Ajker Patrika

ব্রিটিশদের দ্বারা প্রতারিত আফগান কমান্ডোদের করুণ পরিণতি হয়: রিপোর্ট

আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২৩, ২০: ৫৭
ব্রিটিশদের দ্বারা প্রতারিত আফগান কমান্ডোদের করুণ পরিণতি হয়: রিপোর্ট

আফগানিস্তানের বেশ কিছু এলিট কমান্ডো ব্রিটিশ বাহিনীর দ্বারা প্রতারিত হয়েছিলেন বলে এক অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। শুধু তা-ই নয়, অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতারিত ওই কমান্ডোরা পরে তালেবান বাহিনীর হাতে চরম নির্যাতন ও হত্যার শিকার হয়েছিলেন। 

অনুসন্ধানী সংস্থা লাইটহাউস রিপোর্টসের বরাতে এই খবর দিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজ। এ বিষয়ে এক প্রতিবেদনে স্কাই নিউজ দাবি করেছে, তাদের কাছে কয়েক ডজন আফগান সেনার তথ্য রয়েছে, যাঁরা আফগানিস্তানের দুটি বিশেষ বাহিনীর সদস্য ছিলেন। ওই বাহিনী দুটির প্রশিক্ষণ ও বেতন-ভাতা সরবরাহ করত ব্রিটিশ বাহিনী। 

প্রতিবেদনে শাহিন নামের এক আফগান কমান্ডোর প্রসঙ্গ আনা হয়েছে। এই শাহিন ও তাঁর দুই ভাই বেশ কয়েক বছর ব্রিটিশ কমান্ডোদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছিলেন। 

কিন্তু ২০২১ সালের আগস্টে তালেবান বাহিনী কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেওয়ার পর শাহিনসহ তাঁর সঙ্গী অনেক কমান্ডোকে আফগানিস্তানে ফেলে রেখে যায় ব্রিটিশ বাহিনী। এঁদের মধ্যে অন্য অনেকের মতো শাহিনের ভাই কাহরামানকে তালেবান বাহিনী হত্যা করেছিল। 

ব্রিটিশ বাহিনীর সঙ্গে কাজ করার স্মৃতিচারণা করে শাহিন বলেন, ‘আমরা একটি পরিবারের মতো ছিলাম। আমার অনেক সহকর্মী এখন আফগানিস্তানে আত্মগোপন করে আছেন। তাঁদের জীবন ঝুঁকিতে রয়েছে। বিষয়টি সহ্য করতে পারছি না।’ 

শাহিন জানান, তিনি এবং তাঁর দুই ভাই আফগান ‘কমান্ডো ফোর্স-৩৩৩’-এর সদস্য ছিলেন। বিশেষ এই বাহিনী ২০০২ সালে ব্রিটিশ বাহিনীর সহযোগিতায় গড়ে উঠেছিল। কিন্তু এই বাহিনীর সঙ্গে কাজ করার পরিণতি এখন শাহিনের পরিবারকে ভোগ করতে হচ্ছে। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিএফ-৩৩৩ এর মতো এটিএফ-৪৪৪ নামে আরেকটি আফগান ফোর্স ব্রিটিশ বাহিনীর সঙ্গে এক হয়ে তালেবানদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছে এবং ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে বেতন-ভাতা পেয়েছে। 

দেশের জন্য ব্রিটিশ বাহিনীর সঙ্গে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে অসংখ্য অভিযানে অংশ নিয়েছেন শাহিন ও তাঁর ভাইয়েরা। শাহিন জানান, বয়সে বেশ কয়েক বছরের ছোট হলেও তাঁর কমান্ডো দুই ভাই বন্ধুর মতো ছিলেন। 

ব্রিটিশ ও মার্কিন বাহিনী আফগানিস্তানে প্রায় দুই দশক অবস্থান করার পর দেশটি ছেড়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় এবং স্বল্পতম সময়ের মধ্যেই পুরো দেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় তালেবান যোদ্ধারা। 

সেই সময়টির বর্ণনা দিয়ে শাহিন বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছিলাম না, কী করব। বাড়ি ফিরে যাইনি; কারণ, তা করলে তালেবানদের অন্যতম টার্গেটে পরিণত হতাম।’ 

বিশৃঙ্খল ওই পরিস্থিতির মধ্যে রাজধানী কাবুলের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছিলেন শাহিন। যেকোনো সময় হত্যার শিকার হতে পারেন—এমন ভাবনা মনের মধ্যে সব সময় ছিল। যদিও পরে তিনি তাঁর ছোট ভাই কাহরামানসহ আরও কয়েক কমান্ডোকে সঙ্গে নিয়ে কাবুলের বিমানবন্দরের ভেতরে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু বিমানবন্দরের ভেতরের পরিবেশ ছিল ভয়ানক। হুড়োহুড়ি আর মারামারি করে যে যেভাবে পারে, কোনো একটি বিমানে চড়ে বসার চেষ্টা করছিলেন। 

শাহিন বলেন, ‘আমি দেখছিলাম, অনেক নারী ও শিশু পায়ের তলায় পিষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। লাঠি দিয়ে মারাত্মকভাবে পেটানো হচ্ছিল ভীতসন্ত্রস্ত মানুষদের।’ 

বিশৃঙ্খল সেই পরিস্থিতির মধ্যে শাহিন একটি বিমানে উঠতে পারলেও তাঁর ভাই কাহরামান শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হন। 

শাহিন জানান, বিমানে চড়তে ব্যর্থ হয়ে কাহরামান বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর তাঁকে তালেবানেরা দেখে ফেলেছিল এবং অনুসরণ করেছিল। বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে বোনের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন কাহরামান। টানা ১০ দিন ওই বাড়ি থেকে আর বের হননি তিনি। কিন্তু যেদিন তিনি বের হন, সেদিনই একটি সশস্ত্র দল তাঁকে গুলি করে হত্যা করে। 

কাহরামানের বিষয়ে শাহিন বলেন, ‘সে ব্রিটিশদের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছিল। কিন্তু যখন বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে যেতে হলো, তখন সে টার্গেটে পরিণত হয়েছিল।’ 

বর্তমানে যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামে ছোট্ট একটি কুঠুরিতে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বসবাস করছেন শাহিন। অতীতের উদ্যম তাঁর মাঝে আর অবশিষ্ট নেই। তিনি বলেন, ‘আমি সব হারিয়েছি। অতীতে আমার মাঝে যা ছিল, বর্তমানে তার ১০ ভাগও অবশিষ্ট নেই। এখানে গৌরব করার মতো কিছু নেই আমার।’ 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কাহরামানের মতো ব্রিটিশদের সঙ্গে কাজ করা বেশির ভাগ আফগান কমান্ডো আফগানিস্তান ত্যাগ করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। এমনকি নিজেদের সঙ্গে কাজ করা আফগানদের বের করে নেওয়ার জন্য ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ যে সহায়তা কার্যক্রম (এআরএপি) পরিচালনা করেছিল, সেখানেও অনেক কমান্ডোকে প্রত্যাখ্যান করা হয়। যাদের পরিণতি হয় শেষ পর্যন্ত কাহরামানের মতো। আর যাঁরা এখনো তালেবান বাহিনীর হাতে ধরা পড়েননি, তাঁরা ফেরারি হয়ে আত্মগোপন করে আছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। 

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ও স্বীকার করেছে, সেই দিনগুলোতে ঢালাওভাবে অনুমোদন দেয়নি তাদের বাহিনী। 

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, আফগান স্থানান্তর ও সহায়তা কার্যক্রমের (এআরএপি) আওতায় সে সময় ২৪ হাজার ৬০০ মানুষকে আফগানিস্তান থেকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়। 

বর্তমানে জীবন নিয়ে পালিয়ে বেড়ানো আফগান কমান্ডোরা জানতে চান, কেন তাঁদের ফেলে গিয়েছিল ব্রিটিশ বাহিনী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইন্দোনেশিয়ায় নার্সিং হোমে আগুনে ১৬ জনের মৃত্যু

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইন্দোনেশিয়ায় একটি নার্সিং হোমে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। ছবি: সংগৃহীত
ইন্দোনেশিয়ায় একটি নার্সিং হোমে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। ছবি: সংগৃহীত

ইন্দোনেশিয়ায় একটি নার্সিং হোমে আগুন লেগে ১৬ জন নিহত এবং ৩ জন আহত হয়েছেন। আজ সোমবার এএফপির প্রতিবেদনে স্থানীয় এক কর্মকর্তার বরাতে জানানো হয়, উত্তর সুলাওয়েসি প্রদেশের রাজধানী মানাদোর একটি নার্সিং হোমে এ অগ্নিকাণ্ড ঘটে।

শহরটির ফায়ার অ্যান্ড রেস্কিউ এজেন্সির প্রধান জিমি রোটিনসুলু জানান, নার্সিং হোমটিতে স্থানীয় সময় রোববার রাত ৮টা ৩১ মিনিটে আগুন লাগার খবর পান ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এ ঘটনায় ১৬ জন নিহত এবং ৩ জন অগ্নিদগ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন।

জিমি জানান, ভুক্তভোগীদের অনেক দেহ তাঁদের ঘরের ভেতরেই পাওয়া গেছে। তিনি আরও যোগ করেন, সন্ধ্যায় যখন আগুন ছড়িয়ে পড়ে তখন বয়স্ক বাসিন্দাদের অনেকেই সম্ভবত তাদের নিজ নিজ ঘরে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন।

কর্তৃপক্ষ ১২ জনকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে এবং তাঁদের স্থানীয় হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

স্থানীয় সম্প্রচার মাধ্যম মেট্রো টিভি-তে প্রচারিত ফুটেজে দেখা গেছে, আগুন নার্সিং হোমটিকে পুরোপুরি গ্রাস করে নিয়েছে এবং স্থানীয়রা এক বৃদ্ধ ব্যক্তিকে সরিয়ে নিতে সাহায্য করছেন।

১৭ হাজারেরও বেশি দ্বীপের দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় এই দ্বীপরাষ্ট্রে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা খুব একটা বিরল নয়। চলতি মাসেই ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় একটি সাততলা অফিস ভবনে অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ২২ জন নিহত হন। ২০২৩ সালে দেশটির পূর্বাঞ্চলে একটি নিকেল প্রক্রিয়াকরণ কারখানায় বিস্ফোরণে অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাঁজা চাষে লাইসেন্স ফি কমাল পাকিস্তান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গাঁজা চাষের লাইসেন্স ফি ৬ লাখ রুপি থেকে কমিয়ে ৫ লাখ রুপি করা হয়েছে। ছবি: এএফপি
গাঁজা চাষের লাইসেন্স ফি ৬ লাখ রুপি থেকে কমিয়ে ৫ লাখ রুপি করা হয়েছে। ছবি: এএফপি

গাঁজা চাষ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের লাইসেন্স ফি কমানোর অনুমোদন দিয়েছে পাকিস্তানের সরকার। দ্য ডনের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, খাইবার পাখতুনখোয়া এলাকায় গাঁজা চাষের এই ফি কমাচ্ছে ক্যানাবিস রেগুলেটরি অথরিটি (সিআরএ)।

এছাড়া, শিল্পজাত হেম্প ও হেম্প বীজের তেলের ওপর থেকে আবগারি শুল্ক তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ফুল-স্পেকট্রাম ক্যানাবিডিওল (CBD) ও টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনল (THC)-এর ওপর আবগারি শুল্ক বাড়ানোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

সরকারি নথি বরাতে দ্য ডন জানিয়েছে, সিআরএ গাঁজা চাষের লাইসেন্স ফি ৬ লাখ রুপি থেকে কমিয়ে ৫ লাখ রুপি করেছে এবং গাঁজা প্রক্রিয়াকরণের লাইসেন্স ফি ১৫ লাখ রুপি থেকে কমিয়ে ১০ লাখ রুপি নির্ধারণ করেছে।

এছাড়া হেম্প প্রক্রিয়াকরণের লাইসেন্স ফি ৭ লাখ রুপি থেকে কমিয়ে ৫ লাখ রুপি করা হয়েছে।

অন্যদিকে, ফুল-স্পেকট্রাম ক্যানাবিডিওল ও টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনলের ওপর আবগারি শুল্ক প্রতি কেজিতে ৩ হাজার রুপি থেকে বাড়িয়ে ৫ হাজার রুপি করা হয়েছে।

নথিতে আরও বলা হয়েছে, ২২ ডিসেম্বর আবগারি, কর ও মাদকদ্রব্য বিষয়ক মন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে আরও বলা হয়, ওই বৈঠকটি ৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত উপ-কমিটির বৈঠকের ধারাবাহিকতা ছিল, যেখানে এসব পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছিল।

নথি অনুযায়ী, সিআরএ-এর বৈঠকে খাইবার পাখতুনখোয়ার জন্য প্রস্তাবিত হেম্প মডেল কমিটির সামনে উপস্থাপন করা হয়। এ সময় আবগারি, কর ও মাদক নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সচিব এবং স্বাস্থ্য সচিব জোর দিয়ে বলেন, ব্যবসা পরিচালনাকে সহজ করা এবং বিনিয়োগকারীদের সুবিধা দিতে প্রস্তাবিত মডেলটি আরও সরল করা প্রয়োজন।

বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, খাইবার পাখতুনখোয়ায় স্বনামধন্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে পরীক্ষামূলকভাবে হেম্প চাষের লাইসেন্স দেওয়া হবে এবং এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান কৃষকদের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করবে।

হেম্প চাষ ও প্রক্রিয়াকরণের লাইসেন্সের আবেদন ফরম, টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনল (টিএইচসি) নমুনা সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ ফরম, পর্যায়ক্রমিক পরিদর্শন ফরমসহ অন্যান্য বাধ্যতামূলক রেজিস্টার অনুমোদন করেছে সিআরএ।

শিল্প ও কৃষকদের যৌথ উদ্যোগে বোর্ড অব ইনভেস্টমেন্ট (বিওআই) এবং শিল্প বিভাগ সহায়তা প্রদানের বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। কৃষকদের নিবন্ধন ব্যক্তিগত বা সমবায় কোম্পানি হিসেবে উভয় ক্ষেত্রেই ঐচ্ছিক রাখা হয়েছে।

হেম্প বীজ আমদানি ও এর শংসাপত্রের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট লাইসেন্সপ্রাপ্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ওপর রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আপাতত গাঁজা চাষ ও প্রক্রিয়াকরণ আপাতত স্থগিত রাখা হবে এবং ওষুধ শিল্পের প্রয়োজনীয় গাঁজা নিয়ন্ত্রণ ও এর পণ্য ব্যবস্থাপনা পাকিস্তানের ড্রাগ রেগুলেটরি অথরিটির (ডিআরএপি) চাহিদা ও মানদণ্ডের আলোকে বিবেচনা করা হবে।

নথিতে আরও বলা হয়, ক্যানাবিস মডেল প্রণয়ন এবং ক্যানাবিস সংক্রান্ত বিধিবিধান পুনর্বিবেচনার জন্য ১৫ দিনের মধ্যে একটি উপকমিটি গঠন করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে উত্তেজনা: শিখ ও হিন্দু বিক্ষোভকারীদের মধ্যে হাতাহাতি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বিক্ষোভকারী শিখদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে ওসমান হাদির ছবিও দেখা যায়। ছবি: এক্স
বিক্ষোভকারী শিখদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে ওসমান হাদির ছবিও দেখা যায়। ছবি: এক্স

লন্ডনে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে গত শনিবার একটি বিক্ষোভ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বেশ উত্তেজনা তৈরি হয়। বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর কথিত নির্যাতনের প্রতিবাদে আয়োজিত এই সমাবেশে স্বাধীন খালিস্তানপন্থী শিখ অধিকার কর্মী এবং একদল হিন্দু বিক্ষোভকারী মুখোমুখি হলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্রিটিশ পুলিশকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও আয়োজকদের বরাত দিয়ে পাকিস্তানি দৈনিক ডন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আয়োজিত সমাবেশে খালিস্তান রেফারেন্ডাম অভিযানের সমন্বয়ক পরমজিৎ সিং পাম্মা উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের হাতে ধরা প্ল্যাকার্ডে হরদীপ সিং নিজ্জার এবং শরিফ ওসমান বিন হাদির ছবি দেখা গেছে। সমাবেশের একপর্যায়ে ভারতীয় এক হিন্দু বিক্ষোভকারীর সঙ্গে পাম্মার কথা-কাটাকাটি এবং পরে হাতাহাতি শুরু হয়। ঘটনার গুরুত্ব বুঝে সেখানে দায়িত্বরত মেট্রোপলিটন পুলিশের কর্মকর্তারা দ্রুত পদক্ষেপ নেন এবং দুই পক্ষকে আলাদা করে দেন।

বিক্ষোভকারীরা বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রবেশপথের কাছে একটি কর্ডন তৈরি করে তাদের কর্মসূচি চালিয়ে যান। এ সময় তাঁরা ভারত সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজনৈতিক স্লোগান দেন। বিশেষ করে হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যা এবং অন্যান্য শিখ নেতাদের খুনের পেছনে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার হাত রয়েছে বলে তাঁরা অভিযোগ করেন।

উল্লেখ্য, ভারত সরকার পরমজিৎ সিং পাম্মাকে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড টেররিস্ট’ বা অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে তালিকাভুক্ত করলেও পাম্মা ও তাঁর সমর্থকেরা এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। বর্তমানে তিনি যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন।

গত বছরের জুনে কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার খুন হওয়ার পর থেকে ভারত ও কানাডার মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন চরম আকার ধারণ করেছে। একইভাবে, যুক্তরাষ্ট্রে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুনকে হত্যার ষড়যন্ত্রের সঙ্গেও ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছে মার্কিন বিচার বিভাগ।

লন্ডনের এই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে সেই বৈশ্বিক উত্তেজনার ছায়া দেখা গেছে। তবে পুলিশ জানিয়েছে, কোনো বড় ধরনের হতাহতের ঘটনা ঘটেনি এবং পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া যায়নি।

খালিস্তান আন্দোলনের শিকড় ১৯৪৭ সালের ভারত ভাগ এবং পাঞ্জাব বিভাজনের সময় পর্যন্ত বিস্তৃত। স্বাধীন শিখ রাষ্ট্রের দাবিতে এই আন্দোলন দশকের পর দশক ধরে চলে আসছে। এই আন্দোলন বর্তমানে বৈশ্বিক রাজনীতিতে ভারত-কানাডা এবং ভারত-মার্কিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি সংবেদনশীল ইস্যু হিসেবে দাঁড়িয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসরায়েল কেন প্রথম দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসরায়েলের স্বীকৃতির ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে সোমালিল্যান্ড। ছবি: এএফপি
ইসরায়েলের স্বীকৃতির ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে সোমালিল্যান্ড। ছবি: এএফপি

ইসরায়েল কেন সোমালিয়া থেকে স্বাধীন হতে চাওয়া সোমালিল্যান্ডকে প্রথম দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিল—এই প্রশ্ন ঘিরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়েছে। আফ্রিকার হর্ন অঞ্চলের স্বঘোষিত স্বাধীন রাষ্ট্র সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে ইসরায়েল শুধু একটি কূটনৈতিক সিদ্ধান্তই নেয়নি, বরং মধ্যপ্রাচ্য ও লোহিত সাগর ঘিরে চলমান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই স্বীকৃতির পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক—এই তিনটি প্রধান কারণ। সোমালিল্যান্ডের অবস্থান অত্যন্ত কৌশলগত। এটি এডেন উপসাগরের তীরে অবস্থিত এবং ইয়েমেনের খুব কাছেই, যেখানে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা সক্রিয়। চলতি বছরে হুতি ও ইসরায়েলের মধ্যে একাধিকবার হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের প্রতিবাদে হুতিরা লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা চালায়। জবাবে ইয়েমেনের সানা ও হোদেইদায় হুতি নিয়ন্ত্রিত এলাকায় হামলা চালায় ইসরায়েল।

এই প্রেক্ষাপটে ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউটের গবেষক ডেভিড মাকোভস্কি প্রশ্ন তুলেছেন—সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে কি ইসরায়েল সেখানে সামরিক সুবিধা বা গোয়েন্দা উপস্থিতির পথ খুলেছে? বিশেষ করে হুতি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র মোকাবিলায় এটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

ইসরায়েলের গণমাধ্যম ‘চ্যানেল ১২’ জানিয়েছে, সোমালিল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আব্দিরাহমান মোহাম্মদ আবদুল্লাহি গোপনে একাধিকবার ইসরায়েল সফর করেছেন। গত অক্টোবরে তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ ও মোসাদের প্রধান ডেভিড বারনিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পরে নেতানিয়াহু এই স্বীকৃতির ক্ষেত্রে মোসাদের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন।

তবে এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছে সোমালিয়া ও আফ্রিকান ইউনিয়ন। মিসর ও ফিলিস্তিনসহ কয়েকটি আরব দেশও এর সমালোচনা করেছে। অতীতে গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের জোর করে সোমালিল্যান্ডে স্থানান্তরের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল, যদিও সোমালিল্যান্ডের কর্মকর্তারা এই ধরনের কোনো যোগাযোগের কথা অস্বীকার করেছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি ইসরায়েলের জন্য অর্থনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। সোমালিল্যান্ডের বন্দরনগরী বেরবেরা ইসরায়েলকে লোহিত সাগরে প্রবেশের সুযোগ দিতে পারে। এমন হলে বৈশ্বিক বাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাব আল-মানদেব প্রণালির ওপর নজরদারি চালাতে পারবে ইসরায়েল। তবে সব মিলিয়ে, সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিয়ে ইসরায়েল ইতিহাস তৈরি করলেও এর পূর্ণ প্রভাব ও ফলাফল এখনো স্পষ্ট নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত