ডা. সাজেদুল ইসলাম নাহিম

আজ ১৪ জুন, বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। নিরাপদ রক্ত নিশ্চিত করা এবং স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের উৎসাহ দিতেই বিশ্বজুড়ে ২০০৪ সাল থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। এবার দিবসটি ‘গিভ ব্লাড গিভ প্লাজমা শেয়ার লাইফ শেয়ার অফেন’ প্রতিপাদ্য নিয়ে পালিত হচ্ছে। এ বছর বিশ্ব রক্তদাতা দিবসের আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানের আয়োজক আলজেরিয়া। বাংলাদেশেও নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে এই দিবস। দেশে রক্তের চাহিদা পূরণে স্বেচ্ছা রক্তদাতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে থাকছে নানা কর্মসূচি।
প্রতিবছর বাংলাদেশ ৮-১০ লাখ ব্যাগ রক্তের চাহিদা রয়েছে। এর একটা বড় অংশ পূরণ করে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন, সন্ধানী, রেড ক্রিসেন্টসহ বেসরকারি সংস্থা। এর মধ্যে ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে দুই দশকের যাত্রায় কোয়ান্টাম গড়েছে ৪ লাখ ৭৪ হাজার স্বেচ্ছা রক্তদাতার সুসংগঠিত ডোনার পুল। আর জীবন বাঁচানোর জন্য এ পর্যন্ত সরবরাহ করেছে ১৫ লক্ষাধিক ইউনিট রক্ত ও রক্তের উপাদান। ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি, মোরা একটি মুখের হাসির জন্য অস্ত্র ধরি।’ গোবিন্দ হালদারের লেখা ও আপেল মাহমুদের সুরে একটি বিখ্যাত গানের কথা। বাঙালি বীরের জাতি, সেটার অনেক প্রমাণ আছে। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ প্রমাণ করেছে সে লড়তে জানে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে বুকের রক্ত দিতে পারে। জীবনের জন্য প্রয়োজন রক্তের। রক্তের সংকটে সাধারণত যারা ভোগে, তারা আমাদেরই স্বজন, ভাইবোন।
প্রতিদিন আমাদের যে পরিমাণ রক্তের প্রয়োজন, সেটা পর্যাপ্ত পাওয়া যায় না। হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার বা স্বেচ্ছায় রক্তদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে গেলে দেখা যায় রক্তের জন্য হাহাকার। হয়তো ২৪ ঘণ্টায় প্রয়োজন ২০০ ব্যাগের, সরবরাহ আছে ১৫০ ব্যাগের। অর্থাৎ আরও ৫০ জন রক্ত পাবেন না। অপারেশন ছাড়াও থেলাসামিয়া রোগসহ বিভিন্ন কারণে শরীরে রক্তের ঘাটতি হতে পারে। এ সময় প্রয়োজন বিশুদ্ধ রক্ত।
আর প্রয়োজনীয় রক্ত না পাওয়া মানে মৃত্যুর ঝুঁকি। অবাক করা বিষয়, ১৬ থেকে ১৮ কোটি মানুষের আমাদের দেশে একসময় বেশির ভাগ রক্তই আসত পেশাদার রক্ত বিক্রেতা ও আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে। তবে এখন স্বেচ্ছা রক্তদান প্রতিষ্ঠান থেকেই বেশির ভাগ রক্ত আসে। তার পরও ঘাটতি অনেক বেশি। আর পেশাদার রক্ত বিক্রেতাদের অধিকাংশই সিফিলিস, হেপাটাইটিস-বি বা এইডসসহ নানা রোগে আক্রান্ত। ফলে এই দূষিত রক্ত পরিসঞ্চালিত হয়ে রক্তগ্রহীতা আক্রান্ত হন দুরারোগ্য ব্যাধিতে। প্রয়োজনের সময়ে রক্ত পাওয়া এবং দূষিত রক্তের অভিশাপ থেকে মুমূর্ষু মানুষকে রক্ষা করার জন্যই প্রয়োজন নিরাপদ ও সুস্থ রক্তের।
এর জন্য প্রয়োজন সচেতন তরুণ সমাজকে এগিয়ে আসা। কারণ স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে যেকোনো সুস্থ মানুষ নিজের কোনো ক্ষতি না করেই একজন মুমূর্ষু মানুষকে বাঁচাতে পারে।
আমাদের দেশে বছরে ৮ থেকে থেকে ১০ লাখ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। এই রক্তের অভাবে অনেক ক্ষেত্রে মুমূর্ষু রোগীর চিকিৎসা শুরু করা যায় না।
কিডনি জটিলতায় আক্রান্ত রোগীর ডায়ালাইসিস করার পরও রক্তের অভাবে দুশ্চিন্তায় ভোগে ভুক্তভোগী রোগীর পরিবার। অসহনীয় শারীরিক যন্ত্রণা সহ্য করে অপেক্ষা করতে থাকে এক ব্যাগ রক্তের জন্য।
যখনই খবর পান রক্ত পাওয়া গেছে, তখন প্রাণ ভরে তাঁর জন্য দোয়া করেন। স্বেচ্ছা রক্তদাতারা হলেন মানুষের জীবন বাঁচানোর আন্দোলনের দূত।
ভালো কাজে মানুষ সব সময় অন্যকে দেখে উদ্বুদ্ধ হয়। বন্ধু রক্ত দিচ্ছেন দেখে তাঁর অন্য বন্ধুরাও রক্ত দিতে উদ্বুদ্ধ হন।
রক্তদান একটি মানবিক দায়বদ্ধতা, সামাজিক অঙ্গীকার। যিনি যে পেশায়ই থাকুন না কেন, সমাজের জন্য তার কিছু না কিছু করার আছে। এক ব্যাগ রক্তদানের মাধ্যমেও তিনি পালন করতে পারেন সামাজিক অঙ্গীকার।
একবার অন্তত ভাবুন, আপনার রক্তে বেঁচে উঠছে একটি অসহায় শিশু, একজন মৃত্যুপথযাত্রী মানুষ। সেই মুহূর্তে আপনার যে মানসিক তৃপ্তি, তাকে কখনোই অন্য কোনো কিছুর সঙ্গে তুলনা করা সম্ভব নয়।
রক্তদান স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। রক্তদানের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীরের মধ্যে অবস্থিত ‘বোন ম্যারো’ নতুন কণিকা তৈরির জন্য উদ্দীপ্ত হয়। দান করার দুই সপ্তাহের মধ্যেই নতুন রক্ত কণিকা জন্ম হয়ে এই ঘাটতি পূরণ করে।
আর প্রাকৃতিক নিয়মেই যেহেতু প্রতি চার মাস পর পর আমাদের শরীরের রেড সেল বদলায়, তাই বছরে তিনবার রক্ত দিলে শরীরের লোহিত কণিকাগুলোর প্রাণবন্ততা আরো বেড়ে যায়।
ইংল্যান্ডে মেডিকেল পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, নিয়মিত স্বেচ্ছা রক্তদাতারা দুরারোগ্য রোগব্যাধি থেকে প্রায়ই মুক্ত থাকেন। রক্তদাতার হৃদ্রোগ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও অনেক কম।
রক্তদান ধর্মীয় দিক থেকেও অত্যন্ত পুণ্য বা সওয়াবের কাজ। এটি এমন একটি দান, যার তাৎপর্য সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের সুরা মায়েদার ৩২ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘একজন মানুষের জীবন রক্ষা করা সমগ্র মানব জাতির জীবন রক্ষা করার মতো মহান কাজ।’
ঋগ্বেদে বলা হয়েছে, ‘নিঃশর্ত দানের জন্য রয়েছে চমৎকার পুরস্কার। তারা লাভ করে আশীর্বাদধন্য দীর্ঘজীবন ও অমরত্ব।’ আসলে সব ধর্মেই রক্তদানকে উৎসাহিত করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি বড় ইবাদত।
অনেকে নানা অজুহাতে রক্ত দিতে চান না। কারও সুঁইয়ের ভয়, কেউ অসুস্থ বা দুর্বল হওয়ার ভয়। কেউ ভাবেন, রক্ত দিলে হয়তো শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়বে, দুর্বলতায় ভুগবে বা বড় কোনো ক্ষতি হবে তার। তা ছাড়া অনেকে ভাবেন, রক্ত যদি দিতেই হয়, তো সেটা যেন পরিবারের সদস্য, নিকটাত্মীয় বা বন্ধুর জরুরি প্রয়োজনে দেওয়া হয়, বাইরের মানুষকে নয়। এখন বাস্তবতা হচ্ছে, রক্ত দেওয়া হোক বা না হোক, নির্দিষ্ট একটা সময়ের ব্যবধানে তা এমনিই বদলে যায়। যেমন—রক্তের প্রধান তিন উপাদানের একটি অনুচক্রিকার আয়ু ৮-৯ দিন, শ্বেতকণিকার আয়ু ১৩-২০ দিন এবং লোহিত কণিকার আয়ু ১২০ দিন। নির্দিষ্ট এ সময় পর কণিকাগুলো নিজে নিজেই লিম্ফিটিক সিস্টেমের ভেতরে ধ্বংস হয়ে যায়।
রক্তদানের মাধ্যমে রক্তদাতার বরং উপকার হয়। রক্ত দেওয়ার সময় তার অনেকগুলো টেস্ট করা হয়। তার একটা ফ্রি মেডিকেল চেকআপ হয়ে যায়। যতবার রক্ত দেবে, ততবার ফ্রি মেডিকেল চেকআপ হয়ে যায়। রক্ত দেওয়ার আগে তার পালস দেখা হয়, ব্লাড প্রেশার দেখা হয় এবং রক্তের অনেকগুলো টেস্ট করা হয়। এর মাধ্যমে যদি তার কোনো অসুস্থতা থাকে, সেটা সে জানতে পারে এবং সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা নিতে পারে। এটা তার একটা বাড়তি লাভ।
এ ছাড়া যাঁরা নিয়মিত রক্ত দান করেন, তাঁদের হার্ট ডিজিস কম হয়। যেমন হার্টের এরিথমিয়া, হার্ট অ্যাটাক—এগুলো কমে যায়। কারণ রক্তদানের মাধ্যমে শরীর থেকে অতিরিক্ত আয়রন চলে যায়। অতিরিক্ত আয়রনের জন্য হার্টের ওপর একটা এফেক্ট পড়ে। এ ছাড়া রক্তে মাত্রাতিরিক্ত লৌহ শরীরের ব্লাড ভ্যাসেল স্ট্রিক্ট করে, এ থেকে তার স্ট্রোক হতে পারে। নিয়মিত রক্ত দান করলে স্ট্রোকের আশঙ্কা ৮৮ শতাংশ কমে যায়। এ ছাড়া রক্ত দেওয়ার মাধ্যমে ওবেসিটির পেসেন্টরাও উপকৃত হতে পারেন।
এ ছাড়া দেখা যাচ্ছে, রক্তে যদি আয়রনের পরিমাণ বেশি থাকে, সেগুলো লিভারে জমা হয়, যা পরবর্তী সময়ে হেমোক্রোমাটোসিস সৃষ্টি করে। এখান থেকে লিভার সিরোসিস হয়। এমনকি ক্যানসারও হতে পারে। অতএব রক্ত দান করলে অনেকের ক্যানসার ঝুঁকি কমে যায়। যিনি রক্ত দিচ্ছেন, তার শরীরে ৬০ থেকে ১২০ দিনের মধ্যে রক্ত পূরণ হয়ে যায়।
অর্থাৎ, আমরা দাতা ছিলাম, এক মহান জাতি ছিলাম, আমাদের এক মহান ইতিহাস ছিল। ফলে সমৃদ্ধ অর্থনীতির সঙ্গে সঙ্গে আমরা উন্নত মানবিক সম্পন্ন সুস্থ মানুষ হিসেবে পরিচয় অর্জন করব। মনে রাখতে হবে, দাতা কখনো গরিব হতে পারে না।
লেখক: এমবিবিএস (ইউএসটিসি), সিসিডি (বারডেম), পিজিটি (মেডিসিন)

আজ ১৪ জুন, বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। নিরাপদ রক্ত নিশ্চিত করা এবং স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের উৎসাহ দিতেই বিশ্বজুড়ে ২০০৪ সাল থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। এবার দিবসটি ‘গিভ ব্লাড গিভ প্লাজমা শেয়ার লাইফ শেয়ার অফেন’ প্রতিপাদ্য নিয়ে পালিত হচ্ছে। এ বছর বিশ্ব রক্তদাতা দিবসের আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানের আয়োজক আলজেরিয়া। বাংলাদেশেও নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে এই দিবস। দেশে রক্তের চাহিদা পূরণে স্বেচ্ছা রক্তদাতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে থাকছে নানা কর্মসূচি।
প্রতিবছর বাংলাদেশ ৮-১০ লাখ ব্যাগ রক্তের চাহিদা রয়েছে। এর একটা বড় অংশ পূরণ করে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন, সন্ধানী, রেড ক্রিসেন্টসহ বেসরকারি সংস্থা। এর মধ্যে ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে দুই দশকের যাত্রায় কোয়ান্টাম গড়েছে ৪ লাখ ৭৪ হাজার স্বেচ্ছা রক্তদাতার সুসংগঠিত ডোনার পুল। আর জীবন বাঁচানোর জন্য এ পর্যন্ত সরবরাহ করেছে ১৫ লক্ষাধিক ইউনিট রক্ত ও রক্তের উপাদান। ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি, মোরা একটি মুখের হাসির জন্য অস্ত্র ধরি।’ গোবিন্দ হালদারের লেখা ও আপেল মাহমুদের সুরে একটি বিখ্যাত গানের কথা। বাঙালি বীরের জাতি, সেটার অনেক প্রমাণ আছে। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ প্রমাণ করেছে সে লড়তে জানে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে বুকের রক্ত দিতে পারে। জীবনের জন্য প্রয়োজন রক্তের। রক্তের সংকটে সাধারণত যারা ভোগে, তারা আমাদেরই স্বজন, ভাইবোন।
প্রতিদিন আমাদের যে পরিমাণ রক্তের প্রয়োজন, সেটা পর্যাপ্ত পাওয়া যায় না। হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার বা স্বেচ্ছায় রক্তদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে গেলে দেখা যায় রক্তের জন্য হাহাকার। হয়তো ২৪ ঘণ্টায় প্রয়োজন ২০০ ব্যাগের, সরবরাহ আছে ১৫০ ব্যাগের। অর্থাৎ আরও ৫০ জন রক্ত পাবেন না। অপারেশন ছাড়াও থেলাসামিয়া রোগসহ বিভিন্ন কারণে শরীরে রক্তের ঘাটতি হতে পারে। এ সময় প্রয়োজন বিশুদ্ধ রক্ত।
আর প্রয়োজনীয় রক্ত না পাওয়া মানে মৃত্যুর ঝুঁকি। অবাক করা বিষয়, ১৬ থেকে ১৮ কোটি মানুষের আমাদের দেশে একসময় বেশির ভাগ রক্তই আসত পেশাদার রক্ত বিক্রেতা ও আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে। তবে এখন স্বেচ্ছা রক্তদান প্রতিষ্ঠান থেকেই বেশির ভাগ রক্ত আসে। তার পরও ঘাটতি অনেক বেশি। আর পেশাদার রক্ত বিক্রেতাদের অধিকাংশই সিফিলিস, হেপাটাইটিস-বি বা এইডসসহ নানা রোগে আক্রান্ত। ফলে এই দূষিত রক্ত পরিসঞ্চালিত হয়ে রক্তগ্রহীতা আক্রান্ত হন দুরারোগ্য ব্যাধিতে। প্রয়োজনের সময়ে রক্ত পাওয়া এবং দূষিত রক্তের অভিশাপ থেকে মুমূর্ষু মানুষকে রক্ষা করার জন্যই প্রয়োজন নিরাপদ ও সুস্থ রক্তের।
এর জন্য প্রয়োজন সচেতন তরুণ সমাজকে এগিয়ে আসা। কারণ স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে যেকোনো সুস্থ মানুষ নিজের কোনো ক্ষতি না করেই একজন মুমূর্ষু মানুষকে বাঁচাতে পারে।
আমাদের দেশে বছরে ৮ থেকে থেকে ১০ লাখ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। এই রক্তের অভাবে অনেক ক্ষেত্রে মুমূর্ষু রোগীর চিকিৎসা শুরু করা যায় না।
কিডনি জটিলতায় আক্রান্ত রোগীর ডায়ালাইসিস করার পরও রক্তের অভাবে দুশ্চিন্তায় ভোগে ভুক্তভোগী রোগীর পরিবার। অসহনীয় শারীরিক যন্ত্রণা সহ্য করে অপেক্ষা করতে থাকে এক ব্যাগ রক্তের জন্য।
যখনই খবর পান রক্ত পাওয়া গেছে, তখন প্রাণ ভরে তাঁর জন্য দোয়া করেন। স্বেচ্ছা রক্তদাতারা হলেন মানুষের জীবন বাঁচানোর আন্দোলনের দূত।
ভালো কাজে মানুষ সব সময় অন্যকে দেখে উদ্বুদ্ধ হয়। বন্ধু রক্ত দিচ্ছেন দেখে তাঁর অন্য বন্ধুরাও রক্ত দিতে উদ্বুদ্ধ হন।
রক্তদান একটি মানবিক দায়বদ্ধতা, সামাজিক অঙ্গীকার। যিনি যে পেশায়ই থাকুন না কেন, সমাজের জন্য তার কিছু না কিছু করার আছে। এক ব্যাগ রক্তদানের মাধ্যমেও তিনি পালন করতে পারেন সামাজিক অঙ্গীকার।
একবার অন্তত ভাবুন, আপনার রক্তে বেঁচে উঠছে একটি অসহায় শিশু, একজন মৃত্যুপথযাত্রী মানুষ। সেই মুহূর্তে আপনার যে মানসিক তৃপ্তি, তাকে কখনোই অন্য কোনো কিছুর সঙ্গে তুলনা করা সম্ভব নয়।
রক্তদান স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। রক্তদানের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীরের মধ্যে অবস্থিত ‘বোন ম্যারো’ নতুন কণিকা তৈরির জন্য উদ্দীপ্ত হয়। দান করার দুই সপ্তাহের মধ্যেই নতুন রক্ত কণিকা জন্ম হয়ে এই ঘাটতি পূরণ করে।
আর প্রাকৃতিক নিয়মেই যেহেতু প্রতি চার মাস পর পর আমাদের শরীরের রেড সেল বদলায়, তাই বছরে তিনবার রক্ত দিলে শরীরের লোহিত কণিকাগুলোর প্রাণবন্ততা আরো বেড়ে যায়।
ইংল্যান্ডে মেডিকেল পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, নিয়মিত স্বেচ্ছা রক্তদাতারা দুরারোগ্য রোগব্যাধি থেকে প্রায়ই মুক্ত থাকেন। রক্তদাতার হৃদ্রোগ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও অনেক কম।
রক্তদান ধর্মীয় দিক থেকেও অত্যন্ত পুণ্য বা সওয়াবের কাজ। এটি এমন একটি দান, যার তাৎপর্য সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের সুরা মায়েদার ৩২ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘একজন মানুষের জীবন রক্ষা করা সমগ্র মানব জাতির জীবন রক্ষা করার মতো মহান কাজ।’
ঋগ্বেদে বলা হয়েছে, ‘নিঃশর্ত দানের জন্য রয়েছে চমৎকার পুরস্কার। তারা লাভ করে আশীর্বাদধন্য দীর্ঘজীবন ও অমরত্ব।’ আসলে সব ধর্মেই রক্তদানকে উৎসাহিত করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি বড় ইবাদত।
অনেকে নানা অজুহাতে রক্ত দিতে চান না। কারও সুঁইয়ের ভয়, কেউ অসুস্থ বা দুর্বল হওয়ার ভয়। কেউ ভাবেন, রক্ত দিলে হয়তো শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়বে, দুর্বলতায় ভুগবে বা বড় কোনো ক্ষতি হবে তার। তা ছাড়া অনেকে ভাবেন, রক্ত যদি দিতেই হয়, তো সেটা যেন পরিবারের সদস্য, নিকটাত্মীয় বা বন্ধুর জরুরি প্রয়োজনে দেওয়া হয়, বাইরের মানুষকে নয়। এখন বাস্তবতা হচ্ছে, রক্ত দেওয়া হোক বা না হোক, নির্দিষ্ট একটা সময়ের ব্যবধানে তা এমনিই বদলে যায়। যেমন—রক্তের প্রধান তিন উপাদানের একটি অনুচক্রিকার আয়ু ৮-৯ দিন, শ্বেতকণিকার আয়ু ১৩-২০ দিন এবং লোহিত কণিকার আয়ু ১২০ দিন। নির্দিষ্ট এ সময় পর কণিকাগুলো নিজে নিজেই লিম্ফিটিক সিস্টেমের ভেতরে ধ্বংস হয়ে যায়।
রক্তদানের মাধ্যমে রক্তদাতার বরং উপকার হয়। রক্ত দেওয়ার সময় তার অনেকগুলো টেস্ট করা হয়। তার একটা ফ্রি মেডিকেল চেকআপ হয়ে যায়। যতবার রক্ত দেবে, ততবার ফ্রি মেডিকেল চেকআপ হয়ে যায়। রক্ত দেওয়ার আগে তার পালস দেখা হয়, ব্লাড প্রেশার দেখা হয় এবং রক্তের অনেকগুলো টেস্ট করা হয়। এর মাধ্যমে যদি তার কোনো অসুস্থতা থাকে, সেটা সে জানতে পারে এবং সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা নিতে পারে। এটা তার একটা বাড়তি লাভ।
এ ছাড়া যাঁরা নিয়মিত রক্ত দান করেন, তাঁদের হার্ট ডিজিস কম হয়। যেমন হার্টের এরিথমিয়া, হার্ট অ্যাটাক—এগুলো কমে যায়। কারণ রক্তদানের মাধ্যমে শরীর থেকে অতিরিক্ত আয়রন চলে যায়। অতিরিক্ত আয়রনের জন্য হার্টের ওপর একটা এফেক্ট পড়ে। এ ছাড়া রক্তে মাত্রাতিরিক্ত লৌহ শরীরের ব্লাড ভ্যাসেল স্ট্রিক্ট করে, এ থেকে তার স্ট্রোক হতে পারে। নিয়মিত রক্ত দান করলে স্ট্রোকের আশঙ্কা ৮৮ শতাংশ কমে যায়। এ ছাড়া রক্ত দেওয়ার মাধ্যমে ওবেসিটির পেসেন্টরাও উপকৃত হতে পারেন।
এ ছাড়া দেখা যাচ্ছে, রক্তে যদি আয়রনের পরিমাণ বেশি থাকে, সেগুলো লিভারে জমা হয়, যা পরবর্তী সময়ে হেমোক্রোমাটোসিস সৃষ্টি করে। এখান থেকে লিভার সিরোসিস হয়। এমনকি ক্যানসারও হতে পারে। অতএব রক্ত দান করলে অনেকের ক্যানসার ঝুঁকি কমে যায়। যিনি রক্ত দিচ্ছেন, তার শরীরে ৬০ থেকে ১২০ দিনের মধ্যে রক্ত পূরণ হয়ে যায়।
অর্থাৎ, আমরা দাতা ছিলাম, এক মহান জাতি ছিলাম, আমাদের এক মহান ইতিহাস ছিল। ফলে সমৃদ্ধ অর্থনীতির সঙ্গে সঙ্গে আমরা উন্নত মানবিক সম্পন্ন সুস্থ মানুষ হিসেবে পরিচয় অর্জন করব। মনে রাখতে হবে, দাতা কখনো গরিব হতে পারে না।
লেখক: এমবিবিএস (ইউএসটিসি), সিসিডি (বারডেম), পিজিটি (মেডিসিন)
ডা. সাজেদুল ইসলাম নাহিম

আজ ১৪ জুন, বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। নিরাপদ রক্ত নিশ্চিত করা এবং স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের উৎসাহ দিতেই বিশ্বজুড়ে ২০০৪ সাল থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। এবার দিবসটি ‘গিভ ব্লাড গিভ প্লাজমা শেয়ার লাইফ শেয়ার অফেন’ প্রতিপাদ্য নিয়ে পালিত হচ্ছে। এ বছর বিশ্ব রক্তদাতা দিবসের আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানের আয়োজক আলজেরিয়া। বাংলাদেশেও নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে এই দিবস। দেশে রক্তের চাহিদা পূরণে স্বেচ্ছা রক্তদাতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে থাকছে নানা কর্মসূচি।
প্রতিবছর বাংলাদেশ ৮-১০ লাখ ব্যাগ রক্তের চাহিদা রয়েছে। এর একটা বড় অংশ পূরণ করে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন, সন্ধানী, রেড ক্রিসেন্টসহ বেসরকারি সংস্থা। এর মধ্যে ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে দুই দশকের যাত্রায় কোয়ান্টাম গড়েছে ৪ লাখ ৭৪ হাজার স্বেচ্ছা রক্তদাতার সুসংগঠিত ডোনার পুল। আর জীবন বাঁচানোর জন্য এ পর্যন্ত সরবরাহ করেছে ১৫ লক্ষাধিক ইউনিট রক্ত ও রক্তের উপাদান। ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি, মোরা একটি মুখের হাসির জন্য অস্ত্র ধরি।’ গোবিন্দ হালদারের লেখা ও আপেল মাহমুদের সুরে একটি বিখ্যাত গানের কথা। বাঙালি বীরের জাতি, সেটার অনেক প্রমাণ আছে। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ প্রমাণ করেছে সে লড়তে জানে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে বুকের রক্ত দিতে পারে। জীবনের জন্য প্রয়োজন রক্তের। রক্তের সংকটে সাধারণত যারা ভোগে, তারা আমাদেরই স্বজন, ভাইবোন।
প্রতিদিন আমাদের যে পরিমাণ রক্তের প্রয়োজন, সেটা পর্যাপ্ত পাওয়া যায় না। হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার বা স্বেচ্ছায় রক্তদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে গেলে দেখা যায় রক্তের জন্য হাহাকার। হয়তো ২৪ ঘণ্টায় প্রয়োজন ২০০ ব্যাগের, সরবরাহ আছে ১৫০ ব্যাগের। অর্থাৎ আরও ৫০ জন রক্ত পাবেন না। অপারেশন ছাড়াও থেলাসামিয়া রোগসহ বিভিন্ন কারণে শরীরে রক্তের ঘাটতি হতে পারে। এ সময় প্রয়োজন বিশুদ্ধ রক্ত।
আর প্রয়োজনীয় রক্ত না পাওয়া মানে মৃত্যুর ঝুঁকি। অবাক করা বিষয়, ১৬ থেকে ১৮ কোটি মানুষের আমাদের দেশে একসময় বেশির ভাগ রক্তই আসত পেশাদার রক্ত বিক্রেতা ও আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে। তবে এখন স্বেচ্ছা রক্তদান প্রতিষ্ঠান থেকেই বেশির ভাগ রক্ত আসে। তার পরও ঘাটতি অনেক বেশি। আর পেশাদার রক্ত বিক্রেতাদের অধিকাংশই সিফিলিস, হেপাটাইটিস-বি বা এইডসসহ নানা রোগে আক্রান্ত। ফলে এই দূষিত রক্ত পরিসঞ্চালিত হয়ে রক্তগ্রহীতা আক্রান্ত হন দুরারোগ্য ব্যাধিতে। প্রয়োজনের সময়ে রক্ত পাওয়া এবং দূষিত রক্তের অভিশাপ থেকে মুমূর্ষু মানুষকে রক্ষা করার জন্যই প্রয়োজন নিরাপদ ও সুস্থ রক্তের।
এর জন্য প্রয়োজন সচেতন তরুণ সমাজকে এগিয়ে আসা। কারণ স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে যেকোনো সুস্থ মানুষ নিজের কোনো ক্ষতি না করেই একজন মুমূর্ষু মানুষকে বাঁচাতে পারে।
আমাদের দেশে বছরে ৮ থেকে থেকে ১০ লাখ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। এই রক্তের অভাবে অনেক ক্ষেত্রে মুমূর্ষু রোগীর চিকিৎসা শুরু করা যায় না।
কিডনি জটিলতায় আক্রান্ত রোগীর ডায়ালাইসিস করার পরও রক্তের অভাবে দুশ্চিন্তায় ভোগে ভুক্তভোগী রোগীর পরিবার। অসহনীয় শারীরিক যন্ত্রণা সহ্য করে অপেক্ষা করতে থাকে এক ব্যাগ রক্তের জন্য।
যখনই খবর পান রক্ত পাওয়া গেছে, তখন প্রাণ ভরে তাঁর জন্য দোয়া করেন। স্বেচ্ছা রক্তদাতারা হলেন মানুষের জীবন বাঁচানোর আন্দোলনের দূত।
ভালো কাজে মানুষ সব সময় অন্যকে দেখে উদ্বুদ্ধ হয়। বন্ধু রক্ত দিচ্ছেন দেখে তাঁর অন্য বন্ধুরাও রক্ত দিতে উদ্বুদ্ধ হন।
রক্তদান একটি মানবিক দায়বদ্ধতা, সামাজিক অঙ্গীকার। যিনি যে পেশায়ই থাকুন না কেন, সমাজের জন্য তার কিছু না কিছু করার আছে। এক ব্যাগ রক্তদানের মাধ্যমেও তিনি পালন করতে পারেন সামাজিক অঙ্গীকার।
একবার অন্তত ভাবুন, আপনার রক্তে বেঁচে উঠছে একটি অসহায় শিশু, একজন মৃত্যুপথযাত্রী মানুষ। সেই মুহূর্তে আপনার যে মানসিক তৃপ্তি, তাকে কখনোই অন্য কোনো কিছুর সঙ্গে তুলনা করা সম্ভব নয়।
রক্তদান স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। রক্তদানের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীরের মধ্যে অবস্থিত ‘বোন ম্যারো’ নতুন কণিকা তৈরির জন্য উদ্দীপ্ত হয়। দান করার দুই সপ্তাহের মধ্যেই নতুন রক্ত কণিকা জন্ম হয়ে এই ঘাটতি পূরণ করে।
আর প্রাকৃতিক নিয়মেই যেহেতু প্রতি চার মাস পর পর আমাদের শরীরের রেড সেল বদলায়, তাই বছরে তিনবার রক্ত দিলে শরীরের লোহিত কণিকাগুলোর প্রাণবন্ততা আরো বেড়ে যায়।
ইংল্যান্ডে মেডিকেল পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, নিয়মিত স্বেচ্ছা রক্তদাতারা দুরারোগ্য রোগব্যাধি থেকে প্রায়ই মুক্ত থাকেন। রক্তদাতার হৃদ্রোগ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও অনেক কম।
রক্তদান ধর্মীয় দিক থেকেও অত্যন্ত পুণ্য বা সওয়াবের কাজ। এটি এমন একটি দান, যার তাৎপর্য সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের সুরা মায়েদার ৩২ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘একজন মানুষের জীবন রক্ষা করা সমগ্র মানব জাতির জীবন রক্ষা করার মতো মহান কাজ।’
ঋগ্বেদে বলা হয়েছে, ‘নিঃশর্ত দানের জন্য রয়েছে চমৎকার পুরস্কার। তারা লাভ করে আশীর্বাদধন্য দীর্ঘজীবন ও অমরত্ব।’ আসলে সব ধর্মেই রক্তদানকে উৎসাহিত করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি বড় ইবাদত।
অনেকে নানা অজুহাতে রক্ত দিতে চান না। কারও সুঁইয়ের ভয়, কেউ অসুস্থ বা দুর্বল হওয়ার ভয়। কেউ ভাবেন, রক্ত দিলে হয়তো শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়বে, দুর্বলতায় ভুগবে বা বড় কোনো ক্ষতি হবে তার। তা ছাড়া অনেকে ভাবেন, রক্ত যদি দিতেই হয়, তো সেটা যেন পরিবারের সদস্য, নিকটাত্মীয় বা বন্ধুর জরুরি প্রয়োজনে দেওয়া হয়, বাইরের মানুষকে নয়। এখন বাস্তবতা হচ্ছে, রক্ত দেওয়া হোক বা না হোক, নির্দিষ্ট একটা সময়ের ব্যবধানে তা এমনিই বদলে যায়। যেমন—রক্তের প্রধান তিন উপাদানের একটি অনুচক্রিকার আয়ু ৮-৯ দিন, শ্বেতকণিকার আয়ু ১৩-২০ দিন এবং লোহিত কণিকার আয়ু ১২০ দিন। নির্দিষ্ট এ সময় পর কণিকাগুলো নিজে নিজেই লিম্ফিটিক সিস্টেমের ভেতরে ধ্বংস হয়ে যায়।
রক্তদানের মাধ্যমে রক্তদাতার বরং উপকার হয়। রক্ত দেওয়ার সময় তার অনেকগুলো টেস্ট করা হয়। তার একটা ফ্রি মেডিকেল চেকআপ হয়ে যায়। যতবার রক্ত দেবে, ততবার ফ্রি মেডিকেল চেকআপ হয়ে যায়। রক্ত দেওয়ার আগে তার পালস দেখা হয়, ব্লাড প্রেশার দেখা হয় এবং রক্তের অনেকগুলো টেস্ট করা হয়। এর মাধ্যমে যদি তার কোনো অসুস্থতা থাকে, সেটা সে জানতে পারে এবং সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা নিতে পারে। এটা তার একটা বাড়তি লাভ।
এ ছাড়া যাঁরা নিয়মিত রক্ত দান করেন, তাঁদের হার্ট ডিজিস কম হয়। যেমন হার্টের এরিথমিয়া, হার্ট অ্যাটাক—এগুলো কমে যায়। কারণ রক্তদানের মাধ্যমে শরীর থেকে অতিরিক্ত আয়রন চলে যায়। অতিরিক্ত আয়রনের জন্য হার্টের ওপর একটা এফেক্ট পড়ে। এ ছাড়া রক্তে মাত্রাতিরিক্ত লৌহ শরীরের ব্লাড ভ্যাসেল স্ট্রিক্ট করে, এ থেকে তার স্ট্রোক হতে পারে। নিয়মিত রক্ত দান করলে স্ট্রোকের আশঙ্কা ৮৮ শতাংশ কমে যায়। এ ছাড়া রক্ত দেওয়ার মাধ্যমে ওবেসিটির পেসেন্টরাও উপকৃত হতে পারেন।
এ ছাড়া দেখা যাচ্ছে, রক্তে যদি আয়রনের পরিমাণ বেশি থাকে, সেগুলো লিভারে জমা হয়, যা পরবর্তী সময়ে হেমোক্রোমাটোসিস সৃষ্টি করে। এখান থেকে লিভার সিরোসিস হয়। এমনকি ক্যানসারও হতে পারে। অতএব রক্ত দান করলে অনেকের ক্যানসার ঝুঁকি কমে যায়। যিনি রক্ত দিচ্ছেন, তার শরীরে ৬০ থেকে ১২০ দিনের মধ্যে রক্ত পূরণ হয়ে যায়।
অর্থাৎ, আমরা দাতা ছিলাম, এক মহান জাতি ছিলাম, আমাদের এক মহান ইতিহাস ছিল। ফলে সমৃদ্ধ অর্থনীতির সঙ্গে সঙ্গে আমরা উন্নত মানবিক সম্পন্ন সুস্থ মানুষ হিসেবে পরিচয় অর্জন করব। মনে রাখতে হবে, দাতা কখনো গরিব হতে পারে না।
লেখক: এমবিবিএস (ইউএসটিসি), সিসিডি (বারডেম), পিজিটি (মেডিসিন)

আজ ১৪ জুন, বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। নিরাপদ রক্ত নিশ্চিত করা এবং স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের উৎসাহ দিতেই বিশ্বজুড়ে ২০০৪ সাল থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। এবার দিবসটি ‘গিভ ব্লাড গিভ প্লাজমা শেয়ার লাইফ শেয়ার অফেন’ প্রতিপাদ্য নিয়ে পালিত হচ্ছে। এ বছর বিশ্ব রক্তদাতা দিবসের আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানের আয়োজক আলজেরিয়া। বাংলাদেশেও নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে এই দিবস। দেশে রক্তের চাহিদা পূরণে স্বেচ্ছা রক্তদাতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে থাকছে নানা কর্মসূচি।
প্রতিবছর বাংলাদেশ ৮-১০ লাখ ব্যাগ রক্তের চাহিদা রয়েছে। এর একটা বড় অংশ পূরণ করে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন, সন্ধানী, রেড ক্রিসেন্টসহ বেসরকারি সংস্থা। এর মধ্যে ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে দুই দশকের যাত্রায় কোয়ান্টাম গড়েছে ৪ লাখ ৭৪ হাজার স্বেচ্ছা রক্তদাতার সুসংগঠিত ডোনার পুল। আর জীবন বাঁচানোর জন্য এ পর্যন্ত সরবরাহ করেছে ১৫ লক্ষাধিক ইউনিট রক্ত ও রক্তের উপাদান। ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি, মোরা একটি মুখের হাসির জন্য অস্ত্র ধরি।’ গোবিন্দ হালদারের লেখা ও আপেল মাহমুদের সুরে একটি বিখ্যাত গানের কথা। বাঙালি বীরের জাতি, সেটার অনেক প্রমাণ আছে। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ প্রমাণ করেছে সে লড়তে জানে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে বুকের রক্ত দিতে পারে। জীবনের জন্য প্রয়োজন রক্তের। রক্তের সংকটে সাধারণত যারা ভোগে, তারা আমাদেরই স্বজন, ভাইবোন।
প্রতিদিন আমাদের যে পরিমাণ রক্তের প্রয়োজন, সেটা পর্যাপ্ত পাওয়া যায় না। হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার বা স্বেচ্ছায় রক্তদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে গেলে দেখা যায় রক্তের জন্য হাহাকার। হয়তো ২৪ ঘণ্টায় প্রয়োজন ২০০ ব্যাগের, সরবরাহ আছে ১৫০ ব্যাগের। অর্থাৎ আরও ৫০ জন রক্ত পাবেন না। অপারেশন ছাড়াও থেলাসামিয়া রোগসহ বিভিন্ন কারণে শরীরে রক্তের ঘাটতি হতে পারে। এ সময় প্রয়োজন বিশুদ্ধ রক্ত।
আর প্রয়োজনীয় রক্ত না পাওয়া মানে মৃত্যুর ঝুঁকি। অবাক করা বিষয়, ১৬ থেকে ১৮ কোটি মানুষের আমাদের দেশে একসময় বেশির ভাগ রক্তই আসত পেশাদার রক্ত বিক্রেতা ও আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে। তবে এখন স্বেচ্ছা রক্তদান প্রতিষ্ঠান থেকেই বেশির ভাগ রক্ত আসে। তার পরও ঘাটতি অনেক বেশি। আর পেশাদার রক্ত বিক্রেতাদের অধিকাংশই সিফিলিস, হেপাটাইটিস-বি বা এইডসসহ নানা রোগে আক্রান্ত। ফলে এই দূষিত রক্ত পরিসঞ্চালিত হয়ে রক্তগ্রহীতা আক্রান্ত হন দুরারোগ্য ব্যাধিতে। প্রয়োজনের সময়ে রক্ত পাওয়া এবং দূষিত রক্তের অভিশাপ থেকে মুমূর্ষু মানুষকে রক্ষা করার জন্যই প্রয়োজন নিরাপদ ও সুস্থ রক্তের।
এর জন্য প্রয়োজন সচেতন তরুণ সমাজকে এগিয়ে আসা। কারণ স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে যেকোনো সুস্থ মানুষ নিজের কোনো ক্ষতি না করেই একজন মুমূর্ষু মানুষকে বাঁচাতে পারে।
আমাদের দেশে বছরে ৮ থেকে থেকে ১০ লাখ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। এই রক্তের অভাবে অনেক ক্ষেত্রে মুমূর্ষু রোগীর চিকিৎসা শুরু করা যায় না।
কিডনি জটিলতায় আক্রান্ত রোগীর ডায়ালাইসিস করার পরও রক্তের অভাবে দুশ্চিন্তায় ভোগে ভুক্তভোগী রোগীর পরিবার। অসহনীয় শারীরিক যন্ত্রণা সহ্য করে অপেক্ষা করতে থাকে এক ব্যাগ রক্তের জন্য।
যখনই খবর পান রক্ত পাওয়া গেছে, তখন প্রাণ ভরে তাঁর জন্য দোয়া করেন। স্বেচ্ছা রক্তদাতারা হলেন মানুষের জীবন বাঁচানোর আন্দোলনের দূত।
ভালো কাজে মানুষ সব সময় অন্যকে দেখে উদ্বুদ্ধ হয়। বন্ধু রক্ত দিচ্ছেন দেখে তাঁর অন্য বন্ধুরাও রক্ত দিতে উদ্বুদ্ধ হন।
রক্তদান একটি মানবিক দায়বদ্ধতা, সামাজিক অঙ্গীকার। যিনি যে পেশায়ই থাকুন না কেন, সমাজের জন্য তার কিছু না কিছু করার আছে। এক ব্যাগ রক্তদানের মাধ্যমেও তিনি পালন করতে পারেন সামাজিক অঙ্গীকার।
একবার অন্তত ভাবুন, আপনার রক্তে বেঁচে উঠছে একটি অসহায় শিশু, একজন মৃত্যুপথযাত্রী মানুষ। সেই মুহূর্তে আপনার যে মানসিক তৃপ্তি, তাকে কখনোই অন্য কোনো কিছুর সঙ্গে তুলনা করা সম্ভব নয়।
রক্তদান স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। রক্তদানের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীরের মধ্যে অবস্থিত ‘বোন ম্যারো’ নতুন কণিকা তৈরির জন্য উদ্দীপ্ত হয়। দান করার দুই সপ্তাহের মধ্যেই নতুন রক্ত কণিকা জন্ম হয়ে এই ঘাটতি পূরণ করে।
আর প্রাকৃতিক নিয়মেই যেহেতু প্রতি চার মাস পর পর আমাদের শরীরের রেড সেল বদলায়, তাই বছরে তিনবার রক্ত দিলে শরীরের লোহিত কণিকাগুলোর প্রাণবন্ততা আরো বেড়ে যায়।
ইংল্যান্ডে মেডিকেল পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, নিয়মিত স্বেচ্ছা রক্তদাতারা দুরারোগ্য রোগব্যাধি থেকে প্রায়ই মুক্ত থাকেন। রক্তদাতার হৃদ্রোগ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও অনেক কম।
রক্তদান ধর্মীয় দিক থেকেও অত্যন্ত পুণ্য বা সওয়াবের কাজ। এটি এমন একটি দান, যার তাৎপর্য সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের সুরা মায়েদার ৩২ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘একজন মানুষের জীবন রক্ষা করা সমগ্র মানব জাতির জীবন রক্ষা করার মতো মহান কাজ।’
ঋগ্বেদে বলা হয়েছে, ‘নিঃশর্ত দানের জন্য রয়েছে চমৎকার পুরস্কার। তারা লাভ করে আশীর্বাদধন্য দীর্ঘজীবন ও অমরত্ব।’ আসলে সব ধর্মেই রক্তদানকে উৎসাহিত করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি বড় ইবাদত।
অনেকে নানা অজুহাতে রক্ত দিতে চান না। কারও সুঁইয়ের ভয়, কেউ অসুস্থ বা দুর্বল হওয়ার ভয়। কেউ ভাবেন, রক্ত দিলে হয়তো শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়বে, দুর্বলতায় ভুগবে বা বড় কোনো ক্ষতি হবে তার। তা ছাড়া অনেকে ভাবেন, রক্ত যদি দিতেই হয়, তো সেটা যেন পরিবারের সদস্য, নিকটাত্মীয় বা বন্ধুর জরুরি প্রয়োজনে দেওয়া হয়, বাইরের মানুষকে নয়। এখন বাস্তবতা হচ্ছে, রক্ত দেওয়া হোক বা না হোক, নির্দিষ্ট একটা সময়ের ব্যবধানে তা এমনিই বদলে যায়। যেমন—রক্তের প্রধান তিন উপাদানের একটি অনুচক্রিকার আয়ু ৮-৯ দিন, শ্বেতকণিকার আয়ু ১৩-২০ দিন এবং লোহিত কণিকার আয়ু ১২০ দিন। নির্দিষ্ট এ সময় পর কণিকাগুলো নিজে নিজেই লিম্ফিটিক সিস্টেমের ভেতরে ধ্বংস হয়ে যায়।
রক্তদানের মাধ্যমে রক্তদাতার বরং উপকার হয়। রক্ত দেওয়ার সময় তার অনেকগুলো টেস্ট করা হয়। তার একটা ফ্রি মেডিকেল চেকআপ হয়ে যায়। যতবার রক্ত দেবে, ততবার ফ্রি মেডিকেল চেকআপ হয়ে যায়। রক্ত দেওয়ার আগে তার পালস দেখা হয়, ব্লাড প্রেশার দেখা হয় এবং রক্তের অনেকগুলো টেস্ট করা হয়। এর মাধ্যমে যদি তার কোনো অসুস্থতা থাকে, সেটা সে জানতে পারে এবং সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা নিতে পারে। এটা তার একটা বাড়তি লাভ।
এ ছাড়া যাঁরা নিয়মিত রক্ত দান করেন, তাঁদের হার্ট ডিজিস কম হয়। যেমন হার্টের এরিথমিয়া, হার্ট অ্যাটাক—এগুলো কমে যায়। কারণ রক্তদানের মাধ্যমে শরীর থেকে অতিরিক্ত আয়রন চলে যায়। অতিরিক্ত আয়রনের জন্য হার্টের ওপর একটা এফেক্ট পড়ে। এ ছাড়া রক্তে মাত্রাতিরিক্ত লৌহ শরীরের ব্লাড ভ্যাসেল স্ট্রিক্ট করে, এ থেকে তার স্ট্রোক হতে পারে। নিয়মিত রক্ত দান করলে স্ট্রোকের আশঙ্কা ৮৮ শতাংশ কমে যায়। এ ছাড়া রক্ত দেওয়ার মাধ্যমে ওবেসিটির পেসেন্টরাও উপকৃত হতে পারেন।
এ ছাড়া দেখা যাচ্ছে, রক্তে যদি আয়রনের পরিমাণ বেশি থাকে, সেগুলো লিভারে জমা হয়, যা পরবর্তী সময়ে হেমোক্রোমাটোসিস সৃষ্টি করে। এখান থেকে লিভার সিরোসিস হয়। এমনকি ক্যানসারও হতে পারে। অতএব রক্ত দান করলে অনেকের ক্যানসার ঝুঁকি কমে যায়। যিনি রক্ত দিচ্ছেন, তার শরীরে ৬০ থেকে ১২০ দিনের মধ্যে রক্ত পূরণ হয়ে যায়।
অর্থাৎ, আমরা দাতা ছিলাম, এক মহান জাতি ছিলাম, আমাদের এক মহান ইতিহাস ছিল। ফলে সমৃদ্ধ অর্থনীতির সঙ্গে সঙ্গে আমরা উন্নত মানবিক সম্পন্ন সুস্থ মানুষ হিসেবে পরিচয় অর্জন করব। মনে রাখতে হবে, দাতা কখনো গরিব হতে পারে না।
লেখক: এমবিবিএস (ইউএসটিসি), সিসিডি (বারডেম), পিজিটি (মেডিসিন)

ছয় দফা দাবিতে টানা ষষ্ঠ দিনের মতো আন্দোলন করছেন স্বাস্থ্য সহকারীরা। মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনে তাঁদের অবস্থান কর্মসূচি চলছে। শনিবার থেকে সারা দেশের স্বাস্থ্য সহকারীরা ঢাকায় এসে লাগাতার কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন।
২০ ঘণ্টা আগে
বেতনকাঠামোর দশম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে হাসপাতালসহ দেশের সব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে চার ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেছেন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা। গতকাল বুধবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তাঁদের এই কর্মসূচির কারণে চরম দুর্ভোগে পড়ে রোগী এবং তাদের স্বজনেরা। গত ৩০ নভেম্বর থেকে...
২ দিন আগে
দেশের সরকারি ও বেসরকারি সব ধরনের হাসপাতালে প্রতিবছরই বাড়ছে সেবাগ্রহণকারীর সংখ্যা। কিন্তু অধিকাংশ চিকিৎসাকেন্দ্রেই শৌচাগারগুলো ব্যবহারের অযোগ্য অথবা ন্যূনতম মানের নয়। ফলে চিকিৎসা নিতে এসে রোগীরা নানা ভোগান্তিতে পড়ছেন। আর প্রতিবন্ধী রোগীদের ক্ষেত্রে এ ভোগান্তি আরও তীব্র।
২ দিন আগে
দেশে গত এক দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে নতুন আক্রান্ত ৫৬৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
৩ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

নিয়োগবিধি সংশোধন, বেতনবৈষম্য দূরীকরণ এবং টেকনিক্যাল পদমর্যাদা প্রদানের দাবিতে টানা ষষ্ঠ দিনের মতো আন্দোলন করছেন স্বাস্থ্য সহকারীরা। আজ বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) রাজধানীর মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনে দিনভর অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা। আন্দোলনকারীরা ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী শনিবার (৬ ডিসেম্বর) থেকে সারা দেশের স্বাস্থ্য সহকারীরা ঢাকায় সমবেত হয়ে লাগাতার কর্মবিরতি পালন করবেন।
গত শনিবার (২৯ নভেম্বর) থেকে শুরু হওয়া কর্মবিরতি প্রথম দুই দিন চলেছিল শহীদ মিনারে। পরে তাঁরা অবস্থান নেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনে। বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে এ আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন দেশের ৬৪ জেলার স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য পরিদর্শকেরা।
এই কর্মসূচির কারণে কয়েক দিন ধরে সারা দেশে ১ লাখ ২০ হাজার অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে টিকা নিতে এসে অনেক মা ও শিশু ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
স্বাস্থ্য সহকারীদের এ কর্মসূচির কারণে সারা দেশে ১ লাখ ২০ হাজার অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রের সেবা কয়েক দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে টিকা নিতে এসে মা ও শিশুরা ফিরে যাচ্ছেন।
স্বাস্থ্য সহকারীদের দাবি, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে বঞ্চিত করে কর্মবিরতিতে যেতে তাঁরা চাননি। কিন্তু দীর্ঘদিনের বঞ্চনা ও কর্তৃপক্ষের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কারণে তাঁরা আন্দোলনে যেতে বাধ্য হয়েছেন। দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে বারবার প্রতিশ্রুতির আশ্বাস মিললেও বাস্তবে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
দাবি আদায়ে অনড় অবস্থান জানিয়ে নেতারা বলেন, ‘আমাদের ১৬তম গ্রেড থেকে ১৪তম গ্রেডে উন্নীত করার সরকারি আদেশ জারি না হওয়া পর্যন্ত আমরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করব না। এখন শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি চলছে, প্রয়োজনে আরও কঠোর হতে বাধ্য হব।’

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে স্বাস্থ্য সহকারীদের নানা বঞ্চনার চিত্রও তুলে ধরে আন্দোলনকারীরা জানান, টিকাদানের আগে মাসজুড়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা, জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধন, নবজাতক ও গর্ভবতী মায়ের রেজিস্ট্রেশন, যক্ষ্মা রোগী শনাক্তকরণ, ডটস (সরাসরি পর্যবেক্ষণ থেরাপি) পদ্ধতিতে ওষুধ খাওয়ানো, উঠান বৈঠক, মা সমাবেশসহ বিভিন্ন সেবা তাঁরা দিয়ে থাকেন। সপ্তাহে তিন দিন কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়মিত সেবা দেওয়ার পরও তাঁদের মাসিক ভ্রমণভাতা মাত্র ৬০০ টাকা। আর বেতন মোট ৯ হাজার ৭০০ টাকা।
আন্দোলনকারীদের দাবির মধ্যে রয়েছে, নিয়োগবিধি সংশোধন করে স্নাতক বা সমমানের যোগ্যতা যুক্ত করে ১৪তম গ্রেড প্রদান, ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমাধারীদের ১১তম গ্রেডসহ টেকনিক্যাল পদমর্যাদা দেওয়া, ধারাবাহিকভাবে উচ্চতর গ্রেডে পদোন্নতি নিশ্চিত করা, প্রশিক্ষণ ছাড়াই স্নাতক স্কেলে অন্তর্ভুক্ত করা, বেতনস্কেল পুনর্নির্ধারণের সময় টাইম স্কেল বা উচ্চতর স্কেল সংযুক্ত করা এবং ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমা (এসআইটি) সম্পন্নকারীদের সমমান স্বীকৃতি প্রদান।
বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সমন্বয় পরিষদের সদস্যসচিব ফজলুল হক চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন, আমাদের ফাইল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখানে এখনো বিশ্লেষণ শুরু হয়নি।’
তিনি আরও জানান, ৬৪ জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে আলোচনা করে আগামী শনিবার থেকে লাগাতার কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. এ বি এম আবু হানিফ আজ সন্ধ্যায় মোবাইল ফোনে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তাদের দাবির বিষয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আমরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। এখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ছাড়াও অর্থ মন্ত্রণালয় এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাজ রয়েছে। সেখানে প্রক্রিয়াগতভাবে কিছুটা সময় লাগছে। গত তিন দিন তারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান করছে। আমরা কাজ করছি। আমরা আশা করছি, সবকিছু ভালোভাবে সমাধান হবে।’

নিয়োগবিধি সংশোধন, বেতনবৈষম্য দূরীকরণ এবং টেকনিক্যাল পদমর্যাদা প্রদানের দাবিতে টানা ষষ্ঠ দিনের মতো আন্দোলন করছেন স্বাস্থ্য সহকারীরা। আজ বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) রাজধানীর মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনে দিনভর অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা। আন্দোলনকারীরা ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী শনিবার (৬ ডিসেম্বর) থেকে সারা দেশের স্বাস্থ্য সহকারীরা ঢাকায় সমবেত হয়ে লাগাতার কর্মবিরতি পালন করবেন।
গত শনিবার (২৯ নভেম্বর) থেকে শুরু হওয়া কর্মবিরতি প্রথম দুই দিন চলেছিল শহীদ মিনারে। পরে তাঁরা অবস্থান নেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনে। বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে এ আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন দেশের ৬৪ জেলার স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য পরিদর্শকেরা।
এই কর্মসূচির কারণে কয়েক দিন ধরে সারা দেশে ১ লাখ ২০ হাজার অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে টিকা নিতে এসে অনেক মা ও শিশু ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
স্বাস্থ্য সহকারীদের এ কর্মসূচির কারণে সারা দেশে ১ লাখ ২০ হাজার অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রের সেবা কয়েক দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে টিকা নিতে এসে মা ও শিশুরা ফিরে যাচ্ছেন।
স্বাস্থ্য সহকারীদের দাবি, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে বঞ্চিত করে কর্মবিরতিতে যেতে তাঁরা চাননি। কিন্তু দীর্ঘদিনের বঞ্চনা ও কর্তৃপক্ষের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কারণে তাঁরা আন্দোলনে যেতে বাধ্য হয়েছেন। দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে বারবার প্রতিশ্রুতির আশ্বাস মিললেও বাস্তবে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
দাবি আদায়ে অনড় অবস্থান জানিয়ে নেতারা বলেন, ‘আমাদের ১৬তম গ্রেড থেকে ১৪তম গ্রেডে উন্নীত করার সরকারি আদেশ জারি না হওয়া পর্যন্ত আমরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করব না। এখন শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি চলছে, প্রয়োজনে আরও কঠোর হতে বাধ্য হব।’

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে স্বাস্থ্য সহকারীদের নানা বঞ্চনার চিত্রও তুলে ধরে আন্দোলনকারীরা জানান, টিকাদানের আগে মাসজুড়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা, জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধন, নবজাতক ও গর্ভবতী মায়ের রেজিস্ট্রেশন, যক্ষ্মা রোগী শনাক্তকরণ, ডটস (সরাসরি পর্যবেক্ষণ থেরাপি) পদ্ধতিতে ওষুধ খাওয়ানো, উঠান বৈঠক, মা সমাবেশসহ বিভিন্ন সেবা তাঁরা দিয়ে থাকেন। সপ্তাহে তিন দিন কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়মিত সেবা দেওয়ার পরও তাঁদের মাসিক ভ্রমণভাতা মাত্র ৬০০ টাকা। আর বেতন মোট ৯ হাজার ৭০০ টাকা।
আন্দোলনকারীদের দাবির মধ্যে রয়েছে, নিয়োগবিধি সংশোধন করে স্নাতক বা সমমানের যোগ্যতা যুক্ত করে ১৪তম গ্রেড প্রদান, ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমাধারীদের ১১তম গ্রেডসহ টেকনিক্যাল পদমর্যাদা দেওয়া, ধারাবাহিকভাবে উচ্চতর গ্রেডে পদোন্নতি নিশ্চিত করা, প্রশিক্ষণ ছাড়াই স্নাতক স্কেলে অন্তর্ভুক্ত করা, বেতনস্কেল পুনর্নির্ধারণের সময় টাইম স্কেল বা উচ্চতর স্কেল সংযুক্ত করা এবং ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমা (এসআইটি) সম্পন্নকারীদের সমমান স্বীকৃতি প্রদান।
বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সমন্বয় পরিষদের সদস্যসচিব ফজলুল হক চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন, আমাদের ফাইল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখানে এখনো বিশ্লেষণ শুরু হয়নি।’
তিনি আরও জানান, ৬৪ জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে আলোচনা করে আগামী শনিবার থেকে লাগাতার কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. এ বি এম আবু হানিফ আজ সন্ধ্যায় মোবাইল ফোনে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তাদের দাবির বিষয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আমরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। এখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ছাড়াও অর্থ মন্ত্রণালয় এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাজ রয়েছে। সেখানে প্রক্রিয়াগতভাবে কিছুটা সময় লাগছে। গত তিন দিন তারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান করছে। আমরা কাজ করছি। আমরা আশা করছি, সবকিছু ভালোভাবে সমাধান হবে।’

প্রতিদিন আমাদের যে পরিমাণ রক্তের প্রয়োজন, সেটা পর্যাপ্ত পাওয়া যায় না। হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার বা স্বেচ্ছায় রক্তদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে গেলে রক্তের জন্য হাহাকার চোখে পড়ে। হয়তো ২৪ ঘণ্টায় প্রয়োজন ২০০ ব্যাগের, সরবরাহ আছে ১৫০ ব্যাগ।
১৪ জুন ২০২৩
বেতনকাঠামোর দশম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে হাসপাতালসহ দেশের সব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে চার ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেছেন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা। গতকাল বুধবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তাঁদের এই কর্মসূচির কারণে চরম দুর্ভোগে পড়ে রোগী এবং তাদের স্বজনেরা। গত ৩০ নভেম্বর থেকে...
২ দিন আগে
দেশের সরকারি ও বেসরকারি সব ধরনের হাসপাতালে প্রতিবছরই বাড়ছে সেবাগ্রহণকারীর সংখ্যা। কিন্তু অধিকাংশ চিকিৎসাকেন্দ্রেই শৌচাগারগুলো ব্যবহারের অযোগ্য অথবা ন্যূনতম মানের নয়। ফলে চিকিৎসা নিতে এসে রোগীরা নানা ভোগান্তিতে পড়ছেন। আর প্রতিবন্ধী রোগীদের ক্ষেত্রে এ ভোগান্তি আরও তীব্র।
২ দিন আগে
দেশে গত এক দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে নতুন আক্রান্ত ৫৬৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বেতনকাঠামোর দশম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে হাসপাতালসহ দেশের সব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে চার ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেছেন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা। গতকাল বুধবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তাঁদের এই কর্মসূচির কারণে চরম দুর্ভোগে পড়ে রোগী এবং তাদের স্বজনেরা। গত ৩০ নভেম্বর থেকে টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা কর্মবিরতি পালন করছেন।
এদিকে দাবি আদায়ে বৃহস্পতিবার কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচিতে যাওয়ার কথা রয়েছে আন্দোলনকারীদের। তবে কঠোর এই কর্মসূচিতে যাওয়ার আগে গতকাল রাতে বৈঠকে বসেছেন আন্দোলনকারীরা। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, শাটডাউন কর্মসূচি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের কর্মবিরতির কারণে রোগীরা চরম ভোগান্তিতে পড়লেও দাবি আদায়ে দিনভর কঠোর অবস্থানে ছিলেন তাঁরা। কর্মবিরতির সময় হাসপাতালের জরুরি সেবা চালু থাকলেও অনেককে সেবা না পেয়ে চলে যেতে দেখা গেছে।
আন্দোলনরতরা জানান, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের দশম গ্রেড বাস্তবায়নের ফাইল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আটকে আছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় দীর্ঘদিনেও বিষয়টির সমাধান হয়নি। এর আগে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার, ডিপ্লোমা নার্স ও ডিপ্লোমা কৃষিবিদদের ১১তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা হয়েছে। ফলে দাবি আদায়ে এবার কঠোর কর্মসূচি পালন করছেন তাঁরা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন ১০ হাজারের বেশি মানুষ চিকিৎসাসেবা নিতে যায়। এসব সেবাপ্রার্থীর বড় অংশ ঢাকার বাইরে থেকে আসে। টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের গতকালের কর্মবিরতির কারণে অনেকে চিকিৎসা না পেয়ে চলে যায়।
বিভিন্ন স্থানে দিনভর ভোগান্তি
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে সেবা বন্ধ রেখে চার ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেছেন টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা। এতে ভোগান্তিতে পড়ে হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনেরা।
কর্মবিরতি চলাকালে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের ফার্মেসিতে বিনা মূল্যে সরকারি ওষুধ বিতরণ, রক্ত পরীক্ষা, এক্স-রে, আলট্রাসনোগ্রামসহ রোগনির্ণয়ের বিভিন্ন সেবাকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। এ সময় হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও সেবাকেন্দ্রগুলোয় কর্মবিরতির ব্যানার ঝুলছিল। তবে হাসপাতালের অন্যান্য সেবা কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিল। চমেক হাসপাতালে রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের একজন কর্মচারী আজকের পত্রিকাকে বলেন, কর্মবিরতির ফলে এক্স-রে করা সাময়িক বন্ধ ছিল।
একই দাবিতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের সামনে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করেন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা। বুধবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা। এ সময় আন্দোলনকারীরা বলেন, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ও নার্সদের মতো তাঁদেরও চাকরিগত মর্যাদা দশম গ্রেডে উন্নীত না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
এ ছাড়া সিরাজগঞ্জ সদরে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে কর্মসূচি পালিত হয়। কর্মবিরতির কারণে হাসপাতালে সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং ওষুধ বিতরণ বন্ধ ছিল।
আবদুল্লাহ নামের এক রোগী বলেন, ‘সিটি স্ক্যান করানোর জন্য এসেছিলাম। এসে শুনি, কর্মবিরতি দিয়েছে। এ জন্য ফিরে যাচ্ছি।’
উল্লাপাড়ার আনিসুর নামের এক বৃদ্ধ বলেন, ‘কোমরে ব্যথা। তাই ডাক্তারের কাছে এসেছি। এসে শুনি, দুপুরের আগে চিকিৎসা হবে না।’
একই দাবিতে রাজবাড়ীতে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা চার ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেছেন। বুধবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এই কর্মবিরতি পালন করেন তাঁরা। কর্মবিরতি কর্মসূচিতে দাবি আদায় না হলে ৪ ডিসেম্বর থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালনের মাধ্যমে হাসপাতাল শাটডাউন ঘোষণার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।

বেতনকাঠামোর দশম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে হাসপাতালসহ দেশের সব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে চার ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেছেন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা। গতকাল বুধবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তাঁদের এই কর্মসূচির কারণে চরম দুর্ভোগে পড়ে রোগী এবং তাদের স্বজনেরা। গত ৩০ নভেম্বর থেকে টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা কর্মবিরতি পালন করছেন।
এদিকে দাবি আদায়ে বৃহস্পতিবার কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচিতে যাওয়ার কথা রয়েছে আন্দোলনকারীদের। তবে কঠোর এই কর্মসূচিতে যাওয়ার আগে গতকাল রাতে বৈঠকে বসেছেন আন্দোলনকারীরা। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, শাটডাউন কর্মসূচি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের কর্মবিরতির কারণে রোগীরা চরম ভোগান্তিতে পড়লেও দাবি আদায়ে দিনভর কঠোর অবস্থানে ছিলেন তাঁরা। কর্মবিরতির সময় হাসপাতালের জরুরি সেবা চালু থাকলেও অনেককে সেবা না পেয়ে চলে যেতে দেখা গেছে।
আন্দোলনরতরা জানান, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের দশম গ্রেড বাস্তবায়নের ফাইল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আটকে আছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় দীর্ঘদিনেও বিষয়টির সমাধান হয়নি। এর আগে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার, ডিপ্লোমা নার্স ও ডিপ্লোমা কৃষিবিদদের ১১তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা হয়েছে। ফলে দাবি আদায়ে এবার কঠোর কর্মসূচি পালন করছেন তাঁরা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন ১০ হাজারের বেশি মানুষ চিকিৎসাসেবা নিতে যায়। এসব সেবাপ্রার্থীর বড় অংশ ঢাকার বাইরে থেকে আসে। টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের গতকালের কর্মবিরতির কারণে অনেকে চিকিৎসা না পেয়ে চলে যায়।
বিভিন্ন স্থানে দিনভর ভোগান্তি
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে সেবা বন্ধ রেখে চার ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেছেন টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা। এতে ভোগান্তিতে পড়ে হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনেরা।
কর্মবিরতি চলাকালে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের ফার্মেসিতে বিনা মূল্যে সরকারি ওষুধ বিতরণ, রক্ত পরীক্ষা, এক্স-রে, আলট্রাসনোগ্রামসহ রোগনির্ণয়ের বিভিন্ন সেবাকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। এ সময় হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও সেবাকেন্দ্রগুলোয় কর্মবিরতির ব্যানার ঝুলছিল। তবে হাসপাতালের অন্যান্য সেবা কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিল। চমেক হাসপাতালে রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের একজন কর্মচারী আজকের পত্রিকাকে বলেন, কর্মবিরতির ফলে এক্স-রে করা সাময়িক বন্ধ ছিল।
একই দাবিতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের সামনে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করেন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা। বুধবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা। এ সময় আন্দোলনকারীরা বলেন, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ও নার্সদের মতো তাঁদেরও চাকরিগত মর্যাদা দশম গ্রেডে উন্নীত না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
এ ছাড়া সিরাজগঞ্জ সদরে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে কর্মসূচি পালিত হয়। কর্মবিরতির কারণে হাসপাতালে সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং ওষুধ বিতরণ বন্ধ ছিল।
আবদুল্লাহ নামের এক রোগী বলেন, ‘সিটি স্ক্যান করানোর জন্য এসেছিলাম। এসে শুনি, কর্মবিরতি দিয়েছে। এ জন্য ফিরে যাচ্ছি।’
উল্লাপাড়ার আনিসুর নামের এক বৃদ্ধ বলেন, ‘কোমরে ব্যথা। তাই ডাক্তারের কাছে এসেছি। এসে শুনি, দুপুরের আগে চিকিৎসা হবে না।’
একই দাবিতে রাজবাড়ীতে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা চার ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেছেন। বুধবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এই কর্মবিরতি পালন করেন তাঁরা। কর্মবিরতি কর্মসূচিতে দাবি আদায় না হলে ৪ ডিসেম্বর থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালনের মাধ্যমে হাসপাতাল শাটডাউন ঘোষণার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।

প্রতিদিন আমাদের যে পরিমাণ রক্তের প্রয়োজন, সেটা পর্যাপ্ত পাওয়া যায় না। হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার বা স্বেচ্ছায় রক্তদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে গেলে রক্তের জন্য হাহাকার চোখে পড়ে। হয়তো ২৪ ঘণ্টায় প্রয়োজন ২০০ ব্যাগের, সরবরাহ আছে ১৫০ ব্যাগ।
১৪ জুন ২০২৩
ছয় দফা দাবিতে টানা ষষ্ঠ দিনের মতো আন্দোলন করছেন স্বাস্থ্য সহকারীরা। মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনে তাঁদের অবস্থান কর্মসূচি চলছে। শনিবার থেকে সারা দেশের স্বাস্থ্য সহকারীরা ঢাকায় এসে লাগাতার কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন।
২০ ঘণ্টা আগে
দেশের সরকারি ও বেসরকারি সব ধরনের হাসপাতালে প্রতিবছরই বাড়ছে সেবাগ্রহণকারীর সংখ্যা। কিন্তু অধিকাংশ চিকিৎসাকেন্দ্রেই শৌচাগারগুলো ব্যবহারের অযোগ্য অথবা ন্যূনতম মানের নয়। ফলে চিকিৎসা নিতে এসে রোগীরা নানা ভোগান্তিতে পড়ছেন। আর প্রতিবন্ধী রোগীদের ক্ষেত্রে এ ভোগান্তি আরও তীব্র।
২ দিন আগে
দেশে গত এক দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে নতুন আক্রান্ত ৫৬৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
৩ দিন আগেমুহাম্মাদ শফিউল্লাহ, ঢাকা

দেশের সরকারি ও বেসরকারি সব ধরনের হাসপাতালে প্রতিবছরই বাড়ছে সেবাগ্রহণকারীর সংখ্যা। কিন্তু অধিকাংশ চিকিৎসাকেন্দ্রেই শৌচাগারগুলো ব্যবহারের অযোগ্য অথবা ন্যূনতম মানের নয়। ফলে চিকিৎসা নিতে এসে রোগীরা নানা ভোগান্তিতে পড়ছেন। আর প্রতিবন্ধী রোগীদের ক্ষেত্রে এ ভোগান্তি আরও তীব্র। কারণ হাসপাতালে প্রতিবন্ধী রোগীদের উপযোগী শৌচাগার ১ শতাংশেরও কম।
হাসপাতাল পরিচালনা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিবন্ধীবান্ধব শৌচাগার একটি হাসপাতালের মৌলিক পরিকাঠামোর অংশ হওয়া উচিত। তবে দেশে এ ধরনের সুবিধার মারাত্মক ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ঘাটতি বেশি। ফলে রোগীরা শুধু ভোগান্তিতেই পড়ছেন না; বরং গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকিরও সম্মুখীন হচ্ছেন। দীর্ঘ সময় শৌচাগার ব্যবহার করতে না পারার ফলে কিডনি জটিলতা, ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (মূত্রনালি সংক্রমণ) ও পানিশূন্যতাসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিষয়ক গবেষণা প্রকাশনা সংস্থা পাবলিক লাইব্রেরি অব সায়েন্সের প্লস ওয়ান সাময়িকীতে বাংলাদেশে হাসপাতালের শৌচাগার নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ পায়। গবেষণার শিরোনাম ‘ইনঅ্যাডিক্যুইট স্যানিটেশন ইন হেলথকেয়ার ফ্যাসিলিটিজ: অ্যা কম্প্রিহেনসিভ ইভ্যালুয়েশন অব টয়লেটস ইন মেজর হাসপাতাল ইন ঢাকা, বাংলাদেশ’। গবেষণাটি করেছেন অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের নয়জন গবেষক।
গবেষণায় রাজধানীর ১০টি সরকারি ও ২টি বেসরকারি হাসপাতালে মোট ২ হাজার ৪৫৯টি শৌচাগার পর্যবেক্ষণ করা হয়। এর মধ্যে প্রতিবন্ধী রোগীদের উপযোগী শৌচাগারের সংখ্যা মাত্র ১০টি, যা ১ শতাংশেরও কম বা শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। প্রায় ৯৯ শতাংশ শৌচাগার হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী বা চলাফেরায় সীমাবদ্ধ রোগীদের জন্য ব্যবহারযোগ্য নয়। অধিকাংশ শৌচাগারে দরজা সংকীর্ণ, কমোডের উচ্চতা অনুপযুক্ত, গ্র্যাব-বার বা হাতল নেই এবং প্রবেশপথে র্যাম্পের সুবিধাও নেই। ফলে প্রতিবন্ধী রোগীরা শৌচাগার ব্যবহার করতে গিয়ে চরম ভোগান্তি এবং নিরাপত্তাহীনতায় পড়েন।
দেশে ক্যানসার রোগীদের জন্য সর্বোচ্চ সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল ঘুরে এখানকার দুটি ভবনের কোথাও প্রতিবন্ধী রোগীদের জন্য নির্ধারিত শৌচাগার পাওয়া যায়নি।
একইভাবে হৃদরোগ চিকিৎসার জন্য সরকারের বিশেষায়িত চিকিৎসাকেন্দ্র জাতীয় হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের তিনটি ভবনের কোথাও নেই প্রতিবন্ধী রোগীদের জন্য নির্ধারিত শৌচাগার। তাঁদের জন্য আলাদা শৌচাগার না থাকার কথা স্বীকার করেন এই হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখানে ভর্তি রোগীরা বেডসাইড টয়লেট ব্যবহার করেন। বিভিন্ন হাসপাতালের জন্য নতুন যেসব ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে, সেখানে প্রতিবন্ধী রোগীদের জন্য শৌচাগার, হুইলচেয়ার বা শয্যাসহ ওঠানামার জন্য প্রয়োজনীয় র্যাম্প রাখা প্রয়োজন।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালে নির্ধারিত শয্যার ২-৩ গুণ রোগী ভর্তি থাকেন। দৈনিক বহির্বিভাগে রোগী আসেন সক্ষমতার ৪-৫ গুণ। স্বাভাবিক রোগীদের জন্য উন্নত শৌচাগারের ব্যবস্থাপনা নেই। প্রতিবন্ধী রোগীদের জন্যও আলাদা শৌচাগার রাখা যায়নি। তবে আমরা এ বিষয়ে পরিকল্পনা করছি।’

দেশের সরকারি ও বেসরকারি সব ধরনের হাসপাতালে প্রতিবছরই বাড়ছে সেবাগ্রহণকারীর সংখ্যা। কিন্তু অধিকাংশ চিকিৎসাকেন্দ্রেই শৌচাগারগুলো ব্যবহারের অযোগ্য অথবা ন্যূনতম মানের নয়। ফলে চিকিৎসা নিতে এসে রোগীরা নানা ভোগান্তিতে পড়ছেন। আর প্রতিবন্ধী রোগীদের ক্ষেত্রে এ ভোগান্তি আরও তীব্র। কারণ হাসপাতালে প্রতিবন্ধী রোগীদের উপযোগী শৌচাগার ১ শতাংশেরও কম।
হাসপাতাল পরিচালনা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিবন্ধীবান্ধব শৌচাগার একটি হাসপাতালের মৌলিক পরিকাঠামোর অংশ হওয়া উচিত। তবে দেশে এ ধরনের সুবিধার মারাত্মক ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ঘাটতি বেশি। ফলে রোগীরা শুধু ভোগান্তিতেই পড়ছেন না; বরং গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকিরও সম্মুখীন হচ্ছেন। দীর্ঘ সময় শৌচাগার ব্যবহার করতে না পারার ফলে কিডনি জটিলতা, ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (মূত্রনালি সংক্রমণ) ও পানিশূন্যতাসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিষয়ক গবেষণা প্রকাশনা সংস্থা পাবলিক লাইব্রেরি অব সায়েন্সের প্লস ওয়ান সাময়িকীতে বাংলাদেশে হাসপাতালের শৌচাগার নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ পায়। গবেষণার শিরোনাম ‘ইনঅ্যাডিক্যুইট স্যানিটেশন ইন হেলথকেয়ার ফ্যাসিলিটিজ: অ্যা কম্প্রিহেনসিভ ইভ্যালুয়েশন অব টয়লেটস ইন মেজর হাসপাতাল ইন ঢাকা, বাংলাদেশ’। গবেষণাটি করেছেন অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের নয়জন গবেষক।
গবেষণায় রাজধানীর ১০টি সরকারি ও ২টি বেসরকারি হাসপাতালে মোট ২ হাজার ৪৫৯টি শৌচাগার পর্যবেক্ষণ করা হয়। এর মধ্যে প্রতিবন্ধী রোগীদের উপযোগী শৌচাগারের সংখ্যা মাত্র ১০টি, যা ১ শতাংশেরও কম বা শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। প্রায় ৯৯ শতাংশ শৌচাগার হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী বা চলাফেরায় সীমাবদ্ধ রোগীদের জন্য ব্যবহারযোগ্য নয়। অধিকাংশ শৌচাগারে দরজা সংকীর্ণ, কমোডের উচ্চতা অনুপযুক্ত, গ্র্যাব-বার বা হাতল নেই এবং প্রবেশপথে র্যাম্পের সুবিধাও নেই। ফলে প্রতিবন্ধী রোগীরা শৌচাগার ব্যবহার করতে গিয়ে চরম ভোগান্তি এবং নিরাপত্তাহীনতায় পড়েন।
দেশে ক্যানসার রোগীদের জন্য সর্বোচ্চ সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল ঘুরে এখানকার দুটি ভবনের কোথাও প্রতিবন্ধী রোগীদের জন্য নির্ধারিত শৌচাগার পাওয়া যায়নি।
একইভাবে হৃদরোগ চিকিৎসার জন্য সরকারের বিশেষায়িত চিকিৎসাকেন্দ্র জাতীয় হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের তিনটি ভবনের কোথাও নেই প্রতিবন্ধী রোগীদের জন্য নির্ধারিত শৌচাগার। তাঁদের জন্য আলাদা শৌচাগার না থাকার কথা স্বীকার করেন এই হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখানে ভর্তি রোগীরা বেডসাইড টয়লেট ব্যবহার করেন। বিভিন্ন হাসপাতালের জন্য নতুন যেসব ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে, সেখানে প্রতিবন্ধী রোগীদের জন্য শৌচাগার, হুইলচেয়ার বা শয্যাসহ ওঠানামার জন্য প্রয়োজনীয় র্যাম্প রাখা প্রয়োজন।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালে নির্ধারিত শয্যার ২-৩ গুণ রোগী ভর্তি থাকেন। দৈনিক বহির্বিভাগে রোগী আসেন সক্ষমতার ৪-৫ গুণ। স্বাভাবিক রোগীদের জন্য উন্নত শৌচাগারের ব্যবস্থাপনা নেই। প্রতিবন্ধী রোগীদের জন্যও আলাদা শৌচাগার রাখা যায়নি। তবে আমরা এ বিষয়ে পরিকল্পনা করছি।’

প্রতিদিন আমাদের যে পরিমাণ রক্তের প্রয়োজন, সেটা পর্যাপ্ত পাওয়া যায় না। হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার বা স্বেচ্ছায় রক্তদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে গেলে রক্তের জন্য হাহাকার চোখে পড়ে। হয়তো ২৪ ঘণ্টায় প্রয়োজন ২০০ ব্যাগের, সরবরাহ আছে ১৫০ ব্যাগ।
১৪ জুন ২০২৩
ছয় দফা দাবিতে টানা ষষ্ঠ দিনের মতো আন্দোলন করছেন স্বাস্থ্য সহকারীরা। মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনে তাঁদের অবস্থান কর্মসূচি চলছে। শনিবার থেকে সারা দেশের স্বাস্থ্য সহকারীরা ঢাকায় এসে লাগাতার কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন।
২০ ঘণ্টা আগে
বেতনকাঠামোর দশম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে হাসপাতালসহ দেশের সব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে চার ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেছেন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা। গতকাল বুধবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তাঁদের এই কর্মসূচির কারণে চরম দুর্ভোগে পড়ে রোগী এবং তাদের স্বজনেরা। গত ৩০ নভেম্বর থেকে...
২ দিন আগে
দেশে গত এক দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে নতুন আক্রান্ত ৫৬৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

দেশে গত এক দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে নতুন আক্রান্ত ৫৬৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
এ নিয়ে চলতি বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ৩৮৬ জনের মৃত্যু হলো। আর আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগী সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৯৫ হাজার ৫৭৭। এর মধ্যে ৬২ দশমিক ৪ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৭ দশমিক ৬ শতাংশ নারী।
আজ মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল সোমবার সকাল ৮টা থেকে আজ সকাল ৮টা পর্যন্ত তথ্য জানানো হয়।
গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে তাঁরা পুরুষ। তাঁদে বয়স যথাক্রমে ৫৫ ও ৬৫ বছর।
চলতি বছর ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে নভেম্বর মাসে। ওই মাসে ১০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার আগে অক্টোবর মাসে ৮০ জন ও সেপ্টেম্বর মাসে ৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৮২, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৯৫, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ১২৭ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৮৮ জন, খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৩, ময়মনসিংহ বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৫, রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৩০, রংপুর বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) তিন ও সিলেট বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) একজন রয়েছে।

দেশে গত এক দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে নতুন আক্রান্ত ৫৬৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
এ নিয়ে চলতি বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ৩৮৬ জনের মৃত্যু হলো। আর আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগী সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৯৫ হাজার ৫৭৭। এর মধ্যে ৬২ দশমিক ৪ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৭ দশমিক ৬ শতাংশ নারী।
আজ মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল সোমবার সকাল ৮টা থেকে আজ সকাল ৮টা পর্যন্ত তথ্য জানানো হয়।
গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে তাঁরা পুরুষ। তাঁদে বয়স যথাক্রমে ৫৫ ও ৬৫ বছর।
চলতি বছর ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে নভেম্বর মাসে। ওই মাসে ১০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার আগে অক্টোবর মাসে ৮০ জন ও সেপ্টেম্বর মাসে ৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৮২, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৯৫, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ১২৭ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৮৮ জন, খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৩, ময়মনসিংহ বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৫, রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৩০, রংপুর বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) তিন ও সিলেট বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) একজন রয়েছে।

প্রতিদিন আমাদের যে পরিমাণ রক্তের প্রয়োজন, সেটা পর্যাপ্ত পাওয়া যায় না। হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার বা স্বেচ্ছায় রক্তদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে গেলে রক্তের জন্য হাহাকার চোখে পড়ে। হয়তো ২৪ ঘণ্টায় প্রয়োজন ২০০ ব্যাগের, সরবরাহ আছে ১৫০ ব্যাগ।
১৪ জুন ২০২৩
ছয় দফা দাবিতে টানা ষষ্ঠ দিনের মতো আন্দোলন করছেন স্বাস্থ্য সহকারীরা। মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনে তাঁদের অবস্থান কর্মসূচি চলছে। শনিবার থেকে সারা দেশের স্বাস্থ্য সহকারীরা ঢাকায় এসে লাগাতার কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন।
২০ ঘণ্টা আগে
বেতনকাঠামোর দশম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে হাসপাতালসহ দেশের সব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে চার ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেছেন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা। গতকাল বুধবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তাঁদের এই কর্মসূচির কারণে চরম দুর্ভোগে পড়ে রোগী এবং তাদের স্বজনেরা। গত ৩০ নভেম্বর থেকে...
২ দিন আগে
দেশের সরকারি ও বেসরকারি সব ধরনের হাসপাতালে প্রতিবছরই বাড়ছে সেবাগ্রহণকারীর সংখ্যা। কিন্তু অধিকাংশ চিকিৎসাকেন্দ্রেই শৌচাগারগুলো ব্যবহারের অযোগ্য অথবা ন্যূনতম মানের নয়। ফলে চিকিৎসা নিতে এসে রোগীরা নানা ভোগান্তিতে পড়ছেন। আর প্রতিবন্ধী রোগীদের ক্ষেত্রে এ ভোগান্তি আরও তীব্র।
২ দিন আগে