Ajker Patrika

পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুল, রাশিয়ার বোমা কারখানায় জার্মান সিমেন্সের প্রযুক্তি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১০ আগস্ট ২০২৫, ১৩: ১০
দক্ষিণ সাইবেরিয়ায় অবস্থিত রাশিয়ার অস্ত্র উৎপাদন কারখানা বিয়স্ক ওলিয়াম ফ্যাক্টরি (বিওজেড)। ছবি: দ্য মস্কো টাইমস
দক্ষিণ সাইবেরিয়ায় অবস্থিত রাশিয়ার অস্ত্র উৎপাদন কারখানা বিয়স্ক ওলিয়াম ফ্যাক্টরি (বিওজেড)। ছবি: দ্য মস্কো টাইমস

ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে নিতে সামরিক উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে সরঞ্জাম সংগ্রহ করছে রাশিয়া। আর এর মাঝেই পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে দেশটির একটি রাষ্ট্রায়ত্ত বিস্ফোরক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান চীন থেকে প্রযুক্তি আমদানি করে এমন এক মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জার্মানির সিমেন্স কোম্পানির তৈরি যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করেছে।

কাস্টমস তথ্য ও রাষ্ট্রীয় ক্রয় সংক্রান্ত রেকর্ড পর্যালোচনা করে রয়টার্স এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

রয়টার্স জানায়, দক্ষিণ সাইবেরিয়ায় অবস্থিত বিয়স্ক ওলিয়াম ফ্যাক্টরি (বিওজেড)-এর যন্ত্রাংশ স্বয়ংক্রিয় করার জন্য একটি রুশ মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সিমেন্স সরঞ্জাম কেনা হয়েছিল। ওই রুশ মধ্যস্থতাকারী চীনের পাইকারি বিক্রেতা ও পুনর্বিক্রেতাদের কাছ থেকে শিল্প প্রযুক্তি সংগ্রহ করে থাকে।

এই ঘটনায় স্পষ্ট হয়ে গেছে যে কীভাবে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা সহজেই এড়িয়ে রুশ সামরিক সংস্থাগুলো নিজেদের উৎপাদন বাড়াচ্ছে। এদিকে মস্কোকে ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে শুক্রবার পর্যন্ত সময় দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা না দিলে আরও নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে হবে।

রাশিয়াকে সহায়তা করে বিওজেডের মূল প্রতিষ্ঠান ফেডারেল স্টেট এন্টারপ্রাইজ ইয়া এম সভেরদলোভ প্ল্যান্ট ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে।

রাষ্ট্রীয় ক্রয় রেকর্ড অনুযায়ী, ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে বিওজেড রুশ মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান টেকপ্রিবরের সঙ্গে সিমেন্স সরঞ্জাম কেনার চুক্তি করে। ১৪০ দিনের সরবরাহের সময়সীমা শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে টেকপ্রিবর চীনের গুয়াংদং প্রদেশভিত্তিক শিল্প যন্ত্রপাতি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হুইঝৌ ফান টেক-এর কাছ থেকে একটি চালান গ্রহণ করে।

সিমেন্সের প্রোডাক্ট কোড কাস্টমস কোডের সঙ্গে মিলিয়ে এবং নথিপত্রে বর্ণনা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, হুইঝৌ ফান টেকের সরবরাহ করা দুটি সিমেন্স পাওয়ার রেগুলেটর ডিভাইসই ঠিক সেই মডেলের, যা বিওজেড অর্ডার করেছিল।

রাষ্ট্রীয় ক্রয় ডাটাবেজে থাকা টেন্ডার নথি থেকে জানা যায়, ২০২২ ও ২০২৩ সালে বিওজেডের মূল প্রতিষ্ঠান তিন সেট সিমেন্সের শিল্প স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতি ক্রয় করেছে। নথিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে, এসব সরঞ্জাম বিয়স্কের কারখানার জন্য। সিমেন্সের সিম্যাটিক সাব-ব্র্যান্ডের এই ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলো শিল্প যন্ত্রপাতির সঙ্গে সংযুক্ত করে তা স্বয়ংক্রিয়করণ ও দূর থেকে মনিটরিংয়ের সুবিধা দেয়।

টেন্ডার নথিতে স্পষ্ট করা হয়েছে, যেই প্রতিষ্ঠান কিছু যন্ত্রপাতি সরবরাহের জন্য চুক্তি জিতে নিয়েছে, তার নাম টেকপ্রিবর কোম্পানি এলএলসি। এটি পোল্যান্ড ও লিথুয়ানিয়ার মাঝে অবস্থিত একটি বিচ্ছিন্ন অঞ্চল রাশিয়ার ক্যালিনিনগ্রাদ অঞ্চলে নিবন্ধিত।

রয়টার্স গোপনীয় কর পরিষেবা তথ্য পর্যালোচনা করে নিশ্চিত হয়েছে যে, টেকপ্রিবর বিওজেডের মূল প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসা করেছে।

রাশিয়ার কাস্টমস তথ্য বিশ্লেষণ করে রয়টার্স জানতে পারে, টেকপ্রিবর ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত চীনের বিভিন্ন কোম্পানি থেকে সিমেন্স যন্ত্রপাতি আমদানি করেছে।

একই দিনে টেকপ্রিবর হুইঝৌ ফান টেক থেকে একাধিক চালান ক্রয় করেছে। হুইঝৌ ফান টেক নিজেকে শিল্প স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতি বাণিজ্যকারী হিসেবে পরিচয় দেয়। এসব চালানের মধ্যে ছিল বিওজেডের অর্ডারের সাথে মিলে যাওয়া দুটি সিমেন্স পাওয়ার রেগুলেটর।

হুইঝৌ ফান টেক তাদের ওয়েবসাইটে সিমেন্সকে ‘পার্টনার’ কোম্পানি হিসেবে উল্লেখ করেছে।

তবে রয়টার্স বলছে, সিমেন্স এই সম্পর্কে অবগত নয় যে তাদের সরঞ্জাম রাশিয়ার বিস্ফোরক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে বিক্রি হচ্ছে।

জার্মান ইঞ্জিনিয়ারিং বহুজাতিক সংস্থাটির এক মুখপাত্র জানান, প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে মানে এবং গ্রাহকদের কাছ থেকেও একই বিষয় প্রত্যাশা করে। তবে কিছু পণ্য সিমেন্সের অজান্তেই রাশিয়ায় পৌঁছে যেতে পারে বলে জানান তিনি।

টেকপ্রিবরের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি বলে জানিয়েছে রয়টার্স। বিওজেড ও তার মূল প্রতিষ্ঠানে পাঠানো প্রশ্নেরও কোনো জবাব মেলেনি।

তবে এটি প্রমাণিত যে রুশ প্রতিরক্ষা প্রস্তুতকারকেরা চীনের মাধ্যমে পশ্চিমা প্রযুক্তি সংগ্রহ করে থাকে। রয়টার্সের প্রতিবেদনে স্পষ্ট করা হয়েছে কীভাবে একটি রুশ প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠান তুলনামূলক সহজেই পশ্চিমা সরঞ্জাম সংগ্রহ করতে পারে।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আক্রমণ শুরু করার পর থেকে দক্ষিণ সাইবেরিয়ার বিয়স্ক শহরের বিওজেড কারখানাটি সম্প্রসারণ করে যাচ্ছে রাশিয়া। রয়টার্সের একটি অনুসন্ধানে জানা গেছে, তারা আরেক ধরনের উচ্চ শক্তিসম্পন্ন বিস্ফোরক আরডিএক্স উৎপাদনের জন্য একটি নতুন কারখানা তৈরি করছে।

২০২৪ সালে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা থিঙ্ক ট্যাংক আরইউএসআই ও ওপেন সোর্স সেন্টারের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অধিক গোলাবারুদ উৎপাদনের জন্য রাশিয়া বহু আগে থেকেই অটোমেটেড মেশিন টুলস সংগ্রহ করে আসছে। কর্মী সংকটে ভোগা এই খাতের জন্য এই সয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতি বেশি জরুরি। আর রাশিয়ার নিজস্ব অটোমেটেড মেশিন টুলস উৎপাদনের রেকর্ড সীমিত। তাই প্রতিরক্ষা খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায়ই এসব যন্ত্র আমদানি করতে বাধ্য।

পোল্যান্ডের রোচান মিলিটারি কনসালটেন্সির পরিচালক কনরাড মুজিকা বলেন, পশ্চিমা দেশের তৈরি যন্ত্রপাতি রাশিয়ায় সরবরাহ অব্যাহত থাকায় মস্কোর পুনরায় সামরিক শক্তি বাড়ানোর প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করা হচ্ছে, যা যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছে।

তিনি আরও বলেন, ‘এই সরঞ্জামগুলো উন্নত অস্ত্র উৎপাদন প্রক্রিয়া যেমন ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন, ড্রোন সংযোজন ও ট্যাংক সংস্কারের জন্য অপরিহার্য। এগুলো ছাড়া রাশিয়ার যুদ্ধ চালানো বা তার পরিধি বাড়ানো অনেক বেশি সময়সাপেক্ষ, ব্যয়বহুল এবং শ্রমবাজারের ওপর বড় বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।’

ইউরোপীয় নীতিনির্ধারকদের মতে, চীন থেকে সিমেন্স যন্ত্রপাতি সরবরাহের বিষয়টি রাশিয়াকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে টিকে থাকার সুযোগ দিচ্ছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী, ওই অঞ্চলের কোনো প্রতিষ্ঠান রাশিয়ার যুদ্ধে সহায়তা করার সম্ভাবনা থাকা পণ্য বা সেবা সরবরাহ করতে পারবে না। কিন্তু রাশিয়ার প্রতিরক্ষা প্রস্তুতকারকেরা পশ্চিমা নির্মিত যন্ত্রপাতি চীনের পাইকারি ও পুনর্বিক্রেতাদের মাধ্যমে সংগ্রহ করে এই নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘হিন্দু রাষ্ট্র’ সংবিধানে থাকতে হবে না, এটি সূর্যোদয়ের মতোই সত্য: আরএসএস প্রধান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কলকাতায় আরএসএসের শতবর্ষ উদ্‌যাপন উপলক্ষে আয়োজিত ‘১০০ ব্যাখ্যান মালা’ অনুষ্ঠানে মোহন ভাগবত। ছবি: সংগৃহীত
কলকাতায় আরএসএসের শতবর্ষ উদ্‌যাপন উপলক্ষে আয়োজিত ‘১০০ ব্যাখ্যান মালা’ অনুষ্ঠানে মোহন ভাগবত। ছবি: সংগৃহীত

ভারত একটি ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ এবং এর জন্য কোনো সাংবিধানিক অনুমোদনের প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) প্রধান মোহন ভাগবত। তাঁর মতে, এটি একটি ঐতিহাসিক সত্য এবং সূর্য পূর্বদিকে ওঠার মতোই ধ্রুব।

গতকাল রোববার (২১ ডিসেম্বর) কলকাতায় আরএসএসের শতবর্ষ উদ্‌যাপন উপলক্ষে আয়োজিত ‘১০০ ব্যাখ্যান মালা’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

সংবিধানে ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ শব্দ জোড়ানোর কোনো পরিকল্পনা বা দাবি সংঘের আছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে মোহন ভাগবত বলেন, ‘সূর্য পূর্বদিকে ওঠে; আমরা জানি না কত দিন ধরে এটি ঘটছে। এর জন্য কি আমাদের সাংবিধানিক অনুমোদনের প্রয়োজন আছে? হিন্দুস্তান একটি হিন্দু রাষ্ট্র। যারা এই দেশকে মাতৃভূমি মনে করে এবং ভারতীয় সংস্কৃতিকে শ্রদ্ধা করে, তারা সবাই এই দর্শনের অংশ।’

তিনি আরও বলেন, ‘সংসদ যদি কখনো সংবিধান সংশোধন করে এই শব্দটি যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে তা ভালো। কিন্তু তারা তা করুক বা না করুক—তাতে আমাদের কিছু যায়-আসে না। কারণ, সত্য এটাই যে আমাদের দেশ একটি হিন্দু রাষ্ট্র।’

জাতপাত নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে আরএসএস প্রধান স্পষ্ট করে বলেন, ‘জন্মভিত্তিক বর্ণপ্রথা বা জাতপাত হিন্দুত্বের বৈশিষ্ট্য নয়।’

আরএসএসকে প্রায়ই মুসলিমবিরোধী হিসেবে গণ্য করা হয়। এই প্রসঙ্গে মোহন ভাগবত মানুষকে সরাসরি সংঘের শাখা বা অফিসগুলো ঘুরে দেখার আমন্ত্রণ জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজ অত্যন্ত স্বচ্ছ। আপনারা যেকোনো সময় এসে দেখে যান। যদি আমাদের কার্যক্রমে মুসলিমবিরোধী কিছু খুঁজে পান, তবে আপনাদের ধারণা বজায় রাখুন। কিন্তু যদি তা না দেখেন, তবে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করুন।’

তিনি দাবি করেন, মানুষ এখন বুঝতে পারছে যে আরএসএস হিন্দুদের সুরক্ষার কথা বলে এবং তারা কট্টর জাতীয়তাবাদী, কিন্তু তারা ‘মুসলিমবিরোধী’ নয়।

উল্লেখ্য, ভারতের সংবিধানের মূল প্রস্তাবনায় ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ (Secular) শব্দটি ছিল না। ১৯৭৬ সালে জরুরি অবস্থার সময় ইন্দিরা গান্ধী সরকারের আনা ৪২তম সংশোধনীর মাধ্যমে এটি যুক্ত করা হয়। অন্যদিকে, আরএসএস দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করে আসছে, ভারতের সংস্কৃতি এবং জনতাত্ত্বিক কাঠামোর কারণেই এটি প্রাকৃতিকভাবে একটি হিন্দু রাষ্ট্র।

তথ্যসূত্র: এনডিটিভি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নাইজেরিয়ায় ক্যাথলিক স্কুলের অপহৃত আরও ১৩০ শিক্ষার্থী মুক্ত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
নাইজার রাজ্যের একটি ক্যাথলিক বোর্ডিং স্কুল ৩শর বেশি শিক্ষার্থী অপহরণ হয়। ছবি: এএফপি
নাইজার রাজ্যের একটি ক্যাথলিক বোর্ডিং স্কুল ৩শর বেশি শিক্ষার্থী অপহরণ হয়। ছবি: এএফপি

নাইজেরিয়ার মধ্যাঞ্চলীয় রাজ্য নাইজারে একটি ক্যাথলিক বোর্ডিং স্কুল থেকে অপহৃত ১৩০ জন শিক্ষার্থীকে মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।

এই ঘটনাকে দেশের অন্যতম ভয়াবহ এক গণ-অপহরণের ঘটনা হিসেবে অভিহিত করে সবার মুক্তির পর একে ‘বিজয় এবং স্বস্তির মুহূর্ত’ হিসেবে বর্ণনা করেছে নাইজেরিয়ার সরকার।

গত ২১ নভেম্বর পাপিরির সেন্ট মেরি’স ক্যাথলিক স্কুল থেকে ২৫০ জনেরও বেশি শিশু এবং কর্মী অপহৃত হয়। তাদের মধ্যে প্রায় ১০০ জন শিশুকে চলতি মাসের শুরুর দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।

অবশিষ্ট ১৩০ জন শিশু ও কর্মীকে উদ্ধারের’ বিষয়টি নিশ্চিত করে এক বিবৃতিতে কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘একজন শিক্ষার্থীও আর বন্দিদশায় নেই।’

গতকাল রোববার রাষ্ট্রপতির মুখপাত্র বায়ো ওনানুগা জানান, মুক্ত শিক্ষার্থীর মোট সংখ্যা এখন ২৩০ জন। অপহরণের পর থেকে ঠিক কতজনকে তুলে নেওয়া হয়েছিল এবং কতজন বন্দিদশায় ছিল, সে বিষয়টি অস্পষ্ট ছিল। সরকার কীভাবে সর্বশেষ এই মুক্তি নিশ্চিত করেছে বা কোনো মুক্তিপণ দেওয়া হয়েছে কি না তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি।

ওনানুগা আরও জানান, আশা করা হচ্ছে, মুক্ত শিক্ষার্থীরা আজ সোমবার নাইজারের রাজধানী মিন্নায় পৌঁছাবে।

গত নভেম্বরে ঘটে যাওয়া এ অপহরণের ঘটনাটি উত্তর ও মধ্য নাইজেরিয়ার স্কুল এবং উপাসনালয়গুলোতে ক্রমবর্ধমান লক্ষ্যবস্তু হামলার সর্বশেষ ঘটনা। এ অপহরণের সময় ৫০ জন শিক্ষার্থী পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল বলে জানায় ক্রিশ্চিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব নাইজেরিয়া।

এর আগে ১৮ নভেম্বর সেন্ট মেরি’স-এ হামলার ঠিক কয়েক দিন আগে আরও কিছু গণ-অপহরণের ঘটনা ঘটেছিল। কোয়ারা রাজ্যের ক্রাইস্ট অ্যাপোস্টোলিক চার্চে এক হামলায় দুজন নিহত এবং ৩৮ জন অপহৃত হন। এর আগের দিন কেব্বি রাজ্যের গভর্নমেন্ট গার্লস সেকেন্ডারি স্কুল থেকে দুজন নিহত এবং ২৫ জন মুসলিম শিক্ষার্থী অপহৃত হয়েছিল। কোয়ারা এবং কেব্বি হামলার ঘটনায় যাদের তুলে নেওয়া হয়েছিল, তারা সবাই ইতিমধ্যে মুক্তি পেয়েছে।

এই অপহরণগুলোর পেছনে কারা রয়েছে তা স্পষ্ট নয়, তবে অধিকাংশ বিশ্লেষকের ধারণা, মুক্তিপণ আদায়ের লক্ষ্যে অপরাধী চক্রগুলো এই কাজ করছে।

গত ৯ ডিসেম্বর নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেছিলেন, তাঁর সরকার আমাদের স্কুলগুলোকে নিরাপদ করতে এবং ছোটদের জন্য শিক্ষার পরিবেশকে আরও নিরাপদ ও অনুকূল করতে নাইজার এবং অন্যান্য রাজ্যগুলোর সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে আরেকটি তেলবাহী ট্যাংকারকে যুক্তরাষ্ট্রের ধাওয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
জাহাজটিকে “সক্রিয়ভাবে ধাওয়া” করছে মার্কিন কোস্ট গার্ড। ছবি: এএফপি
জাহাজটিকে “সক্রিয়ভাবে ধাওয়া” করছে মার্কিন কোস্ট গার্ড। ছবি: এএফপি

ভেনেজুয়েলার কাছাকাছি আন্তর্জাতিক জলসীমায় আরও একটি তেলের ট্যাঙ্কার ধাওয়া করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। একজন মার্কিন কর্মকর্তা আল জাজিরাকে এ তথ্য জানিয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে এই অভিযান ওয়াশিংটনের।

গতকাল রোববার এই অভিযানটি পরিচালিত হয়। এর মাত্র একদিন আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশিত এক ‘ব্লকেডের’ অংশ হিসেবে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিতীয় জাহাজ জব্দ করে মার্কিন কোস্ট গার্ড।

আল জাজিরাকে ওই মার্কিন কর্মকর্তা জানান, ‘জাহাজটিকে “সক্রিয়ভাবে ধাওয়া” করছে আমাদের কোস্ট গার্ড। তাদের বর্ণনা অনুযায়ী, জাহাজটি ভেনেজুয়েলার সেই “ডার্ক ফ্লিট”-এর অংশ, যা লাতিন আমেরিকার দেশটির গুরুত্বপূর্ণ তেল খাতের ওপর ওয়াশিংটনের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর চেষ্টা করছে।’

ওই কর্মকর্তা আরও জানান, জাহাজটি ‘ভুয়া পতাকা’ ব্যবহার করছিল। একই সঙ্গে এটি একটি ‘বিচারিক জব্দাদেশ’-এর আওতাভুক্ত।

এক মার্কিন কর্মকর্তার বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, ওই ট্যাঙ্কারটি নিষেধাজ্ঞার আওতায় ছিল। তবে এখন পর্যন্ত জাহাজটিতে কেউ আরোহণ করেনি। জাহাজটির গতিরোধের প্রক্রিয়াটি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যার মধ্যে সন্দেহভাজন জাহাজের খুব কাছ দিয়ে নৌযান চালানো বা ওপর দিয়ে বিমান ওড়ানোও অন্তর্ভুক্ত।

অভিযানটি কোথায় চলছে বা কোন জাহাজের পিছু নেওয়া হচ্ছে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য দেননি ওই কর্মকর্তা।

ব্রিটিশ সামুদ্রিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা সংস্থা ভ্যানগার্ড ওই জাহাজটিকে ‘বেলা ১’ হিসেবে শনাক্ত করেছে। এটি একটি বিশাল আকারের অপরিশোধিত তেলবাহী জাহাজ, যা গত বছর মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের নিষেধাজ্ঞা তালিকায় যুক্ত করা হয়। জাহাজটির সঙ্গে ইরানের যোগসূত্র রয়েছে বলে মার্কিন কর্তৃপক্ষের দাবি।

ট্যাংকারট্র্যাকার্স ডটকমের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল রোববার ভেনেজুয়েলার দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় বেলা ১ খালি ছিল।

ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি পিডিভিএসএ (PDVSA)-র অভ্যন্তরীণ নথির বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, ২০২১ সালে ভেনেজুয়েলার তেল চীনে পরিবহনে ব্যবহৃত হয়েছিল এই জাহাজটি। একই সঙ্গে, একটি জাহাজ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদ সংস্থাটি আরও জানায় যে, জাহাজটি এর আগে ইরানের অপরিশোধিত তেলও বহন করেছিল।

ভেনেজুয়েলার তেল খাতকে লক্ষ্য করে এই অভিযানটি এমন এক সময়ে পরিচালিত হচ্ছে যখন এই অঞ্চলে বৃহৎ আকারে মার্কিন সামরিক শক্তি বাড়ানো হয়েছে। এর ঘোষিত লক্ষ্য হলো মাদক পাচার মোকাবিলা করা। এছাড়াও, দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটির নিকটবর্তী প্রশান্ত মহাসাগর এবং ক্যারিবীয় সাগরে কথিত মাদক পাচারকারী জাহাজগুলোর ওপর দুই ডজনেরও বেশি হামলা চালানো হয়েছে।

সমালোচকেরা এসব হামলার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এসব হামলায় এখন পর্যন্ত শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

অন্যদিকে ভেনেজুয়েলা মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। দেশটির দাবি, বিশ্বের বৃহত্তম তেল মজুত দখলের উদ্দেশ্যেই ওয়াশিংটন প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চাইছে।

যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজ জব্দের ঘটনাকে ‘আন্তর্জাতিক জলদস্যুতা’ হিসেবে নিন্দা জানিয়েছে ভেনেজুয়েলা।

এ প্রসঙ্গে গতকাল হোয়াইট হাউস বলেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জব্দ করা প্রথম দুটি তেলের ট্যাঙ্কার কালোবাজারে পরিচালিত হচ্ছিল এবং নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত দেশগুলোতে তেল সরবরাহ করছিল।

শনিবার জব্দ করা দ্বিতীয় জাহাজটি পানামার পতাকাবাহী ‘সেঞ্চুরিজ’ হিসেবে শনাক্ত হয়েছে। জাহাজটিতে প্রায় ১৮ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল ছিল। ভেনেজুয়েলার এই তেলগুলো চীনে নেওয়ার কথা ছিল।

প্রথম জব্দ জাহাজ ‘স্কিপার’ বর্তমানে টেক্সাস উপকূলে নোঙর করা আছে। জাহাজটিতে থাকা ১৯ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল সেখানে খালাস করে যুক্তরাষ্ট্রে পরিশোধনের প্রস্তুতি চলছে।

এই জাহাজ জব্দের ঘটনায় ভেনেজুয়েলা সরকার অভিযোগ করছে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের তেল চুরি করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জাপানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টাকে প্রতিহতের ঘোষণা উত্তর কোরিয়ার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৫৬
উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন। ছবি: এএফপি
উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন। ছবি: এএফপি

জাপানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের যে কোনো প্রচেষ্টা কঠোরভাবে প্রতিহত করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম কেসিএনএ রোববার (২১ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, জাপানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা যে কোনো মূল্যে রোধ করা উচিত, কারণ এটি মানবজাতির জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘ইনস্টিটিউট ফর জাপান স্টাডিজ’-এর পরিচালক এক বিবৃতিতে বলেন, জাপানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টা শুধু এশিয়া নয়, পুরো বিশ্বের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করবে। তাঁর ভাষায়, ‘জাপানের পারমাণবিক হওয়ার প্রচেষ্টা মানবজাতির জন্য এক মহাবিপর্যয় বয়ে আনবে।’

যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ার এই প্রতিক্রিয়ার পেছনে রয়েছে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক কর্মকর্তার সাম্প্রতিক মন্তব্য। জাপানের বার্তা সংস্থা কিয়োদো নিউজের খবরে বলা হয়, ওই কর্মকর্তা প্রকাশ্যে বলেছেন, টোকিওর পারমাণবিক অস্ত্র রাখা উচিত।

এই প্রেক্ষাপটে উত্তর কোরিয়া দাবি করেছে, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন বা বেপরোয়া মন্তব্য নয়; বরং জাপানের বহুদিনের পারমাণবিক অস্ত্রায়নের আকাঙ্ক্ষারই প্রতিফলন।

উত্তর কোরিয়ার মতে, জাপান তাদের তথাকথিত ‘অ-পারমাণবিক নীতি’ পুনর্বিবেচনার কথা বলে কার্যত একটি ‘লাল রেখা’ অতিক্রম করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, জাপানের কর্মকর্তাদের মন্তব্যগুলোই বলে দিচ্ছে, টোকিও এখন প্রকাশ্যেই পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের বাসনা জানাচ্ছে।

উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আরও দাবি করেছে, যুক্তরাষ্ট্র যখন গত অক্টোবরে দক্ষিণ কোরিয়াকে একটি পারমাণবিক সাবমেরিন নির্মাণের অনুমোদন দেয়, তার পরপরই জাপানে এই ধরনের বক্তব্য জোরালো হতে শুরু করে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ংয়ের সঙ্গে বাণিজ্য ও নিরাপত্তা ইস্যুতে শীর্ষ বৈঠকের পর ওই অনুমোদন দিয়েছিলেন।

উত্তর কোরিয়ার ওই কর্মকর্তা সতর্ক করে বলেন—জাপান যদি পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করে, তবে এশিয়া ভয়াবহ পারমাণবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। তবে তিনি পিয়ংইয়ংয়ের নিজস্ব পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

ধারণা করা হয়, উত্তর কোরিয়া নিজেই একটি ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডারের অধিকারী। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান থাকার পরও দেশটি তার পারমাণবিক সক্ষমতা বজায় রাখা ও সম্প্রসারণের ঘোষণা দিয়ে আসছে। গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে উত্তর কোরিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী কিম সন গিয়ং বলেন—পারমাণবিক অস্ত্র তাদের রাষ্ট্রীয় আইন, জাতীয় নীতি এবং সার্বভৌম অধিকারের অংশ, যা তারা কোনো পরিস্থিতিতেই ত্যাগ করবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত