Ajker Patrika

ম্যালরিই কি প্রথম এভারেস্ট জয়ী, ১০০ বছর পর বেরিয়ে এল নতুন তথ্য

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ২১ মে ২০২৪, ০০: ৪৫
ম্যালরিই কি প্রথম এভারেস্ট জয়ী, ১০০ বছর পর বেরিয়ে এল নতুন তথ্য

পর্বতারোহণের ইতিহাসে সম্ভবত এটিই সবচেয়ে বড় অমীমাংসিত রহস্য। সত্যি কি মানুষ প্রথম এভারেস্ট জয় করে ১৯৫৩ সালে? নাকি মৃত্যুর আগে দুঃসাহসী দুই পর্বতারোহী ১৯২৪ সালেই কাজটি করে গিয়েছেন।

ব্রিটিশ পর্বতারোহী জর্জ ম্যালরি এবং অ্যান্ড্রু স্যান্ডি আরভিনকে শেষ দেখা যায় ১৯২৪ সালের ৮ জুন। তখন তাঁরা চূড়া থেকে মাত্র ৮০০ ফুট নিচে। তারপরই মেঘের আড়ালে অদৃশ্য হয়ে যান তাঁরা। আর কখনোই দেখা মেলেনি।

১৯৯৯ সালে ম্যালরির মৃতদেহ যখন পাওয়া যায়, পর্বতারোহী ও পাহাড়প্রেমীদের আশার পারদ চূড়ায় গিয়ে ঠেকে, ম্যালরি–আরভিন সত্যি এভারেস্ট জয় করেছেন কিনা তার কোনো সূত্র নিশ্চয় এবার মিলবে! তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে ম্যালরির সঙ্গে ছিল না তাঁর বহন করা ক্যামেরাটি। আর আরভিনের মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যায়নি আজও।

তবে এই দুই পর্বতারোহী নিখোঁজের ১০০তম বার্ষিকীর দিন যখন ঘনিয়ে আসছে একজন গবেষক মনে করছেন, পর্বতারোহণের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় রহস্যটি তিনি সমাধান করেছেন।

অভিযানের আবহাওয়া সংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলো নিরীক্ষণ করে লেখক গ্রায়েম হয়ল্যান্ড এখন বিশ্বাস করছেন, ওই পর্বতারোহী জুটির ভাগ্যে কী ঘটেছে এবং মৃত্যুর আগে সত্যি তাঁরা পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়াটিতে পৌঁছেছিলেন কিনা সেটা তিনি শনাক্ত করতে পেরেছেন।

এভারেস্টের ওই অভিযাত্রী দলটির অপর এক সদস্যের দূরসম্পর্কের আত্মীয় হয়ল্যান্ড, ম্যালরি–আরভিন রহস্য সমাধানে এভারেস্টে নয়বার অভিযান চালিয়েছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, রহস্যের মূলে আছে বায়ুচাপ।

তাঁর আত্মীয় আরেক পর্বতারোহী, হাওয়ার্ড সোমারভেল একই অভিযানে চূড়ার ১ হাজার ফুটের মধ্যে পৌঁছে গেলেও অক্সিজেনের অভাবে পিছু হটতে বাধ্য হন। অভিযানের সময় আবহাওয়া পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব ছিল তাঁর।

চিকিৎসক হিসেবে ভারতে নিজের পেশায় ফিরে যাওয়ার আগে ১৯২৪ সালের অভিযানে আবহাওয়া সংক্রান্ত প্রতিবেদন পেশ করেন তিনি। এতে দেখা যায়, বেস ক্যাম্পে মানে যেখানে রিডিং নেন, সেখানে ৮ জুন সকাল থেকে ৯ জুনের মধ্যে বায়ুচাপ কমে যায়। এতে দেখা যায় বায়ুচাপ ১৬ দশমকি ২৫ এইচজি থেকে ১৫ দশমিক ৯৮–এ নেমে যায়। 

হয়ল্যান্ড বিশ্বাস করেন, এই পরিসংখ্যান চাপের ১০ মিলিবার পতনের সমান। এভারেস্টে আবহাওয়াজনিত মৃত্যু সাধারণত চূড়ায় বায়ুচাপ কমার সঙ্গে সম্পর্কিত। মাত্র ছয় মিলিবার চাপের পতন ১৯৯৬ সালের মতো ঘটনা ঘটানোর জন্য যথেষ্ট, যখন ২০ জন পর্বতারোহী আটকা পড়েন পর্বতে এবং তাঁদের মধ্যে আটজন মারা যান।

‘প্রবল ঝড়ের মধ্যে পর্বতারোহণ করছিলেন তাঁরা। শুধু তুষার ঝড় বললে ভুল হবে, এটা ছিল অনেকটা তুষার বোমা পতনের (স্নো বম্ব) মতো!’ সিএনএনকে বলেন হয়ল্যান্ড।

এভারেস্টে এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে হয়ল্যান্ডকেও। ‘এটা ভয়ংকর, তাপমাত্রা ব্যাপকভাবে কমে যাচ্ছে, আপনি শ্বাস নিতে হাঁপাচ্ছেন। এক হাজার নটিক্যাল গতিতে বাতাস বইছে। পরিচিত একজনের কথা জানি, যিনি এমন পরিস্থিতিতে উড়ে গিয়ে পর্বতের আরও ওপরে পড়েছিলেন।’ সিএনএনকে বলেন তিনি।
 
বায়ুচাপ কমে যাওয়ার অর্থ পর্বতের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার মতো, মানে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৬৫০ ফুট উচ্চতার পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। হয়ল্যান্ড একে ‘একটি অদৃশ্য মৃত্যুফাঁদ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

এভারেস্ট জয় করার আকাঙ্ক্ষায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলেন ম্যালরি। ছবি: এএফপিউত্তর–পশ্চিম রিজ ধরে ইতিমধ্যে প্রতিকূলতার মধ্যেই পর্বতে আরোহণ করছিলেন এ জুটি। ম্যালরি তাঁর স্ত্রীর কাছে একটি চিঠিতে লিখেছিলেন যে চূড়ায় পৌঁছার ৫০ ভাগের এক ভাগ সম্ভাবনা দেখছেন। হয়ল্যান্ড মনে করেন আসলে এটি ছিল ২০–১ এর মতো। তবে তাঁর ধারণা, তাঁদের কী আঘাত করতে যাচ্ছে সে সম্পর্কে কোনো ধারণাই দুই পর্বতারোহীর ছিল না।

‘ম্যালরি দেখেন নর্টন ও সোমারভেল ৪ জুন বাড়তি অক্সিজেনের সহায়তা ছাড়াই চূড়ার এক হাজার ফুটের মধ্যে পৌঁছে গিয়েছিলেন। কাজেই সরঞ্জামসহ চূড়া জয় সম্ভব হতেই পারে।’ প্রকাশিতব্য একটি বইয়ে তিনি লিখেছেন, ‘তিনি যেটা জানতেন না তা হলো, বায়ুচাপের পতন পর্বতটিকে আরও উঁচু করে তুলছে।’

ম্যালরি–আরভিন সিল্ক, তুলা এবং উলের পোশাক পরে ছিলেন। হয়ল্যান্ড পরিস্থিতি বোঝার জন্য এভারেস্ট অভিযানে একই ধরনের পোশাক পরেন। তিনি জানান, এ ধরনের জামাকাপড় খুব আরামদায়ক কিন্তু একটি তুষারঝড় বা প্রচণ্ড ঠান্ডায় রাতে টিকে থাকার মতো উষ্ণতা দেয় না।

পূর্বে, এটি অনুমান করা হয়েছিল যে এই জুটি এভারেস্ট জয় করে নেমে যাওয়ার পথে মারা গিয়েছিলেন। একে হয়ল্যান্ড ‘অতিরিক্ত আশা’ হিসেবেই দেখছেন।

‘বছরের পর বছর ধরে ম্যালরি এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছেছিলেন এটা প্রমাণের আপ্রাণ চেষ্টা করেছি আমি। প্রমাণ করতে চেয়েছিলাম ১৫তম নয় ১৬তম ব্রিটিশ হিসেবে আমি এভারেস্টের চূড়ায় আরোহণ করেছি। তবে দুর্ভাগ্যক্রমে বাস্তবতা ভিন্ন। আপনাকে মন বদলাতে হবে। একটা উইশফুল থিংকিং আঁকড়ে ধরে থাকতে পারেন না আপনি।’ বলেন তিনি।

হয়ল্যান্ডের আগে কেউ আবহাওয়ার প্রতিবেদন অতটা খুঁটিয়ে পরীক্ষা করেননি। লন্ডনের রয়্যাল জিওগ্রাফিক সোসাইটিতে আছে এগুলো।

শেষ পর্যন্ত পর্বতটিতে আরোহণ করেন নিউজিল্যান্ডের নাগরিক এডমন্ড হিলারি এবং নেপালের শেরপা তেনজিং নোরগে, ১৯৫৩ সালে। এটিই প্রথম নথিভুক্ত এভারেস্ট জয়।

১৯৩৩ সালে পার্সি উইন–হ্যারিস নামের এক পর্বতারোহী চূড়ার কাছে একটা কুঠার খুঁজে পান। অনুমান করা হয় এটি আরভিনের। ১৯৩৬ সালে ফ্রাঙ্ক স্মিথ নামের এক পর্বতারোহীর মনে হয় দূরে দুটি শরীর দেখতে পেয়েছেন তিনি। একটি টেলিস্কোপ ব্যবহার করে তিনি এটি দেখতে পান ৮ হাজার ১০০ মিটার বা ২৬ হাজার ৫৭৫ ফুটের আশপাশে। 

চীনা পর্বতারোহী ওয়াং হোংবাও ১৯৭৫ সালের অভিযানের সময় একটি শরীর দেখার কথা বলেন।

অবশেষে, ১৯৯৯ সালে হয়ল্যান্ডের পিড়াপিড়িতে হওয়া একটি অভিযানে ২৬ হাজার ৭০০ ফুট উচ্চতায় খুঁজে পাওয়া যায় ম্যালরির মৃতদেহ। যা ছিল চূড়া থেকে ২ হাজার ৩৩৫ ফুট নিচে। আমেরিকান পর্বতারোহী কনরাড অ্যাঙ্কার পর্বতের উত্তর ঢালে বরফে জমে যাওয়া এবং অক্ষতভাবে সংরক্ষিত এক মৃতদেহ আবিষ্কার করেন। যেখানে কুঠারটি পাওয়া গিয়েছিল এর কয়েক শ মিটার নিচে পাওয়া যায় মৃতদেহটি। 

মৃতদেহটির পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় কলারের একটি ট্যাগ দেখে। সেখানে লেখা ছিল— জি ম্যালরি। কোমরে দড়ির শক্ত দাগ পাওয়া যায় মৃতদেহটির। এতে বোঝা যায় আছড়ে পড়ার আগে দড়িতে বেঁধে আরভিনের সঙ্গে আটকানো ছিল তাঁর শরীর। মাথায়ও একটা গভীর ক্ষতচিহ্ন ছিল। ম্যালরির সঙ্গে কিছু খুঁটিনাটি জিনিসও মেলে। 

ম্যালরির স্ত্রী রুথ টার্নার ম্যালরি। ছবি: উইকিপিডিয়াএগুলোর মধ্যে ছিল একটি আল্টিমিটার, একটি চিরকুট ও পর্বতারোহণের সরঞ্জামের একটি রসিদ। ম্যালরির পকেটে  ছিল একজোড়া চশমা। যা থেকে বোঝা যায় যে, তিনি অন্ধকারে ছিলেন বা কম দেখছিলেন। 

তবে এমন কয়েকটি সূত্র পাওয়া গেল, যেটা তাঁরা সত্যি চূড়ায় পৌঁছেছিলেন কিনা, সে বিষয়টির আগাগোড়া রহস্যের জালে আটকে দিল। 

ম্যালরির সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর একটি ছবি ছিল। প্রতিজ্ঞা করেছিলেন ছবিটা চূড়ায় রেখে আসবেন। কিন্তু ওই ছবিটা খুঁজে পাওয়া গেল না। দুই অভিযাত্রী একটি ক্যামেরা নিয়েছিলেন সঙ্গে। ওটারও খোঁজ মেলেনি। 

অথচ এভারেস্টের নেশা পেয়ে না বসলে ম্যালরির জীবনটা অন্যরকমও হতে পারে। ওয়েস্ট কিরবি এবং এস্টাবর্নের বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেন ম্যালরি। তারপর উইনচেস্টার কলেজে গণিতে বৃত্তি পান। এখানেই পর্বত আরোহণের নেশা মাথায় চেপে বসে, সেই সঙ্গে ধীরে ধীরে এগোতে থাকেন নিয়তির দিকে। 

ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক করেন ম্যালরি। সেখানেই শিক্ষকতা করেন কিছুদিন। একই সঙ্গে পর্বতারোহণে আরও শাণিত করে তুলতে থাকেন নিজেকে। তারপর ব্রিটিশ সেনাদলে নাম লেখান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেন। যুদ্ধের পরই মাউন্ট এভারেস্ট পেয়ে বসল তাঁকে। জীবনের বাকি সময় পর্বতটা মোহাবিষ্ট করে রাখল ম্যালরিকে। 

১৯২১ সাল। নেপাল–তিব্বত সীমান্তে পর্বতটির চূড়ায় পৌঁছার একটি পথের খোঁজে প্রথম ব্রিটিশ অভিযাত্রী দলে নাম লেখান জর্জ ম্যালরি। দলনেতা ছিলেন চার্লস হাওয়ার্ড বারি। আগে কখনো হিমালয় অভিযানে যাননি ম্যালরি। কিন্তু কী আশ্চর্য! অভিযান শুরুর পর দেখা গেল অলিখিতভাবে গোটা দলের নেতৃত্বভার নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। পর্বত এলাকাটির বহু কাঙ্ক্ষিত একটি মানচিত্রও তৈরি করা হলো এই অভিযানেই। ১৯২২ সালের অভিযানেও ছিলেন তিনি, যেটিকে বিবেচনা করা হয় এভারেস্ট জয়ের প্রথম সত্যিকারের প্রচেষ্টা হিসেবে। 

১৯২১ সালের এভারেস্ট অভিযাত্রীদের মধ্যে ম্যালরি (পেছনে সবচেয়ে ডানে)। ছবি: সংগৃহীত১৯২৪ সালে তৃতীয়বারের মতো এভারেস্ট রোমাঞ্চে শামিল হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ম্যালরি। অভিযান শুরুর আগে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়, মানুষ কেন এভারেস্ট জয়ের চেষ্টা করে? তাঁর ছোট্ট উত্তর ছিল, ‘কারণ ওটা ওখানে আছে।’ যা, পর্বতারোহণের ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় উক্তিতে পরিণত হয় কালক্রমে।

তবে ম্যালরির জানা ছিল না, এটাই তাঁর শেষ এভারেস্টযাত্রা। আর কখনো দেখা হবে না প্রিয়তমা স্ত্রী কিংবা আদরের সন্তানদের সঙ্গে। জুনের সেই বিখ্যাত অভিযানের সময় তাঁর বয়স ছিল ৩৭। 

হয়ল্যান্ড বিশ্বাস করেন, এ জুটি আরোহণ বাতিল করে বেস ক্যাম্পে ফিরে যাওয়ার সময় পড়ে যান। তাঁর ধারণা, ম্যালরি প্রাথমিক পতন থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন, কিন্তু বেস ক্যাম্পে ফিরে যাওয়ার সময় আরেকটি মারাত্মক ধস বা পতনে মারা যান। আরভিনের লাশ আর কখনোই পাওয়া যায়নি।

গবেষকেরা বহু বছর ধরেই দাবি করে আসছেন যে, আরও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ও ছবির অভাব থেকে বোঝা যায় যে, এই জুটি শিখরে পৌঁছেছিলেন এবং ফিরে আসার সময় পড়ে গিয়েছিলেন।

যাই হোক, নতুন প্রমাণ পর্যালোচনা করে হয়ল্যান্ড বিশ্বাস করেন— বিষয়টি এমন নয়।

ম্যালরি (বামে) ও আরভিন অভিযানের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে বেলা ২টায় পর্বতটিতে তুষারঝড় আঘাত হানে। তাঁরা চূড়ায় পৌঁছানোর অনেক আগেই এটা হয় বলে জানান হয়ল্যান্ড। ছবির অভাব, তিনি মনে করেন কিছুই প্রমাণ করে না। ম্যালরির ভুলে যাওয়ার বাতিক ছিল বলেও জানান তিনি।

স্ত্রীকে লেখা তাঁর শেষ চিঠিতে ম্যালরি লিখেছিলেন, ‘একটি তাঁবুর দরজা থেকে তুষার এবং অদৃশ্য হয়ে যাওয়া একটা আশার দিকে তাকিয়ে আছি’ এবং এটিকে ‘খুব খারাপ একটি সময়’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তাঁর এবং আরভিন দুজনেরই শারীরিক অবস্থা ভালো ছিল না এবং তিনি লিখেছেন যে, ‘আমি যথেষ্ট ফিট হতে পারব কিনা তা নিয়ে সন্দেহে আছি।’

হয়ল্যান্ড বলেন, এভারেস্ট মানুষকে পাগল করে তোলে। ম্যালরি এভারেস্ট জয় করার আকাঙ্ক্ষায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলেন।

‘সামিট ফিভার’ বা ‘চূড়া জ্বর’ নামে বিপজ্জনক একটি জিনিস আছে, আপনি চূড়াটি দেখেন এবং আপনি ভাবেন ‘ঠিক আছে, হয় মৃত্যু না হয় খ্যাতি। প্রাণ হারানোর চিন্তাও আপনাকে দমাতে পারে না।’

‘অনুভূতি আমি বুঝি, আপনি সম্পূর্ণরূপে পর্বত দ্বারা আচ্ছন্ন হয়ে পড়বেন। ম্যালরি এভারেস্টে মোহিত হয়ে পড়েছিলেন এবং এটি তাঁর মৃত্যু ডেকে আনে।’ বলেন হায়ল্যান্ড।

তবে ম্যালরি যেমন এভারেস্টে আচ্ছন্ন হয়ে মৃত্যুকে বরণ করে নেন তেমনি মানুষ আজও মোহিত ম্যালরিতে। আজও পর্বতারোহীরা হন্যে হয়ে খোঁজেন আরভিনের দেহ। পর্বতপ্রেমীরা বিশ্বাস করতে চান ম্যালরি-আরভিন সত্যি চূড়ায় পৌঁছেছিলেন। হায়ল্যান্ডের এই গবেষণা হয়তো তাঁদের হতাশ করবে, তবে সবাই নিঃসন্দেহ তা মানতে চাইবেন না।

সূত্র: সিএনএন, উইকিপিডিয়া

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আসিফের ফেসবুক পেজ রিমুভ করা হয়েছে, সংঘবদ্ধ রিপোর্টের অভিযোগ

আজকের রাশিফল: মানিব্যাগের দশা মরুভূমি, প্রেমের দুনিয়ায়ও দুর্ভিক্ষ

ছয় মাসের পরিচয়ে বিবাহিতাকে বিয়ের প্রস্তাব, প্রত্যাখ্যান করায় গুলি

সখীপুরে নিখোঁজের ৭ ঘণ্টা পর বন থেকে উদ্ধার শিশুটি মারা গেছে

অরুণাচলকে চীনের ‘মূল স্বার্থ’ বলছে পেন্টাগন, ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান বেইজিংয়ের

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৫৪ কোটি ডলার পাচার: ক্ষমতার অপব্যবহারে দোষী সাব্যস্ত মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০২০ সালে অন্য একটি মামলায় নাজিব রাজাককে ১২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
২০২০ সালে অন্য একটি মামলায় নাজিব রাজাককে ১২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

বহুল আলোচিত ওয়ান মালয়েশিয়া ডেভেলপমেন্ট বারহাদ (ওয়ানএমডিবি) কেলেঙ্কারির দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ মামলায় মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাককে দোষী সাব্যস্ত করেছেন আদালত। আজ শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) কুয়ালালামপুর হাইকোর্ট এ রায় ঘোষণা করেন। নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে আনা অর্থ পাচারের ২১টি, ক্ষমতার অপব্যবহারের চারটিসহ ২৫টি অভিযোগের সবকটিতেই তিনি দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।

৭২ বছর বয়সী নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে ওয়ানএমডিবি তহবিল থেকে অবৈধভাবে ২২০ কোটি রিঙ্গিত (প্রায় ৫৪৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) নিজের ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরের অকাট্য প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন আদালত।

বিচারক কলিন লরেন্স সেকুয়েরাহ তাঁর রায়ে বলেন, নাজিব রাজাক এই বিচারপ্রক্রিয়াকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ ও ‘উইচ হান্ট’ বলে যে দাবি করেছিলেন, তা অকাট্য প্রমাণের মুখে খারিজ হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও ওয়ানএমডিবির উপদেষ্টা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে নিজের শক্তিশালী পজিশন ব্যবহার করে তিনি এই বিশাল অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।

এর আগে নাজিব দাবি করেছিলেন, তিনি পলাতক অর্থদাতা জো লোর প্ররোচনায় বিভ্রান্ত হয়েছিলেন। তবে বিচারক স্পষ্ট করেছেন, জো লো ও নাজিবের মধ্যে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল এবং জো লো নাজিবের ছায়া বা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন।

এদিকে আত্মসাৎ করা অর্থ সৌদি রাজপরিবারের পক্ষ থেকে ‘অনুদান’ হিসেবে পাওয়ার যে প্রমাণ নাজিব দিয়েছিলেন, তা-ও আদালত প্রত্যাখ্যান করেছেন।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিটি অভিযোগের জন্য নাজিবের ১৫ থেকে ২০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। তবে চূড়ান্ত সাজা কত বছর হবে, তা এখনো ঘোষণা করা হয়নি।

এ রায় মালয়েশিয়ার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের জোট সরকারের জন্য একটি বড় পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ, নাজিবের দল ইউএমএনও বর্তমান সরকারের একটি অন্যতম শরিক। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, নাজিবের সব অভিযোগে দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়া ইউএমএনওর কট্টর সমর্থকদের ক্ষুব্ধ করতে পারে, যা সরকারের স্থায়িত্বকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক জেমস চাই আল-জাজিরাকে বলেন, এ রায় মালয়েশিয়ার বিচার বিভাগের স্বাধীনতার এক বড় প্রমাণ। তবে দুর্নীতিবিরোধী ভাবমূর্তি নিয়ে ক্ষমতায় আসা আনোয়ার ইব্রাহিমের জন্য এটি একটি রাজনৈতিক বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

ওয়ানএমডিবি কেলেঙ্কারির ইতিহাস

প্রসঙ্গত, ওয়ান মালয়েশিয়া ডেভেলপমেন্ট বারহাদ বা ওয়ানএমডিবি হলো মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রমালিকানাধীন একটি কৌশলগত উন্নয়ন সংস্থা। মূলত অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এটি তৈরি হয়েছিল, কিন্তু পরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নিজাব রাজাকসহ সংশ্লিষ্টরা আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন।

২০১৫ সালে ওয়ানএমডিবি কেলেঙ্কারির ঘটনাটি প্রথম সামনে আসে, যা ২০১৮ সালের নির্বাচনে নাজিব রাজাকের দলের দীর্ঘ ছয় দশকের শাসনের অবসান ঘটায়। এর আগে ২০২০ সালে অন্য একটি মামলায় নাজিবকে ১২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, যা পরে কমিয়ে ছয় বছর করা হয়।

সাত বছর ধরে চলা এই দীর্ঘ আইনিপ্রক্রিয়ায় ৭৬ জন সাক্ষীর বয়ান নেওয়া হয়েছে। যদিও নাজিব রাজাক গত বছর এই কেলেঙ্কারির জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন, কিন্তু আইনি লড়াইয়ে তিনি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। নাজিবের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তাঁরা এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আসিফের ফেসবুক পেজ রিমুভ করা হয়েছে, সংঘবদ্ধ রিপোর্টের অভিযোগ

আজকের রাশিফল: মানিব্যাগের দশা মরুভূমি, প্রেমের দুনিয়ায়ও দুর্ভিক্ষ

ছয় মাসের পরিচয়ে বিবাহিতাকে বিয়ের প্রস্তাব, প্রত্যাখ্যান করায় গুলি

সখীপুরে নিখোঁজের ৭ ঘণ্টা পর বন থেকে উদ্ধার শিশুটি মারা গেছে

অরুণাচলকে চীনের ‘মূল স্বার্থ’ বলছে পেন্টাগন, ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান বেইজিংয়ের

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আতঙ্ক ও উত্তেজনার মধ্যে ভারতে বড়দিন ‘উদ্‌যাপন’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ৪৯
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ভারতে এবার বড়দিনের আমেজ ম্লান করে দিয়েছে আতঙ্ক আর উত্তেজনা। গত কয়েক দিনে দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সভা ও বড়দিনের সাজসজ্জায় হামলা, হুমকি ও বাধা দেওয়ার একাধিক ঘটনা ঘটেছে।

ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, উত্তর প্রদেশ, কেরালাসহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)-সংশ্লিষ্ট এবং ডানপন্থী হিন্দু সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে এসব হামলার অভিযোগ উঠেছে।

পুলিশ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে এবং নিরাপত্তা জোরদার করেছে। অন্য দিকে ধর্মীয় নেতারা এই হুমকির বিরুদ্ধে সতর্কবার্তা দিয়েছেন এবং সাংবিধানিক অধিকার রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন।

ছত্তিশগড়ের রাজধানী রায়পুরের একটি শপিং মলে ডানপন্থী দলের সদস্যরা বড়দিনের সাজসজ্জা ভাঙচুর করেছেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে মলের এক কর্মচারী বলেন, ‘৮০-৯০ জন মানুষ সেখানে ঢুকে পড়ে। ১৬ বছর ধরে আমরা এখানে কার্যক্রম চালাচ্ছি, কিন্তু এমন আচরণ কখনো দেখিনি। দলটি আমাদের হুমকি দেয় এবং গালিগালাজ ও সহিংসতা চালায়।’

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, কট্টরপন্থী হিন্দু সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) হিন্দুদের বড়দিন পালন থেকে বিরত থাকার জন্য প্রকাশ্য আহ্বান জানিয়েছে। এই উৎসবে অংশগ্রহণকে তারা ‘সাংস্কৃতিক সচেতনতার’ জন্য হুমকি হিসেবে অভিহিত করেছে।

সমালোচকদের মতে, এ ধরনের আহ্বান একটি বর্জনমূলক পরিবেশ তৈরি করেছে এবং উগ্র গোষ্ঠীগুলোকে বিক্রেতাদের হয়রানি করতে, উৎসবের অনুষ্ঠানে বাধা দিতে এবং খ্রিষ্টান সম্প্রদায়কে আতঙ্কিত করতে উৎসাহিত করেছে।

কেরালা থেকে দ্য নিউজ মিনিট জানিয়েছে, ২১ ডিসেম্বর বড়দিনের ক্যারল গাওয়ার সময় ১৫ বছরের কম বয়সী একদল শিশুর ওপর হামলা চালানো হয় এবং তাদের বাদ্যযন্ত্র ভেঙে ফেলা হয়। এ হামলায় স্থানীয়ভাবে আরএসএস-সংশ্লিষ্ট হিসেবে পরিচিত এক ব্যক্তিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে এবং তাঁর বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার আইনে মামলা করা হয়েছে।

তবে এ ঘটনায় কেরালার বিজেপি নেতা সি কৃষ্ণকুমার দাবি করেছেন, শিশুদের দলটি ছিল ‘মদ্যপ অপরাধী চক্র’ এবং এই ক্যারল গাওয়ার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল। শিশুদের নিয়ে এমন মন্তব্যে অভিভাবক ও স্থানীয় বাসিন্দারা গভীরভাবে মর্মাহত হয়েছেন।

বিজেপির রাজ্য সহসভাপতি শোন জর্জও একই দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ক্যারল গায়কেরা যদি অসভ্যতা করে, তবে তারা নিশ্চিতভাবেই মার খাবে।

বিজেপি নেতাদের এমন বক্তব্যে ভুক্তভোগী পরিবার ও মানবাধিকারকর্মীরা উদ্বেগ জানিয়েছেন। অভিভাবকদের একাংশ তাঁদের সন্তানদের ওপর মানসিক আঘাতের অভিযোগ এনে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছেন।

এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রতিবাদী ক্যারল মিছিলের আয়োজন করেছে ডেমোক্রেটিক ইয়ুথ ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া।

তথ্যসূত্র: টিআরটি ওয়ার্ল্ড

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আসিফের ফেসবুক পেজ রিমুভ করা হয়েছে, সংঘবদ্ধ রিপোর্টের অভিযোগ

আজকের রাশিফল: মানিব্যাগের দশা মরুভূমি, প্রেমের দুনিয়ায়ও দুর্ভিক্ষ

ছয় মাসের পরিচয়ে বিবাহিতাকে বিয়ের প্রস্তাব, প্রত্যাখ্যান করায় গুলি

সখীপুরে নিখোঁজের ৭ ঘণ্টা পর বন থেকে উদ্ধার শিশুটি মারা গেছে

অরুণাচলকে চীনের ‘মূল স্বার্থ’ বলছে পেন্টাগন, ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান বেইজিংয়ের

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এক বছরে ইউক্রেনের ৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা দখলের দাবি রাশিয়ার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়া দাবি করেছে, তারা চলতি বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালে ইউক্রেনের কাছ থেকে আরও প্রায় ৫ হাজার বর্গকিলোমিটার অঞ্চল দখল করেছে। তবে এই দাবির পক্ষে তারা বিস্তারিত কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে স্বদেশের মাটিতে সামরিক সাফল্য প্রচার এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্য নিয়ে ইউক্রেন ভূখণ্ডের ওপর নিজেদের দাবির বিষয়ে অনড় অবস্থান নিয়েছে রাশিয়া। গত শুক্রবার বছরের শেষ সংবাদ সম্মেলনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তাঁর বাহিনী পূর্ব দোনেৎস্কের সিভারস্ক এবং উত্তরের খারকিভ অঞ্চলের ভভচানস্ক দখল করে নিয়েছে।

এ ছাড়া পুতিনের দাবি—রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে এখন দোনেৎস্কের লিমান ও কস্ত্যন্তিনিভকা এবং দক্ষিণের জাপোরিঝিয়া অঞ্চলের হুলিয়াইপোল শহরের অন্তত অর্ধেক এলাকা। উল্লেখ্য, এই শহরগুলো যুদ্ধের সম্মুখভাগ হিসেবে পরিচিত। তবে ইউক্রেন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকারীরা পুতিনের এই দাবির সঙ্গে একমত হতে পারছেন না। ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংক ট্যাংক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার (আইএসডব্লিউ) জানিয়েছে, স্যাটেলাইট চিত্র ও উন্মুক্ত উৎসের ভিজ্যুয়াল তথ্য-প্রমাণ পুতিনের দাবির উল্টো কথা বলছে।

আইএসডব্লিউ এক প্রতিবেদনে লিখেছে, ‘পুতিন যেসব এলাকা দখল বা ব্যাপক অগ্রগতির দাবি করেছেন, তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। আমাদের পর্যবেক্ষণ বলছে, হুলিয়াপোলের মাত্র ৭ দশমিক ৩ শতাংশ এবং লিমানে ২ দশমিক ৯ শতাংশ এলাকায় রুশ বাহিনীর উপস্থিতি (অনুপ্রবেশ বা হামলার মাধ্যমে) রয়েছে।’ সংস্থাটির হিসাবমতে, কস্ত্যন্তিনিভকা শহরে রুশ অগ্রগতির পরিমাণ ৫ শতাংশের বেশি নয়।

এমনকি রাশিয়ার যুদ্ধবিষয়ক কনটেন্ট ক্রিয়েটর বা মিলব্লগারদের দাবিও পুতিনের বক্তব্যের সঙ্গে মিলছে না। আইএসডব্লিউ বলছে, ওই মিলব্লগারদের মতে—রুশ বাহিনী বড়জোর লিমানে ৭ শতাংশ এবং কস্ত্যন্তিনিভকায় ১১ শতাংশ এলাকা কবজায় নিতে পেরেছে।

ক্রেমলিন আরও দাবি করেছে, তারা খারকিভের কুপিয়ানস্ক এবং দোনেৎস্কের পোকরোভস্ক শহর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। তবে আইএসডব্লিউ-এর অনুমান, খারকিভের মাত্র ৭ দশমিক ২ শতাংশ এলাকা রাশিয়ার হাতে রয়েছে। অন্যদিকে ইউক্রেনের সেনাপ্রধান জানিয়েছেন, পোকরোভস্কের ১৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা থেকে রুশ বাহিনীকে হটিয়ে দিয়েছে ইউক্রেনীয় সেনারা।

গত ১৮ ডিসেম্বর বিদেশি সামরিক কর্মকর্তাদের কাছে বছরের শেষ প্রতিবেদনে রুশ সেনাপ্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ দাবি করেন, এ বছর রাশিয়া ইউক্রেনের ৬ হাজার ৩০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা দখল করেছে। এর এক সপ্তাহ আগে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রেই বেলোসভ এই পরিমাণ ৬ হাজার বর্গকিলোমিটার বলে দাবি করেছিলেন। কিন্তু আইএসডব্লিউ-এর হিসাবে এই দখলিকৃত ভূমির পরিমাণ ৪ হাজার ৯৮৪ বর্গকিলোমিটারের বেশি নয় এবং রুশ কর্মকর্তাদের দাবি করা ৩০০টি জনপদের বদলে সেখানে জনপদ রয়েছে মাত্র ১৯৬ টি।

রাশিয়ার এই দাবিগুলো এমন এক সময়ে এল, যখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের আলোচকেরা শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে নিবিড় আলোচনা চালাচ্ছেন। ফ্লোরিডায় তিন দিনের আলোচনার পর গত সোমবার এই প্রক্রিয়ার ইতি ঘটে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘আমরা অনুভব করছি, আমেরিকা একটি চূড়ান্ত চুক্তিতে পৌঁছাতে চায় এবং আমাদের পক্ষ থেকে পূর্ণ সহযোগিতা রয়েছে।’ তবে বুধবার সকালে তাঁর প্রকাশ করা ২০ দফার পরিকল্পনায় দেখা গেছে, ভূখণ্ডের মালিকানার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে কোনো ঐকমত্য হয়নি।

রাশিয়া দাবি করছে, দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিঝিয়া ও খেরসন অঞ্চল এবং ক্রিমিয়া তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ছেড়ে দিতে হবে। ইউক্রেন এতে সরাসরি অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তবে ইউরোপীয় দেশগুলো প্রস্তাব দিয়েছে, ভূখণ্ড নিয়ে আলোচনা পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতির পর শুরু করা যেতে পারে। জেলেনস্কি ভূখণ্ডগত সমন্বয় নিয়ে একটি যৌথ অবস্থানে পৌঁছাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছেন।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে ন্যাটোর সমপর্যায়ের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দিতে সম্মত হয়েছে। এই পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তির ফলে রাশিয়া যদি আবারও আক্রমণ চালায়, তবে ন্যাটো সরাসরি ইউক্রেনের পক্ষে যুদ্ধে নামতে পারবে। আলাদাভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নও জানিয়েছে যে তারা অদূর ভবিষ্যতে ইউক্রেনকে পূর্ণ সদস্যপদ দেবে, যা তাদের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে প্রতিরক্ষা সুবিধা পাওয়ার অধিকার দেবে।

সমান গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই পরিকল্পনায় ইউক্রেন তাদের সেনাবাহিনীকে পূর্ণ শক্তি বজায় রাখার সুযোগ পাবে। এ ছাড়া সাবেক দখলকৃত অঞ্চলগুলোকে রাশিয়ার বলে স্বীকৃতি দিতেও তাদের বাধ্য করা হয়নি। অথচ মস্কো এসব বিষয়ে জোর দিয়েছিল এবং যুক্তরাষ্ট্রের মূল প্রস্তাবেও এগুলো ছিল। ওয়াশিংটন ও কিয়েভের মধ্যে চূড়ান্ত হওয়া এই ২০ দফার পরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত থাকার কথা জানিয়েছে ক্রেমলিন। মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, রাশিয়া তাদের অবস্থান ‘তৈরি’ করবে এবং বিদ্যমান চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে খুব দ্রুতই যোগাযোগ অব্যাহত রাখবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আসিফের ফেসবুক পেজ রিমুভ করা হয়েছে, সংঘবদ্ধ রিপোর্টের অভিযোগ

আজকের রাশিফল: মানিব্যাগের দশা মরুভূমি, প্রেমের দুনিয়ায়ও দুর্ভিক্ষ

ছয় মাসের পরিচয়ে বিবাহিতাকে বিয়ের প্রস্তাব, প্রত্যাখ্যান করায় গুলি

সখীপুরে নিখোঁজের ৭ ঘণ্টা পর বন থেকে উদ্ধার শিশুটি মারা গেছে

অরুণাচলকে চীনের ‘মূল স্বার্থ’ বলছে পেন্টাগন, ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান বেইজিংয়ের

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চীনের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যেই রেকর্ড প্রতিরক্ষা বাজেট অনুমোদন করল জাপান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

চীনের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যেই জাপানের মন্ত্রিসভা ইতিহাসে সর্বোচ্চ অঙ্কের প্রতিরক্ষা বাজেট অনুমোদন করেছে। চলতি সপ্তাহে বেইজিং টোকিওর বিরুদ্ধে ‘মহাকাশে অস্ত্র প্রতিযোগিতা উসকে দেওয়ার’ অভিযোগ আনার প্রেক্ষাপটে এই সিদ্ধান্ত এল।

আগামী অর্থবছরের জন্য আজ শুক্রবার অনুমোদন পাওয়া প্রস্তাবিত এই প্রতিরক্ষা বাজেটের পরিমাণ ৫৮ বিলিয়ন ডলার। এটি বর্তমান বাজেটের চেয়ে ৯ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। জাপানের বার্ষিক প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির ২ শতাংশে উন্নীত করার জন্য যে পাঁচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা রয়েছে, এটি তার চতুর্থ বছরের বরাদ্দ।

বাজেট পরিকল্পনায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে পাল্টা আঘাতের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং উপকূলীয় প্রতিরক্ষা জোরদার করার ওপর। এ জন্য ভূমি থেকে সমুদ্রে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র এবং চালকহীন সমরাস্ত্র ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, ২০২৮ সালের মার্চের মধ্যে শিল্ড নামের একটি প্রকল্পের আওতায় সমুদ্র উপকূল রক্ষায় নজরদারি ও প্রতিরক্ষার জন্য বড় আকারের চালকহীন আকাশযান, জাহাজ এবং পানির নিচে ড্রোন মোতায়েন করতে ১০০ বিলিয়ন ইয়েন ব্যয় করবে জাপান।

দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, চীন ও জাপান সরকারের মধ্যে বাড়তে থাকা বৈরিতার মধ্যেই এই বাজেট বৃদ্ধির ঘোষণা এল। জাপান নিজেদের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা শক্তিশালী করার যেকোনো উদ্যোগ নিলেই বেইজিং তার বিরোধিতা করে আসছে।

গত নভেম্বরে এই সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়, যখন জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি মন্তব্য করেন, চীন যদি তাইওয়ান দখল করার উদ্দেশ্যে আক্রমণ চালায়, তাহলে জাপান সম্ভবত সামরিকভাবে তাতে জড়িয়ে পড়বে।

তাকাইচির এই বক্তব্যে বেইজিং তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায় এবং কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে শুরু করে।

চীনা কর্মকর্তারা নিয়মিতভাবে টোকিওর সমালোচনা করে আসছেন এবং জাপানের যেকোনো সামরিক ঘোষণা পেলে তার বিরোধিতা করছেন।

গত বৃহস্পতিবার চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, জাপানের সাম্প্রতিক মহাকাশ প্রযুক্তি উন্নয়ন, যার কিছু অংশ যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় হচ্ছে, মহাকাশকে ‘অস্ত্রসজ্জিত ও সামরিকীকরণ করছে এবং সেখানে অস্ত্র প্রতিযোগিতায় ইন্ধন দিচ্ছে।’

জাপানি সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের মার্চ থেকে টোকিও বেশ কয়েকটি রকেট উৎক্ষেপণ করেছে, যেগুলোর মাধ্যমে মহাকাশে পণ্যবাহী যান, জিপিএস সিস্টেম এবং গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য স্যাটেলাইট পাঠানো হয়েছে।

চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাং শিয়াওগাং গত রোববার বলেন, অতীতে জাপানি সমরবিদেরা যেভাবে অতর্কিত হামলা চালিয়েছিল এবং দেশটি বর্তমানে যেভাবে আক্রমণাত্মক মহাকাশ নীতি গ্রহণ করছে, তাতে আরও একটি পার্ল হারবার পরিস্থিতির আশঙ্কা তৈরি হওয়াটা অবাক করার মতো কিছু নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আসিফের ফেসবুক পেজ রিমুভ করা হয়েছে, সংঘবদ্ধ রিপোর্টের অভিযোগ

আজকের রাশিফল: মানিব্যাগের দশা মরুভূমি, প্রেমের দুনিয়ায়ও দুর্ভিক্ষ

ছয় মাসের পরিচয়ে বিবাহিতাকে বিয়ের প্রস্তাব, প্রত্যাখ্যান করায় গুলি

সখীপুরে নিখোঁজের ৭ ঘণ্টা পর বন থেকে উদ্ধার শিশুটি মারা গেছে

অরুণাচলকে চীনের ‘মূল স্বার্থ’ বলছে পেন্টাগন, ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান বেইজিংয়ের

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত