Ajker Patrika

রাশিয়ার যে ১৪টি ক্ষেপণাস্ত্রের সমকক্ষ নেই পশ্চিমাদের কাছে

রাশিয়ার একটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। ছবি: প্রাভদা
রাশিয়ার একটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। ছবি: প্রাভদা

বিশ্ব যখন রাশিয়ার সাম্প্রতিক ওরেশনিক হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে আলোচনা করছে, তখন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আসন্ন আক্রমণের জন্য নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করছে। গত ২৮ নভেম্বর পুতিনের কাছে জানতে চাওয়া হয়, রাশিয়া কিয়েভের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কেন্দ্রগুলোতে হামলা করতে পারে কিনা? জবাবে রুশ প্রেসিডেন্ট সোভিয়েত আমলের একটি কৌতুক শুনিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘সোভিয়েত আমলে আবহাওয়া পূর্বাভাস নিয়ে একটি কৌতুক প্রচলিত ছিল: আজকের পূর্বাভাস—আজ যেকোনো কিছু ঘটতে পারে।’

পুতিনের ভাষ্য থেকে এটি স্পষ্ট যে, রাশিয়া চাইলেই ইউক্রেনের কৌশলগত নীতি নির্ধারণী কেন্দ্রগুলোতে আঘাত হানতে পারে। তারই প্রমাণ দিতেই যেন, রাশিয়া আজ শনিবার কিয়েভের গোয়েন্দা সংস্থা এসবিইউ—এর প্রধান কার্যালয়ে ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আঘাত হেনেছে।

রাশিয়ার অস্ত্রাগারে ইউক্রেনে অতিসম্প্রতি ব্যবহার করা ওরেশনিক ছাড়াও আরও ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে—যেমন: কিনঝাল, বুলাভা, ইয়ারস, ইস্কান্দার এবং সারমাত। প্রতিটিরই দেশের কৌশলগত প্রতিরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এবং এটি রাশিয়ার সামরিক-শিল্প কমপ্লেক্সের প্রযুক্তিগত স্তরকেই উদ্ভাসিত করে।

ওরেশনিক

রুশ সশস্ত্র বাহিনী ইউক্রেনের কারখানাগুলোতে ওরেশনিক (হ্যাজেল গাছ) ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে হামলা চালানোর পর এই ক্ষেপণাস্ত্রটির বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়। পশ্চিমা বিশ্ব তাদের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলা করার অনুমতি ইউক্রেনকে দেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়া এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে হামলা চালায়।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ওরেশনিক একটি হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র যা মাখ ১০ বা শব্দের গতির চেয়ে ১০ গুণ বেশি পর্যন্ত গতিতে চলতে সক্ষম। আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এটিকে পরাস্ত করতে পারবে না। কিছু সমরাস্ত্র বিশেষজ্ঞ ওরেশনিককে আরএস-২৬ রুবেজের অনুরূপ বলে মনে করেন। ওরেশনিক ক্ষেপণাস্ত্র ছয়টি ওয়ারহেড বহন করতে পারে এবং এক মেগাটন ওজনের পারমাণবিক ওয়ারহেডও বহন করতে পারে। এই ক্ষেপণাস্ত্র ৮ থেকে ১৯ মিনিটের মধ্যে ইউরোপের যেকোনো স্থানে আঘাত হানতে সক্ষম।

কিনঝাল

রাশিয়া কিনঝাল (ড্যাগার) ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রথম ব্যবহার করে ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযানের অংশ হিসেবে। তবে ২০১৮ সালের মার্চে কিনঝাল ক্ষেপণাস্ত্র রুশ ক্ষেপণাস্ত্র বহরে যুক্ত করা হয়। এটি মাক ১২ বা শব্দের গতির চেয়ে ১২ গুণ বেশি গতিতে চলতে সক্ষম। এই ক্ষেপণাস্ত্রটিকে মিগ-৩১ এবং এসইউ-৩৪ বিমান থেকে নিক্ষেপ করা যেতে পারে এবং ভবিষ্যতে টু-২২ এম ৩ বিমান থেকে নিক্ষেপ করা হবে। ২০২২ সালে, একটি কিনঝাল মিসাইল কিয়েভে পাঁচটি প্যাট্রিয়ট লঞ্চার ধ্বংস করে। এটি ৫০০ কেজি ওজনের প্রচলিত বা পারমাণবিক ওয়ারহেড বহন করতে পারে এবং এর পাল্লা ২ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি।

বুলাভা

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ২০২৪ সালের ৭ মে আর-৩০ বুলাভা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রুশ বাহিনীতে যুক্ত করার এক আদেশে স্বাক্ষর করেন। প্রাথমিকভাবে এই ক্ষেপণাস্ত্রটিকে ১৯৯৮ সালে তৈরি করা হয়। তবে পরীক্ষা করা হয় ২০০৪ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে। মূলত সাবমেরিন থেকে নিক্ষেপের জন্য এই ক্ষেপণাস্ত্রটিকে তৈরি করা হয়। এটি এই ধরনের প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র যা সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের পরে তৈরি হয়। রাশিয়ার প্রজেক্ট-৯৫৫ এবং ৯৫৫-এ বোরেই সাবমেরিন এই ক্ষেপণাস্ত্রের প্রধান বাহক। বুলাভার পাল্লা ৯ হাজার ৩০০ কিলোমিটার এবং এটি ৬ থেকে ১০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড বহন করতে পারে।

স্যাটান

আর-৩৬ এম স্যাটান একটি কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা। এর দৈর্ঘ্য ৩৩ দশমিক ৬৫ মিটার এবং ওজন ২০৮ টন। পাল্লা ১৬ হাজার কিলোমিটার। এটি দুটি ধাপের তরল জ্বালানির ক্ষেপণাস্ত্র। এটি ১৯৭৩ সালে প্রথম পরীক্ষা করা হয়। তখন থেকেই এটি সবচেয়ে শক্তিশালী আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা হিসেবে পরিগণিত হয়ে আসছে। ১৯৮৮ সালে আর-৩৬ এম ২ ভোভোদা নামে একটি সংস্করণ চালু হয়। আধুনিক মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এটি বেশ কার্যকর।

টোপল-এম

আরটি-২ এমপি ২ টোপল-এম একটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক মিসাইল। যার দৈর্ঘ্য ২২ দশমিক ৭ মিটার এবং ব্যাস ১ দশমিক ৮৬ মিটার, ওজন ৪৭ দশমিক ১ টন। এর পাল্লা ১১ হাজার কিলোমিটার। এটি তিন-স্তর বিশিষ্ট সলিড ফুয়েল ক্ষেপণাস্ত্র। যার মূল কাঠামোটি ফাইবারগ্লাসের। এটি প্রথমবার ১৯৯৪ সালের শেষে নিক্ষেপ করা হয়। ২০১২ সালের শেষে রাশিয়ার ৬০টি সাইলোতে এবং ১৮টি মোবাইল মিসাইল সিস্টেমে এই ক্ষেপণাস্ত্র চালু ছিল।

ইয়ারস

আর-২৪ ইয়ারস ক্ষেপণাস্ত্রের দৈর্ঘ্য ২৩ মিটার এবং ব্যাস ২ মিটার, পাল্লা ১১ হাজার কিলোমিটার। প্রথম নিক্ষেপ করা হয় ২০০৭ সালে হয়। টোপল-এম এর তুলনায় ইয়ারসের একাধিক ওয়ারহেড এবং ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা অতিক্রমের ব্যবস্থা। এই বৈশিষ্ট্যগুলো ইয়ারসকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে কার্যকর করে তোলে।

ইউআর-১০০এন

ইউআর-১০০এন তৃতীয় প্রজন্মের আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক মিসাইল। এটি একাধিক স্বাধীনভাবে চলতে সক্ষম রিএন্ট্রি ওয়ারহেড বহনে সক্ষম। এর দৈর্ঘ্য ২৪ দশমিক ৩ মিটার দীর্ঘ এবং আড়াই মিটার ব্যাসের এই ক্ষেপণাস্ত্রের ওজন ১০৫ দশমিক ৬ টন। এটি ১০ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে। এটিকে প্রথম পরীক্ষা করা হয় ১৯৭৩ সালের ৯ এপ্রিল বাইকোনুর পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে।

মলোদেৎস

১৫জেডএইচ৬০ মলোদেৎস একটি কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা। এটি ২২ দশমিক ৬ মিটার দীর্ঘ এবং ২ দশমিক ৪ মিটার ব্যাসের এই ক্ষেপণাস্ত্রের ওজন ১০৪ দশমিক ৫ টন এবং এর পাল্লা ১০ হাজার কিলোমিটার। এটি একটি তিন-স্তরের সলিড ফুয়েল আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র। এটি রেল ও স্থির অবকাঠামো থেকে ব্যবহার করা যায়। এটি ১৯৮৭ সালে সোভিয়েত আমলে রুশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় যুক্ত হয়।

কেএইচ-১০১—কেএইচ-১০২

এটি নতুন প্রজন্মের কৌশলগত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। ৭ দশমিক ৪৫ মিটার দৈর্ঘ্যের এই ক্ষেপণাস্ত্রটির ব্যাস ৭৪২ মিলিমিটার এবং ওজন ২.২-২. ৪ টন। পাল্লা ৫ থেকে সাড়ে ৫ হাজার কিলোমিটার। এটি ৪০০ কেজির দুটি ওয়ারহেড বহনে সক্ষম এবং দুটিই পৃথক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।

বুরিয়া

কেএইচ-২২ বুরিয়া ক্রুজ মিসাইল ১৯৬০-এর দশকে প্রথম প্রস্তুত করা হয়। এটি আধুনিক ইউক্রেনীয় আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে পারে। এটি একটি দূর-পাল্লার সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। যা টু-২২ এবং টু-৯৫ বোম্বার থেকে নিক্ষেপ করা যায়। এর পাল্লা ৬০০ কিলোমিটার পর্যন্ত এবং গতি মাক ৫ বা শব্দের গতির চেয়ে ৫ গুণ বেশি। এটি শত্রুর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা—যেমন মার্কিন প্যাট্রিয়ট সিস্টেমকে ফাঁকি দিতে পারে।

ইস্কান্দার

রাশিয়া ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযানের সময় ইউক্রেনে ইস্কান্দার ক্ষেপণাস্ত্র প্রথম যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করে। ২০০৭ সালে প্রথম এটিকে কমিশন করা হয়। ইস্কান্দার আকাশ প্রতিরক্ষা, কমান্ড পোস্ট এবং অবকাঠামোগত সুবিধা ধ্বংস করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এটি ৪৮০ কেজি ওয়ারহেড বহনে সক্ষম। পাল্লা ৫০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার।

জিরকন

৩ এম ২২ জিরকন একটি হাইপারসনিক অ্যান্টি-শিপ ক্ষেপণাস্ত্র। এর গতি মাক ৯ এবং পাল্লা ১ হাজার কিলোমিটারের বেশি। এটি ফ্রিগেট ও সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। এর মূল উদ্দেশ্য জাহাজ ও সামরিক স্থাপনায় আঘাত হানা। এর পাল্লা ৪৫০-১০০০ কিলোমিটার, দৈর্ঘ্য ৮-৯.৫ মিটার এবং ৩০০-৪০০ কেজি ওয়ারহেড বহন করতে পারে।

সারমাত

আরএস-২৮ সারমাত একটি পঞ্চম প্রজন্মের কৌশলগত মিসাইল সিস্টেম। এটি বহু-স্তরের তরল জ্বালানির আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র। এটি বোম্বার্ডমেন্ট প্রযুক্তি এবং হাইপারসনিক আঁভাগার্দ ওয়ারহেডের মাধ্যমে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বাইপাস করতে সক্ষম। ২০২২ সালের ২০ এপ্রিল এর প্রথম পরীক্ষা করা হয় এবং একই বছর এর ধারাবাহিক উৎপাদন শুরু হয়। ২০২৩ সালে এই কমপ্লেক্সটি যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়। কিন্তু ব্যবহার করা হয়নি।

ক্যালিব্র

ক্যালিব্র বা ক্যালিবার একটি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। এই সিরিজের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো প্রকল্পগুলো ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে তৈরি। ২০১৯ সাল থেকে এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো রাশিয়ার নৌবাহিনী ব্যবহার শুরু করেছে। ভূমি থেকে নিক্ষেপ করা যায়, এই ক্ষেপণাস্ত্রের এমন একটি সংস্করণ উন্নয়নের কাজ চলছে। এর সর্বোচ্চ পাল্লা ২ হাজার কিলোমিটার।

তথ্যসূত্র: প্রাভদা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

থাই-কম্বোডিয়া সীমান্তে গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো বিষ্ণু মূর্তি, নিন্দা জানাল ভারত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মূর্তিটি ২০১৪ সালে নির্মিত হয়েছিল। ছবি: সংগৃহীত
মূর্তিটি ২০১৪ সালে নির্মিত হয়েছিল। ছবি: সংগৃহীত

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া সীমান্তে দুই দেশের মধ্যকার বিরোধপূর্ণ এলাকায় ভগবান বিষ্ণুর একটি মূর্তি ধ্বংসের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করেছে ভারত। আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই ঘটনাকে একটি ‘অসম্মানজনক কাজ’ হিসেবে অভিহিত করেছে এবং সংশ্লিষ্ট দুই দেশকেই আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে আসার আহ্বান জানিয়েছে।

কম্বোডিয়ার প্রিয়া বিহার প্রদেশের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, গত সোমবার (২২ ডিসেম্বর) থাই সামরিক বাহিনী একটি এক্সকাভেটর ব্যবহার করে ভগবান বিষ্ণুর মূর্তিটি গুঁড়িয়ে দেয়।

বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূর্তিটি ২০১৪ সালে নির্মিত হয়েছিল। এটি সীমান্ত থেকে প্রায় ১০০ মিটার ভেতরে কম্বোডিয়ার আন সেস এলাকায় অবস্থিত ছিল।

প্রিয়া বিহারের মুখপাত্র লিম চানপানহা এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘বৌদ্ধ ও হিন্দু অনুসারীদের কাছে পূজনীয় প্রাচীন মন্দির ও মূর্তি ধ্বংসের এই ঘটনা আমরা কোনোভাবেই মেনে নেব না।’ তবে থাইল্যান্ডের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে বলেন, সীমান্ত বিরোধের জের ধরে এ ধরনের কাজ অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি বলেন, ‘ভূখণ্ড নিয়ে দাবি যাই থাকুক না কেন, এ ধরনের অসম্মানজনক কাজ বিশ্বজুড়ে হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে। এমন ঘটনা ঘটা উচিত নয়।’

ভারত আবারও উভয় পক্ষকে শান্তি বজায় রাখতে এবং জানমাল ও ঐতিহ্যের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সংলাপ ও কূটনীতির পথে ফেরার অনুরোধ জানিয়েছে।

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে ৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত নিয়ে বিরোধ দীর্ঘদিনের। ঔপনিবেশিক আমলের সীমানা নির্ধারণকে কেন্দ্র করে এই বিরোধের শুরু। গত জুলাইয়ে পাঁচ দিনের লড়াইয়ে কয়েক ডজন মানুষ নিহত হয়েছিল। গত ডিসেম্বরে নতুন করে শুরু হওয়া সংঘাতে এ পর্যন্ত ৪০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন এবং প্রায় ১০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

বুধবার থেকে উভয় দেশের সামরিক কর্মকর্তারা আবারও যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন।

বিষ্ণু মূর্তি ধ্বংসের এই ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ভারতসহ বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক মহল আশা করছে, সংঘাতের পরিবর্তে শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমেই এই সংকটের সমাধান হবে। হিন্দু ও বৌদ্ধ দেবতারা এই অঞ্চলের মানুষের কাছে অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্র এবং এটি আমাদের অভিন্ন সভ্যতা ও ঐতিহ্যের অংশ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাজায় ধ্বংসস্তূপের মাঝেই বড়দিনের আনন্দ খুঁজছে ক্ষুদ্র খ্রিস্টান সম্প্রদায়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গত ২১ ডিসেম্বর গাজা সিটিতে ক্রিসমাস উদযাপনের আগে হলি ফ্যামিলি ক্যাথলিক চার্চের বাইরে গাজার শিশু ও সন্ন্যাসিনীরা। ছবি: এপির সৌজন্যে
গত ২১ ডিসেম্বর গাজা সিটিতে ক্রিসমাস উদযাপনের আগে হলি ফ্যামিলি ক্যাথলিক চার্চের বাইরে গাজার শিশু ও সন্ন্যাসিনীরা। ছবি: এপির সৌজন্যে

গাজা উপত্যকায় গত দুই বছর ধরে চলা ধ্বংসলীলা আর লাশের মিছিলের মাঝেও বড়দিনের আনন্দ ফিরে পাওয়ার এক বিষাদময় চেষ্টা চালাচ্ছে সেখানকার ক্ষুদ্র খ্রিস্টান সম্প্রদায়। একটি নড়বড়ে যুদ্ধবিরতি কিছুটা স্বস্তি দিলেও, ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধের ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি আর বাস্তুচ্যুত মানুষের হাহাকার অনেক ঐতিহ্যবাহী উৎসবকে ম্লান করে দিয়েছে।

৭৬ বছর বয়সী আত্তাল্লাহ তরাজি সম্প্রতি বড়দিনের উপহার হিসেবে এক জোড়া মোজা আর স্কার্ফ পেয়েছেন। গাজার কনকনে শীত থেকে বাঁচতে এগুলোই এখন তাঁর বড় সম্বল। গির্জার অন্যান্য সদস্যদের সাথে তরাজি যখন গাইলেন—‘খ্রিস্টের জন্ম হয়েছে, হালেলুইয়া’ (একটি হিব্রু শব্দ, যার অর্থ প্রভুর প্রশংসা), তখন কিছুক্ষণের জন্য হলেও যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার বিভীষিকা ঢাকা পড়েছিল বিশ্বাসের সুরে।

গাজার সেন্ট্রাল সিটি এলাকার ‘হলি ফ্যামিলি চার্চ’ কম্পাউন্ডে আশ্রয় নেওয়া তরাজি বলেন, ‘আমরা এই পবিত্র মুহূর্তে যুদ্ধ, বিপদ আর বোমাবর্ষণের কথা ভুলে যেতে চাই। খ্রিস্টের জন্মের আনন্দ আমাদের সব তিক্ততাকে ছাপিয়ে যাক।’

তবে সবার জন্য উৎসবের অনুভূতি এক নয়। শাদি আবু দাউদের জন্য এবারের বড়দিনটি অত্যন্ত কষ্টের। গত জুলাই মাসে এই ক্যাথলিক চার্চ কম্পাউন্ডেই ইজরায়েলি হামলায় তাঁর মা নিহত হন ও ছেলে আহত হয়। ইজরায়েল একে ‘দুর্ঘটনা’ বলে দুঃখ প্রকাশ করলেও স্বজন হারানোর ক্ষত এখনও দগদগে। আবু দাউদ বলেন, জখম এখনও কাঁচা। এখানে কোনো উৎসব নেই, আমরা এখনও ‘না যুদ্ধ না শান্তি’র এক অদ্ভুত অবস্থার মধ্যে বাস করছি।

গাজার প্রায় ২০ লাখ বাসিন্দার মধ্যে খ্রিস্টানদের সংখ্যা এখন নগণ্য। যুদ্ধের কারণে অনেক পরিবার দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। ২৩ বছর বয়সী ওয়াফা ইমাদ এলসায়েঘ জানান, বন্ধুবান্ধব আর আত্মীয়রা না থাকায় আগের মতো আমেজ নেই। তিনি বলেন, ‘আমরা পরিবার নিয়ে সাজসজ্জা করছি ঠিকই, কিন্তু যাদের সাথে সব আনন্দ ভাগ করে নিতাম, তারা আজ গাজায় নেই। এই পরিবেশ আগের মতো করে আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।’

৩৫ বছর বয়সী মা এলিনোর আমাশ তাঁর সন্তানদের মুখে হাসি ফোটাতে ঘরে বড়দিনের গাছ (ক্রিসমাস ট্রি) সাজিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার সন্তানেরা কিছু চকলেট আর মিষ্টি পেয়ে বোমার ভয় ছাড়া শ্বাস নিতে পারছে। কিন্তু তাবুগুলোতে বসবাসকারী মানুষের কষ্ট দেখে চোখে জল আসে।’

গাজার খ্রিস্টানরা মনে করেন, তাঁরা সংখ্যায় যত কমই হোক না কেন, এটি এই ভূমির প্রতি ভালোবাসা এবং বিশ্বাসের এক অটল সাক্ষ্য। আত্তাল্লাহ তরাজি প্রার্থনা করেন যেন তাঁর জাতি শান্তি ও স্বাধীনতা পায়। তিনি বিশ্বাস করেন, এই পরিস্থিতির চেয়েও বড়দিনের আনন্দ এবং তাঁদের বিশ্বাস অনেক বেশি শক্তিশালী।

গত অক্টোবর থেকে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির পর গাজায় হামলার তীব্রতা কমলেও মাঝেমধ্যেই প্রাণঘাতী আঘাত আসছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইজরায়েলি অভিযানে এ পর্যন্ত প্রায় ৭১ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অর্ধেকই নারী ও শিশু।

অতিবৃষ্টিতে বাস্তুচ্যুত মানুষের তাবুগুলো তলিয়ে গেছে, যা ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মস্কোতে বিস্ফোরণ, দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ নিহত তিন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ৪২
মস্কোর ঘটনাস্থলে পুলিশ। ছবি: বিবিসি
মস্কোর ঘটনাস্থলে পুলিশ। ছবি: বিবিসি

রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে এক বিস্ফোরণে দুজন ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা এবং আরেকজন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। রাশিয়ার তদন্ত সংস্থাগুলোর বরাতে জানা গেছে, দক্ষিণ মস্কোর ইয়েলেতস্কায়া স্ট্রিট এলাকায় এই বিস্ফোরণ ঘটে স্থানীয় সময় বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) ভোরে। ঘটনাস্থলটি সেই জায়গার কাছে, যেখানে চলতি সপ্তাহের শুরুতে এক রুশ জেনারেল গাড়িবোমা হামলায় নিহত হয়েছিলেন।

রাশিয়ার ইনভেস্টিগেটিভ কমিটির বিবৃতির বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে আটকের চেষ্টা করার সময় বিস্ফোরণটি ঘটে। পুলিশ কর্মকর্তারা যখন ওই ব্যক্তির কাছে যান, তখনই একটি বিস্ফোরক ডিভাইস সক্রিয় হয়ে যায়। বিস্ফোরণের ফলে ঘটনাস্থলেই দুই পুলিশ কর্মকর্তা প্রাণ হারান। এ সময় তাঁদের পাশে থাকা আরেকজন ব্যক্তিও বিস্ফোরণে নিহত হন।

নিহত দুই পুলিশ কর্মকর্তার বয়স ছিল ২৪ ও ২৫ বছর। আল জাজিরার মস্কো প্রতিনিধি ইউলিয়া শাপোভালোভার তথ্য অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে একজনের স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। তিনি বলেন, ‘এটি তাদের পরিবারের জন্য এক ভয়াবহ ট্র্যাজেডি।’ বিস্ফোরণের প্রকৃত উদ্দেশ্য এখনো স্পষ্ট নয় বলে জানিয়েছে রুশ কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিস্ফোরণের শব্দ ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী। কাছাকাছি বসবাসকারী আলেক্সান্ডার নামের এক ব্যক্তি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘একটা ভয়ংকর শব্দ হয়েছিল, কয়েক দিন আগের গাড়ি বিস্ফোরণের মতোই।’ আরেক বাসিন্দা রোজা জানান, বিস্ফোরণের সময় তাঁদের পুরো ভবনটি কেঁপে ওঠে এবং তিনি ঘুম থেকে জেগে ওঠেন।

বিস্ফোরণের পরপরই এলাকাটি ঘিরে ফেলে পুলিশ বাহিনী। রুশ টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ছবিতে দেখা গেছে, ঘটনাস্থলে ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। তদন্তকারীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এবং বিস্ফোরক পাচারের অভিযোগে একটি মামলা করেছে।

এই বিস্ফোরণ ঘটেছে সেই এলাকার কাছে, যেখানে গত সোমবার রুশ জেনারেল ফানিল সারভারভ গাড়ির নিচে পেতে রাখা বিস্ফোরক ডিভাইসের মাধ্যমে নিহত হন। সারভারভ রুশ জেনারেল স্টাফের অপারেশনাল ট্রেনিং বিভাগের প্রধান ছিলেন এবং ইউক্রেনে চলমান সামরিক অভিযানের জন্য সেনাদের প্রশিক্ষণের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

রাশিয়া জেনারেল সারভারভ হত্যার পেছনে ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। তবে ইউক্রেন এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে রাশিয়া ও দখল করা ইউক্রেনীয় অঞ্চলে একাধিক বিস্ফোরণের ঘটনায় রুশ সামরিক কর্মকর্তা এবং এই যুদ্ধের সমর্থক বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শানলিউরফা: নবীদের যে নগরে মিলেছে তিন ধর্মের মানুষ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
তুরস্কের শানলিউরফা শহর। ছবি: সিএনএন
তুরস্কের শানলিউরফা শহর। ছবি: সিএনএন

দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কের শানলিউরফা শহরকে বলা হয় ‘নবীদের নগরী’। সিরিয়া সীমান্ত থেকে মাত্র ৪০ মাইল উত্তরে অবস্থিত এই শহরটি হাজার বছরের ইতিহাস, ধর্মীয় বিশ্বাস ও সংস্কৃতির এক অনন্য সংযোগস্থল। এখানে ইহুদি, খ্রিষ্টান ও ইসলাম—এই তিন একেশ্বরবাদী ধর্মের কাহিনি এসে মিলেছে।

বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সিএনএন জানিয়েছে, শানলিউরফার পুরোনো শহরের দেরগাহ মসজিদ কমপ্লেক্সে অবস্থিত নীলাভ পানির ‘বালিক্লিগোল’ বা ‘মাছের হ্রদ’। মূলত এখানে আছে দুটি পুকুর। ধর্মীয় মতে, দুটি পুকুরের বড়টিতে নবী ইব্রাহিম (আ.)-কে আগুনে নিক্ষেপ করেছিলেন মেসোপটেমিয়ার রাজা নমরুদ। আল্লাহ তৎক্ষণাৎ ওই আগুনকে পানি এবং জ্বলন্ত কাঠকে মাছে রূপান্তরিত করেছিলেন। এ ছাড়া ‘আইনজেলিহা’ নামের ছোট পুকুরটির নামকরণ করা হয়েছে নমরুদের কন্যা জেলিহার নামে। ইব্রাহিম নবীর প্রতি বিশ্বাসের কারণে এই পুকুরে আগুনে ঝাঁপ দিয়ে জেলিহা প্রাণ হারিয়েছিলেন বলে বিশ্বাস।

দুটি পুকুরই কালো দাগওয়ালা কার্প মাছে ভরা। এগুলোকে পবিত্র মনে করা হয়। তাই এই মাছগুলোকে ধরা বা এগুলোর ক্ষতি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এই কারণেই বালিক্লিগোল শুধু একটি পর্যটনস্থল নয়, বরং গভীর ধর্মীয় আবেগ ও ইতিহাসের প্রতীক। মাছের গায়ে থাকা কালো দাগগুলোকে আগুনের ছাইয়ের চিহ্ন হিসেবে ধরে নেওয়া হয়।

বালিক্লিগোলে ভেসে বেড়ায় কালো দাগওয়ালা কার্প মাছ। ছবি: সিএনএন
বালিক্লিগোলে ভেসে বেড়ায় কালো দাগওয়ালা কার্প মাছ। ছবি: সিএনএন

ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে শানলিউরফা নানা নামে পরিচিত ছিল। আরামীয়রা একে ডাকত উরহাই, গ্রিক শাসনামলে নাম ছিল এডেসা, আরব বিজয়ের পর নাম হয় রোহা। অটোমানেরা ১৬০৭ সালে এই নগরীর নাম রাখে উরফা। পরে ১৯৮৪ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রতিরোধের স্বীকৃতি হিসেবে যুক্ত হয় ‘শানলি’, অর্থাৎ ‘গৌরবময়’।

এই শহরটি ইব্রাহিম (আ.), আইয়ুব (আ.), নূহ (আ.) ও জেথ্রোর মতো নবীদের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে বিশ্বাস করা হয়। পুরোনো শহরের দেরগাহ মসজিদ কমপ্লেক্সে অবস্থিত বালিক্লিগোল মুসলিম তীর্থযাত্রীদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র। এখানেই রয়েছে মেভলিদ-ই-হালিল গুহা। বিশ্বাস করা হয়, এখানেই জন্ম হয়েছিল ইব্রাহিম নবীর। নারীরা সন্তান কামনায় ও আরোগ্য লাভের আশায় এই গুহায় আসেন।

তবে শানলিউরফার ইতিহাস শুধু ধর্মগ্রন্থেই সীমাবদ্ধ নয়। শহরটি থেকে ১৪ মাইল দূরেই আছে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন ধর্মীয় স্থাপনা বা উপাসনালয় হিসেবে চিহ্নিত ‘গ্যোবেকলি তেপে’। প্রায় ১১-১২ হাজার বছরের পুরোনো এই স্থাপনাটি মানবসভ্যতার ধারণাকেই বদলে দিয়েছে। খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় ৯৬০০ সালের এই নিওলিথিক স্থাপনাটি কৃষি ও মৃৎশিল্পের আগেই নির্মিত—যা প্রমাণ করে, ধর্মীয় আচার হয়তো সভ্যতার সূচনাতেও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এখানে পাওয়া টি-আকৃতির স্তম্ভ ও খোদাই করা পশুর ভাস্কর্য বিশ্বব্যাপী বিস্ময় সৃষ্টি করেছে।

পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন ধর্মীয় স্থাপনা বা উপাসনালয় হিসেবে চিহ্নিত ‘গ্যোবেকলি তেপে’। ছবি: সিএনএন
পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন ধর্মীয় স্থাপনা বা উপাসনালয় হিসেবে চিহ্নিত ‘গ্যোবেকলি তেপে’। ছবি: সিএনএন

শানলিউরফা প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে ১০ হাজারের বেশি নিদর্শন। এর মধ্যে ‘উরফা ম্যান’ নামের ১১ হাজার ৫০০ বছরের পুরোনো মানব মূর্তিটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। পাশেই হালেপলিবাহচে মোজাইক জাদুঘর ও কিজিলকয়ুন নেক্রোপলিস শহরের রোমান যুগের ইতিহাস তুলে ধরে।

ইতিহাস ও ধর্মের পাশাপাশি শানলিউরফা খাবার ও আতিথেয়তার জন্যও বিখ্যাত। উরফা কাবাব, পাটলিজান কাবাব, চি কফতে ও শিল্লিক তাতলিসি এখানকার জনপ্রিয় খাবার। স্থানীয়দের সঙ্গে ধীরে চা পান, পুরোনো বাজারে হাঁটা আর ‘সিরা গেসেসি’ নামের সাংস্কৃতিক আড্ডায় অংশ নিলে বোঝা যায়—এই শহর শুধু দেখার নয়, অনুভব করারও।

শানলিউরফা নগরীতে ‘সিরা গেসেসি’ নামে রাতের আড্ডা। ছবি: সিএনএন
শানলিউরফা নগরীতে ‘সিরা গেসেসি’ নামে রাতের আড্ডা। ছবি: সিএনএন

বলা যায়—শানলিউরফা যেন এক জীবন্ত জাদুঘর; যেখানে ধর্ম, ইতিহাস ও মানবসভ্যতার গল্প একসূত্রে গেঁথে পাশাপাশি হাঁটে অতীত ও বর্তমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত