Ajker Patrika

টিউলিপের বিরুদ্ধে তদন্তে ব্রিটেনের এফবিআইখ্যাত এনসিএ, গোপনে ঢাকা সফর

অনলাইন ডেস্ক    
আপডেট : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৪: ৩৮
টিউলিপ সিদ্দিক। ছবি: সংগৃহীত
টিউলিপ সিদ্দিক। ছবি: সংগৃহীত

ব্রিটেনের এফবিআই খ্যাত ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) দেশটির সাবেক নগর ও দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে। টিউলিপের বিরুদ্ধে তদন্তের অংশ হিসেবে এনসিএ-এর গোয়েন্দারা বাংলাদেশি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সঙ্গে গোপনে বৈঠকের জন্য ঢাকা সফর করেছিলেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হলো, তাঁর খালা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে রাশিয়ার সঙ্গে একটি বিতর্কিত পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ চুক্তি করেছিল। সেই প্রকল্প থেকে টিউলিপ এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার তছরুপ করেছেন বলে অভিযোগ আছে। এ ছাড়া, টিউলিপের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে একাধিক আবাসন উপহার হিসেবে পেয়েছেন, যা তিনি সংশ্লিষ্ট ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের কাছে গোপন করে গিয়েছিলেন।

টিউলিপের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে তহবিল তছরুপের অভিযোগের ঘটনায় তদন্তের অংশ হিসেবে ব্রিটেনের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সির গোয়েন্দারা গত মাসের ওই বৈঠকে জানতে পারেন যে, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ লেবার এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে নতুন প্রমাণ সংগ্রহ করেছে। এই তথ্য প্রকাশের ফলে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ টিউলিপের ব্যাংক হিসাব, ই-মেইল রেকর্ড পরীক্ষা এবং এমনকি তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করতে পারে বলে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

সাবেক ট্রেজারিমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক এবং তাঁর মা শেখ রেহানা ও খালা শেখ হাসিনাসহ তাঁর পরিবারে পরিবারের চার সদস্যের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প থেকে ৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন পাউন্ড (৫ বিলিয়ন ডলার) আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রোসাটম নির্মাণ করে এবং এর ৯০ শতাংশ অর্থায়ন করেছে রাশিয়া। ২০১৩ সালে এই প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষরের সময় টিউলিপ সিদ্দিককে ভ্লাদিমির পুতিনের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

বাংলাদেশের সরকারি একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানিয়েছে, এনসিএ দল প্রস্তাব দিয়েছে যে, তাঁরা ব্রিটেনে থেকেই টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে পারবেন। যাতে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তির আওতায় বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা করতে পারে। গত শুক্রবার রাতে, বাংলাদেশি সূত্রগুলো জানিয়েছে, এনসিএ হয়তো যুক্তরাজ্যেই হ্যাম্পস্টেড ও হাইগেটের এমপির বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনার জন্য প্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা করছে।

যদি কোনো ব্রিটিশ নাগরিক বিদেশে ঘুষ হিসেবে অর্থ গ্রহণ করে, তবে ব্রিটেনের ২০১০ সালের ‘ব্রাইবেরি আইনের’ আওতায় যুক্তরাজ্যে তাদের বিচার হতে পারে এবং সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ড হতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এনসিএ ব্রিটিশ হাইকমিশনের মাধ্যমে এই বৈঠকের অনুরোধ করেছিল। বাংলাদেশে গত আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর দুইবার এনসিএ—এর কর্মকর্তারা ঢাকা সফর করেছেন।

সাবেক এই স্বৈরশাসককে টিউলিপ সিদ্দিক ‘রোল মডেল’ বলে অভিহিত করেছিলেন। অথচ, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অসংখ্য বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আছে। তাঁর শাসনামলে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১৬ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার দেশের বাইরে পাচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ আছে।

এনসিএ গত অক্টোবরে প্রথমবার বাংলাদেশ সফর করে। সে সময় সংস্থাটি বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকারকে সাহায্যের প্রস্তাব দেয়, যাতে শেখ হাসিনার সহযোগীদের দ্বারা বিভিন্ন দেশে পাচার করা অর্থ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়। ওই বৈঠকে এনসিএর তিন সদস্যবিশিষ্ট দল বিশেষভাবে টিউলিপ সিদ্দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তোলে।

কয়েক সপ্তাহ আগেই ডেইলি মেইল প্রকাশ করেছিল যে, বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের তদন্তের কারণে তিনি মন্ত্রী পদ ছেড়েছেন। এর কয়েক দিন পর জানা যায়, টিউলিপ সিদ্দিক লন্ডনের কিংস ক্রস এলাকায় দুটি বেডরুম বিশিষ্ট একটি ফ্ল্যাট উপহার হিসেবে পেয়েছেন, যা তাঁর খালার ঘনিষ্ঠ এক বাংলাদেশি ব্রিটিশ আবাসন ব্যবসায়ীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

এরপর ডেইলি মেইল প্রকাশ করে যে,২০২২ সালে টিউলিপ সিদ্দিক এই ফ্ল্যাটের বিষয়ে ডেইলি মেইলকে মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলেন। সে সময় তিনি বলেছিলেন, ফ্ল্যাটটি তাঁর বাবা-মা কিনেছেন এবং তিনি আইনি পদক্ষেপ নেওয়ারও হুমকি দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন টিউলিপ সিদ্দিক ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে আরও অন্তত দুটি ফৌজদারি অপরাধের তদন্ত চালাচ্ছে। তবে তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

লেবার পার্টির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। টিউলিপ সিদ্দিককে এ বিষয়ে এখনো কোনো কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করেনি এবং তিনি এই অভিযোগ সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করেছেন।’

লেবার পার্টির একটি সূত্র জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত এনসিএ বা বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ কেউই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। তবে এই বিষয়ে এনসিএ ও ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত