Ajker Patrika

অনাগত করোনাভাইরাসও রুখে দেবে টিকা, আশা দেখাচ্ছে সুপার-অ্যান্টিবডি

জাহাঙ্গীর আলম
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২১, ০২: ৫০
অনাগত করোনাভাইরাসও রুখে দেবে টিকা, আশা দেখাচ্ছে সুপার-অ্যান্টিবডি

নভেল করোনাভাইরাসের নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বিজ্ঞানীরা। অবিশ্বাস্য কম সময়ের মধ্যে টিকা তৈরির সাফল্য এলেও নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে এসব টিকার কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় কাটছে না। এর মধ্যে আরও নতুন করোনাভাইরাসের মহামারি দুয়ারে কড়া নাড়ছে বলে সতর্ক করছেন বিজ্ঞানীরা। ফলে এমন একটি টিকার সন্ধান চলছে যা এই নতুন করোনাভাইরাসের সব ধরনের ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে মানুষকে আজীবন না হলেও অন্তত দীর্ঘ সময় সুরক্ষা দেবে।

সেই পথে অনেকখানি এগিয়ে গেছেন লিনফা ওয়াং। শুধু তা-ই নয়, এমন টিকা উদ্ভাবন সম্ভব যা সব ধরনের করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে মানুষকে সুরক্ষা দিতে সক্ষম হবে। ওয়াংয়ের গবেষণায় এমন আশার আলোই দেখা দিয়েছে। 

২০২০ সালের গোড়ার দিকে কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে, লিনফা ওয়াং কয়েকটি ধারণা নিয়ে কাজ করতে শুরু করেন। এর মধ্যে একটি হলো পূর্ববর্তী করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব থেকে বেঁচে যাওয়া লোকদের রক্ত পরীক্ষা করা। 

ওয়াং একজন ভাইরোলজিস্ট। তিনি ডিউক-এনইউএস মেডিকেল স্কুলে কাজ করেন। ডিউক এবং সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মধ্যে সহযোগিতায় কয়েক দশক ধরে বাদুড়-বাহিত ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করছেন। 

ওয়াং দেখিয়েছেন, ২০০৩ সালে ছড়িয়ে পড়া সার্স-কোভ-১ (সার্স নামেই পরিচিত) প্রায় ৮০০ মানুষের প্রাণ নিয়েছিল, সেটি সম্ভবত অশ্বক্ষুরাকৃতির বাদুড় থেকে মানুষের শরীরে সংক্রমিত হয়। 

ওয়াংয়ের নতুন তত্ত্বটি ছিল যে, যারা এই এই মূল সার্সে আক্রান্ত হওয়ার পর বেঁচে গিয়েছিলেন তাঁদের শরীরে নিশ্চয় এমন অ্যান্টিবডি রয়েছে যা নতুন সার্স-কোভ-২-এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করতে পারে। 

প্রাথমিকভাবে ওয়াং শুধু সার্সের পুরোনো সংস্করণের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি আছে এমন লোকদের রক্ত পরীক্ষা করেন। কিন্তু এ বছরের শুরুর দিকে কোভিডের বেশ কয়েকটি ধরন ছড়িয়ে পড়া শুরু হলে তিনি সেই রোগীদের আবার পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেন। এই মুহূর্তে, সিঙ্গাপুরের সার্স থেকে বেঁচে যাওয়া অনেকে কোভিডের টিকা নিয়েছেন। 

ওয়াং যা পেয়েছিলেন তা তাঁকে অবাক করেছিল। কোভিড টিকা সার্স সারভাইভারদের শরীরে সুপার-অ্যান্টিবডি তৈরি করেছিল, যা সার্স এবং অন্যান্য করোনাভাইরাস থেকেও তাঁদের সুরক্ষা দিচ্ছে। 

পরীক্ষায় দেখা গেছে, ওই আট রোগীর সবার এমন অ্যান্টিবডি ছিল যা টেস্ট-টিউব পরীক্ষায় মানুষকে কখনো সংক্রমিত করেনি এমন পাঁচটি ভিন্ন বাদুড় এবং প্যাঙ্গোলিন (পিঁপড়েভুক/বনরুই) বাহিত করোনাভাইরাস স্ট্রেনকে প্রতিহত করেছে।

গত আগস্টে নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। ওয়াংয়ের গবেষণার ফলাফলগুলো একটি সর্বজনীন করোনাভাইরাস টিকা উদ্ভাবনের সম্ভাবনাকে জোরালো করেছে।

এমন একটা কিছুরই প্রয়োজন তীব্রভাবে অনুভব করছেন সারা দুনিয়ার জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। কারণ মাত্র ২০ বছরে তিনটি নতুন করোনাভাইরাস আবির্ভূত হয়েছে: প্রথমে সার্স, তারপর ২০১২ সালে মার্স আর এখন কোভিড-১৯। এ পরিপ্রেক্ষিতে চলমান কোভিড তো বটেই সম্ভাব্য সব করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব থেকে সুরক্ষা দেবে এমন টিকা তৈরির চেষ্টা বেশ জোরেশোরে চলছে। 

সিঙ্গাপুরের সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে বিশাল ল্যাবে এমন টিকারই প্রোটোটাইপ নিয়ে কাজ করছেন ওয়াং। কোভিড-টিকা পাওয়া সার্স সারভাইভারদের মধ্যে যে ধরনের প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়েছে, একই ধরনের বিস্তৃত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে পারে এমন টিকা চাইছেন তিনি। 

ওয়াংয়ের কৌশলটি হলো- কোভিড স্পাইক প্রোটিন সংবলিত একটি প্রথম ডোজের সঙ্গে হাইব্রিড সার্স প্রোটিন সমৃদ্ধ দ্বিতীয় ডোজের সংমিশ্রণ। যদি এটি কাজ করে, ওয়াং বলেন, ইঁদুরের শরীরে পরিচালিত পরীক্ষাগুলোতে যথেষ্ট ইতিবাচক ফলাফল এসেছে, কোভিড-২ বা সার্স-৩-এর সুরক্ষায় এই টিকা দেওয়া যেতে পারে। 

অবশ্য শুধু ওয়াং-ই এমন টিকা নিয়ে কাজ করছেন এমন নয়। সারা বিশ্বে এরই মধ্যে এই প্রকল্পে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। 

মেলানি স্যাভিল, কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপারেডনেস ইনোভেশনস-এর টিকা গবেষণা ও উন্নয়নের প্রধান। তিনি বলেন, ‘আমরা এমন কিছু চাই যা বিস্তৃতভাবে প্রতিরক্ষামূলক, যাতে পরেরটি যখন কোনো প্রাণী থেকে মানুষের শরীরে সংক্রমণ ঘটানো শুরু করবে তখন আমাদের হাতে টিকা প্রস্তুত থাকবে।’ 

অসলো ভিত্তিক অলাভজনক এ প্রতিষ্ঠান আগামী পাঁচ বছরে ‘ব্রড-অ্যাক্টিং করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন’ তৈরি করতে ২০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করার পরিকল্পনা করেছে। 

ওয়েইসম্যান, যিনি ফাইজার এবং মডার্নার মেসেঞ্জার আরএনএ ভ্যাকসিনে ব্যবহৃত মূল প্রযুক্তির পথিকৃৎ, সব ধরনের করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেবে এমন টিকা নিয়ে গবেষণাকারীদের মধ্যে তিনিও রয়েছেন। 

গবেষকদের লক্ষ্য হলো- প্রাথমিকভাবে, এই জাতীয় টিকাগুলো কোভিডের মোটামুটি কাছাকাছি ধরনের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেবে। তবে আরও উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য হলো- সাধারণ সর্দির জন্য দায়ী এমন বেশ কয়েকটি স্ট্রেনসহ করোনাভাইরাসের বিস্তৃত প্রজাতি ও ধরনের বিরুদ্ধে সুরক্ষা নিশ্চিত করা। 

প্রকৃতিতে সুপ্ত থাকা বাদুড়-বাহিত করোনাভাইরাসগুলোর আধিক্যের কারণে, কোভিডের মতো আরও মহামারির আশঙ্কা করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। ইউএস ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসের পরিচালক অ্যান্থনি ফাউসিও এ আশঙ্কা থেকে করোনাভাইরাসের সমস্ত পুনরাবৃত্তিকে ঠেকিয়ে দিতে পারবে এমন টিকা উদ্ভাবনের ওপর জোর দিচ্ছেন। 

গত সেপ্টেম্বরে ফাউসির সংস্থা হার্ভার্ড, ডিউক এবং উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরিচালিত প্যান-করোনাভাইরাস টিকা নিয়ে গবেষণার জন্য ৩৬ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলার তহবিল ঘোষণা করেছে। 

কয়েকটি বায়োটেক কোম্পানির সঙ্গে এক ডজনেরও বেশি একাডেমিক দল এই সমস্যা নিয়ে কাজ করছে। ডিউক এবং ইউএস ইউনিভার্সিটির ল্যাবগুলো এরই মধ্যে সার্স-কোভ-১, সার্স-কোভ-২ এবং এর সংশ্লিষ্ট বাদুড়-বাহিত করোনাভাইরাসসহ শক্তিশালী ক্রস-ভাইরাস (প্রাণী থেকে মানুষে সংক্রমণে সক্ষম) প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রদর্শন করে এমন টিকার প্রোটোটাইপ তৈরি করেছে। 

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল্টার রিড আর্মি ইনস্টিটিউট অব রিসার্চেরও একটি শট রয়েছে যা একাধিক করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেওয়ার সক্ষমতা দেখিয়েছে। এটি এখন মানব শরীরে পরীক্ষার প্রথম ধাপে রয়েছে। এত দূর আগানো প্রথম সারির টিকার মধ্যে এটি অন্যতম। 

তবে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্নের উত্তর এখনো মেলেনি: যেমন, ভাইরাসের কোন অংশগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করতে হবে; কোন প্রযুক্তি সবচেয়ে ভালো কাজ করে এবং টিকাগুলো কতটা বিস্তৃত প্রজাতি ও ভ্যারিয়েন্টে কাজ করবে। 

ফাইজার, মডার্না এবং আরও কয়েকটি বড় কোভিড টিকা কোম্পানি এখন পর্যন্ত অবশ্য এ খাতে খুব বেশি বিনিয়োগ করছে না। তারা এটি নিয়ে একাডেমিক গবেষণার চূড়ান্ত দেখার অপেক্ষা করছে। তারা বুস্টার ডোজ নিয়ে ব্যস্ত। তাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ এখন ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট প্রতিরোধের উপায় খোঁজায়। 

অবশ্য বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরেই এমন একটি টিকা তৈরির স্বপ্ন দেখছেন যা প্রতি বছর ফ্লুর টিকা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দূর করবে। দৃশ্যমান অগ্রগতি অবশ্য এখনো হয়নি। এখানে মূল সমস্যা হলো, মিউটেশনের গতি। ইনফ্লুয়েঞ্জা অত্যন্ত দ্রুত বিকশিত হয়। করোনাভাইরাসগুলো যে গতিতে বিকশিত হয় তা নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে মহামারিতে গত দুই বছরে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়ে গেছে তাতে বিস্তৃত প্রজাতি ও ভ্যারিয়েন্টে কাজ করবে এমন একটা সমাধান আনতেই হবে। সর্বজনীন টিকা নিয়ে কাজ করছেন ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির স্ট্রাকচারাল বায়োলজিস্ট পামেলা জর্কম্যান। তাঁর মতে, ‘কিছু না করাটা বোকামি হবে।’ 

এখানে ফ্লু টিকার ইতিহাস অনেকখানি আশা দিতে পারে। ১৯৪০-এর দশকে ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের ভাইরোলজিস্ট থমাস ফ্রান্সিস মার্কিন সেনাবাহিনীর সাহায্যে প্রথম দিকের টিকা তৈরি করেছিলেন। সম্ভাব্য মহামারিতে জনাকীর্ণ ব্যারাকে সেনাদের সুরক্ষা নিয়ে তাঁরা চিন্তিত ছিলেন। ফ্রান্সিস এবং তাঁর উত্তরাধিকারী জোনাস সালক নিষিক্ত মুরগির ডিমে টিকা তৈরি করেছিলেন। এ পদ্ধতি আজও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। বহু গবেষণায় এগুলো বেশ কার্যকারিতা দেখিয়েছে। ১৯৪৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী সেনাদের দেওয়া একটি ইনফ্লুয়েঞ্জা বি শট ৮৮ শতাংশ কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। যেখানে বর্তমান এমআরএনএ কোভিড টিকা ৯০ শতাংশের বেশি কার্যকারিতা দেখিয়েছে বলে দাবি করা হয়। ‘ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের ক্রমবর্ধমান ধরনের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিষেধক দেওয়ার দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক’, ১৯৫৩ সালের একটি প্রকাশনার উপসংহারে এমন কথাই বলেছিলেন থমাস ফ্রান্সিস। 

প্রথম দিকের ফ্লু শটগুলো দুটি ভাইরাল স্ট্রেন এবং ১৯৭০-এর দশকে তিনটি এবং শেষ দশকে চারটি স্ট্রেনের বিরুদ্ধে কার্যকর ছিল। কিন্তু টিকার ইতিহাসে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে, চিকিৎসকেরা সঠিকভাবে পরিমাপ করতে পারেননি যে বাস্তব জগতে শটগুলো কীভাবে কাজ করে। আধুনিক ভাইরাল লোড টেস্টের পর কোভিড নির্ণয়ের জন্য পিসিআর পরীক্ষাগুলোর মতো পদ্ধতি ১৯৯০-এর দশকেই ব্যবহার শুরু হয়েছিল। এর মাধ্যমে গবেষকেরা বাস্তব-বিশ্বে ফ্লু টিকার কার্যকারিতা আরও সঠিকভাবে নির্ণয় করতে সক্ষম হচ্ছেন। ফলে ফলাফলগুলো কীভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে সেটি ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠছে। 

বছরের পর বছর ধরে গবেষকেরা আরও আধুনিক, দ্রুত উৎপাদন পদ্ধতি ব্যবহার করে ফ্লু টিকা উদ্ভাবনের প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করেছেন। তবে একটি সর্বজনীন টিকা তৈরির প্রচেষ্টা যা সব স্ট্রেনের বিরুদ্ধে কাজ করবে, ২০০৯ সালে ইনফ্লুয়েঞ্জার এইচ১এন১ (সোয়াইন ফ্লু) সংস্করণ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার আগে পর্যন্ত সেভাবে গুরুত্ব পায়নি। 

তবে এখানে বড় সমস্যা হচ্ছে, কোনো সংস্থাই এ খাতে বড় বিনিয়োগ নিয়ে এগিয়ে আসছে না। জনসাধারণের প্রয়োজন এবং বাণিজ্যিক বাস্তবতার মধ্যে অন্য অনেক দ্বন্দ্বের মতো, সরকারি এবং অলাভজনক তহবিলের বড় প্রয়োজন এখানেও জরুরি। কোথা থেকে এ অর্থ আসবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। শেষ পর্যন্ত দেশগুলো সম্ভাব্য ক্রেতা এবং শটগুলো কেনা ও মজুত করার নিশ্চয়তা না দিলে বেসরকারি ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলো এগোতে পারবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে মৃত্যু নেই, হাসপাতালে ভর্তি ২০০ জন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে মৃত্যু নেই, হাসপাতালে ভর্তি ২০০ জন

দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কারও মৃত্যু হয়নি। একই সময়ে সারা দেশে ২০০ জন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে আজ সকাল ৮টা পর্যন্ত তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৯২, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৭২, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ছয়, খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) দুজন রয়েছে।

২৪ ঘণ্টায় ২২৬ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে। চলতি বছরে এযাবৎ মোট ৯৪ হাজার ৬২৪ জন রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে।

চলতি বছরের ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৯৬ হাজার ৮২৭ জন। এর মধ্যে ৬২ দশমিক ৪ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৭ দশমিক ৬ শতাংশ নারী রয়েছেন।

গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কারও মৃত্যু হয়নি। চলতি বছরে এযাবৎ ডেঙ্গুতে মোট ৩৯৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

চলতি বছর ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে নভেম্বর মাসে। ওই মাসে ১০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার আগে অক্টোবর মাসে ৮০ জন ও সেপ্টেম্বর মাসে ৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৬ দাবিতে লাগাতার কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন স্বাস্থ্য সহকারীরা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
৬ দফা দাবিতে মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন স্বাস্থ্য সহকারীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
৬ দফা দাবিতে মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন স্বাস্থ্য সহকারীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

নিয়োগবিধি সংশোধন, বেতনবৈষম্য দূরীকরণ এবং টেকনিক্যাল পদমর্যাদা প্রদানের দাবিতে টানা ষষ্ঠ দিনের মতো আন্দোলন করছেন স্বাস্থ্য সহকারীরা। আজ বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) রাজধানীর মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনে দিনভর অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা। আন্দোলনকারীরা ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী শনিবার (৬ ডিসেম্বর) থেকে সারা দেশের স্বাস্থ্য সহকারীরা ঢাকায় সমবেত হয়ে লাগাতার কর্মবিরতি পালন করবেন।

গত শনিবার (২৯ নভেম্বর) থেকে শুরু হওয়া কর্মবিরতি প্রথম দুই দিন চলেছিল শহীদ মিনারে। পরে তাঁরা অবস্থান নেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনে। বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে এ আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন দেশের ৬৪ জেলার স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য পরিদর্শকেরা।

এই কর্মসূচির কারণে কয়েক দিন ধরে সারা দেশে ১ লাখ ২০ হাজার অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে টিকা নিতে এসে অনেক মা ও শিশু ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।

স্বাস্থ্য সহকারীদের এ কর্মসূচির কারণে সারা দেশে ১ লাখ ২০ হাজার অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রের সেবা কয়েক দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে টিকা নিতে এসে মা ও শিশুরা ফিরে যাচ্ছেন।

স্বাস্থ্য সহকারীদের দাবি, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে বঞ্চিত করে কর্মবিরতিতে যেতে তাঁরা চাননি। কিন্তু দীর্ঘদিনের বঞ্চনা ও কর্তৃপক্ষের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কারণে তাঁরা আন্দোলনে যেতে বাধ্য হয়েছেন। দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে বারবার প্রতিশ্রুতির আশ্বাস মিললেও বাস্তবে কোনো অগ্রগতি হয়নি।

দাবি আদায়ে অনড় অবস্থান জানিয়ে নেতারা বলেন, ‘আমাদের ১৬তম গ্রেড থেকে ১৪তম গ্রেডে উন্নীত করার সরকারি আদেশ জারি না হওয়া পর্যন্ত আমরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করব না। এখন শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি চলছে, প্রয়োজনে আরও কঠোর হতে বাধ্য হব।’

স্বাস্থ্য সহকারীদের অবস্থান কর্মসূচি। ছবি: আজকের পত্রিকা
স্বাস্থ্য সহকারীদের অবস্থান কর্মসূচি। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে স্বাস্থ্য সহকারীদের নানা বঞ্চনার চিত্রও তুলে ধরে আন্দোলনকারীরা জানান, টিকাদানের আগে মাসজুড়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা, জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধন, নবজাতক ও গর্ভবতী মায়ের রেজিস্ট্রেশন, যক্ষ্মা রোগী শনাক্তকরণ, ডটস (সরাসরি পর্যবেক্ষণ থেরাপি) পদ্ধতিতে ওষুধ খাওয়ানো, উঠান বৈঠক, মা সমাবেশসহ বিভিন্ন সেবা তাঁরা দিয়ে থাকেন। সপ্তাহে তিন দিন কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়মিত সেবা দেওয়ার পরও তাঁদের মাসিক ভ্রমণভাতা মাত্র ৬০০ টাকা। আর বেতন মোট ৯ হাজার ৭০০ টাকা।

আন্দোলনকারীদের দাবির মধ্যে রয়েছে, নিয়োগবিধি সংশোধন করে স্নাতক বা সমমানের যোগ্যতা যুক্ত করে ১৪তম গ্রেড প্রদান, ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমাধারীদের ১১তম গ্রেডসহ টেকনিক্যাল পদমর্যাদা দেওয়া, ধারাবাহিকভাবে উচ্চতর গ্রেডে পদোন্নতি নিশ্চিত করা, প্রশিক্ষণ ছাড়াই স্নাতক স্কেলে অন্তর্ভুক্ত করা, বেতনস্কেল পুনর্নির্ধারণের সময় টাইম স্কেল বা উচ্চতর স্কেল সংযুক্ত করা এবং ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমা (এসআইটি) সম্পন্নকারীদের সমমান স্বীকৃতি প্রদান।

বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সমন্বয় পরিষদের সদস্যসচিব ফজলুল হক চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন, আমাদের ফাইল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখানে এখনো বিশ্লেষণ শুরু হয়নি।’

তিনি আরও জানান, ৬৪ জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে আলোচনা করে আগামী শনিবার থেকে লাগাতার কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. এ বি এম আবু হানিফ আজ সন্ধ্যায় মোবাইল ফোনে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তাদের দাবির বিষয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আমরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। এখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ছাড়াও অর্থ মন্ত্রণালয় এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাজ রয়েছে। সেখানে প্রক্রিয়াগতভাবে কিছুটা সময় লাগছে। গত তিন দিন তারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান করছে। আমরা কাজ করছি। আমরা আশা করছি, সবকিছু ভালোভাবে সমাধান হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের কর্মবিরতিতে দিনভর দুর্ভোগ

  • ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে হাসপাতালসহ দেশের সব স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে এ কর্মসূচি।
  • আজ থেকে কমপ্লিট শাটডাউনের ঘোষণা আসতে পারে।
আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের অর্ধদিবস কর্মবিরতি। গতকাল রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ছবি: আজকের পত্রিকা
১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের অর্ধদিবস কর্মবিরতি। গতকাল রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ছবি: আজকের পত্রিকা

বেতনকাঠামোর দশম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে হাসপাতালসহ দেশের সব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে চার ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেছেন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা। গতকাল বুধবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তাঁদের এই কর্মসূচির কারণে চরম দুর্ভোগে পড়ে রোগী এবং তাদের স্বজনেরা। গত ৩০ নভেম্বর থেকে টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা কর্মবিরতি পালন করছেন।

এদিকে দাবি আদায়ে বৃহস্পতিবার কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচিতে যাওয়ার কথা রয়েছে আন্দোলনকারীদের। তবে কঠোর এই কর্মসূচিতে যাওয়ার আগে গতকাল রাতে বৈঠকে বসেছেন আন্দোলনকারীরা। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, শাটডাউন কর্মসূচি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের কর্মবিরতির কারণে রোগীরা চরম ভোগান্তিতে পড়লেও দাবি আদায়ে দিনভর কঠোর অবস্থানে ছিলেন তাঁরা। কর্মবিরতির সময় হাসপাতালের জরুরি সেবা চালু থাকলেও অনেককে সেবা না পেয়ে চলে যেতে দেখা গেছে।

আন্দোলনরতরা জানান, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের দশম গ্রেড বাস্তবায়নের ফাইল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আটকে আছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় দীর্ঘদিনেও বিষয়টির সমাধান হয়নি। এর আগে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার, ডিপ্লোমা নার্স ও ডিপ্লোমা কৃষিবিদদের ১১তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা হয়েছে। ফলে দাবি আদায়ে এবার কঠোর কর্মসূচি পালন করছেন তাঁরা।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন ১০ হাজারের বেশি মানুষ চিকিৎসাসেবা নিতে যায়। এসব সেবাপ্রার্থীর বড় অংশ ঢাকার বাইরে থেকে আসে। টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের গতকালের কর্মবিরতির কারণে অনেকে চিকিৎসা না পেয়ে চলে যায়।

বিভিন্ন স্থানে দিনভর ভোগান্তি

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে সেবা বন্ধ রেখে চার ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেছেন টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা। এতে ভোগান্তিতে পড়ে হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনেরা।

কর্মবিরতি চলাকালে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের ফার্মেসিতে বিনা মূল্যে সরকারি ওষুধ বিতরণ, রক্ত পরীক্ষা, এক্স-রে, আলট্রাসনোগ্রামসহ রোগনির্ণয়ের বিভিন্ন সেবাকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। এ সময় হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও সেবাকেন্দ্রগুলোয় কর্মবিরতির ব্যানার ঝুলছিল। তবে হাসপাতালের অন্যান্য সেবা কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিল। চমেক হাসপাতালে রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের একজন কর্মচারী আজকের পত্রিকাকে বলেন, কর্মবিরতির ফলে এক্স-রে করা সাময়িক বন্ধ ছিল।

একই দাবিতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের সামনে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করেন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা। বুধবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা। এ সময় আন্দোলনকারীরা বলেন, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ও নার্সদের মতো তাঁদেরও চাকরিগত মর্যাদা দশম গ্রেডে উন্নীত না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

এ ছাড়া সিরাজগঞ্জ সদরে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে কর্মসূচি পালিত হয়। কর্মবিরতির কারণে হাসপাতালে সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং ওষুধ বিতরণ বন্ধ ছিল।

আবদুল্লাহ নামের এক রোগী বলেন, ‘সিটি স্ক্যান করানোর জন্য এসেছিলাম। এসে শুনি, কর্মবিরতি দিয়েছে। এ জন্য ফিরে যাচ্ছি।’

উল্লাপাড়ার আনিসুর নামের এক বৃদ্ধ বলেন, ‘কোমরে ব্যথা। তাই ডাক্তারের কাছে এসেছি। এসে শুনি, দুপুরের আগে চিকিৎসা হবে না।’

একই দাবিতে রাজবাড়ীতে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা চার ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেছেন। বুধবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এই কর্মবিরতি পালন করেন তাঁরা। কর্মবিরতি কর্মসূচিতে দাবি আদায় না হলে ৪ ডিসেম্বর থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালনের মাধ্যমে হাসপাতাল শাটডাউন ঘোষণার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শৌচাগার সুবিধা: হাসপাতালে বিড়ম্বনায় প্রতিবন্ধীরা

  • ৯৯ শতাংশ শৌচাগার হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী রোগীদের জন্য ব্যবহারযোগ্য নয়।
  • শৌচাগারগুলোর দরজা সংকীর্ণ, কমোডের উচ্চতা অনুপযুক্ত, প্রবেশে র‍্যাম্প সুবিধা নেই।
মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ, ঢাকা
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ২২
ডেঙ্গুর প্রকোপ ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনই হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গতকাল রাজধানীর মহাখালীতে ডিএনসিসি হাসপাতালে। আজকের পত্রিকা
ডেঙ্গুর প্রকোপ ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনই হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গতকাল রাজধানীর মহাখালীতে ডিএনসিসি হাসপাতালে। আজকের পত্রিকা

দেশের সরকারি ও বেসরকারি সব ধরনের হাসপাতালে প্রতিবছরই বাড়ছে সেবাগ্রহণকারীর সংখ্যা। কিন্তু অধিকাংশ চিকিৎসাকেন্দ্রেই শৌচাগারগুলো ব্যবহারের অযোগ্য অথবা ন্যূনতম মানের নয়। ফলে চিকিৎসা নিতে এসে রোগীরা নানা ভোগান্তিতে পড়ছেন। আর প্রতিবন্ধী রোগীদের ক্ষেত্রে এ ভোগান্তি আরও তীব্র। কারণ হাসপাতালে প্রতিবন্ধী রোগীদের উপযোগী শৌচাগার ১ শতাংশেরও কম।

হাসপাতাল পরিচালনা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিবন্ধীবান্ধব শৌচাগার একটি হাসপাতালের মৌলিক পরিকাঠামোর অংশ হওয়া উচিত। তবে দেশে এ ধরনের সুবিধার মারাত্মক ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ঘাটতি বেশি। ফলে রোগীরা শুধু ভোগান্তিতেই পড়ছেন না; বরং গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকিরও সম্মুখীন হচ্ছেন। দীর্ঘ সময় শৌচাগার ব্যবহার করতে না পারার ফলে কিডনি জটিলতা, ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (মূত্রনালি সংক্রমণ) ও পানিশূন্যতাসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিষয়ক গবেষণা প্রকাশনা সংস্থা পাবলিক লাইব্রেরি অব সায়েন্সের প্লস ওয়ান সাময়িকীতে বাংলাদেশে হাসপাতালের শৌচাগার নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ পায়। গবেষণার শিরোনাম ‘ইনঅ্যাডিক্যুইট স্যানিটেশন ইন হেলথকেয়ার ফ্যাসিলিটিজ: অ্যা কম্প্রিহেনসিভ ইভ্যালুয়েশন অব টয়লেটস ইন মেজর হাসপাতাল ইন ঢাকা, বাংলাদেশ’। গবেষণাটি করেছেন অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের নয়জন গবেষক।

গবেষণায় রাজধানীর ১০টি সরকারি ও ২টি বেসরকারি হাসপাতালে মোট ২ হাজার ৪৫৯টি শৌচাগার পর্যবেক্ষণ করা হয়। এর মধ্যে প্রতিবন্ধী রোগীদের উপযোগী শৌচাগারের সংখ্যা মাত্র ১০টি, যা ১ শতাংশেরও কম বা শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। প্রায় ৯৯ শতাংশ শৌচাগার হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী বা চলাফেরায় সীমাবদ্ধ রোগীদের জন্য ব্যবহারযোগ্য নয়। অধিকাংশ শৌচাগারে দরজা সংকীর্ণ, কমোডের উচ্চতা অনুপযুক্ত, গ্র্যাব-বার বা হাতল নেই এবং প্রবেশপথে র‍্যাম্পের সুবিধাও নেই। ফলে প্রতিবন্ধী রোগীরা শৌচাগার ব্যবহার করতে গিয়ে চরম ভোগান্তি এবং নিরাপত্তাহীনতায় পড়েন।

দেশে ক্যানসার রোগীদের জন্য সর্বোচ্চ সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল ঘুরে এখানকার দুটি ভবনের কোথাও প্রতিবন্ধী রোগীদের জন্য নির্ধারিত শৌচাগার পাওয়া যায়নি।

একইভাবে হৃদরোগ চিকিৎসার জন্য সরকারের বিশেষায়িত চিকিৎসাকেন্দ্র জাতীয় হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের তিনটি ভবনের কোথাও নেই প্রতিবন্ধী রোগীদের জন্য নির্ধারিত শৌচাগার। তাঁদের জন্য আলাদা শৌচাগার না থাকার কথা স্বীকার করেন এই হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখানে ভর্তি রোগীরা বেডসাইড টয়লেট ব্যবহার করেন। বিভিন্ন হাসপাতালের জন্য নতুন যেসব ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে, সেখানে প্রতিবন্ধী রোগীদের জন্য শৌচাগার, হুইলচেয়ার বা শয্যাসহ ওঠানামার জন্য প্রয়োজনীয় র‍্যাম্প রাখা প্রয়োজন।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালে নির্ধারিত শয্যার ২-৩ গুণ রোগী ভর্তি থাকেন। দৈনিক বহির্বিভাগে রোগী আসেন সক্ষমতার ৪-৫ গুণ। স্বাভাবিক রোগীদের জন্য উন্নত শৌচাগারের ব্যবস্থাপনা নেই। প্রতিবন্ধী রোগীদের জন্যও আলাদা শৌচাগার রাখা যায়নি। তবে আমরা এ বিষয়ে পরিকল্পনা করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত