Ajker Patrika

ভারতে বন্যা ও ধসে বেড়েছে মৃত্যু, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ মমতার

কলকাতা প্রতিনিধি  
আপডেট : ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ১৫: ০৭
বন্যায় সেতু ভেঙে গিয়ে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ছবি: আইএএনএস
বন্যায় সেতু ভেঙে গিয়ে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ছবি: আইএএনএস

গত শনিবার রাতের প্রবল বজ্রবৃষ্টি ভারতের উত্তরের জেলাগুলোতে ভয়াবহ বিপর্যয় বয়ে এনেছে। দার্জিলিং, মিরিক, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ারে এখন শুধু ধস, ভাঙন আর হাহাকারের চিত্র। মাত্র ১২ ঘণ্টায় প্রায় ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ভুটান ও সিকিম থেকে নেমে আসা অতিরিক্ত জল এবং রাতভর বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢল বেড়ে যাওয়ায় একাধিক বাঁধ ভেঙে গেছে এবং বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে।

উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ জানান, বন্যা ও ভূমিধসের কারণে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি পিটিআইকে বলেন, ‘পরিস্থিতি এখন অত্যন্ত জটিল। এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে ২৮ জনের মৃত্যুসংক্রান্ত খবর এসেছে। গত রাত থেকে আরও কিছু মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মৃতের ঘটনা ঘটেছে দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি জেলায়। ক্রমাগত বৃষ্টিপাত উদ্ধার অভিযানকে কঠিন করে তুলছে।’

তবে স্থানীয় সূত্র ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, মৃতের সংখ্যা ইতিমধ্যে ৩৬-এ পৌঁছেছে। শতাধিক আহত হয়েছেন এবং নিখোঁজের সংখ্যা অগণিত।

দার্জিলিংয়ের জেলা শাসক ডা. প্রীতি গোয়েল এবং জলপাইগুড়ির জেলা শাসক শমা পারভীন সেনা, এনডিআরএফ, পুলিশের সাহায্য নিয়ে উদ্ধার ও পুনর্বাসনকাজ চালাচ্ছেন। তবে ধসের কারণে সড়কযোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে।

শিলিগুড়ি–মিরিক সেতু ধসে পড়ায় এবং দার্জিলিং–সোনাদা রোড বন্ধ থাকায় উদ্ধারকাজ চালাতে বিকল্প পথ খুঁজছেন উদ্ধারকারীরা। অনেক এলাকায় রেল পরিষেবা আংশিকভাবে ব্যাহত হয়েছে। অনেক এলাকা বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।

প্রশাসন বলছে, প্রাথমিক হিসাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হাজার কোটি টাকারও বেশি। স্কুল ও পঞ্চায়েত ভবনগুলোতে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

এদিকে আকাশপথে বিপর্যস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে এই দুর্যোগকে ‘প্রকৃতির নয়, মনুষ্যসৃষ্ট’ বলে মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর জন্য সরাসরি কেন্দ্রকে দায়ী করেছেন তিনি।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কেন্দ্রের কোনো সক্রিয় সহায়তা নেই বলে অভিযোগ করে মমতা বলেন, রাজ্য সরকার নিজের তহবিল থেকে উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা চালাচ্ছে। এদিকে কেন্দ্র দাবি করছে, তারা প্রাথমিক সাহায্য পাঠিয়েছে, কিন্তু রাজ্য প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। বিজেপি বলেছে, সরকার যেন ‘ত্রাণের নামে রাজনীতি না করে বাস্তব সাহায্যে নামে।’

এর জবাবে মুখ্যমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা রাজনীতি করছি না, মানুষের পাশে আছি, কিন্তু কেন্দ্রের উদাসীনতা এবার মানুষ বুঝে গেছে।’

মুখ্যমন্ত্রী আরও অভিযোগ করেন, কেন্দ্র নদী ব্যবস্থাপনায় কোনো দায় নিচ্ছে না এবং গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান বন্ধ করে দিয়েছে। ইন্দো-ভুটান নদী কমিশন পুনরায় গঠনের দাবি জানিয়ে তিনি সতর্ক করে বলেন, নইলে প্রতিবছর এ ধরনের বিপর্যয় দেখা দেবে।

মুখ্যমন্ত্রীর এ অভিযোগ খারিজ করে আজ মঙ্গলবার পানি মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ভারত ইতিমধ্যে ভুটানের সঙ্গে সীমান্ত নদীগুলোর বিষয়ে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে এবং নদী ব্যবস্থাপনায় কোনো বৈষম্য নেই। নদীর ক্ষয়, পলি জমা এবং আকস্মিক বন্যা নিয়ন্ত্রণে দুই দেশের যৌথ বিশেষজ্ঞ দল সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।

মুখ্যমন্ত্রী নিহতদের পরিবারপ্রতি ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণা দিয়েছেন। এ ছাড়া, নিহতের পরিবারের একজন সদস্যকে হোম গার্ড হিসেবে চাকরির সুযোগও দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।

এদিকে আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরও ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে পূর্বাভাসে জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। এরই মধ্যে পাহাড়ি জেলাগুলোতে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই দুর্যোগ কেবল প্রকৃতির খেয়াল নয়, বরং দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা ও নদীনীতির ব্যর্থতার ফল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ