Ajker Patrika

আমেরিকা গেল, তালেবান এল, আফগানিস্তান সেই তিমিরেই

আমিনুল ইসলাম নাবিল
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১২: ৫৭
আমেরিকা গেল, তালেবান এল, আফগানিস্তান সেই তিমিরেই

কয়েক দশক ধরেই বিভিন্ন পরাশক্তির হাতবদল হচ্ছে আফগানিস্তান। কখনো সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন আমল, কখনো তালেবান, আবার কখনো মার্কিন যুগে বাধ্য হয়েই পা রাখতে হয়েছে আফগানদের। সেই পালাবদলের চক্রে এবার ফের তালেবান শাসনে ফিরে গেছে আফগানিস্তান। কিন্তু আলো কি ফিরল? 

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের টুইন টাওয়ার ভবনে এক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। সেই হামলা বদলে দেয় পুরো বিশ্ব পরিস্থিতি। হামলার সঙ্গে জড়িত থাকায় আফগানিস্তানের উগ্রপন্থী সংগঠন আল-কায়েদার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামে যুক্তরাষ্ট্র। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সময় আফগানিস্তানে হামলা শুরু করে দেশটি। হামলার মাধ্যমে আফগানিস্তানের তৎকালীন তালেবান সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানো হয়। এরপর একে একে কেটে যায় ২০টি বছর। 

দীর্ঘ যুদ্ধে অনেক লাভক্ষতির হিসাব সামনে উঠে আসতে থাকে। দুই দশকের যুদ্ধে ২ লাখ ৮৬ হাজার কোটি ডলার খরচ করে যুক্তরাষ্ট্র। যুদ্ধে প্রাণ হারায় প্রায় আড়াই হাজার মার্কিন সেনা। যুদ্ধের বিপক্ষে জনমত তৈরি হতে থাকে। খোদ মার্কিন নাগরিকেরাই আফগান যুদ্ধ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরে আসার পক্ষে মত দেয়। লাভক্ষতির হিসাব কষতে কষতে একপর্যায়ে আফগানিস্তান থেকে পুরোপুরি সরে আসার সিদ্ধান্ত নেয় যুক্তরাষ্ট্র। 

আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসার বিষয়টি জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলেও এর শুরুটা হয়েছিল মূলত সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রশাসনের সময়। ২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট ওবামা ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি সেনাদের দেশে ফিরিয়ে আনবেন এবং ২০১৪ সালের মধ্যে আফগানদের হাতে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেবেন। 

দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর আফগানিস্তানে বড় অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করেছিলেন ওবামা। তিনি যখন হোয়াইট হাউস ছাড়েন আফগানিস্তানে তখন সেনাসংখ্যা ছিল ১০ হাজারের কম। সে সময় ওবামা বলেছিলেন, তাঁর উত্তরসূরি ক্ষমতায় এসে আফগানিস্তানের বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন। 

বারাক ওবামা, ডোনাল্ড ট্রাম্প, জো বাইডেনবারাক ওবামার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি ক্ষমতায় এসে আফগানিস্তান থেকে সব সেনা ফিরিয়ে নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। কিন্তু তালেবান নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠতে শুরু করায় ২০১৭ সালের আগস্টে ট্রাম্প বলেন, ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার কঠিন হচ্ছে। সে সময় তিনি পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন। 

ট্রাম্প প্রশাসনের সময় ২০২০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারিতে কাতারের রাজধানী দোহায় যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সেই চুক্তিতে উল্লেখ ছিল, যুক্তরাষ্ট্র ২০২১ সালের ৩১ মের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করে নেবে। তালেবান তখন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সামনে যে কয়েক মাস মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনীর সেনাসদস্যরা আফগানিস্তানে আছে, তাদের ওপর কোনো প্রকার হামলা চালানো হবে না। দোহা চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতেই আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি নতুন করে গতি পায়। 
 
দোহা চুক্তির পর তালেবানের উল্লাসডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করে ২০২০ সালের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হন জো বাইডেন। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর জো বাইডেনও সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পথেই হাঁটেন। ওই বছরের ১৪ এপ্রিল জো বাইডেন ঘোষণা দেন, আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের আগে আফগানিস্তানে থাকা আড়াই হাজার সেনা সদস্যকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে। এ ঘোষণার পর দ্রুত সেনা প্রত্যাহারের কাজ শুরু করে পেন্টাগন। গত ২ জুলাই বাগরাম বিমানঘাঁটি আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা। 

এরপর জো বাইডেন নতুন সময়সীমা বেঁধে দেন। নতুন সময়সীমা অনুযায়ী ৩১ আগস্টের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা আফগানিস্তান ছেড়ে আসবে বলে ঘোষণা হয়। এরপরই যেন তেতে ওঠে তালেবান। সে সময় মার্কিন গোয়েন্দাদের উদ্ধৃতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছিলেন, আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলকে ৩০ দিনে বিচ্ছিন্ন এবং ৯০ দিনের মধ্যে দখলে নিতে পারে সশস্ত্র গোষ্ঠী তালেবান। কিন্তু পুরো বিশ্বকে চমকে দিয়ে ১৫ আগস্টের মধ্যেই আফগানিস্তান দখলে নিয়ে নেয় সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। 

আফগানিস্তান-তালেবান ইস্যু বছরজুড়েই ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। ২১ ডিসেম্বর বার্তা সংস্থা এএফপি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তালেবানের হাতে আফগানিস্তানের সরকারের পতন চলতি বছর বিশ্ব আলোচনার শীর্ষে রয়েছে। দেশটির খবর জানতে বিশ্বজুড়ে মানুষ ইন্টারনেটে সবচেয়ে বেশি ঢুঁ মেরেছে। চলতি বছর দেশটির নাম বিশ্বের সর্ববৃহৎ সার্চ ইঞ্জিন গুগলে সবচেয়ে বেশি খোঁজ করা শব্দের তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছে। 

গুগল সম্প্রতি ২০২১ সালের বার্ষিক রিক্যাপ প্রকাশ করেছে। এর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ এবং বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেটে কী ট্রেন্ডিং ছিল এবং মানুষ কী বিষয়ে জানতে চেয়েছে তার একটা ধারণা পাওয়া যায়। গুগলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা সংবাদ খোঁজার সময় আফগানিস্তানের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ দেখিয়েছে। 

তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলে নেওয়ার পর বিশ্বজুড়ে তৈরি হয় নানান আলোচনা। কোনো প্রতিরোধ গড়ে তোলা ছাড়াই দেশ থেকে পালিয়ে যান তৎকালীন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানি। আফগানিস্তানের সাধারণ নাগরিকেরাও পালানোর জন্য কাবুল বিমানবন্দরে ভিড় জমাতে থাকেন। হুড়োহুড়ি করে উড়োজাহাজে চড়ার সময় উড়োজাহাজ থেকে ছিটকে নিচে পড়ার দৃশ্য বিশ্ববাসীর হৃদয়ে দাগ কাটে। প্রশ্ন ওঠে, এই তালেবান কি সত্যিই আফগানিস্তানে শান্তির বার্তা নিয়ে আসবে? এমন জল্পনাকল্পনার মধ্যেই কাবুল বিমানবন্দরে আইএসের হামলা নিয়ে নতুন শঙ্কা জাগে। ২৬ আগস্ট কাবুল বিমানবন্দরে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) হামলায় প্রাণ হারান কমপক্ষে ১৭৫ জন বেসামরিক ব্যক্তি ও ১৩ মার্কিন সেনা। আফগানিস্তানে শান্তি ফেরার বিষয়ে বড় প্রশ্ন রেখে যায় সেই ঘটনা। ৩১ আগস্ট আফগানিস্তান থেকে পুরোপুরি সরে আসে যুক্তরাষ্ট্র। দেশের ক্ষমতা বুঝে নেয় তালেবান। 

কাবুল বিমানবন্দর দিয়ে আফগানিস্তান ছাড়ছে মানুষ

ক্ষমতায় আসার পর সরকার গঠনে খুব বেশি দেরি করেনি তালেবান। ৮ সেপ্টেম্বর আফগানিস্তানকে ‘ইসলামিক আমিরাত’ ঘোষণা করে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে দলটি। ৩৩ সদস্যের এই সরকারে প্রধানমন্ত্রী করা হয় তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা মোহাম্মদ ওমরের ঘনিষ্ঠ ও আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দকে। সরকার গঠন করলেও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি না পাওয়ায় পদে পদে বিপদে পড়তে হয় তালেবান নেতৃত্বাধীন সরকারকে। একের পর এক দেশ তহবিল আটকে দিতে থাকে। বছরের শেষ দিকে এসে চরম খাদ্যসংকটে পড়েছে দেশটি। প্রসঙ্গত, বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, আফগানিস্তানের মোট জাতীয় উৎপাদনের প্রায় ৪০ শতাংশই আসে বিদেশি সাহায্য থেকে। 

আফগানিস্তানকে বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচাতে অবশ্য এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এগিয়ে আসতে শুরু করেছে। জার্মানির নতুন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালনো বেয়ারবক বলেছেন, আফগানিস্তানের অর্থনীতির অবস্থা শোচনীয়। একাধিক ক্ষেত্রে আফগানিস্তান কার্যত ভেঙে পড়েছে। জার্মানির হিসাবে, চলতি বছর শুধু তীব্র শীতে ২ কোটি ৪০ লাখ আফগানের মৃত্যু হতে পারে। এর মধ্যে অসংখ্য শিশুও আছে। বেয়ারবক বলেন, ‘চোখ বুজে রেখে এই মৃত্যু আমরা মেনে নিতে পারি না। আমাদের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। তাদের উদ্ধার করতে হবে।’ 

তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসার পর মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করেছে আইএস। উল্লেখযোগ্য বড় দুটি হামলার ঘটনা ঘটে গত ৮ ও ১৫ অক্টোবর। পরপর দুই শুক্রবার আফগানিস্তানে জুমার নামাজ চলাকালীন হামলার ঘটনা ঘটে। প্রথম হামলাটি হয় উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর কুন্দুজে। আর দ্বিতীয়টি হয় দক্ষিণাঞ্চলের শহর কান্দাহারে। দুই হামলায় প্রাণ হারায় শতাধিক মানুষ। 

মসজিদে জুমার নামাজ চলাকালীন আইএসের হামলা

অর্থনৈতিক সংকট ও আইএসের হামলার পাশাপাশি তালেবানের সামনে বড় একটি চ্যালেঞ্জ ছিল নারী ইস্যু। এ ক্ষেত্রে তালেবান ক্ষমতা গ্রহণের আগে থেকেই নানা সুমধুর বাণী শোনাতে থাকে। সরকারেও নারীর অন্তর্ভুক্তির ঘোষণা দেয় গোষ্ঠীটি। তবে তালেবান সরকার গঠনের পর একের পর এক বিধিনিষেধ জারি করা হয় নারীদের ওপর। আফগানিস্তানে টেলিভিশন নাটকে নারীদের উপস্থিতি নিষিদ্ধ করা হয়। তবে ২০ বছর আগের তালেবানের চেয়ে এখনকার তালেবান নারী অধিকারের বিষয়টি কিছুটা হলেও নমনীয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকেরা। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবান শাসনামলে নারীদের কোনো পুরুষ সঙ্গী এবং পর্দা ছাড়া বাড়ির বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। মেয়েদের শিক্ষাও ছিল নিষিদ্ধ। এবার সেসব দিক থেকে অন্তত খানিকটা সরে এসেছে তালেবান। 

তালেবান ক্ষমতায় আসার পর বেশ কয়েকটি সরকারি সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক হয়। ২৫ সেপ্টেম্বর আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর হেরাতে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ চার অপহরণকারী নিহত হওয়ার পর তাঁদের মরদেহ বিভিন্ন জনসমাগমস্থলে প্রদর্শন করা হয়। আর এর দুই দিন পর আফগানিস্তানের হেলমান্দ প্রদেশে দাঁড়ি কামানো অথবা ছাঁটার ব্যাপারে নরসুন্দরদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এ ছাড়াও আরও নানা ইস্যু নিয়ে ক্ষমতা দখলের পর থেকেই আলোচনায় ছিল তালেবান। 

নারীদের ছবি মুছে দিচ্ছে তালেবানতালেবান ক্ষমতায় আসার পর হুমকির মুখে পড়েছে আফগানিস্তানের সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ। এ নিয়ে সমলোচনা হচ্ছে বেশ। অলাভজনক প্রতিষ্ঠান রিপোর্টারস উইথআউট বর্ডারস (আরএসএফ) এবং আফগান ইন্ডিপেনডেন্ট জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের (এআইজেএ) করা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর আফগানিস্তানে ৬ হাজার ৪০০ জনের বেশি সাংবাদিক চাকরি হারিয়েছেন। ২৩১টির বেশি সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন নারী সাংবাদিকেরা, ৮০ শতাংশই তাঁদের চাকরি হারিয়েছেন।

নানান উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যাওয়া আফগানিস্তানকে অবশ্য বছরের শেষ সময়ে এসে বাকি বিশ্বের মানবিক সহায়তার দিকেই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে। আপাতত আফগানিস্তানের লড়াইটা শুধু ক্ষুধার বিরুদ্ধে। অভুক্ত মানুষকে তো আর বুলেট-বোমায় ঠেকিয়ে রাখা যায় না! ধারণা করা হচ্ছে, এই লড়াইয়ে টিকে থাকার ওপরই নির্ভর করছে আফগানিস্তানে তালেবান শাসনের ভবিষ্যৎ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘২০২৫’ নিয়ে ১৯৯৮ সালে করা আমেরিকানদের ভবিষ্যদ্বাণী কতটুকু মিলেছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০: ৫৭
ছবি: সিএনএন
ছবি: সিএনএন

১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি ও সমাজ বাস্তবতা ছিল একেবারেই ভিন্ন। সেই বছর প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন অভিশংসন প্রক্রিয়ার মুখে পড়েছিলেন, অস্কারে রাজত্ব করেছিল টাইটানিক, আর অধিকাংশ আমেরিকানের ঘরে ছিল ল্যান্ডলাইন ফোন। ঠিক সেই সময়েই গ্যালাপ ও ইউএসএ টুডে এক ব্যতিক্রমী জরিপ চালায়। ল্যান্ডলাইন ফোনে ১ হাজার ৫৫ জন আমেরিকানের সঙ্গে কথা বলে জানতে চাওয়া হয়—দূর ভবিষ্যৎ ‘২০২৫ সাল’ কেমন হবে বলে তাঁরা মনে করেন।

সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সিএনএন জানিয়েছে, ২০২৫ সাল নিয়ে সে সময় মার্কিনরা যে ভবিষ্যদ্বাণীগুলো করেছিল, সেগুলো সংরক্ষিত আছে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রোপার সেন্টারের জরিপ আর্কাইভে। ২০২৫ সালের শেষ প্রান্তে এসে এখন দেখা যাচ্ছে—সেই সব অনুমানের কোনোটা মিলেছে, আর কোনোটা মেলেনি।

এ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সেই সময়ের অনেক পূর্বাভাসই ছিল বিস্ময়করভাবে সঠিক। অধিকাংশ আমেরিকান তখনই ধারণা করেছিলেন, আগামী ২৭ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে একজন কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন, সমকামী বিবাহ বৈধ ও স্বাভাবিক হয়ে উঠবে এবং একটি ‘মারাত্মক নতুন রোগ’ বিশ্বকে নাড়িয়ে দেবে। বাস্তবে বারাক ওবামার প্রেসিডেন্ট হওয়া, সমকামী বিবাহের আইনি স্বীকৃতি এবং করোনা মহামারি সেই অনুমানগুলোকে সত্য প্রমাণ করেছে।

একইভাবে অনেকেই সেই সময় সঠিকভাবে ধারণা করেছিলেন, সাধারণ মানুষের জন্য মহাকাশ ভ্রমণ খুব সাধারণ বিষয় হয়ে উঠবে না এবং ভিনগ্রহের প্রাণীর সঙ্গে মানুষের সরাসরি যোগাযোগ ঘটবে না।

তবে কিছু ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবতার সঙ্গে মেলেনি। জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ মনে করেছিলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র একজন নারী প্রেসিডেন্ট পাবে—যা এখনো ঘটেনি। অর্ধেকের বেশি মানুষ আশা করেছিলেন ক্যানসারের নিরাময় আবিষ্কৃত হবে এবং ৬১ শতাংশ মনে করেছিলেন মানুষ নিয়মিতভাবে ১০০ বছর বয়স পর্যন্ত বাঁচবে। বাস্তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে অগ্রগতি হলেও এসব প্রত্যাশা পুরোপুরি পূরণ হয়নি।

জরিপে দেশের সামগ্রিক দিকনির্দেশনা নিয়েও প্রশ্ন ছিল। সেখানে ফুটে উঠেছিল প্রবল হতাশা। ৭০ শতাংশ মনে করেছিলেন ধনীদের জীবনমান উন্নত হবে, কিন্তু মধ্যবিত্তদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিভক্ত মতামত ছিল। দরিদ্রদের জীবন আরও কঠিন হবে—এমনটাই ভাবতেন বেশির ভাগ। প্রায় ৮০ শতাংশ ধারণা করেছিলেন ব্যক্তিগত গোপনীয়তা কমবে, আর ৫৭ শতাংশ মনে করেছিলেন ব্যক্তিগত স্বাধীনতাও হ্রাস পাবে। অপরাধ বৃদ্ধি, পরিবেশের অবনতি এবং নৈতিক মূল্যবোধের পতনের আশঙ্কাও ছিল প্রবল। ৭১ শতাংশ মত দিয়েছিলেন, সন্তানকে ভালো মানুষ হিসেবে বড় করা আরও কঠিন হবে।

তবে কিছু আশাবাদী দিকও ছিল। অধিকাংশ আমেরিকান বিশ্বাস করতেন, জাতিগত সম্পর্কের উন্নতি হবে এবং চিকিৎসাসেবা আরও সহজলভ্য হবে—যদিও তা হবে ব্যয়বহুল।

গ্যালাপ আজও জরিপ চালিয়ে যাচ্ছে, যদিও এখন ল্যান্ডলাইনের ওপর নির্ভরতা কম। এই দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে জনমতও নাটকীয়ভাবে বদলে গেছে। ১৯৯৮ সালে যেখানে প্রায় ৬০ শতাংশ আমেরিকান দেশের গতিপথ নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন, বর্তমানে সেই হার নেমে এসেছে মাত্র ২৪ শতাংশে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পুতিনের বাসভবনে ড্রোন হামলার অভিযোগ—‘মিথ্যা’ বলছে ইউক্রেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউক্রেনের ভলোদিমির জেলেনস্কি ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি
ইউক্রেনের ভলোদিমির জেলেনস্কি ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন—এমন অভিযোগ করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে পুরোপুরি ‘মিথ্যা ও সাজানো’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই হামলার কারণে চলমান শান্তি আলোচনায় রাশিয়ার অবস্থানের ‘পরিবর্তন বা পুনর্বিবেচনা’ করা হতে পারে। তবে মস্কো এখনই আলোচনা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে না।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন সের্গেই লাভরভের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, গতকাল রোববার রাত থেকে আজ সোমবার ভোর পর্যন্ত পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ৯১টি দূরপাল্লার ড্রোন হামলা চালায় ইউক্রেন। রুশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সবকটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। তবে এতে কোনো হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি।

লাভরভ হুমকি দিয়ে বলেন, ইউক্রেনের এমন হঠকারী কর্মকাণ্ডের জবাব দেওয়া হবে। রুশ সামরিক বাহিনী ইতিমধ্যে পাল্টা হামলার জন্য লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করে ফেলেছে। তবে হামলার সময় প্রেসিডেন্ট পুতিন নোভগোরোদের ওই বাসভবনে ছিলেন কি না, তা স্পষ্ট করা হয়নি।

ফ্লোরিডায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক শেষ করে ইউরোপে ফেরার পথে জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, ‘রাশিয়া আবারও ভয়ংকর সব মিথ্যা বিবৃতি দিচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক অগ্রগতির সাফল্য নষ্ট করতেই এমন নাটক সাজানো হচ্ছে। তারা মূলত কিয়েভের সরকারি ভবনগুলোতে বড় ধরনের হামলার ক্ষেত্র তৈরি করার জন্য এই অজুহাত দিচ্ছে।’

জেলেনস্কি জানান, ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার প্রায় ৯০ শতাংশ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, যা রাশিয়াকে বিচলিত করে তুলেছে।

এদিকে ক্রেমলিন বলছে, আজ প্রেসিডেন্ট পুতিন টেলিফোনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এই ড্রোন হামলার বিষয়টি জানিয়েছেন। পুতিন ট্রাম্পকে বলেছেন, এই হামলার পর রাশিয়া তাদের শান্তি আলোচনার শর্তগুলো পুনরায় খতিয়ে দেখবে।

রুশ গণমাধ্যমগুলো ক্রেমলিনের সহকারী ইউরি উশাকভের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, এই খবর শুনে ট্রাম্প ‘বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ’ হয়েছেন। তবে হোয়াইট হাউস থেকে এই ফোনালাপকে কেবল ‘ইতিবাচক’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে, বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তাইওয়ানকে ঘিরে ধরেছে চীনের যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান ও ড্রোন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মহড়ায় সরাসরি গুলির অনুশীলনও করা হচ্ছে। ছবি: চীনের পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ড
মহড়ায় সরাসরি গুলির অনুশীলনও করা হচ্ছে। ছবি: চীনের পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ড

তাইওয়ানকে ঘিরে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া শুরু করেছে চীন। সোমবার শুরু হওয়া এই মহড়ায় যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান, ড্রোন ও সরাসরি গোলাবর্ষণও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ‘জাস্টিস মিশন ২০২৫’ নামের এই অভিযানে তাইওয়ানকে চারদিক থেকে ঘিরে সাতটি সামুদ্রিক অঞ্চলে সমন্বিত স্থল, নৌ ও আকাশ মহড়া চালানো হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি এখন পর্যন্ত তাইওয়ানকে লক্ষ্য করে চীনের সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে আক্রমণাত্মক সামরিক প্রদর্শন।

চীনের পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ড জানিয়েছে—মহড়ায় স্থল ও সমুদ্রের লক্ষ্যবস্তুর ওপর সিমুলেটেড হামলা, পাশাপাশি তাইওয়ানের প্রধান বন্দরগুলো অবরোধ করার অনুশীলন করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে তাইওয়ানকে বিচ্ছিন্ন করতে বা চাপের মুখে ফেলতে এই ধরনের অবরোধ ব্যবহৃত হতে পারে বলে মনে করছেন সামরিক বিশ্লেষকেরা। সরাসরি গোলাবর্ষণের মহড়া মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) পর্যন্ত চলবে এবং আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় এবার তাইওয়ানের আরও কাছাকাছি ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল ঘোষণা করা হয়েছে।

এই মহড়ার ফলে বেসামরিক বিমান ও নৌ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন তাদের ফ্লাইটের রুট পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে এবং তাইওয়ানের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বিকল্প আকাশপথ ব্যবহারের প্রস্তুতি নিয়েছে। চীনা সামরিক কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, এই মহড়া ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতাপন্থী শক্তি’ ও ‘বিদেশি হস্তক্ষেপের’ বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কবার্তা।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি তাইওয়ানের কাছে ১১.১ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যা ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্যাকেজ। এতে রয়েছে ৮২টি হিমার্স রকেট লঞ্চার, ৪২০টি দূরপাল্লার এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র, স্বচালিত হাউইটজার, উন্নত ড্রোন ব্যবস্থা ও অ্যান্টি-আর্মার অস্ত্র। বেইজিং এই অস্ত্রচুক্তিকে তীব্রভাবে নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এতে তাইওয়ান একটি ‘বারুদের স্তূপে’ পরিণত হচ্ছে।

তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মহড়া চলাকালে তাদের দ্বীপভূমির চারপাশে ৮৯টি চীনা সামরিক বিমান, ১৪টি নৌজাহাজ ও ১৪টি কোস্ট গার্ড জাহাজ শনাক্ত করা হয়েছে। কিছু চীনা জাহাজ তাইওয়ানের উপকূলের খুব কাছাকাছি অবস্থানে এসে চোখ রাঙাচ্ছে। এই প্রেক্ষিতে সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রেখেছে তাইওয়ান।

চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম জানিয়েছে, মহড়ার মূল লক্ষ্য তাইওয়ানের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর—উত্তরের কিলুং ও দক্ষিণের কাওশিয়ুং বন্ধ করে দেওয়ার সক্ষমতা পরীক্ষা। চীন তাইওয়ানকে নিজের ভূখণ্ড দাবি করলেও তাইওয়ান বলছে, দ্বীপটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণের অধিকার শুধু সেখানকার জনগণেরই আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

১৭ বছরের সাজার রায় চ্যালেঞ্জ করে ইমরান খান ও বুশরা বিবির আপিল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি। ছবি: এএফপি
ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি। ছবি: এএফপি

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি বর্তমানে কারাগারে। তোশাখানা দুর্নীতির মামলায় তাঁরা দুজনই সাজা খাটছেন। এর মধ্যে ২০ ডিসেম্বর তোশাখানা দুর্নীতির নতুন মামলায় তাঁদের আরও ১৭ বছর করে কারাদণ্ড দেন দেশটির একটি বিশেষ আদালত। এই রায় চ্যালেঞ্জ করে আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) ইসলামাবাদ হাইকোর্টে (আইএইচসি) পৃথক দুটি আপিল করেছেন ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি।

আপিল আবেদনে ইমরান খান ও বুশরা বিবির আইনজীবীরা দাবি করেছেন, এই সাজা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ইমরান খানকে জাতীয় রাজনীতি থেকে দূরে রাখতেই এ ‘পরিকল্পিত’ রায় দেওয়া হয়েছে। আইনজীবীরা ইমরান খান ও বুশরা বিবির পক্ষে কিছু যুক্তি উত্থাপন করেছেন।

আইনজীবীদের দাবি, ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এফআইএ) কোনো এফআইআর ছাড়াই ইমরান খান ও বুশরা বিবির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। এর মাত্র দুই দিনের মাথায় তড়িঘড়ি করে চালানো তদন্তের ভিত্তিতে এই মামলা হয়, যা স্বচ্ছ বিচারের পরিপন্থী।

আপিল আবেদনে বলা হয়েছে, তোশাখানাসংক্রান্ত এটি চতুর্থ মামলা। একই বিষয়ে বারবার মামলা করা আইনের লঙ্ঘন এবং এটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে করা হয়েছে, যাতে ইমরান খানকে দীর্ঘদিন কারাগারে আটকে রাখা যায়।

আইনজীবীদের দাবি, ২০১৮ সালের তোশাখানা নীতিমালা অনুযায়ী নির্ধারিত মূল্যের ৫০ শতাংশ পরিশোধ করেই উপহারগুলো রাখা হয়েছিল। এখানে কোনো ধরনের বিশ্বাসভঙ্গ বা ‘ক্রিমিনাল ব্রিচ অব ট্রাস্ট’ ঘটেনি।

আপিলে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, পাকিস্তান পেনাল কোড অনুযায়ী ইমরান খান ও বুশরা বিবি এই উপহার নেওয়ার সময় প্রচলিত সংজ্ঞায় ‘পাবলিক সার্ভেন্ট’ ছিলেন না। বিশেষ করে, বুশরা বিবি একজন গৃহিণী হিসেবে কোনো সরকারি পদের দায়িত্বে ছিলেন না।

প্রসঙ্গত, তোশাখানা মামলাটি মূলত ২০২১ সালের মে মাসে সৌদি আরব সফরকালে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের দেওয়া একটি দামি বুলগারি জুয়েলারি সেট নিয়ে। প্রায় ৮ কোটি রুপি মূল্যের এই নেকলেস, ব্রেসলেট, আংটি ও কানের দুলের সেটটি ইমরান দম্পতি মাত্র ২৯ লাখ রুপি পরিশোধ করে নিজের কাছে রেখেছিলেন।

এই মামলায় পাকিস্তানের ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির (এআইএ) বিশেষ আদালতের বিচারক শাহরুখ আরজুমান্দ তাঁদের প্রত্যেককে প্রথমে বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড, এরপর দুর্নীতিবিরোধী আইনের আওতায় সাত বছরের কারাদণ্ড এবং ১ কোটি ৬৪ লাখ রুপি জরিমানা করেছিলেন।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালে সংসদীয় অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন ইমরান খান। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা করা হয়। তিনি ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী আছেন। বর্তমানে ইমরান খান ১৯ কোটি পাউন্ডের দুর্নীতির মামলায় ১৪ বছরের সাজা খাটছেন। বুশরা বিবিও একই মামলায় সাত বছরের সাজাপ্রাপ্ত।

ইমরানের দল পিটিআইয়ের দাবি, তোশাখানা মামলার বিচারপ্রক্রিয়া ‘ক্যাঙারু কোর্টে’র মতো রুদ্ধদ্বার কক্ষে সম্পন্ন হয়েছে। এটি ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত