Ajker Patrika

দুটি সমস্যা সমাধান হলেই ইউক্রেন যুদ্ধ শেষের চুক্তি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ট্রাম্প গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে পারলেও ইউক্রেনে ব্যর্থ হচ্ছেন মূলত অঞ্চলটিতে তাঁর প্রভাব বলয়ের ব্যর্থতার কারণে। ছবি: সংগৃহীত
ট্রাম্প গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে পারলেও ইউক্রেনে ব্যর্থ হচ্ছেন মূলত অঞ্চলটিতে তাঁর প্রভাব বলয়ের ব্যর্থতার কারণে। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউক্রেন বিষয়ক দূত জানিয়েছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার জন্য একটি চুক্তি ‘সত্যিই খুব কাছাকাছি।’ শুধু দুটি প্রধান সমস্যার সমাধান বাকি। তবে ক্রেমলিন বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের কিছু প্রস্তাবে আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

নিজেকে ‘শান্তির দূত’ হিসেবে স্মরণীয় করে রাখতে চাওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের এই মারাত্মক সংঘাত থামানো তাঁর প্রেসিডেন্সির সময়কালের অন্যতম অধরা বিদেশনীতির লক্ষ্য হয়ে রয়েছে।

রাশিয়ার মদতপুষ্ট বিচ্ছিন্নতাবাদী আর ইউক্রেনীয় বাহিনীর মধ্যে দনবাস (দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল নিয়ে গঠিত) অঞ্চলে আট বছর ধরে চলা লড়াইয়ের পর ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করে। ট্রাম্পের ইউক্রেন বিষয়ক বিশেষ দূত কিথ কেলগ আগামী জানুয়ারিতে পদত্যাগ করতে চলেছেন। তিনি গতকাল রোববার রিগান ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোরামে বলেছেন, সংঘাত মেটানোর প্রচেষ্টা ‘শেষ ১০ মিটারের’ মধ্যে আছে, যা সব সময়ই সবচেয়ে কঠিন।

কেলগ জানিয়েছেন, যে দুটি প্রধান সমস্যা এখনও অমীমাংসিত রয়েছে—তার মধ্যে একটি হলো ভূখণ্ড। মূলত দনবাসের ভবিষ্যৎ। অন্যটি হলো—ইউরোপের বৃহত্তম জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভবিষ্যৎ, যা এখন রাশিয়ার দখলে।

ক্যালিফোর্নিয়ার সিমি ভ্যালিতে রোনাল্ড রেগান প্রেসিডেনশিয়াল লাইব্রেরি ও জাদুঘরে কেলগ বলেন, ‘আমরা যদি এই দুটি সমস্যার সমাধান করতে পারি, তবে আমার মনে হয় বাকি সবকিছুই বেশ ভালোভাবে মিটে যাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রায় পৌঁছে গেছি।’ কেলগ জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা সত্যি, সত্যি খুব কাছাকাছি।’

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গত সপ্তাহে ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনারের সঙ্গে ক্রেমলিনে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা বৈঠকের পুতিনের প্রধান বিদেশনীতি বিষয়ক সহকারী ইউরি উশাকভ জানিয়েছিলেন যে ‘ভূখণ্ডগত সমস্যা’ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

ক্রেমলিনের ভাষায় এর মানে হলো, রাশিয়া পুরো দনবাসের ওপর তাদের দাবি জানাচ্ছে। যদিও ইউক্রেন এখনও ওই অঞ্চলের অন্তত ৫ হাজার বর্গকিলোমিটার নিয়ন্ত্রণ করছে। প্রায় সব দেশই দনবাসকে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গণভোট ছাড়া দোনেৎস্কের বাকি অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়াটা বেআইনি হবে এবং এর ফলে রাশিয়া ভবিষ্যতে ইউক্রেনের গভীরে আক্রমণ করার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম পেয়ে যাবে।

রুশ সংবাদমাধ্যম রোববার উশাকভের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ইউক্রেন সংক্রান্ত ‘নথিপত্রগুলোতে আমেরিকাকে গুরুতর, আমি বলব, মৌল পরিবর্তন’ আনতে হবে। মস্কো ঠিক কী ধরনের পরিবর্তন চাইছে, সে ব্যাপারে তিনি স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। জেলেনস্কি শনিবার জানিয়েছেন, উইটকফ এবং কুশনারের সঙ্গে তার দীর্ঘ ও ফোনালাপ হয়েছে। ক্রেমলিন বলেছে, তারা আশা করছে সম্ভাব্য চুক্তিটির খসড়া তৈরির প্রধান কাজটি কুশনার করবেন।

ভিয়েতনাম, পানামা ও ইরাকে দায়িত্ব পালন করা সাবেক লেফটেন্যান্ট জেনারেল কেলগ বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে প্রাণহানি ও আহতের মাত্রা ‘ভয়াবহ’ এবং আঞ্চলিক যুদ্ধের দিক থেকে দেখলে এটি নজিরবিহীন। কেলগ বলেন, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে রাশিয়া এবং ইউক্রেন উভয় পক্ষে সম্মিলিতভাবে ২০ লাখের বেশি হতাহত হয়েছে। রাশিয়া বা ইউক্রেন কেউই তাদের ক্ষতির বিশ্বাসযোগ্য হিসাব প্রকাশ করে না।

রাশিয়া বর্তমানে ইউক্রেনের ১৯ দশমিক ২ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। এর মধ্যে আছে ২০১৪ সালে দখল করা ক্রিমিয়া, সমগ্র লুহানস্ক, দোনেৎস্কের ৮০ শতাংশের বেশি, খেরসন ও জাপোরিঝিয়ার প্রায় ৭৫ শতাংশ এবং খারকিভ, সুমি, মিকোলাইভ ও নিপ্রোপেত্রোভস্ক অঞ্চলের কিছু অংশ।

গত মাসে ফাঁস হওয়া ২৮টি মার্কিন শান্তি প্রস্তাবের একটি খসড়া ইউক্রেনীয় ও ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছিল। তাদের দাবি—ন্যাটো, ইউক্রেনের এক-পঞ্চমাংশ এলাকার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ এবং ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর ওপর বিধিনিষেধের মতো মস্কোর প্রধান দাবিগুলোর কাছে এটি নতি স্বীকার করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কাজের চাপে মাঠকর্মীদের মৃত্যুতে ভ্রুক্ষেপ নেই ভারতীয় নির্বাচন কমিশনের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কাজের চাপে মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের মৃত্যু হলেও তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই ভারতের নির্বাচন কমিশনার। ছবি: সংগৃহীত
কাজের চাপে মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের মৃত্যু হলেও তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই ভারতের নির্বাচন কমিশনার। ছবি: সংগৃহীত

কয়েক দিন আগে ভারতের উত্তর প্রদেশের স্কুলশিক্ষক সর্বেশ কুমারকে তাঁর বাড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। মৃত্যুর আগে তিনি নাকি একটি ভিডিও বানিয়েছিলেন, যেখানে তাঁকে কাঁদতে দেখা যায়। সেখানে তিনি নির্বাচনী কাজের চাপের কথা বলেছিলেন এবং সময়মতো কাজটি শেষ করতে না পারায় খুবই হতাশ ছিলেন।

ভিডিওতে তিনি বলেছিলেন, ‘বিশ দিন ধরে আমি এক ফোঁটা ঘুমাতে পারিনি। হাতে যদি একটু সময় থাকত, তা হলে এই কাজটা শেষ করে দিতে পারতাম।’ সর্বেশ ছিলেন সেই সব হাজার হাজার সরকারি কর্মীর একজন, যাদের গত ৪ নভেম্বর থেকে ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৫০ কোটিরও বেশি ভোটারের তালিকা তৈরির কাজে নামানো হয়েছিল।

ভারত সরকার পরিচালিত স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন বা বিশেষ নিবিড় সংশোধনী—এসআইআর নামে পরিচিত এই কর্মসূচির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন (ইসি) চাইছে, প্রত্যেক যোগ্য ভোটারের নাম তালিকায় তোলা হোক এবং অযোগ্য নামগুলো বাতিল করা হোক।

সাধারণত সরকারি স্কুলশিক্ষক, কর্মচারী ও চুক্তিভিত্তিক কর্মীরা বুথ লেভেল অফিসার বা বিএলও হিসেবে ইসির তৃণমূল পর্যায়ের কর্মী হিসেবে কাজ করেন। তাঁরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফরম বিতরণ করেন, কাগজপত্র যাচাই করেন, নানা প্রশ্নের জবাব দেন ও নির্ভুল তথ্য আপলোড করেন। এই পুরো কাজের সময়সীমা মাত্র এক মাস।

তবে শুধু এটুকুই নয়। অনেক নির্বাচনী কর্মী—যাদের অনেকেই আবার প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক বা অঙ্গনওয়াড়ি (সরকার পরিচালিত শিশু পরিচর্যা কেন্দ্র) কর্মী—বলেন, অনেক সময় তাঁদের নিজের নিয়মিত কাজের পাশাপাশি নির্বাচনী দায়িত্বও সামলাতে হয়।

বিবিসি রাজনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য উত্তর প্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে দশ জন বিএলও’র সঙ্গে কথা বলেছে। তাঁরা জানিয়েছেন, সামান্য বিশ্রাম, কম ঘুম ও নগণ্য পারিশ্রমিক নিয়ে তাঁদের দিনে ১৪-১৫ ঘণ্টা কাজ করতে হচ্ছে। এই দুই রাজ্যেই এসআইআর কাজ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

এই শ্রমসাধ্য সময়সূচির কারণে বিএলওদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। বিশেষত কুমারসহ এক ডজনেরও বেশি কর্মীর মৃত্যুর পর এই ক্ষোভ আরও বেশি বেড়েছে। তাঁদের পরিবার এই মৃত্যুগুলোকে—যার মধ্যে কথিত আত্মহত্যা বা হার্ট অ্যাটাক রয়েছে—নির্বাচনী কাজসংক্রান্ত মানসিক চাপের ফল বলে মনে করছেন। তবে বিবিসির পক্ষে মৃত্যুর কারণগুলো স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। বিবিসির পাঠানো বিস্তারিত প্রশ্নের তালিকার কোনো জবাব ভারতের নির্বাচন কমিশন দেয়নি।

গুজরাটে অরবিন্দভাই ভাধের নামে এক প্রাথমিক স্কুলশিক্ষক নাকি গত মাসেই ‘বিএলও–এর কাজের অত্যাচারের কারণে’ আত্মহত্যা করেছেন বলে তাঁর পরিবার বিবিসিকে জানিয়েছে। মৃত্যুর আগে তাঁর লেখা একটি নোট বিবিসি দেখেছে। সেখানে ভাধের বলেছিলেন, বেশ কিছু দিন ধরেই তিনি ‘অবিরাম ক্লান্তি ও মানসিক চাপে’ ভুগছিলেন।

অন্য এক ঘটনায় গুজরাটের এক স্কুলের প্রধান রমেশভাই পারমার এসআইআর-এর কাজের চাপ নেওয়ার পর রাতে ঘুমন্ত অবস্থাতেই মারা যান বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে। পারমারের মেয়ে শিল্পাবেন বলেন, তাঁর বাবা প্রায়ই অনেক লম্বা সময় ধরে বা রাত অবধি কাজ করতেন। যেদিন তিনি মারা যান, সেদিনও তিনি এসআইআর-এর কাজে অনেক বার বাইরে গিয়েছিলেন এবং না খেয়েই শুতে গিয়েছিলেন।

এতগুলো মৃত্যুর পর এখন পোল কর্মীদের কাজের পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিরোধী দলের নেতারা ইসির ও সরকারের সমালোচনা করেছেন, এত দ্রুত এসআইআর কাজ শেষ করতে চাওয়ার জন্য। (এর আগে ২০০২-২০০৩ সালে এসআইআর-এর কাজ ছয় মাস ধরে করা হয়েছিল।)

আদালতে পেশ করা একটি হলফনামার সূত্রে সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, এসআইআর-এর কাজের সঙ্গে বিএলওদের মৃত্যুর যোগ থাকার বিরোধীদের দাবি নির্বাচন কমিশন অস্বীকার করেছে। তারা এই সব দাবিকে ‘মিথ্যা, অত্যুক্তিপূর্ণ ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে অভিহিত করেছে। গত সপ্তাহে ইসি জানিয়েছে, এসআইআর-এর সময়সীমা ৪ ডিসেম্বর থেকে বাড়িয়ে ১১ ডিসেম্বর করা হবে। তবে এর কারণ তারা জানায়নি।

কিন্তু উত্তর প্রদেশের নয়ডায় একটি আবাসিক কমপ্লেক্সে এসআইআর-এর নেতৃত্ব দেওয়া এক স্কুলশিক্ষিকা মনীষা কুমারী (ছদ্মনাম) বলছেন, এই বাড়তি সময়ের মধ্যেও তিনি কাজ শেষ করতে পারবেন কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত নন। গত এক মাস ধরে কুমারী ভোর পাঁচটায় উঠে বাড়ির কাজ সারেন ও ছেলেমেয়েদের স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি করেন। তারপর সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা-ছয়টা অবধি এসআইআর-এর কাজ করেন।

তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘যেটুকু অল্প বিরতি পাই, সেটা খরচ হয় সেই সব লোকদের খুঁজে বের করার জন্য, যাঁরা প্রথমবার যখন গিয়েছিলাম, তখন বাড়িতে ছিলেন না।’ সন্ধ্যায়ও তাঁর নিস্তার নেই। বাড়ি ফিরে ছেলেমেয়েদের দেখাশোনা করার পর তিনি এসআইআর অ্যাপে লগইন করে যাচাই করা ফরমগুলো আপলোড করেন। কিন্তু অ্যাপটি প্রায়ই ‘ক্র্যাশ’ করে, তাই কাজ শেষ করতে তাঁকে আবার মাঝরাতের পর চেষ্টা করতে হয়। তিনি বলেন, ‘৪ নভেম্বর থেকে আজ অবধি আমার একটিও ছুটি নেই।’ তিনি আরও জানান, ক্লাসে তাঁর অনুপস্থিতির কারণে ছাত্রছাত্রীদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে।

ভারতের বহু সরকারি স্কুলে কর্মীর অভাব রয়েছে। শিক্ষকেরা বলছেন, এই ধরনের কাজের জন্য তাঁদের ক্লাস থেকে তুলে নিলে ছাত্রছাত্রীদের ক্ষতি হয়। কিছু বিএলও বিবিসিকে জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যের ওপর এর খারাপ প্রভাব থাকা সত্ত্বেও তাঁরা এই কঠিন কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন, কারণ তাঁরা আইনি পদক্ষেপের ভয় পান।

সম্প্রতি উত্তর প্রদেশের কর্মকর্তারা এসআইআর-এর কাজে অবহেলার অভিযোগে পোল কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। আর অন্য রাজ্যগুলোতেও কাজ করতে না চাইলে জেল বা চাকরি হারানোর হুমকির খবর পাওয়া গেছে। উত্তর প্রদেশের হিসাবরক্ষক সুধীর কুমার কোরি নাকি তাঁর বিয়ের জন্য এক দিনের ছুটি নেওয়ায় তাঁর ঊর্ধ্বতন তাঁকে বকাবকি করেছিলেন। এরপরই তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে তাঁর পরিবার বিবিসি হিন্দিকে জানিয়েছে।

গাজিয়াবাদের এক পোল কর্মী সুনীল সিং (ছদ্মনাম) বলেছেন, গত কয়েক দিনে তাঁর ‘প্লেটলেট সংখ্যা মারাত্মকভাবে কমে গেছে’ কিন্তু এসআইআর-এর কাজের জন্য তাঁকে ছুটি নিতে দেওয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘আমাকে ডাক্তার বিশ্রাম নিতে বলেছেন, কিন্তু এই কর্মকর্তারা কানেও নিচ্ছেন না। ছুটি পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো হাসপাতালে ভর্তি হওয়া।’ তিনি আরও জানান, তিনি রাজ্যের বিদ্যুৎ বিভাগের তাঁর চাকরিটি ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন।

বিএলওদের তাঁদের কাজের চাপ নিয়ে আবেদন জানানোর কোনো নির্দিষ্ট পদ্ধতি নেই। কিন্তু তাঁরা বিক্ষোভ করেছেন এবং সময়সীমা বাড়ানোর ও ভালো কাজের পরিবেশের জন্য ইসি ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে চিঠিও লিখেছেন। কিছু রাজ্য এই কাজের জন্য ছাত্র স্বেচ্ছাসেবকদের কাজে লাগাচ্ছে, আবার উত্তর প্রদেশের কিছু জেলায় সেরা কাজ করা বিএলওদের নগদ অর্থ, উপহার ও অন্য পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে।

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে যে, বিএলওদের দীর্ঘ কাজের সময় কমাতে এসআইআর কাজের জন্য যেন অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ করা হয়। এখন ইসি বিএলওদের পারিশ্রমিক ছয় হাজার রুপি থেকে বাড়িয়ে বারো হাজার রুপি করেছে এবং সুপারভাইজারদের পারিশ্রমিক বারো হাজার রুপি থেকে আঠারো হাজার রুপি করেছে। এর পাশাপাশি বিএলওদের জন্য ছয় হাজার রুপির এসআইআর উৎসাহ-ভাতা যোগ করেছে। কিন্তু অনেক বিএলও বিবিসিকে জানিয়েছেন যে, তাঁরা এখনো কোনো টাকাই পাননি, আর তাঁদের প্রাপ্য কত টাকা, তা-ও অনেকে জানেন না।

এর আগে এক ক্ষেত্রে, ইসি পশ্চিমবঙ্গে বিএলওদের টাকা দিতে দেরি হওয়ার জন্য রাজ্যকে দায়ী করেছিল, আবার রাজ্য কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তহবিল আটকে রাখার অভিযোগ তুলেছিল। অনেক বিএলও বিবিসিকে বলেন, তাঁরা এসআইআর-এর কাজের জন্য নিজেদের টাকাপয়সা ও মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নয়ডার এক পোল কর্মী বলেন, ‘টাকা পাই কি না, দেখি। আশা খুবই কম।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামে সড়ক হচ্ছে, খেপেছে বিজেপি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ২৬
রেভান্থ রেড্ডি ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এক্স
রেভান্থ রেড্ডি ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এক্স

বিশ্বব্যাপী মনোযোগ আকর্ষণ এবং আসন্ন ‘তেলেঙ্গানা রাইজিং গ্লোবাল সামিট’-এর আগে রাজ্যের ভাবমূর্তি তুলে ধরতে এক অভিনব উদ্যোগ নিলেন তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী এ রেভান্থ রেড্ডি। তিনি হায়দরাবাদের একটি প্রধান সড়কের নামকরণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামে করার প্রস্তাব দিয়েছেন।

মার্কিন কনস্যুলেট জেনারেলের পাশ দিয়ে যাওয়া এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি খুব শিগগিরই ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প অ্যাভিনিউ’ হিসেবে পরিচিত হতে চলেছে। প্রশাসনিক কর্মকর্তারা মনে করছেন, কোনো ক্ষমতাসীন বা সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের নামে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে কোনো প্রধান সড়কের নামকরণ এটাই প্রথম।

তবে এই নামকরণের স্রোত কেবল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। হায়দরাবাদকে দেশের অন্যতম টেক হাব হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে যে সমস্ত বৈশ্বিক ব্যবসায়িক এবং প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর অবদান রয়েছে, তাদেরও সম্মান জানাতে চাচ্ছে রাজ্য সরকার। এই তালিকায় রয়েছে একাধিক প্রধান সড়কের নামকরণ:

এই অঞ্চলে অ্যালফাবেটের প্রযুক্তি সংস্থাটির বিপুল বিনিয়োগ ও উপস্থিতিকে স্বীকৃতি দিতে একটি প্রধান রাস্তার নামকরণ করা হচ্ছে ‘গুগল স্ট্রিট’। এ ছাড়া, ‘মাইক্রোসফট রোড’ এবং ‘উইপ্রো জংশন’-এর মতো অন্যান্য বিশ্বখ্যাত নামগুলোও বিবেচনাধীন।

রাজ্য সরকার রাভিরালাতে নেহরু আউটার রিং রোডকে প্রস্তাবিত ফিউচার সিটির সঙ্গে সংযোগকারী ১০০ মিটার গ্রিনফিল্ড রেডিয়াল রোডটির নামকরণ পদ্মভূষণ রতন টাটার নামে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাভিরালার ইন্টারচেঞ্জ ইতিমধ্যেই ‘টাটা ইন্টারচেঞ্জ’ হিসাবে মনোনীত হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী রেড্ডি এই উদ্যোগের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, বিশ্বজুড়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব এবং বৃহৎ করপোরেশনগুলোর নামে রাস্তার নামকরণ দ্বৈত উদ্দেশ্য সাধন করবে। এটি একদিকে যেমন তাদের প্রতি উপযুক্ত শ্রদ্ধা জানানো হবে, তেমনই সাধারণ মানুষের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস হবে। একই সঙ্গে, এটি হায়দরাবাদকে বিশ্ব দরবারে এক উচ্চতর স্থানে পৌঁছে দেবে।

তবে মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং বিজেপি নেতা বন্ডি সঞ্জয় কুমার। তিনি রেড্ডির সমালোচনা করে বলেন, হায়দরাবাদের নাম পরিবর্তন করে ‘ভাগ্যনগর’-এ ফিরিয়ে আনা উচিত।

এক্স হ্যান্ডলে তিনি লেখেন, ‘কংগ্রেস সরকার যদি নাম পরিবর্তনে এতই আগ্রহী হয়, তবে তাদের এমন কিছু দিয়ে শুরু করা উচিত যার ঐতিহাসিক তাৎপর্য এবং অর্থ আছে।’ তিনি অভিযোগ করেন, রেভান্থ রেড্ডি ‘যারা ট্রেন্ডিং’-শুধু তাদের নামেই জায়গার নামকরণ করছেন। সঞ্জয় কুমার আরও দাবি করেন, শুধু বিজেপিই সরকারের মধ্যে এ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে এবং মহাধর্ণা-এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের প্রকৃত সমস্যা নিয়ে লড়ছে।

বিজেপি সরকার অবশ্য উত্তর প্রদেশ, আসামসহ বিভিন্ন রাজ্যে বেশ কয়েকটি শহর ও গ্রামের নাম পরিবর্তন করেছে। বিশেষ করে মুসলিম শাসনামলে দেওয়া নামগুলো পরিবর্তন করে তারা হিন্দুধর্ম সংশ্লিষ্ট নাম দিচ্ছে।

আবার অপারেশন সিঁদুর ও ট্যারিফ ইস্যুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বিজেপি সরকারের টানাপোড়েন চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভয়াবহ সংঘাতের পর কম্বোডিয়া সীমান্তে থাইল্যান্ডের বিমান হামলা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ০৮
থাইল্যান্ড সীমান্তে পাহার দিচ্ছে দুই কম্বোডিয়ান সেনা। ছবি: এএফপি
থাইল্যান্ড সীমান্তে পাহার দিচ্ছে দুই কম্বোডিয়ান সেনা। ছবি: এএফপি

কম্বোডিয়ার সঙ্গে বিতর্কিত সীমান্তে রয়্যাল থাই আর্মি বিমান হামলা শুরুর ঘোষণা দিয়েছে। থাই সামরিক বাহিনী কম্বোডিয়ার সেনাদের বিরুদ্ধে তাদের সৈন্যদের ওপর গুলি চালানো এবং অন্তত একজনকে হত্যার অভিযোগ এনেছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

আজ সোমবার এক বিবৃতিতে থাই সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল উইন্থাই সুভারি জানিয়েছেন, উবোন রাতচাথানি প্রদেশের নাম ইয়েন জেলার চং বক এলাকায় প্রাণঘাতী সংঘর্ষের পর থাই সেনাবাহিনী বিমান মোতায়েন করেছে। সুভারি আরও বলেছেন, থাই আর্মি ‘সীমান্ত এলাকার বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নিতে দ্রুত সমর্থন জোগাচ্ছে।’

কম্বোডিয়াও এই হামলার খবর নিশ্চিত করেছে। কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মালি সোচেতা বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, সোমবার ভোরে থাই বাহিনী প্রিয়া বিহার ও ওদ্দার মিয়ানচে সীমান্তবর্তী প্রদেশগুলোতে কম্বোডিয়ার সৈন্যদের ওপর হামলা চালায়। তবে তিনি এ-ও যোগ করেছেন যে, কম্বোডিয়া পাল্টা কোনো আঘাত হানেনি।

জুলাই মাসে পাঁচ দিনের এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হয়েছিল, কিন্তু এই হামলা হলো দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সহিংসতার সর্বশেষ উত্তেজনা। ওই সংঘর্ষের সময়ে কমপক্ষে ৪৮ জন নিহত হয়েছিলেন এবং আনুমানিক ৩ লাখ মানুষ সাময়িকভাবে স্থানচ্যুত হন; এই সময় দুই প্রতিবেশী রকেট এবং ভারী আর্টিলারি বিনিময় করেছিল।

যে যুদ্ধবিরতির ফলে সংঘাতের অবসান হয়েছিল, সেটি সম্পন্ন করেছিলেন মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। গত অক্টোবরে কুয়ালালামপুরে দুই দেশের মধ্যে এক সম্প্রসারিত শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর প্রত্যক্ষ করেছিলেন। তবে উত্তেজনা এখনো বজায় আছে।

গত মাসে এক ভূমি মাইন বিস্ফোরণে থাই আর্মির এক সৈন্য আহত হওয়ার পর, থাইল্যান্ড জানিয়েছিল যে—তারা কম্বোডিয়ার সঙ্গে স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়ন বন্ধ করছে। যদিও নম পেন স্থলমাইন বিস্ফোরণের দায় অস্বীকার করে বলেছে, ডিভাইসটি ছিল পুরোনো সংঘাতের ধ্বংসাবশেষ।

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে তাদের ৮১৭ কিলোমিটার (৫০৮ মাইল) স্থল সীমান্তের অচিহ্নিত স্থানগুলোতে সার্বভৌমত্ব নিয়ে বিবাদে জড়িয়ে আছে। এই সীমান্তের প্রথম মানচিত্র ১৯০৭ সালে তৈরি করেছিল ফ্রান্স, যখন কম্বোডিয়া তাদের উপনিবেশ ছিল।

শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের দাবিগুলো মীমাংসা করার চেষ্টা সত্ত্বেও, মাঝে মাঝে চাপা উত্তেজনা স্ফুলিঙ্গের মতো ছিটকে বের হয় এবং তা সংঘর্ষে রূপান্তরিত হয়, যেমন ২০১১ সালের এক সপ্তাহব্যাপী আর্টিলারি বিনিময়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাওয়াইয়ে মাউন্ট কিলাউয়াতে অগ্ন্যুৎপাত, লাভার ফোয়ারা তৈরি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কিলাউয়া আগ্নেয়গিরিতে ব্যাপক উদগীরণ শুরু হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
কিলাউয়া আগ্নেয়গিরিতে ব্যাপক উদগীরণ শুরু হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে বিশ্বের অন্যতম সক্রিয় আগ্নেয়গিরি কিলাউয়ায় ব্যাপক অগ্নুৎপাতের ঘটনা ঘটেছে। আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ দিয়ে এত বেশি লাভা উদগীরণ হচ্ছে যে, নিচের দিকে এক ধরনের ফোয়ারার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। জাপানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম এনএইচকে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।

ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভে বা মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা–ইউএসজিএস জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপে অবস্থিত মাউন্ট কিলাউয়া আগ্নেয়গিরিতে অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছে, যার ফলে লাভা ফোয়ারা তৈরি হয়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়।

সংস্থাটি জানিয়েছে, স্থানীয় সময় গত শনিবার সকাল ৮ টা ৪৫ মিনিটের দিকে দুটি জ্বালামুখ উন্মুক্ত হয়। এর আগে, আরেকটি ফাটল থেকে একটি লাভার প্রবাহ তৈরি হয়েছিল। সংস্থাটি বলছে, আগ্নেয়গিরিতে একই সঙ্গে তিনটি সক্রিয় লাভা ফোয়ারা থাকা অত্যন্ত বিরল। কিছু লাভা প্রায় ৩৭০ মিটার উঁচু পর্যন্ত উড়েছিল বলে জানা গেছে।

সংস্থাটি বিস্তৃত এলাকার বাসিন্দাদের সালফার ডাইঅক্সাইড এবং অন্যান্য গ্যাসের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে সতর্ক করছে, যা শ্বাসযন্ত্রকে প্রভাবিত করতে পারে।

কিলাউয়া বিশ্বের অন্যতম সক্রিয় আগ্নেয়গিরি হিসেবে পরিচিত। এই অগ্ন্যুৎপাতগুলি এমন একটি এলাকায় হচ্ছে যা ২০০৭ সাল থেকে সাধারণ মানুষের জন্য নিষিদ্ধ।

মাউন্ট কিলাউয়া (Mount Kilauea) হলো বিশ্বের অন্যতম সবচেয়ে সক্রিয় আগ্নেয়গিরি, যা যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের সবচেয়ে বড় দ্বীপ ‘বিগ আইল্যান্ড’-এর দক্ষিণ-পূর্বাংশে অবস্থিত। এটি বৃহত্তর মানা লোয়া আগ্নেয়গিরির ঢালের উপর অবস্থিত একটি আগ্নেয়গিরি। হাওয়াইয়ান ভাষায় ‘কিলাউয়া’ শব্দের অর্থ হলো ‘উগরে দেওয়া’ বা ‘প্রচুর পরিমাণে ছড়িয়ে পড়া,’ যা এর ঘন ঘন লাভা নিঃসরণের প্রকৃতির দিকে ইঙ্গিত করে। এই ধরনের আগ্নেয়গিরিগুলি ধীরে ধীরে লাভা প্রবাহের মাধ্যমে তৈরি হয়, যার ফলে তাদের ঢালগুলি কম খাড়া ও বিস্তৃত হয়। কিলাউয়ার পৃষ্ঠের প্রায় ৯০ শতাংশই গত ১,১০০ বছরের মধ্যে জমা হওয়া লাভা প্রবাহ দ্বারা গঠিত, যা এর চরম সক্রিয়তা প্রমাণ করে।

আধুনিক সময়ে কিলাউয়ার সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী অগ্ন্যুৎপাতের পর্ব ছিল ১৯৮৩ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ২০১৮ সাল পর্যন্ত, যা পৃথিবীর দীর্ঘতম নথিভুক্ত অগ্ন্যুৎপাতের মধ্যে অন্যতম। এই দীর্ঘ সময়ে বিপুল পরিমাণ লাভা নির্গত হয়েছিল। যদিও কিলাউয়ার অগ্ন্যুৎপাত সাধারণত কম বিস্ফোরক প্রকৃতির হয়, তবে ১৭৯০ সালে একটি ভয়াবহ বাষ্প বিস্ফোরণ ঘটেছিল, যাতে ৪০০-এরও বেশি মানুষ মারা যায়, যা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অন্যতম মারাত্মক অগ্ন্যুৎপাত। ঐতিহ্যগতভাবে, স্থানীয় হাওয়াইয়ানরা কিলাউয়াকে অগ্নির দেবী পেলেহোনুয়ামেয়ার আবাস বলে মনে করে। বলা হয়, তিনি কিলাউয়ার শীর্ষ ক্যালডেরার অভ্যন্তরের হালেমাউমাউ গহ্বরে বাস করেন।

কিলাউয়ার সক্রিয়তা বর্তমানে খণ্ডকালীন বা এপিসোডিক। অগ্ন্যুৎপাতের পর্বগুলি কয়েক দিনের বিরতি দিয়ে পৃথক করা যেতে পারে এবং অগ্ন্যুৎপাতের সময়কাল কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত স্বল্প হতে পারে। সাম্প্রতিক অগ্ন্যুৎপাতের ফলে নির্গত সালফার ডাইঅক্সাইড গ্যাস একটি প্রধান ঝুঁকি, যা শ্বাসযন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলে। অগ্ন্যুৎপাতের কারণে এবং অবকাঠামোগত মেরামতের জন্য হাওয়াই ভলকানোস ন্যাশনাল পার্কের কিছু অংশ বা ট্রেইল সাময়িকভাবে বন্ধ থাকতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত