Ajker Patrika

নেপালে ঘনঘন বিমান দুর্ঘটনার কারণ কী?

আপডেট : ১৬ জানুয়ারি ২০২৩, ১৭: ০৬
নেপালে ঘনঘন বিমান দুর্ঘটনার কারণ কী?

নেপালে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা নতুন নয়। অ্যাভিয়েশন সেফটি ডেটাবেইজের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৩০ বছরে নেপালে ২৭টি মারাত্মক উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ২০ টিরও বেশি ঘটেছে গত দশকেই।

সবশেষ রোববার (১৫ জানুয়ারি) ইয়েতি এয়ারলাইনসের ‘৯ এন–এএনসি এটিআর–৭২’ মডেলের উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়। পুরোনো বিমানবন্দর ও পোখারা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মাঝামাঝি রানওয়েতে এই দুর্ঘটনা ঘটে। উড়োজাহাজটিতে ৭২ জন আরোহী ছিলেন। এর মধ্যে ৬৮ জন যাত্রী ও ৪ জন ক্রু। 

 এর আগে বড় দুর্ঘটনার মধ্যে ২০১৮ সালের ১২ মার্চ কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হয় বাংলাদেশের বেসরকারি উড়োজাহাজ সংস্থা ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজ। সেই দুর্ঘটনায় ৫১ জন নিহত হন। 

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের মে মাসে নেপালে তারা এয়ারের একটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে ২২ আরোহীর সবাই নিহত হন। ২২ আরোহীর মধ্যে ১৬ জন নেপালের, ৪ জন ভারতের ও ২ জন জার্মানির নাগরিক ছিলেন।

কাঠমান্ডুতে যাওয়ার সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হলে ১৬৭ আরোহীর সবাই নিহত হন। ১৯৯২ সালের পর এটি সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। 

 এর দুই মাস আগে, থাই এয়ারওয়েজের একটি উড়োজাহাজ একই বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হলে ১১৩ জনের মৃত্যু হয়। 

নেপাল এত বেশি উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা কেন? 
ভারতের সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন অনুসারে, নেপালে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার বেশির ভাগই দেশটির পাহাড়ি ভূপ্রকৃতি, নতুন উড়োজাহাজ এবং অবকাঠামোতে বিনিয়োগের অভাব এবং শিথিল নিয়মের কারণে ঘটে।

নেপালের আকাশপথগুলো পাহাড়ি এলাকার ওপর দিয়ে। হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত নেপালের আবহাওয়া খুব দ্রুত বদলায়। ফলে অবতরণের জন্য উড়োজাহাজগুলোকে বেশ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়। আর সেখান থেকেই ঘটে দুর্ঘটনা। 

 নেপালে সবচেয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। এই বিমানবন্দর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১ হাজার ৩৩৮ মিটার ওপরে। ভূখণ্ডটি খুবই প্রতিকূল। কারণ এটি সরু ডিম্বাকার উপত্যকায় অবস্থিত। চারপাশে সুউচ্চ পর্বতমালা। পাহাড়ি ভাঁজের কারণে উড়োজাহাজ অবতরণের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা পায় না। রানওয়েতে নামার জন্য একটি উড়োজাহাজকে উঁচু থেকে সোজা নেমে আসতে হয়। আর এই সময়ে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে। 

ত্রিভুবন বিমানবন্দরে টার্বোপ্রপ ইঞ্জিনসহ ছোট উড়োজাহাজ, যেমন—টুইন অটার—এখানে অবতরণ করতে পারে, তবে বড় জেটলাইনার নয়। এই ছোট উড়োজাহাজগুলো নেপালের অস্থিতিশীল ও প্রতিকূল আবহাওয়ার জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এ কারণে অনেক পাইলট ত্রিভুবন বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ চালাতে চান না।

 কী করা যেতে পারে? 
২০২২-এর ৩০ মে, তারা এয়ার জেটের একটি উড়োজাহাজকে পাহাড়ের ধারে বিধ্বস্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। উড়োজাহাজটিতে থাকা ২২ আরোহীর সবাইকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। পোখারা-জোমসোম রুটে গত তিন দশকে বেশ কয়েকটি মারাত্মক উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার মধ্যে এটি অন্যতম।

ঘটনার পর নেপালে আকাশপথের ভ্রমণ কীভাবে নিরাপদ করা যায় এ নিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেই প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞদের মতামত উদ্ধৃত করে বলা হয়, এ ধরনের বিমানবন্দরগুলোতে পুরোনো মডেলের উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ করতে হবে। কারণ, পুরোনো মডেলের উড়োজাহাজগুলোতে আধুনিক রাডার ব্যবস্থা নেই, এটি দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তারা জেট ১৯৭৯ সালে প্রথম ফ্লাইট পরিচালনা করে। এতে জিপিএস প্রযুক্তি ছিল না, থাকলে হয়তো পাইলট প্রযুক্তির সহায়তায় জীবন বাঁচাতে পারতেন। কারণ দৃষ্টির সামনে কোনো বাধা থাকলে তখন জিপিএসের ওপর ভরসা করা ছাড়া উপায় থাকে না। 

অভিজ্ঞ পাইলট ক্যাপ্টেন বেড আপ্রেটি দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, পাইলটেরা ৪৩ বছর বয়সী উড়োজাহাজ ওড়াতে পারেন না। তিনি ব্যাখ্যা করেন, নেপালে বেশির ভাগ ফিক্সড-উইং এয়ারক্রাফট দুর্ঘটনা ঘটে উড্ডয়নের পরপরই এবং অতরণের সময়। আর এই উড়োজাহাজগুলো নেপালের দর্শনীয় স্থান যেমন জোমসোম বা লুকলার মতো দুর্গম জায়গায় যাত্রীদের নিয়ে যায়। মাউন্ট এভারেস্ট দেখার জন্য এগুলো খুবই জনপ্রিয় স্থান। বিশেষ করে এগুলো যদি হয় স্টল এয়ারক্রাফট, তাহলে এই প্রযুক্তি অথবা প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি না থাকার কারণে নেপালের মতো আকাশে উড্ডয়ন অত্যন্ত বিপজ্জনক। 

 নেপাল সরকারের একজন জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ ডা. অর্চনা শ্রেষ্ঠা দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ১০ হাজার ফুটের নিচে চলাচল করা অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট রুটগুলোতে তাঁরা প্রয়োজনীয় আবহাওয়া পরিষেবা দিতে অক্ষম। তাই নেপালের বিমানবন্দরগুলোতে অবতরণ বা উড্ডয়নের সময় পাইলটদের প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করা যায় না। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে হলে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ এবং পূর্বাভাসে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। আবহাওয়াসংক্রান্ত পরিষেবা সরবরাহের জন্য বিমানবন্দরের প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন করতে হবে। 

এ ছাড়া পুরোনো মডেলের উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ করে আধুনিক মডেলগুলোর জন্যই শুধু রানওয়ে সংরক্ষণ এবং একই সঙ্গে সমতলে নতুন বিমানবন্দর নির্মাণের পরামর্শও দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ওডিশায় পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম তরুণকে ‘বাংলাদেশি’ বলে পিটিয়ে হত্যা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
জুয়েল রানা। ছবি: সংগৃহীত
জুয়েল রানা। ছবি: সংগৃহীত

পশ্চিমবঙ্গের সুতি থানার বিশ বছরের তরুণ জুয়েল রানা। মা-বাবার একমাত্র সন্তান। মাত্র ৫ দিন আগে রাজমিস্ত্রির কাজ নিয়ে ওডিশার সম্বলপুরে পা রেখেছিলেন। নিজ রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে বাইরে কাজ করতে যাওয়া সেই প্রথম। কিন্তু এই যাওয়াই তাঁর শেষ যাওয়া। গত মঙ্গলবার রাতে একদল উন্মত্ত জনতার হাতে প্রাণ হারাতে হয়েছে তাঁকে। অভিযোগ—জুয়েল রানা ‘বাংলাদেশি।’

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, জুয়েল রানার সঙ্গে থাকা পশ্চিমবঙ্গের আরও দুই পরিযায়ী শ্রমিক গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। এই ঘটনায় ওডিশা পুলিশ এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

সুতি থানায় দেওয়া এক লিখিত অভিযোগে জুয়েল রানার মা নাজমা বিবি জানিয়েছেন, ২০ ডিসেম্বর তাঁর ছেলে সম্বলপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। তিনি বলেন, ‘২৪ ডিসেম্বর রাত সাড়ে আটটা নাগাদ একটা ফোন পাই। জানতে পারি ওডিশায় যেখানে ওরা থাকত, তার কাছেই সাত-আটজন স্থানীয় লোক আমার ছেলে আর ওর সহকর্মীদের ওপর চড়াও হয়েছে। ওরা আমার ছেলেকে ‘বাংলা বলা বাংলাদেশি’ বলে গালি দিচ্ছিল আর মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছিল।’

নাজমা বিবি আরও বলেন, ‘এ কথা বলতে বলতেই ওরা লাঠি, লোহার রড আর ধারালো অস্ত্র নিয়ে আমার ছেলে আর ওর বন্ধুদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। আমার ছেলে ওখানেই মারা যায়, বাকিরা এখন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।’ জুয়েলের বাবা জিয়াউল হক নিজেও একজন রাজমিস্ত্রি, তিনি বর্তমানে কেরালায় কর্মরত।

ওডিশা পুলিশের দাবি, দানিপালি এলাকায় একটি নির্মীয়মাণ ভবনে এই ঝামেলার সূত্রপাত। স্থানীয় কিছু যুবক ওই শ্রমিকদের কাছে বিড়ি চেয়েছিল। এরপর তর্কের মাঝেই যুবকেরা শ্রমিকদের আধার কার্ড দেখতে চায় এবং মুহূর্তেই সেই বিবাদ সহিংস রূপ নেয়। সম্বলপুরের এসপি মুকেশ ভামু বলেন, ‘একজন মারা গেছেন এবং দুজন আহত। পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এর সঙ্গে আর কেউ জড়িত থাকলে তাদেরও ছাড়া হবে না।’

নওশাদ আলি নামে মুর্শিদাবাদের এক যুবক এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি জানান, শ্রমিকেরা আগুনের পাশে বসে শরীর গরম করছিল। তখন কিছু স্থানীয় যুবক এসে বিড়ি চায়। বিড়ি নেওয়ার পরপরই তারা লোকগুলোকে বাংলাদেশি বলে গালি দিতে শুরু করে এবং মারধর শুরু করে।

বৃহস্পতিবার সুতি ব্লকের প্রশাসনিক কর্মকর্তা, পুলিশ এবং তৃণমূল বিধায়ক ইমানি বিশ্বাস নিহত জুয়েলের বাড়িতে গিয়ে তাঁর মায়ের সঙ্গে দেখা করেন। বিধায়ক অভিযোগ করেছেন, হামলাকারীরা শ্রমিকদের ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিতে বাধ্য করেছিল। তিনি বলেন, ‘আমরা দ্রুত মরদেহ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি।’

এই ঘটনায় সম্বলপুরে থাকা বাঙালি শ্রমিকদের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। মাজহার খান নামে অন্য এক রাজমিস্ত্রি আক্ষেপ করে বললেন, ‘আমাদের প্রায়ই বাংলাদেশি মনে করে হেনস্তা করা হয়। মানুষ সন্দেহ করে, গালি দেয়, আক্রমণ করে। আমরা সরকারের কাছে নিরাপত্তা চাইছি।’

পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম বলেন, ‘আবারও বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাঙালি শ্রমিকদের ওপর হামলা হলো। বিজেপি গুন্ডারা তাদের ওপর আক্রমণ করে অনুপ্রবেশকারী তকমা দিচ্ছে। আর কত প্রাণ চায় ওরা? বাঙালিদের প্রতি বিজেপির মনোভাব ঠিক কেমন, এটা তারই প্রমাণ।’

রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে বাঙালি শ্রমিকেরা ক্রমাগত নিগৃহীত হচ্ছে, খুন হচ্ছে। বিজেপির নেতারা কেন চুপ? কেন বারবার এমন জঘন্য অপরাধ ঘটছে?’ তবে ওডিশার আইজিপি হিমাংশু লাল দাবি করেছেন, ঝামেলার মূলে ছিল টাকার লেনদেন নিয়ে কোনো বিবাদ, যা হুট করেই চরমে পৌঁছায়। তিনি আরও জানান, এই ঘটনার পেছনে সাম্প্রদায়িক বা ভাষাগত কোনো কারণ নেই এবং সায়েন্টিফিক তদন্ত চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘বাংলাদেশি’ তকমায় এক বছরে ২২০০ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে ভারত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

চলতি বছরে ভারতের বিজেপি সরকার তথাকথিত ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ ইস্যুতে বেশ সরব ছিল। নানা রাজনৈতিক বক্তব্যে এবং আলোচনায় তথাকথিত ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ ইস্যুটিকে তুলে আনা হয়েছে। এমনকি নির্বাচনী প্রচারণার মোদ্দা হিসেবেও ব্যবহার করা হয়েছে এই তকমা। তবে ভারত সরকার সেখানেই থেকে থাকেনি। কোনো ধরনের প্রমাণাদি ছাড়াই তারা ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে অন্তত ২ হাজার ২০০ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, তথাকথিত ‘অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযানে ২০২৫ সালে রেকর্ড সংখ্যক ২ হাজার ২০০ জন বাংলাদেশি নাগরিককে নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়েছে দিল্লি পুলিশ।’ সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ সংখ্যা। বৈধ অনুমতি ছাড়া দেশে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকদের শনাক্ত ও প্রত্যাবাসনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কঠোর নির্দেশের পরই এই তৎপরতা বৃদ্ধি পায়।

বিগত বছরগুলোর পরিসংখ্যানের তুলনায় এবারের অভিযানের ব্যাপকতা নজিরবিহীন। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ২০২৪ সালে ১৪ জনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছিল, ২০২৩ সালে ৫ জন এবং ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ৫০ জন। ২০২৫ সালে এই নাটকীয় বৃদ্ধি এটাই প্রমাণ করে যে, জাতীয় রাজধানীর সীমান্ত ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিতের নামে দিল্লি পুলিশ লক্ষ্যবস্তু করে তথাকথিত অভিযান চালানো হচ্ছে।

দিল্লি পুলিশের মতে, যাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে তারা জাল নথিপত্র ব্যবহার করে দিল্লির বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করছিল। তদন্তে প্রকাশ পেয়েছে, এই ব্যক্তিরা স্থানীয় জনসমষ্টির সঙ্গে মিশে যেতে এবং সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেতে ভুয়া আধার কার্ড, জাল ভোটার আইডি কার্ড এবং অন্যান্য জাল সরকারি পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেছিল।

তবে কোনো তথ্যপ্রমাণ হাজির করেনি দিল্লি পুলিশ। এমনকি দিল্লি পুলিশ বা ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো কখনোই যাদের ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে তাদের পরিচয়ের ব্যাপারে কোনো তথ্য–প্রমাণ দেয়নি। বরং, এমনও একাধিক ঘটনা আছে, যেখানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম বাঙালিদের বাংলাদেশের ভেতরে ঠেলে পাঠানো হয়েছিল। এমনকি আসামেও একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে প্রমাণ আছে। পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের সোনালী খাতুন এবং আসামের সকিনা বিবি ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে জোর করে ভারতীয় বাংলাভাষী মুসলিমদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর জাজ্বল্যমান প্রমাণ।

খোদ ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্যই বলছে, অন্তঃসত্ত্বা ভারতীয় নাগরিক সোনালী খাতুন এবং তাঁর পরিবারের পাঁচ সদস্যকে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ তকমা দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয় চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে। প্রায় চার মাস ধরে চরম দুর্ভোগ পোহানোর পর অবশেষে বিচারিক আদেশে তাঁদের ভারতে প্রত্যাবর্তনের পথ প্রশস্ত হয়। চলতি মাসের শুরুর দিকে তিনি ভারতেও ফিরে যান। আদালতের আদেশ থেকে স্পষ্ট যে, দিল্লিতে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করা পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের এই দরিদ্র বাসিন্দাদের ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে আধার কার্ড থাকা সত্ত্বেও দিল্লি পুলিশ তাঁদের সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছিল।

একইভাবে সকিনা বিবিকেও বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়। বাংলাভাষী ভারতীয় মুসলিম এই নারী ২০১৬ সাল থেকে সকিনা কোকরাঝাঁড় ডিটেনশন সেন্টারে আটক ছিলেন। ২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের আদেশে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর তাঁকে নিয়মিতভাবে নলবাড়ি থানায় হাজিরা দিতে হতো। তিনি সর্বশেষ এই বছরের ২৫ মে থানায় হাজিরা দেন—এরপর থেকে তাঁর পরিবার তাঁকে খুঁজে পায়নি।

আসামের নলবাড়ি জেলার বারকুরা গ্রামের বাসিন্দা সকিনা বেগমকে গত মে মাসে তাঁর বাড়ি থেকে হেফাজতে নেয় আসাম পুলিশ। এরপর তিনি দীর্ঘদিন নিখোঁজ ছিলেন এবং তাঁর পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি। জুনের প্রথম সপ্তাহে সকিনাকে ঢাকার মিরপুর ভাষানটেক এলাকায় রাস্তার পাশে একজন পথচারী খুঁজে পান। এরপর তিনি কাশিমপুর কারাগারে কিছুদিন বন্দী ছিলেন। পরে আদালতের হস্তক্ষেপে তাঁর মুক্তির পথ প্রশস্ত হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অরুণাচলকে চীনের ‘মূল স্বার্থ’ বলছে পেন্টাগন, ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান বেইজিংয়ের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৫৭
অরুণাচলকে চীনের মূল স্বার্থ বলে উল্লেখ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: এএফপি
অরুণাচলকে চীনের মূল স্বার্থ বলে উল্লেখ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: এএফপি

মার্কিন কংগ্রেসে পেশ করা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ পেন্টাগনের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে অরুণাচল প্রদেশের ওপর চীনের দাবিকে তাদের ‘কোর ইন্টারেস্ট’ বা মূল স্বার্থ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই স্বার্থগুলোর বিষয়ে চীন কোনো ধরনের আলোচনা বা আপস করতে রাজি নয়। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, চীনের নেতৃত্ব তাদের ‘মূল স্বার্থে’র পরিধি আরও বাড়িয়ে এখন তাইওয়ান, দক্ষিণ চীন সাগরের সার্বভৌমত্ব ও সামুদ্রিক বিরোধ, সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জ এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য অরুণাচল প্রদেশকেও অন্তর্ভুক্ত করেছে।

মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, ২০৪৯ সালের মধ্যে ‘চীনা জাতির মহান পুনর্জাগরণের’ জন্য চীন ও এই বিতর্কিত অঞ্চলগুলোর একীকরণ একটি ‘স্বাভাবিক আবশ্যকতা।’ এই ‘পুনর্জাগরণ’ সম্পন্ন হলে চীন বিশ্বমঞ্চে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে এবং এমন এক ‘বিশ্বমানের’ সামরিক বাহিনী গড়ে তুলবে, যা যেকোনো যুদ্ধে ‘লড়তে ও জিততে’ সক্ষম হবে। একই সঙ্গে এই বাহিনী বেইজিংয়ের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের স্বার্থ অত্যন্ত ‘দৃঢ়ভাবে রক্ষা’ করবে।

নথিতে চীনের পুনর্জাগরণের জন্য তিনটি মূল স্বার্থের কথা বলা হয়েছে, যেখানে কোনো সমঝোতার সুযোগ নেই। এর মধ্যে রয়েছে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা, অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রসার এবং চীনের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক দাবির প্রতিরক্ষা ও সম্প্রসারণ।

মূল্যায়নে আরও দেখা গেছে, সিপিসি তাদের শাসনের প্রতি যেকোনো অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক হুমকি বা সমালোচনার বিষয়ে অত্যন্ত সংবেদনশীল। বিশেষ করে চীনা স্বার্থ রক্ষায় তারা ব্যর্থ হচ্ছে, এমন কোনো সমালোচনা তারা সহ্য করে না।

ভারত-চীন সম্পর্কের বিষয়ে প্রতিবেদনে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার (এলএসি) পরিস্থিতির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের অক্টোবরে ব্রিকস সম্মেলনের ফাঁকে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের দুই দিন আগে ভারত সরকার চীনের সঙ্গে এলএসির অমীমাংসিত স্থানগুলো থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার চুক্তির কথা ঘোষণা করে।

এই বৈঠকের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের মাসিক আলোচনার পথ উন্মুক্ত হয়। যেখানে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা এবং পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে সরাসরি বিমান চলাচল, ভিসা সুবিধা সহজীকরণ এবং শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিকদের বিনিময়ের মতো বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়।

যদিও চীন এলএসিতে উত্তেজনা কমিয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্থিতিশীল করতে চায়, যার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ভারত-মার্কিন সম্পর্ক যেন আরও গভীর হতে না পারে। তবে প্রতিবেদনটিতে এ-ও বলা হয়েছে, ভারত সম্ভবত চীনের কাজ ও উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দিহান থাকবে। পারস্পরিক অবিশ্বাস ও অন্যান্য অস্বস্তিকর বিষয়গুলো দুই দেশের সম্পর্কের উন্নতিকে সীমিত করে রাখবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে পেন্টাগনের এই প্রতিবেদনকে প্রত্যাখ্যান করেছে চীন। তাদের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্র বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা বয়ান ছড়িয়ে বিভেদ সৃষ্টি করতে চাইছে। তারা দাবি করেছে, ভারতের সঙ্গে সীমান্ত উত্তেজনা হ্রাসের বিষয়টি ব্যবহার করে বেইজিং ভারত-মার্কিন সম্পর্ক নষ্ট করতে চাইছে—পেন্টাগনের এমন দাবি ভিত্তিহীন।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘পেন্টাগনের এই প্রতিবেদন চীনের প্রতিরক্ষা নীতিকে বিকৃত করেছে এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে চীনের বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করছে। মূলত নিজেদের সামরিক আধিপত্য বজায় রাখতেই যুক্তরাষ্ট্র এমন অজুহাত খুঁজছে।’ চীন এই প্রতিবেদনের তীব্র বিরোধিতা করছে বলে তিনি জানান।

পৃথকভাবে চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাং শিয়াওগাংও এই প্রতিবেদনের নিন্দা জানিয়েছেন। প্রতিবেদনে পাকিস্তান ও চীনের প্রতিরক্ষা ও মহাকাশ গবেষণার সহযোগিতা এবং সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের পরিকল্পনার যে উল্লেখ রয়েছে, ঝাং সেটিকে চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বছরের পর বছর ধরে এসব মনগড়া প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। তারা চীনের প্রতিরক্ষা নীতিকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করছে এবং আমাদের সামরিক বাহিনীর স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডকে কলঙ্কিত করছে।’

ঝাং আরও বলেন, প্রতিবেদনটি ভূরাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিভ্রান্ত করতে ‘চীনা সামরিক হুমকি’র বিষয়টি বাড়িয়ে বলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রকে এই ধরনের মিথ্যা বয়ান এবং উসকানি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে লিন জিয়ান জানান, বেইজিং দিল্লির সঙ্গে সম্পর্ককে কৌশলগত ও দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে। তিনি বলেন, ‘আমরা ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ শক্তিশালী করতে, পারস্পরিক আস্থা বাড়াতে এবং মতপার্থক্য সঠিকভাবে পরিচালনা করে একটি স্থিতিশীল সম্পর্ক এগিয়ে নিতে প্রস্তুত।’

এলএসি প্রসঙ্গে লিন স্পষ্ট করে বলেন, ‘সীমান্ত সমস্যা চীন ও ভারতের নিজস্ব বিষয়। বর্তমানে সীমান্ত পরিস্থিতি মোটের ওপর স্থিতিশীল এবং দুই দেশের যোগাযোগের পথও খোলা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো দেশের ভিত্তিহীন মন্তব্য চীন মেনে নেবে না।’

২০২৫ সালের জন্য প্রকাশিত এই বার্ষিক প্রতিবেদনে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ আরও বলেছে, চীন সম্ভবত পাকিস্তানের মতো দেশগুলোতে অতিরিক্ত সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের পরিকল্পনা করছে। পাকিস্তানের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, সেখানে বেইজিং সামরিক সুবিধা বাড়ানোর বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাশিয়ার দখলে থাকা ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র ক্রিপ্টোমাইনিংয়ে কাজে লাগাতে চান ট্রাম্প: পুতিন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৩৭
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: সংগৃহীত

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, রাশিয়ার দখলে থাকা ইউক্রেনে অবস্থিত জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র ক্রিপ্টোমাইনিংয়ে কাজে লাগাতে চান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রুশ সংবাদমাধ্যম আরটি দেশটির অর্থনীতিকেন্দ্রিক সংবাদমাধ্যম কমারস্যান্তের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে।

রুশ সংবাদমাধ্যম কমারস্যান্তের বরাতে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, জাপোরোজিয়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে (জেডএনপিপি) প্রস্তাবিত অংশীদারিত্ব ব্যবহার করে ওয়াশিংটন সেখানে ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং কার্যক্রম চালাতে আগ্রহী।

২০২২ সাল থেকে কেন্দ্রটি সম্পূর্ণভাবে রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে এবং খবর পাওয়া গেছে যে, এটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইউক্রেন শান্তির জন্য প্রস্তাবিত ২৮ দফার রোডম্যাপে স্থান পেয়েছে।

বাণিজ্য বিষয়ক দৈনিক কমারস্যান্ত বৃহস্পতিবার জানায়, পুতিন বলেছেন যে—চলমান রুশ-মার্কিন আলোচনায় মার্কিন প্রেসিডেন্টের দূতরা মস্কোর সাথে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ ভাগ করে নিতে এবং ওয়াশিংটনের অংশ ব্যবহার করে ক্রিপ্টো মাইনিং করতে আগ্রহ দেখিয়েছেন।

তিনি আরও জানিয়েছেন, এই কেন্দ্র থেকে আবারও ইউক্রেনকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার একটি মার্কিন প্রস্তাবও মস্কো বিবেচনা করছে।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, পুতিনের বিশেষ দূত কিরিল দিমিত্রিভ সম্প্রতি মিয়ামি থেকে ফেরার পর, ‘শাটল ডিপ্লোম্যাসি—shuttle diplomacy’—এর সর্বশেষ ধাপে ওয়াশিংটনের দেওয়া একটি পাল্টা প্রস্তাব বর্তমানে রাশিয়া বিশ্লেষণ করছে।

এর এক দিন আগে ভ্লাদিমির জেলেনস্কি তাঁর নিজস্ব একটি খসড়া পরিকল্পনা উন্মোচন করেন, যেখানে তিনি রাশিয়ার দখলে থাকা এই পারমাণবিক কেন্দ্রটি ইউক্রেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ৫০/৫০ ভিত্তিতে নিয়ন্ত্রণের দাবি জানিয়েছেন।

ইউক্রেনীয় নেতা মস্কোর কাছ থেকে আঞ্চলিক ছাড় দেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন, যদিও বর্তমানে যুদ্ধের সামনের সারিতে রুশ বাহিনী সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। তিনি ইউক্রেনের জন্য ৮ লাখ সৈন্যের একটি শান্তিকালীন সেনাবাহিনী রাখা এবং ওয়াশিংটন, ন্যাটো ও ইউরোপীয় মিত্রদের কাছ থেকে ন্যাটোর ‘আর্টিকেল-৫’ এর মতো নিরাপত্তা নিশ্চয়তার দাবি জানিয়েছেন।

মস্কো দাবি করে আসছে যে, ইউক্রেন এবং তার পশ্চিম ইউরোপীয় পৃষ্ঠপোষকরা এমন সব শর্ত যোগ করছে, যা রাশিয়ার জন্য গ্রহণ করা একেবারেই অসম্ভব এবং এর মাধ্যমে তারা মার্কিন শান্তি প্রচেষ্টাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বাধাগ্রস্ত করছে।

ক্রেমলিনের বৈদেশিক নীতি বিষয়ক উপদেষ্টা এবং জ্যেষ্ঠ রুশ আলোচক ইউরি উশাকভ এই সপ্তাহের শুরুর দিকে বলেছিলেন, তারা যেসব ধারা অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করেছে তা ‘নথিগুলোর উন্নতি ঘটায়নি কিংবা দীর্ঘমেয়াদী শান্তিতে পৌঁছানোর সম্ভাবনাও তৈরি করেনি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত