Ajker Patrika

কঠোর হচ্ছে যুক্তরাজ্যের অভিবাসন নীতি, স্থায়ী বসবাসের আবেদনে অপেক্ষা ১০ বছর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৩ মে ২০২৫, ১৫: ৪৪
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাজ্যের অভিবাসন নীতিতে বড় পরিবর্তন আসছে। আজ সোমবার এ সংক্রান্ত একটি পরিকল্পনা প্রকাশের কথা রয়েছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের। নতুন অভিবাসন নীতি অনুযায়ী—বিদেশি নাগরিকেরা আর ৫ বছর পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিকত্ব বা স্থায়ী বসবাসের জন্য আবেদন করতে পারবেন না।

নতুন নীতিতে, এখন থেকে অধিকাংশ অভিবাসীকে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে হলে ১০ বছর অপেক্ষা করতে হবে। তবে, কেউ যদি প্রমাণ করতে পারেন যে তিনি দেশের অর্থনীতি ও সমাজে ‘বাস্তব ও স্থায়ী অবদান’ রেখেছেন, তাহলে তিনি ১০ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই আবেদন করতে পারবেন। উদাহরণস্বরূপ, যারা নিয়মিত আয়কর দেন, ন্যাশনাল হেলথ সেন্টারে (এনএইচএস) চিকিৎসক, নার্স বা হাসপাতালের কর্মী হিসেবে কাজ করেন, বা ব্যতিক্রমী স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে যুক্ত আছেন—তাঁদের জন্য এই সুযোগ থাকবে।

স্থায়ী বসবাস বা নাগরিকত্ব পাওয়ার মানে হলো—কল্যাণ ভাতা, বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা, ভোটাধিকার এবং ব্রিটিশ পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার সুযোগ পাওয়া। এই নতুন নিয়ম অনেকটা ডেনমার্কের মতো, যেখানে অভিবাসীদের সমাজের সঙ্গে ভালোভাবে মিশে যেতে এবং দায়িত্বশীল নাগরিক হয়ে ওঠার জন্য নানা শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। ডেনমার্কের নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রক্রিয়াটিও বেশ সময়সাপেক্ষ।

ব্রিটেন সরকারের ভাষ্যমতে, নিট অভিবাসনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতেই এই পদক্ষেপগুলো নেওয়া হচ্ছে। ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ১২ মাসে নিট অভিবাসনের সংখ্যা ছিল ৭ লাখ ২৮ হাজার। একই সঙ্গে, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে লেবার পার্টিকে চাপে ফেলতে থাকা রিফর্ম ইউকে পার্টির (নাইজেল ফারাজের দল) হুমকিও মোকাবিলা করা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে, কনজারভেটিভ পার্টি ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির সমালোচনা করে বলেছে—তারা মোট অভিবাসন সংখ্যা কমাতে কোনো নির্দিষ্ট সীমা (ক্যাপ) নির্ধারণ করেনি। নির্দিষ্ট সীমা নির্ধারণ নিশ্চিত করতে আজ পার্লামেন্টে ভোটাভুটি করবে বলেও জানিয়েছিলেন তাঁরা।

ভিসা পেতে ইংরেজি দক্ষতায় কড়াকড়ি, বাড়ছে শর্ত

যুক্তরাজ্যে ভিসা পেতে হলে এখন থেকে বিদেশি দক্ষ কর্মীদের আরও কঠিন ইংরেজি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। নতুন অভিবাসন নীতিতে বলা হয়েছে, তাঁদের এখন এমন পর্যায়ের ইংরেজি জানতে হবে যা ‘এ’ লেভেল সমমানের—যেখানে তাঁরা স্বতঃস্ফূর্ত ও সাবলীলভাবে সামাজিক, একাডেমিক ও পেশাগত পরিবেশে কথা বলতে পারবেন। এর আগে শুধু জিসিএসই সমমানের ইংরেজি জানলেই চলত, যেখানে শুধু দৈনন্দিন বিষয় বুঝতে পারা এবং ভ্রমণের সময় সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবিলার দক্ষতা থাকাই যথেষ্ট বলে বিবেচিত হতো।

এখন থেকে শুধু ভিসার জন্য নয়—যারা স্থায়ীভাবে বসবাস বা নাগরিকত্ব চাচ্ছেন, এমনকি যারা বিদেশি শিক্ষার্থী, তাঁদের ক্ষেত্রেও এই এ-লেভেল মানের ইংরেজি বা বি-২ লেভেলের ইংরেজি জানার শর্ত প্রযোজ্য হবে।

আর প্রথমবারের মতো, যারা সফল ভিসা আবেদনকারীর সঙ্গী, সন্তান বা অভিভাবক হিসেবে যুক্তরাজ্যে যেতে চান, তাঁদেরও এ-১ স্তরের ইংরেজি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে—যেখানে ইংরেজির প্রাথমিক জ্ঞান যাচাই করা হয়। যদি তাঁরা যুক্তরাজ্যে আরও দুই বছর থাকতে চান, তাহলে তাঁদের আরও ভালো ইংরেজি জেনে এ-২ স্তরের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।

বিদেশ থেকে কেয়ার কর্মী নেওয়া বন্ধ, নিয়োগ দিতে হবে দেশের ভেতর থেকেই

এ বছরের শেষ থেকে কেয়ার হোমগুলো আর সরাসরি বিদেশ থেকে কর্মী আনতে পারবে না। এখন থেকে তাদের যুক্তরাজ্যে থাকা বিদেশি নাগরিক বা ব্রিটিশ নাগরিকদের কর্মী নিয়োগ করতে হবে।

গতকাল রোববার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার এই ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে বর্তমানে প্রায় ৪০ হাজারের মতো বিদেশি কর্মী রয়েছেন, যারা কেয়ার ভিসায় এসেছেন, কিন্তু পরে তাঁদের স্পনসরশিপ বাতিল হয়েছে। ওই ৪০ হাজার অভিবাসী থেকেই কর্মী নিয়োগ দিতে পারবে কেয়ার হোমগুলো। তাই আমরা বিদেশ থেকে নতুন নিয়োগ বন্ধ করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই সিদ্ধান্তের পাশাপাশি কেয়ার সেক্টরে কর্মীদের “ন্যায্য মজুরি” নিশ্চিতকরণের বিষয়টি নিয়েও এগোচ্ছি। কেয়ার সেক্টরের মূল সমস্যাগুলো কোনো দিনই ঠিকভাবে সমাধান হয়নি। এবার আমরা সেটাই করব।’

কেয়ার ভিসার পাশাপাশি অন্য ভিসায় আসা অভিবাসীদেরও এই সেক্টরে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি দেশীয় কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাও নেওয়া হচ্ছে।

নতুন এই সিদ্ধান্তের পর প্রায় ৫০ হাজার ভিসা কম ইস্যু হবে বলে ধারণা করছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

২০২৪ সালের জানুয়ারিতে যেখানে স্বাস্থ্য ও কেয়ার ভিসার সংখ্যা ছিল প্রায় দেড় লাখ, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ২৮ হাজার ৭০০ এ—এর মধ্যে প্রায় ৭ হাজার জন ছিলেন সামাজিক কেয়ার ওয়ার্কার। কনজারভেটিভ সরকার বিদেশি কেয়ার ওয়ার্কারদের পরিবারের সদস্যদের যুক্তরাজ্যে আনার সুযোগ বন্ধ করে দেওয়ার পর কমে আসে এই সংখ্যা।

লেবার পার্টির নতুন এই সিদ্ধান্তে উদ্বেগ জানিয়েছেন কেয়ার ইংল্যান্ডের প্রধান নির্বাহী মার্টিন গ্রিন। তিনি বলেন, ‘এটা একটা বড় ধাক্কা। এই সেক্টর বহুদিন ধরে বাজেট স্বল্পতা, অতিরিক্ত ব্যয় আর কর্মী সংকটের সঙ্গে লড়াই করে টিকে আছে। বিদেশি কর্মী নিয়োগ যথাযথ সমাধান না হলেও, অনেকটা শেষ সম্বলের মতো ছিল সেটি। কোনো বিকল্প না খুঁজে আগেই সেটি বন্ধ করে দেওয়া হলো—এটা কেবল অদূরদর্শিতা নয়, নিষ্ঠুরতাও।’

অপরাধীদের দেশে ফেরত পাঠানো

যুক্তরাজ্যে বসবাসরত অভিবাসীদের জন্য এবার আসতে চলেছে কঠিন সময়। শ্বেতপত্রে নতুন প্রস্তাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার জানিয়ে দিয়েছেন, এখন থেকে ছোটখাটো কোনো অপরাধ করেও পার পাবে না কেউ। ছোটখাটো নিয়মভঙ্গের অপরাধ করলেও তা সঙ্গে সঙ্গে জানানো হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে।

নতুন এই নিয়মের আগ পর্যন্ত শুধু এক বছরের বেশি কারাদণ্ড হলে তবেই স্বরাষ্ট্র দপ্তরে রিপোর্ট করা হতো এবং তাঁকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বহিষ্কারের প্রক্রিয়া শুরু করা যেত। কিন্তু নতুন নিয়মে ছোট অপরাধ করলেও ভিসা বাতিল হয়ে দেশে ফেরত পাঠানোর ঝুঁকি বাড়বে।

এ ছাড়া নতুন এই ব্যবস্থায় যদি কোনো বিদেশি যৌন অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অপরাধীর তালিকায় ওঠেন, তাহলে তাঁর অপরাধ যত ছোটই হোক, তাঁকে ‘গুরুতর অপরাধী’ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। ফলে তিনি আর যুক্তরাজ্যে আশ্রয় চেয়ে সুরক্ষা পাবেন না। এমনকি নিজ দেশে অপরাধ করে তা গোপন রেখে যুক্তরাজ্যে এলে তাঁদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে এই নিয়ম। তাঁর অপরাধ সম্পর্কে জানা মাত্রই দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে।

বিদেশি কর্মীদের শিক্ষাগত যোগ্যতার মানদণ্ড বৃদ্ধি

শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, দক্ষ বিদেশি কর্মীদের জন্য যোগ্যতার মানদণ্ড আবারও স্নাতক পর্যায়ে ফিরিয়ে আনা হবে। বরিস জনসনের সময় এই শর্ত বাতিল করে এর পরিবর্তে একটি পয়েন্টভিত্তিক অভিবাসন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল, যেখানে কেবল এ-লেভেল সমমানের যোগ্যতা এবং বেতনের ভিত্তিতে বিদেশি কর্মীদের ভিসা দেওয়া হতো।

তবে এখনো নিয়োগকর্তারা পয়েন্টভিত্তিক ব্যবস্থার আওতায় অপেক্ষাকৃত কম দক্ষ কর্মীদের নিয়োগ দিতে পারবেন—কিন্তু কেবল সেসব খাতে যেগুলোকে সরকার ‘জরুরি খাত’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং যেখানে জনবল সংকট দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠেছে, যেমন—আইটি, নির্মাণ ও প্রকৌশল।

এই খাতে বিদেশি কর্মী নিয়োগ কেবল ‘অস্থায়ী ও নির্দিষ্ট মেয়াদে’ অনুমোদিত হবে এবং নিয়োগকর্তাদের একটি নতুন সরকারি সংস্থার কাছে প্রমাণ দিতে হবে যে তাঁরা ব্রিটিশ কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য অ্যাপ্রেনটিসশিপ ও অন্যান্য প্রকল্প চালাচ্ছেন, যাতে ভবিষ্যতে এই ঘাটতি পূরণ করা যায়।

বিদেশি গ্র্যাজুয়েটদের জন্য নতুন বাধা আসছে

শ্বেতপত্রে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যুক্তরাজ্যে থাকতে চাইলে বিদেশি গ্র্যাজুয়েটদের শুধু ভালো বেতনের চাকরি হলেই হবে না—চাকরিটা হতে হবে অবশ্যই দক্ষতা-ভিত্তিক, গ্র্যাজুয়েট পর্যায়ের। এখন পর্যন্ত নিয়ম ছিল, ডিগ্রি শেষ করার পর বিদেশি শিক্ষার্থীরা দুই বছর (আর পিএইচডি করলে তিন বছর) যুক্তরাজ্যে ‘গ্র্যাজুয়েট ভিসা’ নিয়ে চাকরি খুঁজতে পারবেন। এই সুযোগকে স্থায়ীভাবে যুক্তরাজ্যে থেকে যাওয়ার পথ বা ‘পেছনের দরজা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তাই নতুন নিয়ম করল যুক্তরাজ্য সরকার।

তবে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার অভিবাসন কমাতে কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য বা সংখ্যাগত সীমা নির্ধারণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা নিট অভিবাসন উল্লেখযোগ্যভাবে কমানোর পরিকল্পনা নিচ্ছি। আপনি জানেন, অতীতে কনজারভেটিভ সরকারগুলো অনেক লক্ষ্য ও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, কিন্তু সেগুলোর কিছুই পূরণ হয়নি। ফলে, এসব লক্ষ্য সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতাকেই ক্ষুণ্ন করেছে। এ কারণেই আমরা নির্দিষ্ট সংখ্যা নির্ধারণের পথ অনুসরণ করছি না।’

এদিকে কনজারভেটিভ পার্টি বলছে, তারা অভিবাসনের ওপর বাধ্যতামূলক সীমা (ক্যাপ) চালু করার পক্ষে। পাশাপাশি অভিবাসন ইস্যুতে মানবাধিকার আইনের কিছু দিকও বাতিল চায় তারা। আর এ ইস্যুতে আজ সোমবার পার্লামেন্টে ভোটাভুটি হবে বলেও জানিয়েছে দলটি। ছায়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস ফিলিপ বলেন, ‘স্টারমার একসময় বিপজ্জনক বিদেশি অপরাধীদের ফেরত পাঠানোর বিরোধিতা করেছিলেন। এখন তিনিই অভিবাসন নিয়ে কঠোর হচ্ছেন—এটা হাস্যকর!’

তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, ‘স্টারমার নিজের দলের এমপিদের দিয়েই ১০ বছর আবাসকাল ও অবদানের শর্তের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। অথচ এখন সেটিই কার্যকর করতে চলেছেন। কনজারভেটিভদের নেওয়া পদক্ষেপেরই কৃতিত্ব নিতে চাইছেন তিনি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় গেজেট

এই মব আক্রমণগুলো হাওয়া থেকে ঘটেনি—জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞের ক্ষোভ

ঢাকা মেডিকেলে ফেলে যাওয়া তরুণীর মরদেহ শনাক্ত, পরিবারের অভিযোগ হত্যা

২০২৫ সালে যেসব ঐতিহাসিক রহস্যের সমাধান দিল বিজ্ঞান

আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক দখলে প্রতিযোগিতা করছে বিএনপি-জামায়াত: নাহিদ ইসলাম

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৪৫
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ফাইল ছবি
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ফাইল ছবি

আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচ আইনপ্রণেতা। চিঠিতে তাঁরা কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে তাঁরা এটাও উল্লেখ করেছেন যে আওয়ামী আমলে ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি এবং গত বছরের জুলাইয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই ১ হাজার ৪০০ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। তবে এই অপরাধগুলো ব্যক্তিগত গণ্য করে গণতন্ত্রের স্বার্থে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানানো হয়েছে।

মার্কিন কংগ্রেসের ওয়েবসাইটে এই চিঠি প্রকাশ করা হয়েছে।

এই পাঁচ মার্কিন আইনপ্রণেতা হলেন গ্রেগরি ডব্লিউ মিকস, বিল হুইজেঙ্গা, সিডনি কামলাগার-ডোভ, জুলি জনসন এবং থমাস আর সুওজি। তাঁরা চিঠিতে লিখেছেন, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত রাজনৈতিক অঙ্গনের সব দলের সঙ্গে মিলে কাজ করা। এর মাধ্যমেই বাংলাদেশের মানুষের কণ্ঠস্বর ব্যালট বাক্সের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিফলিত হওয়া সম্ভব।’

তাঁরা আরও বলেন, ‘সেই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সততা ও নিরপেক্ষতার ওপর আস্থা ফিরিয়ে আনার সংস্কারগুলোও জরুরি। আমরা শঙ্কিত যে সরকার যদি রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম স্থগিত করে কিংবা ত্রুটিপূর্ণ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আবারও চালু করে, তবে এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে না।’

২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি বলে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে, তা উল্লেখ করে ওই আইনপ্রণেতারা বলেন, যদি কোনো একটি দলকে নিষিদ্ধ করা হয়, তবে আগামী নির্বাচনও অবাধ হবে না। চিঠিতে বলা হয়, ‘পররাষ্ট্র দপ্তর এবং অনেক আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক লক্ষ করেছেন, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচন অবাধ বা সুষ্ঠু ছিল না। এ ছাড়া জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের কার্যালয়ের ফেব্রুয়ারি মাসের একটি তথ্যানুসন্ধানী প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্টে বিক্ষোভ চলাকালে নিরাপত্তা বাহিনী প্রায় ১ হাজার ৪০০ মানুষকে হত্যা করেছে।’

আইনপ্রণেতারা মনে করেন, এই হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য ঘটনার প্রকৃত জবাবদিহি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের আদলে হওয়া উচিত, প্রতিশোধের চক্র অব্যাহত রেখে নয়। তাঁরা লিখেছেন, ‘সংগঠন করার স্বাধীনতা এবং সামষ্টিক অপরাধের বদলে ব্যক্তিগত অপরাধের দায়বদ্ধতা হলো মৌলিক মানবাধিকার। আইনের যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মানবাধিকার লঙ্ঘন বা অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের ওপর মনোযোগ না দিয়ে, কোনো একটি রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড পুরোপুরি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত এই নীতিগুলোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’

চিঠির শেষাংশে বলা হয়েছে, ‘আমরা আশা করি, আপনার সরকার অথবা পরবর্তী কোনো নির্বাচিত সরকার এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে। দিন শেষে বাংলাদেশের মানুষ একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে নিজেদের পছন্দমতো সরকার গঠনের অধিকার রাখে, যেখানে সব রাজনৈতিক দল অংশ নিতে পারবে এবং মানুষের কণ্ঠস্বর প্রতিফলিত হবে।’

আইনপ্রণেতারা আরও যোগ করেন, ‘বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। সামনের মাসগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণকে সমর্থন করতে আমরা আপনার ও আপনার সরকারের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত আছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় গেজেট

এই মব আক্রমণগুলো হাওয়া থেকে ঘটেনি—জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞের ক্ষোভ

ঢাকা মেডিকেলে ফেলে যাওয়া তরুণীর মরদেহ শনাক্ত, পরিবারের অভিযোগ হত্যা

২০২৫ সালে যেসব ঐতিহাসিক রহস্যের সমাধান দিল বিজ্ঞান

আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক দখলে প্রতিযোগিতা করছে বিএনপি-জামায়াত: নাহিদ ইসলাম

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসরায়েল আর ‘কখনোই গাজা ত্যাগ করবে না’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৪৩
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। ছবি: এএফপি
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। ছবি: এএফপি

ইসরায়েল আর ‘কখনোই গাজা ত্যাগ করবে না’ বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। সেই সঙ্গে তিনি ফিলিস্তিনি ছিটমহলটিতে অবৈধ বসতিগুলো পুনরায় স্থাপনের ধারণার কথাও বিবেচনা করছেন। তাঁর এই মন্তব্য ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করেছে, যা কাৎজকে তাঁর দাবি থেকে কিছুটা পিছিয়ে আসতে বাধ্য করেছে।

বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যম আরব নিউজ জানিয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার অধিকৃত পশ্চিম তীরের বাইত আল বসতিতে ১, হাজার ২০০ নতুন ঘর নির্মাণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার সময় মন্ত্রী এই বক্তব্য দেন। বক্তৃতায় কাৎজ ২০০৫ সালে ইসরায়েল কর্তৃক পরিত্যক্ত উত্তর গাজার বসতিগুলো পুনর্নির্মাণের অঙ্গীকার করেন।

কাৎজ বলেন, ‘আমরা গাজার অনেক গভীরে আছি এবং আমরা কখনোই গাজা ছেড়ে যাব না, এমন কিছু ঘটবে না।’

কাৎজ আরও যোগ করেন, ‘সময় এলে আমরা উত্তর গাজায় উচ্ছেদ হওয়া সম্প্রদায়গুলোর জায়গায় নাহাল আউটপোস্ট (সামরিক-কৃষি ফাঁড়ি) স্থাপন করব।’

বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে ইসরায়েল এবং ইসরায়েল-অধিকৃত উভয় অঞ্চলে দেশটির সৈন্যরা যে ধরনের সামরিক-কৃষি ফাঁড়ি স্থাপন করেছিল, মন্ত্রী মূলত সেই ধরনের আউটপোস্টের কথা উল্লেখ করছিলেন। এই আউটপোস্টগুলোর অধিকাংশই শেষ পর্যন্ত স্থায়ী বেসামরিক বসতিতে রূপান্তরিত হয়েছিল।

প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এই মন্তব্য প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ঘোষিত নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। নেতানিয়াহু বারবার বলেছেন, গাজায় পুনরায় বসতি স্থাপনের কোনো পরিকল্পনা পশ্চিম জেরুজালেমের নেই। কাৎজের এই বক্তব্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার সঙ্গেও সরাসরি সংঘাত তৈরি করে, যা যুদ্ধরত পক্ষগুলোকে একটি ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতিতে প্রবেশ করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। মার্কিন পরিকল্পনার পরবর্তী ধাপগুলোতে ইসরায়েলকে ফিলিস্তিনি ছিটমহল থেকে প্রত্যাহার করার কথা বলা হয়েছে এবং সেখানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে ‘ইসরায়েল গাজা দখল বা অ্যানেক্স (সংযুক্ত) করবে না।’

ইসরায়েলি মন্ত্রীর এই বক্তব্য বিভিন্ন মহলের সমালোচনা কুড়িয়েছে। সমালোচকেরা কাৎজের বিরুদ্ধে দেশের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি ‘সঙ্কটময়’ মুহূর্তে উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের অবজ্ঞা করার অভিযোগ তুলেছেন। সাবেক চিফ অব স্টাফ গাদি আইজেনকোট এক্সে লিখেছেন, ‘সরকার যখন এক হাতে ট্রাম্প পরিকল্পনার পক্ষে ভোট দিচ্ছে, তখন অন্য হাতে তারা গাজা উপত্যকায় বিচ্ছিন্ন বসতি স্থাপনের রূপকথা বিক্রি করছে।’

এই ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার মুখে কাৎজ তাঁর মন্তব্য থেকে কিছুটা পিছু হটেছেন। তাঁর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, ‘গাজা উপত্যকায় বসতি স্থাপনের কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই’ এবং দাবি করা হয়েছে যে মন্তব্যগুলো ‘শুধু নিরাপত্তার প্রেক্ষাপটে’ করা হয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় গেজেট

এই মব আক্রমণগুলো হাওয়া থেকে ঘটেনি—জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞের ক্ষোভ

ঢাকা মেডিকেলে ফেলে যাওয়া তরুণীর মরদেহ শনাক্ত, পরিবারের অভিযোগ হত্যা

২০২৫ সালে যেসব ঐতিহাসিক রহস্যের সমাধান দিল বিজ্ঞান

আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক দখলে প্রতিযোগিতা করছে বিএনপি-জামায়াত: নাহিদ ইসলাম

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তুরস্কে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে লিবিয়ার ‘জাতীয় ঐক্যের সরকারের’ সেনাপ্রধান নিহত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ১৩
জেনারেল হাদ্দাদ। ছবি: সংগৃহীত
জেনারেল হাদ্দাদ। ছবি: সংগৃহীত

তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারার কাছে এক বিমান দুর্ঘটনায় লিবিয়ার জাতিসংঘ-সমর্থিত সরকারের সেনাপ্রধান মোহাম্মদ আলী আহমেদ আল-হাদ্দাদ নিহত হয়েছেন। ব্যক্তিগত জেটে করে একটি বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের কয়েক মিনিট পরই এই দুর্ঘটনা ঘটে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার ঘটে যাওয়া এই দুর্ঘটনায় বিমানটিতে থাকা সবাই প্রাণ হারিয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে আরও চারজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা এবং তিনজন ক্রু ছিলেন।

তুর্কি কর্মকর্তারা আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তে নাশকতার আশঙ্কা নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। পরিবর্তে যান্ত্রিক ত্রুটিকেই দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।

লিবিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবদুল হামিদ দিবেইবাহ সেনাপ্রধান আল-হাদ্দাদ এবং অন্য চার কর্মকর্তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। এক বিবৃতিতে তিনি জানান, প্রতিনিধি দলটি দেশে ফেরার পথে এই ‘মর্মান্তিক দুর্ঘটনা’ ঘটে।

আবদুল হামিদ দিবেইবাহ বলেন, ‘এই বিশাল ট্র্যাজেডি জাতি, সামরিক প্রতিষ্ঠান এবং সাধারণ মানুষের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। আমরা এমন কিছু মানুষকে হারিয়েছি, যাঁরা অত্যন্ত নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সঙ্গে দেশের সেবা করেছেন এবং তাঁরা শৃঙ্খলা, দায়িত্ব ও জাতীয় অঙ্গীকারের এক অনন্য উদাহরণ ছিলেন।’

আল-হাদ্দাদ ছিলেন পশ্চিম লিবিয়ার শীর্ষ সামরিক কমান্ডার। ২০১১ সালে ন্যাটো-সমর্থিত বিদ্রোহে মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতনের পর থেকে বিভক্ত লিবিয়াকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় চলমান প্রচেষ্টায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছিলেন।

দুর্ঘটনায় নিহত অন্য চার কর্মকর্তা হলেন লিবিয়ার পদাতিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল আল-ফিতুরি ঘারিবিলা; সামরিক উৎপাদন কর্তৃপক্ষের প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহমুদ আল-কাতাউই; সেনাপ্রধানের উপদেষ্টা মুহাম্মদ আল-আসাবি দিয়াব এবং সেনাপ্রধানের কার্যালয়ের সামরিক আলোকচিত্রী মুহাম্মদ ওমর আহমেদ মাহজুব।

ত্রিপোলিতে জাতিসংঘ স্বীকৃত ‘গভর্নমেন্ট অব ন্যাশনাল ইউনিটি—জিএনইউ’ বা জাতীয় ঐক্যের সরকার দেশজুড়ে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে। এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে এবং সব ধরনের সরকারি অনুষ্ঠান ও উদ্‌যাপন স্থগিত থাকবে।

তুর্কি কর্মকর্তাদের মতে, দুই দেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে উচ্চপর্যায়ের প্রতিরক্ষা আলোচনায় অংশ নিতে লিবীয় প্রতিনিধিদলটি আঙ্কারায় ছিল।

তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলী ইয়ারলিকায়া সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে জানান, আল-হাদ্দাদকে বহনকারী বিমানটি স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ৮টা ১০ মিনিটে আঙ্কারার এসেনবোগা বিমানবন্দর থেকে ত্রিপোলির উদ্দেশে যাত্রা করে। এর প্রায় ৪০ মিনিট পর রেডিও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

আলী ইয়ারলিকায়া বলেন, আঙ্কারার হ্যায়মানা জেলার কেসিককাভাক গ্রামের কাছে বিমানের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। তিনি জানান, দাসো ফ্যালকন-৫০ মডেলের জেটটি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে হ্যায়মানার ওপর দিয়ে উড্ডয়নকালে জরুরি অবতরণের অনুরোধ জানিয়েছিল।

তুর্কি প্রেসিডেন্সিয়াল কমিউনিকেশন অফিসের প্রধান বুরহানেত্তিন দুরান জানান, বিমানটি এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলকে বৈদ্যুতিক ত্রুটির কথা জানিয়ে জরুরি অবতরণের অনুরোধ করেছিল। বিমানটিকে পুনরায় এসেনবোগা বিমানবন্দরের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং সেখানে অবতরণের প্রস্তুতিও শুরু হয়েছিল। তবে জরুরি অবতরণের জন্য নিচে নামার সময়ই বিমানটি রাডার থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়।

স্থানীয় টেলিভিশনে প্রচারিত সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, হ্যায়মানার রাতের আকাশে হঠাৎ একটি বিস্ফোরণের মতো আলো জ্বলে ওঠে।

তুরস্কের বিচারমন্ত্রী ইলমাজ তুনচ জানিয়েছেন, আঙ্কারার প্রধান প্রসিকিউটরের কার্যালয় এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।

আল জাজিরাকে দেওয়া এক বিবৃতিতে একজন তুর্কি কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে লিবীয় সেনাপ্রধানের বিমান দুর্ঘটনায় নাশকতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। প্রাথমিক কারণ হিসেবে যান্ত্রিক ত্রুটিকেই দায়ী করা হচ্ছে।’

লিবিয়ার সরকার (জিএনইউ) জানিয়েছে, দুর্ঘটনার তদন্তে তুর্কি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করার জন্য লিবিয়া থেকে একটি দল আঙ্কারায় পাঠানো হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় গেজেট

এই মব আক্রমণগুলো হাওয়া থেকে ঘটেনি—জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞের ক্ষোভ

ঢাকা মেডিকেলে ফেলে যাওয়া তরুণীর মরদেহ শনাক্ত, পরিবারের অভিযোগ হত্যা

২০২৫ সালে যেসব ঐতিহাসিক রহস্যের সমাধান দিল বিজ্ঞান

আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক দখলে প্রতিযোগিতা করছে বিএনপি-জামায়াত: নাহিদ ইসলাম

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফিলিস্তিনপন্থী প্ল্যাকার্ড হাতে এবার লন্ডনে গ্রেপ্তার গ্রেটা থুনবার্গ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
লন্ডনে গ্রেপ্তারের মুহূর্তে গ্রেটা থুনবার্গ। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান
লন্ডনে গ্রেপ্তারের মুহূর্তে গ্রেটা থুনবার্গ। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান

লন্ডনে ফিলিস্তিনপন্থী এক বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার সময় সুইডিশ জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গকে গ্রেপ্তার করেছে ব্রিটিশ পুলিশ। মঙ্গলবার সকালে (২৩ ডিসেম্বর) লন্ডনের ফেনচার্চ স্ট্রিটে একটি বিমা প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ের সামনে এই ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানিয়েছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’-এর প্রতি সমর্থন জানিয়ে প্ল্যাকার্ড প্রদর্শনের অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ২২ বছর বয়সী গ্রেটা থুনবার্গ বিক্ষোভ শুরুর কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তিনি মাটিতে বসে একটি প্ল্যাকার্ড ধরে ছিলেন। প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল—‘আমি প্যালেস্টাইন অ্যাকশন বন্দীদের সমর্থন করি। আমি গণহত্যার বিরোধিতা করি।’

পুলিশ দাবি করেছে, গ্রেটা থুনবার্গের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডের বার্তাটি সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০০-এর ১৩ ধারায় নিষিদ্ধ সংগঠনের প্রতি সমর্থন প্রকাশের শামিল।

এর আগে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া আরও দুই কর্মীকে ‘অপরাধমূলক ক্ষতিসাধনের’ অভিযোগে আটক করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, তাঁরা অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ব্যবহার করে অ্যাসপেন ইন্স্যুরেন্স নামের ওই ভবনের সামনের অংশে লাল রং ছিটিয়ে দেন। পুলিশ জানায়, হাতুড়ি ও লাল রং ব্যবহার করে ভবনটির ক্ষতি করা হয়েছে।

‘প্রিজনার্স ফর প্যালেস্টাইন’ নামের একটি প্রচারগোষ্ঠী জানিয়েছে, অ্যাসপেন ইন্স্যুরেন্সকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে, কারণ প্রতিষ্ঠানটি ইসরায়েলি অস্ত্র প্রস্তুতকারক এলবিট সিস্টেমসের যুক্তরাজ্য শাখাকে বিমা সেবা দিচ্ছিল। সংগঠনটি আরও জানায়, প্যালেস্টাইন অ্যাকশন-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন বন্দী বর্তমানে অনশন কর্মসূচিতে রয়েছেন। মোট ৮ জন বন্দী অনশন শুরু করেছিলেন। এর মধ্যে দুজন ৫২ তম দিনে পৌঁছেছেন এবং তাঁদের স্বাস্থ্যঝুঁকি আশঙ্কাজনক। গুরুতর ঝুঁকির কারণে তিনজন অনশন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছেন।

পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, গ্রেটা থুনবার্গকে পরে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে এবং তাঁকে আগামী মার্চ মাসে আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে। তবে অধিকারকর্মীরা প্রশ্ন তুলেছেন—গত এক বছরে হাজারো মানুষ ‘আই সাপোর্ট প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’ লেখা প্ল্যাকার্ড বহন করলেও, গ্রেটার ক্ষেত্রেই কেন সন্ত্রাসবিরোধী আইন প্রয়োগ করা হলো।

এদিকে অনশনরত বন্দীদের পরিবার ও সমর্থকেরা ব্রিটেনের বিচারমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির সঙ্গে বৈঠকের দাবি জানিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, অনশন সংকট নিরসনে বৈঠক না করে সরকার নিজস্ব নীতিমালা লঙ্ঘন করছে। গ্রেটা থুনবার্গ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘যুক্তিসংগত এই দাবিগুলো মেনে নিলে বন্দীদের মুক্তির পথ তৈরি হবে। গণহত্যা থামাতে যারা নিজেদের অধিকার প্রয়োগ করছে, রাষ্ট্রের উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো।’

উল্লেখ্য, এর আগে অ্যালিয়াঞ্জ ও অ্যাভিভা নামে দুটি বড় বিমা প্রতিষ্ঠান এলবিট সিস্টেমসের যুক্তরাজ্য শাখার সঙ্গে তাদের বিমা চুক্তি বাতিল করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলি অস্ত্র শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ইউরোপজুড়ে চাপ বাড়ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় গেজেট

এই মব আক্রমণগুলো হাওয়া থেকে ঘটেনি—জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞের ক্ষোভ

ঢাকা মেডিকেলে ফেলে যাওয়া তরুণীর মরদেহ শনাক্ত, পরিবারের অভিযোগ হত্যা

২০২৫ সালে যেসব ঐতিহাসিক রহস্যের সমাধান দিল বিজ্ঞান

আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক দখলে প্রতিযোগিতা করছে বিএনপি-জামায়াত: নাহিদ ইসলাম

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত