Ajker Patrika

আলট্রাসাউন্ডে অস্ত্রোপচারমুক্ত ক্যানসার চিকিৎসার সম্ভাবনা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ২১: ২৪
অস্ত্রোপচার ছাড়াই ব্যথামুক্ত ক্যানসার চিকিৎসার সম্ভাবনা এনেছে আলট্রাসাউন্ড। ছবি: সংগৃহীত
অস্ত্রোপচার ছাড়াই ব্যথামুক্ত ক্যানসার চিকিৎসার সম্ভাবনা এনেছে আলট্রাসাউন্ড। ছবি: সংগৃহীত

শরীরের ভেতরের অংশ পরীক্ষা করতে দীর্ঘদিন ধরে আলট্রাসাউন্ড ব্যবহার করে আসছেন চিকিৎসকেরা। এখন এই আলট্রাসাউন্ড ব্যবহার করে ক্যানসারের চিকিৎসাও সম্ভব হবে। এই হাই ফ্রিকোয়েন্সি শব্দতরঙ্গের মাধ্যমে এবার ক্যানসার চিকিৎসার নতুন যুগের সূচনা হয়েছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে জানা যায়, এই নতুন সম্ভাবনার ধারক যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ঝেন সু। বিশের দশকের গোড়ার দিকে ঝেন সু যখন পিএইচডির ছাত্রী ছিলেন, সে সময় এ গবেষণা শুরু করেন তিনি। গবেষণায় সু এমন একটা উপায় খুঁজছিলেন, যার মাধ্যমে চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচার ছাড়াই রোগাক্রান্ত টিস্যু ধ্বংস ও অপসারণ করতে পারবেন। হাই ফ্রিকোয়েন্সি শব্দতরঙ্গ অর্থাৎ আলট্রাসাউন্ড ব্যবহার করে টিস্যু ভেঙে ফেলার ধারণা নিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। ঝেন সু প্রথমে এ পরীক্ষা চালান শূকরের হৃৎপিণ্ডের ওপর।

আলট্রাসাউন্ড দিয়ে ক্যানসার চিকিৎসার অগ্রগতি এনেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ঝেন সু। ছবি: সংগৃহীত
আলট্রাসাউন্ড দিয়ে ক্যানসার চিকিৎসার অগ্রগতি এনেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ঝেন সু। ছবি: সংগৃহীত

সাধারণত আলট্রাসাউন্ড মানুষের শ্রবণযোগ্য হওয়ার কথা নয়, কিন্তু সু তাঁর পরীক্ষায় এত শক্তিশালী অ্যামপ্লিফায়ার ব্যবহার করেছিলেন যে, গবেষণাগারে থাকা অন্য গবেষকেরা শব্দ নিয়ে অভিযোগ দিতে থাকেন। ঝেন সু বলেন, তখন পর্যন্ত কোনো কাজ হচ্ছিল না। তাই তিনি সহকর্মীদের শান্ত করতে আলট্রাসাউন্ড পালসের হার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেন, যা শব্দের মাত্রা মানুষের শ্রবণসীমার বাইরে নিয়ে যাবে।

অপ্রত্যাশিতভাবে প্রতি সেকেন্ডে পালসের সংখ্যা বাড়ানো কেবল সহকর্মীদের বিরক্তিই কমাল না, বরং তিনি যে পদ্ধতিতে চেষ্টা করেছিলেন, তারচেয়ে বেশি কার্যকর প্রমাণিত হলো। তিনি দেখতে পেলেন, আলট্রাসাউন্ড প্রয়োগের এক মিনিটের মধ্যে শূকরের হৃৎপিণ্ডের টিস্যুতে একটি গর্ত তৈরি হলো।

সে সময়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অধ্যাপক সু বলেন, ‘আমি ভাবলাম, আমি স্বপ্ন দেখছি।’

সুর এই আবিষ্কার ‘হিস্টোট্রিপসি’ নামে পরিচিত। এই আবিষ্কার কয়েক দশক পরে এসে আলট্রাসাউন্ড ব্যবহার করে উন্নত ক্যানসার চিকিৎসার নতুন যুগের সূচনা করছে। অস্ত্রোপচার ছাড়া শব্দতরঙ্গ ব্যবহার করে ক্যানসার রোগীদের শরীর থেকে টিউমার নির্মূলের সুযোগ দিচ্ছে।

হিস্টোট্রিপসি ২০২৩ সালের অক্টোবরে লিভার টিউমারের চিকিৎসার জন্য মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফডিএ) অনুমোদন পায়। পরের বছর এই প্রযুক্তি বাণিজ্যিকীকরণের জন্য গঠিত কোম্পানি হিস্টোসোনিক্সের অর্থায়নে একটি ছোট গবেষণায় দেখা যায়, পদ্ধতিটি ৯৫ শতাংশ লিভার টিউমারের বিরুদ্ধে প্রযুক্তিগতভাবে সফল। যদিও পেটে ব্যথা থেকে শুরু করে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে, তবুও গবেষণায় দেখা গেছে, জটিলতাগুলো বিরল এবং পদ্ধতিটি তুলনামূলক নিরাপদ।

গত জুন মাসে প্রথম ইউরোপীয় দেশ হিসেবে হিস্টোট্রিপসিকে অনুমোদন দেয় যুক্তরাজ্য। ক্লিনিক্যাল চাহিদা পূরণের জন্য দেশটির ইনোভেশন ডিভাইস অ্যাকসেস পাথওয়ের পাইলট পর্বের অধীনে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসে (এনএইচএস) চিকিৎসা হিসেবে সহজলভ্য করা হয়।

স্পেনের রামন ই কাজাল ইনস্টিটিউট ফর হেলথ রিসার্চের গবেষক সুলি আর্ল বলেন, মানুষ মনে করে আলট্রাসাউন্ড কেবল ইমেজিং বা শরীরের ভেতরের ছবি তোলার কাজ করে। আর্ল জানান, গবেষণা থেকে উঠে এসেছে, এটি কেবল টিউমারই ধ্বংস করতে পারে না, বরং মেটাস্ট্যাটিক রোগ (শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়া ক্যানসার) নিয়ন্ত্রণ করতে এবং অন্যান্য ক্যানসার চিকিৎসার কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতেও সক্ষম, তা-ও রোগীকে অস্ত্রোপচারের টেবিলে না নিয়ে।

আলট্রাসাউন্ড দিয়ে ক্যানসার চিকিৎসার অগ্রগতি এনেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ঝেন সু। ছবি: সংগৃহীত
আলট্রাসাউন্ড দিয়ে ক্যানসার চিকিৎসার অগ্রগতি এনেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ঝেন সু। ছবি: সংগৃহীত

আলট্রাসাউন্ড যেভাবে কাজ করে

সাধারণ সোনোগ্রামের মতো আলট্রাসাউন্ড হ্যান্ডহেল্ড ট্রান্সডিউসারের মাধ্যমে উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি শব্দতরঙ্গ পাঠায় এবং প্রতিফলিত তরঙ্গগুলোকে চিত্রে রূপান্তর করে। ক্যানসার চিকিৎসায় আলট্রাসাউন্ড তরঙ্গগুলোকে টিউমারের একটি ছোট অংশের ওপর কেন্দ্রীভূত করা হয় সেটিকে ধ্বংস করার জন্য।

এই পালসগুলো ছোট ছোট মাইক্রোবাবল তৈরি করে, যা কয়েক মাইক্রোসেকেন্ডের মধ্যে প্রসারিত হয় এবং তারপর ভেঙে যায়। এই প্রক্রিয়ায় তারা টিউমারের টিস্যুকেও ভেঙে ফেলে। লিভার ক্যানসারে ট্রান্সডিউসার রোবটিক আর্ম দিয়ে টিউমারের এলাকা চিহ্নিত করে কাজ করা হয়।

অধ্যাপক সু জানান, এ কাজে ব্যবহৃত হিস্টোট্রিপসি ডিভাইসগুলো হয় কালারিং পেনের ডগার সাইজের। পুরো প্রক্রিয়াটি এত ছোট যে, রোগীরা ওই দিনই বাড়ি ফিরতে পারেন। হিস্টোসোনিক্সের তথ্য অনুসারে, বেশির ভাগ প্রক্রিয়া এক থেকে তিন ঘণ্টার মধ্যে শেষ হয়ে যায়।

হিস্টোট্রিপসির সুবিধাগুলো আশা জাগালেও এই চিকিৎসাপদ্ধতি নিয়ে এখনো কিছু প্রশ্ন রয়েছে। চিকিৎসার পর আবারও ক্যানসার হতে পারে কি না, এ নিয়ে তথ্য পাওয়া যায়নি। এদিকে কিছু গবেষক উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, হিস্টোট্রিপসির মাধ্যমে টিউমার ভাঙার সময় শরীরের ভেতরে ভেঙে যাওয়ায় তা নতুন ক্যানসার কোষের জন্ম দিতে পারে। আর এগুলো শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে প্রাণীদের ওপর করা গবেষণাগুলোতে এখন পর্যন্ত সে ধরনের আশঙ্কার কোনো প্রমাণ মেলেনি।

গবেষণা বলছে, হিস্টোট্রিপসি সব ধরনের ক্যানসারের জন্য কার্যকর নাও হতে পারে। হাড় আলট্রাসাউন্ডকে লক্ষ্যস্থলে পৌঁছাতে বাধা দিতে পারে, ফলে নির্দিষ্ট স্থানে থাকা টিউমার ধ্বংস করা সম্ভব নাও হতে পারে। এ ছাড়া ফুসফুসের মতো গ্যাসযুক্ত অঙ্গের ক্ষেত্রে হিস্টোট্রিপসি ব্যবহার বিপজ্জনক হতে পারে, যা আশপাশের স্বাভাবিক টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তবে হিস্টোসোনিক্স বর্তমানে কিডনি ও প্যানক্রিয়াসের টিউমারের সম্ভাব্য চিকিৎসা হিসেবে হিস্টোট্রিপসি নিয়ে গবেষণা করছে।

তবে ক্যানসার চিকিৎসায় হিস্টোট্রিপসি আলট্রাসাউন্ডের প্রথম ব্যবহার নয়। টিউমারের ওপর প্রয়োগের একটি পুরোনো ও প্রতিষ্ঠিত প্রযুক্তি হাই-ইনটেনসিটি ফোকাসড আলট্রাসাউন্ড (এইচআইএফইই)। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকাসড আলট্রাসাউন্ড ক্যানসার ইমিউনোথেরাপি সেন্টারের সহপরিচালক রিচার্ড প্রাইস বলেন, টিউমারের ওপর আলট্রাসাউন্ডের একটি কেন্দ্রীভূত বিস্ফোরণের মাধ্যমে তাপ উৎপন্ন করা হয়, যা টিস্যুটিকে মূলত ‘রান্না’ করে ফেলে।

প্রাইস আরও বলেন, ‘আপনি যদি একটি ম্যাগনিফাইং গ্লাস হাতে নিয়ে রোদের দিনে একটি শুকনো পাতার ওপর ধরেন, তাহলে কিন্তু পাতাটিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া সম্ভব। এইচআইএফইউ মূলত একই কাজ করে, তবে ক্যানসারের টিস্যুর ওপর তাপ তৈরির জন্য এটি শব্দশক্তি ব্যবহার করে।’

অনকোলজি বা ক্যানসার চিকিৎসাবিজ্ঞানে অস্ত্রোপচার ছাড়াই প্রোস্টেট ক্যানসারের চিকিৎসা করতে সবচেয়ে বেশি পরিচিত চিকিৎসাপদ্ধতি এইচআইএফইউ। ২০২৫ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, এ ধরনের ক্যানসারের ক্ষেত্রে এটি অস্ত্রোপচারের মতোই কার্যকর হতে পারে। এ ক্ষেত্রে রোগীরা ঘুম থেকে ওঠার পর কিছুটা ব্যথা ও মূত্রসংক্রান্ত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনুভব করতে পারেন, তবে সাধারণত অস্ত্রোপচারের মতো নিবিড় চিকিৎসার তুলনায় আরোগ্য লাভ দ্রুত হয়।

হিস্টোট্রিপসি ও এইচআইএফইউ থেরাপি দুটিই সাধারণত জেনারেল অ্যানেসথেসিয়ার অধীনে করা হয়, যাতে চিকিৎসার সময় রোগীরা নড়াচড়া না করেন এবং এর ফলে আশপাশের অঙ্গ বা টিস্যুর দুর্ঘটনাক্রমে ক্ষতির সম্ভাবনা কমে যায়। তবে হিস্টোট্রিপসিতে আশপাশের সুস্থ টিস্যুর ক্ষতি হতে পারে, এমন তাপ উৎপন্ন হয় না।

আলট্রাসাউন্ড দিয়ে ক্যানসার চিকিৎসার অগ্রগতি এনেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ঝেন সু। ছবি: সংগৃহীত
আলট্রাসাউন্ড দিয়ে ক্যানসার চিকিৎসার অগ্রগতি এনেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ঝেন সু। ছবি: সংগৃহীত

তবে এইচআইএফইউ দিয়ে সব ধরনের ক্যানসার চিকিৎসা সম্ভব নয়। যাঁদের প্রোস্টেট ক্যানসার শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে গেছে, তাঁদের ক্ষেত্রে সাধারণত এটি কাজ করে না। তবুও বিভিন্ন দেশের গবেষকেরা এটিকে স্তন ক্যানসারের মতো কিছু কিছু ক্যানসারের চিকিৎসায় ব্যবহার করে দেখছেন।

গবেষকেরা বলছেন, ক্যানসারের অন্যান্য বিদ্যমান চিকিৎসার সঙ্গে মিলিয়ে ব্যবহার করলে আলট্রাসাউন্ডের সফলতার মাত্রা বাড়তে পারে।

ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক রিচার্ড প্রাইস সতর্ক করে বলেন, আলট্রাসাউন্ড নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা এখনো তুলনামূলকভাবে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এ নিয়ে আরও অনেক গবেষণার প্রয়োজন।

তবে বর্তমানে ব্যবহৃত আলট্রাসাউন্ড পদ্ধতিগুলো অনকোলজিতে (ক্যানসার চিকিৎসায়) এক নতুন যুগ নিয়ে আসছে। অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপি ও রেডিয়েশনের মতো কার্যকর কিন্তু মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াযুক্ত চিকিৎসাগুলোকে প্রতিস্থাপন ও সেগুলোর উন্নতি ঘটানো এর লক্ষ্য।

ঝেন সু বলেন, ক্যানসার খুবই মারাত্মক। কিন্তু যা এটিকে আরও খারাপ করে তোলে, তা হলো ক্যানসারের চিকিৎসা।

সুর মতে, আলট্রাসাউন্ড ক্যানসারের ‘জাদুকরী নিরাময় পদ্ধতি’ নয়। যেকোনো চিকিৎসার মতোই এরও খারাপ দিক ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে যেমন তিনি কয়েক দশক আগে তাঁর গবেষণাগারের সহকর্মীদের বিরক্তিকর শব্দ থেকে বাঁচিয়েছিলেন, ঠিক তেমনই সু আশা করেন, তাঁর আবিষ্কার ও অন্য বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার আগামী বছরগুলোতে রোগীদের অপ্রয়োজনীয় কষ্ট থেকে রেহাই দেবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আইসিডিডিআরবির গবেষণা

নবজাতকের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে প্রাণঘাতী ছত্রাক

  • হাসপাতালে সংক্রমণ বিশ্বজুড়ে জনস্বাস্থ্যগত উদ্বেগ।
  • ৩৭৪টির মধ্যে ৩২ নবজাতকের শরীরে ক্যান্ডিডা অরিস ছত্রাক।
  • সিডিসি এই ছত্রাককে বড় হুমকি হিসেবে ঘোষণা করেছে।
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
নবজাতকের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে প্রাণঘাতী ছত্রাক

দেশের হাসপাতালে নবজাতকদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (এনআইসিইউ) ক্যান্ডিডা অরিস নামের একধরনের সম্ভাব্য প্রাণঘাতী ছত্রাক (ফাঙ্গাস) ছড়িয়ে পড়ছে বলে এক গবেষণায় জানা গেছে। ‘অরিস’ জাতের ছত্রাকটি একাধিক অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে ওঠায় একে ‘অতি জরুরি অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স হুমকি’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এটি প্রতিরোধে বাড়তি সতর্কতা এবং পর্যবেক্ষণের পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট গবেষকেরা।

হাসপাতাল সূত্রে ঘটা সংক্রমণ (এইচএআই) এখন বিশ্বজুড়ে জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় উদ্বেগের কারণ। এসব সংক্রমণের জন্য দায়ী রোগজীবাণু বা পরজীবীর একটি হচ্ছে ক্যান্ডিডা অরিস নামের ছত্রাক। ‘ক্যান্ডিডা’ গণের আওতায় অরিসসহ বিভিন্ন ধরনের ছত্রাক রয়েছে। সাম্প্রতিককালে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ছত্রাক সংক্রমণের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে ক্যান্ডিডা অরিস।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যান্ডিডা অরিস দেশের নবজাতকদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে। আইসিডিডিআরবি এবং সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) যৌথ উদ্যোগে চালানো হয়েছে গবেষণাটি। এতে অর্থায়ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ জনস্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)। একাধিক অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ প্রতিরোধী হওয়ায় অরিস ছত্রাককে সিডিসিই ২০১৯ সালে ‘অতি জরুরি অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স হুমকি’ হিসেবে ঘোষণা করেছিল।

২০২১ সালের আগস্ট থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকার একটি সরকারি ও একটি বেসরকারি হাসপাতালের এনআইসিইউতে ভর্তি থাকা ৩৭৪টি নবজাতকের ওপর ওপরের গবেষণাটি পরিচালিত হয়। দেখা যায়, ৩২টি (৯ শতাংশ) নবজাতক ত্বকে ক্যান্ডিডা অরিস বহন করছিল। একজনের রক্তেও সংক্রমণ প্রবেশ করে। এদের মধ্যে ১৪টি নবজাতক হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সময়ই ছত্রাকে আক্রান্ত ছিল। আর ১৮টি নবজাতক সংক্রমিত হয় ভর্তি হওয়ার পর। আক্রান্ত ৩২টি নবজাতকের মধ্যে রক্তে সংক্রমিতসহ ৭টি নবজাতকের মৃত্যু ঘটে। গবেষকেরা বলছেন, এই ফল ইঙ্গিত দেয়, এনআইসিইউর ভেতরেই প্রায়শ ছত্রাকটির সংক্রমণ ঘটছে।

আইসিডিডিআরবির আরেকটি সাম্প্রতিক গবেষণায়ও দেখা গেছে, এর আওতায় পর্যবেক্ষণ করা রোগীদের কেউই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগে স্থানীয়ভাবে ক্যান্ডিডা অরিসে আক্রান্ত হয়নি।

নতুন গবেষণায় সংগৃহীত ছত্রাকের নমুনার ৮২ শতাংশই ফ্লুকোনাজোল নামের একটি ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী ছিল। অর্থাৎ নির্দিষ্ট এই ছত্রাকের চিকিৎসায় ওষুধটির কার্যকারিতা বিভিন্ন মাত্রায় কমে যেতে পারে। অথচ ক্যান্ডিডা অরিসের বিরুদ্ধে ফ্লুকোনাজোল প্রথম সারির ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, এমআরএসের মতো ‘সুপারবাগ’ (অতি প্রাণঘাতী জীবাণু) কোনো ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে ওঠার অর্থ দীর্ঘ মেয়াদে ওষুধটি কার্যত পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে পড়া। আর ক্যান্ডিডা অরিসকে আইসিডিডিআরবির বিশেষজ্ঞ ফাহমিদা চৌধুরী ‘সুপারবাগ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, সংক্রমিত নবজাতকদের ৮১ শতাংশেরই জন্ম হয়েছে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে। গবেষকদের মতে, সিজারিয়ান পদ্ধতিতে ডেলিভারির পর নবজাতক তুলনামূলকভাবে দীর্ঘ সময় হাসপাতালে অবস্থান করায় এই ছত্রাকের সংস্পর্শে আসার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

আইসিডিডিআরবি থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ক্যান্ডিডা অরিস এমন এক ধরনের ছত্রাক, যা মানুষের ত্বকে কোনো লক্ষণ ছাড়াই অবস্থান করতে এবং দীর্ঘ সময় টিকে থাকতে পারে। প্রায় ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে এই অবস্থান সংক্রমণে রূপ নেয়; বিশেষ করে যখন এটি রক্তের মতো জীবাণুমুক্ত অংশে প্রবেশ করে এবং রোগটিকে অত্যন্ত প্রাণঘাতী করে তোলে।

গবেষণায় দেখা গেছে, অনুন্নত ও স্বল্পোন্নত দেশে ক্যান্ডিডা অরিসজনিত রোগে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মৃত্যুহার প্রায় ৭০ শতাংশ। দুর্বল রোগ প্রতিরোধক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তি, গুরুতর অসুস্থ রোগী এবং অপরিণত নবজাতকেরা এই সংক্রমণের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ।

আইসিডিডিআরবির সহযোগী বিজ্ঞানী ও সংক্রামক রোগ বিভাগের এএমআর গবেষণা শাখার প্রধান ফাহমিদা চৌধুরী বলেন, ‘এই গবেষণা নবজাতকদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ঝুঁকিপূর্ণ বাচ্চাদের মধ্যে সুপারবাগ সংক্রমণের গুরুতর প্রমাণ দিয়েছে। প্রশাসনিক ও নীতিগতভাবে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার গবেষণাটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় প্রথম ধাপ।’

সংশ্লিষ্ট গবেষকেরা সুপারিশ হিসেবে হাসপাতালের যন্ত্রপাতি ও ব্যবহার্য সামগ্রী ক্লোরিনভিত্তিক জীবাণুনাশক দিয়ে নিয়মিত পরিষ্কার করা এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের হাত ধোয়ার অভ্যাস উন্নত করার তাগিদ দিয়েছেন। একই সঙ্গে এনআইসিইউতে ক্যান্ডিডা অরিস সংক্রমণের ওপর ধারাবাহিকভাবে নজরদারি চালিয়ে যাওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন তাঁরা। এতে আক্রান্ত নবজাতকদের দ্রুত শনাক্ত এবং আলাদা করে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে প্যালিয়েটিভ কেয়ার প্রশিক্ষণ আয়োজন

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
‘টোয়েন্টি আওয়ার ট্রেইনিং ফর কেয়ারার’ শেষে অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে অতিথিরা। ছবি: সংগৃহীত
‘টোয়েন্টি আওয়ার ট্রেইনিং ফর কেয়ারার’ শেষে অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে অতিথিরা। ছবি: সংগৃহীত

‘টোয়েন্টি আওয়ার ট্রেইনিং ফর কেয়ারার’ সম্পন্ন করলেন ১৫ জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি। তাঁদের সঙ্গে অংশগ্রহণকারী দলে আরও ছিলেন ৩ জন সহকারী, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী স্কুলের শিক্ষকেরা এবং দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সন্তানদের মায়েরা।

৭ নভেম্বর মিরপুরের ব্যাপ্টিস্ট মিশন ইন্টিগ্রেটেডের (বিএমআইএস) প্রশিক্ষণকক্ষে শুরু হওয়া এই প্রশিক্ষণ শেষ হয় ৯ নভেম্বর। এর আয়োজন করে প্যা‌লি‌য়ে‌টিভ কেয়ার সোসাইটি অব বাংলা‌দেশ (পিসিএসবি) এর অঙ্গসংগঠন ইনস্টিটিউট অব প্যালিয়েটিভ কেয়ার-বাংলাদেশ (আইপিসিবি)। পিসিএসবি-এর সদস্যসচিব অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়ার পরিকল্পনায় আয়োজিত এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহযোগিতা করে রিয়েল ভিউর প্রধান ব্যক্তিত্ব ফাহিমা খাতুন। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নারী ও শিশুদের নিয়ে কাজ করে রিয়েল ভিউ নামের এই সংগঠনটি।

প্রশিক্ষণ শেষে অংশগ্রহণকারীদের সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইপিসিবির সদস্যসচিব অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া, পিসিএসবির কোষাধ্যক্ষ সালাহউদ্দীন আহমাদ, ডা. নূরজাহান বেগম, ডা. তাসনিম জেরিন, ডা. সীমা রানী সরকার, ডা. নাদিয়া ফারহীন, লেখক আসিফ নবী, খালিদ আরাফাত অব্যয়, ফারজানা মালা, শাহাদৎ রুমন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে ডা. সানজিদা শাহরিয়া বলেন, ‘এই প্রশিক্ষণ মানবিক স্বাস্থ্যসেবায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্যালিয়েটিভ কেয়ারে যুক্ত করা অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’

‘টোয়েন্টি আওয়ার ট্রেইনিং ফর কেয়ারার’ শিরোনামের প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষদের কয়কেজন। ছবি: সংগৃহীত
‘টোয়েন্টি আওয়ার ট্রেইনিং ফর কেয়ারার’ শিরোনামের প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষদের কয়কেজন। ছবি: সংগৃহীত

ব্যাপ্টিস্ট মিশন ইন্টিগ্রেটেড স্কুলের অধ্যক্ষ গ্লোরিয়া চন্দ্রানী বাড়ৈ বলেন, ‘আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমন মানবিক প্রশিক্ষণের অংশ হতে পেরে গৌরব অনুভব করছি। এই উদ্যোগ শুধু অংশগ্রহণকারীদের নয়, আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও অনুপ্রেরণা, সহমর্মিতা ও সামাজিক দায়িত্ববোধ বৃদ্ধি করবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘১৯৭৭ সালে রেভা. ভেরনিকা এন ক্যাম্পবেল দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য এই ব্যাপ্টিস্ট মিশন ইন্টিগ্রেটেড স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন, যা বাংলাদেশের প্রথম দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আবাসিক সুবিধাও দেয়। এখান থেকে প্রথম ব্রেইল বইয়ের প্রচলন শুরু হয় বাংলাদেশে।’

ইনস্টিটিউট অব প্যালিয়েটিভ কেয়ার-বাংলাদেশের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নিজামউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সত্যিই আজ আমি অভিভূত। বিশ্বে যেখানে কেউ এই বিশেষ সীমাবদ্ধ মানুষদের নিয়ে ভাবেনি, সেখানে আমরা এই বিশেষভাবে সীমাবদ্ধ মানুষদের নিয়ে একটি বিশেষায়িত সেবার প্রশিক্ষণ সফলভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছি। এই সাফল্যের মূল কৃতিত্ব অবশ্যই প্রশিক্ষণার্থীদের। তাঁদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। আশা করি, বাংলাদেশের এই ধারণা ভবিষ্যতে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও বিস্তার লাভ করবে।’

অনুষ্ঠান শেষে ব্যাপ্টিস্ট মিশন ইন্টিগ্রেটেড স্কুলের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন অতিথি ও অংশগ্রহণকারীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ডেঙ্গুতে শিশুসহ ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১১৯৫

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় শিশুসহ ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে ১ হাজার ১৯৫ জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

আজ রোববার (৯ নভেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল শনিবার সকাল ৮টা থেকে আজ সকাল ৮টা পর্যন্ত তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১১৫, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৩২, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২৭৮, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ২২০, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১১৫, খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১১৪, ময়মনসিংহ বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৯, রাজশাহী বিভাগে ১১৩ (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ও সিলেট বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) নয়জন রয়েছে।

২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ১০৮ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে। চলতি বছরে এ পর্যন্ত ৭৪ হাজার ৮৯৩ জন রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে। চলতি বছরের ৯ নভেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৭৮ হাজার ৫৪৩ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে মারা যাওয়াদের মধ্যে ৫ বছরের ছেলে শিশু রয়েছে। এ ছাড়া তিনজন নারী ও বাকি দুজন পুরুষ। তাদের বয়স যথাক্রমে ৬৫, ৩২, ৭০, ৪৮ ও ৪০ বছর।

চলতি বছরে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ৩১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে জানুয়ারিতে ১০, ফেব্রুয়ারিতে ৩, এপ্রিলে ৭, মে মাসে ৩, জুনে ১৯, জুলাইয়ে ৪১, আগস্টে ৩৯, সেপ্টেম্বরে ৭৬ ও অক্টোবরে ৮০ জন মারা গেছে। মার্চে কারও মৃত্যু হয়নি। আর নভেম্বরে এখন পর্যন্ত ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যেসব তথ্যে বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না

মো. ইকবাল হোসেন
যেসব তথ্যে বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না

ডায়াবেটিস রোগের প্রথম ও প্রধান চিকিৎসা হচ্ছে ডায়েট বা খাবার ব্যবস্থাপনা। এটি একটি লাইফস্টাইল ডিজিজ। তাই এই রোগ হলে লাইফস্টাইলে নানা পরিবর্তন আনতে হয় সুস্থ থাকতে। চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ ব্যবস্থাপনা এবং পুষ্টিবিদের পরামর্শে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে পারলে সুস্থ থাকা যায় ডায়াবেটিস থেকে।

ডায়াবেটিস ভালো হয় না—বিষয়টি রোগীদের বেশি চিন্তিত করে তোলে। এই দুশ্চিন্তা থেকে রোগীরা অনেক সময় সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারেন না। সেই সঙ্গে রোগীরা খাওয়া নিয়েও অনেক ভুল ধারণা পোষণ করেন।

কিটো ডায়েটে ডায়াবেটিস ভালো হয়

কথাটি বহুল প্রচলিত। বেশির ভাগ ডায়াবেটিস রোগী কিটো ডায়েটে অভ্যস্ত হতে চেষ্টা করেন; কিন্তু একটা নির্দিষ্ট সময় পর আর পেরে ওঠেন না। কিটো ডায়েটে রক্তের সুগার বেশ ভালো নিয়ন্ত্রণে থাকে। কিন্তু একটা লম্বা সময় কিটো ডায়েট করলে আমাদের শরীরে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি সৃষ্টি হয়। ফলে শরীরের অন্য অঙ্গগুলো সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। কিটো ডায়েটে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় লিভার ও কিডনি। তাই এসব বিষয়ে প্রত্যেক ডায়াবেটিস রোগীর সচেতন থাকতে হবে।

কিটো ডায়েটে ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তার মানে এই নয় যে আপনার ডায়াবেটিস সেরে যাবে। আপনি যখন কিটো ডায়েট ছেড়ে আবার স্বাভাবিক ডায়েটে আসবেন, তখন আপনার রক্তের সুগার আবারও বেড়ে যাবে।

মিষ্টিজাতীয় খাবার খেলে ডায়াবেটিস হয়

এই তথ্যও একেবারে সঠিক নয়। আপনার ডায়াবেটিস যদি হয়, তাহলে মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়া সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিতে হবে। ডায়াবেটিস না থাকলে খাওয়া যেতে পারে মিষ্টিজাতীয় খাবার পরিমিতভাবে। তবে অতিরিক্ত যদি খান, তাহলে অন্যান্য শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। একজন সুস্থ ব্যক্তি মিষ্টিজাতীয় তৈরি খাবার প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৩০ গ্রাম খেতে পারেন।

ডাল ও বীজজাতীয় খাবার নয়

অনেকে বলে থাকেন, ডায়াবেটিস রোগীদের ডাল ও বিভিন্ন বীজজাতীয় খাবার নিষেধ। এটিও ভুল তথ্য। ডাল এবং বীজজাতীয় খাবার অবশ্যই পরিমিত খাওয়া যাবে। শরীরের চাহিদার অতিরিক্ত যেকোনো খাবার ক্ষতিকর। তবে ডায়াবেটিসের পাশাপাশি কিডনির সমস্যা থাকলে ডাল ও বীজজাতীয় খাবার বন্ধ থাকবে।

মাঝেমধ্যে মিষ্টি খেতে হয়

বহুল প্রচলিত বাণী এটি। মাঝেমধ্যে মিষ্টি না খেলে ডায়াবেটিস নীল হয়ে যায়—এটা ভুল তথ্য। এতে ডায়াবেটিস বেড়ে রোগীর ক্ষতি হতে পারে। তবে রক্তের সুগার (হাইপোগ্লাইসিমিয়া) স্বাভাবিকের চেয়ে কমে গেলে কিছুটা মিষ্টিজাতীয় খাবার খেতে হয়। তবে রুটিনমাফিক খাবার খেলে এবং চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খেলে রক্তের সুগার কমে যাওয়ার শঙ্কা খুব কম।

হাইপোগ্লাইসিমিয়া হলে, তখন ৩ চা-চামচ চিনি অথবা মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়া যাবে।

মায়ের ডায়াবেটিস থাকলে শিশু বুকের দুধ খেতে পারবে না

মায়ের ডায়াবেটিস থাকলেও তিনি শিশুকে নিশ্চিন্তে বুকের দুধ পান করাতে পারেন। বরং বুকের দুধ পান না করালেই শিশু অপুষ্টিতে ভুগবে। তার সঠিক বৃদ্ধি হবে না। জন্মের প্রথম ৬ মাস শিশুর সব পুষ্টির চাহিদা শুধু মায়ের বুকের দুধ থেকে পূরণ হয়। অন্য কোনো উপায়ে তা পূরণ করা সম্ভব নয়।

ভুল ধারণা

ডায়াবেটিস সেরে যায়

ডায়াবেটিস রোগ কখনো সেরে যায় না। এই রোগীদের এ ধরনের দুর্বলতার সুযোগ অনেক অসাধু ব্যক্তি নিয়ে থাকে। ‘ডায়াবেটিস ভালো হয়’ এমন চটকদার বিজ্ঞাপন দেখা যায় বিভিন্ন জায়গায়। এতে রোগীরা আকৃষ্ট হন। সেসব জায়গায় চিকিৎসা নেওয়ার পর ডায়াবেটিস তো ভালো হয়ই না; উল্টো রোগীদের ডায়াবেটিসের অন্যান্য জটিলতা আও বেড়ে যায়।

অনেকে বলেন, হোমিওপ্যাথি বা কবিরাজি চিকিৎসায় ডায়াবেটিস ভালো হয়। এগুলোও ভুল তথ্য। ডায়াবেটিস ভালো করার কোনো ফর্মুলা যদি আবিষ্কৃত হয়, তাহলে সে খবর সবার আগে দেশের এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট ও ডায়াবেটিস হাসপাতালগুলো জানবে। তাই এমন চটকদার বিজ্ঞাপনের প্রলোভনে নিজের স্বাস্থ্য আর কষ্টার্জিত অর্থ নষ্ট করবেন না। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আপনার চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত