Ajker Patrika

অভিনব কৌশলে রাশিয়ায় ইউক্রেনের ড্রোন হামলা, যুদ্ধবিমানের সুরক্ষা নিয়ে চিন্তিত পশ্চিমারাও

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০২ জুন ২০২৫, ১১: ১৯
রাশিয়ার চারটি বিমানঘাঁটিতে হামলা করেছে ইউক্রেন। ছবি: স্ক্রিনশট
রাশিয়ার চারটি বিমানঘাঁটিতে হামলা করেছে ইউক্রেন। ছবি: স্ক্রিনশট

গতকাল ১ জুন দুপুরের পরপরই রাশিয়ার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এক অভূতপূর্ব চাঞ্চল্য দেখা যায়। ইউক্রেন রাশিয়ার ভূখণ্ডে এ যাবৎকালের সবচেয়ে দুঃসাহসিক অভিযান পরিচালনা করেছে। যেই ঘটনাকে বিশ্বকে হতবাক করে দিয়েছে। পূর্ব সাইবেরিয়ার ইরকুৎস্ক প্রদেশ থেকে রাশিয়ার সুদূর উত্তরে মুর্মাস্ক পর্যন্ত, ৪ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্বে এই আক্রমণে লক্ষ্যবস্তু ছিল রাশিয়ার চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিমান ঘাঁটি।

ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থা দাবি করছে, এই হামলায় রাশিয়ার যে পরিমাণ যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে তাতে ক্ষতি প্রায় ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার।

স্থানীয়দের পোস্ট করা ফুটেজে দেখা যায়, ছোট কোয়াডকপ্টার ড্রোনগুলো একটি লরি থেকে বেরিয়ে নিকটবর্তী বিমানঘাঁটির দিকে উড়ে যাচ্ছে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী লিখেছেন, ‘আমি একটি টায়ারের দোকানে কাজ করি। একটি ট্রাক এসে থামল, আর তার ভেতর থেকে ড্রোন উড়ে গেল!’

ইউক্রেনের প্রধান নিরাপত্তা সংস্থা এসবিইউ এই অভিযানের দায় স্বীকার করেছে এবং এর কোড নাম দিয়েছে ‘স্পাইডার ওয়েব’। তারা জানিয়েছে, এই আক্রমণে ৪১টি রুশ বিমান ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে বিরল এবং অত্যন্ত ব্যয়বহুল এ-৫০ আর্লি-ওয়ার্নিং প্লেন (রাশিয়ার এওয়াকস সমতুল্য) এবং টু-২২ এম ৩ ও টু-৯৫ কৌশলগত বোমারু বিমানও রয়েছে। এসবিইউ-এর প্রধান ভাসিলি মাল্যুকের একটি ভিডিও ফুটেজও প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘রাশিয়ার কৌশলগত বোমারু বিমানগুলো, সবই মনোরমভাবে পুড়ছে।’

চার বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান এই যুদ্ধে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে এটি রাশিয়ার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় আঘাতগুলোর মধ্যে অন্যতম। রাশিয়ার কৌশলগত বোমারু বিমানের সংখ্যা তুলনামূলক কম–সম্ভবত ৯০ টিরও কম টু-২২, টু-৯৫ এবং নতুন টু-১৬০ বর্তমানে অপারেশনাল রয়েছে। এই বিমানগুলো পারমাণবিক অস্ত্র বহন করতে সক্ষম হলেও, সম্প্রতি ইউক্রেনের লক্ষ্যবস্তুতে প্রচলিত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের জন্য এগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে। তাই এগুলো ইউক্রেনীয় সামরিক পরিকল্পনাকারীদের জন্য উচ্চ অগ্রাধিকারের লক্ষ্যবস্তু ছিল। বেশির ভাগ বিমানই পুরোনো এবং এখন আর উৎপাদ করা হয় না। শেষ টু-২২ এম ৩ এবং টু-৯৫ প্রায় ৩০ বছরেরও বেশি আগে তৈরি, আর সেগুলোর প্রতিস্থাপন, টু-১৬০-এর উৎপাদনও অত্যন্ত ধীর গতিতে চলছে।

রাশিয়ার এত বিপুলসংখ্যক অত্যাধুনিক বিমান দেশের এতটা গভীরে ঢুকে ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস করার সক্ষমতা ইউক্রেনের আক্রমণ কৌশলের উন্নয়ন এবং রাশিয়ার ভেতরে ইউক্রেনের গোপন এজেন্টদের অসাধারণ দক্ষতার প্রমাণ।

ক্রেমলিনের সর্বাত্মক সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে ইউক্রেনের অভিযানগুলোর পরিসর ও নির্ভুলতা ধীরে ধীরে বেড়েছে। পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনের রাশিয়ার গভীরে ঢুকে আক্রমণে কিছু সহায়তা দিয়েছে। গত ২৮ মে জার্মানি ইউক্রেনীয় দূরপাল্লার ড্রোনে অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে বেশির ভাগ প্রযুক্তি এবং মিশন পরিকল্পনা ইউক্রেনের নিজস্ব।

গত ১ জুনের এই অপারেশনকে আধুনিক যুদ্ধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হামলা হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। সূত্র অনুযায়ী, এই মিশনের পরিকল্পনা করতে ১৮ মাস সময় লেগেছে। রাশিয়া সীমান্তের কাছাকাছি থেকে এবং রাতের বেলা বড় আকারের ফিক্সড-উইং ড্রোনের আক্রমণের আশঙ্কা করছিল। ইউক্রেন রাশিয়ার ধারণা উল্টে দিয়েছে। তারা দিনের বেলায় ছোট ড্রোন উৎক্ষেপণ করেছে এবং তা করেছে সম্মুখভাগ থেকে অনেক দূরে। ইউক্রেন এর আগেও রাশিয়ার ভেতরে ঢুকে ড্রোন উৎক্ষেপণ করেছে; কিন্তু এবারের পার্থক্য ছিল অভিযানের মাত্রা এবং সমন্বিত প্রকৃতিতে।

ইউক্রেনীয় নিরাপত্তা সংস্থার ঘনিষ্ঠ ভাষ্যকাররা মনে করেন, এই অভিযানের জন্য রাশিয়ার অভ্যন্তরে ১৫০টি ড্রোন এবং ৩০০টি বোমা সীমান্ত দিয়ে পাচার করা হয়েছিল। কোয়াডকপ্টারগুলো সম্ভবত কাঠের কেবিনে ঢুকিয়ে লরিতে লোড করা হয়েছিল। এরপর কেবিনের ঢাকনা দূরনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে খুলে ফেলার পর ড্রোনগুলো উড়ানো হয়েছিল। ড্রোনগুলো রাশিয়ারই মোবাইল-টেলিফোন নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ইউক্রেনে ফুটেজ পাঠিয়েছে। বহু ইউক্রেনীয় সেই ফুটেজ শেয়ার করেছে। দাবি করা হচ্ছে, এই অপারেশনে স্বয়ংক্রিয় লক্ষ্য নির্ধারণের প্রযুক্তিও ব্যবহার করা হয়েছে।

একজন ইউক্রেনীয় গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, ট্রাকের চালকেরা সম্ভবত জানতেন না যে তাঁরা কী বহন করছেন। তিনি এই অপারেশনের এই দিকটিকে ২০২২ সালের কের্চ সেতু আক্রমণের সঙ্গে তুলনা করেছেন, যেখানে একটি লরিতে লুকানো বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। বিস্ফোরণে ক্রিমিয়াকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্তকারী সেতুর একটি অংশ ধ্বংস হয়। তিনি বলেন, ‘এই ধরনের অপারেশন খুব জটিল, যেখানে মূল খেলোয়াড়দের অন্ধকারে রাখা জরুরি।’

সূত্রটি এই অপারেশনকে একটি বহু-পর্যায়ের দাবার চাল হিসেবে বর্ণনা করেছে, যেখানে ইউক্রেনের অন্যান্য ঘাঁটিতে হামলা সুযোগ দিয়ে রুশদের প্রথমে আরও বেশি বিমান নির্দিষ্ট ঘাঁটিতে সরিয়ে নিতে উৎসাহিত করা হয়েছিল। আক্রমণের তিন দিন আগে, প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডজন ডজন বিমান মুর্মাস্ক প্রদেশের ওলেনিয়া বিমানঘাঁটিতে স্থানান্তরিত হয়েছিল। গত ১ জুন ঠিক সেখানেই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে।

এদিকে আজ সোমবার ইস্তাম্বুলে শুরু হতে যাওয়া নতুন শান্তি আলোচনার ওপর এই অভিযানের একটি ছায়া নিশ্চয় থাকবে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রাশিয়া ব্যাপক হামলা চালিয়েছে, কখনো কখনো শত শত ড্রোন ব্যবহার করে ইউক্রেনকে সন্ত্রস্ত করেছে। গত ৩১ মে রাতে শুরু হওয়া একটি হামলায় রেকর্ড ৪৭২টি ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছিল বলে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে কিয়েভ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে দেখাতে চাচ্ছিল যে, যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চাইলে মূল্য দিতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই অভিযান কি পরিস্থিতি পাল্টে দিয়েছে, নাকি কেবল ঝুঁকির মাত্রা বাড়িয়ে তুলেছে?

রাশিয়ার দেশপ্রেমিক সামাজিক-গণমাধ্যম নেটওয়ার্কগুলোতে এরই মধ্যে এই হামলার জবাবে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখানোর আহ্বান জানানো হচ্ছে। অনেকে এই মুহূর্তটিকে ১৯৪১ সালে জাপানের পার্ল হারবারে আমেরিকার প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহরের ওপর আক্রমণের সঙ্গে তুলনা করছেন। একজন জ্যেষ্ঠ ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, এই অভিযানের কারণে পশ্চিমা অংশীদাররা ইউক্রেন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তিনি বলেন, ‘চিন্তা হচ্ছে যে এটি সিনোপের মতো হয়ে যায় কিনা।’ ১৮৫৩ সালে একটি অটোমান বন্দরে রাশিয়ার হামলার কথা উল্লেখ করেন তিনি। এটি শেষ পর্যন্ত আক্রমণকারীকে বিশ্ব মঞ্চে একা করে দিয়েছিল।

এদিকে গত ১ জুনের এই অভূতপূর্ব ঘটনা পশ্চিমা সশস্ত্র বাহিনীগুলোও ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। পশ্চিমা দেশগুলো অর্থ সাশ্রয়ের জন্য বহু বছর ধরে যুদ্ধবিমানগুলো ক্রমশ অল্পসংখ্যক বিমানঘাঁটিতে কেন্দ্রীভূত করছে। তারা বিমানগুলোকে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র থেকে রক্ষা করার জন্য কোনো পোতাশ্রয় নির্মাণে বিনিয়োগ করেনি। আমেরিকার নিজস্ব কৌশলগত বোমারু বিমানগুলো স্যাটেলাইট ছবিতে খোলা জায়গায় দৃশ্যমান। ওয়াশিংটনের থিংক-ট্যাংক সিএনএএস-এর টম শুগার্ট লিখেছেন, ‘কল্পনা করুন, খেলার দিনে, রেলইয়ার্ডে, বন্দরে বা উপকূলের চীনা মালিকানাধীন কন্টেইনার জাহাজে, এলোমেলো অবকাঠামোতে পার্ক করা ট্রাকে থাকা কন্টেইনারগুলো... থেকে হাজার হাজার ড্রোন উড়ে আসছে, যা মার্কিন বিমানবাহিনীকে নাস্তানাবুদ করতে পারে।’ তিনি সতর্ক করে দেন যে, এটা শুধু কল্পনা নয়, বাস্তবে ঘটতে পারাটা খুবই সম্ভব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বন্ডাই বিচে আহত এই ব্যক্তি ইসরায়েলে হামাসের হামলার মুখেও পড়েছিলেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
অস্ট্রেলিয়ায় বন্দুকধারীর গুলিতে আহত আর্সেন অস্ত্রোভস্কি। ছবি: ডেইলি মেইল
অস্ট্রেলিয়ায় বন্দুকধারীর গুলিতে আহত আর্সেন অস্ত্রোভস্কি। ছবি: ডেইলি মেইল

দুর্ভাগ্য আর কাকে বলে—অস্ট্রেলিয়ার বন্ডাই বিচে বন্দুকধারীর গুলিতে আহত আর্সেন অস্ত্রোভস্কি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার কবলেও পড়েছিলেন। তবে সৌভাগ্য এই যে, দুই ঘটনায়ই তিনি অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন!

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) ডেইলি মেইল জানিয়েছে, বন্ডাই বিচে আহত অস্ত্রোভস্কি একজন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনজীবী। রক্তে ভেজা শরীর ও ব্যান্ডেজে মোড়ানো অবস্থায় তিনি অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি পরিবার নিয়ে এখানে এসেছিলাম। চারদিকে শিশু, বৃদ্ধ, পরিবার—সবাই আনন্দ করছিল। হঠাৎ করেই সবকিছু বিশৃঙ্খলায় পরিণত হয়। চারদিকে গুলির শব্দ, মানুষ দৌড়াচ্ছে, লুকোচ্ছে—পুরো জায়গা জুড়ে ভয়াবহ আতঙ্ক।’

অস্ত্রোভস্কি জানান, কোন দিক থেকে গুলি আসছিল, তা কেউ বুঝতে পারছিল না। তিনি বলেন, ‘আমি নিজ চোখে দেখেছি এক বন্দুকধারী চারদিকে নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছে। শিশুদের মাটিতে লুটিয়ে পড়তে দেখেছি, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের আহত হতে দেখেছি—এটা ছিল এক রক্তাক্ত বিভীষিকা।’

অস্ত্রোভস্কি এটাও জানান, তিনি ১৩ বছর ইসরায়েলে ছিলেন এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলার মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতাও তাঁর আছে। তাঁর ভাষায়, ‘সেই ঘটনার পর আবার এমন ভয়াবহ দৃশ্য দেখলাম। কখনো ভাবিনি অস্ট্রেলিয়ায়, তাও আবার বন্ডাই বিচের মতো জায়গায় এমন কিছু ঘটবে।’

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বিখ্যাত বন্ডাই বিচে ইহুদি ধর্মীয় উৎসব হানুকা উদ্‌যাপনের সময় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে শিশুও রয়েছে। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ২৯ জন। স্থানীয় সময় রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে ‘চানুকাহ বাই দ্য সি’ নামে একটি অনুষ্ঠানের মাঝেই এই হামলা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ক্যাম্পবেল প্যারেড এলাকায় একটি গাড়ি থেকে নেমে দুই সশস্ত্র ব্যক্তি এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে শুরু করেন। মুহূর্তের মধ্যেই উৎসবের আনন্দ রূপ নেয় বিভীষিকায়। পর্যটন এলাকা জুড়ে একের পর এক গুলির শব্দ শোনা যায়।

ঘটনাস্থলে বহু মানুষকে আহত অবস্থায় ঘাসের ওপর পড়ে থাকতে দেখা যায়। দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁদের হাসপাতালে নেওয়া হয়। পুলিশ জানিয়েছে, হামলাকারীদের একজনকে ঘটনাস্থলেই গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। অপরজন আহত অবস্থায় আটক রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বন্ডাই বিচে হামলাকারীর অস্ত্র কেড়ে নিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন, কে এই পথচারী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ২৩
বন্ডাই বিচে হামলাকারীর অস্ত্র কেড়ে নিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন, কে এই পথচারী

সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সশস্ত্র হামলাকারীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁকে নিরস্ত্র করেছেন এক পথচারী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর সেই পথচারী হাজারো মানুষের প্রশংসায় ভাসছেন।

ভাইরাল ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, সাদা শার্ট পরা ওই পথচারী পার্কিং লট থেকে দৌড়ে গিয়ে রাইফেল হাতে থাকা হামলাকারীকে পেছন থেকে জাপটে ধরেন। এরপর তিনি হামলাকারীর কাছ থেকে রাইফেল ছিনিয়ে নেন এবং সেটি হামলাকারীর দিকেই তাক করেন।

অকস্মাৎ পেছন থেকে জাপটে ধরায় হামলাকারী ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন এবং পিছু হটেন। ধারণা করা হচ্ছে, ওই পথচারীর এমন সাহসী পদক্ষেপে বহু মানুষের প্রাণ রক্ষা পেয়েছে।

যদিও ওই পথচারীর পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি, তবে তাঁর এই অবিশ্বাস্য সাহসিকতার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষ তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক ব্যক্তি ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার হিরো (একজন সাধারণ বেসামরিক) হামলাকারীর কাছ থেকে বন্দুক ছিনিয়ে নিয়ে তাঁকে নিরস্ত্র করেছেন। কেউ কেউ সাহসী আর কেউ কেউ...এই ধরনের।’ অন্য একজন বলেছেন, ‘এই অস্ট্রেলিয়ান বন্ডাই বিচে সন্ত্রাসীদের একজনকে নিরস্ত্র করে অসংখ্য জীবন বাঁচিয়েছেন। হিরো।’

নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রিমিয়ার ক্রিস মিন্স এটিকে তাঁর দেখা ‘সবচেয়ে অবিশ্বাস্য দৃশ্য’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘ওই লোকটি একজন প্রকৃত হিরো। তিনি নির্ভয়ে হামলাকারীর দিকে এগিয়ে গিয়ে তাঁকে নিরস্ত্র করলেন এবং অসংখ্য মানুষের জীবন বাঁচাতে নিজের জীবন বিপন্ন করলেন। আমি নিশ্চিত যে, ওই ব্যক্তির সাহসিকতার জন্যই অনেক মানুষ বেঁচে আছেন।’

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজও হামলার সময় অন্যদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসা নাগরিকদের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, এই অস্ট্রেলীয়রা বিপদেও ছুটে গেছেন অন্যদের রক্ষা করতে। তাঁদের সাহসিকতাই অনেক মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে।

উল্লেখ্য, গুলির ঘটনায় এখন পর্যন্ত হামলাকারীসহ ১২ জন নিহত বলে জানা গেছে। দুই হামলাকারীর মধ্যে একজন গুরুতর আহত অবস্থায় পুলিশের হেফাজতে আছেন। এ ঘটনায় তৃতীয় কোনো বন্দুকধারী জড়িত ছিলেন কি না, পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শান্তির জন্য ন্যাটোর আশা ছাড়ার ইঙ্গিত দিল ইউক্রেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ২৬
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি। ছবি: সংগৃহীত
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধের অবসানে শান্তি আলোচনার পথ সুগম করতে গিয়ে ন্যাটো জোটে যোগদানের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে জার্মানির বার্লিনে বৈঠকের প্রাক্কালে তিনি জানান—ন্যাটো সদস্যপদের বদলে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছ থেকে শক্তিশালী ও আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক নিরাপত্তা নিশ্চয়তা পেলে সেটিকে একটি সমঝোতা হিসেবে বিবেচনা করতে প্রস্তুত কিয়েভ।

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সাংবাদিকদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে জেলেনস্কি বলেন, শুরু থেকেই ইউক্রেনের প্রকৃত লক্ষ্য ছিল ন্যাটো সদস্যপদ, যা দেশটির নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে কার্যকর গ্যারান্টি। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার এই পথে সমর্থন না দেওয়ায় বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবতে হচ্ছে। তাঁর ভাষায়—যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তা নিশ্চয়তা, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ‘আর্টিকেল ফাইভ’-এর মতো প্রতিরক্ষা প্রতিশ্রুতি এবং ইউরোপ, কানাডা ও জাপানের কাছ থেকে নিরাপত্তা গ্যারান্টি ভবিষ্যতে রাশিয়ার আগ্রাসন ঠেকাতে পারে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এসব নিশ্চয়তা অবশ্যই আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক হতে হবে।

এই অবস্থান ইউক্রেনের জন্য একটি বড় নীতিগত পরিবর্তন। কারণ দেশটির সংবিধানেই ন্যাটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। একই সঙ্গে এটি রাশিয়ার যুদ্ধলক্ষ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম। ন্যাটোতে যোগদানের বিরোধিতা করেই ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করেছিল রুশ বাহিনী। তবে বর্তমানে তারা ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলের দখলও নিতে চাইছে। তবে মস্কোর কাছে ভূখণ্ড ছাড় না দিতে এখনো অনড় রয়েছে ইউক্রেন।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বারবার দাবি করে আসছেন, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করতে হবে এবং দনবাস অঞ্চলের নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। রাশিয়ার পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, ইউক্রেনকে একটি নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হতে হবে এবং সেখানে ন্যাটো সেনা মোতায়েন করা যাবে না।

রয়টার্স জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের চাপের মুখে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের আলোচনা এগোচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার বার্লিনে আলোচনায় অংশ নিতে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি প্রায় চার বছর আগে শুরু হওয়া এই যুদ্ধের অবসানে অগ্রগতির সম্ভাবনার ইঙ্গিত।

জেলেনস্কি জানিয়েছেন—ইউক্রেন, ইউরোপীয় দেশগুলো ও যুক্তরাষ্ট্র মিলিয়ে একটি ২০ দফা পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা চলছে, যার শেষ ধাপে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতে পারে। তবে তিনি স্পষ্ট করেন, ইউক্রেন সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে কোনো আলোচনা করছে না।

ইউরোপীয় মিত্ররা এই সময়টিকে ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের জন্য একটি ‘সংকটজনক মুহূর্ত’ হিসেবে দেখছে। একই সঙ্গে রুশ হামলায় ইউক্রেনের বিদ্যুৎ, তাপ ও পানিসেবা অবকাঠামো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মানবিক সংকটও গভীর হচ্ছে। জেলেনস্কির অভিযোগ, রাশিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করে ইউক্রেনের জনগণের ওপর সর্বোচ্চ ক্ষতি চাপিয়ে দিতে চাইছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে বেঁচে ফেরা ২ শিক্ষার্থী বেঁচেছিলেন স্কুল জীবনেও

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মিয়া ট্রেটা ও জোয়ে ওয়েইসম্যান। ছবি: সংগৃহীত
মিয়া ট্রেটা ও জোয়ে ওয়েইসম্যান। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) ভয়াবহ বন্দুক হামলার ঘটনায় দুজন নিহত এবং অন্তত ৯ জন আহত হয়েছেন। ফাইনাল পরীক্ষার সময় সংঘটিত এই হামলায় পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আত্মরক্ষার জন্য অনেক শিক্ষার্থী ডেস্কের নিচে লুকিয়ে পড়েছিলেন। তবে ভয়াবহ এই অভিজ্ঞতা অন্তত দুই শিক্ষার্থীর কাছে নতুন কিছু ছিল না। এর আগেও তাঁরা স্কুল জীবনে এই ধরনের গোলাগুলির মুখে পড়ে প্রাণে বেঁচেছিলেন।

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ২১ বছর বয়সী মিয়া ট্রেটা এবং ২০ বছর বয়সী জোয়ে ওয়েইসম্যান—দুজনেই অতীতে ভিন্ন ভিন্ন স্কুলে বন্দুক হামলার শিকার হয়েছিলেন। নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওয়েইসম্যান বলেন, ‘আমার সবচেয়ে বেশি যে অনুভূতিটা হচ্ছে তা হলো—এই দেশ কীভাবে আমাকে দ্বিতীয়বারের মতো এমন কিছুর মুখোমুখি হতে দিল?’

শনিবার কালো পোশাক পরা এক বন্দুকধারী ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভবনে গুলি চালানো শুরু করলে ক্যাম্পাসে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সন্দেহভাজন হামলাকারী দীর্ঘ সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় শত শত পুলিশ রাতভর ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় তল্লাশি চালায়।

ওয়েইসম্যান তখন নিজের ডরমিটরিতেই ছিলেন। এক বন্ধুর ফোন পেয়ে তিনি জানতে পারেন ক্যাম্পাসে গুলিবর্ষণ চলছে। প্রথমে ভয় পেলেও সেই আতঙ্ক দ্রুত ক্ষোভে রূপ নেয়। এনবিসিকে তিনি বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম, জীবনে আর কখনো এমন কিছুর মুখোমুখি হতে হবে না। আট বছর পর আবারও সেই জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছি।’

২০১৮ সালে ফ্লোরিডার পার্কল্যান্ডে নিজের মিডল স্কুলের পাশের একটি হাইস্কুলে ভয়াবহ শুটিং প্রত্যক্ষ করেছিলেন ওয়েইসম্যান। ওই ঘটনায় ১৭ জন নিহত হয়েছিল।

অন্যদিকে, মিয়া ট্রেটা ২০১৯ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসের কাছে সগাস হাইস্কুলে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। তখন ১৬ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থী হামলা চালিয়ে দুজনকে হত্যা করে, যাদের একজন ছিলেন ট্রেটার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। গুলিতে ট্রেটার পেট গুরুতরভাবে জখম হয়েছিল।

শনিবারের ঘটনার সময় নিজের ডরমিটরিতে পড়াশোনা করছিলেন ট্রেটা। তিনি মূলত যে ভবনে হামলাটি ঘটে সেখানে পড়তে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু ক্লান্ত বোধ করায় শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদলান—যা কার্যত তার প্রাণ বাঁচায়।

এই হামলা যুক্তরাষ্ট্রে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের দীর্ঘদিনের দাবিকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে। গান ভায়োলেন্স আর্কাইভের তথ্যমতে, চলতি বছরেই যুক্তরাষ্ট্রে ৩৮৯টি গণ গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৫০০-এর বেশি।

ট্রেটা ও ওয়েইসম্যান দুজনই বলছেন, তাঁরা কখনো ভাবেননি দ্বিতীয়বার এমন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। ওয়েইসম্যান বলেন, ‘আমি নিজেকে বোঝাতাম—পরিসংখ্যান অনুযায়ী এটা আর কখনো ঘটবে না। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, আর কেউই এমন নিশ্চয়তা দিতে পারে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত