Ajker Patrika

ভিয়েতনাম-চীনে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় কাজিকি, সরানো হচ্ছে লাখ লাখ মানুষকে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ আগস্ট ২০২৫, ১৪: ১৯
আসন্ন ঘূর্ণিঝড় কাজিকির প্রভাবে প্রবল বাতাস ও বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে ভিয়েতনামে। ছবি: এএফপি
আসন্ন ঘূর্ণিঝড় কাজিকির প্রভাবে প্রবল বাতাস ও বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে ভিয়েতনামে। ছবি: এএফপি

দক্ষিণ চীন সাগরে ক্রমাগত শক্তি সঞ্চয় করে ভিয়েতনাম ও চীনের উপকূলে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় কাজিকি। ঝড়ের তাণ্ডব মোকাবিলায় দুই দেশে লাখ লাখ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ফ্লাইট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও নৌযান চলাচল। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেনডেন্টের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ভিয়েতনামের জাতীয় আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, স্থানীয় সময় গতকাল রোববার সকালে ঘূর্ণিঝড়টি দেশটির মধ্যাঞ্চলীয় উপকূল থেকে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল। ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার বেগে পশ্চিমমুখী হয়ে এগোচ্ছিল এটি। বাতাসের বেগ ছিল ঘণ্টায় প্রায় ১৪৯ কিলোমিটার। আজ সোমবার উপকূলে আছড়ে পড়ার সময় এর গতি ঘণ্টায় ১৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।

ঝড়ের কারণে থান হোয়া, কোয়াং ত্রি, হুয়ে ও দা নাংসহ কয়েকটি প্রদেশ থেকে অন্তত ৫ লাখ ৮৬ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে ভিয়েতনাম কর্তৃপক্ষ। সাতটি উপকূলীয় প্রদেশে মাছ ধরার নৌকা সমুদ্রে যাওয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রায় ৬০ হাজার নৌকা ও ২ লাখ ৪৯ হাজার জেলেকে সতর্ক করা হয়েছে। জাতীয় বিমান সংস্থা ভিয়েতনাম এয়ারলাইনস রোববার ও সোমবার মিলিয়ে ২২টি ফ্লাইট বাতিল করেছে। বাজেট এয়ারলাইন ভিয়েতজেট অ্যাভিয়েশনও কয়েকটি ফ্লাইট স্থগিত বা বিলম্বিত করেছে।

দেশটিতে এই ঘূর্ণিঝড়ের ফলে ধান, ফল ও রাবারক্ষেতসহ লাখো হেক্টর জমি ক্ষতির মুখে পড়েছে। ঝুঁকিতে রয়েছে মাছের ঘের। জলাধারগুলো ৮০ শতাংশের বেশি ভরে থাকায় বন্যার আশঙ্কা বাড়ছে। প্রধানমন্ত্রী ফাম মিন চিন দ্রুত সরিয়ে নেওয়া, বাঁধ মজবুত করা এবং জরুরি যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

ভিয়েতনামের আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ঝড়ের কারণে কিছু অঞ্চলে ২০০ থেকে ৭০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে। জলোচ্ছ্বাস ও প্রবল বাতাসে উপকূলীয় এলাকায় ভূমিধস ও বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এদিকে, চীনের হাইনান দ্বীপে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। পর্যটন নগরী সানিয়ায় শপিং সেন্টার, রেস্তোরাঁ, সুপারমার্কেট ও গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জারি করা হয়েছে সর্বোচ্চ সতর্কতা। হাইকো শহরের তিনটি বন্দরও বন্ধ করা হয়েছে।

চীনের জাতীয় আবহাওয়া কেন্দ্রের তথ্যমতে, রোববার সকালে কাজিকি সানিয়ার দক্ষিণ-পূর্বে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে ছিল। এটি ঘণ্টায় প্রায় ২০ কিলোমিটার বেগে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। কেন্দ্রে বাতাসের বেগ ছিল প্রতি সেকেন্ডে ৩৮ মিটার। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, হাইনানে বৃষ্টিপাত ৪০০ মিলিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। প্রবল বর্ষণ হবে গুয়াংডং প্রদেশ ও গুয়াংসি অঞ্চলেও।

গুয়াংসি মেরিটাইম সেফটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সব নৌযানকে বন্দরে ফিরিয়ে আনতে টহল জাহাজ পাঠিয়েছে। হাইনানের রাজধানী হাইকো শনিবার রাতে তিনটি বন্দর বন্ধ করে দিয়েছে। চীনের রাষ্ট্রীয় বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও খরা ত্রাণ সদর দপ্তর লেভেল-৪ জরুরি সাড়াদান ব্যবস্থা চালু করেছে এবং হাইনানে ত্রাণকাজ তদারকিতে একটি দল পাঠিয়েছে।

থাইল্যান্ডও কাজিকির প্রভাব মোকাবিলায় সতর্ক অবস্থায় আছে। দেশটির আবহাওয়া দপ্তর বলছে, ২৪ থেকে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারী বর্ষণ হতে পারে। এর ফলে আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসের ঝুঁকি রয়েছে। আন্দামান সাগর ও থাইল্যান্ড উপসাগরে ঢেউয়ের উচ্চতা ৩ মিটারের বেশি হতে পারে।

এ বছর দক্ষিণ চীন সাগরে এটি পঞ্চম ট্রপিক্যাল স্টর্ম। ভিয়েতনাম সরকার জানিয়েছে, কাজিকি গত বছরের টাইফুন ইয়াগির মতো শক্তিশালী হতে পারে। সেই ঝড়ে প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল এবং ৩৩ কোটি ডলারের ক্ষতি হয়েছিল।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দুর্নীতির মামলায় নেতানিয়াহুকে ক্ষমা করতে ইসরায়েলি প্রেসিডেন্টকে ট্রাম্পের চিঠি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
এপ্রিলে হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে নেতানিয়াহু। ছবি: এপির সৌজন্যে
এপ্রিলে হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে নেতানিয়াহু। ছবি: এপির সৌজন্যে

চলমান দুর্নীতি মামলায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ‘পূর্ণ ক্ষমা’ চেয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই চিঠি তিনি সরাসরি ইসরায়েলি প্রেসিডেন্টের উদ্দেশে লিখেছেন।

ইসরায়েলি প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে প্রকাশিত ওই চিঠিতে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘আমি আপনাকে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে সম্পূর্ণরূপে ক্ষমা করার আহ্বান জানাচ্ছি। যুদ্ধকালীন তিনি একজন শক্তিশালী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এখন তিনি ইসরায়েলকে শান্তির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।’

একটি দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ অস্বাভাবিক হলেও ট্রাম্পের জন্য এটি নতুন নয়। তিনি আগেও এভাবে বিভিন্ন দেশে থাকা তাঁর প্রিয় মানুষদের রক্ষা করতে এমন কাজ করেছেন।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের শুরুতে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে তিনটি পৃথক মামলায় যথাক্রমে জালিয়াতি, ঘুষ এবং বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়। তবে নেতানিয়াহু নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বারবার এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

ট্রাম্প তাঁর চিঠিতে লিখেছেন, ‘যদিও আমি ইসরায়েলি বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা এবং এর প্রয়োজনীয়তাকে শ্রদ্ধা করি, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, বিবির বিরুদ্ধে মামলাটি রাজনৈতিক ও অযৌক্তিক। আমরা দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে ইসরায়েলের কঠিন প্রতিপক্ষ ইরানের বিরুদ্ধে লড়াই করছি।’

প্রেসিডেন্টের ভূমিকাটি মূলত আনুষ্ঠানিক হলেও ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হেরজগের ক্ষমা করার ক্ষমতা রয়েছে। তবে এর জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তি, তাঁদের আইনজীবী বা পরিবারের সদস্যের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করতে হয়। নেতানিয়াহু বা তাঁর কোনো ঘনিষ্ঠ কেউ এখন পর্যন্ত এমন কোনো আবেদন জমা দেননি।

হেরজগের দপ্তর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ট্রাম্পকে শ্রদ্ধা করে। ইসরায়েলের প্রতি তাঁর অবিচল সমর্থন, জিম্মিদের প্রত্যাবর্তনে তাঁর বিশাল অবদান, মধ্যপ্রাচ্য ও গাজার পরিবর্তন এবং ইসরায়েলের নিরাপত্তা রক্ষায় তাঁর ভূমিকার প্রশংসা করে। তবে হেরজগের দপ্তর স্পষ্ট করে বলেছে, ‘কোনো ব্যক্তি যদি ক্ষমা চান, তাঁকে অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতি অনুযায়ী আবেদন জমা দিতে হবে।’

এদিকে ট্রাম্পের এই চিঠি ইসরায়েলের রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

কট্টর ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গাভির এক্সে লিখেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট হেরজগ, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কথা শুনুন!’ তিনি দাবি করেন, নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো ‘রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেই অভিযোগের’ শামিল হয়েছে।

বিরোধী দলের নেতা ইয়াইর লাপিদ বলেন, ‘মনে রাখবেন, ইসরায়েলি আইনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতির ক্ষমার প্রথম শর্ত হলো দোষ স্বীকার করা এবং অনুশোচনা প্রকাশ করা।’

নেতানিয়াহু ইসরায়েলের ইতিহাসে প্রথম ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী, যিনি পদে থাকাকালীন ফৌজদারি মামলার সম্মুখীন হচ্ছেন। ঘুষ, জালিয়াতি এবং বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে ২০২০ সালের মে মাসে তাঁর বিচার শুরু হয়েছিল। নেতানিয়াহুর নিজের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয় ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে, তবে তাঁর অনুরোধে বারবার বিচারপ্রক্রিয়া বিলম্ব ও বাতিল করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, বিচার, রায় এবং সম্ভাব্য আপিলের বিভিন্ন পর্যায় বিবেচনায় এই প্রক্রিয়া আরও কয়েক বছর ধরে চলবে।

অন্য দেশের চলমান বিচারিক কার্যক্রমে ট্রাম্পের হস্তক্ষেপের ঘটনা এটিই প্রথম নয়। এর আগে গত জুলাইয়ে এক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে ট্রাম্প তাঁর আরেক আন্তর্জাতিক সহযোগী, ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারোর (যিনি অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্রের জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন) বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া বন্ধ করার জন্য ব্রাজিলীয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।

এরপর এপ্রিলে ট্রাম্প ফরাসি কট্টর ডানপন্থী নেতা মেরিন লো পেনের জন্য পোস্ট দিয়েছিলেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের তহবিল তছরুপের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় লো পেনকে পাঁচ বছরের জন্য রাজনৈতিক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করে লিখেছিলেন, মেরিন লো পেনের বিরুদ্ধে ‘উইচ হান্ট’ (ডাইনি খোঁজা অভিযান) হলো ইউরোপের বামপন্থীদের আরেকটি উদাহরণ; যেখানে তারা ‘আইনকে অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করে বাক্‌স্বাধীনতা দমন করছে এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে চুপ করাচ্ছে। এবার তারা এত দূর গেছে যে প্রতিপক্ষকেই জেলে পাঠাচ্ছে। এটা সেই একই কৌশল, যা আমার বিরুদ্ধেও ব্যবহার করা হয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতীয় গোয়েন্দাদের ঘোল খাওয়াল ডা. উমর, গাড়িটি ৩ ঘণ্টা ধরে পার্কিং লটে অপেক্ষার পর ঘটে বিস্ফোরণ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বিস্ফোরণের আগে উমর তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে কাছাকাছি একটি পার্কিং লটে গাড়িতে অপেক্ষা করছিলেন। ছবি: সংগৃহীত
বিস্ফোরণের আগে উমর তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে কাছাকাছি একটি পার্কিং লটে গাড়িতে অপেক্ষা করছিলেন। ছবি: সংগৃহীত

দিল্লির লাল কেল্লার কাছে ভয়াবহ গাড়ি বিস্ফোরণের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত উমর মুহাম্মদের কর্মকাণ্ড নিয়ে তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। বিস্ফোরণের আগে উমর মুহাম্মদ তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে কাছাকাছি একটি পার্কিং লটে গাড়িতে অপেক্ষা করছিলেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি তদন্তকারীদের নতুন তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, উমর মুহাম্মদ গাড়ি বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য প্রথমে লাল কেল্লার পার্কিং এলাকাকে বেছে নিয়েছিলেন, যেখানে শীতকালে ব্যাপক ভিড় থাকে। তবে তাঁর সহযোগী গ্রেপ্তার ও বিপুল বিস্ফোরক উদ্ধারের পরে হতাশায় থাকা উমর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভুলে যান—সোমবার লাল কেল্লা বন্ধ থাকে। তিনি যখন পার্কিং লটে পৌঁছান, তখন সেখানে কোনো ভিড় ছিল না। বিষয়টি উমরকে হতাশ করে এবং তিনি কী করবেন, তা নিয়ে দ্বিধায় পড়েন।

তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পর তিনি নেতাজি সুভাষ মার্গের দিকে গাড়ি নিয়ে যান, যা একদিকে লাল কেল্লা এবং অন্যদিকে চাঁদনি চকের পাশ দিয়ে গেছে। এরপর লাল কেল্লা মেট্রো স্টেশনের কাছে একটি ট্রাফিক সিগন্যালেই গাড়িটি বিস্ফোরিত হয়।

ফরিদাবাদ থেকে লাল কেল্লা, উমরের পথ অনুসরণ

প্রায় ৬০০ পুলিশ সদস্য ১ হাজারের বেশি সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে উমর মুহাম্মদের সাদা রঙের হুন্ডাই আই-২০ গাড়িটির গতিবিধি শনাক্ত করেছেন।

গাড়িটি সোমবার সকালে ফরিদাবাদের আল ফালাহ ইউনিভার্সিটি থেকে রওনা হয়। সকাল ৮টা ১৩ মিনিটে এটি হরিয়ানা-দিল্লি সীমান্তে বাদরপুরের টোল প্লাজা অতিক্রম করে। এরপর ময়ূর বিহার এবং কনট প্লেস হয়ে লাল কেল্লার কাছাকাছি পার্কিংয়ে পৌঁছায়।

এই দীর্ঘ যাত্রার মধ্যে তিনি পুরোনো দিল্লির কাছে আসফ আলী রোডে প্রায় আধা ঘণ্টা বিরতি নেন। সিসিটিভি ফুটেজে তাঁকে গাড়িতে একা বসে থাকতে দেখা যায়। সংক্ষিপ্ত বিরতির পর তিনি আবার ড্রাইভ শুরু করে পার্কিং লটে যান।

কনট প্লেস কি লক্ষ্য ছিল

দিল্লিতে প্রবেশের পর উমর যে পথটি নিয়েছিলেন, তা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠেছে। বাদরপুর টোল বুথ থেকে তিনি প্রথমে ময়ূর বিহারের দিকে যান, যেখানে দিল্লির গুরুত্বপূর্ণ স্থান অক্ষরধাম মন্দির অবস্থিত। সেখান থেকে সরাসরি পুরোনো দিল্লিতে না এসে তিনি পথ পরিবর্তন করে দিল্লির প্রাণকেন্দ্র কনট প্লেসে যান।

তদন্তকারীরা কনট প্লেস থেকে সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করছেন এই সন্দেহে যে কনট প্লেস কি হামলার লক্ষ্য ছিল?

উমর সকাল ৮টার পরপরই দিল্লিতে প্রবেশ করলেও বিস্ফোরণ ঘটে প্রায় ১১ ঘণ্টা পরে। দীর্ঘ এই সময়ে পথ পরিবর্তন এবং তিন ঘণ্টা পার্কিং লটে কাটানো—এসবের পেছনে কোনো নির্দেশের জন্য অপেক্ষা, নাকি লক্ষ্য ঠিক করার দ্বিধা কাজ করছিল, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।

উমরের ফোন নিয়ে বড় প্রশ্ন

পুলিশ জানতে পেরেছে, উমরের ফোনটি বিস্ফোরণের ১০ দিন আগে অর্থাৎ ৩১ অক্টোবর থেকে বন্ধ ছিল এবং এটির শেষ অবস্থান ছিল আল ফালাহ ইউনিভার্সিটি। উমরের যাত্রাপথের সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে দেখা গেছে, তাঁকে একবারও ফোন ব্যবহার করতে দেখা যায়নি।

এ থেকে প্রশ্ন উঠেছে, ফোন ব্যবহার বা বহন না করা কি পরিকল্পনার অংশ ছিল? কোনো ধরনের সন্দেহ এড়াতে তাঁকে ফোন না রাখতে বলা হয়েছিল কি না? অন্য প্রশ্নটি হলো, ফোনের সংযোগ ছাড়া তিনি অন্যদের সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ রাখছিলেন? তবে কি উমর অন্য কোনো ফোন ব্যবহার করছিলেন? তদন্তকারীরা এ বিষয়েও খতিয়ে দেখছেন।

পার্কিং লটের ৩ ঘণ্টার রহস্য

পার্কিং লটে উমরের তিন ঘণ্টার অপেক্ষা অনেক প্রশ্ন তুলেছে। কিছু রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, এই সময়ে তিনি ফরিদাবাদে বিপুল বিস্ফোরক উদ্ধার ও তাঁর সহযোগীদের গ্রেপ্তারের খবর পড়ছিলেন। তবে এটি তাঁর ওপর কী প্রভাব ফেলেছিল, তা জল্পনার বিষয়।

ভারতীয় গোয়েন্দা সূত্রগুলো দাবি করছে, বিস্ফোরণটি আতঙ্ক থেকে ঘটানো হয়েছে। তাদের যুক্তি, বিস্ফোরকগুলো সঠিকভাবে একত্র করা হয়নি, ফলে এর প্রভাব সীমিত হয়েছে। এই আতঙ্ক ফরিদাবাদে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ২ হাজার ৯০০ কেজি বিস্ফোরক উদ্ধার এবং উমরের সহযোগী গ্রেপ্তারের ফল হতে পারে।

তবে এ মুহূর্তে এগুলো সবই অনুমান, তদন্তই কেবল ঘটনার সম্পূর্ণ শৃঙ্খল উন্মোচন করতে পারবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

৪৩ দিন পর যুক্তরাষ্ট্রে শাটডাউন অবসানের উদ্যোগ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিল। ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিল। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ বা হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস ৪৩ দিন চলা শাটডাউনের অবসান ঘটাতে একটি অন্তর্বর্তীকালীন অর্থায়ন বিলের ওপর ভোটাভুটির আয়োজন করতে যাচ্ছে। এই বিল পাস হলে খাদ্যসহায়তা পুনরায় চালু হবে, কয়েক লাখ সরকারি কর্মচারী বকেয়া বেতন পাবেন এবং আংশিকভাবে অচল বিমান নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা আবার সচল হবে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রিপাবলিকানরা বর্তমানে ২১৯-২১৩ আসনে প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রেখেছে। তবে বিলটিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমর্থন থাকায় ডেমোক্র্যাটদের বিরোধিতা সত্ত্বেও তাঁর দল একত্র থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এর আগে গত সোমবার ৬০–৪০ ভোটে পাস হওয়া এই প্রস্তাবে প্রায় সব রিপাবলিকান সিনেটর ও আট ডেমোক্র্যাট সিনেটর সমর্থন দেন। যদিও ডেমোক্র্যাটরা সরকারি অর্থায়নের সঙ্গে বছরের শেষে মেয়াদোত্তীর্ণ হতে যাওয়া স্বাস্থ্য ভর্তুকি যুক্ত করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সেটি গৃহীত হয়নি। সমঝোতা অনুযায়ী ডিসেম্বর মাসে এই ভর্তুকি নিয়ে ভোট হবে, তবে তা বহাল থাকবে কি না, তার নিশ্চয়তা নেই।

রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নতুন চুক্তির মাধ্যমে ১ অক্টোবর মেয়াদোত্তীর্ণ ফেডারেল সংস্থাগুলোর অর্থায়ন পুনরায় চালু হবে। একই সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ফেডারেল কর্মীর সংখ্যা কমানোর পরিকল্পনা ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত থাকবে।

বিলটি এখন রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠ নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভস বা প্রতিনিধি পরিষদে আছে। আজ বুধবার প্রতিনিধি পরিষদে এই বিল পাস করতে একটি ভোটাভুটির আয়োজন করা হয়েছে।

বিলটি পাস হলে সরকারের অর্থায়ন ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হবে। ফলে আপাতত যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকার বছরে প্রায় ১ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ডলার নতুন ঋণ যোগ করে ৩৮ ট্রিলিয়ন ডলারের মোট ঋণের পথে এগিয়ে যাবে।

তবে সরকারি কার্যক্রম পুনরায় চালুর পাশাপাশি প্রতিনিধি পরিষদ আরও একটি বিতর্কিত ইস্যুর মুখোমুখি হতে পারে। আর তা হলো, জেফরি এপস্টেইনের অপ্রকাশিত নথি প্রকাশের দাবিতে ভোট। স্পিকার মাইক জনসন ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এত দিন বিষয়টি আটকে রেখেছিলেন।

অর্থাৎ সরকার চালুর সাংবিধানিক দায়িত্ব সম্পন্ন করার পর প্রতিনিধি পরিষদ আবারও ট্রাম্পের সাবেক বন্ধু এপস্টেইনের মৃত্যু ও সংশ্লিষ্ট ষড়যন্ত্র তত্ত্ব নিয়ে আলোচনায় ফিরে যেতে পারে।

এই বিলের ওপর ভোট আজ স্থানীয় সময় রাতে হওয়ার কথা। কিছু রিপাবলিকানের বিরোধিতা থাকলেও তা বিল পাসে প্রভাব ফেলবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। কেন্টাকির রিপাবলিকান থমাস ম্যাসি ও ইন্ডিয়ানার ভিক্টোরিয়া স্পার্টজ আগের অর্থায়ন বিলের বিরোধিতা করেছিলেন, এবারও তাঁরা আপত্তি জানাতে পারেন।

এদিকে, হাউস ফ্রিডম ককাস (কংগ্রেসের রক্ষণশীল ব্লক) প্রায়ই ব্যয়সংক্রান্ত বিল আটকে দেয়। তবে তারা এবার বিলটিতে বাধা দেবে না বলে জানিয়েছেন এর চেয়ারম্যান অ্যান্ডি হ্যারিস। তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, আমরা সবাই এবার এই বিলের পক্ষে থাকব।’

এই ভোটের ফলেই নির্ধারিত হবে—যুক্তরাষ্ট্র সরকার আবার পূর্ণভাবে সচল হতে পারবে নাকি ইতিহাসের দীর্ঘতম অচলাবস্থা আরও দীর্ঘায়িত হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আফগান বালিকাবধূ এখন ইউরোপের শীর্ষ বডিবিল্ডার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
রোয়া করিমি। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
রোয়া করিমি। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

ক্রিস্টাল বসানো বিকিনিতে ঝলমল করছেন মঞ্চে দাঁড়ানো একজন নারী। তাঁর উজ্জ্বল, ট্যান করা ত্বক পেশির প্রতিটি সুনির্দিষ্ট রেখা ফুটিয়ে তুলছে। রোয়া করিমির নিখুঁত মেকআপ ও সোনালি চুল দেখে মনে হবে, তিনি যেন মিস ইউনিভার্সের ফাইনালে দাঁড়িয়ে আছেন।

কিন্তু আপনার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হবে যে এই নারীই ১৫ বছর আগে আফগানিস্তানে একজন কিশোরী মা ছিলেন। বালিকাবধূ হিসেবে তাঁকে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এরপর সেখান থেকে পালিয়ে তিনি নতুন জীবন শুরু করেন।

বর্তমানে ৩০ বছর বয়সী রোয়া করিমি ইউরোপের শীর্ষ বডিবিল্ডারদের একজন এবং চলতি সপ্তাহে তিনি বিশ্ব বডিবিল্ডিং চ্যাম্পিয়নশিপে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন। রোয়ার এই উত্থান যেন উল্কার মতো।

রোয়া যখন তাঁর মা ও ছোট ছেলেকে নিয়ে আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে নরওয়েতে আশ্রয় নেন, তখন তাঁর জন্য এই বিষয়গুলো কল্পনা করাও কঠিন ছিল। নরওয়েতে এসে তিনি নতুন জীবন শুরু করেন। পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি একজন নার্স হিসেবে কাজ শুরু করেন। সেখানেই রোয়া তাঁর বর্তমান স্বামীর (যিনি নিজেও একজন বডিবিল্ডার) সঙ্গে পরিচিত হন।

রোয়া বলেন, বছরের পর বছর ধরে তাঁর ওপর চাপানো মানসিক ও সামাজিক সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে বডিবিল্ডিং তাঁকে সাহায্য করেছে। বিবিসি নিউজ আফগানকে তিনি বলেন, ‘যখনই আমি জিমে যাই, আমার মনে পড়ে আফগানিস্তানে এমন একটা সময় ছিল, যখন আমার স্বাধীনভাবে ব্যায়াম করারও অনুমতি ছিল না।’

রোয়া যখন আফগানিস্তানে ছিলেন, তখন সেখানে সামাজিক নানা বিধিনিষেধ ছিল, তবে ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর তা আরও খারাপ হয়। এখন সেখানে ১২ বছর বয়সের পর মেয়েদের স্কুলে যাওয়া, পুরুষ সঙ্গী ছাড়া দূরপাল্লার ভ্রমণ ও উচ্চ স্বরে কথা বলা নিষিদ্ধ।

রোয়া বলেন, ‘আমি সেই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে পেরে ভাগ্যবান, কিন্তু অনেক নারী এখনো তাদের মৌলিক মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত। এটা সত্যিই দুঃখজনক এবং হৃদয়বিদারক।’

২০১১ সালে রোয়া তাঁর তৎকালীন স্বামীকে ছেড়ে আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন। নরওয়েতে এসে তাঁকে নতুন সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়। নরওয়েজিয়ান ভাষা শিখতে হয়। শুরুটা কঠিন হলেও তাঁর প্রচেষ্টা সফল হয়—তিনি নার্সিং পড়েন এবং রাজধানী অসলোর একটি হাসপাতালে কাজ শুরু করেন।

তবে রোয়ার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মোড় ছিল বডিবিল্ডিং। জিমে যাওয়া শুধু শারীরিক ব্যায়ামের জন্য ছিল না; এটি তাঁর আত্মবিশ্বাস এবং ব্যক্তিগত পরিচয় পুনর্গঠনের একটি উপায় ছিল। এখানেই তিনি তাঁর দ্বিতীয় স্বামী, আফগান বংশোদ্ভূত কামাল জালালউদ্দিনের সঙ্গে পরিচিত হন। কামাল দীর্ঘদিন ধরে বডিবিল্ডিংয়ে যুক্ত এবং রোয়ার মেন্টরদের মধ্যে একজন।

রোয়া বলেন, ‘কামালের সঙ্গে দেখা হওয়ার আগে আমি খেলাধুলা করতাম, কিন্তু পেশাদার পর্যায়ে নয়। তাঁর অনুপ্রেরণা আমাকে প্রতিযোগিতামূলক এবং প্রথা ভাঙার পথ বেছে নিতে সাহস জোগায়। আমি বিশ্বাস করি, একজন পুরুষ যদি একজন নারীর পাশে দাঁড়ায়, তবে দারুণ কিছু হতে পারে।’

আফগান বালিকাবধূ থেকে বডিবিল্ডিংয়ের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন রোয়া করিমি (মাঝে)। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
আফগান বালিকাবধূ থেকে বডিবিল্ডিংয়ের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন রোয়া করিমি (মাঝে)। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

১৮ মাস আগে রোয়া তাঁর নার্সিং ক্যারিয়ার ছেড়ে পেশাদার বডিবিল্ডিং জগতে প্রবেশের সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল আফগান কালচার থেকে বেরিয়ে এসে নতুন দেশের, নতুন নিয়মের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া। তিনি বলেন, ‘আমার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল সেই সমস্ত সীমা ও কাঠামো ভেঙে বের হওয়া, যা অন্যরা ধর্মের নামে আমার ওপর চাপিয়ে দিয়েছিল।’

রোয়ার বর্তমান জীবন আফগানিস্তানের সামাজিক প্রথা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এ জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় মৃত্যুর হুমকিসহ নানা সমালোচনায় জর্জরিত হন তিনি। তবে তিনি এই মন্তব্যগুলো পাত্তা দেন না।

রোয়া বলেন, ‘মানুষ কেবল আমার চেহারা আর বিকিনি দেখে। কিন্তু এই চেহারার পেছনে রয়েছে বছরের পর বছর ধরে ভোগান্তি, প্রচেষ্টা এবং অধ্যবসায়। এই সাফল্য সহজে আসেনি।’

তবে সোশ্যাল মিডিয়া রোয়ার জন্য একটি ইতিবাচক প্ল্যাটফর্মও বটে। এটি তাঁকে আফগানিস্তানের নারীদের সঙ্গে কথা বলার, স্বাস্থ্য, আত্মবিশ্বাস এবং নিজের পরিচয় পুনর্গঠনের গুরুত্ব সম্পর্কে জানানোর সুযোগ দেয়। রোয়া মনে করেন, তাঁর জীবনসংগ্রাম শুধু কট্টর সামাজিক প্রথার বিরুদ্ধে লড়াই নয়, একই সঙ্গে এটি তাঁর নিজ দেশের নারীদের জন্য অনুপ্রেরণার।

রোয়া বর্তমানে বার্সেলোনায় শুরু হতে যাওয়া ইন্টারন্যাশনাল ফিটনেস অ্যান্ড বডিবিল্ডিং ফেডারেশন চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এর আগে এপ্রিল মাসে স্টপেরিয়েট ওপেন বডিবিল্ডিং প্রতিযোগিতায় তিনি ‘ওয়েলনেস’ বিভাগে স্বর্ণপদক জেতেন, যেখানে পেশি নয় বরং স্বাভাবিক ফিটনেস ও স্বাস্থ্যকর চেহারার ওপর জোর দেওয়া হয়।

এরপর তিনি নরওয়ে ক্লাসিক-২০২৫ প্রতিযোগিতায় আরেকটি জয় অর্জন করেন, যা তাঁকে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে স্থান করে দেয় এবং সেখান থেকে তিনি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পান।

রোয়া বলেন, ‘আজকের এই অবস্থানে আমি এক দিনে আসতে পারিনি। ধাপে ধাপে আমি এই অবস্থানে এসেছি। এখন যখন নিজের অবস্থানের কথা ভাবি, আমার ভালো লাগে। আমি গর্ববোধ করি।’ রোয়ার স্বামী কামাল বলেন, ‘রোয়াকে মঞ্চে দেখাটা আমাদের একসঙ্গে তৈরি করা স্বপ্নের বাস্তবায়ন।’

কিন্তু রোয়ার কাছে এই প্রতিযোগিতা কেবল তাঁর এবং তাঁর পরিবারের জন্য নয়। তিনি বলেন, ‘আমি মানসিকভাবে শক্তিশালী এবং আমার সবটুকু উজাড় করে দিতে প্রস্তুত। আশা করি, প্রথম কোনো আফগান মেয়ে হিসেবে আমি ইতিহাস তৈরি করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত