Ajker Patrika

শিশুদের নিয়ে যাচ্ছে নেকড়ে, উদ্বেগে ভারতের ৩০ গ্রামের মানুষ

শিশুদের নিয়ে যাচ্ছে নেকড়ে, উদ্বেগে ভারতের ৩০ গ্রামের মানুষ

উত্তর প্রদেশ, ভারত। ১৭ আগস্টের রাত। চার বছরের সন্ধ্যা তাদের মাটির ঘরটির বাইরে ঘুমিয়ে ছিল। এ সময় হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলে গোটা গ্রাম নিমজ্জিত হলো অন্ধকারে।

‘আলো নিভে যাওয়ার দুই মিনিটের মধ্যে আক্রমণ করে তারা। আমরা কী ঘটেছে তা যখন বুঝলাম ততক্ষণে ওকে নিয়ে গেছে নেকড়েরা।’ বলেন মেয়েটির মা সুনিতা।

পরের দিন একটি আখ খেতের মাঝখানে মেলে সন্ধ্যার মৃতদেহ। জায়গাটা তাদের বাড়ি আধা কিলোমিটারের মতো দূরে।

এই ঘটনার কয়েক দিন আগে আগস্ট মাসেই আরেকটি কাণ্ড হয় পাশের গ্রামে। আট বছরের উৎকর্ষ কুঁড়েতে একটি মশারির ভেতরে শুয়ে ছিল। এ সময়ই তার মা ঘরের বাইরে থেকে দেখেন একটি নেকড়ে গুটিসুটি মেরে ভেতরে ঢুকছে।

‘প্রাণীটি ছায়ার আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে দ্রুত সামনে এগুলো। আমি চিৎকার দিলাম, “আমার ছেলেকে ছেড়ে দাও”। প্রতিবেশীরা ছুটে এল। নেকড়েটিও পালাল।’ স্মৃতিচারণ করেন উৎকর্ষের মা।

মধ্য এপ্রিল থেকে বাহরাইচ জেলার ৩০টির মতো গ্রামের মানুষদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে নেকড়ের একের পর এক আক্রমণ। নেপাল সীমান্তবর্তী এই এলাকাটিতে তারপর থেকে নয়টি শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্ককে তুলে নিয়ে হত্যা করেছে নেকড়ে। এদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট যে সে এক বছরের একটি ছেলে শিশু এবং সবচেয়ে বয়স্ক জন ৪৫ বছরের এক নারী। নেকড়ের আক্রমণে আহত হওয়া মানুষের সংখ্যাও কম নয়, অন্তত ৩৪।

আতঙ্ক ও উদ্বেগ গ্রাস করেছে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের। অনেক গ্রামের বাড়িতেই তালা নেই। শিশুদের ঘরে রেখে পুরুষেরা রাতে অন্ধকার ও আধ-আলোকিত রাস্তায় টহল দিচ্ছে। কর্তৃপক্ষ ড্রোন এবং ক্যামেরা স্থাপনের পাশাপাশি ফাঁদ বসিয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। নেকড়েদের ভয় দেখানোর জন্য আতশবাজিও ব্যবহার করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত তিনটি নেকড়েকে ধরে চিড়িয়াখানায় পাঠানো হয়েছে।

মানুষের ওপর নেকড়েদের এ ধরনের আক্রমণ কিন্তু অত্যন্ত বিরল। আর যেগুলো হয় তার বেশির ভাগের জন্য দায়ী জলাতঙ্ক সংক্রামিত নেকড়ে। এ ধরনের উন্মত্ত নেকড়ে সাধারণত শিকার না খেয়ে একাধিক মানুষকে একবারে আক্রমণ করে বসে।

নরওয়েজিয়ান ইনস্টিটিউট ফর নেচার রিসার্চ ভারতসহ ২১ দেশে ২০০২ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত নেকড়ে আক্রমণের ওপর একটি গবেষণা করেছে। এতে ৪৮৯টি আক্রমণের তুলনামূলক নির্ভরযোগ্য তথ্য মেলে। এর মধ্যে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে ২৬টি।

গত ৫০ বছরের বেশি সময়ে উত্তর আমেরিকায় নেকড়ের আক্রমণে নিশ্চিত দুটি মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে বলে বিবিসিকে জানিয়েছে বিখ্যাত আমেরিকান জীববিদ ও নেকড়ে বিশেষজ্ঞ ডেভ মেচ। অথচ গোটা উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন দেশে প্রায় ৭০ হাজার নেকড়ের বিচরণ আছে।

এদিকে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বুনো নেকড়ের সংখ্যা তিন হাজার ১০০-র আশপাশে। কিন্তু তাহলে বাহরাইচে নেকড়ের এমন অপ্রত্যাশিত আক্রমণের রহস্য কী?

2.-wolf-villageএকটি নদী ও জঙ্গলের মাঝখানে অবস্থিত বাহরাইচের কিছু কিছু অংশ নেকড়ের স্বাভাবিক বিচরণভূমি। ঘাঘারা নদীর প্লাবনভূমিতে জেলাটির মোট জনসংখ্যা ৩৫ লাখ। প্রতি বছরই বন্যার ঝুঁকিতে থাকে এলাকাটি।

বর্ষায় ভারী বর্ষণ ও বন্যার কারণে ভূ-প্রকৃতির ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে এলাকাটিতে। নদী দু-কূল ছাপিয়ে বনকে প্লাবিত করে। এতে স্বাভাবিকভাবেই নেকড়েদের খাবারের সন্ধানে নিজেদের বসতি থেকে বেরিয়ে আসতে হয়। এমনিতে নেকড়ের খাবার তালিকায় আছে কৃষ্ণসার মৃগ, চিংকারা (ভারতীয় গেজেলে), বুনো খরগোশসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী।

‘জলবায়ু পরিবর্তন ধীরে ধীরে সংঘটিত একটি প্রক্রিয়া। কিন্তু বন্যা নেকড়েদের আবাসস্থলের ওপর আঘাত হানতে পারে, যা খাদ্যের সন্ধানে তাদের মানব বসতিতে চলে আসতে বাধ্য করে।’ বলেন লখ্‌নৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ওয়াইল্ড সায়েন্সের অমিতা কানাউজিয়া।

উত্তর প্রদেশের গ্রামগুলিতে ১৯৯৬ সালে নেকড়ের আক্রমণে অনেক শিশুর মৃত্যু হয়। এটা নিয়ে তদন্ত করতে গিয়ে বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা আবিষ্কার করেন, এই এলাকাগুলোতে শিশুদের দেখভাল হয় কমই। নেকড়ের শিকার হওয়া বেশির ভাগ শিশু দরিদ্র পরিবারের সন্তান। অনেক ক্ষেত্রেই বাবা নেই বা চলে গেছে, মা-ই দেখাশোনা করতেন একা।

দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত এ সব ভারতীয় গ্রামে প্রায়ই শিশুদের তুলনায় বেশি সুরক্ষিত অবস্থায় থাকে গবাদিপশুরা। একটি ক্ষুধার্ত নেকড়ের যখন স্বাভাবিক শিকারের ঘাটতি থাকে এবং গবাদিপশুর নাগাল পাওয়াটা কঠিন হয়, তখন এই শিশুরা তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়।

3.-wolf‘বিশ্বের আর কোথাও আমরা শিশুদের ওপর এমন নেকড়ের আক্রমণের প্রত্যক্ষ দেখিনি।’ বলেন বিখ্যাত ভারতীয় গবেষক এবং সংরক্ষণবিদ যাদবেন্দ্রদেব ঝালা।

এবারের নেকড়ের এই আক্রমণ খুব সম্ভব গত চার দশকে নেকড়ের চতুর্থ এম বড় আক্রমণ। ১৯৮১-৮২ সালে বিহারে নেকড়ের আক্রমণে অন্তত ১৩টি শিশুর মৃত্যু হয়। ১৯৯৩ থেকে ৯৫ সালের মধ্যে ৮০টি শিশু আক্রান্ত হয়। হাজারীবাগ জেলার ওই অঞ্চলে বিচরণ করা নেকড়ের পাঁচটি দলকে ঘটনার জন্য দায়ী করা হয়।

তবে সবচেয়ে ভয়ংকর আক্রমণটি চলে ১৯৯৬ সালের আট মাসেরও বেশি সময় ধরে। এ সময় উত্তর প্রদেশের ৫০টির বেশি গ্রামের অন্তত ৭৬টি শিশু আক্রান্ত হয়। এতে প্রাণহানির সংখ্যা ৩৮। কর্তৃপক্ষ ১১টি নেকড়েকে মারার পর বন্ধ হয় শিশু হত্যা। সংবাদমাধ্যম ওই প্রাণীগুলোকে, ‘মানুষখেকো নেকড়ে’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়।

মি. ঝালা এবং তাঁর সহকর্মী দিনেশ কুমার ১৯৯৬ সালের ওই হত্যাকাণ্ডগুলো নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেছেন। আর উত্তর প্রদেশের এবারের আক্রমণের সঙ্গে ওই ঘটনার বেশ কিছু মিল পেয়েছেন তাঁরা।

দুটি ক্ষেত্রেই শিশুরা আক্রমণের শিকার হয়েছে এবং তাদের শরীরের আংশিক খায় নেকড়ে। তাদের গলায় কামড়ের চিহ্ন ও শরীরের বিভিন্ন অংশে ক্ষত পাওয়া গেছে। বেশির ভাগ আক্রমণই ঘটেছে রাতে। গ্রামের মাঝখানে ঘরের বাইরে ঘুমন্ত শিশুদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ভুক্তভোগীদের প্রায়ই পরে খোলা জায়গায় যেমন ফসলের খেত বা তৃণভূমিতে খুঁজে পাওয়া যায়।

নেপালের সীমান্তবর্তী একটি জেলা বাহরাইচ। ছবি: সংগৃহীতএখনকার  বাহরাইচের মতো, ১৯৯৬ সালের নেকড়ের আক্রমণ নদী তীরের কাছাকাছি গ্রামে সেখানে হয়েছিল। এসব গ্রাম আবার ধান ও আখের খেত এবং জলাভূমি দ্বারা বেষ্টিত। উভয় ক্ষেত্রেই বেশি মানুষের বসতি আছে এমন গ্রাম এবং দরিদ্র চাষি পরিবারের অসহায় শিশুরা আক্রান্ত হয়েছে।

একটি নেকড়ে নাকি গোটা একটি দল এবারের আক্রমণে জড়িত তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে ৩০ বছরের নেকড়ে নিয়ে গবেষণা থেকে ঝালা মনে করেন ১৯৯৬ সালের মতো এবারও খলনায়ক একটি মাত্র নেকড়ে। গ্রামবাসীরা দিনে জমিতে পাঁচ থেকে ছয়টি নেকড়ের দল দেখে। তবে উৎকর্ষের মা একটি নেকড়েকে ঘরে ঢুকে আক্রমণের চেষ্টা করতে দেখেন।

বন্যপ্রাণী গবেষকেরা জানান, শত শত বছর ধরে ভারতে নেকড়ে ও মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করছে। এই এলাকার মানুষের ঐতিহ্যগত সহনশীলতা সাহায্য করেছে এ ক্ষেত্রে। এই দীর্ঘস্থায়ী সহাবস্থান নেকড়েদের সঙ্গে বিশেষ করে গবাদিপশু নিয়ে ঘন ঘন দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হলেও এখনো টিকে আছে প্রাণীটি।

তবে সময় বদলে যাচ্ছে। বিশেষ করে নেকড়ের নতুন এই আক্রমণ নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। ঝালার মতো বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা আপাতত কিছু সতর্কতার কথা বলেছেন। এর মধ্যে আছে আক্রান্ত গ্রামগুলোর শিশুদের ঘরের ভেতরে রাখা, ঘরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মজবুত না হলে রাতে শোয়ার সময় বড়দের মাঝখানে রাখা এবং রাতে টয়লেটে গেলে শিশুদের সঙ্গে একজন বড় কেউ থাকা।

‘যতক্ষণ না আমরা এই আক্রমণগুলির পেছনের সঠিক কারণ নির্ণয় করতে পারছি, সে পর্যন্ত এ সতর্কতাগুলি মানুষকে সুরক্ষিত রাখতে জরুরি।’ বলেন ঝালা। এদিকে বাহরাইচের নেকড়ের আক্রমণের ঝুঁকিতে থাকা গ্রামগুলোর নতুন একটি রাত শুরু হয় অমঙ্গল আশঙ্কা নিয়ে।

বিবিসি থেকে অনুবাদ করেছেন ইশতিয়াক হাসান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইয়েমেন সংঘাতে মুখোমুখি অবস্থানে সৌদি ও আরব আমিরাত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আমিরাত সমর্থিত ‘সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল’-এর সৈন্যরা। ছবি: দ্য টাইমস
আমিরাত সমর্থিত ‘সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল’-এর সৈন্যরা। ছবি: দ্য টাইমস

ইয়েমেনের দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতে এবার নতুন মাত্রার উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এক সময় একই জোটে থাকা সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এখন কার্যত বিপরীত অবস্থানে। সাম্প্রতিক বিমান হামলা ও কূটনৈতিক বক্তব্যে এই বিভাজন প্রকাশ্যে এসেছে, যা ওই অঞ্চলের যুদ্ধকে আরও জটিল করে তুলছে।

যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, মঙ্গলবার ভোরে সৌদি আরব ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলে বিমান হামলা চালায়। এই হামলার লক্ষ্য ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত–সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ‘সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল’ (এসটিসি)।

সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের দাবি—হাদরামাউতের বন্দরনগরী মুকাল্লায় এসটিসির জন্য অস্ত্র ও সাঁজোয়া যান নামানো হচ্ছিল, যা তাদের ‘সীমারেখা’ অতিক্রমের সমান। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, জাহাজগুলোর ট্র্যাকিং সিস্টেম বন্ধ ছিল এবং এসব অস্ত্র তাৎক্ষণিক নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করছিল।

অন্যদিকে, এসটিসি এই হামলা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের দাবি, হামলায় হাদরামাউতে মোতায়েন এসটিসির অভিজাত ইউনিটগুলোকে লক্ষ্য করা হয়েছে। যদিও সৌদি কর্তৃপক্ষ বলছে, রাতের আঁধারে হামলা চালানো হয়েছে যাতে বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি না হয়।

এই সংঘর্ষ সৌদি আরব ও ইউএইর মধ্যে বাড়তে থাকা মতবিরোধকে প্রকাশ্যে এনেছে। হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন একসঙ্গে লড়াই করলেও, ইয়েমেনের ভেতরে দুই দেশ ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠীকে সমর্থন দিয়ে আসছে। সৌদি আরবের অভিযোগ, এসটিসিকে আমিরাতের সমর্থন ইয়েমেন ও পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। রিয়াদ একে নিজেদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি হিসেবেও উল্লেখ করেছে।

এই উত্তেজনার মধ্যেই ইয়েমেনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের প্রেসিডেনশিয়াল লিডারশিপ কাউন্সিলের প্রধান রাশাদ আল-আলিমি আরব আমিরাতের সঙ্গে যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তি বাতিল করেন এবং দেশটি থেকে আমিরাতের সেনা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে তিনি সাময়িক সময়ের জন্য আকাশ ও নৌ অবরোধও ঘোষণা করেন।

বিশ্লেষকদের মতে, দক্ষিণ ইয়েমেনে এসটিসির দ্রুত সম্প্রসারণ দেশটিকে কার্যত বিভক্ত করার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। দক্ষিণে গুরুত্বপূর্ণ তেলসমৃদ্ধ অঞ্চল ও বন্দর, আর উত্তরে রাজধানী সানাসহ হুতিদের শক্ত ঘাঁটি—এই বাস্তবতায় ইয়েমেন আবারও এক গভীর ও বহুমাত্রিক সংকটের দিকে এগোচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘২০২৫’ নিয়ে ১৯৯৮ সালে করা আমেরিকানদের ভবিষ্যদ্বাণী কতটুকু মিলেছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০: ৫৭
ছবি: সিএনএন
ছবি: সিএনএন

১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি ও সমাজ বাস্তবতা ছিল একেবারেই ভিন্ন। সেই বছর প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন অভিশংসন প্রক্রিয়ার মুখে পড়েছিলেন, অস্কারে রাজত্ব করেছিল টাইটানিক, আর অধিকাংশ আমেরিকানের ঘরে ছিল ল্যান্ডলাইন ফোন। ঠিক সেই সময়েই গ্যালাপ ও ইউএসএ টুডে এক ব্যতিক্রমী জরিপ চালায়। ল্যান্ডলাইন ফোনে ১ হাজার ৫৫ জন আমেরিকানের সঙ্গে কথা বলে জানতে চাওয়া হয়—দূর ভবিষ্যৎ ‘২০২৫ সাল’ কেমন হবে বলে তাঁরা মনে করেন।

সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সিএনএন জানিয়েছে, ২০২৫ সাল নিয়ে সে সময় মার্কিনরা যে ভবিষ্যদ্বাণীগুলো করেছিল, সেগুলো সংরক্ষিত আছে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রোপার সেন্টারের জরিপ আর্কাইভে। ২০২৫ সালের শেষ প্রান্তে এসে এখন দেখা যাচ্ছে—সেই সব অনুমানের কোনোটা মিলেছে, আর কোনোটা মেলেনি।

এ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সেই সময়ের অনেক পূর্বাভাসই ছিল বিস্ময়করভাবে সঠিক। অধিকাংশ আমেরিকান তখনই ধারণা করেছিলেন, আগামী ২৭ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে একজন কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন, সমকামী বিবাহ বৈধ ও স্বাভাবিক হয়ে উঠবে এবং একটি ‘মারাত্মক নতুন রোগ’ বিশ্বকে নাড়িয়ে দেবে। বাস্তবে বারাক ওবামার প্রেসিডেন্ট হওয়া, সমকামী বিবাহের আইনি স্বীকৃতি এবং করোনা মহামারি সেই অনুমানগুলোকে সত্য প্রমাণ করেছে।

একইভাবে অনেকেই সেই সময় সঠিকভাবে ধারণা করেছিলেন, সাধারণ মানুষের জন্য মহাকাশ ভ্রমণ খুব সাধারণ বিষয় হয়ে উঠবে না এবং ভিনগ্রহের প্রাণীর সঙ্গে মানুষের সরাসরি যোগাযোগ ঘটবে না।

তবে কিছু ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবতার সঙ্গে মেলেনি। জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ মনে করেছিলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র একজন নারী প্রেসিডেন্ট পাবে—যা এখনো ঘটেনি। অর্ধেকের বেশি মানুষ আশা করেছিলেন ক্যানসারের নিরাময় আবিষ্কৃত হবে এবং ৬১ শতাংশ মনে করেছিলেন মানুষ নিয়মিতভাবে ১০০ বছর বয়স পর্যন্ত বাঁচবে। বাস্তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে অগ্রগতি হলেও এসব প্রত্যাশা পুরোপুরি পূরণ হয়নি।

জরিপে দেশের সামগ্রিক দিকনির্দেশনা নিয়েও প্রশ্ন ছিল। সেখানে ফুটে উঠেছিল প্রবল হতাশা। ৭০ শতাংশ মনে করেছিলেন ধনীদের জীবনমান উন্নত হবে, কিন্তু মধ্যবিত্তদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিভক্ত মতামত ছিল। দরিদ্রদের জীবন আরও কঠিন হবে—এমনটাই ভাবতেন বেশির ভাগ। প্রায় ৮০ শতাংশ ধারণা করেছিলেন ব্যক্তিগত গোপনীয়তা কমবে, আর ৫৭ শতাংশ মনে করেছিলেন ব্যক্তিগত স্বাধীনতাও হ্রাস পাবে। অপরাধ বৃদ্ধি, পরিবেশের অবনতি এবং নৈতিক মূল্যবোধের পতনের আশঙ্কাও ছিল প্রবল। ৭১ শতাংশ মত দিয়েছিলেন, সন্তানকে ভালো মানুষ হিসেবে বড় করা আরও কঠিন হবে।

তবে কিছু আশাবাদী দিকও ছিল। অধিকাংশ আমেরিকান বিশ্বাস করতেন, জাতিগত সম্পর্কের উন্নতি হবে এবং চিকিৎসাসেবা আরও সহজলভ্য হবে—যদিও তা হবে ব্যয়বহুল।

গ্যালাপ আজও জরিপ চালিয়ে যাচ্ছে, যদিও এখন ল্যান্ডলাইনের ওপর নির্ভরতা কম। এই দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে জনমতও নাটকীয়ভাবে বদলে গেছে। ১৯৯৮ সালে যেখানে প্রায় ৬০ শতাংশ আমেরিকান দেশের গতিপথ নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন, বর্তমানে সেই হার নেমে এসেছে মাত্র ২৪ শতাংশে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পুতিনের বাসভবনে ড্রোন হামলার অভিযোগ—‘মিথ্যা’ বলছে ইউক্রেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ২৭
ইউক্রেনের ভলোদিমির জেলেনস্কি ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি
ইউক্রেনের ভলোদিমির জেলেনস্কি ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন—এমন অভিযোগ করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে পুরোপুরি ‘মিথ্যা ও সাজানো’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই হামলার কারণে চলমান শান্তি আলোচনায় রাশিয়ার অবস্থানের ‘পরিবর্তন বা পুনর্বিবেচনা’ করা হতে পারে। তবে মস্কো এখনই আলোচনা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে না।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন সের্গেই লাভরভের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, গতকাল রোববার রাত থেকে আজ সোমবার ভোর পর্যন্ত পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ৯১টি দূরপাল্লার ড্রোন হামলা চালায় ইউক্রেন। রুশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সবকটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। তবে এতে কোনো হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি।

লাভরভ হুমকি দিয়ে বলেন, ইউক্রেনের এমন হঠকারী কর্মকাণ্ডের জবাব দেওয়া হবে। রুশ সামরিক বাহিনী ইতিমধ্যে পাল্টা হামলার জন্য লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করে ফেলেছে। তবে হামলার সময় প্রেসিডেন্ট পুতিন নোভগোরোদের ওই বাসভবনে ছিলেন কি না, তা স্পষ্ট করা হয়নি।

ফ্লোরিডায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক শেষ করে ইউরোপে ফেরার পথে জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, ‘রাশিয়া আবারও ভয়ংকর সব মিথ্যা বিবৃতি দিচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক অগ্রগতির সাফল্য নষ্ট করতেই এমন নাটক সাজানো হচ্ছে। তারা মূলত কিয়েভের সরকারি ভবনগুলোতে বড় ধরনের হামলার ক্ষেত্র তৈরি করার জন্য এই অজুহাত দিচ্ছে।’

জেলেনস্কি জানান, ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার প্রায় ৯০ শতাংশ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, যা রাশিয়াকে বিচলিত করে তুলেছে।

এদিকে ক্রেমলিন বলছে, আজ প্রেসিডেন্ট পুতিন টেলিফোনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এই ড্রোন হামলার বিষয়টি জানিয়েছেন। পুতিন ট্রাম্পকে বলেছেন, এই হামলার পর রাশিয়া তাদের শান্তি আলোচনার শর্তগুলো পুনরায় খতিয়ে দেখবে।

রুশ গণমাধ্যমগুলো ক্রেমলিনের সহকারী ইউরি উশাকভের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, এই খবর শুনে ট্রাম্প ‘বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ’ হয়েছেন। তবে হোয়াইট হাউস থেকে এই ফোনালাপকে কেবল ‘ইতিবাচক’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে, বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তাইওয়ানকে ঘিরে ধরেছে চীনের যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান ও ড্রোন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মহড়ায় সরাসরি গুলির অনুশীলনও করা হচ্ছে। ছবি: চীনের পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ড
মহড়ায় সরাসরি গুলির অনুশীলনও করা হচ্ছে। ছবি: চীনের পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ড

তাইওয়ানকে ঘিরে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া শুরু করেছে চীন। সোমবার শুরু হওয়া এই মহড়ায় যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান, ড্রোন ও সরাসরি গোলাবর্ষণও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ‘জাস্টিস মিশন ২০২৫’ নামের এই অভিযানে তাইওয়ানকে চারদিক থেকে ঘিরে সাতটি সামুদ্রিক অঞ্চলে সমন্বিত স্থল, নৌ ও আকাশ মহড়া চালানো হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি এখন পর্যন্ত তাইওয়ানকে লক্ষ্য করে চীনের সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে আক্রমণাত্মক সামরিক প্রদর্শন।

চীনের পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ড জানিয়েছে—মহড়ায় স্থল ও সমুদ্রের লক্ষ্যবস্তুর ওপর সিমুলেটেড হামলা, পাশাপাশি তাইওয়ানের প্রধান বন্দরগুলো অবরোধ করার অনুশীলন করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে তাইওয়ানকে বিচ্ছিন্ন করতে বা চাপের মুখে ফেলতে এই ধরনের অবরোধ ব্যবহৃত হতে পারে বলে মনে করছেন সামরিক বিশ্লেষকেরা। সরাসরি গোলাবর্ষণের মহড়া মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) পর্যন্ত চলবে এবং আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় এবার তাইওয়ানের আরও কাছাকাছি ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল ঘোষণা করা হয়েছে।

এই মহড়ার ফলে বেসামরিক বিমান ও নৌ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন তাদের ফ্লাইটের রুট পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে এবং তাইওয়ানের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বিকল্প আকাশপথ ব্যবহারের প্রস্তুতি নিয়েছে। চীনা সামরিক কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, এই মহড়া ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতাপন্থী শক্তি’ ও ‘বিদেশি হস্তক্ষেপের’ বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কবার্তা।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি তাইওয়ানের কাছে ১১.১ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যা ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্যাকেজ। এতে রয়েছে ৮২টি হিমার্স রকেট লঞ্চার, ৪২০টি দূরপাল্লার এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র, স্বচালিত হাউইটজার, উন্নত ড্রোন ব্যবস্থা ও অ্যান্টি-আর্মার অস্ত্র। বেইজিং এই অস্ত্রচুক্তিকে তীব্রভাবে নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এতে তাইওয়ান একটি ‘বারুদের স্তূপে’ পরিণত হচ্ছে।

তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মহড়া চলাকালে তাদের দ্বীপভূমির চারপাশে ৮৯টি চীনা সামরিক বিমান, ১৪টি নৌজাহাজ ও ১৪টি কোস্ট গার্ড জাহাজ শনাক্ত করা হয়েছে। কিছু চীনা জাহাজ তাইওয়ানের উপকূলের খুব কাছাকাছি অবস্থানে এসে চোখ রাঙাচ্ছে। এই প্রেক্ষিতে সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রেখেছে তাইওয়ান।

চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম জানিয়েছে, মহড়ার মূল লক্ষ্য তাইওয়ানের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর—উত্তরের কিলুং ও দক্ষিণের কাওশিয়ুং বন্ধ করে দেওয়ার সক্ষমতা পরীক্ষা। চীন তাইওয়ানকে নিজের ভূখণ্ড দাবি করলেও তাইওয়ান বলছে, দ্বীপটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণের অধিকার শুধু সেখানকার জনগণেরই আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত