Ajker Patrika

বয়স্ক জনগোষ্ঠী বাড়ছে, পেনশন নিয়ে বিপাকে চীন

রয়টার্স
বয়স্ক জনগোষ্ঠী বাড়ছে, পেনশন নিয়ে বিপাকে চীন

বেইজিং (চীন): চীনের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ বার্ধক্যে পৌঁছেছে। এই সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। ফলে এই বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সামাজিক নিরাপত্তা বাবদ ব্যয় বাড়ছে দেশটির সরকারের। ১ লাখ ২০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের পেনশন ব্যবস্থা সামলাতেই এখন হিমশিম খাচ্ছে দেশটি। পরিস্থিতি সামাল দিতে এখন তারা এ ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ বাড়াতে চাইছে।

চীনের ব্যাংক ও বিমা খাতের শীর্ষ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ব্যাংকিং অ্যান্ড রেগুলেটরি কমিশন (সিবিআইআরসি) জানায়, তারা দেশটির চংকিং ও ঝেজিয়াং প্রদেশে বেসরকারি পেনশন ব্যবস্থার সম্প্রসারণে দুটি স্বল্পমেয়াদি প্রকল্প নিয়েছে। পরীক্ষামূলক এই প্রকল্পের সাফল্যের ওপরই নির্ভর করছে নতুন এই উদ্যোগের সম্প্রসারণের বিষয়টি।

উদ্যোগটি সম্পর্কে অবগত একটি সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, সিবিআইআরসি এ জন্য বেশ কয়েকটি বেসরকারি পেনশন তহবিলকে তালিকাভুক্ত করেছে। এগুলোকে সমন্বয় করে নতুন একটি স্কিম চালু করা হচ্ছে, যা পরিচালনার জন্য সংস্থাটি একদল পেশাদার ব্যবস্থাপক নিয়োগ দিচ্ছে।

চীনের জনমিতিতে বড় পরিবর্তন হওয়ার বিষয়টি পরিসংখ্যানে উঠে আসার পরই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ তথ্যমতে, দেশটির মোট ১৪০ কোটি মানুষের মধ্যে ১৩ দশমিক ৫ শতাংশের বয়সই ৬৫ বা তদূর্ধ্ব। এক দশক আগেও এ হার ছিল ৮ দশমিক ৮ শতাংশ। এই অবস্থায় একদিকে উৎপাদন খাতের সংকোচনের আশঙ্কা রয়েছে, অন্যদিকে রয়েছে বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সামাজিক নিরাপত্তা ব্যয় বৃদ্ধির ভার। চীনের পেনশন তহবিল বিষয়ক সংকট অনেক জটিল একটি বিষয়।

চীনের রাষ্ট্রীয় গবেষণা সংস্থা চাইনিজ একাডেমি অব সোশ্যাল সায়েন্সেসের (সিএএসএস) ২০১৯ সালে দেওয়া তথ্যমতে, ২০২৭ সাল নাগাদ এ বাবদ চীনের ব্যয় গিয়ে দাঁড়াবে ৬ লাখ ৯৯ হাজার কোটি ইউয়ানে (১ লাখ ৯ হাজার কোটি মার্কিন ডলার)। এই সংকট ২০৩৫ সাল নাগাদ চরম আকার ধারণ করতে পারে বলেও সে সময় পূর্বাভাস দেওয়া হয়।

এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চীনা নাগরিকদের সঞ্চিত ১ কোটি কোটি (১০০ ট্রিলিয়ন) ইউয়ান। এটি অবশ্য একই সঙ্গে সম্ভাবনাও। কারণ এত বিপুল অঙ্কের কারণেই বেসরকারি খাত সরকারি পেনশন স্কিমে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠছে। চীনা সরকারও বিষয়টিকে কাজে লাগাতে চাইছে। তবে এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগে আগ্রহী বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে তাদের অবস্থান এখনো অস্পষ্ট। বিদেশি বহু প্রতিষ্ঠান এমন কিছুর সঙ্গে যুক্ত হতে উদ্‌গ্রীব হয়ে আছে।

বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এই খাতকে একটি মুনাফার ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করছে। খাতটিতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে যুক্ত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করাটা চীন সরকারের জন্য এই মুহূর্তে জরুরি বিষয়। মুশকিল হচ্ছে এ ক্ষেত্রে প্রবেশের অনুমতি পাওয়ার পর বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগের বিপরীতে বড় মুনাফার প্রত্যাশা করবে। একই সঙ্গে এই বিনিয়োগের কারণে বিভিন্ন ধরনের কর রেয়াত চেয়ে বসতে পারে।

ক্রমবর্ধমান বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সামাজিক নিরাপত্তা বাবদ ব্যয় বাড়ছে চীন সরকারের। ছবি: রয়টার্সএ ক্ষেত্রে আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত। চীনের কর্মজীবী মানুষের একটি বড় অংশই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের সঙ্গে যুক্ত। তারা বা তাদের চাকরিদাতাদের কেউই পেনশন বাবদ কোনো কিছু জমা করে না। বিষয়টিকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন সিনহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডং কেয়ং। সম্প্রতি বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত এ সম্পর্কিত এক ফোরামে দেওয়া বক্তব্যে তিনি প্রসঙ্গটি উপস্থাপন করেন। চ্যালেঞ্জটি মোকাবিলায় তিনি পেনশন স্কিমের সঙ্গে বেসরকারি খাতকে সংযুক্ত করার পরামর্শ দেন।

বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বৃদ্ধি চীনকে সত্যিকার অর্থেই বিপাকে ফেলেছে। সংকট নিরসনে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করতে হবে। কিন্তু তেমনটি করলে আবার তা তার এত দিনের রাষ্ট্রকাঠামো ও এর চর্চার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে উঠতে পারে। এদিকে সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টিকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। চীনের অধিকাংশ বয়স্ক ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় পেনশন তহবিলের ওপর নির্ভরশীল। এই তহবিলে প্রত্যেক কর্মজীবীর মূল বেতনের ১৬ শতাংশ চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান দেয়, বাকিটা দেয় রাষ্ট্র। এই হার অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় বেশি। মুশকিল হচ্ছে এরপরও চীনের করপোরেট ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পেনশন তহবিল দেশটির মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) মাত্র ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। ওই একই বছর যুক্তরাষ্ট্রে এ হার ছিল ১৩৬ শতাংশ।

বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত এ সম্পর্কিত ফোরামে অধ্যাপক ডং কেয়ং জানান, চীনে ৬৫ বা তদূর্ধ্ব বয়সী মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। মোট জনসংখ্যার এক–তৃতীয়াংশে উন্নীত হওয়া পর্যন্ত এ সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। তারপর এই হার একটি স্থিতিশীল অবস্থায় পৌঁছাবে। চীনা অর্থনীতিতে এর প্রভাব হবে ভয়াবহ। ফলে এই বিপুল বয়স্ক জনগোষ্ঠীর অবসরকালীন ভাতা নিয়ে দেখা দেবে এক বড় অনিশ্চয়তা। চীন সরকার বিষয়টি মোকাবিলার জন্য নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। কিন্তু এ বিষয়ে এখনো তারা প্রকাশ্যে কোনো কথা বলছে না।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলেও রয়টার্সকে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি সিবিআইআরসি।

এরই মধ্যে পিপলস ইনস্যুরেন্স কোম্পানি অব চায়না, চায়না প্যাসিফিক ইনস্যুরেন্স গ্রুপের মতো কিছু বিমা ও মিউচুয়াল প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিক পেনশন স্কিম বিক্রি শুরু করলেও তার কোনোটিই দীর্ঘমেয়াদি নয়। ফলে মানুষের মধ্যে এগুলো তেমন সাড়াও ফেলতে পারছে না। সাংহাইয়ে গত তিন বছর ধরে চেষ্টা চালিয়ে বেসরকারি বিমা প্রতিষ্ঠানগুলো মাত্র ৪০ কোটি ইউয়ানের (৬২ লাখ ২০ হাজার ডলার) পেনশন তহবিল গঠন করতে পেরেছে। চীনের চাহিদার বিপরীতে এটি কত ক্ষুদ্র, তা ব্যাখ্যার আর প্রয়োজন নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

২০২৫ সালের সেরা সিইও কে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: দ্য ইকোনমিস্ট
ছবি: দ্য ইকোনমিস্ট

২০২৫ সাল ছিল বিশ্ব করপোরেট নেতৃত্বের জন্য এক কঠিন পরীক্ষার বছর। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার ফলে শুরু হয় নতুন বাণিজ্যযুদ্ধ ও অনিশ্চিত নীতিনির্ধারণ। একই সঙ্গে চীন ও পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে প্রযুক্তিগত আধিপত্যের লড়াই আরও তীব্র হয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়ে বিপুল প্রত্যাশা থাকলেও, সেটিকে লাভজনক ব্যবসায় রূপ দেওয়ার কাজ অনেক সিইওর জন্য হতাশাজনকই থেকে যায়।

তবে এই অস্থিরতার মধ্যেও কিছু প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ব্যতিক্রমী সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন। টানা তৃতীয়বারের মতো ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ এবারও (২০২৫ সাল) সেরা সিইও নির্বাচন করেছে। এ ক্ষেত্রে এসঅ্যান্ডপি ১২০০ সূচকের অন্তর্ভুক্ত কোম্পানিগুলোকে তাদের খাতভিত্তিক গড়ের তুলনায় অতিরিক্ত শেয়ারহোল্ডার রিটার্নের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হয়েছে। আর তিন বছরের কম সময় দায়িত্বে থাকা সিইওদের বাদ দিয়ে শীর্ষ ১০ জনকে প্রাথমিক তালিকায় রাখা হয়।

এই তালিকায় ছিলেন—জার্মান অস্ত্র নির্মাতা রাইনমেটালের আরমিন পাপারগার, স্বর্ণখনি জায়ান্ট নিউমন্টের টম পামার, ফুজিকুরার ওকাদা নাওকি, ওয়ার্নার ব্রাদার্স ডিসকভারির ডেভিড জাসলাভ, হানহা অ্যারোস্পেসের সন জে-ইল, মাইক্রনের সঞ্জয় মেহরোত্রা, কিনরস গোল্ডের জে পল রোলিনসন, রবিনহুডের ভ্লাদিমির টেনেভ, এসকে হাইনিক্সের কাক নো-জং এবং সিগেট টেকনোলজির ডেভ মসলে।

তবে অতীতের দুর্বল পারফরম্যান্স, করপোরেট গভর্ন্যান্স সমস্যা কিংবা নিছক সৌভাগ্যের কারণে অনেকেই চূড়ান্ত বিবেচনা থেকে বাদ পড়েছেন। স্বর্ণের দাম প্রায় ৬৫ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় খনি কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বাড়লেও, সেটিকে সিইওদের কৃতিত্ব হিসেবে ধরা হয়নি। মেমোরি চিপ খাতে এআই বুমের সুফল পেলেও, সেখানে এসকে হাইনিক্সের গবেষণা ও উন্নয়নে ধারাবাহিক বিনিয়োগ আলাদা করে প্রশংসা কুড়িয়েছে।

সবশেষে ২০২৫ সালের সেরা সিইও হিসেবে রাইনমেটালের আরমিন পাপারগারকেই বেছে নিয়েছে ‘দ্য ইকোনমিস্ট’। তাঁর নেতৃত্বে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশসহ ১৫৮ শতাংশ রিটার্ন দিয়েছে। ইউরোপের প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধির সুযোগ কাজে লাগিয়ে রাইনমেটাল বড় বড় চুক্তি জয় করেছে এবং নৌযান নির্মাণ খাতেও সম্প্রসারণে নেমেছে। ২০১৩ সাল থেকে দায়িত্বে থাকা পাপারগার ইউক্রেন যুদ্ধের আগেই ইউরোপের প্রতিরক্ষা শিল্পের সম্ভাবনা অনুধাবন করেছিলেন। দূরদর্শিতা, সাহস ও দৃঢ় নেতৃত্বের ফলেই ২০২৫ সালের সেরা সিইওর স্বীকৃতি তাঁর হাতেই উঠেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এবার ট্রাম্প ও জেলেনস্কির বৈঠক—কী আছে সর্বশেষ ২০ দফা শান্তি প্রস্তাবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সিএনএন
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সিএনএন

ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে একটি ২০ দফা শান্তি প্রস্তাবকে সামনে রেখে রোববার (২৮ ডিসেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি। জেলেনস্কির কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এই খসড়া প্রস্তাবকে তিনি ভবিষ্যতে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শেষ করার একটি সম্ভাব্য ভিত্তি হিসেবে দেখছেন।

এর আগে ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২৮ দফার একটি খসড়া প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চললেও সেটিকে রাশিয়ার দাবির প্রতি অতিরিক্ত সহানুভূতিশীল মনে করা হয়েছিল। কয়েক সপ্তাহের আলোচনার পর প্রস্তাবটি সংশোধন করে ২০ দফায় নামিয়ে আনা হয়। জেলেনস্কি জানিয়েছেন, অধিকাংশ বিষয়ে পক্ষগুলোর অবস্থান অনেকটাই কাছাকাছি এসেছে। তবে এখনো দুটি ইস্যুতে ঐকমত্য হয়নি—ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ এবং জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকানা ও পরিচালনা।

প্রস্তাবনার শুরুতেই ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব পুনর্ব্যক্ত করার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ ও নিঃশর্ত আগ্রাসনবিরোধী চুক্তির প্রস্তাব রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি শান্তি বজায় রাখতে সীমান্তবর্তী সংঘর্ষরেখা নজরদারির জন্য মহাকাশভিত্তিক মানববিহীন প্রযুক্তি ব্যবহারের কথাও এতে অন্তর্ভুক্ত আছে।

এই কাঠামো অনুযায়ী, ইউক্রেন তার সশস্ত্র বাহিনীর বর্তমান শক্তি—প্রায় ৮ লাখ সেনা—অক্ষুণ্ন রাখবে। যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো ও ইউরোপীয় দেশগুলো ন্যাটোর অনুচ্ছেদ ৫-এর আদলে ইউক্রেনকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেবে। অপরদিকে ইউক্রেন ও ইউরোপের বিরুদ্ধে আগ্রাসন না করার নীতি নিজ দেশের আইনে এবং পার্লামেন্টের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দিতে হবে রাশিয়াকে।

অর্থনৈতিক দিক থেকে ইউক্রেনের জন্য রয়েছে বড় পরিসরের পুনর্গঠন ও উন্নয়ন পরিকল্পনা। ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল পুনর্গঠন, মানবিক সহায়তা এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য একাধিক তহবিল গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যার লক্ষ্য প্রায় ৮০০ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ। ইউক্রেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ পাবে এবং অস্থায়ীভাবে ইউরোপীয় বাজারে বিশেষ সুবিধা ভোগ করবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি দ্রুত সম্পন্ন করার কথাও বলা হয়েছে।

সবচেয়ে জটিল ইস্যু হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে ভূখণ্ড প্রশ্ন। রাশিয়া দোনেৎস্ক অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সেনা প্রত্যাহার চায়, অন্যদিকে ইউক্রেন বর্তমান যুদ্ধরেখায় সংঘর্ষ বন্ধের পক্ষে। যুক্তরাষ্ট্র এখানে একটি নিরস্ত্রীকৃত অঞ্চল ও মুক্ত অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রস্তাব দিয়েছে।

যুদ্ধবন্দীর মতো মানবিক বিষয়ে ‘সবার বিনিময়ে সবার মুক্তি’, আটক বেসামরিক নাগরিক ও শিশুদের ফেরত এবং যুদ্ধাহতদের সহায়তার কথা রয়েছে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করবে ইউক্রেন।

এই শান্তিচুক্তি আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক হবে এবং এর বাস্তবায়ন তদারক করবে একটি ‘পিস কাউন্সিল’, যার সভাপতিত্ব করবেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সব পক্ষ একমত হলে সঙ্গে সঙ্গে পূর্ণ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে—এমনটাই বলা হয়েছে এই ২০ দফা প্রস্তাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

৪০ শতাংশ জার্মান মনে করেন মার্জের সরকার টিকবে না

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
জার্মানির বর্তমান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জ। ছবি: এএফপি
জার্মানির বর্তমান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জ। ছবি: এএফপি

জার্মানির বর্তমান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ২০২৯ সাল পর্যন্ত তাদের পূর্ণ মেয়াদ শেষ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে দেশটির নাগরিকদের একটি বড় অংশের মধ্যে গভীর সংশয় দেখা দিয়েছে। গতকাল শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) প্রকাশিত একটি জনমত জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৪০ শতাংশ জার্মান নাগরিক মনে করেন, এই সরকার নির্ধারিত সময়ের আগেই ভেঙে যেতে পারে।

২০২৫ সালের মে মাসে জার্মানির চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন ফ্রিডরিখ মার্জ। তবে বছর শেষ হতে না হতেই তাঁর সরকারের জনপ্রিয়তা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছে জনপ্রিয় জার্মান সংবাদমাধ্যম ওয়েল্ট অ্যাম সোনটাগ (Welt am Sonntag)।

জনমত জরিপ পরিচালনাকারী সংস্থা ‘ইউগভ’ জার্মান সরকারকে নিয়ে জরিপটি করে। ১৭ থেকে ১৯ ডিসেম্বরের মধ্যে ১ হাজার ১০ জন অংশগ্রহণকারীর ওপর এই জরিপ চালানো হয়।

ইউগভের তথ্যমতে, ৩৭ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন—রক্ষণশীল খ্রিষ্টান সোশ্যাল ইউনিয়ন (সিএসইউ) ও তার সহযোগী দল খ্রিষ্টান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ) এবং মধ্য-বাম সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এসডিপি) সমন্বয়ে গঠিত এই জোট সরকারের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন (২০২৯) পর্যন্ত ক্ষমতায় টিকে থাকার সম্ভাবনা ‘খুবই কম’।

অন্য দিকে ৫৩ শতাংশ নাগরিক বিশ্বাস করেন, মার্জ সরকার তাদের পূর্ণ মেয়াদ শেষ করতে পারবে। অন্য ৯ শতাংশ কোনো নিশ্চিত মতামত দেয়নি।

জরিপে আরও দেখা গেছে, সাবেক পূর্ব জার্মানির রাজ্যগুলোতে সরকারের প্রতি অনাস্থা সবচেয়ে বেশি (৪২ শতাংশ), যেখানে পশ্চিম জার্মানিতে এই হার ৩৬ শতাংশ।

জরিপ সংস্থা ‘ইনসা’র অন্য একটি জরিপে দেখা গেছে, চ্যান্সেলর হিসেবে ফ্রিডরিখ মার্জের কাজে সন্তুষ্ট মাত্র ২২ শতাংশ জার্মান। এই ফলাফল মূলত জোটের স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপের মুখে নেতৃত্বের অভাব নিয়ে জনগণের ক্রমবর্ধমান উদ্বেগেরই প্রতিফলন।

উল্লেখ্য, ২০২৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি জার্মানিতে আগাম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ফ্রিডরিখ মার্জের সিডিইউ/সিএসইউ জোট ২৮ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হয়। অন্য দিকে উগ্র ডানপন্থী দল অলটারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি) রেকর্ড ২০ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে চলে আসে। আর ওলাফ শোলৎজের দল এসডিপি মাত্র ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট পায়, যা তাদের ইতিহাসে সর্বনিম্ন।

তবে এসপিডি বড় ধরনের হারের মুখ দেখলেও সিডিইউ/সিএসইউ জোটের সঙ্গে মিলে সরকার গঠন করে, যার ফলে সাবেক চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজের দল পুনরায় মন্ত্রিসভায় ফেরার সুযোগ পায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও ইউরোপের সঙ্গে ‘পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে’ আছে ইরান: পেজেশকিয়ান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। ছবি: এপির সৌজন্যে
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। ছবি: এপির সৌজন্যে

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তাঁর দেশ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে একটি ‘পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে’ লিপ্ত রয়েছে। শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির দাপ্তরিক ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।

পেজেশকিয়ান সতর্ক করে বলেন, এই যুদ্ধ আশির দশকের ইরান-ইরাক যুদ্ধের চেয়েও অনেক বেশি জটিল এবং কঠিন। তিনি অভিযোগ করেন, পশ্চিমারা ইরানকে আর্থিকভাবে পঙ্গু করতে এবং অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে বহুমুখী কৌশল অবলম্বন করছে।

ইরানি প্রেসিডেন্ট বর্তমান সংঘাতকে কেবল সামরিক নয়; বরং একটি সর্বাত্মক অবরোধ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। পেজেশকিয়ান বলেছেন, ‘ইরাক যুদ্ধের সময় পরিস্থিতি পরিষ্কার ছিল—তারা যদি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ত, আমরাও পাল্টা জবাব দিতাম। কিন্তু বর্তমান যুদ্ধ অনেক বেশি সূক্ষ্ম। তারা আমাদের প্রতিটি দিক থেকে অবরুদ্ধ করে ফেলছে; আমাদের অর্থনীতি, সংস্কৃতি, রাজনীতি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সমস্যা সৃষ্টি করছে।’

তিনি জানান, একদিকে ইরানকে বিশ্ববাণিজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা চলছে, অন্যদিকে জনগণের প্রত্যাশা বাড়িয়ে দেশে অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে।

প্রেসিডেন্ট তাঁর সাক্ষাৎকারে ২০২৫ সালের জুন মাসের ১২ দিনের যুদ্ধের প্রসঙ্গও টানেন।

উল্লেখ্য, গত জুন মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনী ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় (ফোরদো, নাতানজ ও ইসফাহান) হামলা চালিয়েছিল। সে সময় ইসরায়েলি হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা এবং বিজ্ঞানীরা নিহত হন।

পেজেশকিয়ান দাবি করেন, জুনের সংঘাতের পর ইরান এখন সামরিক সরঞ্জাম ও জনবল—উভয় দিক থেকেই আগের চেয়ে বেশি শক্তিশালী। তিনি হুঁশিয়ারি দেন, ‘যদি তারা আবার হামলা চালানোর দুঃসাহস দেখায়, তবে এবার জবাব হবে আরও কঠোর।’

পেজেশকিয়ানের এই কড়া বার্তা এমন একসময়ে এল যখন মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনার পারদ চড়ছে। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপের নীতি ফিরিয়ে এনেছেন।

এদিকে, চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ওয়াশিংটন সফরে যাচ্ছেন। লেবাননের সংবাদমাধ্যম আল-মায়েদিনের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সেখানে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর আলোচনায় গুরুত্ব পাবে ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোতে পরবর্তী সম্ভাব্য হামলার পরিকল্পনা।

সাক্ষাৎকার শেষে পেজেশকিয়ান দেশের মানুষের প্রতি জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান জানান। তিনি বিশ্বাস করেন, জনগণের অংশগ্রহণ এবং অভ্যন্তরীণ সংহতি থাকলে বিশ্বের কোনো শক্তিই ইরানকে পরাজিত করতে পারবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত