Ajker Patrika

ট্রাম্পের অধোগতি, বাইডেনের বৃহস্পতি

ইয়াসিন আরাফাত, ঢাকা 
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১৩: ৩৬
ট্রাম্পের অধোগতি, বাইডেনের বৃহস্পতি

গত বছরের শেষদিকে যুক্তরাষ্ট্রের মসনদে পরিবর্তনের হাওয়া বয়। মার্কিন নির্বাচনে নানা নাটকীয়তার পর ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধোগতি সুনিশ্চিত হয়েছে বটে; তবে নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মনে ক্ষমতার শুরুর দিকের স্বস্তি আর নেই। বরং রাশিয়া-চীনে কিছুটা অস্বস্তিতেই আছেন তিনি।

২০২০ সালের শেষের দিকে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরাজয় নিশ্চিত হওয়া যায়। মার্কিন নির্বাচনে বাইডেনের বিজয়কে নস্যাৎ এবং সে সময় মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন বানচাল করার লক্ষ্যেই গত ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে হামলা চালান ট্রাম্পের উগ্র সমর্থকেরা। নজিরবিহীন ওই সহিংসতায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গায় উসকানিমূলক পোস্ট দেওয়ার কারণে ট্রাম্পকে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধ করে ফেসবুক ও টুইটার। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ জানায়, ট্রাম্প ২০২৩ সাল পর্যন্ত ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে পারবেন না।

এত হুলুস্থুলের পরও ক্ষমতায় নির্দিষ্ট সময়ের বেশি থাকতে পারেননি ট্রাম্প। চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি তিনি হোয়াইট হাউস ছাড়েন। যাওয়ার আগে বাইডেনের নাম উল্লেখ না করে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি তাঁকে স্বাগত জানাচ্ছি। দেশে নতুন একটি সরকার আসতে চলেছে। নিরাপদ ও সমৃদ্ধ আমেরিকা গড়ার লক্ষ্যে আমি সেই সরকারের সাফল্য কামনা করছি।’

শপথ নিচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এই অনুষ্ঠানে ছিলেন না ডোনাল্ড ট্রাম্পট্রাম্প হোয়াইট হাউস ছাড়ার পরদিন অর্থাৎ ২১ জানুয়ারি ৪৬তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন জো বাইডেন। ওই শপথ অনুষ্ঠানে অংশ নেননি ট্রাম্প। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানায়, ১৮৬৯ সালে অ্যান্ড্রু জনসনের পর থেকে এই প্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাঁর উত্তরসূরির অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগদান থেকে বিরত থাকেন।

তবে উপস্থিত ছিলেন বিদায়ী ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। অন্যদের মধ্যে ছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, জর্জ ডব্লিউ বুশ ও বিল ক্লিনটন এবং সাবেক ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা, লরা বুশ ও হিলারি ক্লিনটন।

প্রথা অনুযায়ী প্রথমে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন কমলা হ্যারিস। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী, প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান ও প্রথম দক্ষিণ এশীয় হিসেবে এই পদে অধিষ্ঠিত হন কমলা। এরপর শপথ গ্রহণ করেন জো বাইডেন। শপথের পর তুমুল করতালি ও হর্ষধ্বনিতে অভিনন্দন জানানো হয় এ দুজনকে।

শপথ নেওয়ার পর প্রথম দিনেই ট্রাম্পের বিতর্কিত ১৫ পদক্ষেপ ও আদেশ বাতিল করেন জো বাইডেন। এদিন তিনি ১৫টি নির্বাহী আদেশ ও দুটি দাপ্তরিক নথিতে সই করেন।

বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে বাইডেন বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, ট্রাম্পের নীতি পাল্টে দিতে তিনি দেরি করতে রাজি নন। ক্ষমতায় আসার এক মাস না পেরোতেই গত ২০ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রকে প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে ফেরান বাইডেন। এই চুক্তি থেকে বের হয়ে গিয়েছিলেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক-সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশে সই করেন বাইডেন। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাধ্যতামূলক মাস্ক পরার বিরোধী ছিলেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করার যে প্রক্রিয়া ট্রাম্প শুরু করেছিলেন, তা-ও থামিয়ে দেন বাইডেন।

বাইডেন আমলে চলতি বছরের অন্যতম একটি বড় ঘটনা ছিল আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার। গত ৩১ আগস্ট আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ তার সব মিত্রদেশ সেনা প্রত্যাহার করে নেয়। শেষ হয় ২০ বছরের যুদ্ধ। এর মধ্যেই ত্বরিতগতিতে আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে তালেবান। আফগানিস্তান ছাড়ার আগে রাজধানী কাবুলে বোমা হামলায় ১৩ জন মার্কিন সেনা নিহত হয়। এসব ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধী রিপাবলিকান পার্টির নেতাদের তোপের মুখে পড়েছিলেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের কেউ কেউ তো বাইডেনের পদত্যাগও দাবি করে বসেন তখন।

আফগানিস্তান ছাড়ছেন মার্কিন সেনারাআফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা পুরোপুরি প্রত্যাহারের বিষয়ে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে চুক্তি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন ট্রাম্প। সেনা প্রত্যাহারের সমালোচনার জবাবে বাইডেন বলেছিলেন, ট্রাম্পের করা চুক্তি বাস্তবায়ন করতে গিয়েই তাঁকে ৩১ আগস্টের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।

এদিকে ইরাক থেকেও সেনা প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আগামী বছরের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে ইরাক থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে দেশটি। এমনটি হলে সেখানেও ১৯ বছরের মার্কিন সেনা উপস্থিতির অবসান ঘটবে।

তবে বাইডেন ট্রাম্পের অনেক নীতির বিরোধিতা করলেও চীন ও রাশিয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব আগের মতোই আছে। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আমলে গত মার্চে প্রথম যুক্তরাষ্ট্র ও পরে চীনের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের আলোচনা শুরু হয়। সেখানে দুই পক্ষই পরস্পরকে তীব্র ভাষায় তিরস্কার করে।

আলাস্কার অ্যাংকোরেজ শহরে এই আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সুলিভান। চীনের পক্ষে আলোচনায় যোগ দেন দেশটির পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক সবচেয়ে সিনিয়র কর্মকর্তা ইয়াং জিয়েচি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই।

আলোচনার শুরুতেই উদ্বোধনী বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিস্টার ব্লিনকেন একদম সোজাসাপ্টা ভাষায় বলেন, ‘চীনের বিভিন্ন পদক্ষেপের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র তার গভীর উদ্বেগ এই আলোচনায় আনবে, বিশেষ করে শিনজিয়াং, হংকং, তাইওয়ান, যুক্তরাষ্ট্রে সাইবার হামলা এবং মার্কিন মিত্রদের ওপর অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগের বিষয়গুলো।’

আর এর জবাবে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই অভিযোগ করেন এই বলে যে, ওয়াশিংটন তার সামরিক পরাক্রম এবং অর্থনৈতিক শক্তিকে কাজে লাগাচ্ছে অন্য দেশকে দমিয়ে রাখতে। এত দিন বাণিজ্য ও উইঘুরদের মানবাধিকার ইস্যুতে বিরোধ থাকলেও এ বছর তাইওয়ান এবং দক্ষিণ চীন সাগরে মার্কিন কর্মকাণ্ড নিয়ে বেইজিং ও ওয়াশিংটনের বিরোধ আরও তীব্র হয়। এহেন পরিস্থিতিতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক কিছুটা স্বাভাবিক করার উদ্দেশ্যে সোমবার চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে গত ১৬ নভেম্বর ভার্চুয়াল বৈঠকে বসেন জো বাইডেন। বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে সংঘাত থামাতে নীতিগত সীমারেখা তৈরির প্রস্তাব দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আর বেইজিং থেকে বাইডেনকে ‘পুরোনো বন্ধু’ বলে উষ্ণ সম্বোধন করেন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং।

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের বৈঠকতবে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বন্ধুত্বের বদলে বিরোধের আবহই এখন পর্যন্ত প্রাধান্য বিস্তার করে আছে। সর্বশেষ মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর অবৈধ নজরদারির অভিযোগে দেশটির একটি জৈবপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই চীনা প্রতিষ্ঠানের ওপর রপ্তানি নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছে মার্কিন বাণিজ্য বিভাগ।

এর আগে ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব বিভাগের অফিস অব ফরেন অ্যাসেট কন্ট্রোল (ওএফএসি) সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দপ্তরের সঙ্গে মিলে বিভিন্ন দেশের ১৫ ব্যক্তি ও ১০ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর মধ্যে চীনের স্টার্ট-আপ সেন্সটাইম গ্রুপের নামও ছিল।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন,  নতুন করে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক আরও খারাপ করে তুলবে।

ক্ষমতা নেওয়ার পর চলতি বছরের ১৭ জুন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মার্কিন কূটনীতিকদের বরাতে জানা যায়, সেখানে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ, সাইবার হামলা, রাশিয়ার জেলবন্দী বিরোধী নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনির মুক্তির বিষয়ের পাশাপাশি রাশিয়ায় ‘বন্দী’ আমেরিকানদের বিষয়েও কথা তোলেন। দেড় ঘণ্টার ওই বৈঠকের পর পুতিন বলেন, সেই বৈঠক ছিল পুরোপুরি গঠনমূলক। সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনায় সম্মত হয়েছে দুই দেশই। তবে এ নিয়ে কোনো দেশই আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করেনি।

চীনের মতোই রাশিয়ার সঙ্গে ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ত উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে আবারও উত্তেজনা দেখা দেয়। এবারের ইস্যুটি হলো ইউক্রেন। এ নিয়ে ৮ ডিসেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের এক বৈঠক হয়। বৈঠকে পুতিনকে কড়া হুঁশিয়ারি দেন বাইডেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান,  ইউক্রেনে রুশ অভিযানের আশঙ্কার প্রেক্ষাপটে ‘কড়া অর্থনৈতিক ও অন্যান্য ব্যবস্থা’ নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।

বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনইউক্রেন সীমান্তের কাছে ৯০ হাজারেরও বেশি রুশ সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আশঙ্কা আছে, আগামী বছরের শুরুতেই ইউক্রেনে হামলা চালাতে পারে রাশিয়া। তবে রাশিয়ার পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।

শেষটা করা যাক ট্রাম্পকে দিয়ে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এরই মধ্যে জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি আবার অংশ নেবেন। এদিকে ফেসবুক-টুইটার থেকে নিষিদ্ধ হওয়ার পর গত অক্টোবরে ট্রুথ সোশ্যাল নামে এবার নতুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম চালুর ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন ট্রাম্প।

নতুন প্ল্যাটফর্মটি ‘বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর নিপীড়নের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে’ বলে মন্তব্য করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর অভিযোগ, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো যুক্তরাষ্ট্রে বিরোধী মতকে ‘চুপ করিয়ে দিচ্ছে’।

প্রেসিডেন্ট আমলে সংগতি ও অসংগতিপূর্ণ নানা ধরনের কাজ করে সমালোচিত ট্রাম্প চলতি বছর প্রেসিডেন্ট না হয়েও এগুলো বলে মার্কিন গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন। ট্রাম্পের জন্য আরেকটি খারাপ খবর হলো—এবার ফোর্বস সাময়িকীর ৪০০ মার্কিন ধনীর তালিকায় তিনি নেই। বলা হচ্ছে, মহামারি করোনা শুরু হওয়ার পর তাঁর সম্পদ কমেছে ৬০ কোটি মার্কিন ডলার।
সব মিলিয়ে বলা যায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে সাবেক হওয়ার পর থেকেই পাদপ্রদীপের আলো থেকে বাধ্য হয়েই সরে যেতে হয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন আসায় বিশ্ববাসী কিছুটা স্বস্তি পেলেও বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট পুরোপুরি সুবিধাজনক অবস্থানে নেই। কারণ, সেই চীন-রাশিয়া। নতুন বছরে পুতিন-সি চিন পিংয়ের সঙ্গে বাইডেনের সম্পর্ক কেমন থাকে, তা-ই এখন দেখার।

তথ্যসূত্র: বিবিসি, রয়টার্স, ফোর্বস, এএফপি ও সিএনএন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলির ভিডিও ভাইরাল, ব্যাখ্যা দিলেন ইশরাক

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় গেজেট

হাতিয়ায় চর দখল নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ-গোলাগুলি, নিহত ৫

ভারতে নারী সরকারি কর্মকর্তাকে ‘রিল তারকা’ বলায় ৪ কলেজশিক্ষার্থী আটক

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফিলিস্তিনপন্থী প্ল্যাকার্ড হাতে এবার লন্ডনে গ্রেপ্তার গ্রেটা থুনবার্গ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
লন্ডনে গ্রেপ্তারের মুহূর্তে গ্রেটা থুনবার্গ। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান
লন্ডনে গ্রেপ্তারের মুহূর্তে গ্রেটা থুনবার্গ। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান

লন্ডনে ফিলিস্তিনপন্থী এক বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার সময় সুইডিশ জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গকে গ্রেপ্তার করেছে ব্রিটিশ পুলিশ। মঙ্গলবার সকালে (২৩ ডিসেম্বর) লন্ডনের ফেনচার্চ স্ট্রিটে একটি বিমা প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ের সামনে এই ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানিয়েছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’-এর প্রতি সমর্থন জানিয়ে প্ল্যাকার্ড প্রদর্শনের অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ২২ বছর বয়সী গ্রেটা থুনবার্গ বিক্ষোভ শুরুর কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তিনি মাটিতে বসে একটি প্ল্যাকার্ড ধরে ছিলেন। প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল—‘আমি প্যালেস্টাইন অ্যাকশন বন্দীদের সমর্থন করি। আমি গণহত্যার বিরোধিতা করি।’

পুলিশ দাবি করেছে, গ্রেটা থুনবার্গের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডের বার্তাটি সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০০-এর ১৩ ধারায় নিষিদ্ধ সংগঠনের প্রতি সমর্থন প্রকাশের শামিল।

এর আগে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া আরও দুই কর্মীকে ‘অপরাধমূলক ক্ষতিসাধনের’ অভিযোগে আটক করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, তাঁরা অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ব্যবহার করে অ্যাসপেন ইন্স্যুরেন্স নামের ওই ভবনের সামনের অংশে লাল রং ছিটিয়ে দেন। পুলিশ জানায়, হাতুড়ি ও লাল রং ব্যবহার করে ভবনটির ক্ষতি করা হয়েছে।

‘প্রিজনার্স ফর প্যালেস্টাইন’ নামের একটি প্রচারগোষ্ঠী জানিয়েছে, অ্যাসপেন ইন্স্যুরেন্সকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে, কারণ প্রতিষ্ঠানটি ইসরায়েলি অস্ত্র প্রস্তুতকারক এলবিট সিস্টেমসের যুক্তরাজ্য শাখাকে বিমা সেবা দিচ্ছিল। সংগঠনটি আরও জানায়, প্যালেস্টাইন অ্যাকশন-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন বন্দী বর্তমানে অনশন কর্মসূচিতে রয়েছেন। মোট ৮ জন বন্দী অনশন শুরু করেছিলেন। এর মধ্যে দুজন ৫২ তম দিনে পৌঁছেছেন এবং তাঁদের স্বাস্থ্যঝুঁকি আশঙ্কাজনক। গুরুতর ঝুঁকির কারণে তিনজন অনশন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছেন।

পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, গ্রেটা থুনবার্গকে পরে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে এবং তাঁকে আগামী মার্চ মাসে আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে। তবে অধিকারকর্মীরা প্রশ্ন তুলেছেন—গত এক বছরে হাজারো মানুষ ‘আই সাপোর্ট প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’ লেখা প্ল্যাকার্ড বহন করলেও, গ্রেটার ক্ষেত্রেই কেন সন্ত্রাসবিরোধী আইন প্রয়োগ করা হলো।

এদিকে অনশনরত বন্দীদের পরিবার ও সমর্থকেরা ব্রিটেনের বিচারমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির সঙ্গে বৈঠকের দাবি জানিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, অনশন সংকট নিরসনে বৈঠক না করে সরকার নিজস্ব নীতিমালা লঙ্ঘন করছে। গ্রেটা থুনবার্গ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘যুক্তিসংগত এই দাবিগুলো মেনে নিলে বন্দীদের মুক্তির পথ তৈরি হবে। গণহত্যা থামাতে যারা নিজেদের অধিকার প্রয়োগ করছে, রাষ্ট্রের উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো।’

উল্লেখ্য, এর আগে অ্যালিয়াঞ্জ ও অ্যাভিভা নামে দুটি বড় বিমা প্রতিষ্ঠান এলবিট সিস্টেমসের যুক্তরাজ্য শাখার সঙ্গে তাদের বিমা চুক্তি বাতিল করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলি অস্ত্র শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ইউরোপজুড়ে চাপ বাড়ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলির ভিডিও ভাইরাল, ব্যাখ্যা দিলেন ইশরাক

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় গেজেট

হাতিয়ায় চর দখল নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ-গোলাগুলি, নিহত ৫

ভারতে নারী সরকারি কর্মকর্তাকে ‘রিল তারকা’ বলায় ৪ কলেজশিক্ষার্থী আটক

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রেড স্কয়ারে কেন গায়ে আগুন দিলেন রুশ প্রতিরক্ষা কারখানার মালিক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
রাশিয়ার বিখ্যাত রেড স্কয়ার। ছবি: সংগৃহীত
রাশিয়ার বিখ্যাত রেড স্কয়ার। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ার ৭৫ বছর বয়সী বিজ্ঞানী ভ্লাদিমির আর্সেনেভ কেন মস্কোর রেড স্কয়ারে নিজের ওপর আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলেন, সেই বিষয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রয়টার্স। মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, দেশটির প্রতিরক্ষা খাতের তীব্র চাপেই আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন আর্সেনেভ।

আর্সেনেভ মূলত মস্কো-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘ভোলনা সেন্ট্রাল সায়েন্টিফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট’-এর প্রধান। এই প্রতিষ্ঠানটি এমন সব হেলমেট রেডিও কন্ট্রোল ডিভাইস উপাদান করে, যেগুলো যুদ্ধ ক্ষেত্রে ট্যাংক ক্রুরা ব্যবহার করেন।

২০২২ সালে রাশিয়ার ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসনের সময় আর্সেনেভের কোম্পানিতে একের পর এক প্রতিরক্ষা আদেশ আসতে থাকে। কিন্তু সেই আদেশগুলো তাঁর কাছে বিষের মতো জটিল ও বিপজ্জনক ছিল বলে জানিয়েছেন রয়টার্সকে। তাঁকে উৎপাদন দ্রুত বাড়াতে হয়েছিল এবং আদেশ অনুযায়ী রেডিও ডিভাইস কন্ট্রোলগুলো রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত সময়সীমা এবং মূল্যে ডেলিভারি দিতে হয়েছিল। ব্যর্থতার কোনো সুযোগ ছিল না।

এদিকে ২০২৩ সালের বসন্তে আর্সেনেভের কারখানা উৎপাদনে পিছিয়ে পড়ে এবং শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে মনোমালিন্য দেখা দেয়। সংস্থাটি তখন দেউলিয়া হওয়ার পথে। এ অবস্থায় ২০২৪ সালে ২৬ জুলাই মস্কোর রেড স্কয়ারে যান আর্সেনেভ। ক্রেমলিনের বাইরেই সোভিয়েত রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা লেনিনের সমাধির কাছে নিজের শরীরে তিনি আগুন ধরিয়ে দেন। গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় পরে তিনি কয়েক সপ্তাহ হাসপাতালে ছিলেন।

আর্সেনেভ বলেন, ‘আমাদের কাজ ঠিকঠাক চলছে, আমরা আদেশ পূরণ করছি, তারপরও কেন আমরা ডুবে যাচ্ছি। সম্ভবত সমস্যা আছে।’ শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পর ক্রেমলিন ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আর্সেনেভের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

তবে ওই ঘটনায় রাশিয়ার প্রতিরক্ষা শিল্পের চাপ স্পষ্ট হয়েছে বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত রাশিয়ায় অন্তত ৩৪ জনকে রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা আদেশে বিঘ্ন ঘটানোর অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে অন্তত ১১ জনই কোম্পানির প্রধান।

বিশ্লেষকেরা মনে করেন—ক্রেমলিনের নীতি, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা রোস্টেকের মাধ্যমে কঠোর নিয়ন্ত্রণ, উদ্ভাবন ও আধুনিকীকরণের পথে বাধা সৃষ্টি করছে। রেডিও কন্ট্রোল ডিভাইস উৎপাদনের অতিরিক্ত চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল আর্সেনেভের প্রতিষ্ঠান। উৎপাদন বাড়ানোর প্রচেষ্টা এবং সরকারের সঙ্গে মূল্য নিয়ে দর-কষাকষি কোম্পানিটিকে আর্থিক সংকটে ফেলে। একপর্যায়ে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধে অক্ষম এই প্রতিষ্ঠানটি মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়ে পড়ে।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা শিল্পে চাপের উদাহরণ আরও দেখা যায় দেশটির নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভের বক্তব্যে। ২০২৩ সালের মার্চে শিল্প নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি স্তালিনের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন একটি টেলিগ্রাম পড়ে শোনান, যেখানে সময়মতো অস্ত্র সরবরাহ করতে ব্যর্থ কোম্পানিকে ‘গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে’ বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল।

চিকিৎসার মধ্যে থেকেও আর্সেনেভকে এখনো তাঁর দায়িত্ব পালন করে যেতে হচ্ছে। তবে আদালতের শুনানিতে অংশগ্রহণই এখন তাঁর দিনের প্রধান কাজ। এ ছাড়া রেড স্কয়ারের মতো সংবেদনশীল স্থানে অনুমোদনহীন প্রতিবাদ করার জন্য তাঁকে বিপুল পরিমাণ জরিমানা করা হয়েছে।

এই ঘটনাটি রাশিয়ার প্রতিরক্ষা শিল্পে প্রশাসনিক চাপ, সময়সীমার বাধ্যবাধকতা, আর্থিক অস্থিতিশীলতা ও আমলাতন্ত্রের চরম বাস্তবতা তুলে ধরেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলির ভিডিও ভাইরাল, ব্যাখ্যা দিলেন ইশরাক

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় গেজেট

হাতিয়ায় চর দখল নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ-গোলাগুলি, নিহত ৫

ভারতে নারী সরকারি কর্মকর্তাকে ‘রিল তারকা’ বলায় ৪ কলেজশিক্ষার্থী আটক

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নাগরিকত্বের জন্য বসবাসের শর্ত দ্বিগুণ করল জাপান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জাপানে নাগরিকত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে বিদেশিদের জন্য বসবাসের ন্যূনতম সময় দ্বিগুণ করার প্রস্তাব দিয়েছে সরকার। নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, জাপানের নাগরিকত্ব পেতে হলে বিদেশিদের দেশটিতে অন্তত ১০ বছর বসবাস করতে হবে। বর্তমানে এই মেয়াদ পাঁচ বছর। একই সঙ্গে নাগরিকত্ব ও স্থায়ী বসবাসের ক্ষেত্রে ভাষা দক্ষতা এবং ভালো আচরণকে বাধ্যতামূলক শর্ত হিসেবে যুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, আগামী বছরের মধ্যেই জাপানের অভিবাসন নীতির বড় ধরনের সংস্কার কার্যকর হতে পারে। দেশটির ক্ষমতাসীন জোটের শরিক দল ‘নিপ্পন ইশিন’ বিদ্যমান নাগরিকত্ব নীতিকে ‘অতিরিক্ত শিথিল’ আখ্যা দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি পর্যালোচনার নির্দেশ দেন।

গত ৪ ডিসেম্বর তাকাইচির দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির এক বৈঠকে উত্থাপিত প্রস্তাবে বলা হয়েছে—নাগরিকত্ব অনুমোদন শুধু বসবাসের সময়ের ওপর নির্ভর করবে না; আবেদনকারীর আচরণ, জীবিকা নির্বাহের সক্ষমতা এবং আয়ের স্থায়িত্বও বিবেচনায় নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপক ক্ষমতা থাকবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের হাতে।

এর আগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর ‘নিপ্পন ইশিন’ দলের পক্ষ থেকে বিচার মন্ত্রণালয়ে বিদ্যমান নীতির তুলনায় আরও কঠোর পদক্ষেপের প্রস্তাব দেওয়া হয়। এই প্রস্তাবে বিদেশি বাসিন্দার সংখ্যা সীমিত করা এবং কিছু ক্ষেত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের সুযোগ রাখার কথাও বলা হয়। তবে আরও কট্টর অবস্থান নেয় অতি ডানপন্থী সানসেইতো পার্টি। তারা ‘কিকাজিন’ বা নাগরিকত্ব পাওয়া বিদেশিদের নির্বাচনে প্রার্থী হতে না দেওয়ার ঘোষণা দেয়। সে সময় তারা অভিযোগ করে, সরকার জাতিগত জাপানিদের চেয়ে বিদেশিদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

তবে প্রস্তাবিত নিয়মে কিছু ব্যতিক্রম রাখার কথাও বলা হয়েছে। যেমন—জাপানে বহু বছর ধরে খেলাধুলায় প্রতিনিধিত্ব করা ক্রীড়াবিদেরা ১০ বছরের শর্ত পূরণ না করলেও নাগরিকত্ব পেতে পারেন। বিচার মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ১২ হাজার ২৪৮টি নাগরিকত্ব আবেদন জমা পড়ে, যার মধ্যে ৮ হাজার ৮৬৩টি অনুমোদিত হয়।

এ ছাড়া স্থায়ী বসবাসের আবেদনকারীদের জন্য জাপানি ভাষা ও নাগরিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে। এই প্রস্তাব ঘিরে দেশটির অনলাইনে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। এই নীতির সমর্থকদের মতে, দীর্ঘমেয়াদি বাসিন্দাদের জন্য এসব শর্ত যুক্তিসংগত। তবে সমালোচকেরা বলছেন, শ্রম ঘাটতিতে ভোগা জাপানে অভিবাসন নিরুৎসাহিত করতে রক্ষণশীল সরকার নতুন বাধা তৈরি করছে।

আসাহি শিম্বুন জানিয়েছে, প্রস্তাবিত ‘সামাজিক অন্তর্ভুক্তি কর্মসূচির’ লক্ষ্য হলো বিদেশিদের ভাষাজ্ঞান ও মৌলিক সামাজিক ধারণা জোরদার করা, যাতে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি কমে এবং বাড়তে থাকা বিদেশি-বিরোধী মনোভাব নিয়ন্ত্রণে আসে। এই উদ্যোগের আওতায় জাপানি ভাষায় দুর্বল শিশুদের স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগে সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থাও থাকবে।

২০১৫ সালে জাপানে বিদেশি বাসিন্দার সংখ্যা ছিল প্রায় ২২ লাখ ৩০ হাজার। ২০২৫ সালের জুনে তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩৯ লাখ ৫০ হাজারে, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩ শতাংশ। এর মধ্যে প্রায় ৯ লাখ ৩০ হাজার বিদেশি স্থায়ী বাসিন্দার মর্যাদা পেয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলির ভিডিও ভাইরাল, ব্যাখ্যা দিলেন ইশরাক

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় গেজেট

হাতিয়ায় চর দখল নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ-গোলাগুলি, নিহত ৫

ভারতে নারী সরকারি কর্মকর্তাকে ‘রিল তারকা’ বলায় ৪ কলেজশিক্ষার্থী আটক

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সন্তানের অভিভাবকত্ব নিয়ে আইনি লড়াইয়ে পরাজয়, দুই শিশুকে বিষ খাইয়ে বাবা-দাদির আত্মহত্যা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ৪৫
দুই শিশুকে নিজের কাছে রাখতে না পারার যন্ত্রণা সইতে পারেননি বাবা ও দাদি। ছবি: সংগৃহীত
দুই শিশুকে নিজের কাছে রাখতে না পারার যন্ত্রণা সইতে পারেননি বাবা ও দাদি। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের কেরালা রাজ্যে সন্তানদের নিজের কাছে রাখা নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর আইনি লড়াইয়ের এক মর্মান্তিক পরিণতি ঘটেছে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী সন্তানদের মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার ঠিক কয়েক ঘণ্টা আগে দুই শিশুসন্তানকে বিষ খাইয়ে হত্যা করে নিজেরাও আত্মঘাতী হয়েছেন বাবা ও দাদি। কেরালার কান্নুর জেলার পায়্যানুরের রামান্থালিতে এ ঘটনা ঘটে।

তদন্তকারী কর্মকর্তাদের প্রাথমিক তথ্যের বরাত দিয়ে এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত কালাধরন এবং তাঁর মা উষা দুই শিশুকে দুধের সঙ্গে কীটনাশক মিশিয়ে খাইয়েছিলেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি দুধের বোতল এবং কীটনাশকের খালি শিশি উদ্ধার করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, সন্তানদের মৃত্যু নিশ্চিত করার পর কালাধরন ও উষা একই বিষ পান করে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। গতকাল সোমবার সকালে প্রতিবেশীরা দীর্ঘক্ষণ ঘর থেকে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে পুলিশে খবর দিলে এই আত্মহত্যার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।

কালাধরন এবং তাঁর স্ত্রী নয়নতারা দীর্ঘদিন ধরে দাম্পত্য কলহের জেরে আলাদা বসবাস করছিলেন। তাঁদের দুই শিশুসন্তান কালাধরন ও তাঁর মা উষার কাছেই ছিল। সন্তানদের নিজের হেফাজতে পেতে নয়নতারা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে আদালত নয়নতারার পক্ষে রায় দেন এবং সোমবারের মধ্যে সন্তানদের তাঁর কাছে হস্তান্তরের সময়সীমা বেঁধে দেন।

পুলিশ জানিয়েছে, গত রোববার রাতেই স্থানীয় থানা থেকে কালাধরনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল যাতে সোমবার সকালে কোনো ঝামেলা ছাড়াই হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়। কিন্তু সন্তানদের মায়ের হাতে তুলে দেওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি কালাধরন ও তাঁর মা।

ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করেছে। সেখানে সন্তানদের বিচ্ছেদ সহ্য করতে না পারা এবং আদালতের আদেশের প্রতি তাঁদের ক্ষোভ ও মানসিক যন্ত্রণার কথা উল্লেখ রয়েছে বলে জানা গেছে। পুলিশ বর্তমানে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি ‘অস্বাভাবিক মৃত্যু’র মামলা করেছে। কান্নুর জেলার পুলিশ সুপার বলেন, ‘এটি একটি অত্যন্ত পরিকল্পিত এবং আবেগতাড়িত হত্যাকাণ্ড। আইনি নির্দেশ অমান্য করার চরম পথ বেছে নিয়েছেন তাঁরা।’

পায়্যানুর এলাকায় এ ঘটনার পর থেকে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। প্রতিবেশীদের ভাষ্যমতে, কালাধরন সন্তানদের অত্যন্ত ভালোবাসতেন, কিন্তু সেই ভালোবাসার এমন নৃশংস রূপ কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ ঘটনা নিয়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। অনেকে বলছেন, বড়দের দ্বন্দ্বে এভাবে নিরপরাধ শিশুদের প্রাণ যাওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

পুলিশ শিশুদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে এবং পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি বিশেষ তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলির ভিডিও ভাইরাল, ব্যাখ্যা দিলেন ইশরাক

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় গেজেট

হাতিয়ায় চর দখল নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ-গোলাগুলি, নিহত ৫

ভারতে নারী সরকারি কর্মকর্তাকে ‘রিল তারকা’ বলায় ৪ কলেজশিক্ষার্থী আটক

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত