Ajker Patrika

ইস্তাম্বুলে রাশিয়া-ইউক্রেন সরাসরি আলোচনা আজ, ফলাফল কী হতে পারে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৫ মে ২০২৫, ১৪: ১৭
ফ্রান্সের এলিসি প্রাসাদে ২০১৯ সালের এক বৈঠকে ভ্লাদিমির পুতিন ও ভলোদিমির জেলেনস্কি। ছবি: এএফপি
ফ্রান্সের এলিসি প্রাসাদে ২০১৯ সালের এক বৈঠকে ভ্লাদিমির পুতিন ও ভলোদিমির জেলেনস্কি। ছবি: এএফপি

প্রায় তিন বছর পর সরাসরি আলোচনায় বসতে যাচ্ছে লড়াইরত দুই প্রতিবেশী রাশিয়া ও ইউক্রেন। আজ বৃহস্পতিবার তুরস্কের ঐতিহাসিক শহর ইস্তাম্বুলে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। সবার নজর এখন ইস্তাম্বুলের দিকে। কারণ, এই বৈঠকই রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পারে।

গতকাল বুধবার গভীর রাতে রুশ প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিন ঘোষণা দিয়েছে যে, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই আলোচনায় উপস্থিত থাকবেন না। অন্যদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি উপস্থিত থাকবেন কি না, তা নিশ্চিত নয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগে আলোচনায় যোগ দেওয়ার ইঙ্গিত দিলেও তিনিও উপস্থিত থাকবেন না বলে মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

গত রোববার পুতিন তুরস্কে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব দেন। যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যরা যেখানে এত দিন প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনার চেষ্টা চালিয়েছিল, সেখানে পুতিন সরাসরি বৈঠকের কথা বলেন। তিনি ২০২২ সালে তুরস্কে হওয়া সরাসরি আলোচনার কথা উল্লেখ করে তা আবার শুরু করার পক্ষে যুক্তি দেন।

পুতিন বলেন, ‘২০২২ সালে আলোচনা রাশিয়া ভেঙে দেয়নি। কিয়েভই সেটা করেছিল। তবু আমরা কিয়েভকে কোনো পূর্বশর্ত ছাড়াই সরাসরি আলোচনা আবার শুরু করার প্রস্তাব দিচ্ছি।’ ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় আক্রমণ শুরু করে। এর অল্প সময় পরই তুরস্কের ইস্তাম্বুলে রাশিয়া ও ইউক্রেন আলোচনা করেছিল।

ভলোদিমির জেলেনস্কির মতে, রাশিয়া ইউক্রেনের কাছ থেকে দনবাস অঞ্চলের দখল ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানানোয় সেই আলোচনা ভেঙে যায়। দনবাস অঞ্চল ইউক্রেনের দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলজুড়ে বিস্তৃত, যার কিছু অংশ রাশিয়া দখল করে নিয়েছে।

জেলেনস্কি আরও বলেন, রাশিয়া চেয়েছিল ইউক্রেন দীর্ঘ পাল্লার অস্ত্র সমর্পণ করুক, নিরপেক্ষতা ঘোষণার জন্য সংবিধানে পরিবর্তন আনুক এবং তাদের সশস্ত্র বাহিনীর আকার উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে ফেলুক। জেলেনস্কি সে সময় বলেছিলেন, ‘কোনো আলোচনাই হয়নি, এটি ছিল এক খুনির চরমপত্র।’

জেলেনস্কি আগে বলেছিলেন, যেকোনো শান্তি চুক্তির জন্য রাশিয়াকে দখল করা ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে হবে। তবে গত বছরের ডিসেম্বরে তিনি বলেন, ন্যাটো যদি বর্তমানে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ইউক্রেনের অংশের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেয় তবে যুদ্ধের ‘উত্তেজনাপূর্ণ পর্যায়’ শেষ হতে পারে। তিনি আরও বলেন, রাশিয়া যে ভূমি দখল করেছে তা কূটনৈতিকভাবে আলোচনা করা যেতে পারে।

লন্ডনভিত্তিক থিংক ট্যাংক চ্যাথাম হাউসের সিনিয়র কনসালটিং ফেলো কিয়ের জাইলস আল-জাজিরাকে বলেছেন, ‘ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য আমেরিকা যে চাপ সৃষ্টি করেছে, তা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়েছে। মনে হচ্ছে এই পরিবর্তনের সাম্প্রতিক উপাদানগুলো, বিশেষ করে ইউক্রেনের প্রতি ইউরোপীয় সংহতি, রাশিয়াকে সরাসরি আলোচনায় অংশ নিতে বাধ্য করেছে।’

ইউক্রেনের চার প্রধান ইউরোপীয় মিত্র পুতিনকে নিঃশর্ত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে বা নতুন নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে হবে বলে চরমপত্র দেওয়ার একদিন পর আলোচনায় পুতিনের আগ্রহ দেখা দেয়। এই ৪ ইউরোপীয় দেশ হলো—ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, জার্মানি এবং পোল্যান্ড। তারা কিয়েভ সফরের পর এই চরমপত্র দেয়।

এই চার দেশ পুতিনকে ১২ মে পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেয়। ১১ মে পুতিন যুদ্ধবিরতি মানার প্রতিশ্রুতি না দিয়ে বলেন, ‘আমরা ইউক্রেনের সঙ্গে কার্যকর আলোচনার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এর উদ্দেশ্য হলো—সংঘাতের মূল কারণ দূর করা, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে একটি দীর্ঘমেয়াদি, স্থায়ী শান্তি স্থাপন করা।’

আলোচনা আজ বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টা নাগাদ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। আলোচনাটি ইস্তাম্বুলের দোলমাবাগ প্রাসাদে রুদ্ধদ্বার কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে। ইস্তাম্বুল শহর এশিয়া ও ইউরোপের সীমানা জুড়ে অবস্থিত। বসফোরাস প্রণালির ওপর অবস্থিত এই প্রাসাদটি ১৯ শতকের মাঝামাঝি থেকে ১৯২২ সাল পর্যন্ত উসমানীয় সাম্রাজ্যের প্রধান প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল।

চার ইউরোপীয় নেতা—ব্রিটেনের কিয়ের স্টারমার, ফ্রান্সের ইমানুয়েল মাখোঁ, জার্মানির ফ্রিডরিখ ম্যার্ৎজ এবং পোল্যান্ডের দোনাল্দ তুস্ক—বলেছেন, তাঁরা পুতিনকে তাদের চরমপত্র সম্পর্কে ফোন কলের মাধ্যমে ট্রাম্পকে জানিয়েছেন এবং ইঙ্গিত দেন, ট্রাম্পও এর পক্ষে। কিন্তু পুতিন যখন কিয়েভ ও মস্কোর মধ্যে সরাসরি আলোচনার আহ্বান জানান, তখন ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে এক বিবৃতিতে ইউক্রেনকে ‘অবিলম্বে’ রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা করতে বলেন।

ট্রাম্প ২০২৪ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের সময় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি দ্রুত ইউক্রেন যুদ্ধ অবসান ঘটাবেন। ট্রাম্প প্রশাসন ফেব্রুয়ারি থেকেই সেই প্রচেষ্টা শুরু করে। সে সময় সৌদি আরবে রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মার্কিন কর্মকর্তাদের পৃথক বেশ কয়েক দফায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে কোনো চুক্তি সে সময় হয়নি।

এ ছাড়া, গত এপ্রিলে ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেনকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়ার অবস্থান থেকে একধাপ পিছিয়ে আসার ইঙ্গিত দেয়। ট্রাম্প প্রশাসন বলেছিল, তারা চায় ইউরোপ ইউক্রেনের প্রতিরক্ষায় নেতৃত্ব দিক। দেশটি জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য অগ্রাধিকার রয়েছে, যার মধ্যে সীমান্ত নিরাপত্তা অন্যতম। তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহে ট্রাম্প এবং তাঁর দল আলোচনায় অর্থপূর্ণ অগ্রগতির অভাবে ক্রমবর্ধমান হতাশা প্রকাশ করেছেন এবং শান্তি মধ্যস্থতার প্রচেষ্টা থেকে সরে আসার হুমকি দিয়েছেন।

আজ ইস্তাম্বুলে যে আলোচনা হবে, তাতে ইউক্রেনের যোগদানের ওপর জোর দেওয়ার ব্যাখ্যায় ট্রাম্প যুক্তি দিয়েছিলেন, ‘অন্তত তারা নির্ধারণ করতে পারবে যে একটি চুক্তি সম্ভব কিনা এবং যদি সম্ভব না হয় তবে ইউরোপীয় নেতারা এবং যুক্তরাষ্ট্র জানতে পারবে পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়িয়েছে এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে পারবে!’

এদিকে, পুতিনের আহ্বানের পর জেলেনস্কি সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লেখেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প (রুশ প্রেসিডেন্ট) পুতিনের সঙ্গে সরাসরি যে আলোচনার ধারণা দিয়েছেন, তা সমর্থন করেছি। আমি প্রকাশ্যে সাক্ষাতের জন্য আমার প্রস্তুতি তুলে ধরেছি। আমি তুরস্কে থাকব। আমি আশা করি, রাশিয়ানরা সাক্ষাৎ এড়িয়ে যাবে না।’

গত মঙ্গলবারও জেলেনস্কি ঘোষণা করেন, তিনি বৃহস্পতিবার আঙ্কারায় থাকবেন। এ সময় তিনি সেখানে তিনি তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের সঙ্গে দেখা করবেন। তবে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা পরবর্তীতে ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।

ট্রাম্প বলেছেন, তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং ইউক্রেন ও রাশিয়া বিষয়ক বিশেষ দূত কিথ কেলগকে ইস্তাম্বুলের আলোচনায় যোগ দিতে পাঠাবেন। বুধবার রাতে রাশিয়া আলোচনার জন্য তাদের দলের ঘোষণা দিয়েছে। এতে পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী ভ্লাদিমির মেদিনস্কি নেতৃত্ব দেবেন। তাঁর সঙ্গে থাকবেন উপপ্রতিরক্ষামন্ত্রী আলেকজান্ডার ফোমিন এবং প্রধান গোয়েন্দা অধিদপ্তরের পরিচালক ইগর কোস্তিউকভ।

জেলেনস্কি আগে বলেছিলেন, পুতিন উপস্থিত থাকলেই কেবল তিনি সরাসরি আলোচনায় থাকবেন। জেলেনস্কি মঙ্গলবার এক্স পোস্টে বলেন, ‘রাশিয়ায় সবকিছুর সিদ্ধান্ত পুতিন নেন, তাই তিনিই যুদ্ধের সমাধান করবেন। এটা তাঁর যুদ্ধ। সুতরাং, আলোচনা তারই সঙ্গে হওয়া উচিত।’ পুতিন যেহেতু এখন উপস্থিত থাকার জন্য প্রস্তুত নন, তাই জেলেনস্কি নিজে ব্যক্তিগতভাবে আলোচনায় অংশ নেবেন কিনা বা তিনি তাঁর দলের ওপর ছেড়ে দেবেন কিনা তা স্পষ্ট নয়।

তবে, জেলেনস্কি অনেক দিক থেকে পুতিনের চেয়ে এগিয়ে গেছেন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে এবং তাঁকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে। কিয়ের জাইলস বলেছেন, ‘জেলেনস্কি রাশিয়ার সামনে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন যাতে তারা দেখাতে পারে যে, তাদের সত্যিকারের আগ্রহ আছে; রাশিয়া এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে নাকি করবে না, সেটা তাদের ওপর নির্ভর করছে।’

এদিকে, তুরস্কের বৈঠকে ঠিক কী কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে, তা অনুমান করা কঠিন। জাইলস বলেছেন, ‘বৈঠকে কোনো অর্থপূর্ণ আলোচনা হবে কি না তা ভবিষ্যদ্বাণী করা হঠকারিতা হবে। কারণ, দুই পক্ষের গ্রহণযোগ্য ফল এখনো অনেক দূরে। রাশিয়া ইউক্রেনকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে নিষ্ক্রিয় করতে চায়, আর ইউক্রেন টিকে থাকতে চায়।’

বর্তমানে, ইউক্রেন ৩০ দিনের নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে। অন্যদিকে, রাশিয়া জোর দিয়ে বলেছে—তারা এই ধরনের যুদ্ধবিরতিতে যোগ দেওয়ার আগে তাদের বেশ কয়েকটি দাবি মানতে হবে। মস্কো বলেছে, তারা যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থার ব্যাপারে নিশ্চয়তা চায় এবং ইউক্রেন যেন এই সুযোগে পুনরায় অস্ত্র সংগ্রহ ও আরও সৈন্য সমাবেশ না করে। এর পরিবর্তে, পুতিন সম্প্রতি সংক্ষিপ্ত, একতরফা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছেন। তবে ইউক্রেন বলছে, রাশিয়া আসলে কখনো মেনে চলেনি।

পুতিন রোববার বলেন, ‘আমরা এটা উড়িয়ে দিচ্ছি না যে এই আলোচনা চলাকালে, কিছু নতুন যুদ্ধবিরতি, একটি নতুন যুদ্ধবিরতি এবং একটি বাস্তব যুদ্ধবিরতি সম্পর্কে একমত হওয়া সম্ভব হবে, যা কেবল রাশিয়াই নয়, ইউক্রেনীয় পক্ষও মেনে চলবে। (এটি) হবে প্রথম পদক্ষেপ। আমি আবারও বলছি, এটি দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীল শান্তির দিকে এবং সশস্ত্র সংঘাত চালিয়ে যাওয়ার কোনো পূর্বাভাস নয়।’

জাইলস বলেছেন, যদি আলোচনা হয়, ‘তবে তা-ই একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত শান্তি আলোচনা বলে যা উল্লেখ করা হয়েছে, তার কোনোটিই আসলে সেরকম ছিল না।’ তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে হওয়া দুটি সমান্তরাল আলোচনার কথা উল্লেখ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

থাই-কম্বোডিয়া সীমান্তে গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো বিষ্ণু মূর্তি, নিন্দা জানাল ভারত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মূর্তিটি ২০১৪ সালে নির্মিত হয়েছিল। ছবি: সংগৃহীত
মূর্তিটি ২০১৪ সালে নির্মিত হয়েছিল। ছবি: সংগৃহীত

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া সীমান্তে দুই দেশের মধ্যকার বিরোধপূর্ণ এলাকায় ভগবান বিষ্ণুর একটি মূর্তি ধ্বংসের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করেছে ভারত। আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই ঘটনাকে একটি ‘অসম্মানজনক কাজ’ হিসেবে অভিহিত করেছে এবং সংশ্লিষ্ট দুই দেশকেই আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে আসার আহ্বান জানিয়েছে।

কম্বোডিয়ার প্রিয়া বিহার প্রদেশের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, গত সোমবার (২২ ডিসেম্বর) থাই সামরিক বাহিনী একটি এক্সকাভেটর ব্যবহার করে ভগবান বিষ্ণুর মূর্তিটি গুঁড়িয়ে দেয়।

বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূর্তিটি ২০১৪ সালে নির্মিত হয়েছিল। এটি সীমান্ত থেকে প্রায় ১০০ মিটার ভেতরে কম্বোডিয়ার আন সেস এলাকায় অবস্থিত ছিল।

প্রিয়া বিহারের মুখপাত্র লিম চানপানহা এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘বৌদ্ধ ও হিন্দু অনুসারীদের কাছে পূজনীয় প্রাচীন মন্দির ও মূর্তি ধ্বংসের এই ঘটনা আমরা কোনোভাবেই মেনে নেব না।’ তবে থাইল্যান্ডের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে বলেন, সীমান্ত বিরোধের জের ধরে এ ধরনের কাজ অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি বলেন, ‘ভূখণ্ড নিয়ে দাবি যাই থাকুক না কেন, এ ধরনের অসম্মানজনক কাজ বিশ্বজুড়ে হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে। এমন ঘটনা ঘটা উচিত নয়।’

ভারত আবারও উভয় পক্ষকে শান্তি বজায় রাখতে এবং জানমাল ও ঐতিহ্যের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সংলাপ ও কূটনীতির পথে ফেরার অনুরোধ জানিয়েছে।

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে ৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত নিয়ে বিরোধ দীর্ঘদিনের। ঔপনিবেশিক আমলের সীমানা নির্ধারণকে কেন্দ্র করে এই বিরোধের শুরু। গত জুলাইয়ে পাঁচ দিনের লড়াইয়ে কয়েক ডজন মানুষ নিহত হয়েছিল। গত ডিসেম্বরে নতুন করে শুরু হওয়া সংঘাতে এ পর্যন্ত ৪০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন এবং প্রায় ১০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

বুধবার থেকে উভয় দেশের সামরিক কর্মকর্তারা আবারও যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন।

বিষ্ণু মূর্তি ধ্বংসের এই ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ভারতসহ বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক মহল আশা করছে, সংঘাতের পরিবর্তে শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমেই এই সংকটের সমাধান হবে। হিন্দু ও বৌদ্ধ দেবতারা এই অঞ্চলের মানুষের কাছে অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্র এবং এটি আমাদের অভিন্ন সভ্যতা ও ঐতিহ্যের অংশ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাজায় ধ্বংসস্তূপের মাঝেই বড়দিনের আনন্দ খুঁজছে ক্ষুদ্র খ্রিস্টান সম্প্রদায়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গত ২১ ডিসেম্বর গাজা সিটিতে ক্রিসমাস উদযাপনের আগে হলি ফ্যামিলি ক্যাথলিক চার্চের বাইরে গাজার শিশু ও সন্ন্যাসিনীরা। ছবি: এপির সৌজন্যে
গত ২১ ডিসেম্বর গাজা সিটিতে ক্রিসমাস উদযাপনের আগে হলি ফ্যামিলি ক্যাথলিক চার্চের বাইরে গাজার শিশু ও সন্ন্যাসিনীরা। ছবি: এপির সৌজন্যে

গাজা উপত্যকায় গত দুই বছর ধরে চলা ধ্বংসলীলা আর লাশের মিছিলের মাঝেও বড়দিনের আনন্দ ফিরে পাওয়ার এক বিষাদময় চেষ্টা চালাচ্ছে সেখানকার ক্ষুদ্র খ্রিস্টান সম্প্রদায়। একটি নড়বড়ে যুদ্ধবিরতি কিছুটা স্বস্তি দিলেও, ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধের ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি আর বাস্তুচ্যুত মানুষের হাহাকার অনেক ঐতিহ্যবাহী উৎসবকে ম্লান করে দিয়েছে।

৭৬ বছর বয়সী আত্তাল্লাহ তরাজি সম্প্রতি বড়দিনের উপহার হিসেবে এক জোড়া মোজা আর স্কার্ফ পেয়েছেন। গাজার কনকনে শীত থেকে বাঁচতে এগুলোই এখন তাঁর বড় সম্বল। গির্জার অন্যান্য সদস্যদের সাথে তরাজি যখন গাইলেন—‘খ্রিস্টের জন্ম হয়েছে, হালেলুইয়া’ (একটি হিব্রু শব্দ, যার অর্থ প্রভুর প্রশংসা), তখন কিছুক্ষণের জন্য হলেও যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার বিভীষিকা ঢাকা পড়েছিল বিশ্বাসের সুরে।

গাজার সেন্ট্রাল সিটি এলাকার ‘হলি ফ্যামিলি চার্চ’ কম্পাউন্ডে আশ্রয় নেওয়া তরাজি বলেন, ‘আমরা এই পবিত্র মুহূর্তে যুদ্ধ, বিপদ আর বোমাবর্ষণের কথা ভুলে যেতে চাই। খ্রিস্টের জন্মের আনন্দ আমাদের সব তিক্ততাকে ছাপিয়ে যাক।’

তবে সবার জন্য উৎসবের অনুভূতি এক নয়। শাদি আবু দাউদের জন্য এবারের বড়দিনটি অত্যন্ত কষ্টের। গত জুলাই মাসে এই ক্যাথলিক চার্চ কম্পাউন্ডেই ইজরায়েলি হামলায় তাঁর মা নিহত হন ও ছেলে আহত হয়। ইজরায়েল একে ‘দুর্ঘটনা’ বলে দুঃখ প্রকাশ করলেও স্বজন হারানোর ক্ষত এখনও দগদগে। আবু দাউদ বলেন, জখম এখনও কাঁচা। এখানে কোনো উৎসব নেই, আমরা এখনও ‘না যুদ্ধ না শান্তি’র এক অদ্ভুত অবস্থার মধ্যে বাস করছি।

গাজার প্রায় ২০ লাখ বাসিন্দার মধ্যে খ্রিস্টানদের সংখ্যা এখন নগণ্য। যুদ্ধের কারণে অনেক পরিবার দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। ২৩ বছর বয়সী ওয়াফা ইমাদ এলসায়েঘ জানান, বন্ধুবান্ধব আর আত্মীয়রা না থাকায় আগের মতো আমেজ নেই। তিনি বলেন, ‘আমরা পরিবার নিয়ে সাজসজ্জা করছি ঠিকই, কিন্তু যাদের সাথে সব আনন্দ ভাগ করে নিতাম, তারা আজ গাজায় নেই। এই পরিবেশ আগের মতো করে আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।’

৩৫ বছর বয়সী মা এলিনোর আমাশ তাঁর সন্তানদের মুখে হাসি ফোটাতে ঘরে বড়দিনের গাছ (ক্রিসমাস ট্রি) সাজিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার সন্তানেরা কিছু চকলেট আর মিষ্টি পেয়ে বোমার ভয় ছাড়া শ্বাস নিতে পারছে। কিন্তু তাবুগুলোতে বসবাসকারী মানুষের কষ্ট দেখে চোখে জল আসে।’

গাজার খ্রিস্টানরা মনে করেন, তাঁরা সংখ্যায় যত কমই হোক না কেন, এটি এই ভূমির প্রতি ভালোবাসা এবং বিশ্বাসের এক অটল সাক্ষ্য। আত্তাল্লাহ তরাজি প্রার্থনা করেন যেন তাঁর জাতি শান্তি ও স্বাধীনতা পায়। তিনি বিশ্বাস করেন, এই পরিস্থিতির চেয়েও বড়দিনের আনন্দ এবং তাঁদের বিশ্বাস অনেক বেশি শক্তিশালী।

গত অক্টোবর থেকে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির পর গাজায় হামলার তীব্রতা কমলেও মাঝেমধ্যেই প্রাণঘাতী আঘাত আসছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইজরায়েলি অভিযানে এ পর্যন্ত প্রায় ৭১ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অর্ধেকই নারী ও শিশু।

অতিবৃষ্টিতে বাস্তুচ্যুত মানুষের তাবুগুলো তলিয়ে গেছে, যা ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মস্কোতে বিস্ফোরণ, দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ নিহত তিন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ৪২
মস্কোর ঘটনাস্থলে পুলিশ। ছবি: বিবিসি
মস্কোর ঘটনাস্থলে পুলিশ। ছবি: বিবিসি

রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে এক বিস্ফোরণে দুজন ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা এবং আরেকজন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। রাশিয়ার তদন্ত সংস্থাগুলোর বরাতে জানা গেছে, দক্ষিণ মস্কোর ইয়েলেতস্কায়া স্ট্রিট এলাকায় এই বিস্ফোরণ ঘটে স্থানীয় সময় বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) ভোরে। ঘটনাস্থলটি সেই জায়গার কাছে, যেখানে চলতি সপ্তাহের শুরুতে এক রুশ জেনারেল গাড়িবোমা হামলায় নিহত হয়েছিলেন।

রাশিয়ার ইনভেস্টিগেটিভ কমিটির বিবৃতির বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে আটকের চেষ্টা করার সময় বিস্ফোরণটি ঘটে। পুলিশ কর্মকর্তারা যখন ওই ব্যক্তির কাছে যান, তখনই একটি বিস্ফোরক ডিভাইস সক্রিয় হয়ে যায়। বিস্ফোরণের ফলে ঘটনাস্থলেই দুই পুলিশ কর্মকর্তা প্রাণ হারান। এ সময় তাঁদের পাশে থাকা আরেকজন ব্যক্তিও বিস্ফোরণে নিহত হন।

নিহত দুই পুলিশ কর্মকর্তার বয়স ছিল ২৪ ও ২৫ বছর। আল জাজিরার মস্কো প্রতিনিধি ইউলিয়া শাপোভালোভার তথ্য অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে একজনের স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। তিনি বলেন, ‘এটি তাদের পরিবারের জন্য এক ভয়াবহ ট্র্যাজেডি।’ বিস্ফোরণের প্রকৃত উদ্দেশ্য এখনো স্পষ্ট নয় বলে জানিয়েছে রুশ কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিস্ফোরণের শব্দ ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী। কাছাকাছি বসবাসকারী আলেক্সান্ডার নামের এক ব্যক্তি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘একটা ভয়ংকর শব্দ হয়েছিল, কয়েক দিন আগের গাড়ি বিস্ফোরণের মতোই।’ আরেক বাসিন্দা রোজা জানান, বিস্ফোরণের সময় তাঁদের পুরো ভবনটি কেঁপে ওঠে এবং তিনি ঘুম থেকে জেগে ওঠেন।

বিস্ফোরণের পরপরই এলাকাটি ঘিরে ফেলে পুলিশ বাহিনী। রুশ টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ছবিতে দেখা গেছে, ঘটনাস্থলে ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। তদন্তকারীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এবং বিস্ফোরক পাচারের অভিযোগে একটি মামলা করেছে।

এই বিস্ফোরণ ঘটেছে সেই এলাকার কাছে, যেখানে গত সোমবার রুশ জেনারেল ফানিল সারভারভ গাড়ির নিচে পেতে রাখা বিস্ফোরক ডিভাইসের মাধ্যমে নিহত হন। সারভারভ রুশ জেনারেল স্টাফের অপারেশনাল ট্রেনিং বিভাগের প্রধান ছিলেন এবং ইউক্রেনে চলমান সামরিক অভিযানের জন্য সেনাদের প্রশিক্ষণের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

রাশিয়া জেনারেল সারভারভ হত্যার পেছনে ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। তবে ইউক্রেন এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে রাশিয়া ও দখল করা ইউক্রেনীয় অঞ্চলে একাধিক বিস্ফোরণের ঘটনায় রুশ সামরিক কর্মকর্তা এবং এই যুদ্ধের সমর্থক বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শানলিউরফা: নবীদের যে নগরে মিলেছে তিন ধর্মের মানুষ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
তুরস্কের শানলিউরফা শহর। ছবি: সিএনএন
তুরস্কের শানলিউরফা শহর। ছবি: সিএনএন

দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কের শানলিউরফা শহরকে বলা হয় ‘নবীদের নগরী’। সিরিয়া সীমান্ত থেকে মাত্র ৪০ মাইল উত্তরে অবস্থিত এই শহরটি হাজার বছরের ইতিহাস, ধর্মীয় বিশ্বাস ও সংস্কৃতির এক অনন্য সংযোগস্থল। এখানে ইহুদি, খ্রিষ্টান ও ইসলাম—এই তিন একেশ্বরবাদী ধর্মের কাহিনি এসে মিলেছে।

বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সিএনএন জানিয়েছে, শানলিউরফার পুরোনো শহরের দেরগাহ মসজিদ কমপ্লেক্সে অবস্থিত নীলাভ পানির ‘বালিক্লিগোল’ বা ‘মাছের হ্রদ’। মূলত এখানে আছে দুটি পুকুর। ধর্মীয় মতে, দুটি পুকুরের বড়টিতে নবী ইব্রাহিম (আ.)-কে আগুনে নিক্ষেপ করেছিলেন মেসোপটেমিয়ার রাজা নমরুদ। আল্লাহ তৎক্ষণাৎ ওই আগুনকে পানি এবং জ্বলন্ত কাঠকে মাছে রূপান্তরিত করেছিলেন। এ ছাড়া ‘আইনজেলিহা’ নামের ছোট পুকুরটির নামকরণ করা হয়েছে নমরুদের কন্যা জেলিহার নামে। ইব্রাহিম নবীর প্রতি বিশ্বাসের কারণে এই পুকুরে আগুনে ঝাঁপ দিয়ে জেলিহা প্রাণ হারিয়েছিলেন বলে বিশ্বাস।

দুটি পুকুরই কালো দাগওয়ালা কার্প মাছে ভরা। এগুলোকে পবিত্র মনে করা হয়। তাই এই মাছগুলোকে ধরা বা এগুলোর ক্ষতি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এই কারণেই বালিক্লিগোল শুধু একটি পর্যটনস্থল নয়, বরং গভীর ধর্মীয় আবেগ ও ইতিহাসের প্রতীক। মাছের গায়ে থাকা কালো দাগগুলোকে আগুনের ছাইয়ের চিহ্ন হিসেবে ধরে নেওয়া হয়।

বালিক্লিগোলে ভেসে বেড়ায় কালো দাগওয়ালা কার্প মাছ। ছবি: সিএনএন
বালিক্লিগোলে ভেসে বেড়ায় কালো দাগওয়ালা কার্প মাছ। ছবি: সিএনএন

ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে শানলিউরফা নানা নামে পরিচিত ছিল। আরামীয়রা একে ডাকত উরহাই, গ্রিক শাসনামলে নাম ছিল এডেসা, আরব বিজয়ের পর নাম হয় রোহা। অটোমানেরা ১৬০৭ সালে এই নগরীর নাম রাখে উরফা। পরে ১৯৮৪ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রতিরোধের স্বীকৃতি হিসেবে যুক্ত হয় ‘শানলি’, অর্থাৎ ‘গৌরবময়’।

এই শহরটি ইব্রাহিম (আ.), আইয়ুব (আ.), নূহ (আ.) ও জেথ্রোর মতো নবীদের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে বিশ্বাস করা হয়। পুরোনো শহরের দেরগাহ মসজিদ কমপ্লেক্সে অবস্থিত বালিক্লিগোল মুসলিম তীর্থযাত্রীদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র। এখানেই রয়েছে মেভলিদ-ই-হালিল গুহা। বিশ্বাস করা হয়, এখানেই জন্ম হয়েছিল ইব্রাহিম নবীর। নারীরা সন্তান কামনায় ও আরোগ্য লাভের আশায় এই গুহায় আসেন।

তবে শানলিউরফার ইতিহাস শুধু ধর্মগ্রন্থেই সীমাবদ্ধ নয়। শহরটি থেকে ১৪ মাইল দূরেই আছে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন ধর্মীয় স্থাপনা বা উপাসনালয় হিসেবে চিহ্নিত ‘গ্যোবেকলি তেপে’। প্রায় ১১-১২ হাজার বছরের পুরোনো এই স্থাপনাটি মানবসভ্যতার ধারণাকেই বদলে দিয়েছে। খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় ৯৬০০ সালের এই নিওলিথিক স্থাপনাটি কৃষি ও মৃৎশিল্পের আগেই নির্মিত—যা প্রমাণ করে, ধর্মীয় আচার হয়তো সভ্যতার সূচনাতেও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এখানে পাওয়া টি-আকৃতির স্তম্ভ ও খোদাই করা পশুর ভাস্কর্য বিশ্বব্যাপী বিস্ময় সৃষ্টি করেছে।

পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন ধর্মীয় স্থাপনা বা উপাসনালয় হিসেবে চিহ্নিত ‘গ্যোবেকলি তেপে’। ছবি: সিএনএন
পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন ধর্মীয় স্থাপনা বা উপাসনালয় হিসেবে চিহ্নিত ‘গ্যোবেকলি তেপে’। ছবি: সিএনএন

শানলিউরফা প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে ১০ হাজারের বেশি নিদর্শন। এর মধ্যে ‘উরফা ম্যান’ নামের ১১ হাজার ৫০০ বছরের পুরোনো মানব মূর্তিটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। পাশেই হালেপলিবাহচে মোজাইক জাদুঘর ও কিজিলকয়ুন নেক্রোপলিস শহরের রোমান যুগের ইতিহাস তুলে ধরে।

ইতিহাস ও ধর্মের পাশাপাশি শানলিউরফা খাবার ও আতিথেয়তার জন্যও বিখ্যাত। উরফা কাবাব, পাটলিজান কাবাব, চি কফতে ও শিল্লিক তাতলিসি এখানকার জনপ্রিয় খাবার। স্থানীয়দের সঙ্গে ধীরে চা পান, পুরোনো বাজারে হাঁটা আর ‘সিরা গেসেসি’ নামের সাংস্কৃতিক আড্ডায় অংশ নিলে বোঝা যায়—এই শহর শুধু দেখার নয়, অনুভব করারও।

শানলিউরফা নগরীতে ‘সিরা গেসেসি’ নামে রাতের আড্ডা। ছবি: সিএনএন
শানলিউরফা নগরীতে ‘সিরা গেসেসি’ নামে রাতের আড্ডা। ছবি: সিএনএন

বলা যায়—শানলিউরফা যেন এক জীবন্ত জাদুঘর; যেখানে ধর্ম, ইতিহাস ও মানবসভ্যতার গল্প একসূত্রে গেঁথে পাশাপাশি হাঁটে অতীত ও বর্তমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত