Ajker Patrika

অস্ত্রসংকটে ইউক্রেন, সঙ্গে পশ্চিমা সমর্থন হারানোর শঙ্কা

আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৩, ২১: ০৯
অস্ত্রসংকটে ইউক্রেন, সঙ্গে পশ্চিমা সমর্থন হারানোর শঙ্কা

এক বছর আগেও ইউক্রেন কমান্ডার ভলোদিমিরের সেনারা বিএম-২১ গ্রাদ রকেট লাঞ্চার থেকে ৪০ ব্যারেল গোলা একসঙ্গে রুশ সেনাদের অভিমুখে ছুড়তে পারতেন। কিন্তু এখন ছুড়তে পারছেন মাত্র একটি। ভলোদিমির বলেন, ‘আমাদের কাছে পর্যাপ্ত গোলাবারুদ নেই।’

ভলোদিমিরের ইউনিটের নাম ট্যাংক ব্যাটালিয়ন-১৭। তাঁরা এখন বাখমুতের প্রান্তে লড়াই চালিয়ে যেতে গোলাবারুদের সহায়তা চাচ্ছেন। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের শহর বাখমুত দখলের জন্য রুশ সেনারা কয়েক মাস ধরে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। রুশ সেনারা ধারাবাহিকভাবে অগ্রসর হলেও খোয়াতে হচ্ছে অনেক কিছুই।

ইউক্রেনের বাখমুতে এখন যুদ্ধ পরিস্থিতি কভার করছেন বিবিসির প্রতিরক্ষা বিটের প্রতিনিধি জোনাথন বিয়াল। তাঁর মুখেই শোনা যাক ইউক্রেন কমান্ডারে বর্তমান সংকট।

‘আমরা যখন গাছের আড়ালে লুকিয়ে ছিলাম তখন ভলোদিমির ১৫ কিলোমিটার দূরে রুশ মর্টার শেল লক্ষ্য করে রকেট ফায়ার করার একটি বার্তা পান। বার্তা পাওয়ার পর তাঁরা নিজেদের যানবাহনটি লতাপাতার আচ্ছাদন খুলে ফেলে সামনের ফাঁকা মাঠের দিকে এগোতে থাকেন। এক কিলোমিটার যাওয়ার পর লক্ষ্যবস্তুর অভিমুখে গোলা ছোড়েন। এ সময় ইউক্রেনীয় একটি ড্রোন আমাদের মাথার ওপর চক্রাকারে ঘুরছিল। পরে তাঁরা জানান, প্রথম গোলাটি ৫০ মিটারের হেরফেরের জন্য লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারেনি। তাই তাঁরা যানবাহন সঠিক স্থানে নিয়ে আরও দুটি গোলা ছুড়ে জঙ্গলে ফিরে আসেন। এই দুটি গোলা শত্রুপক্ষের যথাস্থানে আঘাত করেছে বলেও জানান তাঁরা।

নিরাশার কণ্ঠে ভলোদিমির বিবিসির সাংবাদিকে বলেন, ‘আমাদের হাতে যথেষ্ট গোলাবারুদ থাকলে বাখমুতের বিভিন্ন স্থানে আটকে পড়া সহযোগীদের আরও সাহায্য করতে পারতাম। আমাদের হাতে থাকা গ্রাদ অ্যামুনিশন শেষ হয়ে আসছে। এখন আমরা অন্য দেশের রকেটের ওপর নির্ভর করছি। চেক প্রজাতন্ত্র, রোমানিয়া ও পাকিস্তান থেকে এসব সহায়তা পাচ্ছি। এসবের গুণমান ভালো না।’

যুদ্ধ যতই দীর্ঘায়িত হচ্ছে ইউক্রেন সেনাদের ততই অস্ত্র ও গোলাবারুদের সংকট বাড়ছে। হাঁকডাক করলেও শক্তিধরদের সাড়া মিলছে না। ফলে তারা এখন আক্রমণাত্মক নীতির দিকে ঝুঁকছেন। কিন্তু ইউক্রেনকে নিজের অবস্থান ধরে রাখতে বিপুল সম্পদ ব্যয় করতে হচ্ছে। এদিকে সম্প্রতি পশ্চিমা দেশগুলো থেকে আধুনিক ট্যাংক ও অস্ত্র ইউক্রেনে পৌঁছালেও ইউক্রেন সেনারা এখনো সোভিয়েত আমলের অস্ত্রের ওপরই নির্ভরশীল। 

ইউক্রেন সেনা ঘাঁটিতে রাশিয়ার তৈরি বাক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার চাহিদা এখনো সবচেয়ে বেশি। এটি আকাশসীমার মধ্যে নিচু বা উঁচুতে উড়ে আসা রকেট, ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে পারে সহজেই। যুদ্ধের শুরু থেকে এ পর্যন্ত এই অস্ত্রটি রুশ আক্রমণকে ঠেকিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এই ব্যবস্থাটি ইউক্রেনীয় সম্মুখ সমরের সেনা বা জঙ্গলের মধ্যেও আর তেমন চোখে পড়ছে না। 

বাক পরিচালনার কমান্ডার জোসেফ বলেন, ‘এই ব্যবস্থা রাশিয়ার আক্রমণের প্রধান লক্ষ্যবস্তু। আমরা এসব অস্ত্র রক্ষার জন্য অনেক সতর্কতা অবলম্বন করছি।’ জোসেফ এই কথাগুলো বলছিলেন তখন তাঁদের হাতে থাকা বাকের মাথায় দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ছিল, যেখানে সাধারণত চারটি থাকে। 

চলতি মাসের শুরুতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিমালার গোপন নথি ফাঁস হয়েছে। এসব নথির সত্যতা ও ইউক্রেনে বাক ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের বিষয়ে জোসেফের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, এটি সত্য নয়।’ তবে তিনি জানান, ইউক্রেনের আরও বাক মিসাইল দরকার।

সোভিয়েত আমলের গ্রাদ রকেট লাঞ্চারই ইউক্রেনের ভরসা। চেক প্রজাতন্ত্র, রোমানিয়া ও পাকিস্তান থেকে এই অস্ত্র আসছেজোসেফ আরও বলেন, ‘আমাদের কাছে পর্যাপ্ত বাক ক্ষেপণাস্ত্র নেই। ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিরক্ষাব্যবস্থা মেরামতের জন্য যন্ত্রাংশও আমাদের কাছে নেই। কারণ, ইউক্রেনে এসবের কারখানা নেই।’

যুক্তরাষ্ট্রের গোপন নথি ফাঁস হওয়ার কিছু বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে জোসেফ বলেন, ‘এসব নথি ফাঁস হয়ে আসলে কি কোনো গোপন তথ্য বেরিয়ে পড়েছে? আমাদের আমেরিকার সঙ্গে বিরোধের কোনো কারণ আছে কি? ওই সব নথিতে আমাদের সম্পর্কে যেসব তথ্য ছিল, সেসব রাশিয়া ২০ বছর আগে থেকেই জানত। এসব আসলেই হাস্যকর।’ 
 
এদিকে রাশিয়া এখনো জানে না ইউক্রেনের আক্রমণাত্মক নীতি কখন বা কোথা থেকে শুরু হবে। ইউক্রেন এখন শুধু হারানো ৮০০ মাইল পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে। এর জন্য তারা আক্রমণাত্মক নীতিতে যাওয়ার আগে অস্ত্র সরঞ্জাম সংগ্রহ ও নতুন ইউনিট তৈরি করছে। যখনই ইউক্রেন আক্রমণাত্মক নীতিতে যাবে রাশিয়াকেও কিছু নীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। এখন দুই পক্ষই রণক্ষেত্রের সম্মুখভাগকে শক্তিশালী করছে। 

বাখমুতের পাশের একটি অঞ্চলে ইউক্রেন সেনাদের ৮০ নম্বর ব্রিগেডকে শত শত কামান প্রস্তুত করতে দেখা গেছে। তারা রুশ সেনাদের প্রতিহত করতে আগেভাগেই প্রস্তুত হচ্ছেন। তারা পশ্চিম থেকে আসা বিভিন্ন অস্ত্রও ব্যবহার করছে। 

এই ব্রিগেডের সেনাপতি সেরহি ও তাঁর সেনারা ব্রিটিশদের তৈরি এল-১১৯ কামানের গোলা ব্যবহার করছেন। সেহরি বলেন, ‘আমরা এসব পাচ্ছি রেশনের মতো। দিনে মাত্র ৩০টি গোলা ছুড়তে পারি। আমাদের যথেষ্ট সৈন্য রয়েছে এখন। কিন্তু সংকট গোলাবারুদের।’

এ বছর ইউক্রেনের জন্য জয় বা পরাজয় নির্ধারণের বছর কি না—এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখন আমরা যদি আক্রমণাত্মক নীতিতে যাই এবং হারানো অঞ্চল দখলে নিতে পারি, তাহলে এ বছরেই আমরা যুদ্ধে জিতে যাব। কিন্তু এমনটি যদি না হয় তাহলে কী হবে জানি না। কেননা, ৫ বা ১০ বছর ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার মতো অস্ত্রশস্ত্র আমাদের কাছে নেই।’

গ্রাদ কমান্ডার ভলোদিমিরের বক্তব্য আরও হতাশাজনক। তিনি বলেন, ‘দেশবাসী ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। অর্থনীতিও অচল হয়ে যাচ্ছে। ইউক্রেনের যুদ্ধনীতি এ বছরই নির্ধারণ করা না হলে পশ্চিমা সমর্থন কমতে পারে। পশ্চিমারাও সাহায্য করতে করতে আমাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এটি নিয়ে আমরা আরও উদ্বিগ্ন।’ 

ইউক্রেনের বাখমুত থেকে বিবিসির জোনাথন বিয়াল। অনুবাদ করেছেন মুহম্মদ আবদুল বাছেদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জাপানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টাকে প্রতিহতের ঘোষণা উত্তর কোরিয়ার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন। ছবি: এএফপি
উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন। ছবি: এএফপি

জাপানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের যে কোনো প্রচেষ্টা কঠোরভাবে প্রতিহত করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম কেসিএনএ রোববার (২১ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, জাপানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা যে কোনো মূল্যে রোধ করা উচিত, কারণ এটি মানবজাতির জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘ইনস্টিটিউট ফর জাপান স্টাডিজ’-এর পরিচালক এক বিবৃতিতে বলেন, জাপানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টা শুধু এশিয়া নয়, পুরো বিশ্বের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করবে। তাঁর ভাষায়, ‘জাপানের পারমাণবিক হওয়ার প্রচেষ্টা মানবজাতির জন্য এক মহাবিপর্যয় বয়ে আনবে।’

যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ার এই প্রতিক্রিয়ার পেছনে রয়েছে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক কর্মকর্তার সাম্প্রতিক মন্তব্য। জাপানের বার্তা সংস্থা কিয়োদো নিউজের খবরে বলা হয়, ওই কর্মকর্তা প্রকাশ্যে বলেছেন, টোকিওর পারমাণবিক অস্ত্র রাখা উচিত।

এই প্রেক্ষাপটে উত্তর কোরিয়া দাবি করেছে, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন বা বেপরোয়া মন্তব্য নয়; বরং জাপানের বহুদিনের পারমাণবিক অস্ত্রায়নের আকাঙ্ক্ষারই প্রতিফলন।

উত্তর কোরিয়ার মতে, জাপান তাদের তথাকথিত ‘অ-পারমাণবিক নীতি’ পুনর্বিবেচনার কথা বলে কার্যত একটি ‘লাল রেখা’ অতিক্রম করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, জাপানের কর্মকর্তাদের মন্তব্যগুলোই বলে দিচ্ছে, টোকিও এখন প্রকাশ্যেই পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের বাসনা জানাচ্ছে।

উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আরও দাবি করেছে, যুক্তরাষ্ট্র যখন গত অক্টোবরে দক্ষিণ কোরিয়াকে একটি পারমাণবিক সাবমেরিন নির্মাণের অনুমোদন দেয়, তার পরপরই জাপানে এই ধরনের বক্তব্য জোরালো হতে শুরু করে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ংয়ের সঙ্গে বাণিজ্য ও নিরাপত্তা ইস্যুতে শীর্ষ বৈঠকের পর ওই অনুমোদন দিয়েছিলেন।

উত্তর কোরিয়ার ওই কর্মকর্তা সতর্ক করে বলেন—জাপান যদি পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করে, তবে এশিয়া ভয়াবহ পারমাণবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। তবে তিনি পিয়ংইয়ংয়ের নিজস্ব পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

ধারণা করা হয়, উত্তর কোরিয়া নিজেই একটি ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডারের অধিকারী। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান থাকার পরও দেশটি তার পারমাণবিক সক্ষমতা বজায় রাখা ও সম্প্রসারণের ঘোষণা দিয়ে আসছে। গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে উত্তর কোরিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী কিম সন গিয়ং বলেন—পারমাণবিক অস্ত্র তাদের রাষ্ট্রীয় আইন, জাতীয় নীতি এবং সার্বভৌম অধিকারের অংশ, যা তারা কোনো পরিস্থিতিতেই ত্যাগ করবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলার আরও একটি তেলের ট্যাংকার ধাওয়া করছে মার্কিন বাহিনী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ১৪
ক্যারিবিয়ান সাগরে পানামা পতাকাবাহী সেঞ্চুরি নামের একটি তেলবাহী জাহাজের ওপর মার্কিন সামরিক বাহিনীর টহল। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
ক্যারিবিয়ান সাগরে পানামা পতাকাবাহী সেঞ্চুরি নামের একটি তেলবাহী জাহাজের ওপর মার্কিন সামরিক বাহিনীর টহল। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

ভেনেজুয়েলা উপকূলে আন্তর্জাতিক জলসীমায় আরও একটি তেলের ট্যাংকার ধাওয়া করছে মার্কিন কোস্ট গার্ড। আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) তিনজন মার্কিন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এটি সফল হলে এক সপ্তাহের মধ্যে ভেনেজুয়েলাসংশ্লিষ্ট তিনটি তেলবাহী জাহাজ জব্দ করার ঘটনা ঘটবে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহে ভেনেজুয়েলার ওপর ‘সর্বাত্মক নৌ অবরোধ’ ঘোষণার পর থেকে এই চিরুনি অভিযান শুরু হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মার্কিন কোস্ট গার্ড বর্তমানে একটি তেল ট্যাংকারকে ধাওয়া করছে। তবে অভিযানের সুনির্দিষ্ট অবস্থান বা জাহাজটির পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

এই অভিযান নিয়ে হোয়াইট হাউস বা পেন্টাগন থেকে তাৎক্ষণিক কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

হোয়াইট হাউসের ন্যাশনাল ইকোনমিক কাউন্সিলের ডিরেক্টর কেভিন হ্যাসেট আজ জানিয়েছেন, এর আগে জব্দ করা দুটি ট্যাংকার ‘ব্ল্যাক মার্কেট’ বা কালোবাজারের মাধ্যমে বিভিন্ন নিষিদ্ধ দেশে তেল সরবরাহ করছিল।

কেভিন হ্যাসেট দাবি করেছেন, এই আটকের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে তেলের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। তাঁর মতে, এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা এবং কেবল কালোবাজারি জাহাজগুলোকেই লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে।

তবে বাজার বিশ্লেষক ও তেল ব্যবসায়ীরা ভিন্নমত পোষণ করছেন। একজন তেল ব্যবসায়ী রয়টার্সকে বলেন, এই ধরনের পদক্ষেপ ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আগামীকাল সোমবার এশিয়ার বাজারে তেলের দাম বাড়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা তেলের দামের এই ঊর্ধ্বগতিকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।

গত সেপ্টেম্বর থেকে প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর ওপর চাপ বাড়াতে ট্রাম্প প্রশাসন এই অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। গত কয়েক মাসে প্রশান্ত মহাসাগর ও ক্যারিবিয়ান সাগরে ভেনেজুয়েলাসংশ্লিষ্ট ভেসেলগুলোর ওপর অন্তত দুই ডজন সামরিক হামলা চালানো হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, এসব সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত অন্তত ১০০ জন নিহত হয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলায় মার্কিন হস্তক্ষেপ নিয়ে সতর্ক করলেন লুলা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৫২
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। ছবি: সংগৃহীত
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান চাপ ও সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপ ‘ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়’ ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। তিনি মত দিয়েছেন, ভেনেজুয়েলায় কোনো ধরনের সশস্ত্র হস্তক্ষেপ শুধু ওই দেশের জন্য নয়, বরং পুরো পৃথিবীর জন্যই এক বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।

ব্রাজিলের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর ফোজ দো ইগুয়াসুতে দক্ষিণ আমেরিকার আঞ্চলিক জোট ‘মারকোসুর’-এর শীর্ষ সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে লুলা এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘ভেনেজুয়েলায় সশস্ত্র হস্তক্ষেপ একটি মানবিক বিপর্যয়ে রূপ নেবে। এটি এমন একটি নজির সৃষ্টি করবে, যা বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক হুমকি।’

এ বিষয়ে এক প্রতিবেদনে রোববার (২১ ডিসেম্বর) রয়টার্স জানিয়েছে, ভেনেজুয়েলা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনা সম্প্রতি আরও বেড়েছে। গত মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলায় যাতায়াতকারী সব নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘অবরোধ’ আরোপের নির্দেশ দেন। ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপকে নিকোলাস মাদুরো সরকারের ওপর চাপ বাড়ানোর নতুন কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে। ভেনেজুয়েলার অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি তেল খাতকে লক্ষ্য করেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

লুলা স্মরণ করিয়ে দেন, ফকল্যান্ডস যুদ্ধের চার দশকেরও বেশি সময় পর দক্ষিণ আমেরিকা আবারও অন্য মহাদেশীয় কোনো শক্তির সামরিক উপস্থিতির আশঙ্কায় ভুগছে। তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ আমেরিকা আবার এমন এক ভূতের ছায়ায় পড়ছে, যেখানে এই অঞ্চলের বাইরে থেকে আসা সামরিক শক্তি আমাদের শান্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।’

চলতি সপ্তাহের শুরুতেই লাতিন আমেরিকার দুই বৃহত্তম অর্থনীতির শীর্ষ নেতা ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দ্য সিলভা এবং মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেইনবাউম ভেনেজুয়েলা পরিস্থিতিতে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে গত শনিবারের বক্তব্যে লুলা আরও কঠোর দেখিয়েছেন।

‘মারকোসুর’ সম্মেলন শেষে দেওয়া এক যৌথ ঘোষণায় লাতিন আমেরিকার নেতারা ভেনেজুয়েলায় গণতান্ত্রিক নীতি ও মানবাধিকার রক্ষায় শান্তিপূর্ণ পথেই অগ্রসর হওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। এই ঘোষণায় আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে ও পানামার প্রেসিডেন্টদের পাশাপাশি বলিভিয়া, ইকুয়েডর ও পেরুর শীর্ষ কর্মকর্তারাও সমর্থন জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ট্রেনের ভাড়া বাড়ছে ভারতেও

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২৬ ডিসেম্বর থেকে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ছবি: সংগৃহীত
২৬ ডিসেম্বর থেকে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ছবি: সংগৃহীত

ভারতেও ট্রেনের ভাড়া বাড়ছে। পকেটে টান পড়তে যাচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের। ২৬ ডিসেম্বর থেকে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তবে স্বস্তির খবর হলো, লোকাল ট্রেনের ভাড়া অপরিবর্তিত থাকছে। মূলত দূরপাল্লার যাত্রীদের জন্যই এই বাড়তি ভাড়া কার্যকর হবে।

ভারতের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ঘোষণা অনুযায়ী, ভ্রমণের দূরত্ব ও কোচের ধরনভেদে নতুন ভাড়ার হার নির্ধারিত হবে। ২১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত সাধারণ শ্রেণিতে ভাড়ায় কোনো পরিবর্তন নেই। তবে ২১৫ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বের ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটারে এক পয়সা করে ভাড়া বাড়বে।

মেল বা এক্সপ্রেস ট্রেনের (নন-এসি) যাত্রীদের জন্য প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া বাড়বে দুই পয়সা। এসি কোচ বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোচের ক্ষেত্রেও কিলোমিটার প্রতি দুই পয়সা ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।

তবে যদি কোনো যাত্রী নন-এসি কোচে ৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন, নতুন নিয়ম অনুযায়ী তাঁকে আগের চেয়ে ১০ রুপি বেশি ভাড়া দিতে হবে।

কেন এই ভাড়া বৃদ্ধি

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত এক দশকে রেলপথ সম্প্রসারণের ফলে জনবল এবং অন্যান্য ব্যয় বহুগুণ বেড়েছে। রেলওয়ের বর্তমান জনবল ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি রুপিতে এবং পেনশনের পেছনে খরচ হচ্ছে ৬০ হাজার কোটি রুপি। সব মিলিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট পরিচালনা ব্যয় বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি রুপি।

যাত্রীদের ভাড়া ও পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে খরচ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে রেলওয়ে। এর আগে গত জুলাই মাসেও ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল (নন-এসিতে এক পয়সা ও এসিতে দুই পয়সা)। তারও আগে ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি বড় ধরনের ভাড়া বৃদ্ধি কার্যকর করা হয়েছিল, যেখানে এসি কোচে ভাড়া বেড়েছিল কিলোমিটার প্রতি চার পয়সা পর্যন্ত।

রেলওয়ে কর্মকর্তাদের মতে, উন্নত সেবা এবং ক্রমবর্ধমান ব্যয় মেটাতে এই সামান্য ভাড়া বৃদ্ধি অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল। কর্তৃপক্ষ আশা করছে, এই ভাড়া বৃদ্ধির ফলে রেলওয়ের বার্ষিক আয় প্রায় ৬০০ কোটি রুপি বাড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত