Ajker Patrika

কুরস্কে ইউক্রেনীয়দের জন্য দুটি পথ খোলা, আত্মসমর্পণ অথবা মৃত্যু: পুতিন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: ক্রেমলিন
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: ক্রেমলিন

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, তিনি ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির ধারণার সঙ্গে একমত, তবে সমঝোতার প্রকৃতি নিয়ে ‘প্রশ্ন’ আছে বলে উল্লেখ করেছেন এবং বেশ কিছু কঠিন শর্তও সামনে এনেছেন। পাশাপাশি তিনি বলেছেন, কুরস্কে ইউক্রেনীয়দের জন্য দুটি পথ খোলা আছে, আত্মসমর্পণ অথবা মৃত্যু। গতকাল বৃহস্পতিবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবিত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়ায় এই অবস্থান ব্যক্ত করেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই প্রস্তাবের বিপরীতে পুতিনের প্রতিক্রিয়াকে ‘কৌশলী চাল’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার তেল, গ্যাস ও ব্যাংকিং খাতের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

বৃহস্পতিবার মস্কোয় এক সংবাদ সম্মেলনে পুতিন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব সম্পর্কে বলেন, ‘ধারণাটি ঠিক আছে এবং আমরা এটি সমর্থন করি। কিন্তু, কিছু প্রশ্ন আছে যা নিয়ে আমাদের আলোচনা করা দরকার।’ তিনি বলেন, ‘যুদ্ধবিরতির ফলে একটি স্থায়ী শান্তি আসা উচিত এবং এই সংকটের মূল কারণগুলো দূর করা উচিত।’

পুতিন আরও বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই আমেরিকান সহকর্মী ও অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। হতে পারে, আমি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে একটি ফোনালাপ করব।’ তিনি যোগ করেন, ‘ইউক্রেনের জন্য ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি লাভজনক হবে। আমরা এর পক্ষে, তবে কিছু সূক্ষ্ম বিষয় রয়েছে।’

পুতিন বলেন, বিতর্কের একটি বড় বিষয় হলো—রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চল, যেখানে গত বছর ইউক্রেন সামরিক অভিযান চালিয়ে কিছু এলাকা দখল করেছিল। তিনি দাবি করেন, রাশিয়া এখন পুরোপুরি কুরস্কের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে এবং সেখানে ইউক্রেনীয় সৈন্যরা ‘বিচ্ছিন্ন অবস্থায়’ আছে।

পুতিন বলেন, ‘তারা (ইউক্রেনীয় বাহিনী) বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, কিন্তু আমরা নিয়ন্ত্রণে আছি। তাদের সরঞ্জাম ফেলে রেখে যেতে হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কুরস্কে ইউক্রেনীয়দের জন্য দুটি পথ খোলা—আত্মসমর্পণ অথবা মৃত্যু।’

যুদ্ধবিরতির বাস্তবায়ন নিয়ে তাঁর উদ্বেগ তুলে ধরে পুতিন প্রশ্ন করেন, ‘এই ৩০ দিন কীভাবে ব্যবহার করা হবে? ইউক্রেন কি এই সময়ে সেনা সমাবেশ করবে? পুনরায় অস্ত্র সংগ্রহ করবে? সৈন্যদের প্রশিক্ষণ দেবে? নাকি এসব কিছুই করবে না? তাহলে প্রশ্ন ওঠে—এটি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে?’

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘কে লড়াই বন্ধের আদেশ দেবে? এর মূল্য কত হবে? ২ হাজার কিলোমিটার জুড়ে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ হয়েছে কি না, তা কে নির্ধারণ করবে? এসব প্রশ্ন উভয় পক্ষের মাধ্যমে সূক্ষ্মভাবে সমাধান করতে হবে। এটি কে পর্যবেক্ষণ করবে?’

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তাঁর রাতের ভিডিও ভাষণে বলেন, ‘পুতিন সরাসরি না বলেন না, কিন্তু বাস্তবে তিনি প্রত্যাখ্যানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘পুতিন, অবশ্যই, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সরাসরি বলতে ভয় পাচ্ছেন যে—তিনি এই যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চান, ইউক্রেনীয়দের হত্যা করতে চান।’ জেলেনস্কি দাবি করেন, ‘পুতিন এত বেশি পূর্বশর্ত দিয়েছেন যে, এর ফলে কিছুই সম্ভব হবে না।’

পুতিনের মন্তব্য ও জেলেনস্কির প্রতিক্রিয়ার পর, দুই পক্ষের অবস্থানের মধ্যে স্পষ্ট বিভাজন দেখা যাচ্ছে। ইউক্রেন চায় একটি দুই-পর্যায়ের প্রক্রিয়া—প্রথমে দ্রুত যুদ্ধবিরতি, তারপর দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি নিয়ে আলোচনা। রাশিয়া মনে করে, এই দুটি প্রক্রিয়াকে আলাদা করা যাবে না এবং সব বিষয় এক চুক্তির মাধ্যমে সমাধান করা উচিত। ফলে উভয় পক্ষই নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে।

ইউক্রেন বিশ্বাস করে, রাশিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টি করে তাদের ‘বিলম্বকারী শান্তিরক্ষক’ হিসেবে উপস্থাপন করা সম্ভব। অন্যদিকে, রাশিয়া মনে করে, এটি তাদের জন্য মূল বিষয়গুলো তুলে ধরার সুযোগ—ন্যাটো সম্প্রসারণ ও ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব নিয়ে।

তবে এই পরিস্থিতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। তিনি পরিষ্কার করে জানিয়েছেন, তিনি দ্রুত সমাধান চান এবং কয়েক দিনের মধ্যেই যুদ্ধ বন্ধ করতে চান। কিন্তু এই মুহূর্তে, পুতিন আপসের জন্য খুব একটা আগ্রহী মনে হচ্ছেন না।

হোয়াইট হাউসে পুতিনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প বলেন, তিনি রুশ নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে ‘অত্যন্ত আগ্রহী’ এবং রাশিয়া ‘সঠিক সিদ্ধান্ত’ নিয়ে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হবে, সে ব্যাপারে আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, রাশিয়া যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হোক।’

এর আগে, ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটের সঙ্গে ওভাল অফিসে এক বৈঠকে ট্রাম্প বলেন, তিনি ইতিমধ্যে ইউক্রেনের সঙ্গে নির্দিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করেছেন। এ সময় সাংবাদিকদের ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘এ ব্যাপারে সবাই জানে কী হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ইউক্রেনের সঙ্গে ভূখণ্ড এবং কিছু অংশ সংরক্ষণ ও হারানোর বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি, পাশাপাশি চূড়ান্ত চুক্তির অন্যান্য উপাদানগুলোও।’ তিনি আরও বলেন, ‘একটি চূড়ান্ত চুক্তির অনেক বিশদ আসলে ইতিমধ্যেই আলোচনা করা হয়েছে।’

রাশিয়ার তেল ও গ্যাস খাতের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞার ফলে ট্রাম্প প্রশাসন রাশিয়ার তেল কেনার জন্য অন্যান্য দেশের পেমেন্ট ব্যবস্থা কঠোরভাবে সীমিত করেছে। এ দিকে, পুতিন মস্কোতে মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন। এর আগের দিন, ক্রেমলিনের উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আনা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।

এর আগে, গত বুধবার ক্রেমলিন একটি ভিডিও প্রকাশ করে, যেখানে পুতিনকে রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে সফর করতে দেখা যায়। তিনি প্রতীকীভাবে সামরিক পোশাক পরেছিলেন। পরে রাশিয়া ঘোষণা করে, তারা গুরুত্বপূর্ণ সুদজা শহর পুনর্দখল করেছে।

রাশিয়া ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পূর্ণমাত্রার আক্রমণ শুরু করে এবং বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় ২০% ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে। যুদ্ধে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর ৯৫ হাজারের বেশি সদস্য নিহত হয়েছে। ইউক্রেন সর্বশেষ তাদের হতাহতের সংখ্যা ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশ করেছিল, যখন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছিলেন, যুদ্ধের ফলে ৪৩ হাজার ইউক্রেনীয় সেনা ও কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। তবে পশ্চিমা বিশ্লেষকেরা বিশ্বাস করেন, প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বন্ডাই বিচে আহত এই ব্যক্তি ইসরায়েলে হামাসের হামলার মুখেও পড়েছিলেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
অস্ট্রেলিয়ায় বন্দুকধারীর গুলিতে আহত আর্সেন অস্ত্রোভস্কি। ছবি: ডেইলি মেইল
অস্ট্রেলিয়ায় বন্দুকধারীর গুলিতে আহত আর্সেন অস্ত্রোভস্কি। ছবি: ডেইলি মেইল

দুর্ভাগ্য আর কাকে বলে—অস্ট্রেলিয়ার বন্ডাই বিচে বন্দুকধারীর গুলিতে আহত আর্সেন অস্ত্রোভস্কি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার কবলেও পড়েছিলেন। তবে সৌভাগ্য এই যে, দুই ঘটনায়ই তিনি অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন!

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) ডেইলি মেইল জানিয়েছে, বন্ডাই বিচে আহত অস্ত্রোভস্কি একজন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনজীবী। রক্তে ভেজা শরীর ও ব্যান্ডেজে মোড়ানো অবস্থায় তিনি অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি পরিবার নিয়ে এখানে এসেছিলাম। চারদিকে শিশু, বৃদ্ধ, পরিবার—সবাই আনন্দ করছিল। হঠাৎ করেই সবকিছু বিশৃঙ্খলায় পরিণত হয়। চারদিকে গুলির শব্দ, মানুষ দৌড়াচ্ছে, লুকোচ্ছে—পুরো জায়গা জুড়ে ভয়াবহ আতঙ্ক।’

অস্ত্রোভস্কি জানান, কোন দিক থেকে গুলি আসছিল, তা কেউ বুঝতে পারছিল না। তিনি বলেন, ‘আমি নিজ চোখে দেখেছি এক বন্দুকধারী চারদিকে নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছে। শিশুদের মাটিতে লুটিয়ে পড়তে দেখেছি, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের আহত হতে দেখেছি—এটা ছিল এক রক্তাক্ত বিভীষিকা।’

অস্ত্রোভস্কি এটাও জানান, তিনি ১৩ বছর ইসরায়েলে ছিলেন এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলার মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতাও তাঁর আছে। তাঁর ভাষায়, ‘সেই ঘটনার পর আবার এমন ভয়াবহ দৃশ্য দেখলাম। কখনো ভাবিনি অস্ট্রেলিয়ায়, তাও আবার বন্ডাই বিচের মতো জায়গায় এমন কিছু ঘটবে।’

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বিখ্যাত বন্ডাই বিচে ইহুদি ধর্মীয় উৎসব হানুকা উদ্‌যাপনের সময় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে শিশুও রয়েছে। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ২৯ জন। স্থানীয় সময় রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে ‘চানুকাহ বাই দ্য সি’ নামে একটি অনুষ্ঠানের মাঝেই এই হামলা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ক্যাম্পবেল প্যারেড এলাকায় একটি গাড়ি থেকে নেমে দুই সশস্ত্র ব্যক্তি এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে শুরু করেন। মুহূর্তের মধ্যেই উৎসবের আনন্দ রূপ নেয় বিভীষিকায়। পর্যটন এলাকা জুড়ে একের পর এক গুলির শব্দ শোনা যায়।

ঘটনাস্থলে বহু মানুষকে আহত অবস্থায় ঘাসের ওপর পড়ে থাকতে দেখা যায়। দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁদের হাসপাতালে নেওয়া হয়। পুলিশ জানিয়েছে, হামলাকারীদের একজনকে ঘটনাস্থলেই গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। অপরজন আহত অবস্থায় আটক রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বন্ডাই বিচে হামলাকারীর অস্ত্র কেড়ে নিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন, কে এই পথচারী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ২৩
বন্ডাই বিচে হামলাকারীর অস্ত্র কেড়ে নিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন, কে এই পথচারী

সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সশস্ত্র হামলাকারীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁকে নিরস্ত্র করেছেন এক পথচারী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর সেই পথচারী হাজারো মানুষের প্রশংসায় ভাসছেন।

ভাইরাল ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, সাদা শার্ট পরা ওই পথচারী পার্কিং লট থেকে দৌড়ে গিয়ে রাইফেল হাতে থাকা হামলাকারীকে পেছন থেকে জাপটে ধরেন। এরপর তিনি হামলাকারীর কাছ থেকে রাইফেল ছিনিয়ে নেন এবং সেটি হামলাকারীর দিকেই তাক করেন।

অকস্মাৎ পেছন থেকে জাপটে ধরায় হামলাকারী ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন এবং পিছু হটেন। ধারণা করা হচ্ছে, ওই পথচারীর এমন সাহসী পদক্ষেপে বহু মানুষের প্রাণ রক্ষা পেয়েছে।

যদিও ওই পথচারীর পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি, তবে তাঁর এই অবিশ্বাস্য সাহসিকতার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষ তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক ব্যক্তি ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার হিরো (একজন সাধারণ বেসামরিক) হামলাকারীর কাছ থেকে বন্দুক ছিনিয়ে নিয়ে তাঁকে নিরস্ত্র করেছেন। কেউ কেউ সাহসী আর কেউ কেউ...এই ধরনের।’ অন্য একজন বলেছেন, ‘এই অস্ট্রেলিয়ান বন্ডাই বিচে সন্ত্রাসীদের একজনকে নিরস্ত্র করে অসংখ্য জীবন বাঁচিয়েছেন। হিরো।’

নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রিমিয়ার ক্রিস মিন্স এটিকে তাঁর দেখা ‘সবচেয়ে অবিশ্বাস্য দৃশ্য’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘ওই লোকটি একজন প্রকৃত হিরো। তিনি নির্ভয়ে হামলাকারীর দিকে এগিয়ে গিয়ে তাঁকে নিরস্ত্র করলেন এবং অসংখ্য মানুষের জীবন বাঁচাতে নিজের জীবন বিপন্ন করলেন। আমি নিশ্চিত যে, ওই ব্যক্তির সাহসিকতার জন্যই অনেক মানুষ বেঁচে আছেন।’

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজও হামলার সময় অন্যদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসা নাগরিকদের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, এই অস্ট্রেলীয়রা বিপদেও ছুটে গেছেন অন্যদের রক্ষা করতে। তাঁদের সাহসিকতাই অনেক মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে।

উল্লেখ্য, গুলির ঘটনায় এখন পর্যন্ত হামলাকারীসহ ১২ জন নিহত বলে জানা গেছে। দুই হামলাকারীর মধ্যে একজন গুরুতর আহত অবস্থায় পুলিশের হেফাজতে আছেন। এ ঘটনায় তৃতীয় কোনো বন্দুকধারী জড়িত ছিলেন কি না, পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শান্তির জন্য ন্যাটোর আশা ছাড়ার ইঙ্গিত দিল ইউক্রেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ২৬
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি। ছবি: সংগৃহীত
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধের অবসানে শান্তি আলোচনার পথ সুগম করতে গিয়ে ন্যাটো জোটে যোগদানের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে জার্মানির বার্লিনে বৈঠকের প্রাক্কালে তিনি জানান—ন্যাটো সদস্যপদের বদলে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছ থেকে শক্তিশালী ও আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক নিরাপত্তা নিশ্চয়তা পেলে সেটিকে একটি সমঝোতা হিসেবে বিবেচনা করতে প্রস্তুত কিয়েভ।

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সাংবাদিকদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে জেলেনস্কি বলেন, শুরু থেকেই ইউক্রেনের প্রকৃত লক্ষ্য ছিল ন্যাটো সদস্যপদ, যা দেশটির নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে কার্যকর গ্যারান্টি। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার এই পথে সমর্থন না দেওয়ায় বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবতে হচ্ছে। তাঁর ভাষায়—যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তা নিশ্চয়তা, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ‘আর্টিকেল ফাইভ’-এর মতো প্রতিরক্ষা প্রতিশ্রুতি এবং ইউরোপ, কানাডা ও জাপানের কাছ থেকে নিরাপত্তা গ্যারান্টি ভবিষ্যতে রাশিয়ার আগ্রাসন ঠেকাতে পারে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এসব নিশ্চয়তা অবশ্যই আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক হতে হবে।

এই অবস্থান ইউক্রেনের জন্য একটি বড় নীতিগত পরিবর্তন। কারণ দেশটির সংবিধানেই ন্যাটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। একই সঙ্গে এটি রাশিয়ার যুদ্ধলক্ষ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম। ন্যাটোতে যোগদানের বিরোধিতা করেই ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করেছিল রুশ বাহিনী। তবে বর্তমানে তারা ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলের দখলও নিতে চাইছে। তবে মস্কোর কাছে ভূখণ্ড ছাড় না দিতে এখনো অনড় রয়েছে ইউক্রেন।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বারবার দাবি করে আসছেন, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করতে হবে এবং দনবাস অঞ্চলের নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। রাশিয়ার পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, ইউক্রেনকে একটি নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হতে হবে এবং সেখানে ন্যাটো সেনা মোতায়েন করা যাবে না।

রয়টার্স জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের চাপের মুখে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের আলোচনা এগোচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার বার্লিনে আলোচনায় অংশ নিতে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি প্রায় চার বছর আগে শুরু হওয়া এই যুদ্ধের অবসানে অগ্রগতির সম্ভাবনার ইঙ্গিত।

জেলেনস্কি জানিয়েছেন—ইউক্রেন, ইউরোপীয় দেশগুলো ও যুক্তরাষ্ট্র মিলিয়ে একটি ২০ দফা পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা চলছে, যার শেষ ধাপে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতে পারে। তবে তিনি স্পষ্ট করেন, ইউক্রেন সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে কোনো আলোচনা করছে না।

ইউরোপীয় মিত্ররা এই সময়টিকে ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের জন্য একটি ‘সংকটজনক মুহূর্ত’ হিসেবে দেখছে। একই সঙ্গে রুশ হামলায় ইউক্রেনের বিদ্যুৎ, তাপ ও পানিসেবা অবকাঠামো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মানবিক সংকটও গভীর হচ্ছে। জেলেনস্কির অভিযোগ, রাশিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করে ইউক্রেনের জনগণের ওপর সর্বোচ্চ ক্ষতি চাপিয়ে দিতে চাইছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে বেঁচে ফেরা ২ শিক্ষার্থী বেঁচেছিলেন স্কুল জীবনেও

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মিয়া ট্রেটা ও জোয়ে ওয়েইসম্যান। ছবি: সংগৃহীত
মিয়া ট্রেটা ও জোয়ে ওয়েইসম্যান। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) ভয়াবহ বন্দুক হামলার ঘটনায় দুজন নিহত এবং অন্তত ৯ জন আহত হয়েছেন। ফাইনাল পরীক্ষার সময় সংঘটিত এই হামলায় পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আত্মরক্ষার জন্য অনেক শিক্ষার্থী ডেস্কের নিচে লুকিয়ে পড়েছিলেন। তবে ভয়াবহ এই অভিজ্ঞতা অন্তত দুই শিক্ষার্থীর কাছে নতুন কিছু ছিল না। এর আগেও তাঁরা স্কুল জীবনে এই ধরনের গোলাগুলির মুখে পড়ে প্রাণে বেঁচেছিলেন।

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ২১ বছর বয়সী মিয়া ট্রেটা এবং ২০ বছর বয়সী জোয়ে ওয়েইসম্যান—দুজনেই অতীতে ভিন্ন ভিন্ন স্কুলে বন্দুক হামলার শিকার হয়েছিলেন। নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওয়েইসম্যান বলেন, ‘আমার সবচেয়ে বেশি যে অনুভূতিটা হচ্ছে তা হলো—এই দেশ কীভাবে আমাকে দ্বিতীয়বারের মতো এমন কিছুর মুখোমুখি হতে দিল?’

শনিবার কালো পোশাক পরা এক বন্দুকধারী ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভবনে গুলি চালানো শুরু করলে ক্যাম্পাসে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সন্দেহভাজন হামলাকারী দীর্ঘ সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় শত শত পুলিশ রাতভর ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় তল্লাশি চালায়।

ওয়েইসম্যান তখন নিজের ডরমিটরিতেই ছিলেন। এক বন্ধুর ফোন পেয়ে তিনি জানতে পারেন ক্যাম্পাসে গুলিবর্ষণ চলছে। প্রথমে ভয় পেলেও সেই আতঙ্ক দ্রুত ক্ষোভে রূপ নেয়। এনবিসিকে তিনি বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম, জীবনে আর কখনো এমন কিছুর মুখোমুখি হতে হবে না। আট বছর পর আবারও সেই জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছি।’

২০১৮ সালে ফ্লোরিডার পার্কল্যান্ডে নিজের মিডল স্কুলের পাশের একটি হাইস্কুলে ভয়াবহ শুটিং প্রত্যক্ষ করেছিলেন ওয়েইসম্যান। ওই ঘটনায় ১৭ জন নিহত হয়েছিল।

অন্যদিকে, মিয়া ট্রেটা ২০১৯ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসের কাছে সগাস হাইস্কুলে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। তখন ১৬ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থী হামলা চালিয়ে দুজনকে হত্যা করে, যাদের একজন ছিলেন ট্রেটার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। গুলিতে ট্রেটার পেট গুরুতরভাবে জখম হয়েছিল।

শনিবারের ঘটনার সময় নিজের ডরমিটরিতে পড়াশোনা করছিলেন ট্রেটা। তিনি মূলত যে ভবনে হামলাটি ঘটে সেখানে পড়তে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু ক্লান্ত বোধ করায় শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদলান—যা কার্যত তার প্রাণ বাঁচায়।

এই হামলা যুক্তরাষ্ট্রে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের দীর্ঘদিনের দাবিকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে। গান ভায়োলেন্স আর্কাইভের তথ্যমতে, চলতি বছরেই যুক্তরাষ্ট্রে ৩৮৯টি গণ গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৫০০-এর বেশি।

ট্রেটা ও ওয়েইসম্যান দুজনই বলছেন, তাঁরা কখনো ভাবেননি দ্বিতীয়বার এমন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। ওয়েইসম্যান বলেন, ‘আমি নিজেকে বোঝাতাম—পরিসংখ্যান অনুযায়ী এটা আর কখনো ঘটবে না। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, আর কেউই এমন নিশ্চয়তা দিতে পারে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত