Ajker Patrika

যে অসম্ভব উপায়ে উত্তর কোরিয়া থেকে পালাল একটি পরিবার

যে অসম্ভব উপায়ে উত্তর কোরিয়া থেকে পালাল একটি পরিবার

উত্তর কোরিয়ার একনায়ক কিমের নামেই তাঁর নাম। চলতি বছরের শুরুর দিকে সন্তানসম্ভবা স্ত্রী, বৃদ্ধা মা ও ভাইয়ের পরিবার সহ দেশ থেকে পালিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় এসেছেন তিনি। তবে এমন একটি পথ ব্যবহার করে পরিবারটি পালিয়েছিল—স্বাভাবিক চিন্তায় যা অসম্ভব মনে হবে যে কারও কাছে। 

পরিবার নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থান করা কিমের সঙ্গে সম্প্রতি দেখা করেছিলেন বিবিসির সিউল প্রতিনিধি জিন ম্যাকিঞ্জি। পরে তাঁর কাছে পালানোর রুদ্ধশ্বাস ঘটনাটি বর্ণনা করেন কিম। এ বিষয়ে বুধবার ম্যাকিঞ্জির লেখা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছর কিমের পরিবারই প্রথম উত্তর কোরিয়া থেকে পালিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় এসেছে। দুর্যোগময় এক রাতে পালিয়েছিল পরিবারটি। দক্ষিণ দিক থেকে ধেয়ে আসছিল প্রচণ্ড বাতাস; এক সময় তা ঝড়ে রূপ নেয়। তবে ঝড়ো এমন রাতই কিমের পরিকল্পনার অংশ ছিল। তিনি আশা করেছিলেন, সমুদ্র উত্তাল থাকলে নজরদারি জাহাজগুলোও কিছুটা এলোমেলো থাকবে। আর এই সুযোগটিকেই কাজে লাগাতে হবে। 

পালানোর সেই দিনটির জন্য কিম বছরের পর বছর অপেক্ষা করেছিলেন, আর কয়েক মাস ধরে এর পরিকল্পনা সাজিয়েছিলেন। 

পালানোর দিন বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় কিমের ভাইয়ের সন্তানেরা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিল। কারণ তাদের খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছিলেন কিম, যেন পথে শিশুরা কোনো আওয়াজ না করে। অন্ধকারে সবাইকে নিয়ে কিম ও তাঁর ভাই এমন একটি পথ দিয়ে সমুদ্রের দিকে যাচ্ছিলেন যেখানে পুঁতে রাখা ছিল অসংখ্য মাইন। এ ছাড়াও ঘুরে ঘুরে তাঁদের দিকে আসছিল রক্ষীদের সার্চলাইটের আলো। ফলে খুব সাবধানে মাইন আর সার্চ লাইটের আলোকে পাশ কাটিয়ে পরিবার নিয়ে এগিয়ে চলেন তাঁরা। সমুদ্রের পাড়েই একটি আড়ালে তাঁদের ছোট্ট একটি কাঠের নৌকা বাঁধা ছিল। 

নৌকায় পৌঁছেই বাচ্চাদেরকে তাঁরা শস্য রাখার কয়েকটি বস্তায় ঢুকিয়ে ফেলেন। দেখে মনে হচ্ছিল, বস্তাগুলোর ভেতরে কোনো মালামাল রাখা আছে। কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির জন্য কিম ও তাঁর ভাইয়ের কাছে ছিল দুটি তলোয়ার। আর তাঁদের স্ত্রী ও মায়ের কাছে ছিল বিষ। এ ছাড়াও ডিমের কয়েকটি ফাঁকা খোসার ভেতরে তাঁরা মরিচের গুঁড়া ভরে নিয়েছিলেন এই ভেবে যে—রক্ষীদের কাছে ধরা পড়ে গেলে তাঁদের মুখে এগুলো ছুড়ে দিয়ে আত্মরক্ষার শেষ চেষ্টা চালানো হবে। 

এই নৌকায় চড়ে পালিয়েছিল কিমের পরিবার। ছবি: বিবিসিবয়স ত্রিশের কোঠায় এসে পরিবার নিয়ে বাড়ি থেকে বের হলেও অন্তত এক দশক আগে থেকেই এই স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন কিম। খুব অল্প বয়সেই নিজের দেশকে তাঁর কারাগারের মতো মনে হয়েছিল। তাই এই কারাগার ছেড়ে দক্ষিণে পালানোর স্বপ্ন দেখতেন তিনি। জীবিত অবস্থায় তাঁর বাবা তাঁকে নিয়ে প্রায় সময়ই লুকিয়ে লুকিয়ে টেলিভিশনে দক্ষিণ কোরিয়ার চ্যানেলগুলো দেখতেন। তাঁরা সীমান্তের এত কাছাকাছি থাকতেন যে-দক্ষিণ কোরিয়ার বেশ কিছু চ্যানেল টিভিতে দেখা যেত। টিভিতে দেখা দক্ষিণের মানুষগুলোকে মুক্ত মানুষ মনে হতো। যদিও দক্ষিণের চ্যানেল দেখার বিষয়টি ধরা পড়লে তাঁরা নিশ্চিত মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হতেন। গত বছরের এপ্রিলে দক্ষিণ কোরিয়ার গান শোনা ও সিনেমা দেখার অপরাধে একজনকে প্রকাশ্যে গুলি করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে দেখেছেন কিম। 

বছরের পর বছর ধরে উত্তর কোরিয়া থেকে পালানোর চিন্তা করলেও কিম কখনোই তাঁর পরিবারকে ফেলে রেখে যাওয়ার চিন্তা করেননি। তবে এই বিষয়টি পরিবারের কারও কাছেই তিনি প্রকাশ করেননি। ২০২২ সালেই প্রথম পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনায় পরিবারের সদস্যদের রাজি করানোর কথা ভাবেন তিনি। এ জন্য প্রথমেই তিনি তাঁর ভাইকে টার্গেট করেন। স্ত্রীকে নিয়ে ভাই অবৈধ সামুদ্রিক খাবারের একটি ব্যবসা পরিচালনা করতেন। পরে এই ধরনের ব্যবসায় রাষ্ট্রীয় কড়াকড়ি শুরু হলে তাঁর আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনায় তাঁকে সহজেই রাজি করাতে সক্ষম হয় কিম। 

পরবর্তী সাত মাস ধরে তাঁরা তাঁদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য খুব সাবধানে কাজ শুরু করেন। কাছাকাছি এলাকায় যেসব কোস্টগার্ড ও নিরাপত্তারক্ষী টহল দেয় কিম তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে শুরু করেন। গোপনে তাদের গতিবিধি, কাজের ধরন এবং শিফট বদলের বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা নিতে থাকেন। এভাবে একসময় তাঁরা পালিয়ে যেতে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। 

তবে এই পর্যায়ে এসে কিমের কাছে সবচেয়ে কঠিন কাজটি ছিল তাঁর বৃদ্ধ মা এবং স্ত্রীকে রাজি করানো। জানানোর পর দুজনই এর বিরোধিতা করেছিলেন। বিশেষ করে মা। পরে অবশ্য অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে মাকে রাজি করান দুই ভাই। 

আরেকটি বিষয় হলো—তত দিনে গর্ভধারণ করেছিলেন কিমের স্ত্রী। ফলে পালানোর ক্ষেত্রে এটি একটি প্রতিবন্ধকতা ছিল। যদিও অনাগত সন্তানের ভবিষ্যতের কথা বলেই শেষ পর্যন্ত স্ত্রীকে রাজি করান কিম। 

তারপর থেকেই একটি ঝড়ো রাতের জন্য অপেক্ষা করছিল পরিবারটি। গত ৬ মে ছিল তেমনই একটি রাত। সেই রাতে মাইনভূমি পেরিয়ে নৌকা নিয়ে তাঁরা উত্তাল সমুদ্রে রওনা করেন দক্ষিণ কোরিয়া অভিমুখে। উত্তর কোরিয়ার সীমানায় থাকা অবস্থায় নৌকার ইঞ্জিনের কোনো শব্দই পাচ্ছিলেন না কিম। এর বদলে থর থর করা হৃৎপিণ্ডের শব্দ শুনছিলেন শুধু। কারণ সামনেই দেখা যাচ্ছে মুক্তি। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর আগে ধরা পড়ে গেলেই পরিবারের সবার নিশ্চিত মৃত্যু। ঘেমে একাকার হয়ে গিয়েছিলেন কিম। 

ভয়ংকর বিষয় হলো—শেষ মুহূর্তে তাঁদের নৌকাটির দিকে একটি জাহাজ এগিয়ে আসতে দেখেছিল কিম। কিন্তু এটি শেষ পর্যন্ত তাঁদের আর ধরতে পারেনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা উত্তর পেরিয়ে দক্ষিণের জলসীমায় পৌঁছে যান। দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়নপিয়ং দ্বীপের কাছাকাছি গিয়ে তাঁরা নৌকার আলো জ্বালিয়ে দেন। দেশটির নৌবাহিনী তাঁদের উদ্ধার করে। পরে অবশ্য দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দাদের জেরার মুখে পড়েন তারা। একপর্যায়ে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হন যে—কিম ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা উত্তর কোরিয়ার গুপ্তচর নন। 

দক্ষিণ কোরিয়া ইনপিয়ং দ্বীপেই প্রথম পা রেখেছিল কিমের পরিবার। ছবি: এএফপিউত্তর কোরিয়া থেকে কেউ দক্ষিণ কোরিয়ায় পালিয়ে গেলে তাঁকে একটি পুনর্বাসন কেন্দ্রে রাখা হয়। মূলত দক্ষিণের জীবন সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এই কেন্দ্রে। কিমের পরিবারটি গত অক্টোবরে পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে একটি অ্যাপার্টমেন্টে স্থানান্তরিত হয়েছে। কিমের স্ত্রী ইতিমধ্যে একটি সন্তান প্রসব করেছেন। তিনি এখন অনেকটাই মানিয়ে নিয়েছেন। তবে কিমের মা সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার ব্যস্ত রাস্তা, পাতাল রেল এসবের মাঝে প্রায় সময়ই তিনি খেই হারিয়ে ফেলেন। দক্ষিণ কোরিয়ার চেয়ে উত্তর কোরিয়ার জীবনই তাঁর কাছে সহজ মনে হয়। 

এদিকে টেলিভিশন দেখে দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্কৃতির সঙ্গে আগে থেকেই পরিচিত ছিলেন বলে কিম সহজেই সবকিছু মানিয়ে নিচ্ছেন। তাঁর কাছে এখন মনে হয়—তিনি যে পৃথিবীর স্বপ্ন দেখতেন সেই পৃথিবীতেই এখন তিনি বাস্তবে হেঁটে বেড়াচ্ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

পপুলার ফার্মায় এক্সিকিউটিভ পদে চাকরি, সাপ্তাহিক ছুটি ২ দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জাপানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টাকে প্রতিহতের ঘোষণা উত্তর কোরিয়ার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন। ছবি: এএফপি
উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন। ছবি: এএফপি

জাপানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের যে কোনো প্রচেষ্টা কঠোরভাবে প্রতিহত করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম কেসিএনএ রোববার (২১ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, জাপানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা যে কোনো মূল্যে রোধ করা উচিত, কারণ এটি মানবজাতির জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘ইনস্টিটিউট ফর জাপান স্টাডিজ’-এর পরিচালক এক বিবৃতিতে বলেন, জাপানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টা শুধু এশিয়া নয়, পুরো বিশ্বের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করবে। তাঁর ভাষায়, ‘জাপানের পারমাণবিক হওয়ার প্রচেষ্টা মানবজাতির জন্য এক মহাবিপর্যয় বয়ে আনবে।’

যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ার এই প্রতিক্রিয়ার পেছনে রয়েছে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক কর্মকর্তার সাম্প্রতিক মন্তব্য। জাপানের বার্তা সংস্থা কিয়োদো নিউজের খবরে বলা হয়, ওই কর্মকর্তা প্রকাশ্যে বলেছেন, টোকিওর পারমাণবিক অস্ত্র রাখা উচিত।

এই প্রেক্ষাপটে উত্তর কোরিয়া দাবি করেছে, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন বা বেপরোয়া মন্তব্য নয়; বরং জাপানের বহুদিনের পারমাণবিক অস্ত্রায়নের আকাঙ্ক্ষারই প্রতিফলন।

উত্তর কোরিয়ার মতে, জাপান তাদের তথাকথিত ‘অ-পারমাণবিক নীতি’ পুনর্বিবেচনার কথা বলে কার্যত একটি ‘লাল রেখা’ অতিক্রম করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, জাপানের কর্মকর্তাদের মন্তব্যগুলোই বলে দিচ্ছে, টোকিও এখন প্রকাশ্যেই পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের বাসনা জানাচ্ছে।

উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আরও দাবি করেছে, যুক্তরাষ্ট্র যখন গত অক্টোবরে দক্ষিণ কোরিয়াকে একটি পারমাণবিক সাবমেরিন নির্মাণের অনুমোদন দেয়, তার পরপরই জাপানে এই ধরনের বক্তব্য জোরালো হতে শুরু করে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ংয়ের সঙ্গে বাণিজ্য ও নিরাপত্তা ইস্যুতে শীর্ষ বৈঠকের পর ওই অনুমোদন দিয়েছিলেন।

উত্তর কোরিয়ার ওই কর্মকর্তা সতর্ক করে বলেন—জাপান যদি পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করে, তবে এশিয়া ভয়াবহ পারমাণবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। তবে তিনি পিয়ংইয়ংয়ের নিজস্ব পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

ধারণা করা হয়, উত্তর কোরিয়া নিজেই একটি ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডারের অধিকারী। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান থাকার পরও দেশটি তার পারমাণবিক সক্ষমতা বজায় রাখা ও সম্প্রসারণের ঘোষণা দিয়ে আসছে। গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে উত্তর কোরিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী কিম সন গিয়ং বলেন—পারমাণবিক অস্ত্র তাদের রাষ্ট্রীয় আইন, জাতীয় নীতি এবং সার্বভৌম অধিকারের অংশ, যা তারা কোনো পরিস্থিতিতেই ত্যাগ করবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

পপুলার ফার্মায় এক্সিকিউটিভ পদে চাকরি, সাপ্তাহিক ছুটি ২ দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলার আরও একটি তেলের ট্যাংকার ধাওয়া করছে মার্কিন বাহিনী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ১৪
ক্যারিবিয়ান সাগরে পানামা পতাকাবাহী সেঞ্চুরি নামের একটি তেলবাহী জাহাজের ওপর মার্কিন সামরিক বাহিনীর টহল। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
ক্যারিবিয়ান সাগরে পানামা পতাকাবাহী সেঞ্চুরি নামের একটি তেলবাহী জাহাজের ওপর মার্কিন সামরিক বাহিনীর টহল। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

ভেনেজুয়েলা উপকূলে আন্তর্জাতিক জলসীমায় আরও একটি তেলের ট্যাংকার ধাওয়া করছে মার্কিন কোস্ট গার্ড। আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) তিনজন মার্কিন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এটি সফল হলে এক সপ্তাহের মধ্যে ভেনেজুয়েলাসংশ্লিষ্ট তিনটি তেলবাহী জাহাজ জব্দ করার ঘটনা ঘটবে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহে ভেনেজুয়েলার ওপর ‘সর্বাত্মক নৌ অবরোধ’ ঘোষণার পর থেকে এই চিরুনি অভিযান শুরু হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মার্কিন কোস্ট গার্ড বর্তমানে একটি তেল ট্যাংকারকে ধাওয়া করছে। তবে অভিযানের সুনির্দিষ্ট অবস্থান বা জাহাজটির পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

এই অভিযান নিয়ে হোয়াইট হাউস বা পেন্টাগন থেকে তাৎক্ষণিক কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

হোয়াইট হাউসের ন্যাশনাল ইকোনমিক কাউন্সিলের ডিরেক্টর কেভিন হ্যাসেট আজ জানিয়েছেন, এর আগে জব্দ করা দুটি ট্যাংকার ‘ব্ল্যাক মার্কেট’ বা কালোবাজারের মাধ্যমে বিভিন্ন নিষিদ্ধ দেশে তেল সরবরাহ করছিল।

কেভিন হ্যাসেট দাবি করেছেন, এই আটকের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে তেলের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। তাঁর মতে, এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা এবং কেবল কালোবাজারি জাহাজগুলোকেই লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে।

তবে বাজার বিশ্লেষক ও তেল ব্যবসায়ীরা ভিন্নমত পোষণ করছেন। একজন তেল ব্যবসায়ী রয়টার্সকে বলেন, এই ধরনের পদক্ষেপ ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আগামীকাল সোমবার এশিয়ার বাজারে তেলের দাম বাড়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা তেলের দামের এই ঊর্ধ্বগতিকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।

গত সেপ্টেম্বর থেকে প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর ওপর চাপ বাড়াতে ট্রাম্প প্রশাসন এই অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। গত কয়েক মাসে প্রশান্ত মহাসাগর ও ক্যারিবিয়ান সাগরে ভেনেজুয়েলাসংশ্লিষ্ট ভেসেলগুলোর ওপর অন্তত দুই ডজন সামরিক হামলা চালানো হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, এসব সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত অন্তত ১০০ জন নিহত হয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

পপুলার ফার্মায় এক্সিকিউটিভ পদে চাকরি, সাপ্তাহিক ছুটি ২ দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলায় মার্কিন হস্তক্ষেপ নিয়ে সতর্ক করলেন লুলা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। ছবি: সংগৃহীত
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান চাপ ও সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপ ‘ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়’ ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। তিনি মত দিয়েছেন, ভেনেজুয়েলায় কোনো ধরনের সশস্ত্র হস্তক্ষেপ শুধু ওই দেশের জন্য নয়, বরং পুরো পৃথিবীর জন্যই এক বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।

ব্রাজিলের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর ফোজ দো ইগুয়াসুতে দক্ষিণ আমেরিকার আঞ্চলিক জোট ‘মারকোসুর’-এর শীর্ষ সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে লুলা এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘ভেনেজুয়েলায় সশস্ত্র হস্তক্ষেপ একটি মানবিক বিপর্যয়ে রূপ নেবে। এটি এমন একটি নজির সৃষ্টি করবে, যা বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক হুমকি।’

এ বিষয়ে এক প্রতিবেদনে রোববার (২১ ডিসেম্বর) রয়টার্স জানিয়েছে, ভেনেজুয়েলা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনা সম্প্রতি আরও বেড়েছে। গত মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলায় যাতায়াতকারী সব নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘অবরোধ’ আরোপের নির্দেশ দেন। ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপকে নিকোলাস মাদুরো সরকারের ওপর চাপ বাড়ানোর নতুন কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে। ভেনেজুয়েলার অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি তেল খাতকে লক্ষ্য করেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

লুলা স্মরণ করিয়ে দেন, ফকল্যান্ডস যুদ্ধের চার দশকেরও বেশি সময় পর দক্ষিণ আমেরিকা আবারও অন্য মহাদেশীয় কোনো শক্তির সামরিক উপস্থিতির আশঙ্কায় ভুগছে। তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ আমেরিকা আবার এমন এক ভূতের ছায়ায় পড়ছে, যেখানে এই অঞ্চলের বাইরে থেকে আসা সামরিক শক্তি আমাদের শান্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।’

চলতি সপ্তাহের শুরুতেই লাতিন আমেরিকার দুই বৃহত্তম অর্থনীতির শীর্ষ নেতা ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দ্য সিলভা এবং মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেইনবাউম ভেনেজুয়েলা পরিস্থিতিতে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে গত শনিবারের বক্তব্যে লুলা আরও কঠোর দেখিয়েছেন।

‘মারকোসুর’ সম্মেলন শেষে দেওয়া এক যৌথ ঘোষণায় লাতিন আমেরিকার নেতারা ভেনেজুয়েলায় গণতান্ত্রিক নীতি ও মানবাধিকার রক্ষায় শান্তিপূর্ণ পথেই অগ্রসর হওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। এই ঘোষণায় আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে ও পানামার প্রেসিডেন্টদের পাশাপাশি বলিভিয়া, ইকুয়েডর ও পেরুর শীর্ষ কর্মকর্তারাও সমর্থন জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

পপুলার ফার্মায় এক্সিকিউটিভ পদে চাকরি, সাপ্তাহিক ছুটি ২ দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ট্রেনের ভাড়া বাড়ছে ভারতেও

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২৬ ডিসেম্বর থেকে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ছবি: সংগৃহীত
২৬ ডিসেম্বর থেকে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ছবি: সংগৃহীত

ভারতেও ট্রেনের ভাড়া বাড়ছে। পকেটে টান পড়তে যাচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের। ২৬ ডিসেম্বর থেকে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তবে স্বস্তির খবর হলো, লোকাল ট্রেনের ভাড়া অপরিবর্তিত থাকছে। মূলত দূরপাল্লার যাত্রীদের জন্যই এই বাড়তি ভাড়া কার্যকর হবে।

ভারতের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ঘোষণা অনুযায়ী, ভ্রমণের দূরত্ব ও কোচের ধরনভেদে নতুন ভাড়ার হার নির্ধারিত হবে। ২১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত সাধারণ শ্রেণিতে ভাড়ায় কোনো পরিবর্তন নেই। তবে ২১৫ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বের ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটারে এক পয়সা করে ভাড়া বাড়বে।

মেল বা এক্সপ্রেস ট্রেনের (নন-এসি) যাত্রীদের জন্য প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া বাড়বে দুই পয়সা। এসি কোচ বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোচের ক্ষেত্রেও কিলোমিটার প্রতি দুই পয়সা ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।

তবে যদি কোনো যাত্রী নন-এসি কোচে ৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন, নতুন নিয়ম অনুযায়ী তাঁকে আগের চেয়ে ১০ রুপি বেশি ভাড়া দিতে হবে।

কেন এই ভাড়া বৃদ্ধি

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত এক দশকে রেলপথ সম্প্রসারণের ফলে জনবল এবং অন্যান্য ব্যয় বহুগুণ বেড়েছে। রেলওয়ের বর্তমান জনবল ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি রুপিতে এবং পেনশনের পেছনে খরচ হচ্ছে ৬০ হাজার কোটি রুপি। সব মিলিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট পরিচালনা ব্যয় বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি রুপি।

যাত্রীদের ভাড়া ও পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে খরচ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে রেলওয়ে। এর আগে গত জুলাই মাসেও ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল (নন-এসিতে এক পয়সা ও এসিতে দুই পয়সা)। তারও আগে ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি বড় ধরনের ভাড়া বৃদ্ধি কার্যকর করা হয়েছিল, যেখানে এসি কোচে ভাড়া বেড়েছিল কিলোমিটার প্রতি চার পয়সা পর্যন্ত।

রেলওয়ে কর্মকর্তাদের মতে, উন্নত সেবা এবং ক্রমবর্ধমান ব্যয় মেটাতে এই সামান্য ভাড়া বৃদ্ধি অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল। কর্তৃপক্ষ আশা করছে, এই ভাড়া বৃদ্ধির ফলে রেলওয়ের বার্ষিক আয় প্রায় ৬০০ কোটি রুপি বাড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

পপুলার ফার্মায় এক্সিকিউটিভ পদে চাকরি, সাপ্তাহিক ছুটি ২ দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত