Ajker Patrika

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে মাখোঁর ‘এন্ডগেম’ প্রস্তাব, যা আছে এতে

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। ছবি: এএফপি
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। ছবি: এএফপি

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী দীর্ঘ বৈঠকের পর ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি নিয়ে সুস্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই একটি শান্তি বা যুদ্ধবিরতি চুক্তি হতে পারে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের বিস্তারিত বিবরণও তিনি তুলে ধরেন এবং এর সম্ভাব্য ফলাফল সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে প্রেসিডেন্ট মাখোঁ পুরো ইউরোপের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন। কারণ, ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে ইউরোপের নিরাপত্তা নিয়ে তাদের উদ্বেগ অভিন্ন। গত সপ্তাহে মাখোঁ প্যারিসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন, সেই সময় রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেন ইস্যুতে সৌদি আরবে আলোচনা চালাচ্ছিল।

প্যারিসে বৈঠকে বসা ইউরোপীয় নেতারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া সরাসরি কোনো চুক্তিতে পৌঁছায়, তবে ইউরোপের নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগ উপেক্ষিত হতে পারে। তারা দাবি জানান, ইউক্রেন যুদ্ধের আলোচনায় ইউক্রেন ও ইউরোপের উপস্থিতি নিশ্চিত করতেই হবে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিন বছর ধরে চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই শেষ হবে, আর প্রেসিডেন্ট মাখোঁও তাঁর আশাবাদে একমত হয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইউক্রেন সংকটের আলোচনায় ট্রাম্পের অংশগ্রহণ একটি ‘গেম-চেঞ্জার’। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ব্যাখ্যা করেন, ‘তিনি (ট্রাম্প) জানেন, কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ডিটারেন্ট বা প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সম্পূর্ণভাবে কাজে লাগিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে পুনরায় আলোচনা শুরু করতে হয়।’

তবে মাখোঁ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সতর্ক করেছেন, যেন তিনি মস্কোর সঙ্গে তাড়াহুড়ো করে কোনো চুক্তি না করেন। ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাখোঁ বলেন, ‘২০১৪ সালে আমাদের রাশিয়ার সঙ্গে একটি শান্তিচুক্তি হয়েছিল। আমি এটি কাছ থেকে দেখেছি, কারণ আমি এবং একজন জার্মান প্রতিনিধি মিলে যুদ্ধবিরতির বাস্তবায়ন তদারকি করছিলাম। কিন্তু রাশিয়া প্রতিবারই চুক্তি লঙ্ঘন করেছে, আর আমরা কেউই সম্মিলিতভাবে প্রতিক্রিয়া জানাইনি। তাই মূল প্রশ্ন হলো, বিশ্বাস ও বিশ্বাসযোগ্যতা এবং এটি কীভাবে নিশ্চিত করা যায় যে, রাশিয়া আবার প্রতারণা করবে না।’

ফরাসি প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘আমার মতে যুদ্ধবিরতির ধাপগুলো হওয়া উচিত এভাবে—প্রথমে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে আলোচনা, তারপর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে আলোচনা। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আজ ঘোষণা করেছেন, তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে স্বল্পমেয়াদি বৈঠক করতে রাজি। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

মাখোঁ আরও বলেন, ‘আসলে, কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই যুদ্ধবিরতি সম্ভব।’ তবে তিনি শর্ত দেন যে, ‘যুদ্ধবিরতি স্থলে, আকাশে এবং সমুদ্রে কার্যকর হতে হবে, সেই সঙ্গে ইউক্রেনের অবকাঠামো রক্ষার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে এবং রাশিয়াকে এটি মেনে চলতেই হবে। যদি তারা তা না করে, তাহলে বোঝা যাবে যে মস্কো আদৌ শান্তি চায় না এবং ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করে না।’

যুদ্ধবিরতির সময় কী কী বিষয়ে আলোচনা হতে পারে সে বিষয়ে ফরাসি প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘যুদ্ধবিরতির সময় আমরা আলোচনা করব—মস্কোর নিরাপত্তা গ্যারান্টি, ভূমি ও অঞ্চল পুনরুদ্ধার বা সমঝোতা নিয়ে। এটি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব হবে, যাতে কিয়েভের স্বার্থ সুরক্ষিত থাকে।’

তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ওয়াশিংটন বিরল খনিজ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদের বিষয়ে একটি চুক্তি নিশ্চিত করবে।’ তিনি উল্লেখ করেন, ফ্রান্স ও ইউরোপের বাকি দেশগুলো এতে সম্মত, কারণ ‘এটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, এবং এটি নিশ্চিত করবে যে, তারা ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে।’

যুদ্ধবিরতির পর কী হবে ফক্স নিউজের সঙ্গে সেই বিষয়েও কথা বলেন মাখোঁ। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, ‘কিন্তু কীভাবে নিশ্চিত করা যাবে যে, রাশিয়া ভবিষ্যতে এই চুক্তি লঙ্ঘন করবে না?’ জবাবে তিনি বলেন, ‘ন্যাটোর বিষয়ে কোনো ঐকমত্য নেই, কিংবা ইউক্রেনকে এখনই নাটোর সদস্য করা সম্ভব নয়। কিন্তু যদি আমরা ইউক্রেনকে একা রেখে দেই, যেমন আমরা অতীতে করেছি, তাহলে আবারও রাশিয়ার আক্রমণের ঝুঁকি থেকে যাবে।’

মাখোঁ বলেন, ‘তাই যুদ্ধবিরতির পর আমাদের দেখতে হবে, নিরাপত্তা নিশ্চিতে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। একটি উপায় হতে পারে ইউক্রেনের সামরিক শক্তি বাড়ানো, যাতে তারা নিজেদের রক্ষা করতে পারে। আরেকটি বিকল্প হতে পারে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য যৌথভাবে একটি প্রস্তাব তৈরি করবে, যেখানে দুই দেশ ইউক্রেনে সেনা পাঠাবে—তবে সম্মুখসমরে নয়, বরং একটি নির্দিষ্ট চুক্তির আওতায় সম্মত স্থানে অবস্থান করবে। তাদের মূল লক্ষ্য হবে শুধু রাশিয়ার প্রতিশ্রুতির প্রতি নজর রাখা, যাতে রাশিয়া চুক্তি ভঙ্গ না করে। অবশ্যই, এটি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন নিয়ে হবে।’

এদিকে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধে ইউরোপের ‘যথাযথ ভূমিকা নেই’। এই প্রসঙ্গে মাখোঁ বলেন, ‘আমরা (ইউরোপ) ন্যায্যভাবে আমাদের দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত, কারণ এটি আমাদের অঞ্চলেই ঘটছে। আমি ইতিমধ্যে প্রায় ৩০ জন ইউরোপীয় নেতার সঙ্গে কথা বলেছি এবং তাদের অনেকেই এ ধরনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অংশ হতে আগ্রহী।’

তিনি বলেন, ‘তবে ইউরোপ যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে একটি স্পষ্ট গ্যারান্টি ও সংহতি চায় এই বিষয়ে যে, যদি রাশিয়া চুক্তি লঙ্ঘন করে এবং ইউক্রেন বা ইউরোপ আক্রান্ত হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের পাশে থাকবে।’

সাক্ষাৎকারে মাখোঁ গতকাল মঙ্গলবার বলেন, ‘আজ (মঙ্গলবার) সকালে আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করেছি, এবং তিনি স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপের পাশে থাকবে। যদি আমরা এই গ্যারান্টি ও সংহতি পাই, তাহলে আমি মনে করি, আমরা একটি চুক্তির পথে আছি।’

উল্লেখ্য, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন যুদ্ধ তিন বছর পূর্ণ হয়। এই যুদ্ধে ইউক্রেনের কয়েক হাজার নাগরিক নিহত হয়েছে এবং ৬০ লাখের বেশি মানুষ শরণার্থী হিসেবে বিদেশে বসবাস করছে। সামরিক ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপক হলেও সেগুলো গোপন রাখা হয়েছে। রাশিয়ার আক্রমণের পর ইউক্রেনের অর্থনীতি পুনর্গঠনের আনুমানিক ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৫২৪ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৪ সালে ইউক্রেনের জিডিপির প্রায় প্রায় তিন গুণ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’খ্যাত গণেশ উইকে এনকাউন্টারে নিহত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০: ৫৭
গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। ছবি: সংগৃহীত
গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। ছবি: সংগৃহীত

ওডিশার কান্ধামাল জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ভারতের অন্যতম শীর্ষ মাওবাদী নেতা গণেশ উইকে (৬৯) নিহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) ভোরে এই অভিযানে গণেশসহ চারজন মাওবাদী নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে ওডিশা পুলিশ। নিহত গণেশ উইকে মাওবাদীদের ‘সেন্ট্রাল কমিটি’র (সিসি) সদস্য এবং ওডিশার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান ছিলেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটি ওডিশায় মাওবাদীবিরোধী অভিযানের সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।

অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল (এএনও) সঞ্জীব পান্ডা জানান, কান্ধামাল জেলার চাকাপাদা থানা এলাকায় রাম্ভা বন রেঞ্জের কাছে এই এনকাউন্টারের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে গত দুই দিনে কান্ধামাল জেলায় মোট ছয়জন মাওবাদী নিহত হলেন।

গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। গণেশ উইকে ‘রূপা’, ‘রাজেশ তিওয়ারি’, ‘পাক্কা হনুমন্তু’সহ একাধিক ছদ্মনামে পরিচিত ছিলেন। গণেশ উইকেকে ধরতে তাঁর মাথার দাম ঘোষণা করা হয়েছিল ১ কোটি ১০ লাখ রুপি।

তেলেঙ্গানার নালগোন্ডা জেলার বাসিন্দা গণেশ চার দশক ধরে মাওবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

২০১৩ সালের ছত্তিশগড়ের কুখ্যাত ‘ঝিরম ঘাঁটি’ গণহত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন এই গণেশ উইকে। সেখানে শীর্ষ কংগ্রেস নেতাসহ ৩২ জন নিহত হয়েছিলেন।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল বুধবার রাতে বেলঘর থানা এলাকার গুম্মা জঙ্গলে প্রথম সংঘর্ষে দুজন মাওবাদী নিহত হন। এরপর আজ সকালে চাকাপাদা এলাকায় দ্বিতীয় দফায় অভিযান চালায় ওডিশা পুলিশের এসওজি, সিআরপিএফ এবং বিএসএফের যৌথ বাহিনী। আজকের অভিযানে দুই নারী, দুই পুরুষসহ মোট চারজন মাওবাদী নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের পরনে ইউনিফর্ম ছিল।

এনকাউন্টারস্থল থেকে দুটি ইনসাস রাইফেল ও একটি পয়েন্ট থ্রি জিরো থ্রি রাইফেল উদ্ধার করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই সফলতাকে ‘নকশালমুক্ত ভারত’ গড়ার পথে একটি মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বলেন, ‘২০২৬ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে দেশ থেকে মাওবাদী সন্ত্রাস নির্মূল করতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। গণেশ উইকের নিধন ওডিশাকে মাওবাদীমুক্ত করার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।’

উল্লেখ্য, এই অভিযানের ঠিক দুই দিন আগে মালকানগিরি জেলায় ২২ জন মাওবাদী ওডিশা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। শীর্ষ নেতৃত্বের এ পতন এই অঞ্চলে মাওবাদী সংগঠনের মেরুদণ্ড ভেঙে দেবে বলে মনে করছেন সমর বিশেষজ্ঞরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পারমাণবিক সাবমেরিন থেকে ৩৫০০ কিমি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা ভারতের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

নিজেদের পারমাণবিক সক্ষমতার প্রদর্শন হিসেবে পারমাণবিক সাবমেরিন থেকে একটি মধ্যপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে ভারত। কে-৪ ক্ষেপণাস্ত্রটি গত মঙ্গলবার বঙ্গোপসাগরে ভারতের পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন আইএনএস আরিঘাত থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। বিশাখাপত্তনম উপকূলের কাছে এই পরীক্ষা চালানো হয়।

এনডিটিভি জানিয়েছে, সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের নৌভিত্তিক পারমাণবিক সক্ষমতাকে বেশ শক্তিশালী করেছে।

কে-৪ সাবমেরিন থেকে নিক্ষেপযোগ্য ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ২০২৪ সালের ২৯ আগস্ট ভারতীয় নৌবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হয়। এর মাধ্যমে স্থল, আকাশ ও সমুদ্র—এই তিন মাধ্যম থেকে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে সক্ষম দেশগুলোর তালিকায় জায়গা করে নেয় ভারত।

অগ্নি-৩ স্থলভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্রের ওপর ভিত্তি করে তৈরি কে-৪ বর্তমানে ভারতের সর্বাধিক পাল্লার সমুদ্রভিত্তিক কৌশলগত অস্ত্র। স্থল সংস্করণটিকে সমুদ্র থেকে উৎক্ষেপণের উপযোগী করে পরিবর্তন করা হয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে সাবমেরিনের উৎক্ষেপণ সাইলো থেকে বেরিয়ে পানির ভেতর ভেসে উঠে সমুদ্রপৃষ্ঠে পৌঁছানোর পর রকেট ইঞ্জিন চালু করে আকাশে ছুটে যাওয়ার সক্ষমতা।

এই ক্ষেপণাস্ত্র ২ দশমিক ৫ টন ওজনের পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম এবং ভারতের অরিহন্ত শ্রেণির সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণ করা যায়।

কে-৪ হলো ভারতের পারমাণবিক ত্রিমাত্রিক প্রতিরোধব্যবস্থার সবচেয়ে নীরব অংশ। কারণ, অরিহন্ত শ্রেণির ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রবাহী সাবমেরিনগুলো দীর্ঘ সময় ধরে অচেনা সমুদ্রাঞ্চলে সম্পূর্ণ নীরবে প্রতিরোধ টহল পরিচালনার জন্য তৈরি।

কে-সিরিজের ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর নামের ‘কে’ অক্ষরটি ভারতের সাবেক প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির রূপকার এ পি জে আবদুল কালামের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাখা হয়। ভারতের সমন্বিত ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চীনে এক সন্তান নীতির প্রবক্তার মৃত্যু, শ্রদ্ধার চেয়ে সমালোচনাই বেশি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ৫৬
চীনের পরিবার পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক প্রধান পেং পেইইউন (মাঝে)। ছবি: সংগৃহীত
চীনের পরিবার পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক প্রধান পেং পেইইউন (মাঝে)। ছবি: সংগৃহীত

চীনে বিতর্কিত এক সন্তান নীতির প্রবক্তা পেং পেইইউনের মৃত্যুতে শ্রদ্ধা নিবেদনের বদলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নীতিটি ঘিরে তীব্র সমালোচনা দেখা গেছে। গত রোববার বেইজিংয়ে ৯৬তম জন্মদিনের ঠিক আগমুহূর্তে পেংয়ের মৃত্যুতে চীনাদের প্রতিক্রিয়া অনেকটা নেতিবাচক।

রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে পেং পেইইউনকে নারী ও শিশুবিষয়ক কাজে ‘একজন অসাধারণ নেতা’ হিসেবে প্রশংসা করা হয়েছে। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত চীনের পরিবার পরিকল্পনা কমিশনের প্রধান ছিলেন তিনি।

তবে চীনের জনপ্রিয় মাইক্রো ব্লগিং ওয়েবসাইট ওয়েইবোতে একজন লিখেছেন, ‘ভূমিষ্ঠ হতে না পারা শিশুরা ওপারে নগ্ন দেহে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।’

এনডিটিভি জানিয়েছে, ১৯৮০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত চীনে দম্পতিদের কেবল একটি সন্তান নেওয়ার যে বাধ্যবাধকতা ছিল, তা কার্যকর করতে স্থানীয় কর্মকর্তারা অনেক ক্ষেত্রে নারীদের গর্ভপাত ও বন্ধ্যাকরণ করতে বাধ্য করতেন।

জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে, এমন আশঙ্কায় বেইজিং এই এক সন্তান নীতি চালু করেছিল।

এর ফলে দীর্ঘ সময় বিশ্বের সর্বোচ্চ জনসংখ্যার দেশ থাকার পর চীনের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার শ্লথ হয়ে পড়ে এবং গত বছর টানা তৃতীয়বারের মতো জনসংখ্যা পড়তির দিকে ছিল।

ওয়েইবোতে একজন ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘যদি এই নীতি অন্তত ১০ বছর আগে শেষ করা হতো, তাহলে চীনের জনসংখ্যা আজ এভাবে ধসে পড়ত না!’

গত বছর চীনের জনসংখ্যা কমে ১৩৯ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, সামনের বছরগুলোতে এই নিম্নগতি আরও ত্বরান্বিত হবে।

জনসংখ্যার নীতিনির্ধারক হিসেবে পেং জোর দিয়েছিলেন গ্রামীণ এলাকায়। একসময় চীনের গ্রামগুলোতে বড় পরিবার গড়ে তোলা দম্পতিদের প্রধান লক্ষ্য ছিল, যাতে বৃদ্ধ বয়সে সন্তানেরা তাঁদের দেখাশোনা করতে পারে। এ ছাড়া বংশ রক্ষার জন্য ছেলেসন্তানের প্রতি ঝোঁক বেশি থাকায় মেয়েশিশুদের অবহেলা, এমনকি কন্যা ভ্রূণ হত্যার মতো ঘটনা প্রায়ই ঘটত।

ওয়েইবোতে একজন লিখেছেন, ‘ওই শিশুগুলো যদি জন্ম নিত, তাহলে আজ তাদের বয়স প্রায় ৪০ হতো—জীবনের সেরা সময়।’

২০১০-এর দশকে এসে পেং প্রকাশ্যে তাঁর অবস্থান বদলান এবং বলেন, এক সন্তান নীতি শিথিল করা উচিত। বর্তমানে বেইজিং কমে যাওয়া জন্মহার বাড়াতে শিশু পরিচর্যা ভর্তুকি, দীর্ঘ মাতৃত্বকালীন ছুটি ও করছাড়ের মতো উদ্যোগ নিচ্ছে।

জনসংখ্যা হ্রাস ও বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতি চীনের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। দেশটিতে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা কমে গেলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কম্বোডিয়ায় বিষ্ণুমূর্তি গুঁড়িয়ে দিল থাই সেনারা, ভারতের তীব্র নিন্দা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ৫৫
একটি ব্যাকহো লোডার দিয়ে ভগবান বিষ্ণুর মূর্তিটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ছবি: স্ক্রিনশট
একটি ব্যাকহো লোডার দিয়ে ভগবান বিষ্ণুর মূর্তিটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ছবি: স্ক্রিনশট

কম্বোডিয়ায় হিন্দু দেবতার মূর্তি ধ্বংসের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে চলমান সীমান্ত সংঘাতের জেরে থাই সেনাবাহিনী এটি ধ্বংস করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বুধবার নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এই ঘটনাকে ‘অসম্মানজনক’ বলে অভিহিত করেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, ‘থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া সীমান্ত বিরোধপূর্ণ এলাকায় সম্প্রতি নির্মিত একটি হিন্দু দেবতার মূর্তি ধ্বংসের খবর আমাদের নজরে এসেছে। এই অঞ্চলের মানুষের কাছে হিন্দু ও বৌদ্ধ দেবতারা অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্র এবং এটি আমাদের অভিন্ন সভ্যতার ঐতিহ্যের অংশ। এই ধরনের কাজ সারা বিশ্বের অনুসারীদের মনে আঘাত দেয়, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি ব্যাকহো লোডার দিয়ে ভগবান বিষ্ণুর মূর্তিটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। কম্বোডিয়ার প্রেহ বিহারের মুখপাত্র লিম চানপানহা জানান, ২০১৪ সালে নির্মিত মূর্তিটি থাইল্যান্ড সীমান্ত থেকে মাত্র ১০০ মিটার ভেতরে কম্বোডিয়ার সীমানায় ছিল। তিনি এই ঘটনাকে প্রাচীন ও পবিত্র স্থাপত্যের ওপর আঘাত হিসেবে নিন্দা জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত জুলাই মাস থেকে দুই দেশের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় সাময়িক যুদ্ধবিরতি হলেও চলতি মাসে পুনরায় সংঘাত শুরু হয়েছে। নয়াদিল্লি মনে করে, কূটনৈতিক সংলাপের মাধ্যমেই জানমালের ক্ষয়ক্ষতি এবং ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সম্পদের বিনাশ রোধ করা সম্ভব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত