপর। তিনি বলেন, ‘এটা তো বাম জমানার কথা। তারা জবাব দিক। যত দোষ আমাদের?’ 

অন্যদিকে, সিপিএমের সুজন চক্রবর্তীও প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূলের দিকে। তাঁর কথায়, ‘যাকে নিয়োগ করা হচ্ছে তাঁর বয়স কত এবং তিনি বেঁচে আছেন কি না সেটাও তাঁদের খোঁজ নেওয়ার দরকার নেই। লুট আর দুর্নীতিটা এত ভয়াবহ যে কিছু বলার নেই। শুধুই গোঁজামিল দেওয়ার চেষ্টা।’ 

কলকাতার রাস্তায় চাকরি প্রার্থীদের পক্ষ নিয়ে তিনি বলেন, ‘সব বেরিয়ে আসছে আস্তে আস্তে। পুরো বিষয়টাই কিন্তু তৃণমূলের ইচ্ছাকৃত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘২০২৫’ নিয়ে ১৯৯৮ সালে করা আমেরিকানদের ভবিষ্যদ্বাণী কতটুকু মিলেছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০: ৫৭
ছবি: সিএনএন
ছবি: সিএনএন

১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি ও সমাজ বাস্তবতা ছিল একেবারেই ভিন্ন। সেই বছর প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন অভিশংসন প্রক্রিয়ার মুখে পড়েছিলেন, অস্কারে রাজত্ব করেছিল টাইটানিক, আর অধিকাংশ আমেরিকানের ঘরে ছিল ল্যান্ডলাইন ফোন। ঠিক সেই সময়েই গ্যালাপ ও ইউএসএ টুডে এক ব্যতিক্রমী জরিপ চালায়। ল্যান্ডলাইন ফোনে ১ হাজার ৫৫ জন আমেরিকানের সঙ্গে কথা বলে জানতে চাওয়া হয়—দূর ভবিষ্যৎ ‘২০২৫ সাল’ কেমন হবে বলে তাঁরা মনে করেন।

সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সিএনএন জানিয়েছে, ২০২৫ সাল নিয়ে সে সময় মার্কিনরা যে ভবিষ্যদ্বাণীগুলো করেছিল, সেগুলো সংরক্ষিত আছে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রোপার সেন্টারের জরিপ আর্কাইভে। ২০২৫ সালের শেষ প্রান্তে এসে এখন দেখা যাচ্ছে—সেই সব অনুমানের কোনোটা মিলেছে, আর কোনোটা মেলেনি।

এ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সেই সময়ের অনেক পূর্বাভাসই ছিল বিস্ময়করভাবে সঠিক। অধিকাংশ আমেরিকান তখনই ধারণা করেছিলেন, আগামী ২৭ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে একজন কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন, সমকামী বিবাহ বৈধ ও স্বাভাবিক হয়ে উঠবে এবং একটি ‘মারাত্মক নতুন রোগ’ বিশ্বকে নাড়িয়ে দেবে। বাস্তবে বারাক ওবামার প্রেসিডেন্ট হওয়া, সমকামী বিবাহের আইনি স্বীকৃতি এবং করোনা মহামারি সেই অনুমানগুলোকে সত্য প্রমাণ করেছে।

একইভাবে অনেকেই সেই সময় সঠিকভাবে ধারণা করেছিলেন, সাধারণ মানুষের জন্য মহাকাশ ভ্রমণ খুব সাধারণ বিষয় হয়ে উঠবে না এবং ভিনগ্রহের প্রাণীর সঙ্গে মানুষের সরাসরি যোগাযোগ ঘটবে না।

তবে কিছু ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবতার সঙ্গে মেলেনি। জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ মনে করেছিলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র একজন নারী প্রেসিডেন্ট পাবে—যা এখনো ঘটেনি। অর্ধেকের বেশি মানুষ আশা করেছিলেন ক্যানসারের নিরাময় আবিষ্কৃত হবে এবং ৬১ শতাংশ মনে করেছিলেন মানুষ নিয়মিতভাবে ১০০ বছর বয়স পর্যন্ত বাঁচবে। বাস্তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে অগ্রগতি হলেও এসব প্রত্যাশা পুরোপুরি পূরণ হয়নি।

জরিপে দেশের সামগ্রিক দিকনির্দেশনা নিয়েও প্রশ্ন ছিল। সেখানে ফুটে উঠেছিল প্রবল হতাশা। ৭০ শতাংশ মনে করেছিলেন ধনীদের জীবনমান উন্নত হবে, কিন্তু মধ্যবিত্তদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিভক্ত মতামত ছিল। দরিদ্রদের জীবন আরও কঠিন হবে—এমনটাই ভাবতেন বেশির ভাগ। প্রায় ৮০ শতাংশ ধারণা করেছিলেন ব্যক্তিগত গোপনীয়তা কমবে, আর ৫৭ শতাংশ মনে করেছিলেন ব্যক্তিগত স্বাধীনতাও হ্রাস পাবে। অপরাধ বৃদ্ধি, পরিবেশের অবনতি এবং নৈতিক মূল্যবোধের পতনের আশঙ্কাও ছিল প্রবল। ৭১ শতাংশ মত দিয়েছিলেন, সন্তানকে ভালো মানুষ হিসেবে বড় করা আরও কঠিন হবে।

তবে কিছু আশাবাদী দিকও ছিল। অধিকাংশ আমেরিকান বিশ্বাস করতেন, জাতিগত সম্পর্কের উন্নতি হবে এবং চিকিৎসাসেবা আরও সহজলভ্য হবে—যদিও তা হবে ব্যয়বহুল।

গ্যালাপ আজও জরিপ চালিয়ে যাচ্ছে, যদিও এখন ল্যান্ডলাইনের ওপর নির্ভরতা কম। এই দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে জনমতও নাটকীয়ভাবে বদলে গেছে। ১৯৯৮ সালে যেখানে প্রায় ৬০ শতাংশ আমেরিকান দেশের গতিপথ নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন, বর্তমানে সেই হার নেমে এসেছে মাত্র ২৪ শতাংশে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পুতিনের বাসভবনে ড্রোন হামলার অভিযোগ—‘মিথ্যা’ বলছে ইউক্রেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউক্রেনের ভলোদিমির জেলেনস্কি ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি
ইউক্রেনের ভলোদিমির জেলেনস্কি ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন—এমন অভিযোগ করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে পুরোপুরি ‘মিথ্যা ও সাজানো’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই হামলার কারণে চলমান শান্তি আলোচনায় রাশিয়ার অবস্থানের ‘পরিবর্তন বা পুনর্বিবেচনা’ করা হতে পারে। তবে মস্কো এখনই আলোচনা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে না।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন সের্গেই লাভরভের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, গতকাল রোববার রাত থেকে আজ সোমবার ভোর পর্যন্ত পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ৯১টি দূরপাল্লার ড্রোন হামলা চালায় ইউক্রেন। রুশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সবকটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। তবে এতে কোনো হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি।

লাভরভ হুমকি দিয়ে বলেন, ইউক্রেনের এমন হঠকারী কর্মকাণ্ডের জবাব দেওয়া হবে। রুশ সামরিক বাহিনী ইতিমধ্যে পাল্টা হামলার জন্য লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করে ফেলেছে। তবে হামলার সময় প্রেসিডেন্ট পুতিন নোভগোরোদের ওই বাসভবনে ছিলেন কি না, তা স্পষ্ট করা হয়নি।

ফ্লোরিডায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক শেষ করে ইউরোপে ফেরার পথে জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, ‘রাশিয়া আবারও ভয়ংকর সব মিথ্যা বিবৃতি দিচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক অগ্রগতির সাফল্য নষ্ট করতেই এমন নাটক সাজানো হচ্ছে। তারা মূলত কিয়েভের সরকারি ভবনগুলোতে বড় ধরনের হামলার ক্ষেত্র তৈরি করার জন্য এই অজুহাত দিচ্ছে।’

জেলেনস্কি জানান, ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার প্রায় ৯০ শতাংশ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, যা রাশিয়াকে বিচলিত করে তুলেছে।

এদিকে ক্রেমলিন বলছে, আজ প্রেসিডেন্ট পুতিন টেলিফোনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এই ড্রোন হামলার বিষয়টি জানিয়েছেন। পুতিন ট্রাম্পকে বলেছেন, এই হামলার পর রাশিয়া তাদের শান্তি আলোচনার শর্তগুলো পুনরায় খতিয়ে দেখবে।

রুশ গণমাধ্যমগুলো ক্রেমলিনের সহকারী ইউরি উশাকভের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, এই খবর শুনে ট্রাম্প ‘বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ’ হয়েছেন। তবে হোয়াইট হাউস থেকে এই ফোনালাপকে কেবল ‘ইতিবাচক’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে, বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তাইওয়ানকে ঘিরে ধরেছে চীনের যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান ও ড্রোন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মহড়ায় সরাসরি গুলির অনুশীলনও করা হচ্ছে। ছবি: চীনের পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ড
মহড়ায় সরাসরি গুলির অনুশীলনও করা হচ্ছে। ছবি: চীনের পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ড

তাইওয়ানকে ঘিরে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া শুরু করেছে চীন। সোমবার শুরু হওয়া এই মহড়ায় যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান, ড্রোন ও সরাসরি গোলাবর্ষণও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ‘জাস্টিস মিশন ২০২৫’ নামের এই অভিযানে তাইওয়ানকে চারদিক থেকে ঘিরে সাতটি সামুদ্রিক অঞ্চলে সমন্বিত স্থল, নৌ ও আকাশ মহড়া চালানো হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি এখন পর্যন্ত তাইওয়ানকে লক্ষ্য করে চীনের সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে আক্রমণাত্মক সামরিক প্রদর্শন।

চীনের পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ড জানিয়েছে—মহড়ায় স্থল ও সমুদ্রের লক্ষ্যবস্তুর ওপর সিমুলেটেড হামলা, পাশাপাশি তাইওয়ানের প্রধান বন্দরগুলো অবরোধ করার অনুশীলন করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে তাইওয়ানকে বিচ্ছিন্ন করতে বা চাপের মুখে ফেলতে এই ধরনের অবরোধ ব্যবহৃত হতে পারে বলে মনে করছেন সামরিক বিশ্লেষকেরা। সরাসরি গোলাবর্ষণের মহড়া মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) পর্যন্ত চলবে এবং আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় এবার তাইওয়ানের আরও কাছাকাছি ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল ঘোষণা করা হয়েছে।

এই মহড়ার ফলে বেসামরিক বিমান ও নৌ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন তাদের ফ্লাইটের রুট পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে এবং তাইওয়ানের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বিকল্প আকাশপথ ব্যবহারের প্রস্তুতি নিয়েছে। চীনা সামরিক কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, এই মহড়া ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতাপন্থী শক্তি’ ও ‘বিদেশি হস্তক্ষেপের’ বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কবার্তা।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি তাইওয়ানের কাছে ১১.১ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যা ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্যাকেজ। এতে রয়েছে ৮২টি হিমার্স রকেট লঞ্চার, ৪২০টি দূরপাল্লার এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র, স্বচালিত হাউইটজার, উন্নত ড্রোন ব্যবস্থা ও অ্যান্টি-আর্মার অস্ত্র। বেইজিং এই অস্ত্রচুক্তিকে তীব্রভাবে নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এতে তাইওয়ান একটি ‘বারুদের স্তূপে’ পরিণত হচ্ছে।

তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মহড়া চলাকালে তাদের দ্বীপভূমির চারপাশে ৮৯টি চীনা সামরিক বিমান, ১৪টি নৌজাহাজ ও ১৪টি কোস্ট গার্ড জাহাজ শনাক্ত করা হয়েছে। কিছু চীনা জাহাজ তাইওয়ানের উপকূলের খুব কাছাকাছি অবস্থানে এসে চোখ রাঙাচ্ছে। এই প্রেক্ষিতে সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রেখেছে তাইওয়ান।

চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম জানিয়েছে, মহড়ার মূল লক্ষ্য তাইওয়ানের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর—উত্তরের কিলুং ও দক্ষিণের কাওশিয়ুং বন্ধ করে দেওয়ার সক্ষমতা পরীক্ষা। চীন তাইওয়ানকে নিজের ভূখণ্ড দাবি করলেও তাইওয়ান বলছে, দ্বীপটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণের অধিকার শুধু সেখানকার জনগণেরই আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

১৭ বছরের সাজার রায় চ্যালেঞ্জ করে ইমরান খান ও বুশরা বিবির আপিল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি। ছবি: এএফপি
ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি। ছবি: এএফপি

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি বর্তমানে কারাগারে। তোশাখানা দুর্নীতির মামলায় তাঁরা দুজনই সাজা খাটছেন। এর মধ্যে ২০ ডিসেম্বর তোশাখানা দুর্নীতির নতুন মামলায় তাঁদের আরও ১৭ বছর করে কারাদণ্ড দেন দেশটির একটি বিশেষ আদালত। এই রায় চ্যালেঞ্জ করে আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) ইসলামাবাদ হাইকোর্টে (আইএইচসি) পৃথক দুটি আপিল করেছেন ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি।

আপিল আবেদনে ইমরান খান ও বুশরা বিবির আইনজীবীরা দাবি করেছেন, এই সাজা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ইমরান খানকে জাতীয় রাজনীতি থেকে দূরে রাখতেই এ ‘পরিকল্পিত’ রায় দেওয়া হয়েছে। আইনজীবীরা ইমরান খান ও বুশরা বিবির পক্ষে কিছু যুক্তি উত্থাপন করেছেন।

আইনজীবীদের দাবি, ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এফআইএ) কোনো এফআইআর ছাড়াই ইমরান খান ও বুশরা বিবির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। এর মাত্র দুই দিনের মাথায় তড়িঘড়ি করে চালানো তদন্তের ভিত্তিতে এই মামলা হয়, যা স্বচ্ছ বিচারের পরিপন্থী।

আপিল আবেদনে বলা হয়েছে, তোশাখানাসংক্রান্ত এটি চতুর্থ মামলা। একই বিষয়ে বারবার মামলা করা আইনের লঙ্ঘন এবং এটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে করা হয়েছে, যাতে ইমরান খানকে দীর্ঘদিন কারাগারে আটকে রাখা যায়।

আইনজীবীদের দাবি, ২০১৮ সালের তোশাখানা নীতিমালা অনুযায়ী নির্ধারিত মূল্যের ৫০ শতাংশ পরিশোধ করেই উপহারগুলো রাখা হয়েছিল। এখানে কোনো ধরনের বিশ্বাসভঙ্গ বা ‘ক্রিমিনাল ব্রিচ অব ট্রাস্ট’ ঘটেনি।

আপিলে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, পাকিস্তান পেনাল কোড অনুযায়ী ইমরান খান ও বুশরা বিবি এই উপহার নেওয়ার সময় প্রচলিত সংজ্ঞায় ‘পাবলিক সার্ভেন্ট’ ছিলেন না। বিশেষ করে, বুশরা বিবি একজন গৃহিণী হিসেবে কোনো সরকারি পদের দায়িত্বে ছিলেন না।

প্রসঙ্গত, তোশাখানা মামলাটি মূলত ২০২১ সালের মে মাসে সৌদি আরব সফরকালে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের দেওয়া একটি দামি বুলগারি জুয়েলারি সেট নিয়ে। প্রায় ৮ কোটি রুপি মূল্যের এই নেকলেস, ব্রেসলেট, আংটি ও কানের দুলের সেটটি ইমরান দম্পতি মাত্র ২৯ লাখ রুপি পরিশোধ করে নিজের কাছে রেখেছিলেন।

এই মামলায় পাকিস্তানের ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির (এআইএ) বিশেষ আদালতের বিচারক শাহরুখ আরজুমান্দ তাঁদের প্রত্যেককে প্রথমে বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড, এরপর দুর্নীতিবিরোধী আইনের আওতায় সাত বছরের কারাদণ্ড এবং ১ কোটি ৬৪ লাখ রুপি জরিমানা করেছিলেন।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালে সংসদীয় অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন ইমরান খান। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা করা হয়। তিনি ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী আছেন। বর্তমানে ইমরান খান ১৯ কোটি পাউন্ডের দুর্নীতির মামলায় ১৪ বছরের সাজা খাটছেন। বুশরা বিবিও একই মামলায় সাত বছরের সাজাপ্রাপ্ত।

ইমরানের দল পিটিআইয়ের দাবি, তোশাখানা মামলার বিচারপ্রক্রিয়া ‘ক্যাঙারু কোর্টে’র মতো রুদ্ধদ্বার কক্ষে সম্পন্ন হয়েছে। এটি ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত