Ajker Patrika

উৎসবে স্বাদ হোক স্বাস্থ্যকর

আলমগীর আলম
উৎসবে স্বাদ হোক স্বাস্থ্যকর

ঈদের দিন সূর্য ওঠার আগেই বাড়ির উঠান ভরে যায় সেমাইয়ের মিষ্টি গন্ধে। মা ব্যস্ত হাতে নাড়ছেন গরম দুধে ভেজানো চিনি আর ঘন হয়ে আসা সেমাই। রান্নাঘরের কোণে চুলার ওপর ফোঁটা ফোঁটা ঘি গলে মিশে যাচ্ছে গরম পোলাওয়ে, যেন ঈদের আনন্দের প্রথম পাঠ শুরু হয়ে গেছে। বাড়িতে যদি বয়স্ক কেউ থাকেন, তাঁর হাতে তৈরি নরম রুটি, সঙ্গে শাহি কোরমার গাঢ় ঝোল। তাজা মাংস, সুগন্ধি গরম মসলা আর পাকা লেবু—সব মিলিয়ে রান্নার এক বিশাল কর্মযজ্ঞ।

ঈদের খাবার শুধু খাবার নয়, এ এক বন্ধনের গল্প। রান্নার হাঁড়ির ফোঁস ফোঁস শব্দের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে মায়ের আদর, বাবার যত্ন, দাদির অভিজ্ঞতা আর ভাইবোনের চঞ্চলতা। খাবারের এই মহোৎসব শুধু পেট নয়, হৃদয়ও ভরিয়ে দেয় ভালোবাসায়।

ঈদ আসে ঈদ যায়, কিন্তু রান্নাঘরের সেই সব গন্ধ, হাসি আর তৃপ্তির মুহূর্ত থেকে যায় চিরদিন।

এত আয়োজনে খাওয়া-দাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সাধারণ ভুল করে ফেলি আমরা। সেই ভুল আমাদের শরীরের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ভুলগুলো শুধরে নেওয়ার সুযোগ আছে নিজের কাছেই।

অতিরিক্ত খাবারকে না

ঈদের দিন বিভিন্ন সুস্বাদু খাবার থাকে। তাই আমরা পরিমাণের দিকে খেয়াল না রেখে অতিরিক্ত খেয়ে ফেলি। এটি হজমের সমস্যা, গ্যাস্ট্রিক, অ্যাসিডিটি এবং ওজন বাড়ার কারণ। ছোট প্লেটে খাবার নিন এবং ধীরে ধীরে খান। খাবার খাওয়ার পর পর্যাপ্ত বিরতি দিন।

অতিরিক্ত মিষ্টি না খাওয়া

ঈদে সেমাই, জর্দা, পায়েসসহ বিভিন্ন মিষ্টিজাতীয় খাবার বেশি খাওয়া হয়। রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে এসব খাবার বেশি খেলে। ঝুঁকি বাড়তে পারে ডায়াবেটিস ও স্থূলতার। দাঁতেরও ক্ষতি হতে পারে। পরিমিত মিষ্টি খান এবং প্রয়োজনে বিকল্প হিসেবে ফল খান। মিষ্টি খাওয়ার পর পানি পান করুন এবং দাঁত ব্রাশ করুন।

ভাজাপোড়া ও তেল-চর্বিযুক্ত খাবার কম খাওয়া

কালাভুনা, রোস্ট, কাবাব, পরোটা, বিরিয়ানি ইত্যাদি তেলযুক্ত খাবার ঈদে বেশি খাওয়া হয়। এটি হজমের সমস্যা, বদহজম ও অ্যাসিডিটি সৃষ্টি করতে পারে। এগুলো কোলেস্টেরল বেড়ে গিয়ে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। গ্রিল বা সেদ্ধ করা খাবার বেছে নিন। বেশি পরিমাণে সালাদ রাখুন পাতে।

পর্যাপ্ত পানি পান করুন

ঈদের দিন আমরা খাবারের প্রতি বেশি মনোযোগ দিই। কিন্তু পানি পান করতে ভুলে যাই। পানি কম খেলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে, বিশেষ করে গরমকালে। কিডনির সমস্যা ও হজমের জটিলতা দেখা দিতে পারে। দিনে ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করুন। কোমল পানীয়ের পরিবর্তে পানি বা লেবুর শরবত পান করুন।

খাওয়ার পরপরই ঘুমাতে না যাওয়া

ঈদের দিনে দুপুরে খাওয়ার পর অনেকে ঘুমিয়ে পড়েন। এটি হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে এবং অ্যাসিড রিফ্ল্যাক্সের কারণ হতে পারে। এতে শরীরে চর্বি জমার প্রবণতা বাড়ে। খাওয়ার পরপরই ঘুমানো এড়িয়ে চলুন। অন্তত ৩০ মিনিট হালকা হাঁটাহাঁটি করুন।

কোমল পানীয় পান করবেন না

খাবারের আয়োজনে এখন কোমল পানীয় থাকবেই। তবে এগুলো না পান করাই ভালো। এগুলোতে উচ্চমাত্রার চিনি থাকে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এগুলো ওজন বাড়ারও কারণ হতে পারে। কোমল পানীয়ের বদলে ডাবের পানি বা লেবুর শরবত পান করুন।

ধীরে ধীরে চিবিয়ে খাওয়া

অনেক খাবার থাকা এবং সবকিছু একসঙ্গে খেতে চাওয়ার কারণে এ সময় আমরা দ্রুত খাবার খাই। এটি হজমে সমস্যা তৈরি করে এবং বেশি খাওয়ার প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়।

তাই ধীরে ধীরে চিবিয়ে খাবার খান। খাওয়ার সময় অন্য কাজে ব্যস্ত না থেকে খাবার উপভোগ করুন।

সবজি ও আঁশযুক্ত খাবার খান

সবজি ও আঁশযুক্ত খাবার কম খান। ঈদের দিনে আমরা সাধারণত বেশি প্রোটিন (মাংস)

ও কার্বোহাইড্রেট (ভাত, রুটি) খাই। এগুলো হজমের সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্য সৃষ্টি করতে পারে। খাবারের তালিকায় সবজি ও সালাদ রাখুন। ফলমূল ও আঁশযুক্ত খাবার খান।

হালকা ব্যায়াম করুন

ঈদের দিন অন্তত ৩০ মিনিট হালকা হাঁটাহাঁটি বা শরীরচর্চা করুন।

পরামর্শ দিয়েছেন: আলমগীর আলম, খাদ্যপথ্য ও আকুপ্রেশার বিশেষজ্ঞ, প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সবজির পুষ্টিগুণ পাওয়ার সঠিক উপায়

মো. ইকবাল হোসেন
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সুষম খাবারের ৬টি উপাদানের অন্যতম ভিটামিন ও খনিজ লবণ। এগুলো আমাদের শরীরের চালিকাশক্তির অন্যতম উপাদান হিসেবে বিবেচিত। শরীরের একেকটি অঙ্গের সুরক্ষায় একেক ধরনের ভিটামিন প্রয়োজন হয়। যেমন চুল ও চোখের সুরক্ষায় ভিটামিন ‘এ’, ত্বকের সুরক্ষায় ভিটামিন ‘বি’ ও ‘সি’, হাড় ও দাঁতের সুরক্ষায় ভিটামিন ‘ডি’ প্রয়োজন হয়। আবার ত্বক, চুল ও প্রজননতন্ত্রের সুরক্ষায় ভিটামিন ‘ই’-এর ভূমিকা অনেক বেশি। এ ছাড়া শরীরের বিভিন্ন রকমের পেশি এবং স্নায়ুতন্ত্রের সুরক্ষায় খনিজ লবণের ভূমিকা অনেক বেশি।

এই ভিটামিন ও খনিজ লবণগুলো আমরা প্রধানত শাকসবজি ও ফলমূল থেকে পেয়ে থাকি। কিন্তু কিছু অসাবধানতার ফলে শাকসবজি ও ফলমূলের পুষ্টির একটা বড় অংশ হারিয়ে যায়।

শাকসবজি কাটার পরে ধোয়া

আমরা ঐতিহ্যগতভাবে শাকসবজি কাটার পর পানি দিয়ে কয়েকবার ধুয়ে থাকি। এতে পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন ‘বি ও সি’ পানির সঙ্গে মিশে শাকসবজির বাইরে চলে যায়। ফলে আমরা ওই শাকসবজি থেকে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ লবণ পাই না। তাই সেগুলো কাটা বা খোসা ছাড়ানোর আগে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। এতে ময়লা পরিষ্কারের পাশাপাশি সব পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ন থাকবে। শাকসবজি কাটার আগে বঁটি, ছুরি বা গ্রেটারও খুব ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।

অনেক সময় ধরে রান্না করা

শাকসবজি রান্নার নামে দীর্ঘ সময় আগুনের তাপে রাখা যাবে না। অল্প তাপেই শাকসবজিতে থাকা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু মারা যায়। এগুলো যত কম সময় সেদ্ধ করা হবে, তত বেশি পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ণ থাকবে। যেমন দীর্ঘ সময় ধরে রান্না করলে শাকসবজির প্রায় ৫০ শতাংশ পটাশিয়াম নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু এটি শরীরের জন্য অতিপ্রয়োজনীয় খনিজ। ফলে অল্প আঁচে ভাপানো শাকসবজি খাওয়া ভালো।

শাকসবজির রং বজায় রাখুন

প্রতিটি শাকসবজির নিজস্ব রং বজায় রেখে রান্না করলে তার পুষ্টিগুণ বেশি বজায় থাকবে। যেমন গাজর রান্নার পর লাল রং, শিম রান্নার পর সবুজ রং কিংবা ফুলকপির সাদা রং বজায় থাকতে হবে। রান্না করতে গিয়ে শাকসবজির রং যত নষ্ট হবে, তার পুষ্টিগুণ তত বেশি নষ্ট হবে।

কাটার পর দ্রুত রান্না করুন

অনেক সময় রাতে শাকসবজি কেটে রেখে দেওয়া হয় সকালে রান্না করার জন্য। অথবা সকালে কেটে রাখি দুপুরে রান্না করার জন্য। এভাবে দীর্ঘ সময় কেটে রেখে দিলে শাকসবজির কাটা অংশ বাতাসের সংস্পর্শে এসে জারণ-বিজারণ বিক্রিয়ার মাধ্যমে পুষ্টিগুণ নষ্ট করে। এভাবে কেটে রাখা শাকসবজিতে বিষক্রিয়াও হতে পারে। তাই এর সঠিক পুষ্টিগুণ বজায় রাখতে রাতে কেটে না রেখে রান্নার আগে কেটে দ্রুত রান্না করুন।

ধারালো বঁটি বা ছুরি ব্যবহার করুন

শাকসবজি কাটার কাজে ধারালো বঁটি অথবা ছুরি ব্যবহার করতে হবে। ভোঁতা বঁটি বা ছুরি দিয়ে এগুলো কাটার পর অনেক প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান নষ্ট হতে পারে। এ ছাড়া ভোঁতা বঁটি বা ছুরি দিয়ে কেটে রাখা শাকসবজিতে দ্রুত ব্যাকটেরিয়া কিংবা ছত্রাকের আক্রমণ হতে পারে।

বড় টুকরা করে কাটুন

সবজি ছোট টুকরা করে না কেটে যথাসম্ভব বড় টুকরা করে কাটবেন। ছোট টুকরা করে কাটলে তাপে বেশি পরিমাণে পুষ্টিগুণ নষ্ট হতে পারে। কিন্তু টুকরা বড় রাখলে বেশি তাপে রান্নায়ও ভেতরের পুষ্টিগুণ সহজে নষ্ট হয় না।

খোসাসহ রান্না করতে হবে

গাজর, পটোল, লাউ, শসা, মিষ্টিকুমড়ার মতো সবজিগুলো খোসাসহ রান্না করতে হবে। এসব সবজির খোসায়ও অনেক ভিটামিন ও মিনারেল থাকে।

ভাজা ভাজা করবেন না

শাকসবজি ভাজা ভাজা না করে রান্না করে খেলে বেশি পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়। প্রথমত ভাজা করতে হলে খুব ছোট টুকরা করে কাটতে হয়। দ্বিতীয়ত ভাজি করতে হলে দীর্ঘ সময় তাপে রাখতে হয়। এই দুটি বিষয় শাকসবজির পুষ্টিগুণ অনেক কমিয়ে দেয়। তাই এগুলো ঝোল করে রান্না করে খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।

জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকির কারণে শিশুর মস্তিষ্কে আঘাত

ডা. মো. আরমান হোসেন রনি 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ঝাঁকির কারণে শিশুর মস্তিষ্কে আঘাত বা শেকেন বেবি সিনড্রোম হলো শিশু নির্যাতনের একটি মারাত্মক ও জীবনঘাতী রূপ। এটি প্রধানত ২ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে দেখা যায়। এই অবস্থায় শিশুকে জোরে জোরে ঝাঁকানোর ফলে মস্তিষ্ক, চোখ ও ঘাড়ে গুরুতর আঘাত সৃষ্টি হয়, যদিও বাহ্যিকভাবে অনেক সময় কোনো আঘাতের চিহ্ন না-ও থাকতে পারে।

কারণ

শিশুর অতিরিক্ত কান্না, বিরক্তি কিংবা অস্থিরতার কারণে অভিভাবক বা পরিচর্যাকারীর রাগ এ ঘটনার জন্য বিশেষভাবে দায়ী। এই অবস্থায় শিশুকে ঝাঁকালে তাদের ঘাড়ের পেশি দুর্বল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।

এ ছাড়া মাথা শরীরের তুলনায় বড় হওয়ায় ঝাঁকানোর সময় তা সামনে-পেছনে দ্রুত নড়াচড়া করে। ফলে মস্তিষ্ক খুলির ভেতরে আঘাতপ্রাপ্ত হয় এবং রক্তনালিগুলো ছিঁড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

কী ঘটে

শিশুকে জোরে ঝাঁকানোর ফলে তিনটি প্রধান ক্ষতি হয়—

মস্তিষ্কে আঘাত: মস্তিষ্ক ও খুলির মাঝখানে থাকা রক্তনালি ছিঁড়ে গিয়ে রক্তক্ষরণ হয়।

চোখে আঘাত: ভিট্রিওরেটিনাল ট্র্যাকশনের কারণে মাল্টিলেয়ার্ড রেটিনায় রক্তক্ষরণ হয়, যা শেকেন বেবি সিনড্রোমের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।

ঘাড় ও স্পাইনাল ইনজুরি: সার্ভাইক্যাল স্পাইনের ক্ষতি ও মস্তিষ্কে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

লক্ষণ

শেকেন বেবি সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশুর লক্ষণগুলো হালকা থেকে গুরুতর হতে পারে। সাধারণ লক্ষণগুলো হলো:

অতিরিক্ত কান্না বা অস্বাভাবিক নিস্তেজ হয়ে যাওয়া

  • বমি
  • খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া
  • খিঁচুনি
  • শ্বাসকষ্ট বা শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া
  • অচেতনতা বা কোমা

চোখের পরীক্ষায় দেখা যায়—

  • এক বা উভয় চোখে মাল্টিলেয়ার্ড রেটিনাল রক্তক্ষরণ
  • ⁠প্রি-রেটিনাল, ইনট্রা-রেটিনাল ও সাব-রেটিনাল রক্তক্ষরণ
  • কখনো কখনো অপটিক ডিস্ক এডিমা

রোগনির্ণয়

শেকেন বেবি সিনড্রোম মূলত ক্লিনিক্যাল ডায়াগনোসিস। তবে নিশ্চিত করার জন্য—

  • চোখের রেটিনা পরীক্ষা
  • সিটি স্ক্যান বা এমআরআই
  • নিউরোলজিক্যাল মূল্যায়ন
  • শিশুর ইতিহাস ও সামাজিক প্রেক্ষাপট মূল্যায়ন

চিকিৎসা

এর চিকিৎসা একটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি অ্যাপ্রোচের মাধ্যমে করা হয়—

  • শিশুর জীবন রক্ষা ও সাপোর্টিভ কেয়ার
  • খিঁচুনি নিয়ন্ত্রণ
  • মস্তিষ্কের ভেতরের চাপ কমানো
  • নিউরোসার্জন ও পেডিয়াট্রিশিয়ানের তত্ত্বাবধান
  • চোখের জটিলতার জন্য চক্ষুবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া।

চিকিৎসকের আইনগত ও নৈতিক দায়িত্ব

শেকেন বেবি সিনড্রোম একটি শিশু নির্যাতনজনিত অপরাধ। তাই চিকিৎসকের দায়িত্ব শুধু চিকিৎসা করা নয়, বরং—

  • যথাযথ মেডিকো-লিগ্যাল ডকুমেন্টেশন
  • সংশ্লিষ্ট চাইল্ড প্রোটেকশন সার্ভিস বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জানানো
  • ভবিষ্যতে শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

চক্ষুবিশেষজ্ঞ ও সার্জন, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে

ফিচার ডেস্ক
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে

আমাদের প্রাত্যহিক কিছু অভ্যাস অজান্তেই শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। সুস্থ হার্টের জন্য রান্নাঘরের করা কিছু ভুল এড়িয়ে চলুন। তাহলেই নিয়ন্ত্রণে থাকবে কোলেস্টেরল।

১। স্বাস্থ্যকর তেলও বেশি খেলে ক্যালরি বেড়ে যায়। সরাসরি বোতল থেকে তেল না ঢেলে চামচ মেপে ব্যবহার করুন। ঘি অথবা মাখনের মতো স্যাচুরেটেড চর্বি সীমিত রাখার চেষ্টা করুন।

২। ডুবো তেলে ভাজা খাবার ট্রান্স-চর্বি তৈরি করে, যা হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। ভাজার বদলে বেকিং, গ্রিলিং বা এয়ার-ফ্রাই করার অভ্যাস করুন।

৩। ওটমিল, মটরশুঁটি বা আপেলের মতো দ্রবণীয় ফাইবার রক্তে ক্ষতিকর এলডিএল কোলেস্টেরল শোষণ কমায়। প্রতিদিন অন্তত ১০ গ্রাম অতিরিক্ত ফাইবার হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি ১৭ শতাংশ কমাতে পারে।

৪। অতিরিক্ত চিনি ট্রাইগ্লিসারাইড বাড়ায় এবং অতিরিক্ত লবণ উচ্চ রক্তচাপের কারণ হয়। সস বা ব্রেডের মতো খাবারে লুকিয়ে থাকা চিনির বিষয়ে সতর্ক থাকুন।

৫। চর্বিযুক্ত পাত্রে খাবার রাখা বা পোড়া তেল বারবার ব্যবহার করা ধমনির জন্য ক্ষতিকর। খাবার কাচ বা স্টিলের পাত্রে রাখুন।

৬। পুষ্টিকর খাবারও অতিরিক্ত খেলে ট্রাইগ্লিসারাইড বাড়তে পারে। ছোট প্লেটে পরিমিত খাবার খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করুন।

৭। দোকানের কেনা সস

অথবা ড্রেসিংয়ে প্রচুর চিনি ও সোডিয়াম থাকে। এর বদলে দই, লেবুর রস বা অলিভ অয়েল দিয়ে বাড়িতেই স্বাস্থ্যকর সস তৈরি করুন।

সূত্র: হেলথ শর্টস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রতিস্থাপনে শূকরের অঙ্গ একদিন মানব অঙ্গের চেয়ে উন্নত হতে পারে: বিশেষজ্ঞ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০: ২৪
২০২৩ সালে নিউইয়র্কে এক রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপনের জন্য একটি শূকরের কিডনি প্রস্তুত করছেন ড. মন্টগোমারি। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান
২০২৩ সালে নিউইয়র্কে এক রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপনের জন্য একটি শূকরের কিডনি প্রস্তুত করছেন ড. মন্টগোমারি। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান

মানুষের অঙ্গের ঘাটতি মেটাতে শূকর থেকে অঙ্গ প্রতিস্থাপন (জেনোট্রান্সপ্লান্টেশন) ভবিষ্যতে মানুষের দান করা অঙ্গের চেয়ে উন্নত বিকল্প হয়ে উঠতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন ড. রবার্ট মন্টগোমারি এই মত দিয়েছেন। তিনি নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি (এনওয়াইইউ) ল্যাঙ্গোন ট্রান্সপ্লান্ট ইনস্টিটিউটের পরিচালক এবং বর্তমানে জীবিত মানুষের শরীরে শূকরের কিডনি প্রতিস্থাপনের একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

ড. মন্টগোমারি জানান, এই ট্রায়ালের প্রথম প্রতিস্থাপন ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে এবং আগামী জানুয়ারিতে আরেকটি অপারেশন হওয়ার কথা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ছয়জন রোগীর শরীরে জিন-সম্পাদিত (জিন এডিটেড) শূকরের কিডনি প্রতিস্থাপন করা হবে। এসব কিডনিতে ১০টি জিনগত পরিবর্তন আনা হয়েছে, যাতে মানবদেহে অঙ্গ প্রত্যাখ্যানের ঝুঁকি কমে। যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) অনুমোদন দিলে এই ট্রায়াল আরও বিস্তৃত হয়ে ৪৪টি প্রতিস্থাপনে রূপ নিতে পারে।

বিশ্বজুড়ে মানব অঙ্গের তীব্র সংকট রয়েছে। যুক্তরাজ্যের এনএইচএস ব্লাড অ্যান্ড ট্রান্সপ্লান্টের তথ্য অনুযায়ী, শুধু যুক্তরাজ্যেই গত ১০ বছরে ১২ হাজারের বেশি মানুষ অঙ্গ না পেয়ে মারা গেছেন বা অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। নতুন এই ট্রায়ালে অংশগ্রহণকারীরা এমন রোগী, যাঁরা মানব কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য অনুপযুক্ত অথবা অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকলেও পাঁচ বছরের মধ্যে অঙ্গ পাওয়ার আগে মারা যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন।

ড. মন্টগোমারি নিজেও একজন ট্রান্সপ্লান্ট রোগী। বংশগত হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি ২০১৮ সালে হৃদ্‌যন্ত্র প্রতিস্থাপন করান। তাঁর বাবা ও ভাই একই রোগে মারা যান। তিনি বলেন, মানুষের অঙ্গ কখনো পর্যাপ্ত সংখ্যায় মিলবে না। কিন্তু অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য অপেক্ষার বাস্তবতা না বুঝলে এই সংকটের গভীরতা বোঝা যায় না।

মন্টগোমারি মানব অঙ্গের জোগান বাড়াতে ডোমিনো-পেয়ার্ড কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট ও হেপাটাইটিস ‘সি’ আক্রান্ত দাতার অঙ্গ ব্যবহারের মতো উদ্যোগে পথিকৃৎ ভূমিকা রেখেছেন। তবু তাঁর মতে, এসব উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। জিন সম্পাদিত শূকর তৈরির প্রযুক্তিই জেনোট্রান্সপ্লান্টেশনকে বাস্তবের কাছাকাছি এনেছে।

ড. মন্টগোমারির ভাষায়, ভবিষ্যতে শূকরের অঙ্গ মানুষের অঙ্গের চেয়ে উন্নত হতে পারে। কারণ, এগুলো ধারাবাহিকভাবে জিনগতভাবে উন্নত করা সম্ভব, যা মানুষের অঙ্গে করা যায় না। এমনকি শূকরের থাইমাস অঙ্গ একসঙ্গে প্রতিস্থাপন করলে রোগীর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা এমনভাবে মানিয়ে নিতে পারে, একদিন হয়তো অ্যান্টিরিজেকশন ওষুধের প্রয়োজনীয়তাও কমে যাবে।

মন্টগোমারি জানান, প্রয়োজনে তিনি নিজেও ভবিষ্যতে শূকরের হৃদ্‌যন্ত্র নিতে আপত্তি করবেন না। তাঁর কথায়, ‘আমার সন্তানেরাও একই জেনেটিক ঝুঁকিতে আছে। আমি চাই, তারা যেন আমাদের চেয়ে বেশি বিকল্প নিয়ে বড় হতে পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত