Ajker Patrika

ক্যানসার কোষের বিস্তার ঠেকাতে পারবে অ্যাসপিরিন, বলছে গবেষণা

অনলাইন ডেস্ক
ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অ্যাসপিরিন গ্রহণ করা উচিত নয়। ছবি: এফডিএ
ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অ্যাসপিরিন গ্রহণ করা উচিত নয়। ছবি: এফডিএ

ক্যানসার শরীরের এক জায়গায় থাকলে চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচার বা অন্য উপায়ে সেটি সরিয়ে ফেলতে পারেন। কিন্তু সমস্যা হয় যখন ক্যানসার কোষ রক্তপ্রবাহে ঢুকে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এতে মেটাস্ট্যাটিক (ছড়িয়ে পড়া) টিউমার তৈরি হয়, যা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। তাই দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞানীরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, ক্যানসার কোষের গতিবিধি ঠেকাতে পারে এমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার। এবার গবেষণায় উঠে এসেছে ভালো খবর।

নেচার মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে দেখা গেছে, আমাদের গ্রহণ করা সাধারণ কিছু ওষুধই ক্যানসার কোষের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে পারে। প্রতিদিন কম মাত্রার অ্যাসপিরিন খেলে কিছু ক্যানসারের বিস্তার কমতে পারে, বিশেষ করে স্তন ও প্রোস্টেট ক্যানসারের।

ইউনিভার্সিটি অব ক্যামব্রিজের বিশেষজ্ঞরা অ্যাসপিরিন কীভাবে ক্যানসারের বিস্তার ঠেকিয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় সে তথ্য এক গবেষণায় তুলে ধরেছেন।

গবেষকেরা দেখিয়েছেন, থ্রম্বোক্সেন এ২ (টিএক্সএ২) নামক উপাদানটি টি কোষের (টি সেলস) মধ্যে একটি বিশেষ প্রক্রিয়া শুরু করে। টিএক্সএ ২ কোষের ভেতরে এআরএইচজিইএফ ১ নামের একটি প্রোটিন সক্রিয় করে, যা টি কোষের (টি সেলস) ক্যানসার কোষ আক্রমণ করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

গবেষকেরা বলছেন, অ্যাসপিরিন এমন একটি এনজাইমকে আটকে দেয়, যা টিএক্সএ ২ উৎপাদন করে। ফলে টিএক্সএ২-এর মাত্রা কমে গেলে টি কোষ আরও বেশি সক্রিয় হয়ে ছোট ছোট ক্যানসার কোষ খুঁজে বের করে ধ্বংস করতে পারে।

ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি বিভাগের বিজ্ঞানী গবেষক ড. জি ইয়াং বলেন, ‘আমরা যখন আবিষ্কার করলাম, টিএক্সএ ২ সেই উপাদান, যা টি কোষকে দুর্বল করে ফেলছে, তখন এটি সত্যিই এক চমকপ্রদ মুহূর্ত ছিল।’

তাঁরা আরও দেখেছেন, এআরএইচজিইএফ ১ প্রোটিন টি কোষের শক্তি কমিয়ে দেয়, যার ফলে এগুলো ক্যানসার কোষকে আক্রমণ করতে পারে না। তবে যখন গবেষকেরা এআরএইচজিইএফ ১-এর এই প্রভাব বন্ধ করেন, তখন টি কোষ শক্তিশালী থাকে এবং ক্যানসারের বিরুদ্ধে ভালোভাবে লড়াই করতে পারে। পরীক্ষাগারে ইঁদুরের ওপর চালানো গবেষণায় দেখা গেছে, এতে ক্যানসার কোষ কম ছড়িয়েছে।

গবেষকেরা মনে করছেন, এই প্রক্রিয়া অনেক মানুষের ক্ষেত্রে ক্যানসার ফেরার ঝুঁকি কমিয়ে দিতে পারে এবং রোগীকে সুস্থ রাখতে পারে।

ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যানসার প্রতিরোধ ও ইমিউনোথেরাপির অধ্যাপক রাহুল রায়চৌধুরী বলেন, ‘ক্যানসার চিকিৎসায় অনেক অগ্রগতি হয়েছে। অনেক প্রাথমিক পর্যায়ের ক্যানসার রোগী এমন চিকিৎসা পান, যেমন টিউমার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সরানো, যা তাদের পুরোপুরি নিরাময় করতে পারে।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমরা আশা করছি, ক্যানসারের এই দুর্বলতার সময়টা লক্ষ্য করে তৈরি থেরাপি পুনরায় ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, অ্যাসপিরিন গ্রহণের কিছু ঝুঁকি আছে। কারও কারও ক্ষেত্রে এটি অভ্যন্তরীণ রক্তপাত বা পেটের আলসার সৃষ্টি করতে পারে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এটি গ্রহণ করা উচিত নয়।

তবে ইতিবাচক দিক হলো, কম মাত্রার অ্যাসপিরিনের খরচ অনেক কম। এটি ব্যয়বহুল ক্যানসার অ্যান্টিবডি-ভিত্তিক ওষুধের তুলনায় সস্তা, যা বিশ্বব্যাপী সহজলভ্য হতে পারে, যদি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে এর কার্যকারিতা নিশ্চিত হয়।

বর্তমানে অ্যাসপিরিন প্রাথমিক পর্যায়ের কিছু টিউমার পুনরায় হওয়া ঠেকাতে পারে কিনা এ নিয়ে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা আশা করছেন, এই নতুন গবেষণার মাধ্যমে অ্যাসপিরিন যাদের প্রয়োজন, শুধুমাত্র তাদের ব্যবহার করতে দেওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে।

এ ছাড়া, নতুন অ্যান্টি-মেটাস্ট্যাটিক চিকিৎসা তৈরি করা যেতে পারে, যা টিএক্সএ ২ ও এআরএইচজিইএফ১-এর কার্যক্রম বন্ধ রাখতে কাজ করবে। এর ফলে প্রতিকূল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমানো এবং টি কোষকে দীর্ঘ সময় ধরে সক্রিয় রাখা সম্ভব হতে পারে।

গবেষকেরা বলছেন, এটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। বিশেষ করে নিরাপদ ডোজ নির্ধারণ এবং কারা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন তা নিশ্চিত করা জরুরি। তবে যদি এটি সফল হয়, তাহলে উন্নত পর্যায়ের ক্যানসার শনাক্ত হওয়ার হার কমানো সম্ভব হতে পারে।

ক্যানসার প্রতিরোধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। আর অ্যাসপিরিন এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে পারে, যা একে ক্যানসার গবেষণার একটি মূল বিষয় করে তুলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত